৩.২১-২২ রেশমী ও রাম বসু

৩.২১ রেশমী ও রাম বসু

রেশমী, কি করতে যাচ্ছিস ভাল করে ভেবে দেখ।

কায়েৎ দা, ভাল করে না ভেবে কি এ-পথে পা বাড়িয়েছি?

না, তুই সব দিক চিন্তা করবার অবকাশ পাস নি। পৈতৃকধর্ম ত্যাগ করা তো কেবল ব্যক্তিগত ব্যাপার নয়, এক মুহূর্তে তোর আত্মীয়স্বজন ধর্ম দেশ সব পর হয়ে যাবে।

আমি পর মনে না করলে পর হবে কেন?

পাগল, সংসারের তুই কতটুকু বুঝিস? সংসারে সম্বন্ধ যে দু পক্ষকে নিয়ে, অপর পক্ষ যদি আপন মনে না করে তবে তুই ওর হলি বইকি!

কেন, আমি ঘরে বসে তাদের আপন ভাবব।

পাগল! কথা শোন একবার বলে হাসে রাম বসু, তার পর আবার বলে, দশটা ঘর মিলে যে সমাজ। তুই যদি একঘরে হয়ে রইলি তবে তোর সমাজ রইল কোথায়?

যাদের ঘরে যাচ্ছি তারাই হবে তখন সমাজ। জব চার্নকের কি ব্রাহ্মণী পত্নী ছিল না?

কথাটা শুনেছিল সে জনের কাছে।

সেই ব্রাহ্মণী পত্নীকে তাদের সমাজ কি স্বীকার করেছিল? করে নি। দেখ, এদেশের লোকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমি মিশেছি সাহেব সমাজে। ওরা কখনও আমাদের আপন মনে করতে পারবে না।

বিয়ে করলেও নয়?

না, বিয়ে করলেও নয়। ওরা জনকে আপন মনে করবে, তোকে মনে করবে অবান্তর।

মিঃ স্মিথ তো অন্যরকম কথা বলে।

বিয়ের আগে অনেকেই অনেক রকম কথা বলে, সে-সব কথার বিশেষ অর্থ নেই।

রেশমী চুপ করে থাকে।

রাম বসুর সংশয় ও প্রশ্ন তার মনের মধ্যেও এ কয়দিনে উঠেছে, মীমাংসা খুঁজে পায় নি। এ কয়দিনে তার মনের অনেকগুলি সূক্ষ্ম প্রচ্ছন্ন শিকড়ে টান পড়ে সমস্ত সত্তা চড় চড় করে উঠেছে। তার অনতিদীর্ঘ অতীত জীবন মোহময় করুণাময় অশ্রু ও সৌন্দর্যময় মূর্তি ধরে বারংবার সম্মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। জোড়ামউ পল্লীর সমস্ত দৃশ্য অপূর্ব সৌন্দর্যে ভূষিত হয়ে দেখা দিয়েছে, দেখা দিয়েছে বাল্য-সঙ্গিনীর দল, দেখা দিয়েছে বুড়ি দিদিমা, এমন কি এক-আধবারের জন্য মালচন্দনে সজ্জিত টোপর-পরা একটি কঙ্কালসার মুখও উদিত হয়েছে তার মনের মধ্যে। যখন মনটা বিচলিত হওয়ার মুখে, তখনই মনে পড়ে গিয়েছে লিজার লাঞ্ছনা, ছদ্মবিনয়ের ভৎসনা, এ বিবাহ কিছুতেই হতে দেবে না বলে তার প্রতিজ্ঞা, সেই সঙ্গে মনে পড়েছে, জনের করুণাসুন্দর আর্ত তৃষিত অসহায় মুখ। তখনই সে জোর করে মনকে জপিয়েছে, না না, জন আমার বর, জনের ঘর আমার ঘর।

রেশমীকে নীরব দেখে রাম বসু বলে, না হয় আর দিন দুই সময় নে ভাল করে ভেবে দেখবার জন্যে, কাল না হয় ধর্মান্তর-গ্রহণ স্থগিত থাক।

রেশমী দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলে, না কায়েৎ দা, আর বাধা দিও না, যা হওয়ার শীগগির ঘটে যাক।

শীগগির ঘটে যাওয়াটাই কি সব সময়ে কাম্য? শাস্ত্রে বলে, অশুভস্য কালহরণম্।

কিন্তু এটা কেন অশুভ তা এখনও বুঝতে পারলাম না তো!

সেইজন্যেই তো বলছি, রেশমী, আর দুটো দিন সময় নে।

রেশমী জানে তা অসম্ভব। প্রথম, জন রাজী হবে না। তার পরে অতিরিক্ত দুটো দিন প্রতিহিংসাপরায়ণ লিজার হাতে এগিয়ে দেওয়া কিছু নয়, অনেক কিছু করে ফেলতে পারে সে কিছু এসব কথা রাম বসু বুঝবে না, তাই সে চুপ করে থাকে।

জন ও রেশমী এসে পৌঁছামাত্র সাহেবের দল এমনভাবে তাদের হেঁকে ধরল যে একটুখানি নিরিবিলি পায় নি রেশমীকে রাম বসু। অবশেষে কেরীর কৃপাতে জুটল সেই অবসর। কেরী বলল, মুন্সী, তুমি সরল বাংলায় রেশমীকে বুঝিয়ে দাও খ্রীষ্টধর্মের মহিমা।

রাম বসু বলল, সকাল থেকে তো সেইজন্যেই ওকে একলা পাওয়ার চেষ্টা করছি।

তবে আর বিলম্ব কর না, ওকে নিয়ে একলা বস তোমার ঘরে, কাল দীক্ষা, আজ ওকে তৈরি করে তোল।

রাম বসু রেশমীকে নিজের ঘরে নিয়ে এসে তৈরি করে তুলছিল।

এমন সময়ে এক ব্যক্তি এসে উপস্থিত হল। রেশমী দাঁড়িয়ে উঠে বলল, এ কি মৃত্যুঞ্জয় দাদা, তুমি?

হাঁ রে রেশমী, আমি।

হঠাৎ এখানে?

তোর বুড়ি দিদিমা কি স্থির হয়ে থাকতে দেয়, মুখে এক বুলি, নিয়ে চল আমাকে রেশমীর কাছে। কেঁদে কেঁদে বুড়ি দুই চোখ অন্ধ করে ফেলল। বুডির তাড়ায় ঠিক থাকতে না পেরে এলাম কলকাতায়, সেখানে এসে অনেক খোঁজাখুঁজি করে জানলাম তুই শ্রীরামপুরে এসেছিস, এলাম বুড়িকে নিয়ে, ভাগ্যে তোর দেখা পেলাম, নইলে আবার…

মৃত্যুঞ্জয়ের বাক্য শেষ হওয়ার আগেই রেশমী বলে ওঠে, দিদিমা এসেছে? কোথায়? এতক্ষণ বল নি কেন?

বলতেই ত যাচ্ছিলাম। গঙ্গার ঘাটে নৌকোয় বসে আছে বুড়ি।

চল আমাকে নিয়ে।

মৃত্যুঞ্জয়ের সঙ্গে চণ্ডীর যোগাযোগের সংবাদ জানত না রেশমী, তাই কোন সন্দেহ এল না তার মনে। আর রাম বসু ভাবল ভগবান বুঝি রক্ষা করলেন, নইলে এমন। অপ্রত্যাশিতভাবে বুড়ি এসে উপস্থিত হবে কেন? কাজেই সে-ও খুব উৎসাহ অনুভব করল, বলল, চল রেশমী, একবার দিদিমার সঙ্গে দেখা করে আসবি।

তিনজনে গঙ্গার ঘাটে গিয়ে উপস্থিত হল। তখন ভাঁটার সময়, নৌকা ক-হাত দূরে ছিল, জল ভেঙে গিয়ে তিনজনে নৌকোয় উঠল।

রেশমীকে দেখবামাত্র ‘ওরে আমার বুকের ধন’ বলে মোক্ষদা বুড়ি কেঁদে উঠে রেশমীকে জড়িয়ে ধরল।

ও দিদিমা, এতদিন তুই আসিস নি কেন, বলে রেশমীও কাঁদতে লাগল।

ইতিমধ্যে নৌকা দিল ছেড়ে।

‘নৌকো ছাড়ল কেন–’ রাম বসু বলে উঠতেই কার প্রচণ্ড এক ধাক্কায় ছিটকে গিয়ে সে জলে পড়ল।

যাও বসুজা, এটুকু সাঁতরে যেতে পারবে, প্রাণে মরবে না। ফিরে গিয়ে তোমার সাহেব বাবাদের খবর দাওগে যে, বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা বাঁধতে গেলে এমনি হয়।

কণ্ঠস্বর চণ্ডী বক্সীর।

রেশমী চণ্ডীর ষড়যন্ত্র তখনও বুঝে উঠতে পারে নি, তাই ব্যাকুলভাবে বলল, চণ্ডী দা, কায়েৎ দা যে জলে পড়ল!

গঙ্গাবক্ষ প্রকম্পিত করে চণ্ডী গর্জন করে উঠল, চুপ কর হারামজাদী।

রেশমী বলল, আমাকে নিয়ে চললে কোথায়?

সে খোঁজে তোর দরকার কি? বেশি ছটফট করিস তো পাটাতনের সঙ্গে বেঁধে রাখব। ভাল চাস তো চুপ করে থাক।

সমস্ত অভিসন্ধি তখনও সে বুঝতে পারে নি, তাই খানিকটা নির্ভাবনায়, খানিকটা নিরুপায়ে দিদিমার বক্ষ আশ্রয় করে নীরবে পড়ে থাকল। আর মোদা তাকে জড়িয়ে ওরে কেবলই বলতে লাগল, ওরে আমার বুকের ধন, ওরে আমার বুকের ধন!

একে ভাঁটার টান, তাতে পালে-লাগা উত্তরে হাওয়া, নৌকো পূর্ণবেগে অন্ধকারের মধ্যে উধাও হয়ে গেল।

.

৩.২২ তার পরের কথা

রাম বসু সাঁতরে উঠে এসে সমস্ত আনুপূর্বিক জ্ঞাপন করল। ঘটনার অপ্রত্যাশিত পরিণামে এক মুহূর্তের জন্যে সকলে স্তম্ভিত হয়ে গেল। কিন্তু সঙ্কটে দীর্ঘকাল স্তম্ভিত হয়ে থাকা কিংবা অযথা শোরগোল সৃষ্টি করা ইংরেজের স্বভাবসিদ্ধ নয়। তারা মুহূর্তে মন স্থির করতে পারে। তখনই জন, ফেলিক্স, মার্শম্যান ও ওয়ার্ড নৌকা নিয়ে বেরিয়ে পড়ল, সঙ্গে অবশ্যই চলল রাম বসু। কিন্তু বাতিকগ্রস্ত টমাসকে সঙ্গে নিতে কেউ আগ্রহ প্রকাশ করল না, টমাসও পীড়াপীড়ি করল না। সকলের ধারণা হয়েছিল চণ্ডী বীর নৌকো জোড়ামউর দিকে গিয়েছে, কাজেই পাদ্রীদের নৌকাও চলল উত্তরমুখো।

পরদিন বুঝতে পারা গেল কেন টমাস যাওয়ার জন্যে পীড়াপীড়ি করে নি। কেরীর সাহায্যে রেশমীর বদলে কৃষ্ণদাস ছুতোরের দীক্ষাকার্য সে যথারীতি সম্পন্ন করল। তার পরে যা ঘটল টমাসের ক্ষেত্রে তা একেবারে অভাবিত না হলেও আতিশয্যগ্ৰস্তু সন্দেহ নেই। কৃষ্ণদাসের দীক্ষায় তার কুড়ি বৎসরের আশাতরুতে প্রথম মুকুল ফুটল, কুড়ি বৎসরের চেষ্টায় এই প্রথম সত্যধর্মে দীক্ষা-দান। ভাবে বিভোর হয়ে সারারাত সে নৃত্যগীত করে কাটাল। ভোরবেলা দেখা গেল সে বদ্ধ উন্মাদ হয়ে গিয়েছে। প্রথমটা কেউ বুঝতে পারে নি; কেননা দিব্যোম্মাদে ও বদ্ধোন্মাদে বাহ্যিক পার্থক্য অতি অল্প। দিনের আলোয় দর্শকের চোখের প্রত্যাশায় তার উন্মত্ততা গেল আরও বেড়ে; খোঁড়া কৃষ্ণদাসকে টেনে নিয়ে প্রশস্ত চত্বরে টমাস দ্বৈতনৃত্য শুরু করে দিল, সঙ্গে রাম বসু রচিত দ্বৈতসঙ্গীত–

“কে আর তারিতে পারে
লর্ড জিজহ ক্রাইস্ট বিনা গো,
পাতক ঘোর সাগর
লর্ড জিজহ ক্রাইস্ট বিনা গো।”

খোঁড়া পায়ে কৃষ্ণদাসের নাচ তেমন জমে না, সে যেমনি একটু থামে টমাস মারে হেঁচকা টান, কৃষ্ণদাস দেড়খানা পায়ে নাচ শুরু করে।

ভাল করে না বাবা, ভাল করে নাচ, বলে টমাস।

কৃষ্ণদাস যথাসাধ্য নৃত্যভঙ্গী করতে করতে বলে, কর্তা, পায়ে যে লাগে, ওষুধ দিয়ে সারিয়ে দাও, তার পরে দেখবে নাচ কাকে বলে।

তদুত্তরে টমাস উচ্চকণ্ঠে গেয়ে ওঠে, সঙ্গে সঙ্গে মারে হেঁচকা টান

“সেই মহাশয় ঈশ্বর তনয়
পাপীর ত্রাণের হেতু।
তাঁরে যেই জন করয়ে ভজন
পার হবে ভবসেতু।”

কৃষ্ণদাস বুঝল পার্থিব ঔষধে তার ব্যাধি সারবার নয়, একমাত্র ভরসা খ্রীষ্টের দয়া। পাছে নৃত্যের বৈকল্যে দয়ার অভাব ঘটে তাই সেই খোঁড়া পাখানা ধরে, আলগা করে তুলে এক পায়ে নৃত্য শুরু করে দিল। তখন দুইজনে সে কি মৃত্য! মোটের উপরে তিনখানা পায়ের নাচে আসর সরগরম হয়ে উঠল। ছাপাখানার লোকেরা দর্শক হয়ে ছুটে এল।

কিন্তু আরও বাকি ছিল। কেরী-পত্নী কিছুদিন থেকে আধ-পাগল অবস্থায় ছিল— হঠাৎ ঐ দৃশ্য দেখে তার পাগলামি মাথা চাড়া দিয়ে জেগে উঠল, জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে দিয়ে বলল, নাচ হচ্ছে আর বাজনা নেই এ কি রকম!

এই বলে একখানা প্লেট হাতে করে বেরিয়ে আসরে এসে উপস্থিত হল, প্লেটে মারল বড় একখানা টেবিল-চামচ দিয়ে ঘা, টুংটুং করে শব্দ উঠল, বলল, নাচ নাচ, আজ বুঝি বাঘ-শিকারে যাবে! নাচ নাচ, খুব নেচে নাও, ফিরে আসতে পারবে মনে হয় না, ইয়া বড় বাঘ!

এতক্ষণ কেরী প্রুফ দেখছিল। শোরগোল শুনে বেরিয়ে এসে কাণ্ড দেখে সে অবাক, বুঝল ব্যাপারখানা কি। তখনই আর পাঁচজনের সাহায্যে টমাস ও ডরোথিকে ধরাধরি করে নিয়ে দুটো ঘরে বন্ধ করে রেখে দিল। ভাঙা পায়ের যন্ত্রণা ভুলে কেবলই নৃত্যরস জমে উঠেছিল কৃষ্ণদাসের মনে, অকালে রসভঙ্গ হওয়ায় সে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল, নিজের মনে কেবলই বলতে লাগল, সমে ফিরে আসবার আগে এ কি হল। তারা মা ইচ্ছাময়ী—সবই তোমার ইচ্ছা!

.

এদিকে চীর নৌকা অন্ধকারের মধ্যে দ্রুতবেগে কলকাতার দিকে চলেছে। চণ্ডী বলছে, দেখলে তো মিত্যুঞ্জয়, পারলাম কি না! কি করতে পারল সাহেব বেটারা?

কিন্তু এর পরে কি হয় কে জানে? আমাদের কোন অনিষ্ট হয়!

শাস্ত্রীয় হাসির ছটায় অন্ধকার দীপ্ত করে তুলে চণ্ডী বলে, কোন ভয় নেই মিত্যুঞ্জয়, গীতায় শ্রীভগবান কি বলেছেন জান, “নহি কল্যাণকৃৎ কশ্চিৎ দুর্গতিং গচ্ছতি তাত।” অর্থাৎ কিনা, ভাল কাজ করলে কখনও অনিষ্ট হয় না।

তার পরেই ভগবাচন থেকে ধাপ-কয়েক নেমে এসে বলে, মেয়েটাকে বেঁধে রাখব নাকি?

মৃত্যুঞ্জয় বলে, না, তার দরকার নেই, ঘুমিয়েছে; আর তা ছাড়া নদীর মধ্যে পালাবে কোথায়?

ও বেটী আস্ত শয়তানী, সেবারে নদী সাঁতরে পালিয়েছিল মনে নেই?

তার পরে বলে, আচ্ছা থাক, এখন আর গোলমাল করে কাজ নেই।

এবারে মৃত্যুঞ্জয় চাপা স্বরে শুধায়, আচ্ছা বক্সী মশায়, ওকে সত্যি মোতি রায়ের বাগানবাড়িতে পাঠিয়ে দেবে নাকি?

মৃদু স্বরে চণ্ডী বলে, পাগল নাকি! কালই ওকে চিতায় চাপাব। আর জ্যান্ত রাখা নয়।

সঙ্কটে ইন্দ্রিয়ের শক্তি বৃদ্ধি পায়, সমস্ত আলোচনা গেল রেশমীর কানে। কিন্তু করবার কিছু নেই, কাজেই নিদ্রিতবৎ শুয়ে রইল।

মাঝখানে রেশমী বোধ হয় ঘুমিয়ে পড়েছিল, যখন জাগল, বুঝল যে নৌকা চলছে না, থেমে রয়েছে। মাঝিদের কথাবার্তা এল তার কানে।

একজন বলল, বাগবাজারের ঘাট নাকি?

অপরজন উত্তর দিল, বাগবাজারের ঘাট বুঝি ছাড়িয়ে এলাম, মনে হচ্ছে এটা মদনমোহন-তলার ঘাট।

তবে উড়িয়ে চল।

একটু থাম, জোয়ার আর হক।

তবে থাক, আর রাতটাও শেষ হয়ে এল, বলে তারা চাদর-মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ল।

চণ্ডীদের কণ্ঠস্বর রেশমীর কানে এল না, সে বুঝল তারা আগেই ঘুমিয়েছে। রেশমী বুঝল যে হয় এখন, নয় আর কখনও সম্ভব হবে না। নিদ্রিত দিদিমার শিথিল বাহবন্ধন ছাড়িয়ে সে উঠে বসল, একবার এদিকে-ওদিকে তাকাল, নাঃ, কারও কোন সাড়া নেই। তখন সে অতি সন্তর্পণে শব্দমাত্র হতে না দিয়ে ধীরে ধীরে নৌকা থেকে নেমে পড়ল। নাঃ, কেউ বাধা দিল না। তার পরে আরও দু-চার পা সতর্পণে এসে প্রাণপণে দৌড় মারল। কোন্ দিকে যাচ্ছে, কার কাছে যাচ্ছে কোন প্রশ্ন উঠল না তার মনে। একমাত্র চিন্তা-চণ্ডীর কাছ থেকে পালাতে হবে।

চারিদিক অন্ধকার নিঝুম। অদূরে একটা বাড়িতে আলো দেখতে পেয়ে প্রাচীরের জায় এসে ঘা মারল রেশমী।

দরজা খুলে গেল, রেশমী দেখল একটি মাঝবয়সী মেয়ে শেষরাত্রে উঠে উঠোন ঝাঁট দিচ্ছে।

রেশমী ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দিল, দিয়ে বলল, আমাকে বাঁচাও।

কে তুমি? কি হয়েছে তোমার?

ডাকাতেরা আমাকে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিল, সুযোগ পেয়ে পালিয়ে এসেছি।

এমন ব্যাপার সে যুগে প্রায়ই ঘটত, কাজেই মেয়েটি অবিশ্বাস করল না, স্নেহা স্বরে বলল, এস, তোমার কোন ভয় নেই।

তার পর ঝাঁটা রেখে দিয়ে রেশমীর হাত ধরল। রেশমী শুধোল, তোমাকে কি বলে ডাকব?

আমাকে সবাই টুশকি বলে, তুমি না হয় টুশকি দিদি ব’ল। আর তোমাকে কি বলে ডাকব বোন?

রেশমী একটু ইতস্তত করে বলল, আমার নাম সৌরভ।

টুশকি বলল, চল ঘরে চল, এখনও খানিকটা রাত আছে, একটু ঘুমিয়ে নেবে।

দুজনে ঘরে ঢুকল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *