জয়জয়ন্তী সূর্য

কোনো দিন নগরীর শীতের প্রথম কুয়াশায়
কোনো দিন হেমন্তের শালিখের রঙে ম্লান মাঠের বিকেলে
হয়তো বা চৈত্রের বাতাসে
চিন্তার সংবেগ এসে মানুষের প্রাণে হাত রাখেঃ
তাহাকে থামায়ে রাখে।
সে-চিন্তার প্রাণ
সাম্রাজ্যের উত্থানের পতনের বিবর্ণ সন্তান
হয়েও যা কিছু শুভ্র র’য়ে গেছে আজ-
সেই সোম-সুপর্ণের থেকে এই সূর্যের আকাশে-
সে-রকম জীবনের উত্তরাধিকার নিয়ে আসে।
কোথাও রৌদ্রের নাম-
অন্নের নারীর নাম ভালো ক’রে বুঝে নিতে গেলে
নিয়মের নিগড়ের হাত এসে ফেঁদে
মানুষকে যে-আবেগে যত দিন বেঁধে
রেখে দেয়,
যত দিন আকাশকে জীবনের নীল মরুভূমি মনে হয়,
যত দিন শূন্যতার ষোলো কলা পূর্ণ হয়ে- তবে
বন্দরে সৌধের ঊর্ধ্বে চাঁদের পরিধি মনে হবে,-
তত দিন পৃথিবীর কবি আমি- অকবির অবলেশ আমি
ভয় পেয়ে দেখি- সূর্য ওঠে;
ভয় পেয়ে দেখি- অস্তগামী।
যে-সমাজ নেই তবু র’য়ে গেছে, সেখানে কায়েমী
মরুকে নদীর মতো মনে ভেবে অনুপম সাঁকো
আজীবন গ’ড়ে তবু আমাদের প্রাণে
প্রীতি নেই- প্রেম আসে নাকো’।
কোথাও নিয়তিহীন নিত্য নরনারীদের খুঁজে
ইতিহাস হয়তো ক্রান্তির শব্দ শোনে, পিছে টানে;
অনন্ত গণনাকাল সৃষ্টি ক’রে চলে;
কেবলই ব্যক্তির মৃত্যু গণনাবিহীন হয়ে প’ড়ে থাকে জেনে নিয়ে- তবে
তাহাদের দলে ভিড়ে কিছু নেই- তবু
সেই মহাবাহিনীর মতো হতে হবে?

সংকল্পের সকল সময়
শূন্য মনে হয়
তবুও তো ভোর আসে- হঠাৎ উৎসের মতো, আন্তরিকভাবে;
জীবনধারণ ছেপে নয়,- তবু
জীবনের মতন প্রভাবে;
মরুর বালির চেয়ে মিল মনে হয়
বালিছুট সূর্যের বিস্ময়।
মহীয়ান কিছু এই শতাব্দীতে আছে,- আরো এসে যেতে পারেঃ
মহান সাগর গ্রাম নগর নিরুপম নদী;-
যদিও কাহারো প্রাণে আজ এই মরণের কালিমাকে ক্ষমা করা যাবে;
অনুভব করা যাবে স্মরণের পথ ধ’রে চ’লেঃ
কাজ ক’রে ভুল হলে, রক্ত হলে, মানুষের অপরাধ ম্যামথের ময়
কত শত রূপান্তর ভেঙে জয়জয়ন্তীর সূর্য পেতে হলে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *