০৫. নতুনবউঠান

নতুনবউঠান, এ-দুটি লাইন মনে এসে টেনে আনল আরও দুটি লাইন। লিখে রাখলাম আমার খাতায় :

বন্ধু, তুমি বুঝবে কি মোর সহজ বলা—নাই যে আমার ছলাকলা, কইতে গেলে রইবে কি তার সরলতা। ‘

প্রাণের ঠাকুরপো, তোমার একটি চিঠি মাত্র কয়েক লাইনের। কিন্তু কী যে লজ্জা পেয়েছিলাম চিঠিটা পড়ে। আবার ভালো লেগেছিল—আমার বুকের মধ্যে সারাবেলা রেখে দিয়েছিলাম চিঠিটা। এই সেই চিঠি—আমার সঙ্গে চিতায় পুড়বে। তুমি লিখেছ, ‘তব ওষ্ঠ দশনদংশনে টুটে যাক পূর্ণফলগুলি। ‘ তুমি যখন দুষ্টুমি করো ঠাকুরপো, তোমার সঙ্গে পেরে উঠবে কে? তুমি যে ভাষার জাদুকর—এই একটা লাইনে তুমি কি না বললে! আজ জীবনের শেষ দিনে আরও। একবার বুকের মধ্যে রেখে দিতে ইচ্ছে করছে তোমার এই একটি লাইন—এত মায়া কী করে ছেড়ে যাই ঠাকুরপো?

রবি, আর একটি চিঠিতে তুমি লিখেছ এমন কয়েকটি লাইন যা হয়তো বাঁচিয়ে রাখাই উচিত–ভবিষ্যতে যার মূল্য হতে পারে অপরিসীম। তবু সেটাকেও পুড়িয়ে দিও কারণ সেই চিঠিতেও যে প্রকাশ পেয়েছে তোমার অবৈধ প্রেম:

‘নতুনবউঠান, তুমি শুনতে ভালোবাস প্রতাপাদিত্যের গল্প। আজকাল প্রায়ই দুপুরবেলা তোমার একলা ঘরে তোমার পাশে শুয়ে শুয়ে পড়ে শোনাই প্রতাপচন্দ্র ঘোষের বঙ্গাধিপ পরাজয়ের কাহিনি। তোমাকে জানাই, তোমাকেই গল্প শোনাতে শোনাতে আর তোমার হাত পাখার বাতাস খেতে খেতে আমার মনের মধ্যে নিঃশব্দে রচিত হল, ‘বউঠাকুরানির হাট’। ঠাকুরপো, যাঁরা তোমার ‘বউঠাকুরানির হাট’ পড়ে মুগ্ধ হবেন, বা ভাববেন কত না কথা, তাঁরা কি জানবেন। কোনওদিন এই কথা যে দুপুরবেলা আমার পাশে শুয়ে-শুয়ে আমার হাতপাখার বাতাস খেতে খেতে তুমি প্রথম ভেবেছিলে এই উপন্যাসের গল্প? তুমি যা আমাকে বলেছ তা আমারই থাক, আমার সঙ্গে পুড়ে যাক তোমার ভালোবাসার এই স্বীকারোক্তি।

অনেক আদরের ঠাকুরপো, তোমার বেশিরভাগই চিঠিই বেশ ছোট। আমার মন খারাপ হয়ে যেত চিঠি খুব ছোট হলে। কিন্তু ক্রমে বুঝতে পারলাম, দু-একটি কথায় তুমি এত কথা বলতে পারো যে তোমার বেশি লেখার দরকার হয় না। তা ছাড়া, ছোট চিঠি লুকিয়ে রাখাও সহজ। হয়তো সেকথা ভেবেও তুমি চিঠির বহর ছোট রাখতে। তবে চিঠি তোমার যতই ছোট হোক ঠাকুরপো, আমার। কাছে তোমার কোনও চিঠি পড়াই শেষ হয়নি—আজও। কতবার পড়েছি এইসব চিঠি। তবু। বারবার পড়তে ইচ্ছে হয়। যেমন এই চিঠিটা, লিখেছ, ‘নতুনবউঠান, আবার চলে যেতে হবে তোমাকে ছেড়ে? আবার বিচ্ছেদ? আবার তোমার-আমার মনকেমনের কষ্ট? নতুনবউঠান, আজ সন্ধেবেলায় যখন আমরা দু’জনে দাঁড়ালাম দক্ষিণের ছাদের নিঃসঙ্গ কিনারে, মনে হল ধূসর দিনের দিকে তাকিয়ে, যেন দাঁড়িয়ে আছি সাগরের তীরে তোমারই পাশে। অনেক দূরে, সাগরের ওপারে, মেঘাচ্ছন্ন অন্ধকার এক দেশ, যেখানে যেতে হবে তোমাকে ছেড়ে। আমার মন হঠাৎ কথা বলে উঠল কবিতায় দিবস ফুরাবে যবে, সে দেশে যাইতে হবে। এপারে ফেলিয়া যাব আমার তপন শশী। নতুনবউঠান, তুমি আমার তপন শশী, তুমিই আমার জীবনের ধ্রুবতারা, তোমাকে ছেড়ে আমি কোথাও কোনওদিন যাব না। যেতে পারব না। ‘ ঠাকুরপো, এসব কথা যখন লিখেছিলে তখন তুমিও কি জানতে অক্ষরে-অক্ষরে বাসা বেঁধে আছে কত বড় মিথ্যে!

আমার প্রাণের রবি, কত কথা মনের মধ্যে জেগে উঠেই হারিয়ে যাচ্ছে, তলিয়ে যাচ্ছে অন্ধকারে চিরকালের মতো কোনওদিন আর ফিরে আসবে না তারা। মনে পড়ছে, সেদিন ছিল ৫ই জুলাই। আমার জন্মদিন। আবার বিয়ের দিনও। তোমার জ্যোতিদাদাকে বলেছিলাম, যেন একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরেন। তিনি সেদিন বাড়িই ফিরলেন না। জানি না তিনি সারারাত কোথায়। ছিলেন। মেজবউঠাকরুণের কাছে না থিয়েটারের মজলিসে। অনেক রাত হয়ে গেল। বুকের মধ্যে কী যে আগুন জ্বলছিল সেই রাতেই আমি চিতায় পুড়েছি ঠাকুরপো। আমার মরণ হয়েছে সেই রাতেই। এমন সময়ে তুমি ঢুকলে ঘরে। আমি বললাম, এত রাতে কোথা থেকে? তুমি বললে, আজ তোমার জন্মদিন। সবাই ভুলেছে। আমি ভুলিনি নতুনবউঠান। আমার তখন সব জ্বলছে। ঝলসে গেছে সব শরীর মন। ঠাকুরপো, তুমি কাছে এসে দাঁড়ালে। আমার বুকের আঁচল জ্বলছে, জ্বলছে-পুড়ছে আমার চোখ, যে চোখ তুমি এত ভালোবাস, আমি কিছু দেখতে পাচ্ছি না। অন্ধকার ঘরে জ্বলছি আর পুড়ে ছাই হচ্ছি—তুমি জড়িয়ে ধরলে আমার জ্বলন্ত শরীরটাকে।

ঠাকুরপো, আমি জানতাম না আমার শরীরে এখনও এত আগুন ছিল। তুমিও কি ভাবতে পেরেছিলে? তুমি হয়তো না জেনেই তোমার বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরেছিলে সেই আগুন। আমার আগুন ঠাকুরপো ছড়িয়ে পড়ল তোমার সারা শরীরে। তুমিও গেলে ঝলসে। আমার আদরে ছিল সেদিন শুকনো কান্না। আমার শরীরে চিতার শিখা। তুমি আঁকড়ে ধরেছিলে সেই অন্ধকার দহন।

ঠাকুরপো, অমন আদর এ-জীবনে আর পাইনি। তুমি আদর করছ আমাকে, আর আমার জ্বলন্ত ইচ্ছে ক্রমাগত বেরিয়ে আসতে চাইছে বহ্নিমান আবরণের যন্ত্রণা থেকে। মনে হল আমার কানের লতিতে হঠাৎ যেন ছোবল মারল আগুনের দংশন, একটিই শব্দ বেরিয়ে এল তখন ঠাকুরপো! কতক্ষণ আমার জ্বলন্ত শরীরটা তুমি আঁকড়ে ছিলে—কতক্ষণ আমার সঙ্গে সে-রাত্রে তুমিও পুড়েছিলে—আমি কিছু জানি না। তোমরা বুকের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুম ভাঙল তখন পুবের আকাশে সবে দেখা দিয়েছে আলো। দেখলাম একাই শুয়ে আছি। আমার বুকের ওপর তুমি রেখে গেছ তোমার দু-লাইনের এই চিঠি :

‘মেঘের দুঃস্বপ্নে মগ্ন দিনের মতন।
কাঁদিয়া কাটিবে কিরে সারাটি যৌবন।’

কয়েকদিনের মধ্যে আমি আত্মহত্যার চেষ্টা করলাম। সেই আমার প্রথম চেষ্টা। কিন্তু মরলাম না। তুমি লিখলে, ‘জ্যোর্তিময় তীর হতে আঁধার সাগরে/ঝাঁপায়ে পড়িল এক তারা/একেবারে উন্মাদের পারা!’

আমার ঠাকুরপো, ক্রমে বেলা বাড়ছে। আজ খিদেতেষ্টা সব ভুলেছি। প্রায় দেখতে পাচ্ছি পথের শেষ। এত যন্ত্রণার অবসান আর খুব দূরে নয়। তবু এখনই মনে হচ্ছে, যদি তুমি আমারই থাকতে ঠাকুরপো, যেমন ছিলে তুমি, তাহলে এখনও আমি থাকতে পারতাম পৃথিবীতে, আমার সব বেদনা ও অপমান মেনে নিয়েও। তুমি থাকলে জীবন এমন নিঃস্ব হতে যেত না।

এই দেখো! পেয়েছি সেই চিঠিটা। এ-চিঠিটা বেশদীর্ঘ। চিঠিটা যখন প্রথম পড়ি, সত্যি কথা বলছি, ভালো লাগেনি আমার। নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয়েছিল। আর তোমাকেই যেন দূরে সরিয়ে দিয়েছিল মন! কিন্তু তোমার এই চিঠিটা কোনওদিন আমার কাছে ফুরিয়ে গেল না। বারবার আমার নিঃসঙ্গ মুহূর্তে ফিরে-ফিরে এসেছে এই চিঠি আমার জীবনে! যতবার পড়েছি। চিঠিটা, ততবারই খুঁজে পেয়েছি নতুন অর্থ প্রতিটি শব্দ নতুনভাবে আদর করেছে আমাকে।

আমার যে একটা শরীর আছে ঠাকুরপো মাঝেমাঝে সত্যি ভুলে যাই—এই শরীরটা এবার পুড়বে, শরীরের সব চিহ্ন, সমস্ত ইচ্ছে আগুনে ছাই হবে। আজ শরীরটাকে ছেড়ে যাওয়ার আগে আরও একবার পড়তে ইচ্ছে করছে চিঠিটা। এ-চিঠির অক্ষরে-অক্ষরে আমার দেহ তোমার চোখে হয়ে উঠেছে উৎসব—সারা চিঠিটা যেন আমার রূপের মধ্যে যে-আর্দ্রতার দেখা পেয়েছিলে তুমি, তারই উদযাপন। তোমার-আমার তৈরি নন্দনকাননের মতো আজ আমার দেহটাও শীর্ণ, জীর্ণ,। শুকনো। নন্দনকাননে শুধুই এখন শুকনো পাতার ভিড়, একটিও ফুল নেই। আমার শরীরের কোনওকালে যে ফুল ফুটেছিল, তার চিহ্নমাত্র নেই। অথচ তুমিই একদিন আমাকে ডেকেছিলে ‘সরোবরময়ী’ বলে। বলেছিলে আমি শ্রীরাধার মতো আর্দ্র মেয়ে। আমার দেহ তোমার চোখে বৃষ্টি ভেজা বাগানের মতো। এই তো তুমি লিখেছ :

‘আমার অনেক আদরের নতুনবউঠান, আজ বড্ড গরম পড়েছে। আকাশে মেঘ নেই। ভুবনে বৃষ্টি নেই। তৃষ্ণা আমার বক্ষ জুড়ে। হঠাৎ দেখলাম তোমাকে, বিকেলবেলা সদ্য গা-ধোয়া তুমি, নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে নন্দনকাননের দোলায় গিয়ে বসলে, তোমার গ্রীবাটি এখনও ভিজে ভিজে। তোমার গ্রীবায় জলভেজা চুলগুলি চিকচিক করে লোভ দেখাল আমাকে। তোমার। সদ্যস্নাত শরীরের ভিজেভাবটি ছড়িয়ে পড়েছে তোমার শাড়ির শরীরেও। আমার মনে এল চণ্ডীদাসের কাব্যে ‘গলিতবসন’ শব্দটি। আর তখুনি মনে হল, নতুনবউঠান, তুমিই যেন শ্রীরাধা। তোমার আঁচলটির প্রতি উদাসীন। এক আর্দ্র আলস্যের মধ্যে যেন ডুবে আছ তুমি। শ্রীরাধার ভিজে বসনকে চণ্ডীদাস বর্ণনা করেছেন একটি শব্দে—’রসনাহীন’। অর্থাৎ মেখলাবন্ধনমুক্ত। তোমার আঁচলটিও তেমনি যেন ‘রসনাহীন’। দক্ষিণের বারান্দার কোণ থেকে আমি তাকিয়েছিলাম তোমার দিকে। চণ্ডীদাস যেমন দেখেছেন রাধাকে, ঠিক তেমনি দেখলাম আমি তোমাকে। ’লাবণ্য জল তোর সিহাল কুন্তল/বদন কমল শোভে অলক ভষল। ‘ তোমার দিকে। তাকিয়েও আমার মনে হল, যদিও আকাশে মেঘ নেই, ভুবন জলহীন রুক্ষ, তবু তোমার শরীর যেন সরোবর, তোমার মুখটি সেই শরীরসরোবরে পদ্মের মতো বিরাজমান। তোমার মুখের ওপর উড়ু উড়ু চুল খেলা করছে, যেন ভ্রমর। নতুনবউঠান, তোমার হাসি আর তোমার চোখ, আমি কোনওদিন ভুলতে পারব না। তোমাকে একটু আগেই তো দেখলাম নন্দনকানন্দের দোলনায়, আকাশ পানে তাকিয়ে। চণ্ডীদাসের মতো আমারও মনে হল, সরোবর-বউঠানের দুটি চোখে দুটি নীলকমল ভাসছে। আর বিকেলবেলার আলোয় তোমার ওই সদ্যধৌত দুটি গাল কেমন লাগল আমার জানো? চণ্ডীদাসকে দিয়ে বলিয়ে নিই আমার মনের কথা—নতুনবউঠান, তোমার দুটি গাল নেশা ধরানো ভিজেভিজে মহুয়া ফুল। সুন্দরী নতুনবউঠান, তুমি সরোবরময়ী।

এবার শোনো, খুব মন দিয়ে শোনো, কেন তোমাকে বললাম সরোবরময়ী। রাধার ঠোঁট দুটিকে বৈষ্ণবকাব্যে বলা হয়েছে, যেন পদ্মের ভেজা পাপড়ি। আমিও যদিও তোমার ঠোঁট দুটিকে তাই বলি—নতুনবউঠান, খুব রাগ করবে আমার ওপর? আর যদি বলি, তোমার হাসি যেন সিক্ত পদ্ম। তোমাকে বরং বলি বৈষ্ণপদাবলীর রাধা কতদূর ভিজে মেয়ে–রাধার অধর যেন সদ্যফোটা ভিজে বাঁধুলি ফুল–ফুটিল বন্দুলী ফুল বেকত অধর। রাধার বাহু যেন সিক্ত মৃণাল। রাধার করতল যেন আর্দ্র রক্তপদ্ম। তোমার করতল আমার করতলে যখনই ধরা দিয়েছে, আমারও মনে হয়েছে একই কথা। রাধার অপরূপ স্তন দুটি যেন শরীর সরোবরে সাঁতারু হাঁস। রাধার ভিজে কোমরের তিনটি ভাঁজ, ত্রিবলি, যেন সরোবর-ঘাটের তিনটি সিক্ত সোপান। রাধার নধর নিতম্ব যেন সরোবর ঘাটের পিছল শিলা। নতুনবউঠান, এই ভেজা রাধার জন্যেই শ্রীকৃষ্ণ বিরহে জীর্ণ। পুরুষ যুগে-যুগে চেয়েছে এমন নারী, তাকে না পাওয়ার জন্যে কষ্টও পেয়েছে। বৈষ্ণবকাব্যে রাধার নামের নারীটি সদা ‘তরল’। নতুনবউঠান, সংস্কৃত ভাষায় ‘তরল’ শব্দটি ‘চপল’ অর্থেও ব্যবহৃত হয়। রাধার শরীর কি শুধুই ‘তরল’। সেই তরলতা রাধার শরীর ও স্বভাবের চাপল্যকেও যে বোঝাচ্ছে!

রাধার গভীর নাভিতে দুলছে নাগকেশর ফুল। সেই অনন্যার জঙ্ঘায় ফুটছে স্বর্ণকেতকী। তার তেলতেলে ভিজে কাপড় যেন তিসির তৈরি। কী আশ্চর্য তুলনাযার গভীর প্রসারী ব্যঞ্জনা এই বার্তাটুকু পৌঁছে দেয় যে, জল আর তেল যেমন এক হয় না, তেমনি একসঙ্গে থাকে না রাধার। শরীর ও বসন। রাধার ‘তরল’ অর্থাৎ চপল ও আর্দ্র শরীর থেকে ক্রমাগত খসে যাচ্ছে আবরণ।

নতুনবউঠান, আমি জানি তুমি বলবে, বৈষ্ণব কবিরা গভীর রাত্রে ঝড়ের সময়ে রাধিকার অকাতর অভিসার সম্বন্ধে অনেক ভালো মিষ্টি কবিতা লিখেছেন, কিন্তু একটা কথা ভাবেননি, এরকম ঝড়ে তিনি কৃষ্ণের কাছে কী মূর্তি নিয়ে উপস্থিত হতেন। তাঁর চুলগুলোর অবস্থা যে কীরকম হত! কেশবিন্যাসেরই কীরকম দশা? ধুলোতে লিপ্ত হয়ে, তার ওপর বৃষ্টির জলে কাদা জমিয়ে, কুঞ্জবনে কীরকম অপরূপ মূর্তি করে গিয়েই দাঁড়াতেন!

আদরের বউঠান, তোমার যুক্তির এবং বক্তব্যের সারবত্তায় আমি এতটুকু সন্দেহ প্রকাশ করছি না। কিন্তু বৈষ্ণব পদাবলীর রাধা তো প্রেমের নারীরূপ। সেই চিরন্তন রমণী শ্রাবণের অন্ধকার রাত্রে কদম্ববনের ছায়া দিয়ে যমুনার তীরপথে প্রেমের আকর্ষণে ঝরবৃষ্টির মাঝে আত্মবিহ্বল হয়ে স্বপ্নগতার মতো চলেছেন, পাছে শোনা যায় বলে পায়ের নূপুর খুলে রেখেছেন, পাছে দেখা যায়। বলে রাতের অন্ধকারে পরেছেন নীলাম্বরী কাপড়, কিন্তু পাছে ভিজে যান বলে ছাতা নেননি। পাছে পড়ে যান বলে বাতি আনা আবশ্যক বোধ করেননি। নতুনবউঠান, প্রেম তো এই রকমই।

আদরের বউঠান, একথা তোমাকে কতবার বলেছি, আবার বলছি, বৈষ্ণব পদাবলীর অভিসার ভাবনায় বৃষ্টি, জল, রতিসুখ, শৃঙ্গার সব অঙ্গাঙ্গি জড়িয়ে আছে। তাদের পৃথক করা যায় না। আমি অন্তত পারি না। তোমার বুকে যে হারটি দুলছে, সেটিও রাধার হারের মতো—’তরলিত’। সেখান থেকে রাধাই ঝরে পড়ছে বিন্দু বিন্দু। জয়দেব লিখছেন, রাধার হার থেকে ঝরে পড়ে তার রতিশ্রমের ঘাম :

শ্রমজলকণভরসুভগশরীরা।
পরিপতিতোরশিরতিরণধীরা।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *