চারপর্ব

চারপর্ব

তিতুকে আমরা অনেক পরিকল্পনা করে, অনেক অঙ্ক কষে এনেছিলাম।

বিবাহবার্ষিকীর পাঁচ বছর পরে। প্রথম বছরটা প্রোবেশন পিরিয়ড। আমার বরই বলেছিল কথাটা।—বিয়েটা টিকবে কি না বুঝতে দাও! আমার বুক কাঁপিয়ে বলেছিল আমার বর।

কী করে বুঝবে?

বাঃ, গুরুতর মতবিরোধ হচ্ছে কিনা, বাড়ির আর সবার সঙ্গে মানাতে পারছ কিনা…

মানতে না পারলে?

হাত উলটে ও বলল, কী আর করা, আলাদা সংসার ফাঁদতে হবে। আপনি আর কপনি।

আর গুরুতর মতবিরোধ হলে?

একটু ভাবনার কথা হবে। লাঠালাঠির পর্যায়ে চলে যাবার সম্ভাবনা থাকলে বা পরস্পরের কম্প্যানি তেতো বড়ির মতো লাগতে থাকলে, চটপট গাঁটছড়াটা খুলে…

থাক থাক, চুপ করো—আতঙ্কে শিউরে উঠি আমি।

ও হাসছিল। কিন্তু নিশ্চিন্ত নিরাপত্তার ভাবটা আমার সেই দিনই উবে গিয়েছিল। কত কষ্ট করে, চোখের জল সামলে, মা-বাবাকে চোখের জলে নাকের জলে করে এই নিরাপত্তাটুকুর জন্যেই তো বিয়ে করা! নিজের ওপর যদি ভরসা থাকত সুজিতদার সঙ্গে ব্যাপারটাই তো চালিয়ে যেতে পারতাম। সুজিত সরকার আমার কলিগ। সব দিক থেকে আমার পছন্দ, আমার উপযুক্ত। চেহারায়, স্বভাবে, গুণে। দোষ শুধু একটাই। মানুষটি বিবাহিত।

যেদিন বাবা-মাকে বললাম বিয়ে করব, পাত্র দেখো। দুজনেরই তো আনন্দে কাঁদবার অবস্থা। কোনোদিন মুখ ফুটে বলিনি, কিন্তু সুজিতের ব্যাপারটা ওঁরা জানতেন, কাঁটা হয়ে থাকতেন।

বলেছিলাম, যাকে-তাকে কিন্তু বিয়ে করব না। শতকরা শত ভাগ সলভেন্ট হওয়া চাই। আমি যদি চাকরি করি নিজের ইচ্ছেয় করব, প্রয়োজনে নয়। বাড়ি আধুনিক হবে। দেওর-ননদে আপত্তি নেই।

আসলে আমি হইচই করে বাঁচতে চেয়েছিলাম। সব সময়ে একটা হালকা বাতাস বইলে আকাশে মেঘ জমতে পায় না। এমনই আমার বিশ্বাস। বড়ো চাকুরে ইঞ্জিনিয়ার জোগাড় হল। মা-বাবা এবং একটি বোনের সংসার। বাবা এখনও চাকরিতে আছেন। বোন বি এসসি পড়ছে। আলাপ করে ভালো লেগেছিল। মা বাবা সাধ্যাতীত দিয়েছিলেন। প্রোবেশনের কথায় আত্মারাম আমার খাঁচা ছাড়া। তখন থেকেই আমি তিতুর জন্যে হন্যে হয়ে উঠেছিলাম।

আমার বর কীরকম আড়ো আড়ো, ছাড়ো-ছাড়ো। কাজের কথা ছাড়া কথা নেই। মন বা হৃদয় যে ওর দেহের কোনখানটায় থাকে আমি খুঁজে পাইনি। অথচ মানুষটা দেখতে ভালো, হাসে, হাসাতে পারে, মিশুক। সবই। তবু তবু কেমন যেন। সুজিত সরকারের আমার জন্যে সেই আর্তি! নাঃ, সুজিতই আমার প্রত্যাশা বাড়িয়ে দিয়েছে হয়তো। হয়তো এমনিই হয়। দেখে-শুনে বিয়ে মানেই তো ম্যারেজ অব কনভিনিয়েন্স।

চার বছর আমরা উড়ে উড়ে বেড়ালাম। হংকং, জাপান, মরিশাস, ব্যাঙ্কক, ম্যানিলা…।

বাচ্চাকাচ্চা থাকলে কী আর ওর সঙ্গে এভাবে স্বল্প নোটিসে ঘোরাঘুরি করতে পারতাম।

কিন্তু পঞ্চম বছরে আমি একেবারে মরিয়া হয়ে গেলাম। এবং দেখা গেল চিকিৎসা ছাড়া তিতু আসার বাধা আছে। তো চিকিৎসা করানো গেল। এবং তিতু এল। আমার কোল আলো করে। মন ভালো করে। কেউ জানে না আমি জানি তিতু, তিতুই এখন আমার সব। আমার মনের ভাব আমি ঘুণাক্ষরেও প্রকাশ করি না। কিন্তু নিজের মনের মধ্যে তিতুকে নিয়ে বুদ হরে থাকি।

আমার মা আলো-আলো মুখে বলেন, কী রে, এবার সুখী হয়েছিস তো?

আমি মাকে জড়িয়ে ধরি, তুমি এরকম সুখী হয়েছিলে মা? আমাকে পেয়ে? টুলুকে পেয়ে?

মা কিছু বলেন না, শুধু আমার পিঠের ওপর মার হাতের উষ্ণ চাপটা অনুভব করি। আর তখনই বুঝি-মা আর তার সন্তান, এই-ই সব। আর যা কিছু শুধু আয়োজন। শুধু ভূমিকা। শুধু নান্দীমুখ। আমার নিজের নতুন উপলব্ধি নিয়ে পৃথিবীর দিকে, সংসারের দিকে তাকাই। গোপন অনুভবের তাড়সে হাসি। উষ্ণ, প্রসন্ন, সব বোঝার, সব মানার হাসি। হয়তো শ্বশুর-শাশুড়িরা দুজনে গল্প করছেন। রাস্তায় সন্ধে, ধূসর তারারা আকাশে, আমি তিতুকে খাওয়াচ্ছি। শরীরের মধ্যে থেকে একটা গভীর তরল আনন্দের স্রোত উঠে আসছে। শ্বশুর-শাশুড়ির দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলি, যতই বল আর যতই কর, তোমাদের প্রাসঙ্গিকতা

একজোড়া ভূতপূর্ব জনক-জননীর, যারা নাকি আরও একজনকে জনক হওয়ার জন্যে পৃথিবীতে এনেছিল।

আমার বর অফিস থেকে ফিরে কফি খায়, আরামে চোখ বুজে বলে, আরও একটু ওপরে উঠলাম।

আমি ভাবি—তোমার ভূমিকা অর্ধেকের ওপর পালন করা হয়ে গেছে মহাশয়, এখন তুমি অবান্তর। তবে হ্যাঁ। তোমার উপার্জিত অতিরিক্ত টাকাটা, হয়তো অবস্থানটাও তিতুর কাজে লাগবে।

ননদ বলে, ওঃ বউদি, কী সর্বক্ষণ বাচ্চা নিয়ে লটপট করো বলো তো! চলো একটা ছবি দেখে আসি। ওকে মার কাছে রেখে চলো।

আমি রাজি না হতে ও বিরক্ত হয়ে বন্ধুকে ফোন করতে চলে যায়। আমি বলি, আর কদিন? তৈরি হচ্ছ, তোমার জমিও তৈরি হচ্ছে। কত নাচনকোঁদন এখন, ভাবছ তুমি একটা তুমি। ভীষণ আলাদা। ভীষণ একটা ভিন্নতা তোমার। অহম। জানো না, তুমি তিতুর জন্য পূর্ব হইতেই বলিপ্রদও। বলি কথাটা শুনতে খারাপ লাগে। কিন্তু বলি মানে কি? ভাগ। তুমি তিতুর ভাগে। তোমার জন্ম একজন তিতুর জন্যে। সারা পৃথিবী জুড়ে এই তিতুদের আনবার খেলা অনন্তকাল ধরে হয়ে চলেছে। তুমি নিমিত্তমাত্র। কিন্তু নিমিত্ত, শুধু নিমিত্ত হওয়ারও কী স্বস্তি! কী আনন্দ।

তিতু হামা দিচ্ছে, বাঘের মতো, বাঘের বাচ্চার মতো। কিছুটা গিয়ে তিতু গ্রুপ করে বসল। কোমর মুচড়ে পেছন ফিরে তাকিয়েছে আমার দিকে। হাসছে। চোখ দুটো? চোখ দুটো কী? আকাশ? সমুদ্র? না। না। আকাশ সমুদ্রের মধ্যে কেমন একটা রহস্যময় গভীরতা আছে। শিশুর চোখে সেসব থাকে না। শিশুর চোখ ভাবায় না। শুধু ভেতরটা গলিয়ে দেয়। শিশুর চোখ বিশুদ্ধ আনন্দ। তিতুর এই ভঙ্গি ও এই হাসি এই চাউনির দিকে তাকিয়ে আমার সুজিত-সংক্রান্ত ব্যথার কথা মনে পড়ে হাসি পেয়ে যায়। খুব অবান্তর লাগে তিতুর যাবার যত ভয় পাওয়ানো কথাবার্তাও।

তিতুর বাবা বলে, কী ব্যাপার? আজকাল তো তুমি আর নালিশ করো না?

কীসের নালিশ?

বাঃ, ওই যে তুমি বলতে আমার নাকি হৃদয় নেই, মন নেই, মনের খবর তো কই আর নিতে দেখি না।

তোমার মনের খবর তুমিই রাখো বাবা, আমার কাজ নেই—আমি হেসে উড়িয়ে দিই।

সে কী? আচ্ছা ধরো, মনটা যদি আর কাউকে দিয়ে ফেলি?

তিতুকে কোলে নিয়েছিলাম। সে দু হাত বাড়িয়ে বাবার কাছে যায়। আর কাউকে মন দেওয়ার কথা জনক বেমালুম ভুলে যায়। কী খেলা! কী খেলা! হাম দিতে গিয়ে তিতু বাবার গাল কামড়ে ধরছে। দাঁত উঠবে, মাড়ি সুড়সুড় করছে বোধ হয়। বাবা হেসে অস্থির।

এই আমার কাতুকুতু লাগছে। কাতুকুতু দিচ্ছিস কেন?

যত অবোধ হাসি ছেলের। তত হাসি বাবার। অর্থাৎ কি না যে মন ছিল না, ফোকলা ছিল মনের জায়গাটা, সেখানে কচি একটা মন গজিয়েছে, মনটা অন্য আর কাকে দেবে? বাবা তিতু সোনাকেই দিয়ে দিয়েছে। কখনও কখনও তিতুর বাবা বলে, আমাকে হয়তো বছর দুয়েকের জন্যে বাইরে পাঠাবে। তুমি, তোমরা যেতে পারবে তো?

তিন বছরে তিতুকে স্কুলে ভরতি করতে হবে, তার আগে হলে পারব, নইলে…

হুঁ, ওর বাবা চিন্তিত হয়ে পড়ে। আমি হাসি। যাও এবার কোথায় যাবে!

শ্বশুরমশাইয়ের সঙ্গে আমার খুব জমে। মানুষটা দার্শনিক প্রকৃতির। একটু শুদ্ধ করে কথা বলবার বাতিক আছে। সেটা ওঁর ছেলেমেয়ের কাছে হাসির জিনিস। স্ত্রীর কাছে বিরক্তিকর। আমার খারাপ লাগে না। সব সময়ে তো বলছেন না। মেজাজ এলে বলছেন।

উনি বলেন, আচ্ছা বউমা, এই যে তিতু আসাতে সংসারের মধ্যে একটা পরিবর্তন এসেছে, এটা টের পাও?

আমি কিছু বলি না, হাসি খালি।

উনি নিজের বলার আনন্দেই বলেন, তোমরা ধরো, আর আগের মতো নেই। খুব গৃহকেন্দ্রিক হয়ে গেছ। বা তিতুকেন্দ্রিক হয়ে গেছ। সে কী বাচ্চাটার তোমাদের প্রয়োজন বলে? কক্ষনো না! আসলে শিশুর মধ্যে দিয়ে আমরা নিজেদেরই নতুন করে পাই। রিনিউ করি। নিজেদের প্রতিচ্ছবি, নিজেদের পুনরাবৃত্তি, নিজেদের চিরায়ণ এটাই গোপন সত্য।—উনি তো আমার মতামত চান না। নিজের কথা, নিজের উপলব্ধির কথাই বলে চলেন। আমার মত যদি চাইতেন তো বলতাম—প্রতিচ্ছবি, পুনরাবৃত্তি ওসব বাজে কথা। এই যে তিতুটা হয়েছে, ও কি আমার মতো? ওর বাবার মতো? কোনোখানটাও নয়। ওর মধ্যে মাঝে মাঝে আমার ভাই টুলুর আদল দেখতে পাই, মাঝে মাঝে আমার শাশুড়ির আদল দেখতে পাই। শ্বশুরমশাই বলেন তিতু নাকি ওঁর বড় ছেলে, তিন বছর বয়সে যে মারা যায় তার মতো দেখতে। তা সেই তিন বছরের পুচকে ভাসুরের আমার কোনো ছবিই নেই। তেতাল্লিশ-চুয়াল্লিশ বছর আগে মৃত একটি শিশুর মুখ কী ওঁদের সত্যিই মনে আছে? আসল কথা, তিতু তিতুর মতো। সব শিশুর যা যা সাধারণ লক্ষণ থাকে সেই লক্ষণগুলো মিলিয়ে তাকে অন্য কোনো শিশুর মতো লাগতে পারে, কিন্তু ও নতুন। ও আলাদাও।

.

দুই

তিতান, তিতাই এখানে এসো।

নো। তুমি দুধ খাওয়াবে।

দুধ তো খেতেই হবে বাবা।

কেন?

ছোটোদের খেতে হয়।

দাদাই কি ছোটো? দাদাই তো খায়। দাদাইকে দাও।

দাদাই তো খেয়েছেন।

তাহলে দিদাই?

দিদাইও খেয়েছেন।

তবে পিয়া?

পিয়াও খেয়েছে?

তবে বাবাই?

বাবাই খাবে, রাত্তিরবেলা।

তুমি?

আমি খেতে ভালোবাসি না তিতু। হাঙ্গামা করো না।

আমিও ভালোবাসি না।

তুমি ছোটো। চকলেট দিয়ে দিচ্ছি খেয়ে নাও।

রবিও তো ছোটো, ওরও তো জামাপ্যান্ট ছোটো, ও দুধ খেতে ভালোবাসে। কী রে রবি, বাসিস না?…

রবি আমাদের ফরমাশের ছেলে। সে চুপ করে থাকে।

দাও, ওকে দাও, ও তো রোগা, আমি তো মোটা, আমার তো ভুড়ি আছে।… আমি রাগ করে রান্নাঘরের দিকে চলে যাই। তিতু ছুটে আসছে।

দিলে না? রবিকে দিলে না?

দিচ্ছি। তাহলে তুমি খাবে তো?

আর্ধেকটা মা, ও মা, আর্ধেকটা… নেই-আঁকড়া আবদারের সুর তিতুর গলায়। এক গ্লাস দুধ অতএব দুটো কাপে ভাগ করি, হাতল ছাড়া রবির কাপ, আর তিতুর ফুলকাটা মগ।

রবি খুব কাঁচুমাচু মুখে কাপটা নেয়। এবং সেই মুহূর্তে ওর কাপটা ছিনিয়ে নিয়ে তিতু চোঁ করে দুধটা মেরে দেয়।

আমি হতভম্ব। রবির মুখ যেন অনেক টাকা চুরি করে ধরা পড়েছে।

তোমাকে তোমার কাপে দিয়েছিলাম। তুমি কেন ওরটা খেলে?

আমার কাপটায় রোজ খাই। রবির কাপটায় আজ খেতে ইচ্ছে হল।…

মস্ত বড়ো ফুটবল বগলে নিয়ে তিতু ছুট লাগায়, আর রবি, রবি আয়। রেগেমেগে বলি, রবি আবার কী? রবিদা বলতে পার না? তোমার চেয়ে পাঁচ বছরের বড়ো।

রবি তো চাকর। চা করে। চাকরকে আবার দাদা বলে না কি? তিতু ছুটতে ছুটতেই বলে।

চাকর কথাটা আমাদের পরিবারে ব্যবহার হয় না, তিতু কোথা থেকে শিখল, আমি জানি না। চাকর বলে দাদা বলবে না। কিন্তু ছোটো বলে তাকে দুধ খাওয়াতে হবে। কী অদ্ভুত এলোমেলো বিচার!

তিতুর দিদা দুটো একরকমের মগ কিনে দিয়েছেন। একটা সাদা আর একটা হালকা সবুজ। রবি আর তিতুর সামনে রেখেছেন। বল, রবি কোনটা নিবি? তিতু কোনটা নিবি?

তিতু রবির দিকে তাকায়। রবি চোরা চোখে চায় তিতুর দিকে। রবি বুদ্ধিমান ছেলে, বোঝে সাদাটাই ওর নেওয়া উচিত। ও সাদাটা তুলে নেয়। আমার শয়তান ছেলে অমনি ছোঁ মেরে সেটা নিয়ে নেয়।

আমি রবিরটা নেব দিদা।

দিদা নিজের নৈরাশ্য চেপে বলেন, ঠিক আছে। যে যার পছন্দ করে নিলে। পরে কিন্তু পালটানো চলবে না। আমরা সবাই যে যার কাপে খাই। প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব কাপ দরকার। কেমন?…

কাপপর্ব চুকল। কিন্তু রবি পর্ব চুকলে তো!

রবি রান্নাঘরের মেঝেয় বসে খায়। কী মজা! টেবিলে খেতে হয় না। তিতুও মেঝেতে হাঁটু গেড়ে বসে খাবে। খাক, তাই খাক। রবিকে টেবিলে তোলার চেয়ে তিতুকে মেঝেতে নামানো ভালো। খালি তীক্ষ্ণদৃষ্টি রাখি রবির পাত থেকে কিছু তুলে না খায়। স্বাস্থ্যের নিয়মকানুন শেখাই। রবিকে টুথপেস্ট ব্রাশ কিনে দিয়েছি। নতুন জামাকাপড়। দু-জোড়া জুতো। বাড়িতে রবি চটি পরে চ্যাটাং চ্যাটাং করে ঘুরবে কেউই সইতে পারবে না, সুতরাং তিতুই খালি পায়ে ঘোরে। শ্বশুরমশাই সান্ত্বনা দেওয়ার মতো করে বলেন, পায়ের সঙ্গে মেঝের মাটির কনট্যাক্ট ভালো বউমা, নার্ভের পক্ষে তো বিশেষ ভালো। দেখবে, প্রথম প্রথম সর্দি-কাশি হলেও পরে ইমিউনিটি গ্রো করবে।

কিন্তু তিতু ভীষণ বাড়াবাড়ি শুরু করেছে ক্রমশ। নিজের ঘর ছেড়ে সিঁড়ির তলায় রবির বিছানায় গিয়ে শুয়ে থাকবে। কী? না চায়ের দোকানের গল্প শুনবে। রবি কিছুদিন চায়ের দোকানে কাজ করেছিল। কারখানার গল্প শুনবে। কী না, রবি কিছুদিন পেলাস্টিকের কারখানায় কাজ করেছিল। ভিক্ষের গল্প শুনবে। রবি কিছুদিন নাকি ভিক্ষেও করেছিল।

একটা ন বছরের ছেলের কত ঘাটে জল খাওয়ার অভিজ্ঞতা তাই ভাবি। ওর মা বাবা কী রোগে মারা যায়, রাস্তায় ঝুপড়িতে থাকত। সেই সময়ে ভিক্ষে করত, বাবু, আমার মা বাপ মরে গেছে, পঁচিশটা পয়সা দাও বাবু, মুড়ি খাব-ও-ও।

একদিন তিতু সুর করে বলতে বলতে বলতে ঢুকল। চোখ আধবুজোনো, মুখটা জলে মাখামাখি।

কী করছ, তিতু? ছিঃ, বাবা বলল।

ভিক্ষে করছি তো? আমার বাবা মা মরে গেছে। ওলাউঠো হয়েছিল গো বাবু!

তি-তু!—জোরে চেঁচাই।

ও কি কাঁদছেও?—ওর বাবা জিজ্ঞেস করে।

জল লাগিয়েছি তো মুখে। বাবা মা মরে গেলে কাঁদতে হয়!…

তিতু জ্ঞান দিয়ে সরে পড়ে।

আমার স্বামী বলে—এসব কী?

রবি। রবির থেকে…

তাড়াও, তাড়াও, অবিলম্বে তাড়াও রবিকে।

যদি কিছু হয়?

কী আবার হবে, ও সব চরে খাওয়া ছেলে, গোটা পঞ্চাশ টাকা এক্সট্রা দিয়ে বিদায় করো।

আমি রবির কথা বলছি না। তিতু ওকে খুব ভালোবাসে। ওর যদি…

কিছু হবে না, মনকে শক্ত করো, বাচ্চারা খুব তাড়াতাড়ি ভুলে যায়।

আমি তা সত্ত্বেও ইতস্তত করি। শিশু মন! কীভাবে যে কী আঘাত করে। কিন্তু রবি নিজেই একদিন চলে যায়। চলে যায় তিতুর অত্যাচারেই। রবিকে পড়তে হবে। ওর সঙ্গে। রবি একদম পড়তে ভালোবাসে না। পয়সার হিসেব করে চমৎকার। ছবি দেখতেও খুব ভালোবাসে। কিন্তু কিছু শেখাতে গেলে ওর মাথায় আর কিছু ঢোকে না। পড়াশোনার মতো বিচ্ছিরি কাজ তিতু একা করবে, রবি পার পেয়ে যাবে, এটা তিতুর পছন্দ নয়। এ ফ অ্যালিগেটর, বি ফ বেবুন, সি ফ ক্যামেল, ডি ফ ডগ। সে রবিকে পড়াতে থাকে। রবি ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে, বলে, যখন মা-বাবার সঙ্গে থাকতুম, এইরকম কুমির দেখেছিলুম, সাতটা আটটা, মা বললে কাগচের। কিলবিল করে বেড়াচ্ছিল।

তিতু বলে, ভ্যাট, কুমির নয় অ্যালিগেটর।

না কুমির।

তিতু এক ছপটি মারে রবিকে। আবার ভুল বলছিস। পড়াটা রবির কাছে একটু অতিরিক্ত হয়ে গেল। একদিন দোকানে জিলিপি কিনতে গিয়ে আর ফিরল না। নতুন জামাকাপড়, দু-জোড়া জুতো, নতুন ফিকে সবুজ মগ, দুধ, বই, খেলাধুলো সব ফেলে স্রেফ পড়ার ভয়ে রবি পালিয়ে গেল।

.

তিন

পারিবারিক অবস্থা ক্রমে ঘোরালো হয়ে উঠছে। কোথা থেকে যে কী হয়ে গেল, কখন হয়ে গেল আমি বুঝতেই পারিনি। ঝড়ের আগে আকাশে তো লালরং দেখা দেবে? প্রকৃতি থমকাবে? কোনো সূচনাই যদি না থাকে তো মানুষ বুঝবে কী করে যে আবহাওয়াটা খারাপ হতে যাচ্ছে? কীভাবে সতর্কীকরণ করবে কূল উপকূল?… সমুদ্রগামী ধীবরদের সতর্ক করা যাইতেছে যে আগামী আটচল্লিশ ঘন্টা… কিছুই বুঝিনি। হঠাৎ যেন ঘুম ভেঙে উঠে দেখলাম একটা অপরিচিত বাড়িতে বাস করছি। দুজন অনতিবৃদ্ধবৃদ্ধা আমার সঙ্গে কথা বলেন না, বা বলেন, মেপে মেপে, কেটে কেটে। একটি তরুণী-বাড়িতে প্রায় তাকে দেখাই যায় না, রাতে শুতে। আসে, একটি অনতিযুবক অফিস এবং নিজের ঘরের মধ্যে স্বেচ্ছাবন্দি থাকে। মুখ গম্ভীর, আর আমি একটি অনতিযুবতি, আমার আবহাওয়াও খুব ভালো না, আমি। বেঁকে ঝেকে কথা বলি। যদি সামান্য হাঁ বা না বলি, তাতেও আমার ক্ষোভ, ক্রোধ ভরা থাকে।

বিয়ের পরে চাকরিটা আমি ছেড়ে দিয়েছিলাম। আমার স্বামী বারণ করেছিল। বলেছিল, ছাড়ছ ছাড়ো পরে ঠ্যালা বুঝবে। মেয়েরা যত ঘর-বসা হয় ততই প্রবলেম তৈরি করে…। আমি কিছু না বলে শুধু হেসেছিলাম, আত্মপ্রত্যয়ের হাসি। তা ছাড়া কর্মক্ষেত্রে যে সুজিত সরকার আছে সে কথা তো আমার স্বামী জানে না! তার আর দোষ কী! কিন্তু আমি একটা অন্ধ গলি থেকে বেরোতে চেয়েছি, চেয়েছি চূড়ান্ত পুরুষকারের সঙ্গে, কাজেই আমি বেসরকারি অফিসের চমৎকার চাকরিটা এককথায় ছেড়ে দিয়েছিলাম।

এখন বাড়িতে চব্বিশ ঘন্টা থাকি বলেই আমার চোখে পড়ে যায় দাদুর এঁটো চা সসারে ঢেলে তিতু চুমুক দেয়। চোখে পড়ে হাজাঅলা হাতে দিদা তিতুকে ভাত মেখে দিচ্ছেন। এবং কী সর্বনাশের কথা তিতু ছাতে গিয়ে পাশের বাড়ির মজনুকে ইশারা করছে, তার লায়লা অর্থাৎ তিতুর পিয়া অর্থাৎ আমার ননদ মিতালি তাকে ছাতে ডাকছে। মিতালি আর পাশের বাড়ির ইন্দ্রনীলের প্রণয়-কাব্যে আমার পাঁচ বছরের তিতু মেঘদূত। আরও সর্বনাশের কথা আমার স্বামী আজকাল বোজ অফিস থেকে ফিরে মদ্যপান করছে। নেশা বড়ো সাংঘাতিক জিনিস। কর্মক্ষেত্রে প্রয়োজনে এধার সেধার পার্টিতে গিয়ে গ্লাস হাতে ঘোরাফেরা করাটাই তো কেতা। তা সেই গ্লাসের ভেতরের জিনিস কখন ভেতরে চলে যাচ্ছে, আরও যাচ্ছে…যেতে যেতে প্রয়োজন তৈরি হচ্ছে, পিপাসা তৈরি হচ্ছে, নেশাড় তা বুঝতে পারে না। আমার স্বামীও বুঝতে পারেনি। তা ছাড়া মদ্যপান নিয়ে তুলকালাম করা আজকাল একেবারেই অচল। একটু উচ্চঘেঁষে মধ্যবিত্ত বাড়িতেই সন্ধেবেলা গেলে মদ অফার করছে আজকাল। আমার স্বামী যে চোখের বাইরে অন্যত্র খেয়ে আউট হয়ে ফিরছে না, ঘরে বসে অভিজাত ভঙ্গিতে খাচ্ছে, এবং ঈষৎ টং হয়ে থাকছে, ঈষৎ উত্তেজিত, খুশি-খুশি যেন কোনো টুর্নামেন্ট জিতেছে টেনিস কি ব্যাডমিন্টনে—এই ই তো আমার অনেক সৌভাগ্য।

কিন্তু এই সমস্ত কিছুর ফলে যা হচ্ছে তা হল বলতে পারছি না বলতে পারছি না করেও একদিন শ্বশুরমশাইকে বলে ফেলেছি, বাবা আপনি এঁটো চা-টা তিতুকে দিলেন?

কী করে ভাবলে তুমি কথাটা বউমা, আমার কি সামান্যতম সেনসও নেই?

চা-ই বা ওকে দেওয়া কেন?

ছেলেমানুষ বড়োদের জিনিস একটু-আধটু চাখতে চায়, থাক আর কখনও দোব।

আর দিলেনও না, আমার সঙ্গে উনি আর স্বাভাবিকও হতে পারলেন না। কেমন একটা চাপা ক্ষোভ পুষে রাখলেন।

শাশুড়িকে হাজার কথাটা কিছুতেই বলতে পারলাম না। ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করে মলম কিনে আনলাম। হাতে জল লাগানো বারণ। জল লাগলেই সঙ্গে সঙ্গে মুছে ফেলতে হবে। দিনে রাতে তিনবার ওষুধ লাগিয়ে দিই। দেখতে পেলেই জলহাত মুছিয়ে দিই। কিন্তু জল ঘাঁটা বন্ধ করব কী করে? হাত সবসময়ে ভিজে, হাজা সেরে আসে আবার হয়। খোসা-ওঠা-ওঠা হাত। কী ঘেন্না যে করে! ফলে চাপা ক্ষোভটা আমার মধ্যে জমে থাকে। যখন তখন ঝেঝে কথা বলি। খাওয়ার সময় এলেই কাঁটা হয়ে থাকি।

তিতু নিজে নিজে খাও—

নো—দিদাই গরস পাকিয়ে দেবে…

আচ্ছা আমি দিচ্ছি।

তুমি যাও না বউমা। আমি দিচ্ছি।

আপনি গিয়ে বারান্দায় বসুন না, আমি তিতুকে খাইয়ে দিচ্ছি।

কী বললে? আমি সারাদিন বারান্দায় বসে থাকি?

উঃ তা কখন বললাম! বারান্দায় বসতেই তো বলছি।

ওই ঘুরিয়ে বলা হল।

চোখে আঁচল দিয়ে শাশুড়ি চলে গেলেন। আরও বেশি করে জল ঘাঁটতে লাগলেন। বউমা কাজের খোঁটা দিয়েছে কি না। শেষে আমি একদিন চিকার করে ফেললাম, উঃ, আমি ছেলেকে নিয়ে কোথাও চলে যাব। হাতময় যা করেছেন, সেই হাতে ওকে খাওয়াতে আপনার প্রবৃত্তি হয়?

আহত পশুর মতো আমার দিকে চাইলেন শাশুড়ি। চোখ ছলছল করছে। মুখে অপার বিস্ময়। আস্তে আস্তে চলে গেলেন। আমার নিজেকে মারতে ইচ্ছে করল। ভালোভাবে বুঝিয়ে সুঝিয়েও তো বলতে পারতাম! তবে বুঝিয়ে বললেও একই ফল হত, বিষয়টা এতোই স্পর্শকাতর।

মিতালিকে সোজাসুজি বললাম, হ্যাঁরে মিতা, তোর লজ্জা করে না পাঁচ বছরের বাচ্চাকে মাঝখানে রেখে প্রেম করছিস। ছি ছি। ওকে মিথ্যে বলতে শেখাচ্ছিস। ইশারা করতে শেখাচ্ছিস।

মিতালি বেমালুম অস্বীকার করে গেল। বলল, বাবাঃ, তোমার ছেলে ওকে যা ভালোবাসে। কাকু কাকু করে অস্থির। আমি কিছুই শেখাইনি, ও নিজের বুদ্ধিতেই ওসব করে। যা পাকা।

আমি চোখ গরম করে বললাম, আর কোনোদিনও যেন ওর সামনে এসব না দেখি। পাকা! না? একটা বাচ্চা ছেলের পরকাল ঝরঝরে করছ আবার বলছ পাকা!

যাও যাও। মিতালি বলল। তোমার মতো নীতিবাগীশদের ভেতরের কথা আমার জানা আছে। সুজিত সরকারের ছোটো বোন তো আমার সঙ্গে পড়ে!

আমার বুক হিম হয়ে গেল। কিছু বলতে পারলাম না। চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে। পরে মনে হল চুপ করে গেলাম কেন? কড়া করে আরও দু কথা শোনাতে পারা উচিত ছিল। সুজিতের সঙ্গে যা ছিল তা চুকিয়ে বুকিয়ে তোদের বাড়ি এসেছি। সে নিয়ে কথা শোনাবার কোনও অধিকার মিতালির নেই। কিন্তু কার্যত কিছুই করতে পারলাম না।

বাড়িতে দুটো টিভি সেট। শ্বশুর শাশুড়িরটা বেশিরভাগেই মিতালির দখলে থাকে। নন-স্টপ এম চ্যানেল খোলা থাকে। মিতালি কতটা দেখে জানি না, কিন্তু তিতু দেখে, তিতু নাচে। স্বাভাবিক প্রতিভা ওইটুকু ছেলের, চমৎকার নাচে। মিতালির বন্ধুরা এসে ফরমাশ করে তিতু নেচে দেখায়। আমারও যে একটু-আধটু গর্ব হয় না তা নয়। আরও হয় মিতালির ঘরে। অ্যাকশন ছবি। এ ওকে মেরে দশতলা থেকে একতলায় ফেলে দিল। ও এর গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বেলে দিল। দেখে আমি শিউরে উঠি। কিন্তু তিতু হাততালি দেয়। হাসে, বলে, মা দিস ইজ ফান। আমাদের আর একটা টিভি সেট আমাদের ঘরে থাকে। তিতুর বাবা সাতটা নাগাদ বাড়ি ফিরে চান টান করে টিভিটা চালিয়ে দেয়। হালকা করে। রঙিন ঘূর্ণি নাচ হতে থাকে। মাথায় ফেট্টি-বাঁধা খালি-গা হুমদো হুমদো ছেলেরা কাঁচুলি-পরা, ঝিলিমিলি মেয়েদের সারা শরীর চাটতে থাকে। মেয়েদের পেট নাইকুন্ডলী সুদ্ধ সাপের মতন দুলতে থাকে। মিলিত হবার নানান ভঙ্গি করে ওরা। তিতু চোখ সরাতে পারে না। ওর বাবার সামনে নীচু টেবিলে হোয়াইট হর্সের বোতল, লিমকা, মাছের কি মাংসের পকোড়া, আলগাভাবে টিভির ওপর চোখটা ফেলে রাখে সে।

আমি বিরক্ত হয়ে বলি, দেখবার কি আর জিনিস পাও না? এই একই পেট, একই কোমর দোলানো, একই ঠ্যাং নাচানো রোজ দেখতে হবে?

ঢুলুঢুলু চোখে চেয়ে তিতুর বাবা বলে, আরে বাবা দেখছি কি আর? মনটাকে অন্যমনস্ক রাখছি। ভাবতে হয় না, মাথাটা ফ্রি থাকে। সারা দিন যা যায়, জানো না। তো আর?

তুমি একটা উচ্চশিক্ষিত ইঞ্জিনিয়ার মানুষ, তোমার মাথা ফ্রি রাখতে এই অখাদ্য জিনিস দরকার হয়? তিতু পড়তে বসবে চলো।–আয় কোনো ঘর আমাদের নেই। শ্বশুর-শাশুড়ির ঘর, মিতালির ঘর, আমাদের ঘর, আর একটা বসবার ঘর। বসবার ঘরে লোক আসে, বারবার দরজা খুলতে হয় বলে ওখানে বসতে আমি পছন্দ করি না। কিন্তু কী আর করব? ওখানেই বসি। তিতকে পড়াই। মিতালির ঘরের দরজা, মিতালির দাদার ঘরের দরজা বন্ধ করে দিই।

দেখাও তিতু, আজকে কী হোম-টাস্ক আছে, এ কী! তোমার আঙুলে এমন কালশিটে পড়ল কী করে?

ক্লাসে বাংলা বলেছিলুম বলে আন্টি স্কেল দিয়ে মেরেছে।

চমৎকার! বাংলা বলেছিলেই বা কেন?

আমার যে দাঁত কনকন করছিল মা, আমি যে দাঁত কনকনের ইংলিশ জানি না, উস উস করছিলুম, আন্টি বকল, তাই তো আমি বললুম, আমার দাঁত কনকন কচ্ছে।

আর উনি তোমাকে মারলেন? দাঁত কনকন করা সত্ত্বেও?

ডি-সুজা আন্টি হেভি খচ্চর মা!

তিতু, কী বলছ?

রাজু তো বলে…

রাজু বলুক, তুমি বলবে না, খারাপ কথা। রাজুকেও শিখিয়ে দেবে খারাপ কথা না বলতে।

মা, বাংলা বললে মারে কেন মা? বাংলা বলা খুব খারাপ? বাংলাটা খারাপ কথা মা, খচ্চরের মতো? তোমাদেরও আন্টি মারে! পেরেন্টস ডে-তে?…

আমার পিত্তি জ্বলে যায়। আমার, সত্যি বলছি, চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলতে ইচ্ছে হয় —হ্যাঁ হ্যাঁ তোদের ডি-সুজা অ্যান্টি হেভি খচ্চর, কুত্তি একটা, বেজন্মা কুত্তি।

কিন্তু এই নামজাদা প্রেপ-স্কুলে না পড়লে তিতু তো কোনও ভালো স্কুলে ভরতিই হতে পারবে না!

ডিং ডং ডিং ডং।

দরজার ফুটোয় চোখ রাখি। শ্বশুরমশাইয়ের বন্ধু রাখালবাবু।

আসুন কাকাবাবু-বিনয়ের প্রতিমূর্তি আমি।

বা বা বেশ বেশ, নাতিবাবু, পড়ছেন?

আর পড়ব না। রাখালদাদু এসছে, ভূতের গল্প বলবে।–তিড়িং তিড়িং নাচতে থাকে তিতু।

আর সয় না আমার। সারাদিন ধরে চাপা রাগ পুষছি। এক থাপ্পড় মারি তিতুর গালে।—পড়বি না? ইয়ার্কি পেয়েছিস?

তিতু বিরাট চিৎকার করে কাঁদতে থাকে।

রাখালবাবু বলেন, এ হে বউমা মারলে ছেলেটাকে? তুমি পড়ো দাদা। আমি আছি, ভূতের গল্প ভাবতে থাকি, যাবার সময়ে তোমায় ঠিক বলে যাব।

ভূতের গল্প রূপকথার গল্প এসব আমি পছন্দ করি না। অযথা ভয়ভীতি ঢোকে ছেলেদের মনে। আর রূপকথার গল্প মানেই তো যত গাঁজাখুরি। রাখালবাবুর আবার অভ্যাস আছে সব গল্পই দাদুভাইয়ের ঠিক রাজকন্যের মতো টুকটুকে বউ আসবে দিয়ে শেষ করার। একটা পুঁচকে ছেলের মধ্যে বউ-টউ ঢুকিয়ে দেওয়া একেবারে কুরুচির একশেষ বলে আমার মনে হয়। তা ছাড়া বাস্তবের সঙ্গে সম্পর্কহীন কতকগুলো গল্পকথা ছোটো থেকে শুনে শুনেই আমাদের বাঙালি জাতটা এমন হাঁদা ক্যাবলা উটমুখো হয়েছে।

আমি অনুযোগের সুরে বলি, কাকাবাবু, ভুতের গল্পগুলো ওর মাথায় আর নাই ঢোকালেন। এ ঘর থেকে ও ঘরে যেতে পারে না রাত্তিরে।

রাখালবাবু হা-হা করে হেসে বললেন, ওইটেই তো মজা বউমা, ভয়ের টিকে দেওয়া রইল ছোটোবেলায়।

এবার কড়া গলায় বলি, না। ভূতের গল্প বলবেন না, বাজে ওসব। রূপকথার গল্পও বলবেন না। রাজা-রানি যত সব বুর্জোয়া ইম্যাজিনেশেন। রাবিশ।

রাবিশ?—বোকার মতো হেসে রাখালবাবু ভেতরের ঘরের দিকে চলতে থাকলেন।

তিতু গোঁজ হয়ে গিয়ে ঘরে শুয়ে পড়ল। অনেক চেষ্টা করেও ওকে পড়াতে তো পারলামই না, খাওয়াতেও পারলাম না ভালো করে। দু-গাল খেয়েই ঘুমে ঢলে পড়ল।

.

চার

তিতুকে নিয়ে আমার ভাবনা এখন অনেকটাই কমে গেছে। তিতু প্রতি বছর ফার্স্ট হয়ে ক্লাসে উঠছে। অঙ্ক আর ইংরেজিতে নীলোৎপল ওকে মেরে দিচ্ছে। ভাইট্যাল দুটো সাবজেক্টই। কিন্তু বাকিগুলোতে তিতু অনেক মার্কস পায় বলে এগিয়ে থাকছে। নীলোৎপল যে কোনোদিন ওকে হারিয়ে দিতে পারে। ওর বাবার কাছে ভাবনা প্রকাশ করতে সে বলল, আমার পোলা অঙ্ক ইংরেজিতে খারাপ করবে? হতেই পারে না। আসলে, মন দিচ্ছে না। অঙ্কে কনসেনট্রেশন চাই। আর ইংরেজি? দেখো ওর আন্টিই কতটা জানে? নীলোৎপলের বাবাকে তো আমি চিনি। কেঁদে ককিয়ে পাস করত। ডাল মে কুছ কালা হ্যায়।–আমরা তিতুকে উৎসাহিত করি। খাটো, আরেকটু খাটো, নীলোপলকে মেরে বেরিয়ে যাও। কিলার ইনসটিংক নেই কেন তোর?

যাই হোক, তিতুর নাচের প্রতিভা দেখে ওকে আমরা নাচেও দিয়েছি। অনেকের ধারণা ছেলেরা নাচ শেখে না। ছেলেরা নাচ না শিখলে উদয়শঙ্কর, বিরজু মহারাজ এঁরা হলেন কোত্থেকে—তাদের জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হয়। তিতু দারুণ কথক নাচছে। ওকে আমরা যথাসম্ভব এক্সপোজার দিচ্ছি। একটা ট্যালেন্ট সার্চ কমপিটিশন আছে শিগগিরই, নাওয়া-খাওয়া ভুলে প্র্যাকটিস করাচ্ছি ছেলেকে। শ্বশুর, সাধারণত আমাদের কথায় থাকেন না, বললেন, ছেলেটাকে শেষ পর্যন্ত মর্কট বানাচ্ছ বউমা!

কী বলব এঁদের। পুরাতাত্ত্বিক ধারণা নিয়ে বসে থাকবেন, কোনো ইসথেটিক সেন্সই নেই।

তিতু বলল, মা, হোয়াট ইজ মর্কট, ইজ ইট রিলেটেড টু মার্কেট? একবার ভাবলুম মিথ্যে বলি। তারপর কেমন একটা পৈশাচিক আহ্বাদে বললুম, তোমার দাদু তোমাকে বাঁদর বলে গেলেন। মর্কট মানে বাঁদর।

সিলি ওল্ড ফুল।–তিতু বলল।

বড়ো আনন্দ হল। বহুদিন ধরে চেপে রেখেছি এঁদের বিরুদ্ধে একটা অসন্তোষ, ক্রোধ, এঁরা আমার সঙ্গে স্বাভাবিক ব্যবহার করেন না, নিন্দেমন্দ করেন আত্মীয়স্বজনের কাছে, কিন্তু তিতু এঁদের যথেষ্ট ভালোবাসে। ভালোবাসুক। তাতে আমি বাদ সাধতে চাই না। কিন্তু বুঝুক ও-ও বুঝুক এঁরা অচল। বুঝুক—এঁরা ওর মাকে শুধু শুধুই অবজ্ঞা হেনস্থা করে চলেছেন।

মিতালির বিয়ে হয়ে গেছে। বেঁচেছি। ইন্দ্রনীলের সঙ্গে নয়। ওর বিয়ে হল এক এন আর আই ডাক্তারের সঙ্গে। ওর বাবা-মা, এন আর আই-এর সঙ্গে দিতে চাননি। একমাত্র মেয়ে সাত সমুদ্র তেরো নদীর পার হয়ে যাবে। কিন্তু মিতালি নিজেই জেদ ধরল। ইন্দ্রনীলকে এড়াতে চায় আর কি! এ পাত্রর সঙ্গে ইন্দ্রনীল তুলনায় আসে না। মিতালি গদগদ একেবারে। আমার কী? আমার কিছুতেই কিছু যায় আসে না-ইন্দ্রনীলই হোক আর চন্দ্রনীলই হোক। কিন্তু তিতু ওইটুকু ছেলে কী রকম মুখ শুকনো করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রথমে ভেবেছিলুম-পিয়া চলে যাবে তাই বোধহয় মন খারাপ। কিন্তু সে কথা বলতে ছেলে ঝটকা মেরে চলে গেল। তারপরেই দেখলম ইন্দ্রনীলের সঙ্গে ঘরছে। তখনই বঝেছি। ইন্দ্রনীল আবার ওর কানে কী মন্ত্র দিচ্ছে কে জানে? আমার হয়েছে জ্বালা।

বউভাতে যাব বলে তৈরি হচ্ছি। তিতু বলল, যাব না।

সে আবার কি? ড্রেস করো।

শী ইজ আ চীট—তিতু বলল, ইন্দ্রনীল শুড কিল হার। আমি বললাম, কী বাজে বকছিস তিতু? পিয়া কাকে বিয়ে করেছে তাতে তোর কী? ওদের মধ্যে কী হয়েছে না হয়েছে তুই জানিস? এসব বড়দের ব্যাপার নিয়ে মাথা ঘামিয়ো না। জীবনে এ রকম কত হয়। সবচেয়ে যাতে ভালো হয়, সেটাই বেছে নিতে হয়।

আমার দিকে কটকট করে তাকাল ছেলে। বারো বছরের ছেলে, কী পাকা। পরিপক্ক একেবারে! আজকালকার ছেলেমেয়েরা অন্য ধাতের হয়। তোক বারো বছরের, তার সঙ্গে যে জীবন ও আচরণ সম্পর্কে একটা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করতে পেরেছি, এতে আমার মনটা প্রসন্ন হয়ে আছে। খুব শিগগিরই ও বড়ো হয়ে যাবে। আমার, আমাদের বন্ধু হয়ে যাবে। ভাবতে খুব আনন্দ লাগে। এখন থেকে ওর সঙ্গে একটু একটু করে সমানে সমান ব্যবহার করব। এতে ছেলেদের চিন্তাশক্তির বিকাশ হয়। দায়িত্ববোধ বাড়ে, জীবন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা জন্মায়। নানারকম ঝামেলার মধ্যে দিয়ে হলেও ছেলেটা আমার মানুষ হতে চলেছে।

ওর যে কত কল্পনাশক্তি, কতটা স্বকীয়তা, স্বনির্ভরতা, আত্মবিশ্বাস তৈরি হচ্ছে, সেটা আরও একটা ব্যাপার থেকে বোঝা গেল। ওদের স্কুলের অ্যানুয়াল কনসার্ট হল। পেরেন্টস ডে-তে আমরা দুজনেই গিয়েছিলাম। ঘোষণা করল, নতুন একটা দল এবার নেচে গেয়ে আসর মাতাবে, দল বা ব্যান্ডের নাম কী? না ভ্যাগাব্যান্ড। একদফা হাসির হররা উঠল। তার পর সাইকেডেলিক আলো জ্বলতে নিভতে আরম্ভ করল। দেখলুম গানে ওদের ক্লাসের রচপাল সিং, পাকাশনে জমির আলি, ক্যাসিও বাজাচ্ছে টুম্পা হাজারিকা, মাউথ অর্গ্যান নীলোৎপল আর নাচ তিতু, আমার তিতু। জ্যাকসনের মুনওয়াকিং করছে দেখলুম আমার ছেলে। ব্রেক করছে কী, একদম প্রভুদের মতো। মাতিয়ে দিল। হাততালি পড়ছে তো পড়ছেই। পড়ছে তো পড়ছেই।

ওদের প্রিন্সিপ্যাল মি. মাথুর পুরো ব্যান্ডের জন্য একটা দেড় হাজার টাকার পুরস্কার ঘোষণা করলেন। তিতুর জন্যে বিশেষ পুরস্কার ঘোষণা হল—কে অঞ্জলি দেওল দেবেন।

ওর বাবা বলল, দেখো, তোমার ছেলেকে তুমি স্কলার করতে চাইলে, আমি চাইলুম, ট্রেইনড ম্যানেজার হোক, ও হয়ে গেল শোম্যান। নেভার মাইন্ড। শোম্যানদেরই তো যুগ পড়েছে।

আমি বললাম, আহা হতাশ হচ্ছ কেন? বারো বছর তো মোটে বয়স। স্কলার হবার সময়ও চলে যায়নি। এম.বি.এ. দিগগজ হবার সময়ও যায়নি।

ছেলে আসতে হ্যান্ডশেক করল বাবা। চাপা গলায় ছেলে আমাকে বলল, এখানে যেন বাচ্চার মতো আমাকে ফল করো না। আমি হাসতে লাগলাম।

বড়ো শান্ত, নিবিড়, সুখ-সমুদ্র ঘুম ঘুমোই আজকাল। ঝড়ঝঞ্ঝার মধ্যে দিয়ে জীবনটা আরম্ভ হয়েছিল। ছা-পোষা বাবা-মা, ভাইটা মিডিয়োকার, আমি নিজেও তাই, কিন্তু বেড়ালের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়ে একটা ভালো চাকরি জুটেছিল। তা সেখানে গিয়ে একটা বিবাহিত পুরুষের ফাঁদে পড়লাম। অনেক করেও যখন পুরোনো সংসারকে সে গুডবাই জানাতে চাইল না, তখন চোখের সামনে অন্ধকার সমুদ্র দুলছিল। প্রাণপণে চোখ বুজে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। প্রতি মুহূর্তে মনে হয়েছে ভুল করছি। এ লোক আমার নয়। কেটে তো গেল আঠারো বছর। শ্বশুরবাড়ির পরিজনদের সঙ্গে শীতল যুদ্ধও একসময়ে অসহ্য হয়ে উঠেছিল। আমার স্বামী অফারও দিয়েছিল আলাদা সংসার করার। আমি শুনিনি। হেরে যাব কেন? জীবনে সব সমস্যার মুখোমুখি হয়ে বীরের মতো তার সমাধান করবার চেষ্টা করেছি। বুড়োবুড়ি যে আমাদের সঙ্গে আছেন, এতে সামাজিক দিকটা কি কম সহজ হয়ে গেছে? ওদিকে কোনো টেনশনও নেই। এক পিসশাশুড়ি তো একদিন বলেই ফেললেন, তোমার বউমা লক্ষ্মী বউমা বউদি। দু-যুগ তো কাটিয়ে দিলে তোমাদের সঙ্গে। আর আমার বউগুলো দেখো! একটা ছেলে পড়াবার নাম করে বালিগঞ্জে বাসা নিলে। একটা বিধবা মায়ের দোহাই দিয়ে বাপের বাড়িতেই বছরভর পড়ে থাকে। আর ছোটোটা তো একেবারে সাগরপার হয়ে গেল। যতই নিন্দে করো বউ তোমার ভালো।

মনে মনে বলি—কম আত্মত্যাগ করিনি। চাকরি ছেড়েছি। উদ্দাম প্রণয় তা-ও ছেড়েছি। দিনগত পাপক্ষয়, আবেগহীন সংসার জীবন মেনে নিয়েছি। মানিয়ে নিয়েছি রক্ষণশীল শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে, উচ্ছল, স্বার্থপর, রুচিহীন ননদিনির সঙ্গে। ছেলের জন্যে যা করেছি—তার হিসেব আমার মনে নেই। সে করা বহু আনন্দের করা।

ডিং ডং ডিং ডং… এই দুপুরে আবার কে এল? ফুটোয় চোখ লাগিয়ে দেখি তিতুদের স্কুলের প্রিন্সিপ্যালের গাড়ি। ভেতরে উনি বসে আছেন। ড্রাইভার এসে বেল বাজাচ্ছে। বুকটা ধক করে উঠেছে।

কী হল? তড়িতের কিছু হয়েছে?

প্রিন্সিপালের মুখ ভাবলেশহীন। বললেন, না, কিন্তু একটা দরকার আছে, আপনি চট করে রেডি হয়ে আসুন মিসেস সিনহা। সম্ভব হলে আপনার হাজব্যান্ডকেও তুলে নেব।

ওকেও? কেন? কী হয়েছে? বিপদ? তড়িৎ?

তড়িৎপ্রভ ইজ অল রাইট মিসেস সিনহা। বাট দেয়ার হ্যাজ বিন আ ন্যাস্টি অ্যাকসিডেন্ট ইন দা স্কুল।

আমি আতঙ্কে বোবা হয়ে যাই। কী বলছেন এঁরা তিতুর কিছু হয়নি, অথচ নাস্টি অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে? তিতুর কিছু না হলে ওঁরা কেন আমার নিতে এসেছেন? এতই জরুরি যে ওর বাবাকেও নিতে চাইছেন।

পুলিশ। স্কুল-কমপাউন্ড ঘিরে প্রচুর পুলিশ। আমরা দুজনে যাচ্ছি ভিড় ঠেলে। প্রিন্সিপ্যালের সঙ্গে। একজন ইন্সপেক্টর। ইন্সপেক্টরই হবেন, আমি অত কাছ থেকে পুলিশ ইনসপেক্টর কখনও দেখিনি। বললেন, মিসেস সিনহা—আপনার ছেলের মধ্যে কোনও ক্রুয়েলটি লক্ষ করেছেন? এ স্ট্রীক অফ নিয়ার ম্যাডনেস?

না তো! না!

ও গুমরে থাকত না? ভিনডিকটিভ নয়?

কী করে বলব? সেরকম কিছু কখনও দেখিনি। কেন, কী হয়েছে? বলবেন তো? কী আশ্চর্য, বলবেন তো কিছু।

প্রিন্সিপ্যাল ধীরে ধীরে বললেন, তড়িৎপ্রভ একটা হার্ড-পেন্সিল সরু করে কেটে লম্বা করে দাঁড় করিয়ে রাখে সীটের ওপরে। ফেভিকল দিয়ে আটকে। ঠিক নীলোৎপলের বসার জায়গায়। নীলোৎপল না দেখে বসতেই পেনসিল আমূল ঢুকে গেছে ওর রেকটামে। শকে মারা গেছে ক্লাসের সেকেন্ড বয়। সঙ্গে সঙ্গে।

আতঙ্কে নীল হয়ে আমরা ওর বাবা-মা বলি, কী সর্বনেশে খেলা। ছি ছি। ছেলেটা একেবারে মারা।

ইনসপেক্টর বললেন, নো মিসেস সিনহা, ইটস নট জাস্ট এ প্র্যাঙ্ক! ইটস মার্ডার। প্রি-মেডিটেটেড। ক্লাসের ছেলেরা সাক্ষ্য দিয়েছে ফার্স্ট প্লেস নিয়ে দুজনের মধ্যে বিটার রাইভ্যালরি ছিল। তা ছাড়াও টুম্পা হাজারিকা নামে একটি মেয়েকে নিয়ে দুজনে কিছুদিন ধরেই লড়ছিল।

আমার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। অস্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি প্রিন্সিপ্যাল মি. মাথুরের মুখটা ঝুলে পড়েছে।

আমার স্বামী হঠাৎ খ্যাপার মতো চেঁচিয়ে উঠল, এই জন্য? এই জন্য আপনাদের স্কুলে কুড়ি হাজার টাকা ডোনেশন দিয়ে ছেলেকে ভরতি করেছি? এই শিক্ষা দিয়েছেন তাকে? এই শিক্ষা?

ঝোলা মুখটা সামান্য তুলছেন প্রিন্সিপাল। থেমে থেমে বলছেন, ওই একই প্রশ্ন আমিও তো আপনাদের করতে পারি মি. সিনহা?

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *