আমার অন্ধকারে আমি

আমার অন্ধকারে আমি

আমার জন্য দৃশ্যের মায়া ফুরিয়ে গেছে।
অন্ধকার তো দেখার বিষয় নয়। অনুভব করার বিষয়। আমি
তাই অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে বসে থাকতে
মোটই ভয় পাই না। কারণ অন্ধকারই আমাকে জানিয়ে দেয়, একদা আমারও দুটি
চোখ ছিল। বর্ণ, গন্ধ, প্রেম আর প্রত্যাখ্যান বুঝতে ইশারাই যথেষ্ট নয় চোখেও চেখে
নিতে হয়।
এখন আমার দৃষ্টি এক রকম নেই বললেও চলে কিন্তু বাতাসে প্রাণ ও প্রকৃতির গন্ধ
আমার মনে শ্লোক সৃষ্টির প্রেরণা দেয়
হৃদপিণ্ডের চারদিকে যেন দৈববাণীর বিদ্যুৎ তরঙ্গ বইছে।
তবুও আমাকে কানা বলে বন্ধুরা এ-ওর
গায়ে ঢলে পড়তে তাদের কী আনন্দ।
ব্যাপারটা এমন যে আমার দুটি চোখই কানা হয়ে গেলে কল্পনার মায়াহরিণী যেন তাদের
বন্দুকে বিদ্ধ হবে।
চোখে লেজার নিয়ে ফিরে আসার সময় ডাক্তার হারুনের আফসোসের কথা তোমার
মনে আছে? আমি আর প্রকৃতি নিচয়ের বর্ণ গন্ধের ভোক্তা হবে না বলে
দৃষ্টিবিশারদ সেই বৃদ্ধ চিকিৎসকের কী আফসোস!
তখন কি জানতাম আমরা দুই বৃদ্ধই সমান অন্ধ? তিনি মানুষের দৃষ্টি ফিরিয়ে
দিতে দিতে
তার পাশে দাঁড়ানো মৃত্যুর ছায়া টের পাননি।
কি কাজে বিলেত গিয়ে কোমায় পড়লেন। আর ফেরেননি।
আমি তো তোমার চেহারা আর বইয়ের অক্ষর দেখতে পাচ্ছি না বলে আঁতকে উঠি।
অথচ ভবিষ্যৎ দেখার জন্য কে যেন আমার ভেতরের চোখ একটু একটু মেলে দিচ্ছেন।
সেই অন্তরের চোখ জোড়া রণসাজে সজ্জিত এক পৃথিবীকে দেখছে। মানব জাতির
শেষ যুদ্ধ। সেই যুদ্ধের মহাকাব্যের জন্য কবির চোখ লাগে না। লাগে অন্তর্দৃষ্টি যা
অন্ধ হোমার হাতড়ে হাতড়ে ঠিকমত সাজিয়ে তুলেছিলেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *