অবগাহনের শব্দ

অবগাহনের শব্দ

জানি না কি ভাবে এই মধ্যযামে আমার সর্বস্ব নিয়ে আমি
হয়ে যাই দুটি চোখ, যেন জোড়া যমজ ভ্রমর পাশাপাশি
বসে আছে ঈষদুষ্ণ মাংসের ওপর।

চেতনাচেতনে যেন হেঁটে যায় অন্ধকার। সাপের জিহ্বার মতো দ্রুত কম্পমান
অনুভূতি ইয়ে যায় এলোমেলো রক্তের পর্দায়।
আমার সমস্ত মর্মে যেন এক বালকের বিদায়ের বিষণ্ণ লগন।
লেগে থাকে। সর্বশেষ আহার্যের থালা থেকে উষ্ণ গন্ধময়
ধোঁয়া হয়ে উড়ে এসে নাকে লাগে মায়ের আদর।

বিদায়, বিদায় দাও হে দৃশ্য, যে জন্মান্ধ পশ্চাৎ
আর কেন লগ্ন হও, অন্ধকার হয়ে থাক গাছপালা বাসস্থান নদী
পাখির ডাকের মতো অন্তর্হিত হয়ে যাও অমলিন গভীর সবুজে।

নদীর শরীর ঘেঁষে যেতে চেয়ে দেখি ওপারে হঠাৎ
আলোর গোলক হয়ে উঠলেন দিনের শরীর।
অবগাহনের শব্দে ছল ছল ঘাটের পৈঠায়
কে যেন বললো স্নেহে সঙ্গিনীকে,
চেয়ে দেখ্‌ অই
কোন মা মাঘের ভোরে প্রাণ ধরে ছেড়েছে এমন
দুধের দুলাল তার। কুয়াশায় হেঁটে যাচ্ছে, আহা কি কষ্টের।

পাখি ওড়া দেখা আর হেঁটে যাওয়া নদীর পেছনে দিনমান
যেন আর খেলা নয়। ঘাম জমে ললাটে চিকন
হাঁটুতে ধুলোর দাগ। হাত তুলে আলোকে আড়াল
এখন হবে না আর। তুঙ্গ হয়ে দিনের দেবতা অগ্নিময় আকাশে গেলেন।
আবার জলের শব্দে চেয়ে দেখি, অবগাহনের পালা
ঘাটময় গ্রামের মেয়েরা আমারে দেখিয়ে বলে, কে অই পুরুষ যায়
কোন গায় জানি কোন রূপসীর ঘরে।
তৃষ্ণা মরে গেলে পরে স্বেদবিন্দু হাওয়ায়
কখন শুকায় ফের। চরের পাখিরা
মুখ চাওয়াচাওয়ি করে অবশেষে উড়ে যায় রক্তাভ ডানায়।

বড় অবসাদ লাগে। দুঃখ নয় যাঞ্চা নয় বুঝি কোন পিপাসা আমাকে
করে না তাড়না আর। কোন ঘাটে এসেছি জানি না
অষ্টাদশ কলসী নিয়ে ঘরে ফিরে বধূরা এখন।
কে নারী বললো বড় গাঢ় স্বরে, পার হয়ে অন্ধকার বিল
জানি কোথায় যাবে এই বৃদ্ধ পথিক পুরুষ।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *