১.২৪ হোসেন খাঁ

হোসেন খাঁ

বছর চার পাঁচ হলো, এই সহরে হোসেন খাঁ নামে এক মোছলমান বহু কালের পর ঐ রঙ্গে ভয়ানক আড়ম্বরে দেখা দেন—তিনি হজরত জিনিয়াই সিদ্ধ; (পাঠক আরব্য উপন্যাসের আলাদিন ও আশ্চৰ্য্য প্রদীপের কথা স্মরণ করুন)—“মনে করেন, সেই জিনিষই জিনি দ্বারা আনতে পারেন, বাক্সের ভিতর থেকে ঘড়ি, আংটী, টাকা উড়িয়ে দেন, নদীজলে চাবির থলে ফেলে দিলে জিনির দ্বারা তুলে আনান” এই প্রকার অদ্ভুত কৰ্ম্ম কত্তে পারেন।

ক্রমে সহরে সকলেই হোসেন খাঁর কথার আন্দোলন কত্তে লাগলেন—ইংরেজী কেতার বড়দলে হোসেন খার খবর হলো। হোসেন খাঁ আজ রাজা বাহাদুরের বাগানে বাক্সর ভিতর থেকে টাকা উড়িয়ে দিলেন, উইলসনের হোটেল থেকে খাবার উড়িয়ে আনলেন, বোতল বোতল শ্যামপিন, দোনা দোনা গোলাবি ধিলি ও দলিম কিসমিস্ প্রভৃতি হরেক রকম খাবার জিনিষ উপস্থিত কল্লেন। কাল–রায়বাহাদুরের বাড়ীতে কমলালেবু, বেলফুলের মালা বরফ ও আচার আনলেন। যাঁরা পরমেশ্বর মনিতেন না, তাঁরাও হোসেন খাঁকে মানতে লাগলেন! ভাষায় বলে, “পাথরে পূজিলে পাঁচে পীর হয়ে পড়ে;” ক্রমে হোসেন খাঁ বড় বড় কাশ্মীরী উললুক ঠকাতে লাগলেন। অনেক জায়গায় খোরাকি বরাদ্দ হলো। বুজরুকী দেখবার জন্য দেশ-দেশান্তর থেকে লোক আসতে লাগলো। হোসেন খাঁ “প্রিমিয়ম্‌” বেড়ে গেল। জুচ্চুরি চিরকাল চলে না। “দশ দিন চোরের, এক দিন সেধের”; ক্রমে দুই এক জায়গায় হোসেন খাঁ ধরা পড়তে লাগলেন—কোথাও ঠোনাকা ঠানাকা, কোথাও কানমলা; শেষ প্রহার বাকী রইলো না। যাঁরা তাঁরে পূর্ব্বে দেবতা-নির্ব্বিশেষে আদর করেছিলেন, তাঁরাও দু এক ঘা দিতে বাকী রাখলেন না। কিছুদিনের মধ্যেই জিনি-সিদ্ধ হোসেন খাঁ পৌত্তলিকের শ্রাদ্ধের দাগ ষাঁড়ের অবস্থায় পড়লেন; যাঁরা আদর করে নিয়ে যান, তারাই দাগী করে বাহির করে দেন, শেষে সরকারী অতিথিশালা আশ্রয় কোল্লেন–হোসেন খাঁ জেলে গেলেন! যিনি পাতাল আশ্রয় কল্লেন!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *