১.২০ পাদ্রি লং ও নীলদর্পণ

পাদ্রি লং ও নীলদর্পণ

নীলকর হাঙ্গামা উঠলো; শোনা গেল, কৃষ্ণনগর, পাবনা, রাজসাই প্রভৃতি নীলজেলার রেয়োতেরা ক্ষেপেছে। কে তাদের ক্ষ্যাপালে? কি উলুই চণ্ডী? না শ্যামচাঁদ? তবে–‘ম্যাজিষ্ট্রেট ইডেনের ইস্তাহারে’ ‘ইণ্ডিগো-কমিশনে’ ‘হরিশে’ ‘লংএ’ ‘ছোট আদালতে’ ‘কন্টাক্টরিতে’ অবশেষে গ্রান্টের রিজাইনমেন্টে রোগ সারতে পারেন? না! কেবল শ্যামচাঁদিরা সল্লে!

নীলকর সাহেবের দ্বিতীয় রিভোলিউসন হবে বিবেচনা করে (ঠাকুঘরে কে? না আমি কলা খাইনি) গভর্ণমেণ্ট তোপ ও গোরা সাহায্য চেয়ে পাঠালেন! রেজিমেণ্টকে রেজিমেণ্ট গোরা, গণ্‌, বোট ও এম্পেশিয়াল কমিশনর চল্লো;–মফস্বলের জেলে আর নিরপরাধীর জায়গা হয় না, কাগজে হুলথুল পড়ে গেল ও আণ্টর ব্রেড অবতার হয়ে পড়লেন।

প্রজার দুরবস্থা শুনতে ইণ্ডিগো-কমিশন বসলো, ভারতবর্ষীয় খুড়ীর চমকা ভেঙ্গে গেল। (খুড়ী একটু আফিম খান।) বাঙ্গালীর হয়ে ভারতবর্ষীয় খুড়ীর একজন খুড়ো কমিশনর হলেন। কমিশনে কেঁচো খুঁড়তে খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে পড়লো। সেই সাপের বিষে নীলদর্পণ জন্মালো; তার দারুণ নীলকর-দল হন্নে হয়ে উঠলেন—ছাইগাদা, কচুবন, ও ফ্যানগোঁজলা ছেড়ে দিয়ে ঠাকুর-ঘরে, গিরজেয়, প্যালেসে ও প্রেসে ত্যাগ কল্লেন! শেষে ঐ দলের একটা বড় হঙ্গেরিয়ান হাউণ্ড পাদরী লং সাহেবকে কামড়ে দিলে।

প্যায়দারা পর্যন্ত ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট হয়ে মফস্বলে চল্লেন। তুমুল কাণ্ড বেধে উঠলো। বাদাবুনে বাঘ (প্ল্যানটারস এসোসিয়েসন) বেগতিক দেখে নাম বদলে ল্যাণ্ডহোল্ডারস এসোসিয়েশন তুলসীবনে ঢুকলেন। হরিশ মলেন। লংএর মেয়াদ হলো। ওয়েলস্ ধমক খেলেন। গ্রাণ্ট রিজাইন দিলেন—তবু হুকুক মিটলো না। প্রকৃত বাঁদুরে হাঙ্গমে বাজারে নানা রকম গান উঠলো; চাষার ছেলেরা লাঙ্গল ধরে, মূলো মুড়ি খেতে খেতে —

গান
সুর—“হাঃ শালার গরু; তাল টিটকিরি ও ল্যাজমলা।”
উঠলো সে সুখ, ঘটলো অসুখ মনে, এত দিনে।
মহারাণীর পুণ্যে মোরা ছিলাম সুখে এই স্থানে।।
উঠলো খামার ভিটে ধান, গেল মানী লোকের মন,
হ্যানো সোনার বাংলা গান, পোড়ালে নীল হনুমানে।।

গাইতে লাগলো। নীরকরেরা এর উত্তরে ক্যাটল্‌ট্রেসপস বিল পাস করে, কেউ কোন কোন ছোট আদালতের উকীল জজদের শ্যামপীন খাইয়ে ও ঘরঘ্যাঁস করে, কেউ বা খাজনা বাজিয়ে, খেউরে জিতে কথঞ্চিৎ গায়ের জ্বালা নিবারণ কল্লেন।

নীলবানুরে লঙ্কাকাণ্ডের পালা শেষ হয়ে গেল, মোড়লেরা জিরেন পেলেন; ভারতবর্ষীয় খুড়ী এক মৌতাত চড়িয়ে আরাম কত্তে লাগলেন। কোন কোন আশাসোটাওয়ালা খেতাবী খুড়ো, অনুরেরী চৌকিদারী, তথা ছেলেপুলের আসেসরী ও ডেপুটী ম্যাজেষ্ট্ররীর জন্য সাদা দেবতার উদ্দেশ্যে কঠোর তপস্যায় নিযুক্ত হলেন। তথাস্তু!!

শ্যামচাঁদের অসহ্য টরচরে ভূত পালায়, প্রজারা খেপে উঠবে কোন কথা! মিউটীনি ও ক্লার্ক অ্যাকটের সভাতে তো শ্রীবৃদ্ধিকারীরা চটেই ছিলেন; নীলবানুরে হাঙ্গামে সেইটি বদ্ধমূল হয়ে পড়লো। বড় ঘরে সতীশ হলে, বড় বৌ ও ছোট বৌকে তুষ্ট কর্ত্তে কৰ্ত্তা ও গিন্নীর যেমন হাড় ভাজা ভাজা হয়ে যায়; শ্রীবৃদ্ধিকারী, সুইপিং ক্লাস ও নেটীভ কমিউনিটীকে তুষ্ট কত্তে গিয়ে, ইণ্ডিয়া ও বেঙ্গল গবর্ণমেণ্ট ও সেই রকম অবস্থায় পড়লেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *