১.০৭ লালা রাজাদের বাড়ী দাঙ্গা

লালা রাজাদের বাড়ী দাঙ্গা

আমরা স্কুলে আর এক কেলাস উঠলেম। রাধুনি বামুন পণ্ডিতের হাত এড়ানো গেল। একদিন আমরা পড়া বলতে না পারায় জল খাবার ছুটীর সময়ে গাধার টুপী মাথার দিয়ে, বেঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে কন্‌ফাইন্ হয়ে রয়েছি, মাষ্টার মশাই তামাক খাবার ঘরে জল খেতে গেছেন (তাঁর ক্ষিদে বরদাস্ত হয় না, কিন্তু ছেলেদের হয়); একজন বামুন বাবুদের বাড়ীর ছোটবাবুর মুখে শ্যামা পাখীর  বোল—“বক্‌ বকম্‌ বক বকম্‌” করে পায়রার ডাক ডেকে বেড়াচ্চেন ও পনি টাট্টু সেজে কদম দেখাচ্ছেন; এমন সময়ে কাশীপুর অঞ্চলের একজন ছোকরা বল্লে, “কাল বৈকালে পাকপাড়ায় লালাবাবুদের (শ্রী বিষ্ণু! আজকাল রাজা) লালা রাজাদের বাড়ী—এক দল গোরা মাতাল হয়ে এসে চার-পাঁচ জন দারোয়ানকে বর্‌শায় বিঁধে গিয়েছে, রাজারা ভয়ে হাসন হোসেনের মত একটা পুরোণো পাতকোর ভিতর লুকিয়ে প্রাণরক্ষা করেছেন।” (বোধ হয় কেবল গিরগিটের অপ্রতুল ছিল)। আর একজন ছোকরা বলে উঠলো “আরে তা নয়, আমরা দাদার কাছে শুনেছি, রাজাদের বাড়ীর সামনের গাছে একটা কাগ মেরেছিল বলে রাজাদের জমাদার, সাহেবদের মাত্তে এসে”; আর একজন ছোকরা দাঁড়িয়ে উঠে আমাদের মুখের কাছে হাত নেড়ে বল্লে, “আ রে না হে না, ও সব বাজে কথা! আমারও বাড়ী টালাতে, রাজাদের বাড়ীর পেছনে যে সেই বড় পগারটা আছে জান? তার পাশে যে পচা পুকুর সেই আমাদের খিড়কি। রাজাদের এক জন আমলার ভাই ঠিক বানরের মত মুখ; তাই দেখে একজন সাহেব ভেংচে ছিল, তাতে আমলাও ভেংচায়; তাতেই সাহেবরা বন্দুক পিস্তল নিয়ে দলবল সমেত এসে গুলী করে”। এইরূপে অনেক রকম কথা চলেছে, এমন সময়ে মাষ্টার বাবু তামাক খাবার ঘর থেকে এলেন, ছোটবাবুর পনি টাটুর কদম ও ‘বক বকম্‌’ বন্ধ হয়ে গেল, রাজারা বাঁচলেন—ঢং ঢং করে দুটো বাজলে কেলাস বসে গেল, আমরাও জল খেতে ছুটী পেলেম। আমরা বাড়ী গিয়ে রাজাদের ব্যাপার অনেকের কাছে আরও ভয়ানক রকম শুনলেম; বাঙ্গালা কাগজওয়ালারা, “এক দল গোরা বাজনা বাজিয়ে যাইতেছিল, দলের মধ্যে একজনের জলতৃষ্ণা পেয়েছিল, রাজাদের বাড়ী যেমন জল খেতে যাবে, জমাদার গলা ধাক্কা মারিয়া বাহির করিয়া দেয়, তাহাতে সঙ্গের কর্ণেল গুলী কত্তে হুকুম দেন” প্রভৃতি নানা আজগুবী কথায় কাগজ পোড়াতে লাগলেন। সহরের পূর্ব্বের বাঙ্গালা খবরের কাগজ বড় চমৎকার ছিল, ‘অমুক বাবুর মত দাতা কে!” “অমুক বাবুর মার শ্রাদ্ধে জোর টাকা ব্যয়, (বাবু মুচ্ছুদী মাত্র); “অমুক মাতাল জলে ডুবে মরে গেচে” “অমুক বেশ্রার নত খোয়া গিয়েছে, সন্ধান করে দিতে পাল্লে সম্পাদক তার পুরস্কারস্বরূপ তারে নিজ সহকারী করবেন” প্রভৃতি আল্‌ত কথাতেই পত্র পুরুতেন; কেউ গাল দিয়ে পয়সা আদায় কত্তেন, কেউ পয়সার প্রত্যাশায় প্রশংসা কত্তেন;–আজকালও অনেক কাগজে চোর গোপ্তান চলে!

শেষে সঠিক শোনা গেল যে, এক জন দরওয়ানকে এক জন ফিরিঙ্গি শিকারী বাকবিতণ্ডায় ঝকড়া করে গুলী করে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *