২১. মামলার রায় এবং অন্নদাশঙ্কর রায়

পরদিন সকালে মুরলীধর বসু আর শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় লালবাজারে গিয়ে উপস্থিত হলেন। ভীতভয়সূদন শূলপাণির নাম গণ করতে-করতে।

প্রথমেই এক হোমরাচোমরার সঙ্গে দেখা। বাঙালি, কিন্তু বাংলাতে যে কথা কইছেন এ নিতান্ত কৃপাপরবশ হয়ে।

দেখতে তো সুখী-সজ্জনের মতই মনে হচ্ছে। আপনাদের এ কাজ?

পড়েছেন আপনি?

Darn it—আমি পড়ব ও সব ন্যাস্টি স্নাং? কোনো রেসপেকটেবল লোক বাংলা পড়ে?

তা তো ঠিকই। তবে আমাদেরটাও যদি না পড়তেন–

আমরা পড়েছি নাকি গায়ে পড়ে। আমাদেরকে খুঁচিয়ে-খুঁচিয়ে পড়িয়ে ছেড়েছে। আপনাদেরই বন্ধু মশাই। আপনাদেরই এক গোত্র।

কে? কারা?

সাহিত্যজগতের সব শূর-বীর, ধন-রত্ন—এক কথায় সব কেষ্টবিষ্টু। তাদের কথা কি ফেলতে পারি? নইলে এ সব দিকে নজর দেবার আমাদের ফুরসৎ কই? বোমা-বারুদ ধরব, না, ধরব এসব কাগজের ঠোঙা?

পুলিশপুঙ্গব ব্যঙ্গের হাসি হাসলেন। পরে মনে করলেন এ ভঙ্গিটা যথার্থ হচ্ছে না। পরমুহূর্তেই মেঘগম্ভীর হলেন। বললেন, রবিঠাকুর শরৎ চাটুজ্জে নরেশ সেন চারু বাঁড়য্যে—কাউকে ছাড়বনা মশাই। আপনাদের কেসটার নিষ্পত্তি হয়ে গেলেই ও-সব বড় দিকে ধাওয়া করব। তখন দেখবেন–

বিনয়ে বিগলিত হবার মতন কথা। গদগদ ভাষে বলেন মুরলীধর :

এ তো অতি উত্তম কথা। পিছুতে-পিছুতে একেবারে ভারতচন্দ্র পর্যন্ত। তবে দয়া করে ঐ বড় দিক থেকে সুরু করলেই কি ঠিক হতনা?

না। প্রবলপ্রবর হুঙ্কার ছাড়লেন : গোড়াতে এই এটা একটা টেস্ট কেস হয়ে যাক।

রাঘববোয়াল ছেড়ে দিয়ে চিরকালই কি চুনোপুঁটিদের দিকে নজর? গদির অধিপতিদের ছেড়ে সামান্য মুদি-মনিহারি?

চালান হয়ে গেলেন পুলিশ-োকোর্টে।

সতীপ্রসাদ সেন—আমাদের গোরাবাবু-পুলিশ-কোটের উদীয়মান উকিল-জামিনের ব্যবস্থা করে দিলেন। মোক জোড়াবাগান কোর্টে স্থানান্তরিত হল। তারিখ পড়ল শুনানির।

এখন কি করাঅ্যা

প্রভাবান্বিত বন্ধু ছিল কেউ মুরলীধরের। তিনি এগিয়ে এলেন। বললেন, বলো তো, তারক সাধুকে গিয়ে ধরি। তারক যখন তখন নিশ্চয়ই ত্রাণ করে দেবেন। ত্রাহি মাং মধুসূদন না বলে ত্রাহি মাং তারকব্রহ্মন বলতে নিশ্চয়ই কাজ হবে।

মুরলীধর হাসলেন। বললেন, না, তেমন কিছুর দরকার নেই।

তা হলে কি করবে? এ সব বড় নোংরা ব্যাপার। আর্টের বিচার আর আদালতের বিচার এক নাও হতে পারে। আর যদি কনভিকশান হয়ে যায় তা হলে শাস্তি তো হবেই, উপরন্তু তোমার ইস্কুলের কাজটি যাবে।

তা জানি। তবু—থাক। মুরলীধর অবিচলিত রইলেন। বললেন, সাহিত্যকে ভালবাসি; পূজা করি সেবা করি সাহিত্যের। জীবন নিয়েই সাহিত্য-সমগ্র, অখণ্ড জীবন। তাকে বাদ দিয়ে জীবনবাদী হই কি করে? সু আর কু দুইই বাস করে পাশাশাশি। কে যে কী এই নিয়ে তর্ক। সত্য কতদূর পর্যন্ত সুন্দর, আর সুন্দর কতক্ষণ পর্যন্ত সত্য এই নিয়ে ঝগড়া। প্রুডারি আর পর্নোগ্রাফি দুটোকেই ঘৃণা করি। সত্যের থেকে নিই সাহস আর সুন্দরের থেকে নিই সীমাবোধ-আমরা স্রষ্টা, আমরা সমাধিসিদ্ধ।

ভদ্রলোক কেটে পড়লেন।

ঠিক হল লড়া হবেনা মামলা। না, কোনো তদবির-তালাস নয়, নয় ছুটোছুটি-হয়রানি। শুধু একটা স্টেটমেন্ট দাখিল করে দিয়ে চুপ করে থাকা। ফলাফল যা হবার তা হোক।

গেলেন ডক্টর নরেশচন্দ্র সেনগুপ্তর কাছে। একে সার্থকনামা উকিল, তার উপরে সাহিত্যিক, সর্বোপরি অতি-আধুনিক সাহিত্যের পরাক্রান্ত পরিপোষক। অভিযুক্ত লেখা দুটো মন দিয়ে পড়লেন অনেকক্ষণ। বললেন, নট-গিলটি প্লিড করুন।

যতদূর মনে পড়ে, চিত্রবহার দুটি পরিচ্ছেদ নিয়ে নালিশ হয়েছিল। এক যৌবনবেদনা, দুই নরকের দ্বার। আর শ্রাবণ-ঘন-গহন-মোহের গোটাটাই।

সবচেয়ে আশ্চর্য, চিত্রবহকে প্রশংসা করেছিল শনিবারের চিঠি। এমন কি, তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ করেছিল।

এই ভূতের-মুখে-রাম-নামের কারণ আছে। সুরেশবাবু মোহিতলালের বন্ধু। আর চিত্রবহ মোহিতলালের সুপারিশেই ছাপা হয় কালি-কলমে।

শনিবারের চিঠিতে চিত্রবহা সম্বন্ধে লেখা হয় :

..লেখক মানবজীবনের ভালো-মন্দ সুন্দর-কুৎসিত সকল দিকের মধ্য দিয়া একটা চরিত্রের বিকাশ ও জীবনের পরিণাম চিত্রিত করিয়াছেন। জীবনকে যদি কেহ সমগ্রভাবে দেখিবার চেষ্টা করেন তবে কিছুই বাদ দিবার প্রয়োজন হয়না। কারণ তাহা হইলে তাহার সৰ্বাংশের একটা সামঞ্জস্য ধরা পড়ে। কু ও সু দুই মিলিয়া একটি অখণ্ড রাগিনীর সৃষ্টি করে, তাহা morale নয়, immoraleও নয়—আরও বড়, আরও রহস্যময়।…

চমৎকার সুস্থ মানুরের মত কথা। ঋদ্ধিবাচন করতে জানে তাহলে শনিবারের চিঠি! তা জানে বৈকি। দলের হলে বা দরকার হলে করতে হয় বৈকি সুখ্যাতি। অয়মারম্ভঃ শুভায় ভবতু।

নরেশচন্দ্র স্টেটমেন্টের খসড়া করে দিলেন। বললেন, প্রত্যেকে একখানা করে কপি কোর্টে পেশ করে দিন।

তথাস্তু। কিন্তু উকিলের দল ছাড়েন। বলে, ফাইট করুন। দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে মার খাবেন কেন?

বুঝবেনা কিছুতেই, উলটে বোঝাবে। ব্যাপারটা বুঝুন। এ ছেলেখেলা নয়, জরিমানা ছেড়ে জেল হয়ে যেতে পারে। ফরোয়ার্ডে না খেলুন গোলে গিয়ে দাঁড়ান। ফাঁকা গোলে বল মেরে পুলিশ জিতে যাবে এক শটে?

মহা বিড়ম্বনা। এক দিকে সমালোচক, অন্য দিকে পুলিশ, মাঝখানে উকিল। যেন একদিকে শেয়ালকুল অন্য দিকে বাবলা, মধ্যস্থলে খেজুর।

মুরলীধর তবু নড়েন না।

এর মশাই কোনো মানেই হয়না। হয় স্রেফ apologise করুন, আর না-হয় আমাদের লড়তে দিন। ফি-র ভয় করছেন, এক পয়সাও ফি চাইনা আমরা। সাহিত্যের জন্যে এ আমাদের labour of love।

মনে-মনে হাসলেন মুরলীধর। বললেন, ধন্যবাদ।

ভিড় ঠেলে আদালত-ঘরে ঢুকলেন তিনজনে। সার্জেন্ট আর লালপাগড়ি, গাঁটকাটা আর পকেটমার, চোর আর জুয়াড়ী, বেশ্যা আর গুণ্ডা, বাউণ্ডুলে আর ভবঘুরে। তারই পাশে প্রকাশক আর সম্পাদক, আর সাহিত্যিক।

ঢুকলেন প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট। কটা ছেঁড়া মামলার পর ডাক পড়ল কালি-কলমের।

কে জানে কেন, কাঠগড়ায় পাঠালেন না আসামীদের। চেয়ারে বসতে সংকেত করলেন।

এলেন মহামান্য পি-পি, হাতে একখণ্ড বাঁধানো কালি-কলম। অভিযুক্ত অংশবিশেষ নীল পেন্সিলে মোটা করে দাগানো। বইখানা যে তাকে সরবরাহ করেছে সে যে ভিতরের লোক তাতে সন্দেহ কি।

যারা আমাদের মতের ও পথের বিরোধী, অথবা ভিন্নপন্থী ও ভিন্নমত, তাদের অভ্যুদয় দেখলে আমাদের মন সংকুচিত বা অপ্রমুতি হয়। সেটা মনের আময়, অশুদ্ধতা। মনের সেই অপবিত্রতা দূর করবার জন্যে ভিন্নপন্থীদের পুণ্যাংশ চিন্তা করে মনে মুদিতা-ভাব আনা দরকার। পুষ্পহার দুজনকেই প্রসন্ন করে, যে ধারণ করে আর যে ঘ্রাণ নেয়। তেমনি তোমার অর্জিত পুণ্যের সৌরভে আমিও প্রমুদিত হচ্ছি। এই ভাবটিই। বিশুদ্ধ ভাব।

কিন্তু এ কি সহজ সাধনা? সাহিত্যিক হিসেবে যার আকাঙ্ক্ষিত যশ হলনা সে কি পারে পরের সাহিত্যধর্মে হৃদয়ে অনুমোদনভাব পোষণ করতে?

পি-পি বক্তৃতার পিপে খুললেন। এরা সমাজের কলঙ্ক, দেশের শত্রু, রাষ্ট্রের আবর্জনা। এদেরকে আর এখন নুন খাইয়ে মারা যাবেনা, যদি আইনে থাকত, লৌহশলাকায় বিদ্ধ করতে হত সর্বাঙ্গে।

আসামীদের পক্ষে কি বক্তব্য আছে? কিছু নয়, শুধু এই বিবৃতিপত্র। শুধু বাক্য থাকলেই কাব্য হয়না। বক্তৃতা দিয়ে রস বোঝানো যায়না অরসিককে।

সেই নামহীন উকিল তবু নাছোড়বান্দা। সে একটা বক্তৃতা ঝাড়বেই আসামীপক্ষে। বিনা পয়সায় এমন সুযোগ বুঝি আর তার মিলবেনা জীবনে।

আমাদের পক্ষে কোনো উকিল নেই। বললেন মুরলীধর : একমাত্র ভবিষ্যৎই আমাদের উকিল।

ম্যাজিষ্ট্রেট উকিলকে বসতে বললেন।

তারিখ পালটে তারিখ পড়তে লাগল। শেষে এল রায়-প্রকাশের দিন।

আদালতের বারান্দায় দুই বন্ধু প্রতীক্ষা করে আছে। শৈলজানন্দ আর মুরলীধর। সাহিত্য-বিচারে কী দণ্ড নির্ধারিত হয় তাদের! দারিদ্র আর প্রত্যাখ্যানের পর আর কী লাঞ্ছনা!

কি হবে কে জানে। শুষ্ক মুখে হাসল শৈলজা।

কি আবার হবে। বড়জোর ফাইন হবে। মুরলীধর উড়িয়ে দিলেন কথাটা।

শুধু ফাইনও যদি হয়, তাও দিতে পারবনা।

অগত্যা ওদের অতিথিই না হয় হওয়া যাবে দিন কতকের জন্যে। তাই বা মন্দ কি! মুরলীধর হাসলেন : গল্পলেখার নতুন খোরাক পাবে।

সেই লাভ। সান্ত্বনা পেল শৈলজা।

দুপুরের পর রায় বেরুল। পি-পির সাহিত্য ও সমাজবিজ্ঞানের আখ্যান-ব্যাখ্যান বিশেষ কাজে লাগেনি ম্যাজিস্ট্রেটের। আসামীদের তিনি benefit of doubt দিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন।

আদর্শবাদী মুরলীধর। ইস্কুলমাস্টার ছিলেন, কিন্তু সেই সংকীর্ণ বন্দীদশা থেকে মুক্ত ছিলেন জীবনে। নিজে কখনো গল্প-উপন্যাস লেখেননি, প্রবন্ধ ও সম্পাদকীয় প্রসঙ্গ লিখেছেন—তাই ভয় ছিল ঐ সীমিত ক্ষেত্রে না মাস্টারি করে বসেন। কিন্তু না, চিরন্তন মানুষের উদার মহাবিদ্যালয়ে তিনি পিপাসু সাহিত্যিকের মতই চিরনবীন ছাত্র। সাহিত্যের একটি প্রশস্ত আদর্শের প্রতি আহিতলক্ষ্য ছিলেন। ভ্রষ্ট হননি কোনোদিন, স্বমতবিঘাতক মীমাংসা করেননি কোনো অবস্থায়। শুধু নিষ্ঠা নয়, নিষ্ঠার সঙ্গে প্রীতি মিশিয়েছেন। আর যেখানেই প্রতি সেখানেই অমৃতের আস্বাদ।

তার স্ত্রী নীলিমা বসুও কল্লোলযুগের লেখিকা। এবং অকালপ্রয়াতা। নিম্ন মধ্যবিত্তের সংসার নিয়ে গল্প লেখতেন। বিষয়ের আনুকূল্যে লিখনভঙ্গিতে একটি স্বচ্ছ সারল্য ছিল। এই সারল্য অনেক নীরব অর্চনার ফল।

কালি-কলমের মামলা উপলক্ষ্য করে শচীন সেনগুপ্ত আধুনিক সাহিত্যের সমর্থনে অনেক লিখেছিলেন তার নবশক্তিতে। তার আগে তার আত্মশক্তিতে। শচীন সেনগুপ্ত নিজেও একজন বিপ্লবী নাট্যকার, তাঁর নাটক ঝড়ের পরে উপলক্ষ্য করেই বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ঘুরন্ত রঙ্গমঞ্চ তৈরি হয়। নিজেও তিনি ভাঙনের রঙে ভাবনাগুলিকে রাঙিয়ে নিয়েছেন, তাই কল্লোলের লেখকদের সঙ্গে তার একটা অন্তরের ঐক্য ছিল। দারিদ্রের সঙ্গে এক ঘরে বাস করতেন, এক ছিন্ন শয্যায়— অনুচর বলতে নৈরাশ্য বা নিরাশ্বাস। তবু সমস্ত শ্রীহীনতার ঊর্ধ্বে একটি মহান স্বপ্ন ছিল-কষ্টের উত্তরে নিষ্ঠা, উপবাসের উত্তরে উপাসনা। এমন লোকের সঙ্গে কল্লোলের আত্মীয়তা হবে না তো কার হবে?

আরো একজন গুপ্ত-হীন গুপ্ত লেখক ছিলেন—অরসিক রায়ের ছদ্মনামে। খুচরো ভাবে খোঁচা মারতেন, তাতে ধার থাকলেও ভার ছিলনা। তখনকার দিনে আধুনিক সাহিত্যকে অশ্লীল বলাই ফ্যাশান ছিল যেমন এককালে ফ্যাশান ছিল রবীন্দ্রনাথের লেখাকে দুর্বোধ্য বলা। আশীর্বাদ করতেই অনেক সাহসের প্রয়োজন হয়, অনেক দীর্ঘদর্শিতার। যারা লেখক নন, শুধু সমালোচক, তাদের কাছে এই সহানুভূতি, এই দুরব্যাপিতা আশা করা যাবে কি করে? নগদবিদায়ের লেখক হয় জানি, তাঁরা ছিলেন নগদ-বিদায়ের সমালোচক। তাই যারা আধুনিক সাহিত্যের স্বস্তিবাচন করেছেন-রবীন্দ্রনাথ-শরৎচন্দ্র থেকে রাধাকমল-ধূর্জটিপ্রসাদ পর্যন্ত তাদেরকেও ওঁরা রেহাই দেননি।

রবীন্দ্রনাথ রবীন্দ্রনাথ। তিনি একদেশদর্শীর মত শুধু দোষেরই সন্ধান নেননি, যা প্রশংসনীয় তাকেও সংবর্ধনা করেছেন। তিনি জানতেন এক লেখা আরেক লেখাকে অতিক্রম করে যায় বারে-বারে, আজ যা প্রতিমা কালকে আবার তা মাটি—আবার মাটি থেকেই নতুনতরো মূর্তি। তাই আজ যা ঘোলা কাল তাই সুনির্মল। প্রশ্ন হচ্ছে বেগ আছে কিনা স্রোত আছে কিনা—আবদ্ধ থাকলেও আছে কিনা বন্ধনহীনের বৃষ্টিপাত। তাই সেদিন তিনি শৈলজা-প্রেমেন বুদ্ধদেব-প্রবোধ কাউকেই স্বীকার করতে বা সংবর্ধনা করতে কুণ্ঠিত হননি। সেদিন তাই তিনি লিখেছিলেন:

সব লেখা লুপ্ত হয়, বারম্বার লিখিবার তরে
নূতন কালের বর্ণে। জীর্ণ তোর অক্ষরে অক্ষরে
কেন পট রেখেছিস পূর্ণ করি। হয়েছে সময়
নবীনের তুলিকারে পথ ছেড়ে দিতে। তোক লয়
সমাপ্তির রেখা-দুর্গ। নবলেখা আসি দর্পভরে
তার ভগ্ন স্তূপরাশি বিকীর্ণ করিয়া দূরান্তরে
উন্মুক্ত করুক পথ, স্থাবরের সীমা করি জয়,
নবীনের রথযাত্রা লাগি। অজ্ঞাতের পরিচয়
অনভিজ্ঞ নিক জিনে। কালের মন্দিরে পূজাঘরে
যুগ-বিজয়ার দিনে পুজার্চ্চনা সাঙ্গ হলে পরে
যায় প্রতিমার দিন। ধূলা তারে ডাক দিয়া কয়,–
‘ফিরে ফিরে মোর মাঝে ক্ষয়ে ক্ষয়ে হবিরে অক্ষয়,
তোর মাটি দিয়ে শিল্পী বিরচিবে নূতন প্রতিমা,
প্রকাশিবে অসীমের নব নব অন্তহীন সীমা।।’

আসলে, কী অভিযোগ এই আধুনিক সাহিত্যিকদের বিরুদ্ধে?

এই সম্বন্ধে কল্লোলে একটা জবানবন্দি বেরোয় নতুন লেখকদের পক্ষ থেকে। সেটা রচনা করে কৃত্তিবাস ভদ্র, ওরফে প্রেমেন্দ্র মিত্র।

নতুন লেখকেরা নাকি অশ্লীল।

পৃথিবীতে বুদ্ধ খৃষ্ট ও চৈতন্যেরা গা ঘেঁষাঘেঁষি করে রাস্তায় চলে এ কথা তারা না হয় নাই মানল, মিথ্যা ও পাপকে ধামাচাপা দিলে যে মারা যায় এ কথাও নাকি তারা মানেনা!

তাদের পটে নাকি সাধুর মস্তক ঘিরে জ্যোতির্মণ্ডল দেখা যায়না, পাষণ্ডকেও নাকি সে পটে মানুষ বলে ভ্রম হয়। গায়ের অমোঘ নাকি সেখানে আগাগোড়া সমস্ত পরিচ্ছেদ সন্ধান করে শেষ পরিচ্ছেদে অভ্রান্ত ভাবে পাপীর মস্তকে পতিত হয়না।

‘নৌকাডুবির’ লেখক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মত কমলাকে রমেশের প্রতি স্বাভাবিক স্বতস্ফুর্ত প্রেম থেকে অর্থহীন কারণে বিচ্ছিন্ন করে অপরিচিত স্বামীর উদ্দেশ্যে অসম্ভব অভিসারে প্রেরণ না করে, ‘পথনির্দেশ’-এর রচয়িতা শ্ৰীশরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দুটি মিলন-ব্যাকুল পরস্পরের সান্নিধ্যে সার্থক হৃদয়কে অপরূপ যথেচ্ছ পথ-নির্দেশ না করে তারা নাকি ঋষি রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে নিখিলেশের বিমলাকে আত্মোপলব্ধির স্বাধীনতা দেওয়ার পরম অশ্লীলতাকে সমর্থন করে, সত্যদ্রষ্টা নির্ভীক শরৎচন্দ্রের সঙ্গে অভয়ার জ্যোতির্ময় নারীত্বকে নমস্কার করে!

সব চেয়ে তাদের বড় অপরাধ, তারা নাকি সাহিত্যে আভিজাত্য মানেনা। মুটে মজুর কুলি খালাসী দারিদ্র্য বস্তি ইত্যাদি যে সব অস্বস্তিকর সত্যকে সর্দি, বাত, স্থূলতা ইত্যাদির মতন অনাবশ্যক অথচ আপাতত অপরিহার্য বলে জীবনেই কোনরকমে ক্ষমা করা যায়—এবং বড় জোড় কবিতায় একবার-অন্ন চাই, প্রাণ চাই, চাই মুক্ত বায়ু ইত্যাদি বলে আলগোছে হা-হুতাশ করে ফেলে নিশ্চিন্ত হওয়া যায়, তারা সাহিত্যের স্বপ্ন-বিলাসের মধ্যে সে সবও নাকি টেনে আনতে চায়।

শুধু তাই! বস্তির অন্তরের জীবনধারাকে তারা প্রায় গ্যারেজওয়ালা প্রাসাদের অন্তরালের জীবনধারার মত সমান পঙ্কিল মনে করে। এমন কি, তারা মানে যে প্রাসাদপুষ্ট জীবনের বৈচিত্র্য ও মাধুৰ্য্য সময়েসময়ে বস্তির জীবনকে ধরি-ধরিও করে!

তারা নাকি আবিষ্কার করেছে–পাপী পাপ করেনা, পাপ করে মানুষ, বা আরো স্পষ্ট করে বল্লে মানুষের সামান্য ভগ্নাংশ; মানুষের মনুষত্ব দুনিয়ার সমস্ত পাপের পাওনা অনায়াসে চুকিয়েও দেউলে হয়না!

এ আবিষ্কারের দায়িত্বটুকু পৰ্যন্ত নিজেদের ঘাড়ে না নিয়ে তারা নাকি বলে বেড়ায়—বুদ্ধ খৃষ্ট চৈতন্যের কাছ থেকে তারা এগুলি বেমালুম চুরি করেছে মাত্র।

মানুষের একটা দেহ আছে এই অশ্লীল কিংবদন্তীতে তারা নাকি বিশাস করে এবং তাদের নাকি ধারণা যে, এই পরম রহস্যময় অপরূপ দেহে অশ্লীল যদি কিছু থাকে ত সে তাকে অতিরিক্ত আবরণে অস্বাভাবিক প্রাধান্য দেবার প্রবৃত্তি।

-ইতি।

কিন্তু অভিজাত, নিষ্কর্মা, মানবহিতৈষী সমাজরক্ষক আর্টত্রাতারা থাকতে ইতি হবার জো নেই।

এই সব সুস্থ সবল নীতিবলে বলীয়ান মানবজাতির স্বনিযুক্ত ত্রাতা ও খেচ্ছাসেবকদের সাধু ও ঐকান্তিক অধ্যবসায়ে আমাদের ঘোরতর আস্থা আছে!

মানুষের এই সামান্য তিন চার হাজার বছরের ইতিহাসেই তাঁদের হিতৈষী হাতের চিহ্ন বহু জায়গায় সুস্পষ্ট।

কল্লোল ও কালি-কলম দুটি ক্ষীণপ্রাণ কাগজের কণ্ঠদলন ত সামান্য কথা। কালে হয়ত তারা পৃথিবীর সমস্ত বিদ্রোহী ও বেসুরো কণ্ঠকেই একেবারে স্তব্ধ করে ধরণীকে শ্লীলতা ও সভ্যতার এমন স্বর্ণ করে তুলতে পারেন যে, অতিবড় নিন্দুকেরও প্রমাণ করতে সাধ্য হবেনা, রামের জ্যামিতিক জীবন থেকে শ্যামের জ্যামিতিক জীবন বিন্দুমাত্র তফাৎ; এবং মাতা ধরিত্রী এতগুলি ছাঁচে-কাটা সুসন্তান বারণ করবার পরম আনন্দে রোমাঞ্চিত হয়ে সূর্যের অগ্নিজঠরে পুনঃপ্রবেশ করে আত্মহত্যা করতে চাইবেন। এতদূর বিশ্বাসও আমাদের আছে।

তবে মানুষ আসলে সমস্ত শ্লীলতার চেয়ে পবিত্র ও সমস্ত ভব্যতার চেয়ে মহৎ-এই যা ভরসা।

 

আমি আরেকটু যোগ করে দিই। যেখানে দাহ সেখানেই তো দ্যুতির সম্ভাবনা, যেখানে কাম সেখানেই তো প্রেমের আবির্ভাব। সুতরাং স্বীকার করো, আশীর্বাদ করো।

এই প্রসঙ্গে শরৎচন্দ্রের মুন্সিগঞ্জ সাহিত্য-সম্মিলনীর অভিভাষণ থেকে কিছু অংশ তুলে দিলে মন্দ হবেন।

এমনই ত হয়; সাহিত্য-সাধনায় নবীন সাহিত্যিকের এই ত সব চাইতে বড় সান্ত্বনা। সে জানে আজকের লাঞ্ছনাটাই জীবনে তার একমাত্র এবং সবটুকু নয়, অনাগতের মধ্যেও তার দিন আছে। হোক সে শতবর্ষ পরে, কিন্তু সেদিনের ব্যাকুল ব্যথিত নর-নারী শত-লক্ষ হাত বাড়িয়ে আজকের দেওয়া তার সমস্ত কালি মুছে দেবে।…আজ তাকে বিদ্রোহী মনে হতে পারে, প্রতিষ্ঠিত বিধব্যবস্থার পাশে তার রচনা আজ অদ্ভুত দেখাবে, কিন্তু সাহিত্য ত খবরের কাগজ নয়। বর্তমানের প্রাচীর তুলে দিয়ে ত তার চতুঃসীমা সীমাবদ্ধ করা যাবেনা। গতি তার ভবিষ্যতের মাঝে। আজ যাকে চোখে দেখা যায়না, আজও যে এসে পৌঁছয়নি, তাই কাছে তার পুরস্কার, তারই কাছে তার সংবর্ধনার আসন পাতা আছে।

আগেকার দিনে বাংলা সাহিত্যের বিরুদ্ধে আর যা নালিশই থাক, দুর্নীতির নালিশ ছিলনা; ওটা বোধকরি তখনও খেয়াল হয়নি। এটা এসেছে হালে।…সমাজ জিনিষটাকে আমি মানি, কিন্তু দেবতা বলে মানিনে। নর-নারীর বহুদিনের পুঞ্জীভূত বহু কুসংস্কার, বহু উপদ্রব এর মধ্যে এক হয়ে মিশে আছে। কিন্তু একান্ত নির্দয় মূর্তি দেখা দেয় কেবল নর-নারীর ভালবাসার বেলায়।… পুরুষের তত মুস্কিল নেই, তার ফাঁকি দেবার রাস্তা খোলা আছে। কিন্তু কোনও সূত্রেই যার নিষ্কৃতির পথ নেই সে শুধু নারী। তাই সতীত্বের মহিমা প্রচারই হয়ে উঠেছে বিশুদ্ধ সাহিত্য।…একনিষ্ঠ প্রেমের মর্যাদা নবীন সাহিত্যিক বোঝে, এর প্রতি তার সম্মান ও শ্রদ্ধার অবধি নাই, কিন্তু সে যা সইতে পারেন, তা হচ্ছে ফাঁকি।…সতীত্বের ধারণা চিরদিন এক নয়। পূর্বেও ছিলনা, পরেও হয়ত একদিন থাকবেনা। পরিপূর্ণ মনুষ্যত্ব সতীত্বের চেয়ে বড়।…

তবে একটা নালিশ এই করা যেতে পারে যে, পূর্বের মত রাজা-রাজড়া জমিদারের দুঃখদৈন্যদ্বন্দ্বহীন জীবনেতিহাস নিয়ে আধুনিক সাহিত্যসেবীর মন আর ভরে না। তারা নীচের স্তরে নেমে গেছে। এটা আপশোষের কথা নয়। বরঞ্চ এই অভিশপ্ত অশেষ দুঃখের দেশে নিজের অভিমান বিসর্জন দিয়ে রুশ সাহিত্যের মত যে দিন সে আরও সমাজের নীচের স্তরে নেমে গিয়ে তাদের সুখ-দুঃখ-বেদনার মাঝখানে দাঁড়াতে পারবে, সেদিন এই সাহিত্যসাধনা কেবল স্বদেশ নয়, বিশ্বসাহিত্যেও আপনার স্থান করে নিতে পারবে।

 

এইবার বিরোধী দলের ‘নব-সাহিত্য-বন্দনাটা’ আবার মনে করিয়ে দিই।

রাজ্যোদ্যানে চিলে বস্তি,
স্বস্তি নব সাহিত্য স্বস্তি,
পথ-কর্দমে ধূলি ও পঙ্কে
ঘোষিলে আপন বিজয়-শঙ্খে,
লাঞ্ছিত পতিতার উদঘাটিলে দ্বার
সতীত্বে তাহারে কৈলে অভিষিক্ত–
জয় নব সাহিত্য জয় হে।

কালি-কলমের মামলা উপলক্ষ্য করে আরো একজন এগিয়ে এল। চিত্রবহার জন্যে লড়তে। সে অন্নদাশঙ্কর। তখন সে বিলেতে, চিত্রবহা চেয়ে নিয়ে পড়ল সে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। তারপর তার প্রশংসায় দীর্ঘ এক প্রবন্ধ লিখলে। সেটা নবশক্তিতে ছাপা হল। লিখলে মুরলীদাকে: মোকদ্দমার রায়ে খুশি হতে পারলাম না। আসল প্রশ্নের মীমাংসা হলো কই? আমাদের সাহিত্যিকদের ম্যানিফেস্টো কই?

লণ্ডন থেকে আমাকে লেখা অন্নদাশঙ্করের একটা চিঠি এখানে তুলে দিচ্ছি:

শুদ্ধাস্পদেষু

কল্লোলের বৈশাখ সংখ্যার প্রতীক্ষায় ছিলুম। আপনার বেদে পড়ে রবীন্দ্রনাথ যা বলেছেন সে কথা মোটের ওপর আমার কথা। কিন্তু আমার মনে হয় মিথুনাসক্তি নিয়ে আরেকটু ব্যাপকভাবে ভাববার সময় এসেছে। হঠাৎ একই যুগে এতগুলো ছোট-বড়-মাঝারি লেখক মিথুনাসক্তিকে অত্যধিক প্রাধান্য দিতে গেল কেন? দেখে শুনে মনে হয় বিংশ শতাব্দীর লেখকমাত্রই যেন Keatsএর মতো বলতে চায়, I felt like some watcher of the skies when a new planet swims into his ken. আলিবাবার সামনে যেন পাতালপুরীর দ্বার খুলে গেছে। শোনো শোনো অমৃতের পুত্রগণ, আমি জেনেছি সেই দুর্বার প্রবৃত্তিকে, যে প্রবৃত্তি সকল কিছুকে জন্ম দেয়, যে প্রবৃত্তিকে স্বীকার করলে মরণ সত্ত্বেও তোমরা বাঁচবে–তোমাদের থেকে যারা জন্মাবে তাদের মধ্যে বাঁচবে। আর এই সংসারে কেবল সেই প্রবৃত্তিই সার, অনিত্য এই জগতে কেবল সেই প্রবৃত্তিই নিত্য।—এ যুগের ঋষিরা যেন এই তত্বই ঘোষণা করেছেন। Personal immortality-তে তাঁদের আস্থা নেই–race immortality-ই তাদের একমাত্র আশা। এবং race immortality-র কুঞ্চিকা হচ্ছে Sex। যে বস্তু গত কয়েক শতাব্দীয় বিশ্বব্যাপী বুর্জোয়া সাহিত্যে taboo হয়েছিল কিম্বা বড় জোর রেষ্টোরেশন যুগের ইংলণ্ডে ব ভারতচন্দ্রীয় যুগের বাংলাদেশে বৈঠকখানাবিহারী বাবুদের মদের সঙ্গে চাটের স্থান নিয়েছিল সেই বস্তুই আজকের সমস্যাসংকুল বিশ্বে নতুন নক্ষত্রের মতো উদয় হলো। একে যদি বিকারের লক্ষণ মনে করা যায় তবে ভুল করা হবে। আসলে এটা হচ্ছে প্রকৃতি পুনরাবিষ্কার। মানুষের গভীরতম প্রকৃতি বহু শত বছরের কৃত্রিমতার তলায় তলিয়ে গিয়েছিল। এতদিনে পুনরুদ্ধারের দিন এলো। অনেকখানি আবর্জনা না সরালে পুনরুদ্ধার হয়না। অথচ আবর্জনা সরানো কাজটা বড় অরুচিকর। Sex সম্বন্ধে ঘাটাঘাটি সেইজন্যে বড় বীভৎস বোধ হচ্ছে। কিছুকাল পরে এই বীভৎসতা-এই বিশ্রী কৌতূহল—এই আধেক ঢেকে আধেক দেখানো—এসব বাসি হয়ে যাবে। Sexকে আমরা বিস্ময়সহকারে প্রণাম করবো, আদিম মানব যেমন করে সূর্যদেবতাকে প্রণাম করতো। এখনো আমরা sophistication কাটিয়ে উঠতে পারিনি বলে বাড়াবাড়ি করছি। কিন্তু এমন যুগ আসবেই যখন জন্মরহস্যকে আমরা অলৌকিক অহেতুক অতি বিস্ময়কর বলে নতুন ঋগ্বেদ রচনা করবো, নতুন আবেস্তা, নতুন Genesis. ভগবানকে পুনরাবিষ্কার করা বিংশ শতাব্দীর সব চেয়ে বড় কাজ—সেই কাজেই অঙ্গ সৃষ্টিতত্ত্ব পুনরাবিষ্কার। বিজ্ঞান ভাবীকালের মহাকাব্য রচনার আয়োজন করে দিচ্ছে—এইবার আবির্ভাব হবে সেই মহাকবিদের যাঁরা অষ্টোত্তর শত উপনিষৎ লিখে সকলের অমৃতত্ব ঘোষণা করবেন। প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সন্ধি হবে তখন। দেহ ও মনের বহুকালীন এটারও নিষ্পত্তি হবে সেই সঙ্গে।…

ভালো কথা, কল্লোলের দলের কেউ বা কারা কিছুক্ষণের জন ইউরোপে আসেননা কেন? Parisএ থাকবার খরচ মাসে ৬০/৬৫ (টাকা) যদি নিজের হাতে রান্না করে খান। একসঙ্গে তিন চার জন থাকলে আরো কম খরচ। গল্প ও প্রবন্ধ লিখে ওর অন্তত অর্ধেক রোজগার করা কি আপনার পক্ষে বা বুদ্ধদেব বসুর পক্ষে বা প্রবোধকুমার সান্যালের পক্ষে শক্ত? বাকী অর্ধেক কি আপনাদেরকে বন্ধুরা দেবে না? Parisএ বছর দুয়েক থাকা যে কত দিক থেকে কত দরকার তা আপনাকে বুঝিয়ে বলতে হবেনা। বাঙালী ছাড়া সব জাতের সাহিত্যিক বাংলা ছাড়া সব ভাষায় ওখান থেকে কাগজ বার করে। কল্লোলের আপিস কলকাতা থেকে Parisএ তুলে আনেন না কেন? (Countee Cullen এখন Parisএ থাকেন-দেখা হলো।) আমার। নমস্কার। ইতি। আপনার–

শ্ৰীঅন্নদাশঙ্কর রায়

 

কাউণ্টি কালেন সেকালের নি*গ্রো কবি। তার দুটো লাইন এখনো মনের মধ্যে গাঁথা হয়ে আছে।

Yet do I marvel at this curious thing :
To make a poet black and bid him sing!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *