3 of 4

৪.৩৩ অপরিণামদর্শী সিরিয়া সওদাগরের শিক্ষা

আল্লাহর কি অপার লীলা, তিনি যেমনটি ইচ্ছা করেছেন তেমনটি বানিয়েছেন বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন মানুষকে। কিন্তু একটা কথা ভাবলে অবাক হতে হয়, সিরিয়ার প্রতিটি নরনারীকেই তিনি নীচ প্রকৃতির হিংসুটে লোভী পরশ্রীকাতর এবং ভ্রষ্ট চরিত্রের করে সৃষ্টি করেছেন। সারা সিরিয়া ছুঁড়লে একটি মানুষকেও পাওয়া ভার যে দোষের চেয়ে গুণে বেশি মহীয়ান।

কাইরোর অধিবাসীরা অত্যন্ত ভদ্র বিনয়ী এবং ধর্মপরায়ণ। আর ইরাকের তো তুলনাই নাই। তাদের মতো আদর্শ চরিত্রের মানুষ আর কোন দেশে আছে। যে সব সৎগুণ থাকলে মানুষকে শ্রেষ্ঠ বলতে পারি তার সবই তাদের আছে। তা ছাড়া শিক্ষা দীক্ষা মেধায় তাদের মতো পারঙ্গম আর কোন্ দেশের মানুষ?

কিন্তু সিরিয়াবাসীরা হীনমন্য, নীচ অর্থগুধু। তারা অতিথির সম্মান জানে না। প্রতারণা ছল চাতুরী জালিয়াতি জোচ্চরীতে তাদের সমকক্ষ আর কেউ নাই। শয়তানী বদমাইশিতে তাদের

জুড়ি নাই তামাম দুনিয়ায়।

একদিন কাইরো শহরে এসে হাজির হলো এই ধরনের এক সিরিয়ারাসী। শহরের মধ্যভাগে বড় বাজারের পাশে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে তার বাণিজ্যের সামানপত্র গুদামজাত করলো। দামী দামী রেশমী সাজ-পোশাকের পণ্যসম্ভার সঙ্গে এনেছে সে। উদ্দেশ্য চড়া দামে কাইরোর। বাজারে বিক্রি করে মোটা মুনাফা লুটে নিয়ে যাবে।

পরদিন সকালে উঠেই সে বড় বড় সওদাগরী দোকানে হানা দেয়। নানাভাবে তার পণ্যের গুণ-কীর্তন করে সওদাগরদের কাছে।

দিন কয়েক পরে।

একদিন সে একটা পথ ধরে চলছিলো। কিন্তু চোখ ছিলো তার রাস্তার দু’পাশের বাড়ির দরজা জানালার দিকে। চলতে চলতে একসময় সে দেখলো তিনটি প্রিয়দর্শনা তরুণী কলহাস্য মুখরিত হয়ে পথ চলছে। ওদের উজ্জ্বল যৌবনের মাদকতায় বিদেশীর রক্তে তুফান ওঠে। নিজেকে সে আর সামলে রাখতে পারে না। মেয়েগুলোর সামনে এগিয়ে গিয়ে বলে, ওগো সুন্দরীরা, আমি বাজারের পাশের বড় সরাইখানায় উঠেছি। তোমাদের যদি আপত্তি না থাকে তবে এসো না, আজ সন্ধ্যায়। একটু খানাপিনা মৌজ করা যাবে? অথবা যদি বলো তোমাদের বাড়িতে যেতে হবে—তাও যেতে পারি আমি।

মেয়েগুলো হেসে এ ওর মায়ে গড়িয়ে পড়ে, না না আমাদের বাড়িতে নয়, আমরা তোমার সরাইখানাতেই যাবো সন্ধ্যায়। আমাদের বাড়িতে গেলে, তুমি কি ভেবেছ, আমাদের স্বামীরা তোমাকে মুসাফির মেহেমান ভেবে যত্ন-আত্তি করে খেতে-শুতে দেবে? ঠিক আছে আমরাই যাবো তোমার ঘরে।

মেয়েগুলো চলে গেলে লোকটা বাজার থেকে নানারকম দামী দামী খানা এবং দুষ্প্রাপ্য প্রাচীন কিছু মদ্য কিনে সরাইখানায় ফিরে গেলো।

সন্ধ্যা নামতে না নামতে মেয়ে তিনটি এসে হাজির হলো সরাইখানায়। সারা অঙ্গে রংদার সাজ-পোশাক দামী রেশমী বোরখায় আপাদমস্তক মোড়া!

কিন্তু বিদেশীর ঘরে ঢুকেই ওরা মুহূর্তে বেআব্রুউলঙ্গ হয়ে সাজ-পোশাকগুলোকে একপাশে ছুঁড়ে দিয়ে লোকটার সামনে এসে পা ছড়িয়ে বসে পড়লো।

বিদেশী তো হাতে চাঁদ পেয়ে গেলো। দামী মদ আর মাংসের খানাপিনা সাজিয়ে দিলো সে ওদের সামনে। মেয়েগুলো গোগ্রাসে উদরস্থ করতে থাকলো সব।

ক্রমশঃ মদের নেশায় মদির হয়ে উঠলো সকলে। তারপর শুরু হলো ঢলাঢলি গলাগলি। কিছুক্ষণের মধ্যেই সরাবের নেশায় উত্তাল হয়ে উঠলো ওরা। সমানে চললো নাচন-কুদন, চেঁচামেচি চিৎকার শীৎকার। তারপর আরম্ভ হলো জড়াজড়ি কামড়া-কামড়ি।

লোকটিও সমানে তাল দিতে থাকলো ওদের সঙ্গে। একসময় সে জিজ্ঞেস করলো এর আগে কখনও তোমরা আমার মতো এতো আমুদে লোকের সঙ্গ পেয়েছ?

তিনজনেই একসঙ্গে সোর তোলে, না না, কক্ষণো না। তুমি অপরূপ, অদ্ভুত সুন্দর। এমনটি আর কখনও দেখিনি।

এ তিনটি উলঙ্গ তরুণীকে এপাশে ওপাশে নিয়ে সারা মেঝেয় গড়াগড়ি খেতে থাকলো লোকটা। মাঝে মাঝে উঠে গিয়ে সে মদের পেয়ালা পূর্ণ করে এনে ধরে মেয়েগুলোর মুখে। আর ওরা এক এক চুমুকে এক এক পেয়ালা নিঃশেষ করে দেয়।

রাত গভীর হতে থাকে। লোকটা বদ্ধ মাতাল হয়ে গেছে তখন। মেয়ে তিনটি ওর মাথার পাগড়ী খুলে নিয়ে গাধার টুপি বানিয়ে মাথায় পরিয়ে দেয়। তারপর ওর ঘরের সোনা-দানা এবং যা কিছু মূল্যবান ধরন পেলো সব হাতিয়ে নিয়ে এক সময় কেটে পড়লো ওরা।

পরদিন সকালে বেশ বেলা হলে বিদেশীর নিদ্রাভঙ্গ হয়। ঘরের চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখতে পায় সারা ঘর লণ্ডভণ্ড-তছনছ হয়ে আছে। কিন্তু মেয়েগুলো নেই।

একটু পরেই সে বুঝতে পারলো মেয়েগুলো তাকে সর্বস্বান্ত করে চলে গেছে। তার সমস্ত টাকা-পয়সা, সোনা-দানা, হীরে-জহরত সব লোপাট করে নিয়ে গেছে তারা। কপাল চাপড়ে সে ডুকরে উঠলো, ইয়া আল্লাহ, একি হলো আমার? আমি যে একেবারে পথের ভিখিরি হয়ে গেছি।

লোকটা আর এক মুহূর্ত মিশরে অপেক্ষা না করে সেইদিনই নিজের দেশ সিরিয়ার উদ্দেশে রওনা হয়ে গেলো।

শাহরাজাদ হাসতে হাসতে বললো, অপরিণামদর্শী সিরিয়া সওদাগরের সমুচিত শিক্ষাই হয়েছিলো সেদিন। বিদেশে এসে যে লোক বেলেল্লাপনায় মত্ত হয়ে ওঠে তার এইভাবেই শিক্ষা হওয়া দরকার। যাক, ছোট ছোট গল্প অনেকগুলো শোনালাম, এবার আপনাকে একটি বড় কিসসা শোনাবো জাঁহাপনা, যাদু কিতাবের কাহিনী বলছি শুনুন :

ছোট বোন দুনিয়াজাদ নিচে থেকে উঠে এসে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, যাদু কিতাব? সে কী, দিদি।

শাহরাজাদ বলে, সেই কাহিনীই তো বলছি, শোনো :

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *