০৫. বিদ্রোহীর কবি কাজী নজরুল ইসলাম

কশ্চিৎ কান্তা-বিরহগুরুণা—স্বাধিকারপ্রমত্তঃ,
শাপেনাস্তং–গমিতমহিমা-বৰ্ষভোগ্যেন ভর্ত্তুঃ–

ললিতগভীর সুমধুর কণ্ঠে একটু বা টেনে-টেনে আবৃত্তি করতেকরতে যে যুবকটি কল্লোল-আফিসে প্রবেশ করল প্রথম দর্শনেই তাকে ভালোবেসে ফেললাম। ভালোবাসতে বাধ্য হলাম বলা উচিত। এমন হৃদয়স্পর্শী তার ব্যক্তিত্ব। মাথাভরা দীর্ঘ উস্কখুস্ক চুল, পারিপাট্যহীন বেশবাস। এক চোখে গাঢ় ভাবুকতা, অন্য চোখে আদর্শবাদের আগুন। এই আমাদের নৃপেন, নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়। সে যুগের যন্ত্রণাহত যৌবনের রমণীয় প্রতিচ্ছবি। কিন্তু দেখব কি তাকে। কয়েক চরণ বাদ দিয়ে পূর্বমেঘ থেকে সে আবার আবৃত্তি সুরু করেছে তার অমৃতবর্ষী মনোহরণ কণ্ঠে :

আষাঢ়স্য—প্রথমদিবসে—মেঘমাশ্লিষ্টসানু,
বপ্রক্রীড়া—পরিণতগজ—প্রেক্ষণীয়ং দদর্শ।।

কতক্ষণ তুমুল আড্ডা জমাবার পর আবার সে হঠাৎ উদাস হয়ে পড়ল, চলে গেল আবার ভাবরাজ্যে। পূর্বমেঘ থেকে উত্তরমেঘে। আঙুল দিয়ে টেনে-টেনে চুলের ঘুরুলি তৈরি করছে আর আবৃত্তি করছে

তন্ময়ের মত :

হস্তে লীলা-কমলমলকে—বালকুন্দানুবিদ্ধং,
নীতা লোধ্র—প্রসবরজসা–পান্ডুমাননেশ্রীঃ।
চুড়াপাশে-নবকুরুবকং—চারু কর্ণে শিরীষং,
সীমন্তেচ—ত্বদুপগমজং-যত্র নীপং বধূনাম্।।

আবার কতক্ষণ হুল্লোড়, তর্কাতর্কি, আবার সেই ভাবুকের নির্লিপ্ততা। নৃপেন এতক্ষণ হয়তো দেয়ালে পিঠ রেখে তক্তপোশের উপর পা ছড়িয়ে বসে ছিল, এবার শুয়ে পড়ল। বলা-কওয়া নেই, সমুদ্র পেরিয়ে চলে গেল ইংরিজি সাহিত্যের রোমান্টিক যুগে, শেলির ওড টু ওয়েস্ট উইণ্ডে সুর মেলাল :

Make me Thy lyre! even as the forest is,
What if my thoughts are falling like its own,
The tumult of Thy mighty harmonies
Will take from both a deep autumnal tone
Sweet though in sadness—

জিগগেস করলাম, হুগলি যাবে না? নজরুল ইসলামের বাড়ি?

নিশ্চয়ই যাব। বলে নৃপেন নজরুলকে নিয়ে পড়ল।

ভাঙা-গড়া খেলা যে তার কিসের তবে ডর?
তোরা সব জয়ধ্বনি কর!
এই তো রে তার আসার সময় ঐ রথ-ঘর্ঘর–
শোনা যায় ঐ রথ-ঘর্ঘর!
বধূরা প্রদীপ তুলে ধর!
ভয়ঙ্করের বেশে এবার ঐ আসে সুন্দর।
তোরা সব জয়ধ্বনি কর!
তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!

বললাম, কি করে চিনলে নজরুলকে?

নৃপেন তখন সিটি কলেজে আই-এ পড়ে ও আরপুলি লেনের এক বাড়িতে ছাত্র পড়ায়। দু-তিনখানা বাড়ির পরেই কবি যতীন্দ্রমোহন বাগচির বাড়ি। সে সব দিনে-তখন সেটা ১৩২৮ সাল-বাগচি-কবির বৈঠকখানায় কলকাতার একটা সেরা সান্ধ্য মজলিস বসত। বহু গুণী—গায়ক ও সাহিত্যিক—সে-মজলিসে জমায়েত হতেন। বাংলা দেশের সব জ্যোতির্ময় নক্ষত্র–গ্রহপতি স্বয়ং যতীন্দ্রমোহন। যতীন্দ্রমোহনের অতিথিবৎসল্য নগরবিশ্রুত। কোথায় কোন ভাঙা দেয়ালের আড়ালে নূতনের কেতন উড়ছে, কোথায় কার মাঝে মৃদুতম সম্ভাবনা, ক্ষীণতম প্রতিশ্রুতি—সব সময়ে তার চোখ-কান খোলা ছিল। আভাস একবার পেলেই উদ্বেল হৃদয়ে আহ্বান করে আনতেন। তার বাড়ির দরজায় যে হাসনাহেনার গুচ্ছ ছিল তার গন্ধ প্রীতিপূর্ণ হৃদয়ের গন্ধ। নৃপেন দু-দুবার সে বাড়ির সুমুখ দিয়ে হেঁটে যায়, আর ভাবে, ঐ স্বর্গরাজ্যে তার কি কোনদিন প্রবেশের অধিকার হবে? আদৰ্শতাড়িত যুবক, সাংসারিক দারিদ্র্যের চাপে সামান্য টিউশনি করতে হচ্ছে, বাগচিকবি কি করে জানবেন তার অন্তরের সীমাতিক্রান্ত অনুরাগ, তার নির্জনলালিত বিদ্রোহের ব্যাকুলতা? নৃপেন যায় আর আসে, আর ভাবে, ঐ স্বর্গরাজ্যে কে তাকে ডাক দেবে, কবে, কার কণ্ঠরে?

একদিন তার ছাত্র নৃপেনকে বললে, জানেন মাস্টার মশাই, আজ বাগচি-বাড়িতে বিদ্রোহীর কবি কাজী নজরুল ইসলাম আসছেন। বিদ্রোহীর কবি! আমি ইন্দ্রাণী-সুত, হাতে চাঁদ ভালে সূৰ্য্য; মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণতুৰ্য্য। আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান-বুকে এঁকে দিই পদ-চিহ্ন; আমি খেয়ালী বিধির বক্ষ করিব ভিন্ন। সেই বিদ্রোহীর কবি? কেমন না জানি দেখতে! রাস্তার উপরে উৎসুক জনতা ভিড় করে আছে আর ঘরের মধ্যে কে একজন তরুণ গান গাইছে তারস্বরে। সন্দেহ কি, শুধু বিদ্রোহীর কবি নয়, কবি-বিদ্রোহী। তার কণ্ঠস্বরে প্রাণবন্ত প্রবল পৌঁরুষ, হৃদয়স্পনী আনন্দের উত্তালতা। গ্রীষ্মের রুক্ষ আকাশে যেন মনোহর ঝড় হঠাৎ ছুটি পেয়েছে। কর্কশের মাঝে মধুরের অবতারণা। নিজেরো অলক্ষ্যে কখন ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়েছে নৃপেন। সমস্ত কুণ্ঠার কালিমা নজরুলের ___নে মুছে গেছে। শুধু কি তাই? গানের শেষে অতর্কিতে সাহিত্যালোচনায় যোগ দিয়ে বসেছে নৃপেন। কথা হচ্ছিল রুশ সাহিত্য নিয়ে, সব সুমহান পূর্বসূরিদের সাহিত্য-পুশকিন, টলস্টয়, গোগল, ডস্টয়ভস্কি। নৃপেন রুশ সাহিত্যে মশগুল, প্রত্যেকটি প্রখ্যাত বই তার নখমুকুরে। তা ছাড়া সেই তরুণ বয়সে সব সময় নিজেকে জাহির করার উত্তেজনা তো আছেই। কে যেন ডস্টয়ভস্কির কোন উপন্যাসের চরিত্রের নামে ভুল করেছে, নৃপেন তা সবিনয়ে সংশোধন করলে। সঙ্গে সঙ্গে প্রমাণ করলে তার প্রত্যক্ষ পরিচয়ের বিস্তৃতি। সকলের বিস্মিত চোখ পড়ল নৃপেনের উপর। নজরুলের চোখ পড়ল নবীন বন্ধুতার।

ঘর থেকে নেমে এসেছে পথে, পিছন থেকে কে ডাকল নৃপেনকে। কি আশ্চর্য! বিদ্রোহী কবি স্বয়ং, আর তার সঙ্গে তার বন্ধু আফজল-উল হক—মোসলেম ভারতের কর্ণধার। মানে, যে কাগজে বিদ্রোহী ছাপা হয়েছে সেই কাগজের। সুতরাং নৃপেনের চোখে আফজল ও প্রকাণ্ড কীর্তিমান। আর, প্রবাসীর যেমন রবীন্দ্রনাথ, মোসলেম ভারতের তেমনি নজরুল।

নজরুল বললে, আপনার সঙ্গে আলাপ করতে চাই।

তা হলে আসুন, হাঁটি।

নৃপেন তখন থাকে চিংড়িঘাটায়, কলকাতার পূর্ব উপান্তে। নজরুল আর আফজল চলে এল নৃপেনের বাড়ি পর্যন্ত। নৃপেন বললে, আপনারা পথ চিনে ফিরতে পারবেন না, চলুন এগিয়ে দিই। এগিয়ে দিতে দিতে চলে এল কলেজ স্ট্রিট, নজরুলের আস্তানা। এবার ফিরি, বলে নৃপেন। নজরুল বললে, চলুন, ফের এগিয়ে দিই আপনাকে।

সে কি কথা? নজরুল বললে, পথ তো চিনে ফেলেছি ইতিমধ্যে।

রাত গভীর হয়ে এল, সঙ্গে-সঙ্গে গভীর হয়ে এল হৃদয়ের কুটুম্বিতা। দৃঢ় করে বাঁধা হয়ে গেল গ্রন্থি।

নজরুল বললে, ধুমকেতু নামে এক সাপ্তাহিক বের করছি। আপনি আসুন আমার সঙ্গে। আমি মহাকালের তৃতীয় নয়ন, আপনি ত্রিশূল! আসুন, দেশের ঘুম ভাঙাই, ভয় ভাঙাই–

নৃপেন উৎসাহে ফুটতে লাগল। বললে, এমন শুভকাজে দেবতার কাছে আশীর্বাদ ভিক্ষা করবেন না? তিনি কি চাইবেন মুখ তুলে? তবু নজরুল শেষমুহূর্তে তাঁকে টেলিগ্রাম করে দিল। রবীন্দ্রনাথ কবে কাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন? তা ছাড়া, এ নজরুল, যার কবিতায় পেয়েছেন তিনি তপ্ত প্রাণের নতুন সজীবতা। শুধু নামে আর টেলিগ্রামেই তিনি বুঝতে পারলেন ধূমকেতুর মর্মকথা কি। যৌবনকে চিরজীবী আখ্যা দিয়ে বলাকায় তিনি আধ-মরাদের ঘা মেরে বাঁচাতে বলেছিলেন, সেটাতে রাজনীতি ছিল না, কিন্তু, এবার ধূমকেতুকে তিনি যা লিখে পাঠালেন তা স্পষ্ট রাজনীতি, প্রত্যক্ষ গণজাগরণের সঙ্কেত।

আয় চলে আয় রে ধূমকেতু
আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু,
দুর্দিনের এই দুর্গশিরে
উড়িয়ে দে তোর বিজয়কেতন,
অলক্ষণের তিলকরেখা
রাতের ভালেহোক না লেখা,
জাগিয়ে দে রে চমক মেরে
আছে যারা অর্দ্ধচেতন।

সাত নম্বর প্রতাপ চাটুজ্জের গলি থেকে বেরুল ধূমকেতু। ফুলস্কাপ সাইজ, চার পৃষ্ঠার কাগজ, দাম বোধ হয় দু পয়সা। প্রথম পৃষ্ঠায়ই সম্পাদকীয় প্রবন্ধ, আর তার ঠিক উপরে রবীন্দ্রনাথের হাতের লেখা ব্লক করে কবিতাটি ছাপানো।

নৃপেনের মত আমিও ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্র। সপ্তাহান্তে বিকেলবেলা আরো অনেকের সঙ্গে জগুবাবুর বাজারের মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকি, হকার কতক্ষণে ধূমকেতুর বাণ্ডিল নিয়ে আসে। হুড়োহুড়ি কাড়াকাড়ি পড়ে যায় কাগজের জন্যে। কালির বদলে রক্তে ডুবিয়ে ডুবিয়ে লেখা সেই সব সম্পাদকীয় প্রবন্ধ। সঙ্গে ত্রিশূলের আলোচনা। শুনেছি স্বদেশ যুগের সন্ধ্যাতে ব্রহ্মবান্ধব এমনি ভাষাতেই লিখতেন। সে কী কশা, কী দাহ! একবার পড়ে বা শুধু একজনকে পড়িয়ে শান্ত করবার মত সে লেখা নয়। যেমন গদ্য তেমনি কবিতা। সব ভাঙার গান, প্রলয়-বিলয়ের মঙ্গলাচরণ।

কারার ঐ লৌহকপাট ভেঙে ফেল কর রে লোপাট
রক্ত-জমাট, শিকলপূজার পাষাণবেদী।
ওরে ও তরুণ ঈশান! বাজা তোর প্রলয়-বিষাণ
ধ্বংশ-নিশান উড়ুক প্রাচীর প্রাচীর ভেদি!
গাজনের বাজনা বাজা! কে মালিক কে সে রাজা?
কে দেয় সাজা মুক্ত স্বাধীন সত্যকে রে?
হাহাহা পায় যে হাসি, ভগবান পরবে ফাঁসি
সৰ্ব্বনাশী শিখায় এ হীন তথ্য কে রে?
ওরে ও পাগলা ভোলা, দে রে দে প্রলয় দোলা
গারদগুলা জোরসে ধরে হেঁচকা টানে!
মার হাঁক হায়দরী হাঁক, কাঁধে নে দুন্দুভি-ঢাক
ডাক ওরে ডাক মৃত্যুকে ডাক জীবনপানে।
নাচে ঐ কালবোশেখী, কাটাবি কাল বসে কি?
দে রে দেখি ভীম কারার ঐ ভিত্তি নাড়ি!
লাথি মার ভাঙরে তালা যত সব বন্দীশালা।
আগুন জ্বালা আগুন জ্বালা ফেল উপাড়ি।।

ধূমকেতুর সেসব সম্পাদকীয় প্রবন্ধ সংকলিত থাকলে বাংলাসাহিত্যের একটা স্থায়ী উপকার হত। অন্তত সাক্ষ্য থাকত বাঙলা গদ্য কতটা কাব্যগুণান্বিত হতে পারে, প্রসন্নগম্ভীরপদা সরস্বতী কি করে বিনিষ্ক্রান্তাসিধারিণী সংহারকর্ত্রী মহাকালী হতে পারে। প্রসাদম্য ললিত ভাষায় কি করে উৎসারিত হতে পারে অগ্নিগর্ভ অঙ্গীকার। একটা প্রবন্ধের কথা এখনো মনে আছে—নাম, ম্যয় ভখাহুঁ। মহাকালী ক্ষুধার্ত হয়ে নরমুণ্ডের লোভে শ্মশানে বেরিয়েছেন তারই একটা ঘোরদর্শন বর্ণনা। বোধ হয় সে-সংখ্যাটা কালীপূজার সন্ধ্যায় বেরিয়েছিল। কালীপূজার দিন সাধারণ দৈনিক বা সাপ্তাহিক কাগজে যে মামুলি প্রবন্ধ বেরোয়—মুখস্তকরা কতকগুলো সমাসবদ্ধ কথা—এ সে জাতের লেখা নয়। দীপান্বিতার রাত্রির পরেই এ-দীপ নিবে যায় না। বাংলাদেশের চিরকালীন যৌবনের রক্তে এর দ্যুতি জতে থাকে।

ধূমকেতুতে একটা কবিতা পাঠিয়ে দিলাম। অর্থাৎ, একটা সাঁকো ফেললাম নজরুলকে গিয়ে ধরবার জন্যে। সেই কবিতাটা ঠিক পরবর্তী সংখ্যায় বেরুল না। অনুৎসাহিত হবার কথা, কিন্তু আমার স্পর্ধা হলো নজরুল ইসলামের কাছে গিয়ে মুখোমুখি জবাবদিহি নিতে হবে। গেলাম তাই একদিন দুপুরবেলা। রঙিন লুঙ্গি পরনে, গায়ে আঁট গেঞ্জি —অসম্পাদকীয় বেশে নজরুল বসে আছে তক্তপোশে—চারদিকে একটা অন্তরঙ্গতার আবহাওয়া ছড়িয়ে। অগ্নিবীণার প্রথম সংস্করণে নজরুলের একটা ফোটো ছাপা হয়েছিল, সেটায় বড় বেশি কবি-কবি ভাব—এখন চোখের সামনে একটা গোটা মানুষ দেখলাম, স্পষ্ট, সতেজ প্রাণপূর্ণ পুরুষ। বললাম, আমার কবিতার কি হল? নজরুল চোখ তুলে চাইল। কোন কবিতা? বললাম—আপনার কবিতা যখন বিদ্রোহী, আমার কবিতা উচ্ছৃঙ্খল। হাহাহা করে নজরুল হেসে উঠল। বললে–আপনি মনোনীত হয়েছেন।

কবিতাটা ছাপা হয়েছিল কিনা জানি না। হয়তো হয়েছিল, কিংবা হয়তো তার পরেই নজরুলকে ধরে নিয়ে গেল পুলিশে। কিন্তু তার সেই কথাটা মনের মধ্যে ছাপা হয়ে রইল : আপনি মনোনীত হয়েছেন।

নজরুলকে কিসের জন্যে ধরলে জানো? জিগগেস করলে নৃপেন।

কিসের জন্যে?

আগে লিখেছিল—রক্তাম্বর পর মা এবার জ্বলে পুড়ে যাক শ্বেতবসন। দেখি ঐ করে সাজে মা কেমন বাজে তরবারি ঝনন ঝন।। এবারে লিখলে—আর কতকাল রইবি বেটি মাটির ঢেলার মুর্তি-আড়াল? স্বর্গ যে আজ জয় করেছে অত্যাচারী শক্তি-চাঁড়াল! এই লেখার জন্যে নজরুলের এক বছর জেল হয়ে গেল। সে যা জবানবন্দি দিলে তা শুধু সত্য নয়, সাহিত্য।

পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায় বসে ছিল একপাশে! বললে, তার জেলের কাহিনীটা আমার কাছ থেকে শোনো।

তোমার সঙ্গে নজরুলের আলাপ হল কবে?

নজরুল যখন করাচিতে, যখন ও শুধু-কবি নয়, হাবিলদার কবি। পল্টনে লেফট-রাইট করাতে হত তাকে। পল্টনও এমন পল্টন, লেফটরাইট বোঝে না। তখন এক পায়ে ঘাস ও অন্য পায়ে বিচালি বেঁধে দিয়ে বলতে হত, ঘাস-বিচালি ঘাস। সেই সময়কার থেকে চেনা। আছি তখন সবুজপত্রে—হঠাৎ অপ্রত্যাশিত এক চিঠি আসে করাচি থেকে, সঙ্গে ছোট একটি কবিতা। লেখক উনপঞ্চাশ নম্বর বাঙালি পল্টনের একজন হাবিলদার, নাম কাজী নজরুল ইসলাম। কবিতাটি বড় রবীন্দ্রনাথ-ঘেঁসা। স্বকীয়তা খুঁজে পেলেন না বলে চৌধুরী মশায়ের পছন্দ হল না। আমার কিন্তু ভাল লেগেছিল। কবিতাটি নিয়ে গেলাম প্রবাসীর চারুবাবুর কাছে। চারুবাবু খুশি হয়ে ছাপলেন সে-কবিতা। বললেন, আমরা চাই। এক জায়গায় পাঠানো কবিতা অন্য জায়গায় চালিয়ে দিয়েছি লেখকের সম্মতি না নিয়ে, কুণ্ঠিত হয়ে চিঠি লিখলাম নজরুলকে। দে গরুর গা ধুইয়ে–নজরুল তা থোড়াই কেয়ার করে। প্রশস্ত সাধুবাদ দিয়ে চিঠি লিখলে আমাকে, এতটুকু ভুল বুঝলে না। নবীন আগন্তুককে প্রবেশ-পথে যে সামান্য সাহায্য করেছি এতেই তার বন্ধুতা যেন সে কায়েম করলে। তারপর পল্টন ভেঙে দেবার পর যখন সে কলকাতায় ফিরল, ফিরেই ছুটল সবুজপত্রে আমাকে খোঁজ করতে–

একদিন জোড়াসাঁকো থেকে খবর এল—রবীন্দ্রনাথ পবিত্রকে ডেকেছেন। কি ব্যাপার? ব্যাপার রোমাঞ্চকর। রবীন্দ্রনাথ তার বসন্ত-নাটিকাটি নজরুলের নামে উৎসর্গ করেছেন। এখন একখানা বই ওকে জেলখানায় পৌঁছে দেওয়া দরকার। পারবে নাকি পবিত্র?

নিশ্চয়ই পারব। উৎসর্গ-পৃষ্ঠায় রবীন্দ্রনাথ নিজের নাম লিখে দিলেন। উৎসর্গ-পৃষ্ঠায় ছাপা ছিল : শ্ৰীমান কবি কাজি নজরুল ইসলাম, কল্যাণীয়েষু। তার নিচে তার কাঁচা কালির স্বাক্ষর বসল। শুনেছি তার আশেপাশে যে সব উন্নাসিক ভক্তের দল বিরাজ করত তার কবির এই বদান্যতায় সেদিন বিশেষ খুশি হতে পারেনি। কিন্তু তিনি নিজে তো জানতেন কাজী নজরুল তারই পরেকার যুগে প্রথম স্বতন্ত্র কবি, স্বীকার করতে হবে তার এই শক্তিদীপ্ত বিশিষ্টতাকে। তাই তিনি তার অন্তরের স্নেহ ও স্বীকৃতি জানাতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করলেন না। শ্রীমান ও কবি এই কথা দুটির মধ্যে তার সেই গভীর স্নেহ ও আন্তরিকতা অক্ষয় করে রাখলেন।

নজরুল মিঠে পান ও জর্দা ভালোবাসে, আর ভালোবাসে হেজলিন স্নো। এই সব ও আরো কটা কি বরাতী জিনিস নিয়ে পবিত্র একদিন আলিপুর সেণ্টাল জেলের দুয়ারে হাজির, নজরুলের সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশে। লোহার বেড়ার ওপার থেকে নজরুল চেঁচিয়ে জিগগেস করলে—সব  এনেছিস তো? পবিত্র হাসল। কী জানে নজরুল, কী জিনিন পবিত্র আজ নিয়ে আসছে তার জন্যে। কী দেবতা-দুর্লভ উপহার! কী এনেছিস? চেঁচিয়ে উঠল নজরুল। পবিত্র বললে, তোর জন্যে কবিকণ্ঠের মালা এনেছি। বলে বসন্ত বইখানা তাকে দেখাল। নজরুল ভাবলে, রবীন্দ্রনাথের বসন্ত কাব্যনাট্যখানা নিমেই পবিত্র বুঝি একটু কবিয়ানা করছে। এই দ্যাখ। উৎসর্গ-পৃষ্ঠটা পবিত্র খুলে ধরল তার চোখের সামনে। আর কী চাস! সব চেয়ে বড় স্তুতি আজ তুই পেয়ে গেলি। তার চেয়েও হয়তো বড় জিনিস। রবীন্দ্রনাথের স্নেহ!

রবীন্দ্রনাথ যে নজরুলকে দেশের ও সাহিত্যের একটা দামী সম্পদ বলে মনে করতেন তার আর একটা প্রমাণ আছে। নজরুল যখন হুগলি জেলে অনশন করছে তখন রবীন্দ্রনাথ ব্যস্ত হয়ে তাকে টেলিগ্রাম করেছিলেন–Give up hunger strike, our literature claims you. টেলিগ্রাম করেছিলেন প্রেসিডেন্সি জেলে। সেই টেলিগ্রাম ফিরে এল রবীন্দ্রনাথের কাছে। কর্তৃপক্ষ লিখে পাঠাল : Addressee not found।

এই সময়ে একটা মজার ঘটনা ঘটেছিল। পবিত্র তা চেপে যাচ্ছে। বললেন নলিনীকান্ত সরকার, আমাদের নলিনী। কৃষ্ণের যেমন বলরাম, নজরুলের তেমনি নলিনীদা। হাসির গানের তানসেন। নজরুল গায় আর হাসে, নলিনীদা গান আর হাসান। নজরুলের পার্শ্বাস্থি বলা যেতে পারে। নজরুলকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, নলিনীদার কাছে সন্ধান নাও। নজরুলকে সভায় নিয়ে যেতে হবে, নলিনীদাকে সঙ্গে চাই। নজরুলকে দিয়ে কিছু করাতে হবে, ধরো নলিনীদাকে। নজরুল সম্বন্ধে সব চেয়ে বেশি ওয়াকিবহাল।

শোনো সে মজার কথা। আলিপুর সেণ্টাল জেল থেকে নজরুল তখন বদলি হয়েছে হুগলি জেলে। হুগলি জেলে এসে নজরুল জেলের শৃঙ্খলা ভাঙতে শুরু করল, জেলও চাইল তার পায়ে ভালো করে শৃঙ্খল পরাতে। লেগে গেল সংঘাত। শেষকালে নজরুল হাঙ্গার স্ট্রাইক করলে। আটাশ দিনের দিন সবাই আমাকে ধরলে জেলে গিয়ে নজরুলকে যেন খাইয়ে আসি। জানতাম নজরুল মচকাবার ছেলে নয়, তবু ভাবলাম একবার চেষ্টা করে দেখতে ক্ষতি কি। গেলাম হুগলি জেলের ফটকে। আমি আর সঙ্গে, সকল অগতির গতি, এই পবিত্র। জেলে ঢুকতে পারলাম না, অনুমতি দিলে না কর্তারা। হতাশ মনে ফিরে এলাম হুগলি স্টেশনে। হঠাৎ নজরে পড়ল, প্ল্যাটফর্মের গা ঘেঁসেই জেলের পাঁচিল উঠে গেছে। মনে হল জেলের পাঁচিলটা একবার কোনোরকমে ডিঙোতে পারলেই নজরুলের সামনে সটান চলে যেতে পারব। আর এভাবে জেলের মধ্যে একবার ঢুকতে পারলে সহজে যে বেরুনো চলবে না তা এই দিনের আলোর মতই স্পষ্ট। তবু বিষয়টা চেষ্টা করে দেখবার মত। পবিত্রকে বললাম, তুমি আগে উবু হয়ে বোসো, আমি তোমার দু কাঁধের উপর দু পা রেখে দাঁড়াই দেয়াল ধরে। তারপর তুমি আস্তে-আস্তে দাঁড়াতে চেষ্টা করো। তোমার কাঁধের থেকে যদি একবার লাফ দিয়ে পাঁচিলের উপর উঠতে পারি, তবে তুমি আর এখানে থেকো না। স্রেফ হাওয়া হয়ে যেয়ো। বাড়তি আরেক জনের জেলে যাওয়ার কোনো মানে হয় না।

বেলা তখন প্রায় দুটো, প্ল্যাটফর্মে যাত্রীর আনাগোনা কম। য়্যাকর্ডিং টু প্ল্যান কাজ হল। পবিত্রর কাঁধের থেকে পাঁচিলের মাথায় কায়ক্লেশে প্রমোশন পেলাম। প্রমোশন পেয়েই চক্ষু চড়কগাছ! ভিতরের দিকে প্রকাণ্ড খাদ—খাই প্রায় অন্তত চল্লিশ হাত। বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখি পবিত্রর নামগন্ধ নেই। যা হবার তা হবে, দুদিকে দু ঠ্যাং ঝুলিয়ে জাঁকিয়ে বসলাম পাঁচিলের উপর ঘোড়সওয়ারের মত। যে দিকে নামাও সেই দিকেই রাজি আছি—এখন নামতে পারাটাই কাম্যকর্ম।  কিন্তু কই জেলখানার ভিতরের মাঠে লোক কই? খানিকপর সামধ্যায়ী মশাইকে দেখলাম—মোক্ষদাচরণ সামধ্যায়ী। বেড়াতে বেড়াতে একটু কাছে আসতেই চীৎকার করে বললাম, নজরুলকে ডেকে দিন। নজরুলকে।

সার্কাসের ক্লাউন হয়ে বসে আছি পাঁচিলের উপর। জেলখানার কয়েদীরা দলে-দলে এসে মাঠে জুটতে লাগলো বিনা টিকিটে সে-সার্কাস দেখবার জন্যে। দুটি বন্দী যুবকের কাঁধে ভর দিয়ে দুর্বল পায়ে টলতে টলতে নজরুলও এগিয়ে আসতে লাগল। বেশি দূর এগুতে পারল না, বসে পড়ল। গলার স্বর অতদূরে পৌঁছুবে না, তাই জোড়হাত করে ইঙ্গিতে অনুরোধ করলাম যেন সে খায়। প্রত্যুত্তরে নজরুল ও জোড়হাত করে মাথা নেড়ে ইঙ্গিত করল এ অনুরোধ অপাল্য।

এ তো জানা কথা। এখন নামি কি করে? পবিত্র সে ঠিক ধরো লক্ষ্মণের মতই অবিকল ব্যবহার করবে এ যেন আশা করেও আশা করিনি। গাছে তুলে মই কেড়ে নেওয়ার চেয়ে পাঁচিলে তুলে কাঁধ সরিয়ে নেওয়া ঢের বেশি বিপজ্জনক। কিন্তু ভয় নেই। স্টেশনের বাবুরা ভিড় করে দাঁড়িয়ে আমার চোদ্দপুরুষের-আদ্য কি করে বলি—শেষ শ্রাদ্ধ করছেন। ধরণী, সিধা হও, বলে পাঁচিল থেকে পড়লাম লাফ দিয়ে। স্টেশনের মধ্যে আমাকে ধরে নিয়ে গেল, পুলিশের হাতে দেয় আর কি। অনেক কষ্টে বোঝানো হল যে আমি সন্ত্রাসবাদীদের কেউ নই। ছাড়া পেয়ে গেলাম। অবিশ্যি তার পরে পবিত্র আর কাছ-ছাড়া হল না

তারপরে নজরুল অনশন ভাঙল তো?

ভাঙল চল্লিশ দিনের দিন। আর তা শুধু তার মাতৃসমা বিরজাসুন্দরী দেবীর স্নেহানুরোধে।

নজরুলের বিদ্রোহ, প্রতিজ্ঞার দৃঢ়তা ও আত্মভোলা বন্ধুত্বের পরিচয় পেলাম। তারপরে স্বাদ পাব তার দারিদ্রজয়ী মুক্ত প্রাণের আনন্দ, বিরতিহীন সংগ্রাম ও দায়িত্বহীন বোহিমিয়ানিজম! সবই সেই কল্লোলযুগের লক্ষণ।

কিন্তু তোমরা কে কি করে এলে কল্লোলে?

নৃপেন হঠাৎ একদিন একটা দীর্ঘ প্রেমপত্র পায়—তুমি এসো, আমার হাতের সঙ্গে হাত মেলাও। এ প্রেমপত্র তাকে কোনো তরুণী লেখেনি, লিখেছে কল্লোলের পরিকল্পক স্বয়ং দীনেশরঞ্জন। ধূমকেতুতে ত্রিশূলের লেখায় আকৃষ্ট হয়েই দীনেশরঞ্জন নৃপেনকে সম্ভাষণ করেন–আর, শুধু একটা লেখার জন্যে অনুরোধ নয়, গোটা লোকটাকেই নিমন্ত্রণ করে বসলেন। ভোজ্য সাজাতে, পরিবেশন করতে। নৃপেন চলে এল সেই ডাকে। মুখে সেই মধুর মন্দাক্রান্তা ছন্দ—

ছন্নোপান্তঃ—পরিণতফল—দ্যোতিভিঃ কাননাম্রৈ-
স্ত্বয্যারূঢ়ে—শিখরমচলঃ—স্নিগ্ধবেণীসবর্ণে।
নূনং যাস্য–ত্যমবমিথুন—প্রেক্ষণীয়ামবস্থাং
মধ্যে শ্যামঃ–স্তন ইব ভুবঃ–শেষবিস্তারপাণ্ডুঃ।।

আর, পবিত্র একদিন ফোর আর্টস বা চতুষ্কলা ক্লাবে এসে পড়েছিল ওমরখৈয়ামের কবি কান্তিচন্দ্র ঘোষের সঙ্গে। পুরানো ঘর ভেঙে যখন ফের নতুন ঘর বাঁধা হল, ছোট করে, বন্ধুতায় ঘন ও দৃঢ় করে, তখনও পবিত্রর ডাক পড়ল। ঘর ছোট কিন্তু টুই খুব উঁচু। সে চূড়া উঁচু আদর্শবাদের।

কান্তিচন্দ্র ঘোষকে দুর থেকে মনে হত সুকৃত্রিম আভিজাত্যের প্রতীক। এক কথায় স্নব। তিনিও নিজেকে dilettante বলতেন। বিচিত্রায় থাকা কালে তার সংস্পর্শে আসি। তখন বুঝতে পারি কত বড় রসিক কত বড় বিদগ্ধ মন তার। তিনি সবুজপত্রের লোক। তাই সাহিত্যে সব সময় নব্যপন্থী, অচলায়তনী নন। রসবোধের গভীরতা থেকে মনে যে স্নিগ্ধ প্রশান্তি আসে তা তার ছিল—সে শান্তির স্বাদ পেয়েছে তার নিকটবর্তীরা।

কিন্তু নজরুল এল কি করে?

পবিত্র যখন জেলে নজরুলকে বসন্ত দিতে যায় তখনই নজরুল কথা দেয় নতুন কবিতা লিখবে পবিত্রর ফরমায়েসে। কল্লোলের জন্যে কবিতা। লাল কালিতে লেখা কবিতা। জেল থেকে এল একদিন সেই কবিতা—সত্যিসত্যিই লাল কালিতে লেখা–সৃষ্ট সুখের উল্লাসে।

আজকে আমার রুদ্ধ প্রাণের পল্বলে।
বান ডেকে ঐ জাগল জোয়ার দুয়ার-ভাঙা কল্লোলে।
আসল হাসি আসল কাঁদন, আসল মুক্তি আসল বাঁধন;
মুখ ফুটে আজ, বুক ফাটে মোর তিক্ত দুখের সুখ আসে,
রিক্ত বুকের দুখ আসে–
আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে।।

এই কবিতা ছাপা হল কল্লোলের প্রথম কি দ্বিতীয় সংখ্যায়। কবিতাটির জন্যে পাঁচ টাকা দেওয়া হয়েছিল। জেলে সেই টাকা পবিত্র পৌঁছে দিয়েছিল নজরুলকে।

এমন সময় কল্লোল-আপিসে কে আরেকটি যুবক এসে ঢুকল। ছিপছিপে ফর্সা চেহারা, খাড়া নাক, বড়-বড় চোখ, মুখে স্নিগ্ধ হাসি। কিন্তু একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে এই বয়সেই কপালের উপর দু-চারটি রেখা বেশ গভীরভাবে ফুটে উঠেছে। কে এ? এ সুকুমার ভাদুড়ি। একদিন এক গ্রীষ্মের দুপুরে হঠাৎ অনাহুত ভাবে কল্লোল-আপিসে চলে আসে। একটা গল্প হয়তো বেরিয়েছিল কল্লোলে—সেই অধিকারে। এসে নিঃসংকোচে দীনেশ ও গোকুলকে বললে, আমি আপনাদের দেখতে এসেছি। আর ঘরের এক কোণে নিজের জায়গাটি পাকা করে রেখে যাবার সময় বললে, আমি কল্লোলের জন্যে কাজ করতে চাই।

আনন্দের খনি এই সুকুমার ভাদুড়ি। কিন্তু কপালে ঐ দুশ্চিন্তার রেখা কেন? এমন সুন্দর সুকান্ত চেহারা, এমন স্নিগ্ধ উজ্জ্বল চক্ষু, কিন্তু বিষাদের প্রলেপ কেন?

নৃপেন বললে, এখন এসব থাক। এখন হুগলি চলো।

বলে, এখন, এতক্ষণে রবীন্দ্রনাথ আবৃত্তি করলে :

হে অলক্ষ্মী, রুক্ষকেশী, তুমি দেবী অচঞ্চলা
তোমার রীতি সরল অতি নাহি জানো ছলাকল।
জ্বালাও পেটে অগ্নিকণা, নাইকো তাহে প্রতারণা
টানো যখন মরণ ফাঁসি বলো নাকো মিষ্টভাষ,
হাস্যমুখে অদৃষ্টেরে করবো মোরা পরিহাস।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *