০১. খাঁচার দরজাটা খুলে দিতেই

খাঁচার দরজাটা খুলে দিতেই ব্যস্ত পায়ে ঢুকে পড়ল কাকলি। আর তক্ষুনি কোত্থেকে হন্তদন্ত হয়ে হাজির সুকান্ত।

লিফটম্যান এক পলক তাকাল আগন্তুকের দিকে। কিন্তু সুকান্ত তাকে দ্বিধা করতে দিল না এতটুকু। অবধারিতের মত ঢুকে পড়ল।

উপায় নেই, প্রায় গা ঘেঁষেই দাঁড়াল কাকলির।

অন্তত, একে প্রায় গা ঘেঁষে দাঁড়ানোই বলে। একটা চারকোনা বাক্স, জায়গা কম, এ কে না জানে। তবু এরই মধ্যে বরাদ্দ দুরত্ব রাখা অসম্ভব ছিল না, শালীন দূরত্ব। লিফটম্যানের ওপাশের দেয়ালের দিকে হেলতে পারত অনায়াসে। এ যেন হৃৎপিণ্ডে মারবে বলে ছুরি উঁচিয়ে এসেছে। কিংবা শাড়ির বুনটটা হাতে নিয়ে উদাসীন মমতায় দেখবে পরখ করে। দাম জিজ্ঞেস করবে।

বিরক্ত মুখে কাকলি বললে, আপনি! আপনাদের–

হ্যাঁ, আমাদের, ছেলেদের বারণ। তবে যারা রুগ্ন, যাদের হার্ট দুর্বল—

আপনি কি রুগ্ন?

কাকলির চোখে একটু বা প্রশংসার রঙ মাখা।

না। হাসি-হাসি মুখে সুকান্ত বললে, তবে, বলতে বাধা নেই, হৃদয় বড় দুর্বল।

হার্টের মানে বুঝি হৃদয়? বলবে না ভেবেছিল তবু কথার পিঠে বলে ফেলল কাকলি।

আরো একটা মানে করা যায়। বললে সুকান্ত : আঘাত। প্রহার। যন্ত্রণা।

কথা বললেই কথা বাড়ে, চুপ করে রইল কাকলি। কয়েক সেকেণ্ডের তো মামলা। এখুনি উঠে আসবে তেতলা। বারোটা চল্লিশে তার ক্লাস।

কিন্তু এখন হার্টের যে অবস্থা, মানে যে রকম বুক কাঁপছে, সহজেই ডাক্তার সার্টিফিকেট দিয়ে দেবে, সিঁড়ি ভাঙা বিপজ্জনক, লিফটই প্রশস্ত। বুক-ফুলিয়ে নিশ্বাস নিল সুকান্ত : তবে ক্ষুদ্র হৃদয়দৌর্বল্য ত্যাগ না করলে কিছু হবার নয়।

কাকলি চোখ নিচু করে রইল। কিন্তু, এ কি, লিফট হঠাৎ আটকে গেল মাঝখানে। দোতলা আর তেতলার মধ্যে। ঘোর-ঘোর আধছায়ার রাজ্যে।

কি সর্বনাশ! প্রায় আর্তনাদ করে উঠল কাকলি।

কারেন্ট অফ হয়ে গিয়েছে বোধ হয়। লিফটম্যানের হয়েই যেন বললে সুকান্ত।

তার কথা কে গ্রাহ্য করে? সে তো চালাচ্ছে না। সে কলকজার জানে কি!

কারেন্ট অফ হয়ে গিয়েছে? চোখ কপালে তুলে লিটম্যানকে জিজ্ঞেস করলে কাকলি।

কল বিগড়ে গিয়েছে। নিশোতনের মত বললে লিটম্যান।

এ যেন তেমনি একটা নিস্পৃহ-নিশ্চল থাকবারই অবস্থা। দুহাতের মুঠি তুলে অস্থিরের মত কাকলি বললে, তা হলে কী হবে?

যতক্ষণ না কারেন্ট আসে অপেক্ষা করতে হবে। বললে সুকান্ত।

আর যদি অন্য কোনো গোলমাল হয়? কাকলির মুখ আতঙ্কে প্রায় সাদা।

যতক্ষণ মিস্ত্রি না আসে—

বলেন কি। ততক্ষণ ঝুলব ত্রিশঙ্কুর মত? কাঠ-কাঠ গলায় বললে কাকলি।

কিন্তু নিঃশঙ্ক হয়ে। যেন খুব একটা আনন্দের ব্যাপার, পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে আগা-পাশ-তলা মুখস্থ জানা উত্তর—এমনি উৎসাহ সুকান্তর ভঙ্গিতে।

নিঃশঙ্ক হয়ে? ভিতরে ভিতরে মৃদু-মৃদু কাঁপছে যেন কাকলি : বলতে চান কোন ভয় নেই?

না, কিসের ভয়? যেন এক পা এগিয়ে এল সুকান্ত : আমিই তো আছি।

ইঙ্গিতটা বুঝি লিফটম্যানকে। মানে লিফ্টম্যান যদি অশোভন কোনো আচরণ করে তবে প্রতিকর্তা স্বয়ং সুকান্ত। যেন সুকান্তের থেকে কোনো ভয় নেই। সে যেন বনে বাঘ নয়, ঘরে কালসাপ নয়। সে এক দেবশিশু।

আর সত্যি, লিটম্যানের ব্যবহারকেও বলিহারি। কলকজা যদি কোন খারাপ হয়ে থাকে, তবে হাতের যন্ত্রপাতি নিয়ে কিছুটা নাড়াচাড়া করবে তো, বুঝুক বা না বুঝুক, কোথাও করবে তো একটু তদন্ত-তদারক। তা নয়, ঠায় দাঁড়িয়ে আছে অনড় পুতুলের মত। লক্ষ্য নিজের দিকে নয়, অন্য দুই আরোহীর দিকে।

চেঁচাবে? শুনতে পাবে কেউ? শুনলেই বা উদ্ধার করবে কে? কে করবে সাহায্যের তোড়জোড়?

ছটফট করতে লাগল কাকলি।

আপনি অত নার্ভাস হচ্ছেন কেন? সুকান্ত বললে, বসুন সিটটায়। বিশ্রাম করুন।

ঝলসে উঠল কাকলি : এটা এখন বিশ্রাম করবার সময়?

উপায় কি। কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন দু পায়ে? বললে সুকান্ত। পা ধরে গেলে এক সময় বসতে তো হবেই।

এখনো ধরে নি।

আমার উপরে অকারণ চটছেন। আমি ভালো কথাই বলছি। কখন মেরামত হয়ে লিফট আবার চালু হয় ঠিক নেই। চাই কি এই সিটটায় বসে ঘুমুতেও হতে পারে–

ঘুমুব এখানে? করুণ কান্নার মত করে বললে কাকলি। আর আপনি?

যদি জায়গা দেন—

এখানে জায়গা কোথায়? কাকলি দেয়ালের কোণ ঘেঁষে দাঁড়াল।

জায়গা নেই, জায়গা নেই এই তো এই যুগের হাহাকার। আরো কিছুটা যেন এগিয়ে এল সুকান্ত : সেটা তো স্থানের দিক থেকে, প্রাণের দিক থেকে নয়। কেননা, যদি হৃদয়ে জায়গা থাকে তা হলে ঘরে কেন, খাঁচায়ও জায়গা আছে। ঐ যে কি বলে, যদি হয় সুজন তেঁতুল পাতায় দুজন—দুজন নয় নজন। কথাটা হয়তো ঠিক তা নয়। কথাটা হচ্ছে, আমি যাব কোথায়? যতই কেননা রাগ করুন, এই মুহূর্তে আমাকে ফেলবারও তো কোন জায়গা নেই। সুতরাং–

আরো কি এক চুল এগিয়ে এল নাকি সুকান্ত? আপনার শাড়ির উপর এ কি একটা ছারপোকা না ভেঁয়ো পিঁপড়ে এই অছিলায় গায়ে হঠাৎ হাত দিয়ে ফেলবে নাকি? কাকলি আরো কুঁকড়ে গেল, শিটিয়ে গেল।

সুতরাং, আসুন সিটটায় বসি। সুকান্ত সরে দাঁড়াবার ভঙ্গি করল।

আপনিও বসবেন?

বাধা কি। এটা তো আর ট্রাম বাস-এর লেডিজ সিট নয়! এখানে সবাই পাশাপাশি, সবাই সমানসমান।

আপনি বসুন। আমি দাঁড়িয়ে থাকব।

কিন্তু কতক্ষণ থাকবেন! সুকান্ত দার্শনিক হবার ভান করল, মানুষ কখনো কোনো অবস্থায়ই খুশি নয়। কেবলই সে ভোল বদলাচ্ছে, ভঙ্গি বদলাচ্ছে। দাঁড়িয়ে আছেন-দাঁড়িয়ে আছেন, মনে হবে কতক্ষণে একটু বসতে পাব। বসে আছেন-বসে আছেন, মনে হবে কতক্ষণে একটু পা টান করে শুতে পাব। শুয়ে আছেন—শুয়ে আছেন, মনে হবে, আর নয়, এবার উঠে পড়ি। উঠে পড়েছেন কি, আবার সেই বসে পড়ার, শুয়ে পড়ার জন্যে কান্না। সুতরাং যতই কেননা দাঁড়ান, দাঁড়িয়ে থাকুন, বসতে ইচ্ছে করবেই আপনার এক সময়, আর যখন বসবেনই শেষ পর্যন্ত–

তখন কেন না শুয়ে পড়ব! কাকলির রাগের স্বরটা কৌতুকের মত শোনাল।

আশ্চর্য হবার কিছু নেই। এতটুকুও কি বিচলিত হবে না সুকান্ত? বলা যায় না কঘণ্টা করাত্তির এমনি বন্দী থাকতে হয় আমাদের।

করাত্তির!

তা ছাড়া আর কি। কিছুই তো সাড়াশব্দ পাচ্ছি না কোথাও। আর সবই যখন অন্ধকার, নিশ্চল নিঃশব্দ, তখন রাত ছাড়া আর কি। প্রত্যেকটি মুহূর্তই এক গহন রাত্রি। কথাটা তা নয়

তা নয়? চোখ তুলল কাকলি।

না। আপনি যদি নিতান্ত শুয়েই পড়েন আমি না হয় এই মেঝেতেই কুকুরকুণ্ডলী হব, নিরীহের মত ঘুমুব শান্তিতে।

ঘুমুবেন? পারবেন ঘুমুতে?

দেখুন না পারি কিনা। হাসতে লাগল সুকান্ত।

আপনার এতটুকু ভয় করছে না?

কেন করবে? কিসের ভয়? সঙ্গী যদি ভালো হয় মানে সৎ, কি বলে, সুন্দর হয়, তা হলে ভয় থাকে না। সেই কারণে আপনিও নির্ভয় হতে পারেন হয়তো। পারেন না?

কিন্তু আপনি কি সুন্দর?

সুন্দর ভাবলেই সুন্দর। একটু লাজুক হবার ভঙ্গি করল সুকান্ত : সুন্দর না হই, সৎ তো বটে। ভালো মানে ইউনিভার্সিটির ভালো ছেলে নই। ভালো মানে ভালোবাসার ভালো ছেলে। কিন্তু কথাটা তা নয়–

তা নয়? কাকলির চোখে কে গাঢ় করে কালো রেখা টেনে দিল।

না। আমি বলছিলাম আপনার বাবার কথা। বলছিলাম, যখন শেষ পর্যন্ত আপনাকে বসতে হবেই, তখন আগেভাগেই বসে পড়ন। আমার দরকারি কথাটা সেরে নিই।

দরকারি কথা! একটু বা চমকাল কাকলি। বললে, এই বিপদে কারু আবার দরকারি কথা থাকে নাকি? থাকলেও মনে পড়ে নাকি?

পড়ে। কে জানে হয়তো ঐ দরকারি কথার জন্যেই এই বিপদ। ঢোঁক গিলল সুকান্ত : কথাটা আর কিছু নয়, আপনার বাড়ির ঠিকানাটা ভুলে গেছি–

ভুলে গেছেন মানে? চমকে উঠল কাকলি, কোনোদিন জানতেন নাকি?

জানতাম।

কি করে? কে বললে?

কেউ বলে নি।

তবে?

চোখের উপর স্থির চোখ রাখল সুকান্ত, আপনিই লিখেছিলেন।

আমি? চোখের পলক ফেলল না কাকলি, আপনাকে?

হ্যাঁ, আমাকেই। আর কাকে?

লিটটা ফের চলতে শুরু করল নাকি? যেন একটু দুলে উঠেছিল, নিজেকে সামলাল কাকলি। দেখল লিফটের নয়, হৃৎপিণ্ডের দোলা।

কী লিখেছিলাম? চিঠি?

তা তাকে চিঠি ছাড়া আর কী বলে?

বাঃ, আমি আপনার ঠিকানা জানলাম কি করে? কাকলি প্রায় ঝংকার দিয়ে উঠল।

সে চিঠি আমার বাড়িতে পোস্টে পাঠান নি। তাই আমার বাড়ির ঠিকানা না জানলেও চলে। সেটা আমাকে কলেজেই পৌঁছে দিয়েছেন এবং বেয়ারা মারফৎ। কি, মনে পড়ে?

খুব একটা নির্দোষ ব্যাপার, এমনি হালকা হওয়ার ঢেউ তুলে কাকলি বললে, কলেজ সেমিনারে কোনো বক্তৃতা ব্যবস্থা করে দেবার জন্যে অনুরোধ। মনে পড়েছে। কি, তাই না?

হ্যাঁ তাই। গর্বের নিশ্বাস ফেলে সুকান্ত বললে, আমাদের গলিতে থাকেন এক বিখ্যাত সাহিত্যিক, তাকে সেমিনারে ধরে নিয়ে এসে কিছু বলাবার জন্যে প্রার্থনা—

প্রার্থনা! বাক্যের নির্বাচনে আপত্তি কাকলির।

নয়তো বলুন আদেশ। আপনি যখন সেমিনারের সেক্রেটারি তখন আপনার বলাই হুকুম করা। কিন্তু, একটু কান চুলকোল সুকান্ত : কোথাও একটু মিনতিও হয়তো ছিল। নচেৎ, কোনো দরকার নেই, ঐ চিরকুট চিঠিতে ফলাও করে আপনি আপনার বাড়ির ঠিকানা লিখে দিয়েছিলেন কেন?

দিয়েছিলাম বুঝি? চোখের কোলের কাছটিতে লজ্জার রেখা ফোঁটাল কাকলি : ওটা কেমন হাতের টানে অভ্যেসের বশে এসে গিয়েছিল।

তাই হবে। কিন্তু কী বিচ্ছিরি ঠিকানা। বাড়ির নম্বর নয় তো ধারাপাতের অঙ্ক। ধারাপাতের অঙ্ক বলা ভুল হল, কেননা তাতে একটা শৃঙ্খলা থাকে। আপনাদের নম্বরটা তো অঙ্ক নয়, আতঙ্ক। কোনো ছিরিছাঁদ বা নিয়মকানুন নেই। তিন শ তিয়াত্তর না ছ শ সাতাত্তরের সতেরো, তার আবার বাই-সাতাশ না সাতাশি। কখনো এমন বিদঘুটে নম্বর হয় শুনেছেন? মুখচোখ গম্ভীর করল সুকান্ত : সতেয়োর সাতাশ না সাতাশের সতেরো এই ঠিক করতেই প্রাণান্ত। তারপর ঐ তিন শ তিয়াত্তর–আচ্ছা, বলুন, অমন কখনো নম্বর হয়?

এত বিপদেও মানুষে হাসে! দিব্যি হাসি বেরুল কাকলির বললে, মোটেই তিন শ তিয়াত্তর নয়।

নয়! তবেই দেখুন কিরকম অসম্ভব গোলমেলে ব্যাপার, কারু সাধ্যি আছে তা মনে রাখে!

মনে রাখবার কী দরকার! চিরকুটটা দেখে নিলেই পারেন।

চিরকুট বলতে আপনার লেগেছে বুঝি। চিরকুট বলুন বা গেট-পাশ বলুন, দলিলটা হারিয়ে গেছে। মুখ অবিশ্বাস্য করুণ করল সুকান্ত : আমার সব জিনিস খালি হারায়।

তাই দেখছি। স্মৃতিশক্তি ধৃতিশক্তি দুই-ই। মুখ টিপে একটু হাসল কাকলি।

ধৃতি-শক্তি মানে?

ধরে রাখবার শক্তি। না পারলেন ঠিকানাটা মনে রাখতে, না বা চিরকুটটা ধরে রাখতে। অতএব আপনাকে ঠিকানা দিয়ে লাভ কি।

আর না দিলেই বা ক্ষতি কি। নৈরাশ্যে মুখ ধূসর করল সুকান্ত : কে জানে এই পিঞ্জরই হয়তো আমাদের শেষ ঠিকানা।

তাই যদি হবে, এই পিঞ্জরই যদি আমার শেষ বাড়ি, বেশ সরল হতে পারছে কাকলি, তবে ঘটা করে প্রাক্তন বাড়ির খোঁজ করছিলেন কেন?

বুঝতে পারছি, অনর্থক করছিলুম। সুতরাং, সুকান্ত সিটের দিকে ইঙ্গিত করল, আসুন, হতাশ হয়ে বসে পড়ি।

না, হতাশ হবার তো কিছু দেখছি না। সহাস্য নির্ভয়ে বলতে পারল কাকলি, খাচার বাইরে কোথাও এক আকাশ আছে। সমস্ত জনতার মধ্যেও আছে এক নির্জনতা।

এত সুন্দর করে কথা বলতে পারে নাকি কেউ? কাকলির চোখের মধ্যে তাকিয়ে রইল সুকান্ত।

কথাটা শেষ করেনি কাকলি। জের টেনে বললে, সমস্ত ঠিকানার বাইরে মানুষের আরেক বাসস্থান।

হ্যাঁ, উৎসাহে উজ্জ্বল হয়ে উঠল সুকান্ত, মানুষের সে আবাস স্থানে নয়, কি বলেন—

হ্যাঁ, মনে।

লাফিয়ে উঠল সুকান্ত। তার মানেই হৃদয়ে। তার মানেই স্থির হয়ে তাকাল লিটম্যানের দিকে। বললে, ঠিক আছে। চোখের ইঙ্গিত করলে।

লিফ্‌ট উঠতে শুরু করল।

ব্যস্ত হয়ে কাকলি বললে, চট করে আপনার ঠিকানাটা বলুন এবার।

আমার ঠিকানা? লিফ্‌ট কি বাড়ি ছাড়িয়ে শূন্যে উঠে যাচ্ছে নাকি? এমনি হতচেতন চেহারা করল সুকান্ত।

আপনার ঠিকানা না পেলে আমার ঠিকানা আপনাকে জানাব কি করে? কি, বলছেন না কেন? খুব কঠিন? মনে রাখতে পারব না? ঠিক আঁচল বেঠিক করে আবার ঠিক করল কাকলি।

না, একটুও কঠিন নয়, খুব সোজা। দু নম্বর কাঁটালতলা লেনা?

লিফট থামল তেতলায়। এক দঙ্গল লোক দাঁড়িয়ে আছে, সবাই হৈ-হৈ করে উঠল।

যান্ত্রিক গোলমাল। কিছু বলবার নেই। স্বয়ং লিফটম্যানই তার প্রবক্তা। আর এ দুজনকে যে একসঙ্গে দেখছ এও যান্ত্রিক গোলযোগ ছাড়া আর কিছু নয়।

দুজন বেরিয়ে এসে দুদিকে,পালাল। একটা দুর্ঘটনার বেশি কিছু নয় এমনি ভাব দেখিয়ে একসঙ্গে হাঁটল কয়েক পা। যা দৈবের ব্যাপার, অপ্রতিকার্য, তার সম্পর্কে অভিযোগ করে লাভ নেই।

ফাঁকায় এসে, চলতে চলতে ব্যান কত বড় হয়ে গিয়েছে সেটা লক্ষ্য করে গলার স্বর চড়া করল কাকলি। বললে, অমন বিচ্ছিরি গলির নাম এখনো আছে নাকি? আপনাদের অঞ্চলে কোনো গ্রেট ম্যান হয় নি?

গ্রেট ম্যান মানে?

কোনো মন্ত্রী-টন্ত্রী? নিদেন কোনো কাউন্সিলর—

গলিটা আমার জন্যে অপেক্ষা করছে। উপর-ঠোঁটের উপর দুটো আঙুল বুলোল সুকান্ত।

আর আপনি অপেক্ষা করাবার জিনিস পেলেন না? একটা হতচ্ছাড়া গলি–

গলিটা বিচ্ছিরি হতে পারে, কিন্তু যাই বলুন, বাড়ির নম্বরটা ভালো।

নম্বরটা?

নম্বরটা দুই। ভুলে গেলেন এরই মধ্যে? খুব ভালো নম্বর। কিছুতেই ভোলা যায় না। দুই। দ্বৈত, দুই। এক আর দুই। সুকান্ত আঙুল দিয়ে নিজেকে দেখিয়ে পরে লক্ষ্য করল কাকলিকে : আমি আর আপনি।

কি বুদ্ধি! শব্দ করে হেসে উঠল কাকলি, দুইয়ে বুঝি আমি আর আপনি হয়? দুইয়ে আমি আর তুমি।

ক্লাসে ঢুকে পড়ল কাকলি।

1 Comment
Collapse Comments

ভালো

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *