গল্পগ্রন্থ
উপন্যাস
অগ্রন্থিত
নাটক
ছড়া

ঘনার বচন

উলটোহাটা যাবে কি?
সেখানে চাল সাবেকি।
বিকোয় শুধু ঘোড়ার ডিম,
পাঁচ পা সাপের, ব্যাঙের শিং,
ভিজে বেড়াল, শেয়ানা কাক,
নতুন নরুন, দাও যদি নাক,
শিকড় বাকড়, ফুসমন্তর,
ধাঁধা চোলাই বক-যন্তর।
বিকোয় কিছু, বিকোয় মিছু,
লাফ দেয় দর উঁচু-নিচু।

দোকান আছে, সওদা নেই
খরিদ করবে কী?
তিন শূন্যে কে জানে মাল
খাঁটি কি মেকি!

গদিতে গ্যাঁট দোকানদার
দেখা বিন্তি খেলে,
গলায় গামছা দিয়ে বসায়
দাম জানতে গেলে।

শুধোয় আগে ওজন কত,
মাপে বুকের ছাতি
হাঁটিয়ে দেখে চলন কেমন
ডাইনে না বাঁ-হাতি।

হাঁড়ির খবর খুঁটিয়ে জেনে
পাতে শীতল পাটি,
গড়গড়াতে ছিলিম সাজে
টানলে দাঁতকপাটি।

আদবকায়দা নিখুঁত সবই
বেচা-কেনার ঠাট।
ছাড়ান ছিঁড়েন নেইকো কারও
মাড়ালে চৌকাট।

দামের ওপর দস্তুরি নেয়
বাজিয়ে গুণে টঙ্কা;
তারপরে মাল পাও কি না পাও
কীসের লবডঙ্কা!

উলটোহাটা যায় তবুও
আদিশূরের নাতি
পরনে তার টেনা জোটেনা
পাগ পঞ্চাশ-হাতি!

পড়তে গেলে উঠতে হবে
লাফ দিতে পা মুড়তে,
পিছনে ঢিল নিয়েই তবে
সামনে পারো ছুঁড়তে।

দুনিয়াখানাই উলটো!
সোজা কথা শোনাও যদি
বুঝবে সবাই ভুল তো।
বাক্য কিছু হোক না বাঁকা।
মনটা থাকুক সিধে।
কষে কথা প্যাঁচাও, শুধু।
মর্মে না যায় বিঁধে।

তিলকে যত তাল কর না,
দিনকে করো রাত,
মুখের তোড়ে হয় যদিয়ো
হোক না বাজি মাত,
তালটা শুধু সামলনো চাই।
হোয়ো না রাতকানা,
নইলে পড়ে বেঘোরে, শেষ
বুঝবে ঠেলাখানা।
ঘনার বচন শোনো,
সোজা হিসাব ক-জন বোঝে
উলটো করে গোনো।

দুনিয়াটা হত যদি উলটো,
পুবে নয়, পশ্চিমে
পাক খেয়ে পৃথিবী
ঘোরার আইনটাই ভুলত!

হায়! হায়! কী হত যে তা হলে?
ভেবে ভেবে পাকিয়ো না চুল।
যে দিকেই ভোর তোক।
সেইটেই পুব দিক
এইটুকু জেনো নির্ভুল!

তাই বলি, পৃথিবীটা
যে দিকেই পাক খাক
নিজের মাথাটা
রাখো ঠাণ্ডা,
পাত্তা না পায় যেন
হাহাকার মন্তর
পড়াবার ঘুঘু
সব পাণ্ডা!

শোনো সবাই, দিচ্ছি বলে,
গুটি কয়েক সত্য।
কোন রোগে কী দাওয়াই দেবে
এবং কী বা পথ্য।

পড়তে বসে উসখুসিয়ে-
ওঠে যদি মনটা,
ডাংগুলি কি ঘুড়ির ধ্যানে
গোনে ছুটির ঘণ্টা।

মরু পাথার পেরিয়ে যাবার
হবে তখন উষ্ট্র—
এই বুদ্ধি দিয়ে গেছেন
জ্ঞানী জরাথুস্ত্র।
উষ্ট্র কেন? মানে কী?
বুঝলে না তো?
বলে দি।

উষ্ট্র যেমন হপ্তার জল
জমিয়ে রাখে পেটে,
ছুটির খেলা তেমনই ঠেসে
রাখবে মাথায় এঁটে।

চুপিসারে সটকে পড়ার
খোঁজে শুধু মৌ-কা,
ভরা পালেও চড়ায়-ঠেকা—
হয় যদি এক নৌকা—
পড়ার সঙ্গে একটু করে
খেলা দিলে মাখিয়ে,
ছুটির পড়া, পড়ার ছুটি

দুই উঠবে জাঁকিয়ে।
এমনই আরও অনেক দাওয়াই
দিতে পারি বাতলে,
মেলে যদি মনের মতো
ভুজ্যিটা হাত পাতলে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *