1 of 2

১.২৫ আদেশের প্রতি মোহিত ব্যক্তিগণের সাড়া

পঞ্চবিংশ পাঠ
আদেশের
প্রতি মোহিত ব্যক্তিগণের সাড়া

মোহিত পাত্রগণ সর্বদা তাহাদের আপনাপন ধাতু-প্রকৃতি ও নিদ্রার গভীরতা অনুসারে সম্মোহনবিদের আদেশের সাড়া (response) দিয়া থাকে। এই নিমিত্ত মোহিতাবস্থায় তাহারা সকলে সমান ভাবে কার্যকারকের আদেশ পালন করেন এবং তাহাদের হাব-ভাব বা কাষ-কর্মের ভঙ্গীতেও একরূপ প্রকৃতি প্রকাশ পায়না। পাতলা বা অগভীর নিদ্রায় অভিভূত পাত্রগণ খুব তৎপরতার সহিত বা বশ্যতা সহকারে কার্যকারকের আদেশ পালন করেন এবং পরবর্তী সম্মোহন আদেশও (একত্রিংশ পাঠ দ্রষ্টব্য) তাহাদের দ্বারা যথাযথরূপে প্রতিপালিত হয়না। নিদ্রা যত গাঢ় হয়, সম্মোহন আদেশের প্রতি তাহাদের বাধ্যতাও সেই পরিমাণে বর্ধিত হইয়া থাকে। এজন্য কাৰ্য্যকারক সৰ্ব্বদাই তাহাদিগকে গভীর নিদ্রায় অভিভূত করার পর, তাহাদের মনে মায়া ও ভ্রম উৎপাদনের চেষ্টা পাইবে।

পাত্রগণের স্বাভাবিক অবস্থায় যে সকল মনোবৃত্তি বেশী প্রবল, মোহিতাবস্থাতেও সাধারণতঃ তাহাদের সেই সকল বৃত্তিই প্রবলতর হইয়া থাকে। আর যে সকল কাৰ্য্যে তাহাদের স্পৃহা বা আগ্রহ নাই, সেই সকল কাৰ্য্য তাহারা খুব তৎপরতার সহিত সম্পন্ন করেন। যাহারা স্বভাবতঃ চঞ্চল, চপল, লাজুক, দুষ্ট, চালাক বা নির্বোধ প্রকৃতির, মোহিতাবস্থাতেও তাহাদের ঐ সকল প্রকৃতিই সমধিক পরিমাণে প্রকাশ পাইয়া থাকে। লোভী ব্যক্তিদিগকে কোন প্রিয় বস্তু খাইতে দিলে তাহার উহাতে যেরূপ লোলুপতা প্রকাশ করিবে, অপরে তাহা করিবেনা। উত্তাবস্থায় দুষ্ট প্রকৃতির কোন বালককে মুখ ভ্যাংচাইতে বলিলে, সে যেরূপ হাস্যোদ্দীপক ভঙ্গী সহকারে তাহা করিবে, একজন লাজুক বা শান্ত বালক কখনও তাহা করিবেন। যাহারা ভাল গান গাহিতে, থিয়েটারের বক্তৃতা করিতে, প্রবন্ধ লিখিতে, ছবি আঁকিতে কিম্বা বিশেষ কোন খেলা করিতে পারে, মোহিতাবস্থায় তাহারা ঐ সকল কাৰ্য্য “অধিকতর দক্ষতার সহিত সম্পন্ন করিতে সমর্থ হইয়া থাকে। আর যাহারা গান গাহিতে, নাচিতে বা বক্তৃতা করিতে জানেনা, তাহারা কদাচিৎ তাহা করিতে স্বীকৃত হয়। ক্রীড়া প্রদর্শন কালীন বহুবার ইহা দেখা গিয়াছে যে, ম্যাট্রিকুলেশানের ১ম ৰা ২য় শ্রেণীর কোন কোন ছাত্র যেমন সুন্দর বক্তৃতা করিয়াছে, অনেক বি, এ এবং এ, মে ক্লাসের ছাত্রগণও তাহা করিতে পারে নাই। যাহারা চালক মোহিতাবস্থাতেও তাহাদের চালাকি, আর যাহারা নির্বোধ প্রতিপদে তাহাদের কেবল বোকামিই প্রকাশ পাইয়া থাকে।

ধর্ম বা নৈতিক শিক্ষার বিরুদ্ধে সম্মোহন আদেশ কার্যকর হয়না; অধিকন্তু তজ্জন্য বেশী জেদ করিলে পাত্রের ঘুম ভাঙ্গিয়া যায়। যাহাদের নৈতিক চরিত্র দুর্বল—যাহারা স্বার্থ সিদ্ধির জন্য কোন অন্যায় কৰ্ম্ম করিতে ভীত বা পশ্চাৎপদ নয়, সম্মোহন-শক্তি কেবল তাহাদিগকেই নানা প্রকার দুষ্কর্মে লিপ্ত করিতে পারে। আর যাহারা চরিত্রবান তাহারা মোহিতাবস্থাতেও ছল-প্রবঞ্চনা, জাল-জুয়াচুরি, চুরি-ব্যভিচার ইত্যাদি কৰ্ম্ম সম্পাদনে স্বীকৃত হয়না। এই নিমিত্ত কোন সতী নারীকে ব্যভিচারে কিম্বা কোন সৎ লোককে চুরি, জুয়াচুরি বা হত্যা-কাৰ্যে বাধ্য করা যায়না।

নানাপ্রকার পরীক্ষা দ্বারা ইহা জানা গিয়াছে যে, চোর, ব্যভিচারী বা হত্যাকারীদিগকে সম্মোহিত করতঃ তাহাদের কৃতকর্মাদির স্বীকারোক্তি করাইবার প্রয়াস পাইলে সেই চেষ্টা প্রায়ই সফল হয়না। যখন তাহারা বুঝিতে পারে যে, তাহাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে সত্য কথা প্রকাশ পাইলে তাহাদিগকে সামাজিক বা রাজদণ্ড ভোগ করিতে হইবে, বিশেষভাবে সেই স্থলেই তাহারা আত্মরক্ষার নিমিত্ত তাহা গোপন করিয়া থাকে। তবে অবস্থা বুঝিয়া চতুরতার সহিত আদেশ দিতে পারিলে, তাহাদের মধ্যে কোন কোন লোককে সত্য কথা বলিতে বাধ্য করা যায়।

মোহিত পাত্রগণের মনে মায়া ও ভ্ৰম উৎপাদনের সময় কেহ খুব তৎপরতার সহিত, কেহ খুব ধীরে ধীরে, কেহ বা অনিচ্ছার সহিত এবং কেহ বা ইতস্ততঃ করিয়া আদেশ সকল পালন করিয়া থাকে। কেহ কেহ তখন আবার মুচকি হাসিও হাসিয়া থাকে এবং কোন কোন পাত্রকে আবার কিছুতেই কোন বিশেষ মায়া বা ভ্রমের অধীন করা যায়না। এই সব কারণে উপস্থিত দর্শকবৃন্দ তাহাদের মোহিতাবস্থার সত্যতা সম্বন্ধে অত্যন্ত সন্দেহ প্রকাশ করিয়া থাকে। মোহিত না হইয়াও যে দুষ্ট প্রকৃতির কোন কোন পাত্র সময় সময় মোহিতাবস্থার ভাণ করেনা তাহা নয়; কিন্তু তাহা সহজেই ধরা যায়। এই শ্রেণীর পাত্রগণের মধ্যে সময় সময় অতিরিক্ত চালাকিতে অভ্যস্ত এমন লোকও দেখা যায়, যাহারা সমস্ত মায়া ও ভ্রমের আদেশ সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ভাবে পালন করিতে এবং এমন কি তাহাদের শরীরে সূচ বিঁধাইয়া দিলেও উহার যন্ত্রণা অম্লান বদনে সহ করিয়া থাকিতে পারে এবং অভ্যাস বলে এক ব্যক্তিকে স্বীয় শরীরে সম্পূর্ণ ক্যাটালেসীও উৎপাদন করিতে প্রত্যক্ষ করা গিয়াছে। অবশ্যই এরূপ পাত্রের সংখ্যা নিতান্ত বিরল। কিন্তু পরীক্ষা দ্বারা তাহাদের কপটতাও ধরিয়া ফেলিতে পারা যায়।

সম্মোহন নিদ্রা গাঢ় না হইলে অনেক সময় পাত্রগণ অত্যন্ত ধীরে ধীরে বা অনিচ্ছার সহিত মায়া ও শ্রমের আদেশ পালন করে এবং সময় সময় কোন কোন পাত্ৰকে তখন মুচকি হাসি হাসিতেও দেখা যায়। তাহার কারণ, নিদ্রার অল্পতা বশতঃ স্বাভাবিক জ্ঞান লোপ না পাওয়াতে, তাহারা পারিপার্শ্বিক অবস্থার বিষয় সমস্ত উপলব্ধি করিতে পারে এবং সম্মোহনবিৎ যে তাহাদের দ্বারা নানা প্রকার হাস্যাস্পদ কাৰ্য্য করাইতেছে তাহাও তাহারা বুঝিতে পারে; কিন্তু তথাপি তাহারা তাহার আদেশ অমান্য করিতে পারেনা বলিয়াই ঐরূপ করিয়া থাকে। আবার যে সকল লোক স্বভাবতঃ বেণী হাসে, গভীর নিদ্রায় অভিভূত হইলেও সামান্য কারণেই তাহাদিগকে হাসিতে দেখা যায়। যদি কোন পাত্র মোহিত হওয়ার পূর্বে এরূপ সংকল্প করে যে, সে মোহিতাবস্থায় কিছুতেই কোন বিশেষ মায়া বা ভ্রমের অধীন হইবেনা, তবে তাহাকে সেই মায়া বা ভ্রমের অধীন করা যায় না। আদিষ্ট কাৰ্যটি পাত্রের স্বভাব বিরুদ্ধ হইলেও সময় সময় সে তাহা পালন করিতে স্বীকৃত হয়না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *