1 of 2

১.২৪ পাত্রের শরীরে বোধরহিতাবস্থা উৎপাদন

চতুর্বিংশ পাঠ
পাত্রের
শরীরে বোধরহিতাবস্থা উৎপাদন (Anaesthesia)

মোহিত ব্যক্তির মনে মায়া ও ভ্ৰম জন্মাইয়া কৃতকার্য হওয়ার পর, কাৰ্য্যকারক তাহার শরীরে “বোধরহিতাবস্থা” (Anaesthesia) উৎপাদনের প্রয়াস পাইবে। যদিও কোন সংবেদ্য পাত্রের জাগ্ৰদবস্থায়ও ইহা উৎপাদিত হইতে পারে, তথাপি নবীন কাৰ্যকারক পাত্রকে কয়েকটি মায়া ও ভ্রমের অধীন করার পর, তাহা করিতে চেষ্টা পাইবে। এই অবস্থায় রোগীকে বিন্দুমাত্র যন্ত্রণা না দিয়া, এমন কি তাহাকে জানিতেও না দিয়া, তাহার শরীরে নানা প্রকার অস্ত্রোপচার নিরাপদে সম্পন্ন করা যায়। অধিকন্তু রোগীকে উক্তাবস্থায় যতক্ষণ ইচ্ছা রাখিয়া তাহার শরীরে অস্ত্রোপচার করা যাইতে পারে এবং অস্ত্র হইবার পরেও তাহার কিছুমাত্র জ্বালা-যন্ত্রণা অনুভূত হয় না। সুতরাং ভীত চিত্ত বা দুৰ্বল স্নায়ু বিশিষ্ট রোগীদিগকে অস্ত্র চিকিৎসা করিবার পক্ষে ইহার আবশ্যকতা সহজেই বোধগম্য হইতে পারে। ইদানীং ইয়ুরোপ ও আমেরিকায় সম্মোহনবিদ্যাবিৎ অস্ত্রচিকিৎসকগণ ইহার সাহায্যে প্রত্যহ বহু রোগীকে অস্ত্র চিকিৎসা করিতেছেন। তঁাহারা আর পূর্বের ন্যায় কোকে, ক্লোরোফরম ইত্যাদি (Cocane, Chloroform etc.) চৈতন্য-হরক ভেষজাদি ব্যবহার করেন না। চৈতন্যহারক ভেষজ প্রয়োগের পর, রোগীর শরীরে যে উহার প্রতিক্রিয়া হয়, তাহা অল্পাধিক পরিমাণে তাহার পক্ষে হানিকর, একথা বিজ্ঞ চিকিৎসক মাত্রই স্বীকার করিয়া থাকেন। সম্মোহন চৈতন্যহারকতায় সেরূপ কিছু হওয়ার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা নাই।

বোধরহিতাবস্থা উৎপাদন :–পাত্র মায়া ও ভ্রমের অধীন হওয়ার পর, তাহার শরীরের যে কোন অংশে (অবশ্যই কোন কোমল ইন্দ্রিয় বা যন্ত্রাদির উপর নয়। এই বোধরহিতবস্থা উৎপাদন করিতে পারা যায়। মোহিত ব্যক্তির নাসিকা-মূলে প্রখর দৃষ্টি স্থাপন পূর্বক দৃঢ় স্বরে বলিবে“আমি এখন তোমার হাতে একটা সূচ বিধাইয়া দিব, কিন্তু উহাতে তুমি ব্যথা পাইবে না;-তোমার একটুও বেদনা হইবে না, ঘা হইবে না, রক্ত পড়িবেনা; তোমার হাতখানা অবশ হইয়া গিয়াছে,-সম্পূর্ণরূপে বোধশক্তিহীন হইয়া গিয়াছে।” দুই-তিনবার এইরূপ আদেশ দেওয়ার পর, তাহার হাতের যে স্থানে সূচ বিধাইতে ইচ্ছা করিবে, সেই স্থানে কয়েকটি স্পর্শযুক্ত পাস দিতে দিতে পুনৰ্বার বলিবে—“এইক্ষণ আমি তোমার হাতের এইখানে একটা সূচ বিধাইয়া দিতেছি –উহাতে তোমার বিন্দুমাত্র জ্বালা-যন্ত্রণা হইবে না—রক্ত পড়িবে না—ঘা হইবে না-তুমি একটু টেরও পাইবে না।” দুই-তিন বার এইরূপ আদেশ দিয়া, একটা খুব ধারাল সূচ লইয়া উহা দ্বারা হাতের সেই স্থানে দুই-একবার আস্তে আস্তে খোচা দিবে, যদি উহাতে তাহার বেদনা না লাগে, তবে ঐ স্থানের খানিকটা চামড়া টানিয়া ধরিয়া, সূচ দ্বারা উহাকে ভেদ করিয়া ফেলিবে। সম্মোহনবিৎ সূচ বিধাইবার সময় কখনও ভীত বা উত্তেজিত হইবে না এবং উপস্থিত ব্যক্তিদিগকেও ‘আহ-উহু’ ইত্যাদি যন্ত্রণা সূচক শদ্ধ করিতে নিষেধ করিবে; কারণ উহা বিরুদ্ধ আদেশের কার্য করিয়া থাকে। পক্ষান্তরে, “তোমার একটুও ব্যথা লাগছে না-একটুও বেদনা হচ্ছে না” ইত্যাদি আদেশগুলি বার বার খুব দৃঢ়তার সহিত প্রদান করিবে। পরে, সূচটাকে হঠাৎ টান্ দিয়া খুলিয়া ফেলিবে এবং তৎসঙ্গে ঐ স্থানে হাত বুলাইতে বুলাইতে বলিবে—“ব্যথা নাই-বেদনা নাই—সব সেরে গেছে।” কাৰ্যকারক এই কার্যের জন্ত সর্বদা ষ্টারিলাইজড (Sterilized) সুচ ব্যবহার করিবে। অন্যথায় উহা ব্যবহার করিবার পুর্বে অগত্যা উহার অগ্রভাগটা বাতির শিখাতে উত্তমরূপে পোড়াইয়া লইবে। ষ্টারিলাইজড, অস্ত্রাদিতে কোন প্রকার বিষাক্ত বীজাণু বা জীবাণু থাকিতে পারে না। প্রয়োজন মত রোগীর শরীরে এই অবস্থা উৎপাদন করিয়া সে অনেক সময় অস্ত্র চিকিৎসকগণকে সাহায্য করিতে সমর্থ হইবে। আর সে স্বয়ং অস্ত্রচিকিৎসক হইলে, ইহার সাহায্যে তাহার কার্য্যের বিশেষ সুবিধা হইবে, সন্দেহ নাই।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *