1 of 2

১.২০ মোহিত ব্যক্তির মনে ভ্ৰম জন্মান

বিংশ পাঠ
মোহিত ব্যক্তির মনে ভ্ৰম জন্মান

জ্ঞানেন্দ্রিয়ের বিভিন্ন প্রকার মায়া উৎপাদন করিয়া কৃতকার্য হওয়ার পর, শিক্ষার্থী পাত্রের মনে ভ্ৰম জন্মাইতে চেষ্টা পাইবে। প্রথম রসনেন্দ্রিয়ের ভ্রম উৎপাদন করিবে। তন্নিমিত্ত তাহাকে এই মত কিছু লিবে—“তুমি এইমাত্র কয়েকখানা মিষ্ট সন্দেশ খাইলে সন্দেশগুলি খুব মিষ্ট ছিল; উহাদের স্বাদ এখনও তোমার জিহ্বাতে লাগিয়া রহিয়াছে-তুমি এখনও উহাদের মিষ্টত্ব অনুভব করিতেছ” ইত্যাদি। তৎপরে তাহাকে জিজ্ঞাসা করিবে যে, সে জিতে এখনও উহাদের মিষ্ট স্বাদ অনুভব করিতেছে কি না? যদি অস্বীকার করে, তবে উক্ত বিষয়ে আরও কয়েকবার আদেশ প্রদান করিবে এবং যতক্ষণ সে ভ্রমের বশীভূত না হয়, ততক্ষণ তাহাকে আদেশ দিবে। রসনেন্দ্রিয়ের ভ্ৰম জন্মাইয়া কৃতকার্য হওয়ার পর, ঘ্রাণেন্দ্রিয়ের ভ্রম জন্মাইতে চেষ্টা করিবে। বলিবে—“তোমার নাকে একটা ভয়ঙ্কর দুর্গন্ধ আসিতেছে; তোমার সামনে একটা মরা কুকুর পড়িয়া রহিয়াছে এবং উহা পচিয়া যাওয়াতে দুর্গন্ধ আসিতেছে। বিকট দুর্গন্ধ—ভীষণ দুর্গন্ধনাকে কাপড় দাও-শীগগীর নাকে কাপড় দাও—নতুবা তোমার বমি হইবে” ইত্যাদি। তৎপরে শ্রবণেন্দ্রিয়ের ভ্রম উৎপাদন করিতে বলিবে—-“ঐ শোন, পাশের বাড়ীতে দুইটা কুকুর কেমন ভয়ঙ্কর ঝগড়া করিতেছে এবং মাঝে মাঝে কেমন বিকট চীৎকার করিতেছে; ঐ শোন, আরও কতকগুলি কুকুর উহাদের সঙ্গে যোগ দিয়া বিকটতর চীৎকার আরম্ভ করিলভীষণ কোলাহল সুরু করিল” ইত্যাদি। তাহার পর স্পর্শেন্দ্রিয়ের ভ্রম জন্মাইতে বলিবে—“এইক্ষণ তোমার খুব শীত করিতেছে,-অত্যন্ত শীত করিতেছে। পৌষ মাসের মত শীত পড়িয়াছে,তোমার গায়ের জামাতে শীত নানিতেছে না-তোমার খুব শীত করিতেছে” ইত্যাদি। তৎপরে দর্শনেন্দ্রিয়ের ভ্রম জন্মাইবে। বলিবে—“ঐ দেখ, মহাত্মা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রেতাত্মা তোমার সম্মুখে আবির্ভূত হইয়াছেন। কিন্তু তুমি তাহার প্রেমূর্তি দেখিয়া ভয় পাইবে না—কখনও ভয় পাইবে না। তুমি তাহাকে খুব সম্মানের সহিত অভ্যর্থনা করিয়া বসিতে আসন দিবে। এখন তুমি চোখ মেলিয়া তাহাকে দেখিতে পাইবে। এখন তিনি তোমার সম্মুখে আসিয়াছেন; তাহাকে বসিতে দাও। তাঁহার নিকট তোমার কোন বিষয় জিজ্ঞাস্য থাকিলে, তুমি তাহা জিজ্ঞাসা করিতে পার; তিনি তোমার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রস্তুত আছেন” ইত্যাদি। অথবা তাহাকে বলিবে যে, পরীর দেশ হইতে ১০/১২ জন অসামান্য রূপবতী পরী এইমাত্র নামিয়া আসিয়া তোমার সম্মুখে নৃত্যগীত আরম্ভ করিল। তাহাদের মত এমন অপূর্ব সুন্দরী স্ত্রীলোক তুমি জীবনে কখনও দেখ নাই। এমন সুমিষ্ট গানও শোন নাই এবং এরূপ মধুর অঙ্গভঙ্গী পূর্ণ নৃত্যও কখন দেখ নাই। তোমার সঙ্গে দর্শক রূপে আর যাহার নৃত্য-গীত উপভোগ করিতেছেন, তাহারা আনন্দে সম্পূর্ণ আত্মহারা হইয়াছেন এবং তুমি নিজেও অত্যন্ত বিস্মিত ও মোহিত হইয়া গিয়াছ। তুমি কি তাহাদিগকে দেখিতে পাইতেছ? হাঁ, তুমি তাহাদিগকে সুস্পষ্টরূপে দেখিতে পাইতেছ এবং তাহারা সকলে মিলিয়া যে একতানে গান গাহিতেছে, তাহাও তুমি শুনিতে পাইতেছ। তাহারা যে গান গাহিতেছে তাহা কি তুমি জান? হা,–জান। বলতো, তাহারা কোন্ গানটা গাহিতেছে?—ইত্যাদি। মোহিত ব্যক্তি কল্পিত প্রেতাত্মার সহিত কিছুক্ষণ কথা-বার্তা বলার পর কি কল্পিত পরীগণের নৃত্য ও সঙ্গীত কিছুকাল উপভোগ করার পর, তাহাকে দ্বাবিংশ পাঠের নিয়মানুসারে প্রকৃতিস্থ করিয়া দিবে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *