1 of 2

১.১৯ মোহিত ব্যক্তির মনে মায়া জন্মান

উনবিংশ পাঠ
মোহিত ব্যক্তির মনে মায়া জন্মান

পূর্ব পাঠের নিয়মানুসারে পরীক্ষা করার পর, পাত্র নিদ্রিত বলিয়া স্থির হইলে, গম্ভীর ও আদেশসূচক স্বরে বলিবে—“এইক্ষণ তোমার খুব ঘুম হইয়াছে—তোমার গভীর নিদ্রা হইয়াছে। যতক্ষণ আমি তোমাকে জাগিতে না বলিব, ততক্ষণ তুমি জাগিতে পারিবে না—ততক্ষণ কিছুতেই তোমার ঘুম ভাঙ্গিবে না।” তিন-চার বার এইরূপ আদেশ করার পর কাৰ্যকারক কয়েক টুকরা কাগজ লইয়া বলিবে—“এখন আমি তোমাকে কয়েকখানা মিষ্ট বিস্কুট দিব; তুমি বিস্কুটগুলি খাইয়া ফেলিবে। এই বিলকুটগুলি খুব মিষ্ট—ভারী মিষ্ট—এমন মিষ্ট বিস্কুট তুমি কখনও খাও নাই।” দুই-তিনবার এরূপ বলার পর, কাগজের টুকরাগুলি তাহার মুখের ভিতর পুরিয়া দিবে এবং “খাও-খাও—খেয়ে ফেল—এমন মিষ্ট বিলকুট তুমি কখনও খাও নাই-শীগগীর খেয়ে ফেল” ইত্যাদি বলিবে। যদি পাত্র আদেশ মত ঐগুলি খাইতে আরম্ভ করে, তবে তাহাকে উৎসাহিত করিবার জন্য আরও দুই এক টুকরা কাগজ দিবে ও তৎসঙ্গে দুই-চার বার উক্তরূপ আদেশ প্রদান করিবে। সে এই কল্পিত বিস্কুটগুলি খাইবার সময়, তাহাকে জিজ্ঞাসা করিবে যে, ঐগুলি মিষ্ট কি না? কিন্তু তাহাকে উত্তরের সময় না দিয়া নিজেই বলিবে “হাঁ,-এই বিসকুটগুলি খুব মিষ্ট–অত্যন্ত মিষ্ট” ইত্যাদি। এইরূপ দুই-একবার বলিলেই সে উহাদিগকে মিষ্টি বলিয়া আনন্দের সহিত খাইতে আরম্ভ করিবে। দুই-চার টুকরা খাওয়া হইলে পর নিজেই বলিবে—“আর খেও না; বিস্কুটগুলি এখন তেঁতো লাগছে-খুব তেঁতো লাগছে-ফেলে দাও” ইত্যাদি। এইরূপ বলিবার সঙ্গে সম্মোহনবিৎ নিজে দুই-একবার “থু” “থু” বলিবে (অর্থাৎ সে নিজেও যেন উহাদের তিক্ত স্বাদ অনুভব করিতেছে, এরূপ ভাব প্রকাশ করিবে)। পাত্র উক্ত আদেশ মত কাগজগুলি ফেলিয়া দিবার পর বলিবে–“এখন আবার তমাও;-গভীর নিদ্রা হউক -শান্তিজনক নিদ্রা হউক” ইত্যাদি। বলা বাহুল্য যে, উক্তাবস্থায় পাত্রকে বেশীক্ষণ ঘুমের আদেশ দিবার আবশ্যকতা নাই; কেবল দুইতিনবার “ঘুম-ঘুম-ঘুম—গভীর নিদ্রা” ইত্যাদি বলিলেই সে পূর্বের ন্যায় নিদ্রিত হইয়া পড়িবে।

পাত্র নিদ্রিত হইলে পর বলিবে—“এখন তুমি একটি সুগন্ধ গোলাপ ফুল শুকিতে পাইবে। এই ফুলটি খুব সুগন্ধ—এমন সুগন্ধ গোলাপ তুমি পূর্বে কখনও শুকো নাই।” তৎপরে কাৰ্যকারক পাত্রের নাকের সম্মুখে একখানা রুমাল (যাহাতে কোন গন্ধ নাই) ধরিয়া তাহাকে উহা শুকিতে বলিবে এবং তৎসঙ্গে নিম্নলিখিতরূপ আদেশ দিবে। বলিবে—“ফুলটি বেশ সুগন্ধ-খুব অনুগন্ধ;- এমন সুগন্ধ গোলাপ তুমি কখনও শুকো নাই; শুঁকে দেখ–বেশ করে শুঁকে দেখ-খুব সুগন্ধ” ইত্যাদি। দুই-চার বার এইরূপ আদেশ দিলেই সে খুব আনন্দের সহিত গোলাপ ফুল কল্পনা করিয়া ঐ রুমাল খানা শুকিতে আরম্ভ করিবে। পাত্র কিছুক্ষণের জন্য উক্ত মায়ার অধীন হওয়ার পর ঘুম-ঘুমঘুম—গভীর নিদ্রা” ইত্যাদি বলিয়া তাহাকে পুনৰ্বার নিদ্রিত করিবে।

তৎপরে বলিবে—“এইবার তুমি হারমনিয়াম বাজনা ও গান শুনিতে পাইবে। তোমার নিকটে একটি লোক হারমনিয়াম বাজাইয়া গান গাহিতেছে,-তুমি তাহার হারমনিয়াম বাজনা ও গান শুনিতে পাইবে। লোকটি বেশ সুকণ্ঠ এবং সে যে হারমনিয়াম বাজাইতেছে তাহাও খুব মিষ্ট। দুই-এক বার এইরূপ বলিয়া, নিকটস্থ কোন শব্দ (কথা-বার্তা, পশু পক্ষীর কলরব ইত্যাদিকে) হারমনিয়াম বাজনা ও গান বলিয়া নির্দেশ করতঃ উহার প্রতি তাহার মনোষোগাকৃষ্ট করিয়া বলিবে—ঐ শোন, কেমন মিষ্ট গান ও বাজনা—এমন সুমিষ্ট গান-বাজনা তুমি পূর্বে কখন শুনিয়াছ কি? না,কখনও শোন নাই; শোন-শোনখুব মিষ্ট” ইত্যাদি। দুই-চার বার এইরূপ বলার পর তাহাকে জিজ্ঞাসা করিবে, যে সে গান-বাজনা শুনিতে পাইতেছে কি না? যদি অস্বীকার করে, তবে তাহাকে পূর্বের ন্যায় কয়েকবার আদেশ দিলেই সে ঐ কল্পিত গীতবাদ্য খুব আগ্রহের সহিত শুনিতে আরম্ভ করিবে। পাত্র কিছুকালের জন্য, উক্ত মায়ার বশীভূত হওয়ার পর, তাহাকে পুনৰ্বার নিদ্রিত করিবে।

পাত্রকে নিদ্রিত করণান্তর বলিবে—“আমি এখন একটা গরম লোহার শলা তোমার কপালে লাগাইব; উহাতে তোমার কপাল পুড়িয়া যাইবে। লোহাটা আগুনে পুড়িয়া খুব লাল হইয়া গিয়াছে এবং উহা স্পর্শ করা মাত্র তোমার কপাল পুড়িয়া যাইবে—তুমি চীৎকার করিয়া উঠিবে-যন্ত্রণায় ছটফট করিয়া উঠিবে” ইত্যাদি। দুই-তিন বার এইরূপ বলিয়া, একটা পেনসিল বা কলম তাহার কপালে চাপিয়া ধরিবে এবং তৎসঙ্গে তোমার কপাল পুড়ল-পুড়ল” ইত্যাদি বলিবে। পাত্র কিছু ক্ষণের জন্য কাল্পনিক যন্ত্রনায় অস্থির হইলে, কপাল হইতে উহা অপসারিত করোন্তর পুনৰ্ব্বার তাহাকে নিদ্রিত করিবে।

তৎপরে সম্মোহনবিৎ আদেশসূচক স্বরে বলিবে—এইবার তুমি চোখ খুলিবে, কিন্তু তোমার ঘুম ভাঙ্গিবে না” ইত্যাদি। দুই-তিন বার এরূপ আদেশ করার পর বলিবে-“এইক্ষণ তোমাকে চোখ খুলিতে বলিলে তুমি চোখ খুলিবে এবং আমার হাতে কাল রংএর একখানা কাগজ দেখিতে পাইবে। আমার হাতে যে কাগজ খানা রহিয়াছে তাহা কাল-গাঢ় কাল—খুব কাল ইত্যাদি। দুই-তিনবার এরূপ বলার পর, কাৰ্যকারক এক টুকরা সাদা কাগজ লইয়া তাহাকে চোখ মেলিতে বলিবে; পাত্র চক্ষু না মেলিলে পুনঃ পুনঃ আদেশ দিয়া তাহা করিতে বাধ্য করিবে। যদি নিদ্রার গঢ়িতা বশতঃ সে উহা খুলিতে অসমর্থ হয়, তবে কাৰ্যকারক তাহার চক্ষুর পাতা আস্তে আস্তে টানিয়া তুলিয়া তাহাকে সাহায্য করিবে। সে চোখ মেলিবার পর, তাহার সম্মুখে ঐ সাদা কাগজ খানা ধরিয়া বলিবে“এই দেখ, কাগজ খানা কেমন কাল—গাঢ় কাল—খুব কাল ইত্যাদি। দুই-চার বার এইরূপ আদেশ দিলেই সে উহা কাল বলিয়া স্বীকার করিবে। সম্মোহনবিৎ পাত্রের মনে এই মায়া উৎপাদন করিয়া কৃতকার্য হইলে দ্বাবিংশ পাঠের উপদেশানুসারে তাহাকে প্রকৃতিস্থ করিয়া দিবে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *