1 of 2

১.০৯ শিক্ষার প্রণালী

নবম পাঠ
শিক্ষার প্রণালী

শিক্ষার্থী পূর্ববর্তী পাঠ সমূহ হইতে যাবতীয় জ্ঞাতব্য বিষয় অবগত হইয়া শিক্ষায় প্রবৃত্ত হইতে সমর্থ হইলেও, সে সম্বন্ধে বৰ্তমান পাঠে তাহাকে নির্দিষ্টরূপে উপদেশ প্রদান করা হইল। ইতঃপূৰ্বে কয়েকটি শিক্ষার্থী অনুশীলন অভ্যাস করিবার একখানা তালিকা চাহিয়া আমাকে পত্র লিখিয়াছিল; কিন্তু সেরূপ তালিকা ব্যক্তি বিশেষের পক্ষে সুবিধা জনক হইলেও সকলের পক্ষে তাহা নহে। কারণ সকলের অবসর ও সুযোগ একরূপ নয়। কোন শিক্ষার্থী হয়ত শিক্ষার জন্য প্রয়োজনাতিরিক্ত সময় ব্যয় করিতে পারিবে, আর কাহারও বা সময় অল্প বলিয়া দৈনিক দেড় বা এক ঘণ্টার অধিক সময় শিক্ষায় মনোনিবেশ করিতে পারিবে না। সুতরাং উক্ত তালিকা দ্বারা সকলের তুল্যরূপে উপকার হওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই। তবে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকেই প্রতিদিন নিয়মিতরূপে নন পক্ষে এক হইতে দেড় ঘণ্টা সময় শিক্ষার সময় ব্যয় করিতে হইবে এবং বিশেষ কোন অন্তরায় উপস্থিত না হইলে সে কোন দিন কোন অভ্যাস বন্ধ রাখিবে না।

শিক্ষার্থী প্রথম হইতে অষ্টম পাঠের বিষয়গুলি পরিষ্কাররূপে হৃদয়ঙ্গম করিয়া লইবার পর শিক্ষার প্রবৃত্ত হইবে। যে শক্তি বলে মানুষ অপরের জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে তাহাদের মনের উপর আধিপত্য এবং নিজের শারীরিক, মানসিক, বৈষয়িক ইত্যাদি বিষয়ের উন্নতি সাধন করিতে পারে, শিক্ষার্থী সেই লুকায়িত শক্তিলাভের অভিলাষী হইলে, সে শিক্ষার সুরু হইতেই সংযম ও সাধনার পথ অবলম্বন করিবে। আর যদি সে কেবল সম্মোহনের কৌশল শিক্ষা করিতে ইচ্ছুক হয়, তবে তাহার আহার বিহার সম্বন্ধে কোন নিয়ম পালনের আবশ্যকতা নাই। দিনের বেলা কিম্বা রাত্রিতে যখন তাহার মন প্রশান্ত থাকিবে, তখন সে একাগ্রচিত্তে নিম্নোক্ত অনুশীলগুলি অভ্যাস করিবে। সে প্রতিদিন নিয়মিতরূপে ১০ হইতে ১৫ মিনিট দৃষ্টির অনুশীলন, ৫ হইতে ১০ মিনিট পাস করণ বা হাত বুলান, ১০ হইতে ১৫ মিনিট শরীরে শিথিলতা-উৎপাদন শিক্ষা এবং ৩৫ হইতে ৫০ মিনিট সময় বালক ও যুবকের উপর শারীরিক পরীক্ষাগুলি সম্পাদনের জন্য ব্যয় করিবে। দিবা কিম্বা রাত্রিতে যখন ইচ্ছা সে এই অনুশীলনগুলি করিতে পারে, কিন্তু দৃষ্টির অনুশীলনটি দিনের বেলা করাই ভাল। কারণ তাহাতে চোখের ক্লান্তি কম বোধ হইবে। কেহ কেহ মোহিনী দৃষ্টি লাভের আশায় সূর্য, চন্দ্র বা প্রদীপের শিখার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকাইয়া থাকে বলিয়া শোনা গিয়াছে। এরূপ অভ্যাস চক্ষের পক্ষে অত্যন্ত অনিষ্টকর। কোন শিক্ষার্থী কদাপি এরূপ কোন অভ্যাসের প্রয়াস পাইবে না। দৃষ্টির অনুশীলনটি দাঁড়াইযা করার ব্যবস্থা আছে। যদি কাহার ও তাহাতে অসুবিধা বোধ হয়, তবে সে চেয়ার, তক্তপোষ (চৌকিঅথবা ঘরের মেঝেতে আসনের উপর বসিয়া অভ্যাস করিতে পারে। উহার প্রধান বিষয় এই যে, শিক্ষার্থী আসনের (যে কোন আসন হউক) উপর মেরুদণ্ড সরল রেখার ন্যায় খাড়া করিয়া বসিবে, এবং ভূমি হইতে তাহার চক্ষু যতদূর উর্কে অবস্থিত, ততদূর উচ্চে তাহার সম্মুখস্থ দেয়ালের গায়ে আয়নাখানা টাঙ্গাইয়া লইবে এবং শরীর নাড়াচাড়া না করিয়া স্থিরভাবে বসিয়া অভ্যাস করিবে। এক বা দুই সপ্তাহ কাল পাস করণ ও শিথিলতা-উৎপাদন শিক্ষা করা হইলে, উহাদিগকে আর নিয়মিতরূপে অভ্যাস করার আবশ্যকতা নাই; কিন্তু যতদিন কোন বস্তুর প্রতি সে ১৫ বা ২০ মিনিট কাল বিনা ক্লেশে স্থির দৃষ্টিতে তাকাইয়া থাকিতে না পারিবে, ততদিন প্রত্যহ নিয়মিতরূপে উহা অভ্যাস করিবে।

নির্জন গৃহে বা মাঠে আদেশ দেওয়া শিক্ষা করিবে। কোন ব্যক্তি সম্মুখে দাঁড়াইয়া আছে, এরূপ কল্পনা করিয়া এই কল্পিত মূর্তির প্রতি দৃঢ় ও বিশ্বাসোদ্দীপক স্বরে এরূপ আদেশ দিবে—“তোমার হাত অত্যন্ত দৃঢ়রূপে জুড়িয়া গিয়াছে,” “তোমার চোখ খুব কঠিন রূপে বন্ধ হইয়া গিয়াছে,” “তুমি আর চলতে পাচ্ছ না,” “তুমি কখনও পার না,” “কিছুতেই পাচ্ছ না” ইত্যাদি। যখন লোকের সহিত বিষয়-কর্মের আলাপ করিবে, তখনও অভীষ্ট সিদ্ধির সহায়ক শব্দগুলির উপর বিশেষ জোর দিয়া কথা বলিবে। কিছুদিন এইরূপ অভ্যাস করিলেই সে ধীর, গম্ভীর ও আদেশসূচক স্বরে কথা বলিতে সমর্থ হইবে।

অনেকের ধারণা যে, মন শক্তি বৃদ্ধি না করিয়া কাহাকে ও শারীরিক পরীক্ষায় অভিভূত করা যায় না; তাহা ভুল। কারণ মানুষ মাত্রেরই অল্পাধিক পরিমাণে স্বভাব-দত্ত সম্মোহন শক্তি আছে, যাহা নির্দিষ্ট প্রণালীতে প্রয়োগ করিতে পারিলে সামান্য চেষ্টাতেই এই সহজ শারীরিক পরীক্ষাগুলি সম্পাদন করা যায়। সুতরাং সে চক্ষের অনুশীলন, হাতবুলান, ইত্যাদি শিক্ষার সঙ্গে প্রতিদিন নিয়মিতরূপে বালক ও যুবকদের উপর শারীরিক পরীক্ষাগুলি সম্পাদনের প্রয়াস পাইবে। যে সকল শিক্ষার্থী লোক সংগ্রহ করিতে পারিবে, তাহারা প্রত্যহ ২৩টি নূতন লোক লইয়া চেষ্টা করিলে এক সপ্তাহের মধ্যেই কোন না কোন ব্যক্তিকে দুইএকটি শারীরিক পরীক্ষায় অভিভূত করিতে সমর্থ হইবে। ফলতঃ সে যত অধিক সংখ্যক লোক লইয়া চেষ্টা করিবে, সে তত শীঘ্র ও সহজে শিক্ষায় সাফল্য লাভ করিতে পারিবে। যাহারা ইতঃপূর্বে এই পুস্তকের সাহায্যে প্রথম চেষ্টাতেই শারীরিক পরীক্ষাগুলিতে কৃতকার্য হইয়াছে, তাহাদের সংখ্যা নিতান্ত কম নহে। যদি কেহ পরীক্ষার জন্য প্রতাহ নূতন লোক সংগ্রহ করিতে না পারে, তবে সে একটি বা দুইটি লোকের উপর ক্রমাগত ২/৩ দিন চেষ্টা করিবে, যদি উহাতে কৃতকাৰ্য্য না হয়, তবে আবার একটি কি দুইটি নূতন লোক লইয়া চেষ্টা করিবে। এইরূপে যে পর্যন্ত সে ২০/২১ জন বিভিন্ন প্রকৃতির লোকের উপর উক্ত পরীক্ষাগুলি সম্পাদনের প্রয়াস না পাইয়াছে, ততদিন সে কখনও চেষ্টা পরিত্যাগ করিবে না।

শিক্ষার্থীদিগের মধ্যে এরূপ লোক অনেক আছে, যাহাদের শিক্ষার আন্তরিক ইচ্ছা আছে, অথচ সামান্য একটু কষ্ট স্বীকার পূর্বক লোক সংগ্রহ করিবার তেমন আগ্রহ বা চেষ্টা নাই। তাহাদের পক্ষে এই বিদ্যা হাতে-কলমে শিক্ষা করা কঠিন। চিত্রবিদ্যা শিক্ষা করিতে যেমন জীবজন্তু, গাছ-পালা, নদ-নদী ইত্যাদি আঁকিয়া হাত পাকাতে হয়, মল্ল বিদ্যা শিখিতে হইলে যেমন ভিন্ন ভিন্ন পালোয়ানের সহিত লড়িয়া ‘প্যাচের নানা কৌশল’ শিক্ষা করিতে হয়, সেইরূপ এই বিদ্যা হাতে-কলমে শিক্ষা করিতে ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির লোকের উপর এই সকল পরীক্ষা করিতে হয়। জলে না নামিয়া কেবল মৌখিক উপদেশের সাহায্যে যেমন কেহ সতার শিখিতে পারে না, সেইরূপ বিভিন্ন প্রকৃতির লোকের উপর চেষ্টা করিলে এই বিদ্যা শিক্ষা করা যায় না। অতএব যদি শিক্ষার্থী এই গুপ্ত বিজ্ঞানগুলি হাতে-কলমে শিক্ষা করিতে যথার্থ অভিলাষী হইয়া থাকে,তবে তাহাকে অবশ্য পাত্র সংগ্রহ করিয়া তাহাদের উপর চেষ্টা করিতে হইবে।

কিছুদিন পূর্বে কয়েকটি শিক্ষার্থী আমাকে লিখিয়াছিল যে, যদি তাহারা কাহারও উপর কোন শারীরিক পরীক্ষা সম্পাদনের চেষ্টা পাইয়া উহাতে অকৃতকার্য হয়, তবে তাহাদের প্রতিষ্ঠার,হানি হইবে। যদি চেষ্টার বিফলতা পদমর্যাদার হানিকর হইত, তবে বিশেষভাবে চিকিৎসক দিগকে তাহাদের ব্যবসায় পরিত্যাগ করিতে হইত। যাহারা লোকের নিকট অপ্রতিভ হইবার আশঙ্কা করে, তাহারা পাত্রদিগকে লইয়া নির্জনে পরীক্ষা করিবে। আবার কেহ বলিয়া থাকে যে, তাহারা পাত্রের অভাবে শিক্ষার অগ্রসর হইতে পারিতেছে না। পাত্রের অভাব হওয়ার বিশেষ কোন কারণ নাই; যেহেতু শিক্ষার্থীর আত্মীয়, বন্ধু বা পরিচিত ব্যক্তি অবশ্যই আছে, যাহাদিগকে লইয়া সে অনায়াসেই উক্ত পরীক্ষা গুলি সম্পাদনের চেষ্টা পাইতে পারে। যাহার শিক্ষার আন্তরিক আগ্রহ আছে তাহার কখনও পাত্রের অভাব হয় না।

শিক্ষাভিলাষীকে এই বিদ্যা হাতে-কলমে শিক্ষা দিতে আন্তরিক অভিলাষী হইয়া এই পুস্তকে আমি কেবল সর্বোৎকৃষ্ট নিয়ম-প্রণালীই লিপিবদ্ধ করিয়াছি এবং তাহার ব্যক্তিগত আবশ্যকতানুসারে বিনা ফিতে চিঠি পত্রে স্বতন্ত্র উপদেশ দ্বারা সাহায্য করিতেও প্রস্তুত আছি। সুতরাং শিক্ষাকালীন যত্ন ও চেষ্টার ত্রুটি না হইলে, এই পুস্তকের সাহায্যে তাহার সাফল্য লাভ সুনিশ্চিত। কিন্তু যদি সে অবহেলা করিয়া ইহার অনুসরণ না করে, তবে তাহার অকৃতকাৰ্য্যতার জন্য একমাত্র সে নিজেই দায়ী হইবে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *