1 of 2

১.০২ সিদ্ধির মূল কারণ

দ্বিতীয় পাঠ
সিদ্ধির মূল কারণ

গভীর রহস্যপূর্ণ এই আত্মিক বিজ্ঞান শিক্ষা করিতে শিক্ষার্থীর আত্মবিশ্বাস, স্থির সংকল্প, অধ্যবসায় ও সহিষ্ণুতা থাকা আবশ্যক। যে কেহ এই কয়টি মানসিক গুণের সাহায্যে এই গুপ্ত বিদ্যা ও শাখা বিজ্ঞানসমূহ হাতে-কলমে শিক্ষা করিতে সমর্থ। উক্ত গুণগুলির সহায়তায় যে, কেবল এই বিদ্যা চর্চায় সাফল্য লাভ করা যায়, তাহা নয়, যযোপযুক্তরূপে প্রযুক্ত হইলে উহারা প্রত্যেক গৃহীত কাৰ্য্যেই মানুষকে সিদ্ধি দান করিয়া থাকে। ফলতঃ মানুষের কর্মজীবনের সাফল্য সমধিক পরিমাণে উহাদের উপরই নির্ভর করে।

শিক্ষার্থীর সর্বাগ্রে চাই আত্মবিশ্বাস। সে এই বিদ্যা শিক্ষা করিয়া কৃতকাৰ্য্য হইতে সম্পূর্ণ সমর্থ, এরূপ স্থির ধারণাকেই “আত্ম-বিশ্বাস বা “আত্ম-প্রত্যয়” বলে। আত্মবিশ্বাসী ব্যক্তিগণ অত্যন্ত কঠিন কাৰ্য্যেও সিদ্ধিলাভ করিতে পারেন; আর স্বীয় ক্ষমতার প্রতি আস্থাশূন্য ব্যক্তি সহজ কাৰ্য্যেও সৰ্ব্বদা বিফলমনোরথ হয়। সংসারের সকল কর্ম অপেক্ষা নিদ্রিত মনঃশক্তিকে জাগ্রত করিতে সর্বাপেক্ষা অধিক আত্মবিশ্বাসের প্রয়োজন। এজন্য তাহাকে স্বীয় ক্ষমতার প্রতি দৃঢ়রূপে আস্থাবান্ হইয়া শিক্ষায় প্রবৃত্ত হইতে হইবে। তজ্জন্য তাহাকে এরূপ একটি ধারণা হৃদয়ে সর্বদা বদ্ধমূল রাখিতে হইবে যে, যখন সহস্র সহস্র ব্যক্তি এই বিজ্ঞান শিক্ষা করিয়া সফলকাম হইয়াছে, তখন, সেও ইহা শিক্ষা করিতে পারিবে। দৃঢ় আত্ম-প্রত্যয়ের সহিত সে এই উপদেশ গুলির প্রতিও বিশ্বাস স্থাপন করিবে, অন্যথায় তাহার সিদ্ধি লাভের আশা অতি অল্প। চিকিৎসক-প্রদত্ত কোন ঔষধের প্রতি রোগীর বিশ্বাস না থাকিলে যেমন উহার সাহায্যে, তাহার রোগ আরোগ্য হয় না, সেইরূপ এই উপদেশ গুলির প্রতি আস্থা শূন্য হইলে এই বিদ্যা শিক্ষায় সেও সাফল্য লাভ করিতে পারিবে না।

তৎপরে সিদ্ধি লাভের নিমিত্ত তাহার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা চাই। সংকল্পের দৃঢ়তাই সিদ্ধি লাভের আদি কারণ। স্থির সংকল্প ব্যতীত কেহ কখনও এই অদ্ভুত ক্ষমতা লাভ করিতে সমর্থ হয় না। দুই সপ্তাহে হউক, দুই মাসে হউক অথবা অপেক্ষাকৃত অধিক সময়েই হউক, যে পর্যন্ত তাহার অভীষ্ট সিদ্ধি না হইবে, তদবধি সে কখনও সংকল্প ভ্রষ্ট হইবে না। এ-বিষয়ের কিছু, ও-বিষয়ের কিছু শিক্ষা করা যাহাদের স্বভাব এবং যাহারা একটি কাৰ্য্য আরম্ভ করিয়া উহার সুসম্পন্ন না হইতেই অপর বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে, তাহারা এই সকল গুপ্ত বিজ্ঞান শিক্ষার উপযুক্ত পাত্র নহে। অতএব, যদি সে এই অদ্ভুত রহস্যপূর্ণ বিষয়টি শিক্ষা করিতে আন্তরিক অভিলাষী হইয়া থাকে, তবে যে পর্যন্ত এই শক্তি তাহার আয়ত্তাধীন না হয়, ততদিন সে, “নিশ্চয়ই সিদ্ধি লাভ করিব” বলিয়া দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকিবে।

তৎপরে তাহার অধ্যবসায় ও সহিষ্ণুতা আবশ্যক। এই কর্মময় সংসারে এমন কাৰ্য্য অতি বিরল যাহা অধ্যবসায় ও সহিষ্ণুতা বলে সম্পন্ন হয়। একটি কাৰ্য প্রথমে যত কঠিন বলিয়াই বোধ হউক, অধ্যবসায় ও সহিষ্ণুতার সহিত চেষ্টা করিলে উহা নিশ্চয় সুসম্পন্ন করা যায়। এই পুস্তক যতদূর সম্ভব সরল ভাষায় লিখিত হইয়াছে, এবং আমি আশা করি যে, শিক্ষার্থী এই নিয়ম-প্রণালীগুলি যথাযথরূপে অনুসরণ করিলে, সে প্রথম বা দ্বিতীয় চেষ্টাতেই শারীরিক পরীক্ষাগুলিতে কৃতকার্য হইবে। আর যদি সে শিক্ষার প্রারম্ভে উহাতে দুই-একবার অকৃতকার্য হয়, তথাপি নিরাশ হইয়া চেষ্টা পরিত্যাগ করিবে না; বরং ধৈৰ্য্যাবলন পূর্বক দ্বিগুণ উৎসাহের সহিত পুনঃ পুনঃ চেষ্টা করিবে এবং উহাতে সাফল্য লাভ না হওয়া পর্যন্ত চেষ্টায় বিরত থাকিবে না। শিক্ষার্থী শুনিয়া হয়ত আশ্বস্ত হইবে যে, আমার শিক্ষার প্রাক্কালীন কোন একটি বিশেষ পরীক্ষায় আমি ৩৮ বার অকৃতকার্য হইয়াও চেষ্টা পরিত্যাগ করি নাই। ফলতঃ অকৃতকাৰ্যতা হইতে অভিজ্ঞতা জন্মে এবং পরে সেই অভিজ্ঞতাই মানুষকে যথাসময়ে সিদ্ধির পথে পরিচালিত করিয়া থাকে।

শিক্ষার্থী এই পুস্তকখানা সৰ্ব্বদা গোপনে রাখিবে, এবং উহার এক বর্ণ ও কাহারো অলস অনুসন্ধিৎসা পরিতৃপ্তির জন্য কদাপি প্রকাশ করিবেনা। কারণ এইটি গুপ্ত বিষয়। গুপ্ত বিষয় গোপনে রক্ষা করার উপরই উহার কার্যকরী শক্তি নির্ভর করে। এজন্য সাধুসন্ন্যাসীদের নিকট হইতে প্রাপ্ত কিম্বা স্বল্পলব্ধ ঔষধাদির নাম লোকে অপরের নিকট প্রকাশ করে না। ইহার কোন অংশ যদি তাহার সহজ বোধ্য না হয়, তবে সে বরাবর আমার নিকট পত্র লিখিয়া (এক আনার ডাক টিকিট সহ) উহা বুঝিয়া লইবে; কিন্তু কখনও উহা অপরকে দেখাইয়া বুঝিবার চেষ্টা পাইবে না। আর সে কখনও ইহার নিয়মপ্রণালীগুলি অপর কোন পুস্তকের (সেই পুস্তক তাহার নিকট যতই ভাল বলিয়া বোধ হউক) নিয়ম-প্রণালীর সহিত মিশ্রিত করিয়া কাৰ্য্য করিবে না। আমি এই পুস্তকের সাহায্যে তাহাকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এই বিদ্যা শিখাইয়া দিব বলিয়া প্রতিশ্রুতি দিয়াছি; সুতরাং সে তাহার শিক্ষার ভার আমার উপর সম্পূর্ণরূপে ব্যস্ত রাখিয়া নিশ্চিন্ত থাকিতে পারে। যদি এই নিষেধ সত্ত্বেও কোন শিক্ষার্থী ঐরূপ কোন কাৰ্য্য করে, তবে তাহার কৃতকাৰ্য্যতার জন্য আমি দায়ী হইব না।

পদার্থ বিজ্ঞানের ন্যায় সম্মোহন বিজ্ঞানেরও ভাল-মন্দ দুইটা দিক আছে; এবং সম্মোহন-শক্তি লোকের উপকার ও অপকার এই দুই রকম কাৰ্যেই নিয়োজিত হইতে পারে। এই শক্তি দ্বারা মানুষের যেমন অশেষ প্রকার মঙ্গল সাধন করা যায়, পক্ষান্তরে আবার উহার সাহায্যে তাহার গুরুতর অনিষ্টও সাধিত হইতে পারে। এই নিমিত্ত শিক্ষার্থীর নিকট আমার একটি বিশেষ অনুরোধ এই যে, সে যেন মৎপ্রদত্ত এই উপদেশগুলির সাহায্যে শক্তি লাভ করিয়া কদাপি কাহারো কোনরূপ অনিষ্টের চেষ্টা না পায়। যাহারা হীন স্বার্থের বশবর্তী হইয়া এই শক্তি সাহায্যে লোকের অনিষ্ট করিতে প্রবৃত্ত হয়, তাহারা সমাজের পরম শত্রু। তাহারা ৪ানুষের বিচারালয়ের কবল হইতে মুক্তি পাইতে পারিলেও পরম নিয়ন্তার বিচারালয়ে তাহাদের কৃত পাপের সমুচিত দণ্ড পাইবে। শিক্ষার্থী সদুদ্দেশ্যে অনুপ্রাণিত হইয়া এই বিজ্ঞানচর্চা রূপ সাধনায় প্রবৃত্ত হইলে, সে অল্পায়াসেই সিদ্ধি লাভে সমর্থ হইবে, ইহাতে কোন সন্দেহ নাই।

1 Comment
Collapse Comments
Md. Monirul Islam Khan July 28, 2020 at 1:03 am

rare

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *