০৭. লক্ষ্য নির্ধারণ করা

লক্ষ্য নির্ধারণ করা
GOAI SETTING
লক্ষ্য নির্ধারণ করে লক্ষ্যে পৌঁছানো
Setting and achieving your goals
অধ্যায় – ৭

জ্ঞান আপনার লক্ষ্যে পৌঁছতে সাহায্য করে, সেই জন্যই আপনার জানা দরকার; লক্ষ্য কি?

প্রাচীন কালে একজন ভারতীয় ঋষি তার শিষ্যদের ধনুর্বিদ্যা শেখাচ্ছিলেন: একটি কাঠের পাখি গাছে রেখে ছাত্রদের বললেন-পাখিটির চোখে লক্ষ্য স্থির করো।

তারপর প্রথম শিষ্যকে সে কী দেখছে তা বর্ণনা করতে বললেন। শিষ্য বলল, আমি দেখছি গাছ, গাছের ডাল-পালা, আকাশ পাখি এবং তার চোখ। ঋষি তাকে অপেক্ষা করতে বললেন। তারপর দ্বিতীয় শিষ্যকে একই প্রশ্ন করতে সে বলল, আমি কেবল পাখির চোখ দেখছি। ঋষি বললেন, খুব ভালো, তাহলে চকু বিদ্ধ করো। তীর সোজ গিয়ে পাখিটির চোখ বিদ্ধ করলো।

এই গল্পটির নীতি শিক্ষা কী? আমরা যথাযথ ভাবে লক্ষ্য স্থির করে দৃষ্টি নিবদ্ধ না করলে সিদ্ধি লাভ করতে পারি না। লক্ষ্য স্থির করে মনঃসংযোগ করা কঠিন; কিন্তু এই দক্ষতা

আমরা অনুশীলনের দ্বারা অর্জন করতে পারি।

জীবনের পথে অগ্রসর হতে হলে লক্ষ্যে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখুন। -অভ্যাসের ওপর লক্ষ্য রাখুন, বদ-অভ্যাসর ওপর নয়।

লক্ষ্যের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করুন (Keep von: eyes upon the goal)

১৯৫২ সালে ৪ঠা জুলাই ফ্লোরেন্স চ্যাডউইথ মহিলা সাঁতারু হিসাবে ক্যাটেলিনা প্রণালী পার হতে যাচ্ছিলেন। তার আগে তিনি ইংলিশ চ্যানেল জয় করে ছিলেন। সারা বিশ্বের দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল তার দিকে। চ্যাডউইক ঘর কুয়াশা, হাড় কাঁপানো ঠান্ডা এবং অনেক সময় হাঙরের উৎপাতের সঙ্গে লড়াই করলেন। তীরে পৌঁছাবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা হলেন। কিন্তু চোখের জলচশমার মধ্য দিয়ে যখনই দেখছেন, তখনই সামনে দেখছিলেন ঘন কুয়াশা। তীর দেখতে না পেয়ে, তিনি তার চেষ্টায় নিবৃত্ত হন।

চ্যাডউইক খুবই হতাশাগ্রস্ত হলেন, যখন দেখলেন তিনি তীর থেকে মাত্র আধমাইল দুরত্বে ছিলেন। তার লক্ষ্য দৃশ্যমান ছিলনা বলে তাকে নিবৃত্ত হতে হয়েছিল।

অন্য বাধা বিপত্তি তাকে নিবৃত্ত করতে পারেনি। তিনি বললেন, আমি কোন অজুহাত দেখাচ্ছি না। যদি আমি তীর দেখতে পেতাম, ডাঙা দেখতে পেতাম, আমি নিশ্চয় সাফল্য পেতাম।

দুমাস পরে তিনি ক্যাটেলিনা চ্যানেল সাঁতরে পার হলেন। খারাপ আবহাওয়া সত্ত্বেও ৩ার লক্ষ্যে তিনি অবিচলিত ছিলেন। এবারে তিনি শুধু সফলই হলেন না, পুরুষ সাঁতারুদের সময়ের যে রেকর্ড ছিল, তার থেকে ২ ঘন্টা কম সময়ে তার সাঁতার শেষ করলেন।

লক্ষ্য গুরুত্বপূর্ণ কেন? (Why are goals important?)

অত্যন্ত সূর্যকরোজ্জ্বল দিনেও খুব শক্তিশালী আতস কাঁচ কাগজে আগুন জ্বালাতে পারবে না, যদি কাঁচটি সব সময়ে নাড়ানো হয়।

কিন্তু যদি লক্ষ্যস্থির করে আতস কাঁচটিকে এক জায়গায় ধরে রাখা হয়, তাহলে কাগজে আগুন জ্বলে উঠবে। মনঃসংযোগের এই রকম ক্ষমতা।

একজন লোক পথে যেতে যেতে রাস্তার একটি সংযোগ স্থলে দাঁড়িয়ে পড়ল, একজন বয়স্ক ভদ্রলোককে জিজ্ঞাসা করল, এই রাস্তা কোন দিকে গেছে। ভদ্রলোক জানতে চাইলেন, আপনি কোন দিকে যেতে চান? লোকটি বলল, আমি জানি না।

বয়স্ক ভদ্রলোক বললেন, তাহলে যে কোন রাস্তাতেই যান, কারণ তাতে কিছু কি তফাৎ হবে? খুব সত্যি কথা। যখন আমরা জানি না কোনদিকে যাচ্ছি, তখন যে কোন রাস্তাতেই যাওয়া যায়।

ধরুন ১১ জনের এক ফুটবল দল উৎসাহে টগবগ করে ফুটতে ফুটতে উত্তেজনায় টানটান হয়ে খেলতে নেমে দেখলে যে কেউ গোল-পোষ্ট তুলে নিয়ে গেছে। এখন খেলা হবে কী করে? কিভাবে গোল করা হবে? হারা-জেতা কিভাবে নির্ধারণ করা যাবে? নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে পরিচিালিত না হলে উৎসাহ, বনে আগুন লাগার মত ইতস্তত ছড়িয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত মানুষকে হতাশাগ্রস্ত কের। লক্ষ্য জীবনকে নির্দিষ্ট পথের নিশানা দেয়।

আপনি কি কোনও রেলগাড়িতে বা এরোপ্লেনে কোথায় যাচ্ছেন না জেনে উঠে পড়বেন। নিশ্চিত উত্তর হচ্ছে না। তাহলে লোকে নিদিষ্ট সক্ষ্য ছাড়াই, কেন জীবনের পথে অগ্যসর হয়?

স্বপ্ন (Dreams)

লোকে আকাকা এবং স্বপ্নকে লক্ষ্যের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলে। স্বপ্ন এবং আকাঙ্ক্ষা ইচ্ছার থেকে কিছু বেশি নয়। ইচ্ছা দুর্বল। ইচ্ছাকে দৃঢ় করতে হলে প্রয়োজন হচ্ছে–

  • ১-নির্দিষ্ট পথ
  • ২ -আত্মনিয়োগ
  • ৩-দৃঢ়সংকল্প
  • ৪-শৃঙ্খলা বোধ
  • ৫-মরণপণ।

এইগুলির দ্বারাই আকাঙ্ক্ষা এবং লক্ষ্য এই দুই এর তফাৎ বোঝা যায়। লক্ষ্য হচ্ছে স্বপ্নকে একটি নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে এবং একটি কর্ম পরিকল্পনার মাধ্যমে বাস্তবায়িত করা।

লক্ষ্য কখনও সার্থক কখনও অ-সার্থক হতে পারে। লক্ষ্য অস্পষ্ট ই মাত্র নয়, এটি গভীর আকাঙ্ক্ষা যা স্বপ্নকে সত্যে রূপায়িত করে।

স্বপ্ন কে বাস্তবে রূপায়িত করার পথঃ

একটি সুস্পষ্ট লিখিত লক্ষ্য থাকবে। এই লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার জন্য একটি পরিকল্পনা থাকবে। দিনে ২ বার এই দুটি জিনিস পাঠ করবেন।

বেশি সংখ্যায় মানুষ স্যস্থির করে না কেন? (Why dont more people set goals?)

এর অনেক কারণ আছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হোলঃ

(১) একটি নিরাশাবাদী মনোভাব; অনেকে সাফল্যের সম্ভাবনার থেকে বাধা-বিপত্তির আশঙ্কা বেশি করেন।

(২) ব্যর্থতার ভয় : যদি সফল না হই, তাহলে কিহবো অবচেতন মনে এই চিন্তা সর্বদা পোষণ করনে যে, তাদের নির্দিষ্ট লক্ষ্য না থাকলে কিংবা উদ্দেশ্য সাধিত না হলে কেউ তাদের অসফল বলবে না। কিন্তু এই চিন্তার ফলেই তারা প্রথম থেকেই তো অসফল হয়ে থাকে।

(৩) উচ্চাকাক্ষার অভাবঃ এটা আমাদের মূল্যবোধের পরিণতি এবং পরিপূর্ণ জীবন যাপনের ইমর অভাব।

আমাদের সীমাবদ্ধ চিন্তা আমাদের অগ্রগতিকে ব্যাহত করে। একজন জেলে বড় মাছ ধরলেই নদীতে ছেড়ে দিত। ছোট মাছগুলি রাখত। এই রকম অস্বাভাবিক ব্যবহার লক্ষ্য করে এক ব্যক্তি জেলেকে কারণ জিজ্ঞাসা করল। জেলে জবাব দিল-আমার মাছ ভাজার কড়াইটি ছোট। অনেক মানুষই তাদের জীবনে ছোট মাছ ধরার কড়াই নিয়ে মাছ ধরতে বেরিয়েছে। একেই বলে চিন্তার সীমাবদ্ধতা।

(৪) প্রত্যাখ্যানের ভয়ঃ যদি আমি সফল না হই, তাহলে অন্য লোকে কী বলবে?

(৫) দীর্ঘসূত্রতা : একদিন আমি আমার লক্ষ্য স্থির করবো-এই রকম চিন্তা উচ্চাশার অভাই সূচিত করে।

(৬) নিম্ন মানের আত্মবিশ্বাস : কোনও ব্যক্তি অন্তর থেকে চালিত না হলে এবং অনুপ্রেরণা না পেলে তার নিজের প্রতি বিশ্বাস এবং শ্রদ্ধা জন্মায় না।

(৭) লক্ষ্যের গুরুত্ব অনুধাবন করার অক্ষমতাঃ কেউ তাদের হাতে ধরে শিখিয়ে দেয়নি, এবং তারাও লক্ষ্য স্থির করা সম্পর্কে শিক্ষা গ্রহণ করেনি।

(৮) লক্ষ্য স্থির করার বিষয়ে জ্ঞানের অভাব : অনেকেই অনেকেই লক্ষ্য স্থির করার পদ্ধতি সম্পর্কে জানে না। তাদের জন্য ধাপে ধাপে একটি নিদিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করতে সাহায্য করবে এই রকম এক নির্দেশকের প্রয়োজন।

লক্ষ্য স্থির করা হচ্ছে, একের পর এক, কয়েকটি পদ্ধতির সমষ্টি। এরোপ্লেনের-এর টিকিট কিনলে তাতে কী নিদের্শ দেওয়া থাকে।

  • যাত্রা শুরুর স্থান
  • গন্তব্য স্থান।
  • ভ্রমণের শ্রেণী বিভাগ
  • টিকিটের মূল্য
  • যাত্রার দিন
  • মেয়াদ ফুরাবার তারিখ

যদি আপনি জিজ্ঞাসা করেন যে জীবনের প্রধান লক্ষ্য কী? তাহলে অনেক ব্যক্তি সম্ভবত অস্পষ্ট জবাব দেবে; যেমন, আমি সফল হতে চাই, সুখী হতে চাই এবং সচ্ছল জীবন যাত্রা চাই এবং এই রকম কিছু।

এগুলি ইচ্ছা মাত্র, কোনটিই নিদিষ্ট লক্ষ্য নয়। লক্ষ্যের নিম্নলিখিত গুণগুলি থাকবেঃ

(১) সুনির্দিষ্ট? -যেমন ধরুন, আমার লক্ষ্য হচ্ছে, আমি ওজন কমাবো, কিন্তু এটি একটি ইচ্ছা মাত্র। এটি লক্ষ্য হয়ে উঠবে যখন আমি সুনির্দিষ্ট ভাবে ঠিক করবো যে আমি ১০ দিনে ১০ পাউন্ড কমাবো, না পারলে খাওয়া ছেড়ে দেবো।

(২) লক্ষ্য হবে পরিমাপযোগ্য : যদি আমরা পরিমাপ করতে না পারি, তাহলে সেই লক্ষ্য সাধন করতেও পারব না। পরিমাপ করার অর্থ হচ্ছে, লক্ষ্যের পথে অগ্রগতিকে বিচার করে দেখা।

(৩) লক্ষ্য অবশ্যই সাধনযোগ্য হবেঃ এর অর্থ এই যে লক্ষ্য এমন হবে যে, তা লাভ করার জন্য কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হতে হলেও সমস্ত বিপত্তি অতিক্রম করেও তা লাভ করা সম্ভব। লক্ষ্য সামর্থ্যের বাইরে হলে তা হবে নিরাশাব্যঞ্চক।

(৪) বাস্তবানুগ : যে ব্যক্তি ৩০ দিনে ৫০ পাউন্ড ক্ষতি স্বীকার করতে চায়, তাকে বলা হয় অবাস্তববাণী।

(৫) সময়সীমা :- প্রত্যেক লক্ষ্যেরই একটি শুরুর তারিখ থাকবে এবং একটি সমাপ্তির তারিখ থাকবে।

লক্ষ্য হবে :

১। স্বল্প মেয়াদী-১ বৎসরের মধ্যে লক্ষ্য সিদ্ধ হবে।

২। মধ্য মেয়াদী-৩ বৎসরের মধ্যে সিদ্ধ হবে।

৩। দীর্ঘ মেয়াদী-৫ বৎসরের মধ্যে সিদ্ধ হবে।

৫ বৎসরের থেকেও বেশি সময় লাগতে পারে লক্ষ্য লাভের জন্য। কিন্তু তা হয়ে দাঁড়ায় জীবনের উদ্দেশ্য। জীবনের উদ্দেশ্য খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ তা না থাকলে আমরা দূরদৃষ্টি সম্পন্ন হতে পারি না; কেবল মাত্র লক্ষ্য সিদ্ধির জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ি। যদি আমাদের লক্ষ্যগুলি খন্ড খন্ড করে ফেলি তবে সহজেই সেইগুলি সিদ্ধ করা যায়। জীবন দীর্ঘ হলে দুঃসাধ্য হয়, কিন্তু যদি জীবন যাপনকে ছোট ছোট প্রয়াসের মধ্যে ভাগ করে নিই তবেই তো সহজ হয়ে ওঠে।

লক্ষ্যের ভারসাম্য থাকা উচিত (Goals must be balanced)

আমাদের জীবন ৬টি তার বিশিষ্ট একটি চাকার মতন। এই তারগুলি জীবনের ভারসাম্য রক্ষা করে।

১। পারিবার ও আমাদের ভালো লাগার মানুষগুলির জন্যই আমরা জীবন জীবনযাপন ও জীবিকা অর্জন করি।

২। অর্থিকঃ আমাদের জীবন ধারণের জন্য যে অর্থের প্রয়োজন হয়, জীবিকা তা সরবরাহ করে।

৩। শারীরিক ও স্বাস্থ্য ব্যতীত অন্য সমস্ত অর্থহীন হয়ে যায়।

৪। মানসিক ও জ্ঞানও প্রজ্ঞা মানসিক দিক থেকে বাচার উপাদান জোগায়।

৫। সামাজিক : প্রত্যেক মানুষ এবং সংস্থার সামাজিক দায়িত্ব আছে। সেই দায়িত্ব পালন না করলে সমাজ মুমূর্ষ হয়ে ওঠে।

৬। আত্মিক ও আমাদের মূল্যবোধের চেতনার ওপর নির্ভর করে আমাদের নীতিবোধ ও চরিত্র।

এই তারগুলির যদি একটিও যথাস্থানে না থাকে, তাহলে জীবনের ভারসাম্য নষ্ট হয়।

কয়েক মিনিট সময় নিয়ে চিন্তা করে দেখুন, এই ৬টির মধ্যে ১টি না থাকে, তাহলে জীবন কিরকম হবে?

ভারসাম্য (Balance)

১৯২৩ সালে পৃথিবীর সমচেয়ে সম্পদশালী এমন ৮ জন ব্যক্তি মিলিত হয়েছিলেন, যাদের সম্মিলিত সম্পদ ছিল সেই সময় যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের সম্পদের থেকে বেশি। এই ব্যক্তিরা কী করে সম্পদ সংগ্রহ করতে হয় এবং জীবনযাপন করতে হয়, সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবহিত ছিলেন। ২৫ বত্সর পরে তাদের কী অবস্থা হোল সেটি একবার দেখা যাক–

১. চার্লয় স্ক্যায়াব (Charles Schwab) ছিলেন বৃহত্তম ইস্পাত কারখানার সভাপতি। তিনি জীবনের শেষ ৫ বৎসর ঋণ করে ব্যবসা চালিয়েছিলেন, তারপর দেউলিয়া হয়ে মারা যান।

২. হাওয়ার্ড হাবসন (Howard Hubson ছিলেন সবচেয়ে বড় গ্যাস কোম্পানীর সভাপতি। তিনি পাগল হয়ে গিয়েছিলেন।

৩. আর্থার কাইন (Arthur Cuton) সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ীদের একজন ছিলেন, ইনিও দেউলিয়া হয়ে মারা যান।

৪. রিচার্ড দুইটনী (Rechard Whitney) ছিলেন নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্চের সভাপতি, তাকে জেলে পাঠানো হয়েছিল।

৫. প্রেসিডেন্টের মন্ত্রীসভার একজন সদস্য, এ্যালবার্ট ফল (Alber Fall) জেলে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাকে ক্ষমা করার পর, নিজের বাড়িতে গিয়ে শান্তি পেয়ে মৃত্যু বরণ করেন।

৬. জেসি, লিভার মোর (Jessi Livernore) ছিলেন ওয়াল স্ট্রীটের সবচেয়ে বড় ফাটকাবাজ, যিনি আশ্চর্যরকম কমদামে কেনা অনেক শেয়ার বাজারে বিক্রি করতেন। তিনি আত্মহত্যা করেন।

৭. পৃথিবীর সবচেয়ে বড় একচেটিয়া ব্যবসার সভাপতি আইভার গার(var Kueger) আত্মহত্যা করে।

৮. ইন্টারন্যাশনেল সেটলমেন্ট ব্যাঙ্কের(International Settlement Bank)এর প্রেসিডেন্ট লিয় ফ্রেজার ও (Lucon Fraser) আত্মহত্যা করেছিলেন।

এরা সবাই ধনবান, কিন্তু এরা ভুলে গিয়েছিলেন কিভাবে জীবন যাপন করতে হয়। এই উদাহরণগুলি থেকে পাঠকদের ভুল ধারণা জন্মাবে যে অর্থই অনর্থের মূল। এই ধারণা সত্য নয়। অর্থ ক্ষুধার্তকে অন্ন জোগায়, অসুস্থকে ওষুধ জোগায়, দুঃস্থকে বস্ত্র জোগায়। অর্থের দ্বারাই এই সবকিছু ক্রয় করা যায়।

আমাদের দুরকমের শিক্ষার প্রয়োজন। আমাদের শিখতে হবে কী করে জীবিকা অর্জন করতে হয় এবং সেইসঙ্গে কিভাবে জীবনযাপন করতে হয়।

অনেকেই তাদের জীবিকাতে এমনভাবে মশগুল হয়ে যায় যে তাদের পরিবারের প্রতি মনোযোগ দেয় না। নিজের স্বাস্থ্য ও সামাজিক দায় দায়িত্বের প্রতিও উদাসীন হয়ে পড়ে। জিজ্ঞাসা করলে তারা বলেন যে তার পরিবারের অন্নসংস্থানের জন্যই অন্যান্য বিষয়ে উদাসীন হয়েছেন। কিন্তু এই উদাসীনতা জীবনের পক্ষে ক্ষতিকর।

জীবিকার তাড়নায় আমরা যখন বাড়ি থেকে কাজের জায়গায় যাই, বাচ্চারা তখন ঘুমায়, আবার যখন আমরা বাড়ি ফিরি তখনও ওরা শুয়ে পড়ে। ২০ বৎসর এই রকম চলার পর, যখন আমরা ফিরে তাকাই তখন আর আমাদের পরিবারকে খুঁজে পাই না-এই অবস্থা মর্মান্তিক।

পরিমাণ নয়, গুণগত মান (Qyality not quantity)

অনেকে বলেন পরিবারের সঙ্গে কতটা পরিমাণ সময় কাটাচ্ছি, তার থেকে অল্প সময়ের মধ্যেই কিভাবে পরিবারকে সাহায্য করছি, সেটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভালো করে ভেবেদেখুন এই ধারণা প্রকৃত সত্য কিনা।

ধরুন আপনি শহরের সবচেয়ে ভালো একটি রেস্তরাতে গিয়েছেন। সেখানে ইংল্যান্ড থেকে আনা কাটা-চামচ, ফ্রান্স থেকে আনা কাপ-ডিস সুইজারল্যান্ড থেকে আনা চকোলেট দিয়ে টেবিল সাজিয়ে আপনাকে আপ্যায়ন করলো। আপনি সোনার পাতের ওপর খোদাই করা খাদ্যতালিকা নিয়ে ১ প্লেট বারবিকিউ চিকেন দেওয়ার আদেশ দিলেন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই পরিচারক খুব সুস্বাদুভাবে তৈরি মুরগীর একটি ছোট অংশ আপনার জন্য নিয়ে এলো।

সেটি খাওয়ার পর আপনি জিজ্ঞাসা করলেন, এইটুকু মাত্র, আর কিছু নেই। পরিচারক জবাব দিল, পরিমান নয়, গুণগত মানই এখানে বিবেচ্য। আপনাকে বলতেই হল যে, আপনার তখনও ক্ষুধা মেটেনি, কিন্তু পরিচারক আপনাকে একই জবাব দিল।

আশা করি ব্যক্তব্যটি পরিষ্কার করে বোঝানো গিয়েছে অর্থাৎ গুণগত মানেই সব চাহিদা মিটে যায় না। গুণগত মানও যেমন প্রয়োজন, তেমনি পরিমানও প্রয়োজন। আমাদের

পরিবারের জন্য দুইয়েরই প্রয়োজন আছে।

স্বাস্থ্য (Health)

অর্থ উপার্জন করতে গিয়ে আমরা স্বাস্থ্য নষ্ট করি এবং পরে স্বাস্থ্য উদ্ধার করতে গিয়ে অর্থ নষ্ট করি।

সামাজিক দায়িত্ব (Social responsibility)

অর্থ উপার্জন করতে গিয়ে আমরা সামাজিক দায়িত্ব কে অগ্রাহ্য করি। অবস্থা এমনই সঙ্গিন হয়ে ওঠে যে অনন্যরা আমাদের সামাজিক ভাবে অগ্রাহ্য করতে শুরু করে।

আপনার লক্ষ্য পুখানুপুপ রূপে পরীক্ষা করুন (Scrutinize your goals)

যার কোনও লক্ষ্য নেই সে কখনও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় না। লক্ষ্য উচু না রাখা একটি বড় ভুল। যারা সফল হতে চান, তারা লক্ষ্যের দিকে নজর রাখেন-আর যারা হেরে যান, তারা সব সময় লক্ষ্যসাধনের বাধাকেই বড় করে দেখেন।

আমাদের লক্ষ্যকে এমন উঁচুতে নিবদ্ধ করা উচিত, যাতে আমরা লক্ষ্য সাধনে উদ্বুদ্ধ হই, অথচ অবাস্তব বলে হতাশার সৃষ্টি না করে। আমরা যা করি তা হয় আমাদের লক্ষ্যের কাছাকাছি নিয়ে যায়, অথবা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে অন্য পথে চালিত হই।

প্রত্যেকটি লক্ষ্যকেই নিম্নলিখিত মানদভের নিরিখে মূল্যায়ন করা উচিতঃ

(১) এই লক্ষ্যের মধ্যে কতটা সত্য আছে?

(২) এটি কি সংশ্লিষ্ট সকল ব্যক্তির প্রতি সুবিচার করবে?

(৩) এর ফলে কি আমি আস্থা অর্জন করবো?

(৪) এই লক্ষ্য কি আমাকে স্বাস্থ্য, সম্পদ ও মানসিক শান্তি দিতে সক্ষম হবে।

(৫) এই লক্ষ্য কি আমার অন্যান্য লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ?

(৬) আমি কি লক্ষ্য সাধনে নিজেকে উৎসর্গ করতে পারি?

নিম্নলিখিত উদাহরণগুলি এই মানদভের পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হয়েছেঃ

(ক) যদি লক্ষ্য হয় যে আমার অর্থিক অবস্থা যাই হোক না কেন, আমি সুস্বাস্থের দৃষ্টান্তস্থল হব। তাহলে খুব স্বাভাবিক দেখা যাবে যে, কিছুদিন পরে স্বাস্থ্যরক্ষা করা কঠিন হচ্ছে। এর অর্থ, আমার লক্ষ্য অন্যান্য লক্ষ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

(খ) একজন মানুষ অনেক অর্থ উপার্জন করতে পারে কিন্তু যদি তার ফলে তার পরিবার ও স্বাস্থ্য নষ্ট হয়, তাহলে তার কোন মূল্য থাকে না। তাই নয় কি?

(গ) এক ব্যক্তি মাদক দ্রব্য বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা রোজগার করতে পারে। কিন্তু তারপর তাকে জীবনের অবশিষ্টাংশ আইনের হাত থেকে বাঁচার জন্য পালিয়ে বেড়াতে হবে। ফলে তার মানসিক শান্তি থাকবে না। এবং তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও ব্ৰিত হবে, তার উপর আস্থাও থাকবে না। সেই জন্য প্রত্যেকটি লক্ষ্য এই মানদন্ডে মূল্যায়ন করা উচিত এবং জীবনের সব লক্ষ্যগুলি পরস্পরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত।

(ঘ) লক্ষ্য লাভের জন্য কর্মপ্রচেষ্টা না থাকলে সমস্ত লক্ষ্যই শূন্য স্বপ্নের মতো হয়ে যায়। কাজের দ্বারা স্বপ্নকে নিদিষ্ট লক্ষ্যে পরিণত করতে হয়। যদি আমরা লক্ষ্যভ্রষ্ট হই, তবুও আমরা সব বিষয়ে ব্যর্থ হবো না। লক্ষ্য লাভে বিলম্বের অর্থ ব্যর্থতা নয়। কেবল লক্ষ্য সে জন্য পুনরায় অন্য পরিকল্পনা রচনার প্রয়োজন হয়।

ভালো ছবি নেওয়ার জন্য যেমন ক্যামেরার ফোকাস গড়ার প্রয়োজন হয়, তেমনি সৃজনশীল জীবন যাপনের জন্য লক্ষ্যের দরকার।

লক্ষ্য আমাদের মূল্যবোধের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়া উচিত (goals should be consistent with our values?)

লক্ষ্য জীবনের উদ্দেশ্যসাধনের দিকে নিয়ে যায়। এটি সাফল্যের সোপান। চাদের জন্য লক্ষ্য স্থির করুন যদি আপনি লক্ষ্যভ্রষ্টও হন, আপনি অন্তত একটি তারকা হতে পারবেন। যখন আপনি লক্ষ্য থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেন, তখন বাধাগুলি ভয়াবহরূপ ধারণ করে-হেনরি ফোর্ড (Henry ford)। আমাদের প্রত্যেকেরই জীবনের একটা উদ্দেশ্য আছে এবং প্রত্যেক মানুষের উদ্দেশ্য পৃথক। একটি অর্কেস্ট্রার সব বাদকরা যদি একই যন্ত্র বাজার তবে তাতে ঐক্যতান সৃষ্টি হবে না, অকৃষ্ট্রা হবে অর্থহীন।

ক্ষুদ্র পরিকল্পনা কোরোনা, কারণ তাতে মানুষের রক্তে তরঙ্গ তোলার ইন্দ্রজাল নেই। বড় পরিকল্পনা করো, লক্ষ্য উঁচু রেখে আশা এবং কর্মোদ্যম নিয়ে লক্ষ্য লাভের চেষ্টা কর।-Daniel H. Bumham

বর্তমানে আমাদের অবস্থান কোথায়-এই প্রসঙ্গ অর্থহীন। আমরা কোন লক্ষ্যে যাত্রা করছি সেই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। উদ্দেশ্য ব্যতীত মানুষের চেষ্টা এবং সাহস নষ্ট হয়। উদ্বেগের ফলে লক্ষ্য নেতিবাচক হয়ে যায়। সে সমস্ত ঘটনা ঘটলে লক্ষ্যের পথে বিঘ্ন সৃষ্টি হবে সেই সমস্ত ঘটনার সম্ভবনায় আশঙ্কিত হয়ে থাকার নামই উদ্বেগ।

ব্যর্থ প্রচেষ্টার অর্থ কর্ম সম্পাদন নয়। (Activity is not the same as accomplishment)

কাজ করা এবং সফলভাবে কাজ শেষ করার মধ্যে অনেক তফাৎ আছে।

ফেব্রি নামে এক ফরাসী বৈজ্ঞানিক একদল পুঁয়োপোকা পরীক্ষা করে দেখিয়েছিলেন। সামনে যে থাকে, ওয়াপোকা তাকে অন্ধভাবে অনুসরণ করে।

ফেব্রি একটি বৃত্তাকার ফুলদানীতে শুয়োপোকাদের এমন ভাবে চালনা করলেন যে, সামনের শুয়োপোকাটি প্রকৃতপক্ষে দলের পিছনে এসে গেল। খাবার হিসাবে পাইন গাছের কিছু ফুল মাঝখানে রেখে দেওয়া হল। শুয়োপোকাগুলি বৃত্তাকারে, সেই ফুলদানির মধ্যে ঘুরে বেড়াতে থাকলো, অবশেষে এক সপ্তাহ এই ভাবে ঘোরার পরে ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত হয়ে মারা গেল, যদিও সামনেই তাদের খাদ্য পাইনের ফুল রাখা ছিল। এই শুয়োপোকা গুলির ব্যবহার থেকে একটি শিক্ষনীয় বিষয় আছে।

কিছু করলেই যে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়া হচ্ছে এরূপ মনে করা ঠিক নয়। লক্ষ্যের পথে কতদূর অগ্রসর হওয়া গেল তা জানার জন্য কাজের মূল্যায়ন প্রয়োজন।

এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে গাড়ি করে নিয়ে বেরিয়েছিলেন। কিছুক্ষণ পরে স্ত্রী বললেন, আমরা বোধহয় ভুল পথে যাচ্ছি। স্বামী জবাব দিলেন, তাতে কিছু যায় আসে না, আমরা দারুণভাবে নিজেদের উপভোগ করছি।

আমরা যদি কেবল কাজকরা এবং কার্যসিদ্ধির নিদিষ্ট লক্ষ্যে কাজ করার মধ্যে গুলিয়ে ফেলি, তাহলে আমরা মজা উপভোগ করব বটে, কিন্তু লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হতে পারব না।

অর্থহীন লক্ষ্য (meaningless goals)

এক চাষীর এক কুকুর ছিল, সে রাস্তার ধারে গাড়িআসার জন্য অপেক্ষা করতো। গাড়ি এলেই চিৎকার করতে করতে গাড়ির সঙ্গে দৌড়ে গাড়িকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতো। একদিন এক প্রতিবেশী চাষীকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কি মনে হয় কুকুরটি গাড়ির সঙ্গে দৌড়ে পাল্লা দিয়ে পারবে? চাষী জবাব দিল, পারবে কি পারবে না, তার জন্য আমার চিন্তা নেই, আমার ভাবনা যদি একদিন গাড়িকে টেক্কা দিয়ে যায়, তাহলে কী অবস্থা হবে?

অনেক মানুষই কুকুরটির মতো অর্থহীন লক্ষ্যের দিকে দৌড়ায়।

 

কাজের পরিকল্পনা (Action plan)

১. নিদিষ্ট লক্ষ্য স্থির করুন।

২. সেই লক্ষ্যগুলি নিখে ফেলুন।

৩. দিনে ২বার সেই লক্ষ্যগুলি পড়ুন, সকালে একবার ও রাত্রে একবার।

৪. লক্ষ্যগুলিকে নাগালেরর সামান্য বাইরে রাখুন কিন্তু যেন দৃষ্টি বাইরে না যায়।

৫. কাজের অগ্রগতি মাঝে মাঝে পরীক্ষা করুন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *