2 of 4

২.১৪ বুলুকিয়ার কাহিনী

বুলুকিয়ার কাহিনী

রানীর প্রজা বারো হাজার সর্প কন্যা আর জ্ঞানী তাপস ড্যানিয়লের ছেলে হাসিবকে রানী যমলিক গল্প বলবে। সাপকনারা বসে আছে সোনা-রূপার আসনে আর হাসিব বসে আছে পান্না-আসনে; গল্প শুরু হলো :

কোন এক রাজ্যে বানু-ইসরায়েল নামে এই নৃপতি রাজত্ব করতেন। রাজা মৃত্যু শয্যায় তার সিংহাসনের উত্তরাধিকারী একমাত্র পুত্র বুলুকিয়াকে ডেকে বললেন!—বুলুকিয়া, আমার মৃত্যুর পর আমার সিংহাসনে বসে তুমি প্রথমেই একটা কাজ করবে।–রাজপ্রাসাদের যাবতীয় সম্পত্তির যে যত ক্ষুদ্র আর ছোট হোক না কেন, একটা ব্যক্তিগত ফৰ্দ বানাবে। আর, ভালোভাবে পরীক্ষা না। করে প্রাসাদের বাইরে কোন জিনিস বেরোতে দেবে না।

নৃপতির পরোলোকগমনে পুত্র বুলুকিয়া সিংহাসনে বসেই বাবার আদেশ মেনে কাজ শুরু করে দিলো। সমস্ত ঐশ্বর্য, জিনিসপত্র পরীক্ষা করতে শুরু করলো। অনেকগুলো হলঘরে ধনদৌলত জমিয়ে রাখা হত। হলগুলোর দরজা খুলে ঘুরে ঘুরে দেখলো। দেখতে-দেখতে একটা গোপন ঘরের সামনে চলে এলো। ঘরের মাঝখানে দুটো পাথরের থামের ওপর একটা আবলুস কাঠের সিন্দুক দেখতে পেলো। সিন্দুকের ডালা খুলে একটা সোনার বাক্স দেখতে পেলো। সোনার বাক্সে ছিলো এক সোনার পুথি। পুথি খুলে দেখলো গ্ৰীক ভাষায় লেখা রয়েছে—

যে ব্যক্তি মানব, জিন, পক্ষী ও পশুর নৃপতি ও মনিব হইতে চাহেন তীহাকে একটি অঙ্গুরীয় পরিধান করিতে হইবে। ধর্মপ্রচারক সুলেমান সাহেব এই অঙ্গুরীয়টি পরিধান করিয়াছিলেন। সে মহাত্মন, সপ্ত সমুদ্রতীরে সমাধিস্থ। তঁহার আঙুলে অঙ্গুরীয়টি বিদ্যমান। এই দৈবজ্ঞা অঙ্গুরীয় আদি পিতা আদম বেহেস্তে পরিয়া থাকিতেন। বেহেস্ত হইতে পতনের পূর্ব পর্যন্ত তাঁহার আঙুলে ইহা ছিলো। আদমের নিকট হইতে দেবদূত গ্যাব্রিয়েল ইহা পাইয়াছিলেন। তৎপর, তিনি ইহা মহাত্মন সুলেমানকে প্রদান করিয়াছিলেন। সপ্ত সমুদ্র পার হইয়া নির্দিষ্ট দ্বীপে পৌঁছিবার ক্ষমতা কোন তরীরই নাই। এক রকম যাদু বৃক্ষ-রস বিদ্যমান যাহা পদপ্রান্তে লেপন করিলে অনায়াসে সমুদ্র লঙ্ঘন করা সম্ভব। এই বৃক্ষরস সহজলভ্য নহে। কেবলমাত্র ভাগ্যবান মানবসন্তান ইহা হস্তগত করিতে পারে। পাতালে রাজত্ব করেন রানী যমালিকা। তাঁহার সাম্রাজ্যে এবম্বিধ বৃক্ষ জন্মাইয়া থাকে। সেই সাম্রাজ্যে এই সন্দেশ রানী ব্যতীত অন্য কাহারো গোচরে নাই।

বাক্যালাপও করিয়া থাকেন। বৃক্ষ-লতা-ফুল-ফল ধর্ম এবং চরিত্র সম্বন্ধে তাহার বিপুল জ্ঞান রহিয়াছে। অতএব, যে ব্যক্তি সেই দৈবজ্ঞ অঙ্গুরীয় অর্জন করিতে চাহেন, তঁহাকে সর্বপ্রথমে পাতালে যমালিকার সাম্রাজ্যে গমন করিতে হইবে। সেই অঙ্গুরীয় যে মানবসন্তান হস্তগত করিতে পরিবেন। তিনি কেবল সমুদয় প্রাণীজগতের অধীশ্বরই হইবেন না, উপরন্তু যবনিকা প্রদেশে গমন করিয়া অমৃতবারি পান করিতে সক্ষম হইবেন, ইহাতে সন্দেহ নাই। অমৃতসুধা পানে রূপ, যৌবন অর্জিত হয় এবং জ্ঞান ও অমরত্ব লাভ করা যায়।

ভোর হয়ে আসছে দেখে গল্প বলা থামালো শাহরাজাদ।

 

তিনশো ছাপ্পান্নতম রজনী :

পরের দিন রাত্ৰিতে আবার শাহরাজাদ গল্প শুরু করলো :

চামড়ার পুঁথি পড়ে বুলুকিয়া তার রাজ্যের সমস্ত মৌলভী, জাদুকর আর দরবেশোদের ডেকে পাঠালেন। সকলে সভায় এলে সে জিজ্ঞাসা করলো-আপনাদের মধ্যে এমন কেউ আছেন কি যিনি আমাকে পাতালের রানী যমালিকার সাম্রাজ্যে নিয়ে যেতে পারেন?

এই কথা শুনে সকলে মহাজ্ঞাণী অ্যাফানকে দেখিয়ে দিলেন। বিরাট পণ্ডিত এই বৃদ্ধ দুনিয়ার সর্বশাস্ত্রে পারদর্শী। তিনি যাদুবিদ্যা জানেন, মহাকাশ ও জ্যামিতি বিদ্যা তার পূর্ণ আয়ত্বে। অপরসায়ন বা ইন্দ্রজালেও তিনি সিদ্ধদস্ত।

আসন ছেড়ে রাজার কাছে উঠে গিয়ে অ্যাফানকে জিজ্ঞাসা করলো-মহাজ্ঞানী অ্যাফান সেই পাতালের রানীর কাছে আমাকে আপনি নিয়ে যেতে পারবেন কী?

—হ্যাঁ; পারব।

উজিরের ওপরে রাজ্য পরিচালনার ভার দিয়ে বুলুকিয়া রাজার পোশাক ছেড়ে পরিব্রাজকের বেশ ধরলো। পায়ে দিলো তীর্থযাত্রীর পাদুকা। তারপরে, অ্যাফানের সঙ্গে নগর ত্যাগ করে চলে গেলো। প্রথমেই পড়লো মরুভূমিতে। অনেকটা পথ এগিয়ে অ্যাফান একটা জায়গা দেখিয়ে বললেন—এইটি হলো উপযুক্ত স্থান। ইন্দ্রজালের সাহায্যে আমাদের পথ খুঁজে নিতে হবে।

তারপরে বৃদ্ধটি একটা নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে দাঁড়ালেন। নিজের চারধারে টেনে দিলেন একটা গণ্ডী। বিড়বিড় করে উচ্চারণ করলেন যাদু মন্ত্র। মন্ত্রটা উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গে পাতালের একটা পথ বেরিয়ে পড়লো। এইটিই পাতাল সাম্রাজ্যের প্রবেশের পথ। ওই পথে দু’জনে একসঙ্গে যেতে পারে না। বৃদ্ধ নানারকম আদিভৌতিক ক্রিয়াকলাপ করলেন। তারপরে পথটি প্রশস্ত হলো। এই পথ দিয়ে দু’জনে এই সরোবরের তীরে এসে পৌঁছলো। সরোবরটি তোমারই চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছ হাসিব।

তাঁদের আমি সাদরে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলাম। আমার সাম্রাজ্যে যাঁরাই আসেন তাঁদের আমি এইভাবেই সম্বর্ধনা করে থাকি। তাঁরা তাদের আসার উদ্দেশ্য আমাকে জানালেন। তুমি আগেই দেখেছ সাপকন্যারা আমাকে গামলার ওপরে চাপিয়ে বয়ে নিয়ে আসে। সেদিনও আমি তাদের সেইভাবেই পান্না পাহাড়ে নিয়ে আসি। আসা-যাওয়ার পথে গাছপালারা তাদের ভাষায় আমার সঙ্গে কথাবার্তা বলে। ফুলের গন্ধের ভেতর দিয়ে আমরা সেদিন আসছিলাম। মৃদু সুরে বাজনা বাজাচ্ছিল সাপকন্যারা। চলতে-চলতে এক গোছা। লতার সামনে এসে দাঁড়ালাম। থোকা-থোকা লাল ফুল ফুটেছিলো তাদের মাথায়। ফিসফিস করে ফুলগুলি আমাকে বললো—আমার রস বড় চমৎকার। এই রস পায়ে লাগালে অনায়াসেই মানুষ পায়ে হেঁটে সমুদ্র পার হতে পারে।

আমি অতিথিদের বললাম-আপনারা যে গাছ খুঁজছেন-এ সেই গাছ।

তাদের হাতে একটা পাত্র দিলাম আমি। অ্যাফান খুশী মত ফুল তুলে রস নিংড়ে সেই পাত্রটা বোঝাই করলেন। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম—মহাজ্ঞাণী অ্যাপান, আপনারা দুজনে সমুদ্র পাড়ি দিতে যাচ্ছেন কেন?

অ্যাফান বললেন—তাহলে শোনো মহারাণী। সপ্ত সমুদ্রের পারে একটি দ্বীপ রয়েছে। সেখানে মহাত্মা সুলেমান কবরে শুয়ে রয়েছেন। তাঁর হাতের আঙটিটি আমরা খুলে আনতে চাই। সেই আঙটির দৌলতে তিনি সমস্ত জীবজগতের অধীশ্বর হতে পেরেছিলেন।

বললাম-এতো বড় অসম্ভব ব্যাপার। সুলেমানের আঙটি তাঁর পরে আর কেউ পরতে পারে। নি; পরবেও না। আমার কথা বিশ্বাস করুন। এ পরিকল্পনা পরিত্যাগ করুন আপনারা। হঠকারিতা করলে বিপদে পড়বেন। বুলুকিয়া, তুমি যুবক। তোমার সামনে অনন্তকাল পড়ে রয়েছে। পাগলামি করো না। বরং আমি তোমাকে একটা গাছ দেখিয়ে দিচ্ছি। এই গাছের পাতা খেলে তুমি অনন্ত যৌবন লাভ করবে।

কিন্তু আমার কথা তাঁরা কানেই তুললেন না। যে-পথে এসেছিলেন সেই পথেই চলে গেলেন।

এই বলে থামলেন রানী; একটা কলা তুলে হাসিবকে দিলেন, নিজে মুখে পুরলেন একটা ডুমুর। তারপরে বললেন-বুলুকিয়ার গল্প এখনও শেষ হয়নি। সমুদ্রের ওপরে কেমন করে তারা দুঃসাহসিক অভিযান চালিয়েছিলেন সে-কাহিনী তোমাকে আমি পরে বলব। তার আগে, আমার সাম্রাজ্য ঠিক কোনখানে অবস্থিত, এর চারপাশে পৃথিবীর কোন কোন রাজ্য রয়েছে, আর প্রতিবেশী রাজ্যগুলিতেই বা কারা থাকে-এসব জানতে ইচ্ছে করে না তোমার? পান্নার পাহাড়ের ওপর দিয়ে কাফে চলে গিয়েছে। কাফ-য়ের ঠিক কোন জায়গায় জিনিস্তান সে কথাও তোমাকে আমি বলব। এই জিনিস্তান হচ্ছে জিনোদের রাজধানী। এখানকার রাজার নাম হচ্ছে জান বিন জানি। হীরার মালভূমিতে পাহাড় কেমন করে বেঁচে থাকে সেকথাও তোমাকে বলব আমি। একটা যুদ্ধক্ষেত্রের কথা তোমাকে বলব। এখানে পুরানো বীরদের গাথা সঙ্গীত ছড়িয়ে রয়েছে।

হাসিব বললো।—মহারানী, আমাকে আপনি রাজা বুলুকিয়ার অভিযানের কাহিনীই বলুন।

রানী বলতে শুরু করলেন-রাজা বুলুকিয়া আর অ্যাফান আমার সাম্রাজ্য ছেড়ে দেশে ফিরে গেলেন। তারপরে সপ্তসমুদ্র পাড়ি দেওয়ার জন্যে প্রথম সমুদ্রের পাড়ে এসে দাঁড়ালেন। পাড়ে বসে সেই ফুলের রস নিজেদের পায়ের তলায় মাখলেন। তারপরে জলের ওপর দিয়ে হাঁটতে লাগলেন খুব সাবধানে। কিছুক্ষণ পরে বুঝতে পারলেন-বেশ হেঁটে যাচ্ছেন তারা। ডুবে যাওয়ার ভয় আর নেই। আর দেখে কে? সময় যাতে বৃথা নষ্ট না হয়। এইভাবে দৌড়তে লাগলেন তাঁরা। এইভাবে তিনটে দিন আর তিনটে রাত তীরা অতিক্রম করলেন। চতুর্থ দিন সকালে একটা দ্বীপে পৌঁছলেন। কী সুন্দর দ্বীপ! এটা কি তাহলে বেহেস্ত?

এই সময় ভোরের পাখি ডেকে উঠলো। গল্প থামালো শাহরাজাদ।

পরের দিন রাত্ৰিতে শাহরাজাদ। আবার গল্প বলতে শুরু করলো।

দ্বীপের বেলাভূমি যেন গৈরিক বসন পরে রয়েছে। দূরে চুণির পাহাড়। বেলাভূমির পরেই শুরু হয়েছে বিস্তীর্ণ সবুজ ক্ষেতের বাগান। ফুটেছে নানান জাতের সুগন্ধী ফুল। তাদের গন্ধে ভরে উঠেছে বাতাস। গোলাপের পাশে পদ্মফুল বড়ই সুন্দর মানিয়েছে। বেগনে ফুলের পাশে সাদা গন্ধরাজকে দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। বনে-বনে পাতার অবিশ্রাম মর্মর ধবনি মনকে আনমনা করে তুলে। ঘৃতকুমারীর জংগলের মাঝে বড়-বড় ফুলগাছের বিন্যাস সত্যিই বড় সুন্দর। সমুদ্রের গর্জনের ফাঁকে-ফাঁকে গাছের আড়াল থেকে ভেসে আসছে ঘুঘুপাখির ডাক। নাইটেংগল পাখি শোনাচ্ছে তার প্রেমবিধুর রানী গোলাপের কানে-কানে! গোলাপ সেই কাহিনী শুনছে। সমঝদারের মত তার মাথা নাডিয়ে নাডিয়ে। আখের ক্ষেতের ভেতর দিয়ে ছলছল শব্দে বয়ে চলেছে তরঙ্গিণী। প্রকৃতি রূপ, রস, আর গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছে। এখানে যেন কোন দুঃখ নেই। কোন শোক নেই, এই ধরাধামেই কি বেহেস্ত নেমে এসেছে? তাঁরা দুজনে মুগ্ধ হয়ে দেখতে লাগলেন চারপাশ। বুলুকিয়া আর অ্যাফান মনোরম দৃশ্য দেখে দেখে সকাল বিকেল ঘুরে বেড়ালো। ছায়াবীথি শরীর মন তাজা করে দিলো। গোলাপের ওপর শিশির টলমল করছে মুক্তার মত। বুলুকিয়া তার ওপর গাল রেখে ফুলের সুবাস ও পেলাব স্পর্শ নেয়। শ্রান্ত মন হয়ে উঠলো। স্থির। এভাবে ওরা সন্ধ্যে পর্যন্ত মন্থর পায়ে এক বীথি থেকে অন্য বীথিতে ঘুরে বেড়ায়। সন্ধ্যা নেমে আসে। ওরা রাত কাটাবার জন্য একটা গাছে উঠে বসে। ঘুমে চোখের পাতা একটু জুড়ে আসতেই দ্বীপটিা হঠাৎ কেঁপে ওঠে। প্রচণ্ড একটা গাগা শব্দ ভেসে এলো। দ্বীপটিার নীচে থেকে কে যেন ঝাঁকুনি দিচ্ছে। মনে হলো সমুদ্রের ঢেউয়ে ভেতর থেকে একটা দৈত্য উঠে আসছে। প্রকাণ্ড একটা পাথর তার মুখে। আগুনের মত সেটা জ্বলছে। তাতে সমস্ত দ্বীপটা আলোকিত হয়ে উঠলো। দৈত্যটার পেছনে আরো কতগুলো দৈত্য অমনি করে উঠে আসছে। অসংখ্য বাঘ সিংহ আর চিতা এসে দাঁড়ালো সমুদ্রের তীরে। অগুণতি পশুর সংখ্যা আল্লা ছাড়া কেউ বলতে পারবে না। সমুদ্রে দৈত্যাকার পশুদের সঙ্গে ডাঙ্গার পশুরা মিলেমিশে সারাটা রাত কাটালো বেলাভূমিতে। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে প্রথম দৈত্য যে পথে এসেছিলো সেই পথেই ফিরে গেলো সে। তার পেছনে পেছনে একই ভাবে মিলিয়ে গেলো। আর সব সামুদ্রিক জানোয়ারগুলো। এদিকে বনের পশুরাও বনে ফিরে গেলো।

এই লোমহর্ষক দৃশ্য দেখে বুলুকিয়া ও অ্যাপোন আতঙ্কে আর দুশ্চিন্তায় দু চোখের পাতা সারা রাত আর এক করতে পারেনি। দুজনে তাড়াতাড়ি গাছ থেকে নেমে সমুদ্র তীরে দৌড়ে গিয়ে পায়ের পাতায় সেই ফুলের নির্যাস ঘষতে লাগলেন।

এবার দ্বিতীয় সমুদ্র পেরোতে লাগলেন পায়ে হেঁটে। দিন রাত এক নাগাড়ে বহুদিন হেঁটে এক বিশাল পর্বতমালার কাছে এসে দাঁড়ালেন। ছোট একটি উপত্যকা দেখা গেলো। ছোট ছোট সুন্দর নুডি পাথরে পূর্ণ উপত্যকটি। সেগুলি সাধারণ পাথর থেকে একেবারে আলাদা। দিনটা তারা শুটকি মাছ খেয়ে কাটালেন। বিকালে এসে বসলেন আবার বেলাভূমিতে। দেখলেন সূর্যস্ত। সমুদ্রের সূর্যস্ত এর আগে ওরা অনেক দেখেছে। কিন্তু এই নির্জন নিম্প্রাণ পাথরের দ্বীপে সূর্যাস্তের একটা অব্যক্ত কথা ওরা যেন বুঝতে চাইছে। সূর্যাস্তের প্রায় সঙ্গে সঙ্গে একটা বিকট আওয়াজ শুনে পেছনে ফিরতেই দেখলেন একটা বিরাট বাঘ ওদের দিকে ছুটে আসছে। দৌড়ে আর পালাবে কোথায়? তাড়াতাড়ি পায়ের পাতায় গাছের রস মেখে সমুদ্রের ওপর দিয়ে দৌড়াতে লাগলেন। এই অদ্ভুত দৃশ্য দেখে বাঘটা ফ্যালফাল করে সমুদ্রের ধারে দাঁড়িয়ে রইলো কিছুক্ষণ। হঠাৎ পিছনের দিকে ফিরে পড়ি কি মারি করে লেজটা একটু গুটিয়ে বাঘাটা দিলো ছুট।

এবার ওরা তৃতীয় সমূদ্র পাড়ি দিচ্ছে। ঝোড়ো হাওয়া বইছে। মেঘে মেঘে সারা আকাশ ঢেকে রয়েছে। নিকষ কালো সমুদ্রের রঙ। ঝড়ের বেগে বিরাট ঢেউগুলি রাগে ফুসছে। ওরা যেন মত্ত হাতির পিঠের ওপর দিয়ে হাঁটছে। অনেক দিন ধরে ওরা ঘুমুতে পারেনি। তারপর একনাগাড়ে এই হাঁটা। ঝড় ঝনঝার মধ্যে পড়ে ওরা আর পা চালাতে পারছে না। হাঁটু ভেঙ্গে আসছে। তবু দেহটাকে টেনে টেনে হেঁটে চলেছে দুজনে। সৌভাগ্যবশতঃ ভোর রাতে এসে পৌঁছলো একটা দ্বীপে। পাড়ে পৌঁছেই শুয়ে পড়লো। আর সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়েও পড়লো! ঘুম থেকে জেগে উঠে। ওরা দ্বীপটার গভীরে ঢুকে পড়। চারদিকেই ফলের গাছ, আর কত না ফল ধরে আছে সেগুলিতে। সব ফলই যেন চিনি ভরা। পেট ভরে দুজনে ফল খেলো। বুলুকিয়া মিষ্টি খাবার খুব ভালোবাসে। ও একটু বেশীই খেয়ে ফেললো। সারাদিন ধরে ফল খাচ্ছে তো খাচ্ছেই। সে অ্যাফানকে বললো :

—এখানে আরো দিন দশেক থেকে যাই, কি বলুন? এত সুন্দর সুন্দর নানারকমের লোভনীয় ফলগুলি পুরো স্বাদ নিতে গেলে কম করে দশ দিন তো লাগবেই।

ওর অনুরোধে সায় দিলেন অ্যাফান। তা ছাড়া, একটু বিশ্রামও তো দরকার।

ফলগুলির চরিত্র বড় অদ্ভুৎ। চিনির আধিক্যে ফলের গায়ে মিছরির মত জমাট বেঁধে রয়েছে। দশ দিন ধরে বুলুকিয়া কেবল রাশি-রাশি ফলই খাচ্ছে। এত চিনি পেটে তার সইবে কেন? দশ দিনের দিন তার পেট কামড়াতে শুরু করলো। কিন্তু আর তো দেরী করা চলে না। পায়ের পাতায় সেই রস মেখে আবার শুরু হলো যাত্রা। চতুর্থ সাগরে পড়লো ওরা।

একটানা চার দিন আর চার রাত হাঁটার পরে তারা একটা ছোট দ্বীপে এসে হাজির হলো। সমস্ত দ্বীপটাই সাদা বালিতে ভরা। চেনা-অচেনা নানান জাতের সরীসৃপ এখানে গর্তের ভেতর থাকে। মাঝে-মাঝে ডিম পাড়তে বাইরে আসে। রোদের আলো সেই ডিম তা দিয়ে ফোটায়। এখানে গাছ দূরের কথা এক মুঠো ঘাসও কোথাও নেই। এখানে থাকা যে আদৌ নিরাপদ নয় ওরা সেটা বুঝতে পারে। কিন্তু কী আর করবে। তাই একটুখানি বসে পায়ের গোড়ায় নতুন করে রস ঘষতে থাকে। সমুদ্র পেরিয়ে একবার ডাঙায় উঠলে আবার রস লাগাতে স্বয়। সেই রস মেখে আবার তারা সমুদ্রে নেমে পড়লো।

পঞ্চম সমুদ্র পেরোতে তাদের লাগলো মাত্র এক দিন আর এক রাত। ভোর বেলা তারা এসে পৌঁছলো একটা অদ্ভুত দ্বীপে। এখানকার পাহাড়গুলির চুড়ায় সোনার তাল জমাট বেঁধে রয়েছে। দ্বীপে অনেক-অসংখ্য গাছ। গাছে-গাছে উজ্জ্বল হলুদ রঙের ফুল ফুটে রয়েছে অজস্র। রাত্রিতে তারা তারার মত জুলজুল করে জ্বলে। পাহাড়ের স্বচ্ছ পাথরের ওপরে ফুলের রঙ প্রতিফলিত হওয়ার ফলে সমস্ত দ্বীপটি একটি অপরূপ মায়ার রাজত্বে পরিণত হয়। দিনেও ফুলগুলি জ্বলে; তবে বোঝা যায় না।

অ্যাফান বুলুকিয়াকে বললেন–এই হলো সোনালি ফুলের দ্বীপ। অনেক-অনেক কাল আগে সূর্যের এক টুকরো ছিটকে এসে পড়েছিলো এইখানে। এই দ্বীপটা সেই টুকরো।

সারা রোতই অদ্ভুৎ আলোর রোশনাই দেখে তাঁরা কাটালেন সেইখানে। ভোর হওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে পায়ে রস মেখে আবার তাঁরা নেমে পড়লেন সমুদ্রে। এইটি হলো ষষ্ঠ সমুদ্র।

ভোর হয়ে আসছে দেখে থেমে গেলো শাহরাজাদ।

 

তিনশো সাতান্নতম রজনী :

ষষ্ঠ সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ওঁরা এক মনোরম বেলাভূমিতে এসে পড়লেন। এই দ্বীপটি ঘন জঙ্গলে পরিপূর্ণ। বনের শেষে শুরু হয়েছে সমুদ্র; আর সমুদ্রের পরে শুরু হয়েছে অরণ্যানি। সেই মনোরম বনের ছায়ায় বসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার পরে তীরা গভীর বনের দিকে এগিয়ে চললেন। কিছুটা গিয়েই তাদের আনন্দ পরিণত হলো আতংকে। এসব কীসের গাছ? গাছে কোন ফল নেই-ঝুলছে কেবল অগণিত মানুষের মাথা। মাথার চুলগুলি বোঁটার মত গাছের ডাল থেকে ঝুলছে। মুখগুলির অভিব্যক্তি সব এক নয়। কেউ হাসছে, কেউ কাঁদছে। গাছ থেকে যেগুলো খসে পড়েছে সেগুলো মাটিতে পড়েই ভীষণভাবে জ্বলতে শুরু করে। এই সব আজব ফলের কাছে এগোতে সাহস হলো না তাদের। পায়ে-পায়ে তারা ফিরে আসেন বেলাভূমিতে। তারপরে একটা পাহাড়ের আড়ালে সূর্যস্ত পর্যন্ত তাঁরা বসে রইলেন চুপচাপ। হঠাৎ বারোটি সাগরকন্যা বেলাভূমিতে উঠে নাচতে শুরু করলো। তাদের সব কটিই দেখতে সুন্দর। প্রত্যেকের গলাতেই মুক্তার হার। প্রায় ঘন্টাখানেক ধরে নানান ছলাকলা দেখালো তারা। আকাশে চাঁদ উঠলো। চাঁদের আলোয় রূপালি ঢেউ উঠলো চারপাশে। এইবারে গান ধরলো মেয়েরা। গান গাইতে গাইতে ঝাঁপিয়ে পড়লো সমুদ্রে। শুরু হলো তাদের জলকেলি। কেউ কেউ আবার উঠে এলো ডাঙায়।

এদিকে আর এক কাণ্ড। বনের গাছগুলি প্রতি মুহূর্তে যেন এক হাত করে লম্বা হচ্ছে। হয়ত তারা চাঁদকেও ঢেকে ফেলবে। গাছের ছায়া গায়ে এসে পড়তেই তাদের চমক ভেঙে গেলো। এতক্ষণ মোহিত হয়ে মেয়েগুলির নাচ দেখছিলেন। এখন সেই গাছগুলিকে দেখে আর তারা সেখানে থাকতে সাহস করলেন না। সঙ্গে সঙ্গে পায়ে বৃক্ষরস ঘষে সপ্তম সমুদ্রে ঝাপ দিলেন তারা।

সপ্তম সমুদ্রে পাড়ি দিতে লাগলো সবচেয়ে বেশী সময়। একটানা দিনরাত হেঁটে চললেন তারা। পায়ের তলায় বৃক্ষরস লাগানো। তাই তাঁরা বসতেও পারেন না, শুতেও পারেন না। টানা ছাটি মাস চললো। এইভাবে। সঙ্গে খাবার-দাবারও বিশেষ কিছু ছিলো না তঁদের। মাঝে মাঝে মাছ লাফিয়ে উঠছে। সমুদ্র থেকে। তাঁরা ধরে ধরে কাঁচা মাছই খেয়েছেন। অনেক কষ্টের পরে শেষ পর্যন্ত তাঁরা সপ্তম সমুদ্রের ধারে একটি দ্বীপে এসে পৌঁছলেন। নথিতে যেভাবে বলা ছিলো দূর থেকে হুবহু ঠিক সেইরকম দেখতে পেলেন তারা। অনেক দুঃখ, অনেক যন্ত্রণার শেষে অতি প্রাথিত ভূমিতে পদস্পর্শ করলেন তাঁরা। এই সেই সপ্ত সমুদ্রের দ্বীপ আর এখানেই সুলেমানের দেহ কবরে শায়িত আছে। সুলেমানের আঙুলে রয়েছে সেই আংটি।

এই দ্বীপটি খুবই সুন্দর। চারদিকে অসংখ্য ফল আর ফুলের গাছ। থরে থরে ফলগুলি পেকে রয়েছে। বেশ কয়েকটি ছোট ঝর্ণা পাহাড় থেকে নীচে নেমে এসেছে। কাঁচা মাছ খেয়ে ওদের থাকতে হত। তাও সব সময় পাওয়া যেত না, আভুক্তই থাকতে হত ওঁদের। তার ওপর দীর্ঘ পরিভ্রমণে শরীর শ্রান্ত, ক্লান্ত ও অবসন্ন। দেখে শুনে একটা আপেল গাছের দিকে ওঁরা এগিয়ে গেলেন। ফলের ভারে ডালগুলি মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। বুলুকিয়ার তর সইলো না। তাড়াতাড়ি যেই না হাত বাড়িয়ে একটা আপেল ছিঁড়তে গেলো আমনি গাছটা ধমকে উঠলো :

—এই গাছের ফলে হাত দিলে তোমাকে দুটুকরো করে ফেলা হবে।

সঙ্গে সঙ্গে এক বিরাটকায় দৈত্য ওঁদের সামনে এসে দাঁড়ালো।

বুলুকিয়া থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে বললো-দৈত্যরাজ, ক্ষিদে তেষ্টায় আমরা মরে যাচ্ছি। এ আপেল আমরা খেতে পাব না? কেন আপনি নিষেধ করছেন?

—তোমরা ভুলে গেছ, আমি কি করব! তোমরা মানুষের বাচ্চা। তোমাদের আদি পিতা আদম আল্লার নিষেধ অমান্য করে আপেল খেয়েছিলো, ভুলে গেছে? তা, তোমরা তো আল্লাকে মান না, যখন তখন তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা। তাই আমিই এ গাছ পাহারা দিই। এটা আমার কর্তব্য। এ গাছের ফলে যে হাত দেবে তাকে দু’খানা করে দিই। যাও ভাগো, অন্য জায়গায় খাবারের চেষ্টা করে।

বুলুকিয়া আর অ্যাফান প্রাণের ভয়ে ওখানে আর দাঁড়ালো না। দ্বীপের আরো ভেতরে গিয়ে অন্য ফল খেয়ে শরীর ঠাণ্ডা করলো। একটু বিশ্রাম নিয়ে সুলেমানের কবর স্থান খুঁজতে শুরু করলো।

পুরো একটা দিন আর রাত দ্বীপে ঘুরে বেড়ালো। শেষে ওরা একটা পাহাড়ের কাছে এসে পৌঁছল। পাহাড়ের পাথরগুলির রং নানারকমের। পাহাড়ের গা থেকে মৃগ নাভির সুগন্ধ ভেসে আসছে। সামনে চমৎকার একটা গুহা। ছাদ আর দেয়াল সব হীরের তৈরী। সূৰ্য্যের আলোর চেয়েও উজ্জ্বল। ওরা বুঝতে পারলো এটা সেই গুহা যেখানে সুলেমানের কবর আছে। ওরা গুহার ভেতরে ঢুকলো। যতই এগোচ্ছে গুহার জ্যোতি ততই বাড়ছে! সঙ্গে সঙ্গে ছাদটাও যেন উঁচু হতে হতে আকাশ ছুঁয়ে ফেললো। ওরা হেঁটে চলেছে অনন্তকাল ধরে। বাইরে বোধ হয় কয়েকটা দিন আর রাত গড়িয়ে গেছে, তবু ওরা হেঁটে চলেছে। একে অপরের সঙ্গে কথা বলছে না। একটা ঘোরে সামনে খালি এগোচ্ছে। হঠাৎ ওদের একজনের মনে হলো এ গুহার কি অন্ত নেই? সঙ্গে সঙ্গে গুহাটা যেন একটি হল ঘরের সামনে শেষ হলো। হলঘরটি একটা গোটা হীরে কেটে তৈরী করা হয়েছে। আর তার কি জ্যোতি বের হচ্ছে! ওরা ঘরের ভেতরে ঢুকলো। মনে কোন বোধ নেই, নেই কোন অনুভূতি। একটু বিবশ সত্বা নিয়ে দেখে ঘরের ঠিক মাঝখানে নিরেট সোনার পালঙ্গে ডেভিডের পুত্র সুলেমান শুয়ে আছেন। সবুজ মুক্তার জামা পরে শুয়ে আছেন তিনি। দেহ থেকে একটা দিব্যজ্যোতি বিচ্ছরিত হচ্ছে। এ জামাটি তিনি জীবদ্দশায় পরতেন। ডান হাতে সেই যাদু আংটিটি। আংটিটি ক্রমাগত জ্যোতি ছড়াচ্ছে! এ জ্যোতি হীরার দুতিকেও হার মানায়। আংটি পরা হাতটি বুকের ওপর রাখা। বাঁ হাত প্রসারিত। হাতে রাজদণ্ড এবং তাতে একটি মাঝারি আকারের চুনি বসানো।

অপার্থিব এক পরিবেশে ওঁরা বহুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন বিমূঢ় হয়ে। হয়ত সেই ক্ষণটি কয়েকটা দিনরাত কাবার করে দিয়েছে। এক সময় অ্যাফানের ধ্যান ভাঙ্গে কিন্তু আর এগোতে সাহস করলো না। বুলুকিয়াকে ফিসফিস করে বললেনঃ

-অনেক বিপদ, অনেক ফাঁড়া কেটে আমরা এখানে এসেছি। একটুর জন্য ফিরে যাব তা হয় না বুলুকিয়া! তুমি এখানে দাঁড়াও, মহাপুরুষ যেখানে নিদ্রিত আমি একাই সেখানে যাব। তোমাকে যেটা শিখিয়ে দিয়েছিলাম তুমি সেই মোহিনীমন্ত্র বলতে থাকবে। আর আমি মন্ত্র বলার মধ্যে ঝটপট আংটি খুলে আনব। আংটি খোলার মন্ত্র উচ্চারণে একদম ভুল করবে না, বুঝেছো?

বুলুকিয়া মোহিনী মন্ত্র পাঠ শুরু করলেন জোরে জোরে। অ্যাফান ধীরে ধীরে এগিয়ে যান সিংহাসনের দিকে। আস্তে আস্তে দৃঢ়ভাবে আঙ্গুলো হাত ছুঁয়ে আংটিতে চাপ দিয়ে বার করতে চেষ্টা করতে থাকেন। যুবক বুলুকিয়া উত্তেজনায় থরথর . করে কাঁপতে থাকেন। মন্ত্রটা উল্টো-পাল্টা হয়ে গেলো। শক্ত মন্ত্র আগে না বলে আহ্বান মন্ত্র ভুল করে আগে বলে দিলো। এ ভুল মারাত্মক। ফলে দীপ্যমান ছাদ থেকে এক ফোটা তরল হীরা বৃদ্ধের মাথায় পড়ল। সমস্ত শরীরটা দাউদাউ করে জ্বলে উঠল। পলকের মধ্যে বৃদ্ধের নশ্বর দেহ এক মুঠো ছাইয়ে পরিণথি হয়ে গেলো। সুলেমানের সিংহাসনের পায়ের কাছে ধুলাটুকু পড়ে রইলো শুধু!

বুলুকিয়ার উত্তেজনা তডিতে আতঙ্ক আর পাপবোধে পরিণত হলো—ছিঃ ছিঃ লোভে পড়ে দেবতার ঘরে ডাকাতি করতে এসেছিলো। দুঃখে ক্ষোভে চোখ ফেটে জল এলো তার। অ্যাফানের দেহাবশেষ শেষবারের মত দেখে ঘুরে এক দৌড়ে গুহা থেকে বেরিয়ে গেলো সে। ছুটতে ছুটতে সমুদ্রের দিকে গেলো। পায়ে অবশ্য সেই বৃক্ষরুস লাগাতে পারেনি। কিন্তু লাগাবে কি করে? রস ভর্তি পোত্র তো অ্যাফানের কাছে ছিলো। সুতরাং—

ভোর হয়ে এলো। শাহরাজাদ গল্প থামিয়ে চুপ করে গেলো।

 

তিনশো আটান্নতম রজনী :

পরদিন রজনীতে শাহরাজাদ। আবার শুরু করলো।

রানী যমলিকা বলছেন, বুলুকিয়া দুঃখে আফশোষে নিজের চুল ছিঁড়তে থাকে। আমি তাকে অনেক নিষেধ করেছিলাম। এই দুঃসাহসিক অভিযানে না যাবার জন্য। দুৰ্ভাগ্য সে এড়াতে পারবে না—এ আমি জানতাম! একা এক নির্জন দ্বীপে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়ালো। কি করবে: কোথায় যাবে কিছুই জানে না সে। নিজের কর্মফলে এখানে সে স্বজনহারা হয়ে পড়লো।

ঘুরতে ঘুরতে একটা বিরাট ধুলোর ঝড় দেখতে পেলো। ঝড়ের ভেতর থেকে প্রচণ্ড গোলমালের শব্দ আসছে। বাজ পড়ার চেয়েও জোরদার শব্দ। তরবারি, বর্শার ঝনঝনানির শব্দ যেন অমানুষিক আর্ত চীৎকারে ওর বুকে কাঁপনি ধরায়। হঠাৎ ধুলো ঝড় থেমে গেলো। অসংখ্য জিন, ইফ্রিত, প্রেতাত্মা আকাশ, বাতাস, মাটি, বালি, জঙ্গল, সমুদ্র ইত্যাদির যেখানে যত ভূত প্রেত দত্যিদানব ছিলো সব কোথা থেকে যেন মাটি ফুড়ে উঠলো।

ভীষণ ভয় পেয়ে গেলো বুলুকিয়া। দৌড়ে পালাতে গিয়েও পারলো না সে। অনড় হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। এই অপার্থিব দলের দলপতি এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো-কে তুই? বছরে শুরুর আমরা আসি মহাত্মা ডেভিডের পুত্র সুলেমানের কবর দেখতে। তুই এখানে কি করে «Զiçi?

—হে দলপতি আমার নাম বুলুকিয়া। আমি বানুইজারায়েলের সুলতান। সমুদ্রে পথ হারিয়ে এখানে এসেছি। একটা কথা জিজ্ঞাসা করব? আপনি কে? আর এই সঙ্গীসাথীরা কারা?

—আমরা জান বিন জান-এর উত্তরসূরি বলে দাবী করি। আমাদের মহাশক্তিধর নৃপতি সাখার-এর রাজ্য থেকে এই এখানে এলাম। তিনি শ্বেতভূমির সুলতান। বহুকাল আগে আদ-এর পুত্র শাদাদ রাজত্ব করতেন সেখানে।

–আজ্ঞে, সেই শ্বেতভূমি কোথায় যেখানে সাখর বাস করেন?

—কাফ পাহাড়ের পেছনে সেই রাজ্য। এখান থেকে মানুষের সেখানে যেতে লাগে পচাত্তর মাস। কিন্তু আমরা চোখের পলকে এই রাস্তা পাড়ি দিই! তুমি একজন রাজার ছেলে রাজা। তুমি ইচ্ছে করলে আমাদের রাজার কাছে নিয়ে যেতে পারি।

বুলুকিয়া সঙ্গে সঙ্গে রাজী হলো। কেজন জিনের কাঁধে চড়ে চোখের পলকে রাজা সাখার-এর রাজ্য এসে গেলে।

এক জাঁকজমকপর্ণ সমতলে সে নিয়ে গেলো বুলুকিয়াকে। সমতলভূমিতে নালাগুলি সোনা বা রূপোয় বাঁধা। নালাগুলিতে মৃগনাভি আর কুমকুমের সৌরভ। ধারে ধারে কৃত্রিম গাছ লাগানো। সে গাছের পাতাগুলি পান্না দিয়ে আর ফলগুলি চুনি দিয়ে তৈরি। সমস্ত সমতলটা সবুজ মসলিন দিয়ে ঢাকা। মসলিনের কাপড় আবার সোনার খুঁটির ওপরে বাঁধা। তাঁবুর ভেতর সোনার সিংহাসনে রাজা সাখব বসে আছেন। তাঁর ডানদিকে বসে সামন্ত রাজারা আর বাঁদিকে উজির, নাজির, সেনাধ্যক্ষ, জ্ঞানী আর গুণীরা বসে আছেন।

আভূমি নত হয়ে বুলুকিয়া মাটিতে চুম্বন করে প্রশস্তি গাইলো রাজার। সাখর সাদরে অভ্যর্থনা করে বুলুকিয়াকে পাশের একটি স্বর্ণাসনে বসতে বললেন। বুলুকিয়া আনুপূর্বিক সব বলে গেলো। কোন কিছু বাদ দিলো না। শুনে রাজসভার সকলে স্তম্ভিত হয়ে যায়।

এবার বিরাট একটা কাপড় বিছান হলো সকলের সামনে। খানা শুরু হবে। জিনেরা সব চিনে মাটির থালা বাসন এনে রাখলো। সোনা রূপার বাসনও এলো। বাসনগুলি ভর্তি খাবার-দাবার। পঞ্চাশটা সিদ্ধ উটের মাংস আর পঞ্চাশটা ঝলসানো উটের মাংস সোনার বাসনে সাজান হলো। পঞ্চাশটা ভেড়ার মাথা রূপার বাসনে ভর্তি করা হলো। সব গরম গরম, ধোয় উঠছে। চিনে মাটির বাসনে যত্ন করে বড় বড় ফল খোসা ছাড়িয়ে সাজিয়ে দিলো তারা। সব সাজান হয়ে গেলে জিন আর তার অতিথিরা পেট পুরে খেলেন। যা যা দিয়েছিলো সবাই চেটেপুটে খেয়ে ফেললেন। ভুক্তাবিশিষ্টও কারো থালায় রইলো না।

খানাপিনা শেষ হলে বললেন-আপনি আমাদের কাহিনী নিশ্চয় শোনেননি। সংক্ষেপে আমি আপনাকে সব বলছি। মানুষের মধ্যে ফিরে গিয়ে আমাদের কাহিনী প্রচার করবেন যাতে ভবিষ্যতে আমাদের সম্পর্কে কেউ যেন অজ্ঞ না থাকে।

রাত ভোর হয়ে আসছে দেখে শাহরাজাদ চুপ করে রইলো।

 

তিনশো উনষাটতম রজনী :

পরের দিন রাত্ৰিতে আবার শুরু হলো গল্প।

রাজা সখীর বুলুকিয়াকে বললেন—আদিতে আল্লা আগুন সৃষ্টি করলেন। দুনিয়ার সাতটি জায়গায় তিনি আগুন বন্ধ করে রাখলেন। সাতটি বিভিন্ন স্তরে আগুন রেখেছিলেন তিনি। কয়েক হাজার বছর ধরে তিনি অবশ্য এই কাজটি করেছিলেন। প্রথমে যে অঞ্চলে রেখেছিলেন তার নাম জাহান্নাম। যেসব বিদ্রোহীরা পাপের অনুশোচনা করবে না। তাদের জন্য এই আগুন। দ্বিতীয় অঞ্চলের নাম দেন লোজা। উপসাগরের মত গর্ত খুঁড়ে আগুন লুকিয়ে রেখেছিলেন। এই আগুন ধর্মপ্রচারক মহম্মদের বংশধরেরা ব্যবহার করবে। তাদের ভুলত্রুটিগুলো যাতে অন্ধকারে থাকে তাই এই ব্যবস্থা। এরা পরবর্তীকালে নিজেদের ভুল স্বীকার করতে চাইবে না। তৃতীয় অঞ্চলের নাম হলো জাহিন। একটা ফুটন্ত কড়ায় সে অঞ্চল জ্বলছে। এটি তৈরী হলো গগা ও ম্যাগাগের জন্যে। চতুর্থ অঞ্চলের নাম দিলেন সইর। এবালিসের জন্য এটি নির্দিষ্ট হলো। এবালিস হলেন বিদ্রোহী দেবদূতের দলপতি। বিদ্রোহী দেবদূতের সেনাপতি আদমকে অস্বীকার ও অমান্য করেছিলেন। এইভাবে তিনি সর্বশক্তিমানের কঠোর আদেশ উপেক্ষা করেছিলেন। তিনি পঞ্চম স্থানের নাম দিয়েছিলেন সাখার। অধাৰ্মিক, মিথ্যেবাদী ও অহংকারীদের জন্য নিযুক্ত করেছিলেন এখানকার আগুন। তারপর তিনি মাটির নীচে বিশাল এক গর্ত করলেন। এখানে গুমোট আবহাওয়া আর মড়ক সৃষ্টি করে এর নাম দিলেন হিৎমৎ। সপ্তমটির নাম দিলেন হাওয়াই। এটি তিনি সুরক্ষিত করে রাখলেন। ইহুদী ও খ্রীস্টান বেশী হয়ে গেলে এখানে রেখে দেবেন। আর যারা আল্লায় বিশ্বাস রাখবেন তাদের জন্যও এ স্থান নির্দিষ্ট রাখলেন। প্রথম জাহান্নামে সত্তর হাজার আগুনের পাহাড় আছে। প্রত্যেকটি পাহাড়ে সত্তর হাজার করে উপত্যকা আছে। প্রতিটি উপত্যকায় আছে সত্তর হাজার সহর। প্রতিটি সহরে সত্তর হাজার বুরুজ আছে। প্রতিটি বুরুজে সত্তর হাজারবাড়ি আর প্রতিটি বাড়িতে সত্তর হাজার বেঞ্চি। এরকম বেঞ্চিাতে আলাদা আলাদা নিপীড়ন ও শাস্তির বন্দোবস্ত আছে। এগুলো আপনিও গুণে দেখতে পারেন। অবশ্য নিপীড়ন ও শাস্তি কত রকমের তার খবর একমাত্র আল্লাই রাখেন। পাপীকে এই নিপীড়ন ও শাস্তির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। প্রথম অঞ্চল সাতটির মধ্যে সবচেয়ে কম কষ্টকর। সেটি পেরোবার সময় বাকী ছটি অঞ্চল কেমন ভয়ানক তা আঁচ করতে পারবেন।

আমি আগুন সম্পর্কে এতটা বললাম কেন জানেন? আমরা জিনেরা অগ্নিপুত্র, তাই।

আপনাকে সব বুঝিয়ে বললাম। আমরা যে অগ্নি সন্তান তা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। আরও বলছি শুনুন :

—আল্লা প্রথমে দুটি জীব সৃষ্টি করলেন। এরা দুজনেই জিন। তাঁর প্রহরী হিসেবে তাদের নিযুক্ত করলেন। নাম খলিত ও মলিত। একজনের রূপ হলো সিংহের অন্যজনের হলো নেকড়ের। সিংহকে তিনি পুরুষ হিসাবে সৃষ্টি করলেন আর নেকড়ে হলো স্ত্রীলোক। সিংহ খলিতের পুরুষাঙ্গ হলো কুড়ি গজ লম্বা। নেকড়ের যৌনাঙ্গ অনেকটা কচ্ছপের মত। যৌনাঙ্গটি খলিতের পুরুষাঙ্গ ধারণ করার মত উপযোগী করেই আল্লা সৃষ্টি করেছিলেন। একজনের গায়ের রং হলো সাদা-কালো অন্যটির রং হলো সাদা-গোলাপী। আল্লা এদের দুজনকে মিলিয়ে দিলেন। ক্রমে এদের বহু সন্তান সন্ততি হলো-সরীসৃপ, ড্রাগন, বিছা আর যেসব জীব হুল ফোটাতে পারে তারা। ওদের সন্তানকে সাতটি অঞ্চলে নিন্দিত পাপীদের যন্ত্রণা দেবার জন্য বহু সংখ্যায় ছড়িয়ে দিলেন আল্লা। আল্লা খলিত ও মলিতকে দ্বিতীয় সঙ্গমের জন্য আদেশ দিলেন। এবারে সাতটি পুরুষ আর সাতটি নারী হলো তাদের। আল্লার নির্দেশ মান্য করে তারা বড় হতে থাকে। তাদের একজনকে সর্বশক্তিমান আল্লা বেছে নিলো। খলিত ও মলিতে অসংখ্য মিলনের ফলে লক্ষ লক্ষ প্রজন্মের জন্ম হলো। সৌভাগ্যবান দলপতির নাম এবলিস। পরবর্তীকালে মানুষের আদি পিতা আদমের কাছে মাথা নত না করে বিদ্রোহী হয়েছিলো। এ আদেশ আল্লাই দিয়েছিলো। এর ফলে চতুর্থ অঞ্চলে সে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলো। এখানকার অধিবাসীরা সকলেই আল্লার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন আগে। এবার সকলে এককাট্টা হলো। এবালিস তার সাঙ্গাপাঙ্গ আর সন্তান-সন্ততিদের জায়গা হলো দোজখে। বাকী ছজন যুবক আর অন্যান্য মেয়েরা ছিলো তারা আল্লার কাছে বিনীত থেকে গিয়েছিলো। আমরা ওদেরই বংশধর। সংক্ষেপে আপনাকে আমাদের বংশগাথা বললাম। আমাদের পর্বত প্রমাণ খাওয়া দেখে অবাক হয়েছেন নিশ্চয়ই। সব শুনলে আপনি অবাক হবেন না। আমি বলেছি আমাদের আদি পুরুষ ও নারী ছিলো সিংহ ও নেকড়ে। তাদের সন্তান আমরা। তাই আমাদের খোরাক বেশী। আমরা এক-একজন রোজ দশটি উট, কুড়িটি ভেড়া আর বড় বড় চল্লিশ হাত ঝোল খাই। এক-একখানি হাতা বড় কড়াই-এর সমান।

আমাদের ব্যাপারে আপনার জ্ঞান-ভাণ্ডার ভরে দিলাম। আপনি মানুষের মধ্যে যখন ফিরে যাবেন তখন এ জ্ঞান আপনার অপরিসীম কাজে লাগবে। আরো বলছি শুনুন :

এ পৃথিবীর নোংরা বা আবর্জনা বরফগলা জলে ধুয়ে যায়। এ বরফে কাফ চুড়া থেকে গলে নেমে আসে। পৃথিবীর গর্ভের উত্তাপ সমস্ত জীবজগৎ ধ্বংস করে ফেলত। যদি না এই বরফ থাকত। পৃথিবীর নিজেরই সাতটি স্তর আছে। এই স্তরগুলো ঘাড়ে করে দাঁড়িয়ে আছে প্রভূত শক্তিশালী জিনি। জিনি একটা পাহাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। পাহাড়টি আবার ষাড়ের ঘাড়ে স্থাপিত। বিশাল একটা মাছ ষাঁড়টিকে ধরে আছে। আর মাছটি অনন্ত সমুদ্রে অবিরাম সাঁতার কেটে বেড়াচ্ছে।

অনন্ত সাগরের তলদেশ হলো দোজখের ছাদ। দোজখের সাতটি অঞ্চল বিরাট একটা সাপ মুখে আটকে রেখেছে। শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত আটকে রাখবে। সেই শেষ বিচারের দিন সাপটি দোজখ আর তার অধিবাসীদের উগরে দেবে আল্লার সামনে; ওদের অন্তিম বিচারের রায় দেবেন। আল্লা।

ভোর হয়ে আসছে দেখে গল্প থামিয়ে চুপ করে রইলো শাহরাজাদ।

 

তিনশো ষাটতম রজনী :

পরের দিন রাত্রে শাহরাজাদ। আবার শুরু করলো।

এই হলো আপনাদের ও পৃথিবীর সৃষ্টি কথা।

আরও একটা ব্যাপার জেনে যান। আমাদের বয়স কখনো বাড়ে না। আমরা বৃদ্ধ হই না। অথচ, আমাদের চারপাশের দুনিয়া, তার প্রকৃতি, মানুষ তার পশু পাখী সমস্ত জীবজগৎ দ্রুত বার্ধক্যের দিকে, জরার দিকে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে। আমরা অনন্ত যৌবন লাভ করেছি। জীবন ফোয়ারার অমৃত আমরা পান করেছি। এই ফোয়ারা অতন্দ্রা পাহারা দিচ্ছেন খিজর সেই ছায়ালোকে। পুণাত্মা খিজর সমস্ত ঋতুকে এক করে দিয়েছেন, রাজকীয় সবুজ গালিচা পেতে দিয়েছেন আর সূর্য ডুবে গেলে আকাশ জুড়ে গোধূলির আলো নিজের হাতে এঁকে দিয়েছেন।

বুলুকিয়া, আপনি মনোযোগ দিয়ে আমার সব কথা শুনেছেন। আপনাকে আমি পুরস্কৃত করতে চাই-অবশ্য যদি পছন্দ হয় আপনার। একজন আপনাকে ঘাড়ে করে এখান থেকে আপনার দেশে পৌঁছে দেবে।

বুলুকিয়া জিন নৃপতিকে তার আতিথেয়তার জন্য সকৃতজ্ঞ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করলো। তারপর জিনোদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একজন বলবান জিনের ঘাড়ে চড়ে বসলো। পলকের মধ্যে বুলুকিয়ার রাজ্যের সামনে নামিয়ে দিয়ে জিন বিদায় নিলো।

কোন রাস্তা দিয়ে যেতে হবে প্রথমে স্থির করে নিলো বুলুকিয়া। দুটি সমাধির মধ্য দিয়ে রাজধানীতে যাবার রাস্তায় সে পা বাড়ালো। সমাধির মধ্যখানে বসে বসে এক যুবক উচ্চৈঃস্বরে কেঁদে চলেছে। বুলুকিয়া দাঁড়ালো। ধীরে ধীরে তার কাছে এগিয়ে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলো—কি হয়েছে তোমার? দুই কবরের মাঝখানে বসে কাঁদছ কেন? আমাকে সব খুলে বলো, তোমার সব কষ্ট আমি দূর করে দেব।

জলভরা চোখ তুলে যুবকটি বললো—আপনি অযথা কেন আমার জন্য কষ্ট করবেন? আপনার দেরী হয়ে যাচ্ছে। আপনি যেখানে যাচ্ছিলেন চলে যান। আমার দুর্ভাগ্য তাই আমি কেঁদেছি। নীরবে কাঁদব বলেই কবরের মাঝে এসে বসেছি। দুঃখের পাথর চোখের জলে ভেজাতে পারি। কিনা দেখছি।

—সত্যি খুব দুর্ভাগ্যের ব্যাপার ভাই! তোমার দুঃখের কথা আমি শুনিব। বলে আমাকে। তোমার দুঃখের কাহিনী আমাকে নিঃসঙ্কোচে বলতে পোর।

বুলুকিয়া যুবকটির পাশে পাথরের ওপর বসে পড়লো। ওর হাত দুখানি নিজের হাতের মধ্যে টেনে নিয়ে একটু চাপ দিলো। বুলুকিয়া তার সমস্ত ঘটনা ওকে বলে গেলো। এরপর বললো-আমার কাহিনী তো শুনলে এবার তোমারটা বলে। তোমার কাহিনী আমার মনে নিশ্চয় সাড়া জাগাবে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *