০৩. শিখেন্দু কেন চেঁচিয়ে সকলকে ডাকল না

শিখেন্দু কেন চেঁচিয়ে সকলকে ডাকল না!

হতভম্ব বিমূঢ় হয়ে গিয়েছিল? স্বাভাবিক, হওয়াটা এমন কিছু বিচিত্র নয়। দীপিকাকে ঐভাবে অচৈতন্য অবস্থায় ঘরের কার্পেটের ওপরে পড়ে থাকতে দেখে তার হতবুদ্ধি হয়ে যাওয়াটা এমন কিছু বিচিত্র নয়।

তবু একটা প্রশ্ন যেন কিরীটীর মনের মধ্যে উঁকি দেয়। শিবতোষের সঙ্গে একত্রে বাথরুমে প্রবেশ করার আগে শিখেন্দু বাথরুমে ঢুকেছিল কিনা, সে আগেই দুর্ঘটনাটা আবিষ্কার করতে পেরেছিল কিনা। যদি পেরে থাকে, পারাটা এমন কিছু অসম্ভব নয়। এমনও হতে পারে, হয়ত ঘরে ঢুকে মেঝের ওপরে অচৈতন্য দীপিকাকে পড়ে থাকতে দেখে, সে বাথরুমে আলো জ্বলতে দেখে (?) ঢুকেছিল, তারপর সেখানে বন্ধুর মৃতদেহটা আবিষ্কার করবার পর কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিল কিছুক্ষণের জন্য।

বুঝে উঠতে পারেনি হয়ত, কি করবে এখন সে? কি করা উচিত? মনেও হয়ত পড়েনি কথাটা ঐ মুহূর্তে। কিংবা এও হতে পারে, ঘরে ঢুকে কাউকে সে দেখতে পায়নি। তখন ওদের খোঁজে বাথরুমে এসেঢোকে। ঐবাথরুমের মধ্যেই দুজনকে পড়ে থাকতে দেখে—একজন মৃত, অন্যজন অচৈতন্য। তখন সে দীপিকার অজ্ঞান দেহটা তুলে এনে সবে যখন ঘরের মেঝেতে নামিয়ে রেখেছে, শিবতোষ ঘরের ভিতরে গিয়ে ঢোকেন।

তাই যদি হয় তো দীপিকার অচৈতন্য দেহটা বাথরুম থেকে বয়ে নিয়ে এল কেন? কি এমন প্রয়োজন ছিল তার? কেনই বা আনতে গেল? বাথরুমে দীপিকা পড়ে থাকলেই বা কি এমন ক্ষতি ছিল? সেটাই তো বরং সকলের চোখে স্বাভাবিক ঠেকত।

দ্রুত একটার পর একটা প্রশ্ন যেন কিরীটীর মনের মধ্যে আসা যাওয়া করতে থাকে। আসে আর যায়, যায় আর আসে।

জানা দরকার কতকগুলো প্রশ্নের উত্তর। তার অবশ্যই জানা দরকার।

(১) রাত এগারটা থেকে পৌনে বারোটা, এই একঘণ্টা সময়ের মধ্যে তিনতলায় নির্বাণীতোষের শয়নঘরে কেউ এসেছিল কিনা? কিংবা ঐ সময়ে কেউ কাউকে তিনতলায় আসতে দেখেছিল কিনা?

(২) শিখেন্দু বীরেন মুখার্জীর কাছে যা বলেছে, তা একেবারে নির্ভুল সত্যু কিনা?

(৩) শিখেন্দুও দীপিকার সহপাঠী, সেও কি ভালবাসত মনে মনে দীপিকাকে! কিংবা দীপিকা সম্পর্কে তার মনের মধ্যে কোথাও কোন দুর্বলতা ছিল কিনা? অসম্ভব নয় ব্যাপারটা!

(৪) দীপিকা তার স্বামীর হত্যার ব্যাপার সম্পর্কে কিছু জানে কিনা? সে ঘরে ঢুকে কাউকে দেখেছিল কিনা?

(৫) সে যদি ঘরে ঢুকে স্বামীকে না দেখে বাথরুমেই গিয়ে তার খোঁজে ঢুকে থাকে এবং তখুনি সে মৃতদেহটা আবিষ্কার করেছিল, না তার চোখের সামনেই হত্যাকাণ্ডটা সংঘটিত হয়েছে? যদি তা না হয়ে থাকে, অর্থাৎ সে বাথরুমে ঢুকেই আবিষ্কার করে থাকে তার স্বামীর মৃতদেহটা, তবে চিৎকার করে উঠে ও সেইখানেই তার অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাওয়াটা সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক, ছুটে এসে ঘরের মধ্যে অজ্ঞান হয়ে পড়বে কেন? প্রচণ্ড আঘাত লেগেছে মনে, এখনও একটা কথাও বলেনি, সেক্ষেত্রে তার ঘরের মধ্যে অজ্ঞান হয়ে ঐভাবে পড়ে থাকাটা যেন মন মেনে নিতে চাইছে না!

(৬) স্বামীর মৃত্যুই আঘাতের কারণ, না অন্য কোন কারণ আছে ঐভাবেমূক হয়ে যাওয়ার?

(৭) দীপিকাকে কথা বলতেই হবে। সহজে হয়ত সে মুখ খুলবে না, কিন্তু মুখ তাকে খুলতেই হবে!

(৮) হত্যাকারীর পক্ষে আজ রাত্রে এই বাড়িতে আসাটা এমন কিছু কঠিন ছিল না। উৎসবের বাড়িতে অগণিত অতিথি এসেছে, তাদের সঙ্গে মিলে-মিশে হয়ত সেও এসেছিল কোন এক সময়। তারপর কোন এক ফাঁকে তিনতলায় চলে যাওয়াও তার পক্ষে কষ্টসাধ্য ছিল না। তারপর বাথরুমে হয়ত সুযোগের অপেক্ষায় লুকিয়ে ছিল। কিন্তু তারপর হত্যা করার পর কোন পথে সে গেল? নিশ্চয়ই বাথরুমের মেথরদের যাতায়াতের দরজার পথে-—এখানেও মনের মধ্যে একটা দ্বিধা জাগছে কিরীটীর। কিসের দ্বিধা? কেন দ্বিধা? ঘুরেফিরে আবার শিখেন্দুর কথাই মনে আসছে। শিখেন্দু-দীপিকা-নির্বাণীতোষ। পরস্পরের সহপাঠী। অনেক বছর একসঙ্গে কেটেছে। যার ফলে নির্বাণীতোষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ও বিয়ে। ত্রিকোণ কোন প্রেমের মর্মন্তুদ শেষ দৃশ্য নয় তত নির্বাণীতোষের হত্যার ব্যাপারটা?

(৯) শেষ কথা যেটা কিরীটীর মনে হয়, এ হত্যার ব্যাপারে, শিবতোষ মল্লিকের প্রথম পক্ষের মৃত স্ত্রীর সন্তান আশুতোষ মল্লিক। যে মানুষটা তার জন্মদাতার প্রতি একটা প্রচণ্ড ঘৃণা ও বিদ্বেষ বরাবর পোষণ করে এসেছে। বাপের সাহায্য কখনও এক কপর্দকও নেয়নি। চেষ্টা করেও তাকে শিবতোষ তার গৃহে আনতে পারেননি। বাপের মুখ পর্যন্ত দেখতেও নারাজ। কেন? কিসের এ ঘৃণা, কিসের এ আক্রোশযা এত বছরেও বাপ ও ছেলে পরস্পরের মধ্যে সম্পর্কটাকে সহজ হতে দিল না? নিজে সামান্য চটকলের একজন মজুর, হয়ত লক্ষপতি বাপকে স্বীকার করল না। তার মাকে তার পিতামহ এ বাড়িতে প্রবেশাধিকার দেয়নি, স্বীকার করেনি কখনও পুত্রবধূ বলে। কিন্তু বাপ তো তার স্ত্রীকে বরাবরই স্বীকার করেছে। তবে এত ঘৃণা ও এত আক্রোশের কারণ কী আশুতোষের তার বাপের প্রতি?

(১০) তিনতলায় নির্বাণীতোষের শয়নঘরের দরজাটা বন্ধ থাকাই তো স্বাভাবিক ছিল, কিন্তু দেখা যাচ্ছে খোলা ছিল। কেন?

কথাগুলো প্রশ্নের আকারে কিরীটীর মনের মধ্যে আনাগোনা করতে থাকলেও তার দুচোখের দৃষ্টি কিন্তু তখনও বাথরুমের সর্বত্র তীক্ষ্ণ সজাগ হয়ে যোরাফেরা করছিল।

হঠাৎ দেওয়াল ঘেঁষে কিরীটীর চোখ পড়ে। বাথরুমে ঢোকার দরজাটার একটা পাল্লার ঠিক নিচেই কি যেন ঝিকমিক করছে!– কৌতূহলে এগিয়ে গিয়ে মেঝে থেকে জিনিসটা তুলে নিল কিরীটী। ছোট্ট একটি সোনার ফুলের নাভিদেশে মটরদানার মত একটি হীরকখণ্ড।

আসল এবং দামী হীরে দেখলেই বোঝা যায়। বস্তুটা পরীক্ষা করতে করতে কিরীটীর মনে হয়, ওটা কোন অলঙ্কারের অংশবিশেষ।

কম করেও হাজার পাঁচ-ছয় টাকা মূল্য হবে হীরকখণ্ডটির। এটা বাথরুমের মধ্যে কি করে এল!

চিন্তিত মনে সেটি পকেটের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখল কিরীটী।

বাথরুমে আর কিছু দ্রষ্টব্য আপাততঃ নেই। মৃতদেহটার দিকে শেষবারের মত তাকিয়ে বাথরুম থেকে বের হয়ে এল কিরীটী।

শয়নকক্ষটি আর একবার ভাল করে দেখল কিরীটী। শয্যাটি আদৌ ব্যবহৃত হয়নি, বুঝতে কষ্ট হয় না।

মধুরাত্রে মিলনের আগেই মৃত্যু এসে ছোবল হেনেছে। সব কিছুর উপরে সমাপ্তির রেখা টেনে দিয়েছে।

কিরীটী ঘর থেকে বের হয়ে তিনতলা থেকে দোলায় নেমে এল।

শিবতোষবাবু তখনও বসে আছেন মুহ্যমানের মত।

শিবতোষবাবু!

কে? রায়মশাই, আসুন।

আপনার বৌমার সঙ্গে একবার দেখা করতে চাই।

শিবতোষের খাসভৃত্য গোকুল দরজার বাইরেই ছিল। তাকে ডেকে শিবতোষ বললেন, দেখ তো ছোড়দি কোথায়?

স্বাতীর জবানবন্দি শেষ হয়ে গিয়েছিল। বড় বোন স্মৃতিকে নিচে পাঠিয়ে দিয়ে সে আবার দীপিকার পাশে গিয়ে বসেছিল। গোকুল তাকে ডেকে নিয়ে এল।

ডাকছ বাবা!

হ্যাঁ। কিরীটীবাবুকে একবার বৌমার কাছে নিয়ে হ্যাঁ।

বৌদি তো এখনও তেমনি বোবা হয়ে আছে বাবা, স্বাতী বললে। কথাটা বলে স্বাতী যেন একটু বিরক্তির সঙ্গেই কিরীটীর মুখের দিকে তাকাল।

কিরীটী সস্মিতভাবে বললে, আপনার ভয় বা চিন্তার কোন কারণ নেই স্বাতীদেবী, ওঁকে আমি কোনরকম বিরক্ত করব না।

স্বাতী নিরাসক্ত কণ্ঠে বলল, আসুন। .

দুখানা ঘরের পরের ঘরটার মধ্যেই দীপিকা ছিল। কিরীটী স্বাতীর সঙ্গে সঙ্গে সেই ঘরের মধ্যে প্রবেশ করল। বিবাহের পূর্বে স্বাতী এই ঘরটাতেই থাকত, বিবাহের পর যখন এখানে আসে এই ঘরেই থাকে।

দীপিকার জ্ঞান হবার পর সকলে দীপিকাকে স্বাতীর ঘরেই নিয়ে এসেছিল। বীরেন মুখার্জী যেমন দেখে এসেছিলেন, ঠিক সেইভাবেই বসে ছিল তখনও দীপিকা, মাথাটা নীচু করে। দৃষ্টি ভূমির ওপরে নিবদ্ধ।

তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কিরীটী একবার দীপিকাকে দেখে নিল। এবং তার অভিজ্ঞ দৃষ্টিতাকে বুঝিয়ে দেয়, দীপিকার জ্ঞান ফিরে এলেও সে তার স্বাভাবিক চেতনা ফিরে পায়নি। এও বুঝতে পারে কিরীটী, নিদারুণ কোন মানসিক আঘাতেই তার মানসিক চেতনা লুপ্ত হয়েছে। তাকে। প্রশ্ন করে কোন লাভই হবে না। কিরীটী লক্ষ্য করে আরও, দীপিকার কপালের বাঁদিকে একটা কালসিটা।

সামনের কিছু চূর্ণ বিপর্যস্ত কুন্তল স্থানভ্রষ্ট হয়ে কপালের ওপর এসে পড়েছে।

কিরীটী পকেট থেকে হীরকখণ্ডটি বের করে স্বাতীর দিকে এগিয়ে ধরে বললে, স্বাতী দেবী, দেখুন তো এটা চিনতে পারেন কিনা?

স্বাতী সোনায় বসানো হীরকখণ্ডটি হাতে নিয়ে দেখেই বলল, কোথায় পেলেন এটা?

জানেন এটা কার?

এটা তো বৌদির সিঁথি-মৌরের সঙ্গে ছিল। মা দিয়েছিলেন এটা বিয়ের পর আশীর্বাদে।

সিঁথি-মৌরটা কোথায়?

খুলে রেখেছি।

কোথায় দেখি?

স্বাতী এগিয়ে গিয়ে আলমারি থেকে সিঁথি-মৌরটি বের করে আনল। দেখা গেল স্বাতীর ধারণা মিথ্যে নয়। সিঁথি-মৌরের সঙ্গে যে ছোট্ট সোনার এস দিয়ে এটা লাগানো ছিল, সেই এটা আছে তখনও।

স্বাতী আবার বলল, হ্যাঁ, এটার সঙ্গেই লাগানো ছিল হীরেটা। কোথায় পেলেন এটা? ওপরের ঘরে?

কিরীটী স্বাতীর প্রশ্নের কোন জবাকনা দিয়ে কেবল বলল, এটা রেখে দিন। আপনাকে কয়েকটা কথা জিজ্ঞাসা করতে পারি স্বাতী দেবী?

কি?

আপনিই তো আজ রাত্রে আপনার বৌদিকে ওপরে পৌঁছে দিয়ে আসেন?

হ্যাঁ।

ঘরে ঢুকেছিলেন?

না। সিঁড়ি থেকেই আমি চলে এসেছিলাম।

সিঁড়ি দিয়ে নামবার সময় কোন শব্দ বা চিৎকার শুনেছিলেন?

না।

কতক্ষণ বাদে চিৎকার শোনেন?

মিনিট পনের-কুড়ি বাদে বোধ হয়।

কি রকম চিৎকার?

ভয় পেলে যেমন চিৎকার করে।

বিয়ের আগে দীপিকাদেবী এ বাড়িতে আসেননি?

কতবার এসেছে—দাদার ক্লাস-ফ্রেণ্ড ছিল তো বৌদি।

জানি। আচ্ছা আপনাদের এক সভাই আছেন, জানেন?

জানি।

দেখেছেন তাঁকে কখনও?

না। তিনি কখনও এখানে আসেননি।

ঐ সময় শিবতোষের বড় মেয়ে স্মৃতি এসে ঘরে ঢুকল।

ইনি? কিরীটী প্রশ্ন করে।

আমার দিদি, স্মৃতি।

আমার নাম কিরীটী রায়।

কিরীটী কথাটা বলারসঙ্গেসঙ্গেই স্মৃতি কিরীটীরমুখের দিকে তাকাল। একটুযেনশ্রদ্ধামিশ্রিত তার দৃষ্টি। কিরীটী রায় নামটা স্মৃতির অপরিচিত নয়। তার বাপের মুখে শুনেছে এবং শুনেছে ভদ্রলোকের প্রতি তাদের বাবার কি অগাধ শ্রদ্ধা।

আপনি কোন্ ঘরে থাকেন স্মৃতিদেবী?

পাশের ঘরেই।

আপনার দাদার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের বোধ হয় আপনি সকলকেই চেনেন?

যাঁরা এ বাড়িতে আসতেন তাঁদেরই কেবল চিনি। আর ঘনিষ্ঠতা দাদার কার সঙ্গে ছিল—একমাত্র শিখেন্দুদা ছাড়া বলতে পারব না।

এ বাড়িতে আপনার দাদার কাছে আর কে কে আসত?

নির্মলবাবু আর সঞ্জীববাবু।

তারা আপনার দাদারই সমবয়সী ছিল বোধ হয়?

নির্মলবাবু বোধ হয় একটু বয়সে বড় হবেন দাদার চাইতে, কারণ শুনেছিলাম—

কি শুনেছিলেন?

অনেকবার নাকি ফেল করেছেন নির্মলবাবু। মানুষটা যেমন হাসিখুশি, তেমনি আমুদে।

আচ্ছা তাঁরা এসেছিলেন নিশ্চয়ই উৎসবে?

স্বাতী বলতে পারে। কারণ যে-ঘরে বৌদিকে বসানো হয়েছিল,—দাদার বন্ধুরা কে কে প্রেজেনটেশন দিতে এসেছিলেন, ওই বলতে পারে। স্মৃতি বলল।

স্বাতীদেবী!

নির্মলবাবুকে দেখেছি, তাঁকে চিনতামও। কিন্তু আর যাঁরা এসেছিলেন, অনেকেই তো এসেছিলেন, কাউকেই আমি চিনতে পারিনি।

সঞ্জীববাবুকে দেখেননি?

মনে পড়ছে না।

ঠিক আছে, আপনাদের আর বিরক্ত করব না। আমি নিচে যাচ্ছি।

নিচের পারলারে যখন এসে কিরীটী প্রবেশ করল, বীরেন মুখার্জী তখন গোকুল ভৃত্যকে প্রশ্ন করছেন।

তাহলে গোকুল, তুমি বরাবরই দোতলায় ছিলে?

আজ্ঞে কাবাবুর হুকুম ছিল দোতলায় যেন সর্বক্ষণ আমি থাকি।

হঠাৎ ঐ সময় কিরীটী প্রশ্ন করল, গোকুল, তোমার দাদাবাবুর বন্ধু যারা এ বাড়িতে আসত, তাদের নিশ্চয়ই তুমি চেন?

সকলকে তো চিনি না আজ্ঞে,—গোকুল বলল, তবে দু-একজনকে চিনি।

তারা কে? কিরীটী আবার প্রশ্ন করল।

নির্মলবাবু, সঞ্জীববাবু, পরেশবাবু—আর শিখেন্দুবাবু তো এ বাড়ির লোক একরকম।

নির্মলবাবু, পরেশবাবু, সঞ্জীববাবু এসেছিলেন আজ?

আজ্ঞে নির্মলবাবু আর পরেশবাবু এসেছিলেন।

আর সঞ্জীববাবু আসেননি?

কই, তাঁকে তো দেখিনি।

পরেশবাবু আর নির্মলবাবু বৌকে যে-ঘরে বসানো হয়েছিল, সে ঘরে যাননি?

গিয়েছিলেন তা আজ্ঞে।

দেখেছ তাঁদের–বৌ যে-ঘরে ছিল সে-ঘরে ঢুকতে দুজনকেই?

দেখেছি বইকি বাবু।

কখন কে এসেছিলেন—একসঙ্গেই কি?

আজ্ঞে না। রাত আটটা সোয়া আটটা নাগাদ পরেশবাবুকে দেখেছি। আর নির্মলবাবু এসেছিলেন রাত তখন সাড়ে নটা কি পৌনে দশটা হবে।

নির্মলবাবুকে বের হয়ে যেতে দেখেছ?

ঠিক লক্ষ্য করিনি বাবু, মিথ্যে বলব কেন।

কিরীটী আবার প্রশ্ন করল, রাত্রে কাকে তুমি তিনতলায় যেতে দেখেছ—মনে করে বলতে পার গোকুল?

বড়দিদিমণি বার দুই, ছোটদিদিমণি একবার উপরে গিয়েছিলেন। তাছাড়া শিখেদাদাবাবুও এবার গিয়েছিলেন। আর একজন বৌ, নীল রঙের দামী শাড়ি পরনে, মাথায় ঘোমটা ছিল, উপরে যেতে দেখেছি।

শিখেন্দুদাদাবাবু কখন তিনতলায় গিয়েছিলেন গোকুল?

রাত দশটা হবে তখন কি তার দু-চার মিনিট পরেও হতে পারে।

তাঁকে নেমে আসতে দেখেছিলে?

না। কখন আবার নেমে এসেছেন দেখিনি।

আর সেই বৌটি?

শিখেন্দুদাদাবাবুর উপরে যাবার বোধ হয় আধ ঘণ্টাখানেক পরে।

ঠিক সময়টা তোমার মনে আছে?

আজ্ঞে না। তবে ঐরকমই মনে হয়।

তাঁকে নেমে আসতে আবার দেখেছিলে?

না।

দেখনি?

না।

দাদাবাবু ওপরে যাবার পরেও নেমে আসতে দেখনি?

না।

দাদাবাবু কখন ওপরে গিয়েছিলেন?

ঐ বৌটি ওপরে যাবার কিছু আগেই।

রাত পৌনে এগারোটা—তারও আগে?

ঐ রকমই হবে বোধ হয়, ঠিক আমার মনে নেই।

হুঁ। আচ্ছা গোকুল, যে বৌটি ওপরে গিয়েছিল, তাকে দেখলে চিনতে পারবে?

আজ্ঞে না। মাথায় ঘোমটা ছিল। ওপরে উঠবার সময় পিছন থেকে দেখেছি, ঠিক দেখতে পাইনি।

এ বাড়িতে উৎসবে যোগ দিতে বাবুর আত্মীয়-পরিজন যাঁরা এসেছেন, তাঁদের মধ্যে কেউ কি?

বলতে পারব না, তাঁদের তো আমি সকলকে চিনি না—একমাত্র প্রায়ই আসা-যাওয়া করেন যাঁরা তাঁদের ছাড়া। গতকাল আর আজ তো অনেকেই এসেছেন, গিয়েছেন।

একপাশে দাঁড়িয়েছিল শিবতোষের সরকার ও প্রাইভেট সেক্রেটারী যতীশ সামন্ত।

কিরীটী তার দিকে তাকাল, যতীশবাবু।

কিছু বলছিলেন?

এ-বাড়িতে আত্মীয়-পরিজনদের মধ্যে অল্পবয়সী বৌ অনেক আছেন, তাই না?

সে-রকম কেউ আছেন বলে তো আমি জানি না—যাঁরা সাধারণত এসে থাকেন মধ্যে মধ্যে তাঁদের মধ্যে—তবে আজ তো অনেক আত্মীয়-পরিজনই এসেছিলেন উৎসবে, তাঁদের মধ্যে কেউ হতে পারেন।

কিরীটী যেন কি ভাবছিল, অন্যমনস্কভাবে মৃদু কণ্ঠে বললে, তা অবশ্যই হতে পারে। কিন্তু সে বৌটি যে-ই হোক, সে তিনতলায় গিয়েছিল কেন? তিনতলায় তো যাবার কথা নয় কারো! ঠিক আছে মিঃ মুখার্জী, অ্যাম সরি টু ডিসটাব ইউ, আপনি আপনার কাজ করুন।

বীরেন মুখার্জী মধ্যখানে কিরীটীর প্রশ্নোত্তরে একটু বিরক্তই হয়েছিলেন, কিন্তু মুখে সেটা প্রকাশ করলেন না। আরও কয়েকটা মামুলী প্রশ্ন করে অন্য ভৃত্য রাজেনকে ডেকে দেবার জন্য গোকুলকে বললেন।

গোকুল চলে গেল।

রাজেন একটু পরেই ঘরে এসে ঢুকল।

গোকুলের চেহারাটা মোটাসোটা বেঁটে। একটু গোলগাল এবং রং কালো। রাজেন ঢ্যাঙা, লম্বা, রোগা। শুকনো পাকানো চেহারা। গোকুলের চোখের চাউনি ভাসা-ভাসা, একটু যেন বোকা-বোকা মনে হয় ওকে চোখের দিকে তাকালে, কিন্তু রাজেনের চোখের দৃষ্টিতেই বোঝ যায় লোকটা চালাক-চতুর। গোকুলের মত নিরীহ সরল হাবাগবা নয়।

তোমার নাম রাজেন? বীরেন মুখার্জী প্রশ্ন করলেন।

আজ্ঞে–রাজেন সাধু।

এ বাড়িতে কতদিন কাজ করছ?

তা আজ্ঞে—দশ বছরের কিছু বেশি হবে।

কিরীটী সোফার উপরে বসে পাইপে অগ্নিসংযোগ করে টানতে থাকে।

তুমিও কি সন্ধ্যে থেকে ওপরেই ছিলে?

আজ্ঞে না—আমি নিচের প্যাণ্ডালে ছিলাম। দাদাবাবু আমাকে সেখানেই থাকতে বলেছিলেন।

রাজেন, নিমন্ত্রিত পুরুষ ও মহিলারা কি সব এক প্যাণ্ডালে বসেই খেয়েছেন?

আজ্ঞে না। মেয়েদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা ছিল। সামনের দিকের প্যাণ্ডালে পুরুষরা খেয়েছেন, পিছনের প্যাণ্ডালে মেয়েরা।

তুমি কোন্ প্যাণ্ডালে ছিলে?

দুপ্যাণ্ডালেই আমি ছুট ছুটে বেড়িয়েছি দাদাবাবুর সঙ্গে সঙ্গে।

দাদাবাবু তাহলে দুপ্যাণ্ডালেই যাতায়াত করছিলেন?

আজ্ঞে।

ওই সময় কিরীটী পাইপটা হাতে নিয়ে প্রশ্ন করল, রাজেন, তুমি যখন দাদাবাবুর সঙ্গে সঙ্গেই ছিলে, তখন নিশ্চয়ই তোমার মনে আছে কখন দাদাবাবু প্যাণ্ডাল ছেড়ে চলে যান?

বোধ হয় রাত এগারটায়, তাঁর বন্ধুদের শেষ ব্যাচ খেয়ে চলে যাবার পর,–রাজেন বললে।

আর শিখেন্দুদাদাবাবু?

আরও আধঘণ্টা পরে।

শিখেন্দুবাবু তখন কোথায় ছিলেন?

দাদাবাবুর পাশেই।

রাজেন, নীল রঙের দামী শাড়ি পরা কোন অল্পবয়সী বৌকে দেখেছ?

আজ্ঞে অনেকের পরনেই নীল শাড়ি ছিল, আর অল্পবয়সী বৌও অনেক এসেছিল।

তোমার দাদাবাবুর মাথা ধরেছিল জান?

আজ্ঞে না।

তোমার দাদাবাবুর মাথা ধরেছিল বলেই তো শিখেন্দুদাদাবাবু তাঁকে ওপরে চলে যেতে বলেছিলেন!

আমি বলতে পারব না বাবু।

রাত্রি শেষ হয়ে এসেছিল ইতিমধ্যে। জানলাপথে প্রথম ভোরের আলো ঘরে এসে প্রবেশ করে।

বীরেনবাবু, কিরীটী বললে, আমি এবার যাব। আমি ওপরে যাচ্ছি। শিবতোষবাবুকে একবার বলে আসি। কিরীটী উঠে পড়ল।

বীরেন মুখার্জী কোন কথা বললেন না।

সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতেই শিখেন্দুর সঙ্গে মুখখামুখি হয়ে গেল কিরীটীর। শিখেন্দু নেমে আসছিল।

আমি আপনার সঙ্গেই দেখা করতে যাচ্ছিলাম শিখেন্দুবাবু। কিরীটী বললে।

আমার সঙ্গে!

হ্যাঁ। কোথাও আমরা বসতে পারি? কিছু কথা ছিল আমার।

কথা?

হ্যাঁ। একটু নিরিবিলি হলেই ভাল হয়। কিরীটী বললে।

নিচে কাকাবাবুর অফিসঘরে আমরা বসতে পারি। আর ওপরের কোন ঘরে যদি বসতে–

না। ওপরে নয়। নিচেই চলুন।

বেশ চলুন। শিখেন্দু বললে।

নিচের তলায় একেবারে দক্ষিণপ্রান্তে শিবতোষের অফিসঘর। কিন্তু দরজাটা আটকানো দেখা গেল।

আপনি এখানে একটু দাঁড়ান কিরীটীবাবু, যতীশবাবুর কাছে বোধ হয় ঘরের চাবি আছে—তাঁকে বলছি ঘরটা খুলে দিতে।

কিরীটী দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রইল, শিখেন্দু পালারের দিকে চলে গেল। যতীশ সামন্ত তখনও পালারেই ছিল, শিখেন্দু তাকে ডেকে এনে শিবতোষের অফিসঘরটা খুলিয়ে নিল।

আসুন!

আগে শিখেন্দু, পশ্চাতে কিরীটী অফিসঘরে প্রবেশ করল এবং শিখেন্দু ঘরের আলোটা জ্বালাতে চাইলে, কিরীটী তাকে বাধা দিয়ে বললে, ভোর হয়ে গিয়েছে শিখেন্দুবাবু, ঘরের জানলাগুলো খুলে দিন বা পদগুলো সরিয়ে দিন—আলো জ্বালাতে হবে না।

শিখেন্দু আলো আর না জ্বালিয়ে ঘরের জানলার পর্দাগুলো সরিয়ে দিতেই জানলার কাঁচের সার্শিপথে দিনের আলো এসে ঘরে প্রবেশ করল। দেখা গেল কিরীটীর অনুমান মিথ্যে নয়। ঘরের মাঝখানে বিরাট একটি সেক্রেটারিয়াট টেবিল, গোটা দুই ফোন, কলমদানী, অ্যাশট্রে আর ছোট দামী একটা ফটোর ফ্রেমে এক মহাত্মার ফটো, শিবতোষের গুরুদেব। ঘরের চারপাশে গোটাচারেক স্টিলের আলমারি, দেয়ালে গাঁথা একটি আয়রন-সেফ। টেবিলের উপরে কিছু ফাইল-পত্র রয়েছে।গোটাসাতেকচেয়ার একদিকেছটাচেয়ার ও অন্যদিকে একটি রিভলবিং চেয়ার। বোঝা গেল, শিবতোষ ঐ চেয়ারটাতেই বসেন। ঘরের সংলগ্ন বাথরুম। বাথরুমের দরজা বন্ধ।

বসুন শিখেন্দুবাবু!

শিখেন্দু বসল। কিরীটীও পাশেই একটা চেয়ারে বসল।

পাইপটা কিরীটীর নিভে গিয়েছিল। লাইটারের সাহায্যে পুনরায় পাইপের মাথায় অগ্নিসংযোগ করে মৃদু একটা টান দিয়ে বললে, বুঝতেই পারছেন শিখেন্দুবাবু, ব্যাপারটা র্যাদার ডেলিকেট, তাই একটু নিরিবিলিতে আপনাকে নিয়ে এলুম।

শিখেন্দু কোন জবাব দিল না। ক

য়েকটি প্রশ্ন আপনাকে আমি করতে চাই।

বেশ তো করুন।

কাল রাত্রে ফুলশয্যার ব্যবস্থা তিনতলায় নির্বাণীতোষবাবুর শোবার ঘরেহ য়েছিল দেখলাম—

হ্যাঁ। ও তো তিনতলাতেই থাকত, তাই।

তিনতলায় বুঝি কেউ থাকে না?

পাঁচটা ঘরের তিনটে ঘর খালিই পড়ে থাকে তিনতলায়। দুটো ঘর পাশাপাশি নির্বাণীতোষ ব্যবহার করত বেল।

বৌ বসানো হয়েছিল নিচের সামনে দোতলার একটি ঘরে?

হ্যাঁ।

তার মানে তিনতলায় কারো কোন দরকারই ছিল না যাবার?

কারো বলে কোন কথা নয়, বরাবরই নির্বাণীতোষ তিনতলায় কারো যাওয়া পছন্দ করত। তাই কেউ বড় একটা যেত না।

কেন? পছন্দ করত না কেন?

ও চিরদিনই একটু নির্জনতাপ্রিয় ছিল। গোলমাল হৈচৈ পছন্দ করত না।

তাহলে তো পছন্দ না হবারই কথা। বলেইহঠাৎ যেন প্রশ্নটা করল.কিরীটী, আপনি কাল রাত্রে তিনতলায় কবার গিয়েছিলেন?

আমি—তিনতলায়?

হ্যাঁ।

একবার মাত্র গিয়েছিলাম।

মনে করে দেখুন তো শিখেন্দুবাবু! একবার নয়, অন্ততঃ দুবার নিশ্চয়ই গিয়েছিলেন। কিরীটীর গলার স্বর যেন অদ্ভুত শান্ত, অদ্ভুত নির্লিপ্ত। প্রশ্নটা করে কিরীটী তাকিয়ে থাকে শিখেন্দুর মুখের দিকে।

আমি কাল রাত্রে একবারই গিয়েছিলাম তিনতলায় চিৎকার শোনবার পর, মনে আছে আমার। তার আগে আমি তিনতলায় একবারও যাইনি।

যাননি?

না।

না শিখেন্দুবাবু, মনে পড়ছে না আপনার, আপনি আগেও একবার তিনতলায় গিয়েছিলেন।

গিয়েছিলাম!

হ্যাঁ।

কখন? কে বললে? কেউ বলেছে আপনাকে কথাটা?

কেউ বলেছে বা ওপরে যেতে কেউ আপনাকে দেখেছে কিনা, সেটাও নিছক সত্য-মিথ্যে যাচাইয়ের প্রশ্ন শিখেন্দুবাবু। তার মধ্যে যেতে চাই না। আমি শুধু জিজ্ঞাসা করছি, কখন আপনি ওপরে গিয়েছিলেন?

বলছি তো ওপরে আমি আগে যাই-ই নি। চিৎকার শোনবার পরই গিয়েছিলাম।

রাত সাড়ে নটা নাগাদ একবার যাননি?

না।

নির্বাণীতোষবাবু আপনার অভিন্ন-হৃদয় বন্ধু ছিলেন, সেদিক দিয়ে নিশ্চয়ই আপনি চান তাঁর হত্যাকারী ধরা পড়ুক?

নিশ্চয়ই চাই।

শুধু তাই নয়, দীপিকাও আপনার বান্ধবী—শুধু বন্ধুপত্নীই নয়।

নিশ্চয়ই তাই।

তাহলে তো আমাকে এই নিষ্ঠুর হত্যার তদন্তের ব্যাপারে সাহায্য করা আপনার কেবল কর্তব্যই নয়, আপনার মানবিকতার কাছে সেটা সত্যের একটা দাবিও। কথাগুলো এমন শান্ত গলায় ধীরে ধীরে উচ্চারণ করল কিরীটী যে স্পষ্টতই শিখেন্দুকে একটু যেন বিমূঢ়ই করে দিয়েছে বলে কিরীটীর মনে হল।

শিখেন্দু বললে, আপনি ঠিক কি বলতে চাইছেন আমি বুঝতে পারছি না।

দীপিকা তো আপনার সহপাঠিনী? তাঁর প্রতি কি, ক্ষমা করবেন, কথাটা আপাতত রূঢ় হলেও না বলে পারছি না, কোনদিন আপনার কোন দুর্বলতাই দেখা দেয়নি?

শিখেন্দু এবার মাথা নীচু করল।

জবাব দিন আমার প্রশ্নের শিখেন্দুবাবু? এখানে এই ঘরের মধ্যে আমরা ছাড়া আর তৃতীয় ব্যক্তি কেউ নেই এবং এও আপনাকে কথা দিচ্ছি, কেউ একথা জানবে না, জানতে পারবে না।

শিখেন্দু একেবারে চুপ।

বুঝলাম। জবাব আমি পেলাম।

কিন্তু আপনি বিশ্বাস করুন কিরীটীবাবু, দীপিকা আর নির্বাণীতোষ পরস্পরকে ভালবাসে এ-কথা জানতে পারার পর–

আপনাকে আপনি গুটিয়ে নিয়েছিলেন। বন্ধুত্বের দুর্লভ পরিচয়ই দিয়েছেন।

আমি চেয়েছিলাম, ওরা পরস্পর পরস্পরকে যখন ভালবাসে ওরা সুখী হোক। কি

রীটীর মনে হল, শিখেন্দুর গলার স্বরটা যেন বুজে এল।

শিখেন্দুবাবু!

কিরীটীর ডাকে শিখেন্দু ওর দিকে মুখ তুলে তাকাল।