• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • নতুন সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • পুরানো সব ক্যাটাগরি
  • My Account →
  • নতুন সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • পুরানো সব ক্যাটাগরি
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

০৭. ঐদিনই দ্বিপ্রহরে লালবাজারে

লাইব্রেরি » নীহাররঞ্জন গুপ্ত » কিরীটী অমনিবাস (কিরীটী রায়) » আলোকে আঁধারে » ০৭. ঐদিনই দ্বিপ্রহরে লালবাজারে

ঐদিনই দ্বিপ্রহরে লালবাজারে গিয়ে কিরীটী পুলিশ কমিশনার মিঃ রায়চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করলো। লম্বা-চওড়া সুগঠিত চেহারা। অফিসেই ছিলেন রায়চৌধুরী, কিরীটী স্লিপ পাঠাতেই ঘরের মধ্যে ডাকলেন।

দুজনার মধ্যে পরিচয় ছিল। রায়চৌধুরী কিরীটীকে শ্রদ্ধা করতেন।

আসুন—আসুন, বসুন রায়সাহেব-হঠাৎ এখানে কি মনে করে!

কিরীটী বসে মিত্রানীর হত্যার ব্যাপারটা বললে।

সব শুনে মিঃ রায়চৌধুরী বললেন, ব্যাপারটা আমারও কানে এসেছে—আজই সকালে—

কি রকম!

হোমিসাইডাল স্কোয়াডের জ্যোতিভূষণ আমাকে বলেছিলেন—তার হাতে ইনভেসটিগেশনের ভার পড়েছে। আপনি মনে হচ্ছে বেশ একটু ইন্টারেস্টেড ব্যাপারটায়, রায়সাহেব!

একটু আগেই তো বললাম মিঃ রায়চৌধুরী, মিত্রানী, মানে যে মেয়েটিকে খুন করা হয়েছে, আমার অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় একজন মাস্টারমশাইয়ের মেয়ে–

ঠিক আছে, আমি বরং জ্যোতিবাবুকে ডাকছি—তার কাছেই আপনি সব ডিটেসে পাবেন।

জ্যোতিভূষণ চাকী—বেশ একজন কর্মঠ-উৎসাহী অফিসার। বয়েস খুব বেশী নয়, ত্রিশ থেকে বত্রিশের মধ্যে—বলিষ্ঠ দোহারা চেহারা। জ্যোতিভূষণের সরেজমিন তদন্তের রিপোর্ট থেকেই সেদিনকার দুর্ঘটনার অনেক কিছুই জানতে পারল কিরীটী। ব্যাপারটা ঘটেছে ঐদিন বিকাল সাড়ে পাঁচটা থেকে ছটার মধ্যে কোন এক সময়ে।

মিনিট পনেরো-কুড়ির জন্য একটা প্রচণ্ড কালবৈশাখীর ঝড় ও ধুলোর ঘূর্ণি উঠেছিল। সব অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল। সেই ঝড় ও ধুলোর ঘূর্ণির মধ্যে বন্ধু ও বান্ধবীরা সব চারদিকে অতর্কিতে ছিটকে পড়েছিল। দিনটি ছিল শনিবার।

কালবৈশাখীর তাণ্ডব থেমে যাওয়ার পর প্রত্যেকে প্রত্যেককে খুঁজতে শুরু করে, একে অন্যর দেখা পায় কিন্তু দুজনের দেখা পাওয়া যায় না। মিত্রানী ঘোষাল আর সুহাস মিত্র। পরের ব্যাপারটা প্রণবেশের মুখেই শুনেছিল কিরীটী। প্রণবেশ যেমনটি বলেছিল, জ্যোতিভূষণের রিপোর্টেও তাই বলে। তারপর শিবপুর থানা অফিসার সুশীল নন্দীর রিপোর্ট।

পরের দিন সকালে হোমিসাইড্যাল স্কোয়াডের সঙ্গে সুশীল নন্দী স্পটে যান। স্পটে অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে ওঁরা কয়েকটি জিনিস পান।

ঠিক যেখানে মৃতদেহটা আবিষ্কৃত হয়েছিল, তার হাত পাঁচেক দূরে একটা ঝোপের ধারে একটা বেতের টুপি–কয়েকটা পোড়া চারমিনার সিগারেটের শেষাংশ—এবং মৃতদেহ যেখানে পড়েছিল গতরাত্রে, তার আশেপাশে কিছু রাঙা কাঁচের চুড়ির টুকরো–আরো কিছু দূরে একটা বায়নাকুলার সুশীল নন্দী পেয়েছেন।

সত্যি কথা বলতে কি, কিরীটীর আগমনে সুশীল নন্দী যেন মনের মধ্যে একটা উত্তেজনাই বোধ করেন। তাই তিনি বিশেষ উৎসাহ নিয়েই কিরীটীকে তাঁর অনুসন্ধানের কাহিনী আদ্যোপান্ত বর্ণনা করে একে একে ঐ উপরিউক্ত জিনিসগুলো দেখালেন।

বললেন—মিঃ রায়, এই জিনিসগুলো আমি অকুস্থানে পরের দিন সকালে অনুসন্ধানে গিয়ে কুড়িয়ে পেয়েছি।

কিরীটী বললে—ভালই করেছেন মিঃ নন্দী, এগুলো হয়তো মিত্রানীর হত্যারহস্য উদঘাটনে যথেষ্ট সাহায্য করবে। ভাল কথা, ওদের আলাদা ভাবে জবানবন্দি, মানে ওদের কোন স্টেটমেন্ট নেননি?

নিয়েছি বৈকি। তবে সবাই প্রায় এক কথাই বলেছে—এবং বিশেষ কোন তাৎপর্য আমি কারোর স্টেটমেন্টেই খুঁজে পাইনি। এই দেখুন না, পর পর প্রত্যেকের স্টেটমেন্টই আমি লিখে রেখেছি ও পরে ওদের দিয়ে সই করিয়ে নিয়েছি—বলতে বলতে লম্বা খাতাটা এগিয়ে দিলেন সুশীল নন্দী কিরীটীর দিকে।

কিরীটী স্টেটমেন্টগুলো পড়তে শুরু করল।

(১) প্রথমেই বিদ্যুৎ সরকার! বাপ অ্যাডভোকেট সমর সরকার—বনেদী ধনী পরিবারের ছেলে। বি. এ. পাস করবার পর বাপের এক বন্ধু নামী চিত্রপরিচালকের অ্যাসিস্ট্যান্ট হয়ে গত কয়েক বছর কাজ করছে। সুগঠিত ও স্বাস্থ্যবান-মিত্রানীর সঙ্গে পরিচয় অনেক দিনের-একই কলেজে তিন বৎসর ওরা পড়েছে। মধ্যে মধ্যে মিত্রানীর ওখানে যেতো—মিত্রানীও আসত-পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে টেলিফোনেও কথাবার্তা। হতো মধ্যে মধ্যে। ঝড় উঠবার পর কিছুক্ষণের জন্য দল থেকে ছিটকে পড়ে। তারপর অন্যান্য বন্ধুদের সাহায্যে যেভাবে মিত্রানীকে খুঁজে পায় তারই বর্ণনা। অবিবাহিত।

(২) সুহাস মিত্র-নিয়মিত ব্যায়াম করার ফলে সুগঠিত চেহারা, কলেজ জীবনে শুধুই যে সে একজন মেধাবী ছাত্র হিসাবেই পরিচিত ছিল তাই নয়—ভাল অ্যাথলেটও ছিল। প্রাক্তন কলেজ ব্ল। বাড়ির অবস্থা তেমন ভাল নয়, তাছাড়া বাপ পঙ্গু-বিবাহযোগ্যা দুটি বোন। তাই বি. এ. পাস করবার পরই একটা মার্চেন্ট অফিসে চাকরি নিতে বাধ্য হয়েছে। তারও স্টেটমেন্ট–অনেকটা বিদ্যুৎ সরকারের মতই-অকস্মাৎ ঝড় ওঠায় দল থেকে ছিটকে পড়ে ধুলোর অন্ধকারে কিছু চোখে দেখতে পাচ্ছিল না—দুপা কোনমতে এগোয় তো পাঁচ-পা পিছিয়ে আসে এলোমেলো ঝড়ো বাতাসে–তারপরই হঠাৎ একটা ভারী গাছের ডাল মাথার উপরে ভেঙে পড়ে। মাথায় আঘাত লেগে অচৈতন্য হয়ে যায়, বন্ধুরা এসে তাকে গাছের ডাল সরিয়ে উদ্ধার করে। অন্যান্য বন্ধু ও মিত্রানীর সঙ্গে বিশেষ একটা দেখাসাক্ষাৎ হতো না—অবিবাহিত।

(৩) মণিময় দত্ত—বি. এ. পাস করে এম. এ. এক বছর পড়েছিল। ঐ সময় তার মামার সুপারিশে খিদিরপুর ডকে একটা ভাল চাকরি পেয়ে গত কয়েক বছর ধরে সেখানেই চাকরি করছে। রোগা পাতলা চেহারা—হঠাৎ ঝড় ওঠায় দল থেকে ছিটকে পড়ে। তারপর ঝড় থামলে প্রথমেই সে বিদ্যুৎকে দেখতে পায়—তখন দুজনে খুঁজতে খুঁজতে অন্য সকলের দেখা পায়–সুহাস আর মিত্রানী বাদে-তারপর তার স্টেটমেন্ট বিদ্যুতেরই অনুরূপ। তারও অন্যান্য বন্ধুদের ও মিত্রানীর সঙ্গে বিশেষ একটা দেখাসাক্ষাৎ হতো না। বিবাহিত। একটা সন্তানের বাপ।

(৪) ক্ষিতীশ চাকী—বি. এ. পরীক্ষা দুবার দিয়ে পাস না করতে পেরে পড়া ছেড়ে দেয়–কোন বিশেষ রাজনৈতিক পার্টির সভ্য-সক্রিয় সভ্য। পার্টির কাজকর্ম নিয়েই সে সর্বদা ব্যস্ত থাকে—বাকী স্টেটমেন্ট তার অন্যান্যদেরই অনুরূপ। বিবাহিত।

(৫) অমিয় রায়-বি. এ. পাস করবার পর ওকালতি পাস করে আলিপুর কোর্টে নাম লিখিয়ে প্র্যাকটিস করছে বাপের জুনিয়ার হয়ে। সেও ঘটনার যা স্টেটমেন্ট দিয়েছে অন্যান্যদেরই অনুরূপ। বন্ধুদের সঙ্গে মধ্যে মধ্যে তার দেখা হতো। বিবাহিত—গত ফাল্গুনে বিবাহ করেছে।

(৬) সতীন্দ্র সান্যাল-আবলুশ কাঠের মত গাত্রবর্ণ। গোলগাল চেহারা। বাপ কেন্দ্রীয় সরকারের উচ্চপদস্থ অফিসার এবং বেশীরভাগই দেশে-বিদেশে চাকরির ব্যাপারে ঘুরতে হয় বলে—ওরা দুই বোন, এক ভাই ও মা কলকাতাতেই থাকেন। ফুড ডিপার্টমেন্টে ভাল চাকরি করে। অবিবাহিতবাকী স্টেটমেন্ট অন্যান্যদেরই অনুরূপ। বিবাহ হয়নি বটে এখনো, তবে স্থির হয়ে গিয়েছে।

(৭) কাজল বোস। দেখতে কালো। রোগা। বি. এ., বি. টি. পাস করে একটা স্কুলের অ্যাসিস্ট্যান্ট হেড-মিসট্রেস—বাপ নেই—মামা-মামীর কাছে মানুষ——স্কুল বোর্ডিংয়েই থাকে আগরপাড়ায়। বিবাহ হয়নি। কলকাতার বাইরে থাকায় বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে বিশেষ একটা দেখা হতো না–কদাচিৎ কখনো কালে-ভদ্রে, একমাত্র সুহাস মিত্র ছাড়া। সুহাসের সঙ্গে প্রায়ই তার দেখা হয়–বাকী ঘটনার স্টেটমেন্ট অন্য সকলের মতই।

(৮) পাপিয়া চক্রবর্তী। বি. এ. পাস এবং ভাল এ্যাথলেট। জীবনে অনেক কাপ মেডেল শীল্ড পেয়েছে। গাত্রবর্ণ উজ্জ্বল শ্যাম, অত্যন্ত স্মার্ট চেহারা, স্লিম ফিগার, কলকাতার একটা বড় অফিসে রিসেপশনিস্ট—ভাল মাইনে। অবিবাহিতা। সকলের সঙ্গেই মধ্যে মধ্যে দেখা হতো, বিশেষ করে মিত্রানী ও সুহাস মিত্রের সঙ্গে। তার বাকী স্টেটমেন্ট অন্যান্যদেরই অনুরূপ।

কিরীটী সকলেরই স্টেটমেন্ট বা জবানবন্দিগুলো পড়লো। তারপর একসময় সুশীল নন্দীর দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে বললে, এদের মধ্যে পাঁচজনের স্টেটমেন্টের কোন গুরুত্ব নেই–

সুশীল নন্দী বললেন, কার কার কথা বলছেন? মণিময়, ক্ষিতীশ, অমিয়, সতীন্দ্র আর পাপিয়া

হ্যাঁ, মণিময় দত্ত, ক্ষিতীশ চাকী, অমিয় রায়, সতীন্দ্র সান্যাল আর পাপিয়া চক্রবর্তী। —কিরীটী বললে।

কেন? প্রশ্নটা করে তাকালেন সুশীল নন্দী কিরীটীর মুখের দিকে।

কারণ, আমার মনে হয়—কিরীটী ধীরে ধীরে বলতে লাগল, যাদের কথা একটু আগে বলছিলাম, সেই পাঁচজনের সেদিনকার পিকনিকে উপস্থিতিটা নিছক একটা উপস্থিতি-বা অন্যান্যদের সঙ্গে অনেক দিন পরে একটা মিলনের আনন্দ বলে বোধ হয় ধরে নিতে পারেন। কেন এই কথাটা বলছি, আবার একটু পরিষ্কার করে বলি। তারপর একটু যেন থেমে পুনরায় তার অধসমাপ্ত কথার জের টেনে কিরীটী বলতে লাগল, দলের মধ্যে সেদিন ঐভাবে মিত্রানীর মৃত্যুর ব্যাপারটা রীতিমত রহস্যে ঘেরা এবং সে মৃত্যু স্বাভাবিক নয়-কেউ তাকে রুমালের ফাস গলায় দিয়ে হত্যা করেছে ঝড় ও ধুলোর ঘূর্ণির মধ্যে অন্যান্যদের অগোচরে।

হত্যা যখন করা হয়েছে, তখন নিশ্চয়ই কেউ না কেউ তাকে হত্যা করেছে এবং সঙ্গে সঙ্গে একটা প্রশ্ন জাগে—কে? কে তাকে হত্যা করলো! বা কে তাকে হত্যা করতে পারে! হয় তো বাইরের কেউ ঐ সময় তাকে হত্যা করেছে গলায় রুমালের ফাঁস দিয়ে, না হয় যারা ঐ মুহূর্তে ঐখানে উপস্থিত ছিল, তাদেরই মধ্যে কেউ। তাই নয় কি?

হ্যাঁ, মৃদু গলায় সুশীল নন্দী বললেন, কিন্তু

জানি। আপনি হয়তো বলতে চাইছেন, তারা দীর্ঘদিনের পরিচিত ও পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। কথাটা ঠিক এবং সেক্ষেত্রে কারোর প্রতি কারোর আক্রোশ থাকলে হয়তো অনেক আগেই তাকে হত্যা করত, সে ধরনের সুযোগ পেতে তার কোন অসুবিধা ছিল না। তবে ঐদিনই বা হত্যা করলো কেন! তাই নয় কি?

হ্যাঁ।

দেখুন, আপনি নিশ্চয়ই বিশ্বাস করবেন হত্যা দুই রকমের হয়—এক দীর্ঘ দিনের হত্যালিঙ্গা-হত্যাকারী একটা সুযোগের অপেক্ষায় থাকে সেটা হচ্ছে পূর্বপরিকল্পিত হত্যা—আর একটা হচ্ছে সাডেন পোভোকেশন-জনিত হত্যা। এখন কথা হচ্ছে মিত্রানীর ক্ষেত্রে কোন্টা হয়েছে! যদি প্রথমটাই ধরে নিই—তাহলে স্বভাবতই যে কথাটা আমাদের মনে হওয়া স্বাভাবিক, সেটা হচ্ছে হয়তো সেই হত্যাকারী মিত্রানীর পূর্ব-পরিচিত ছিল এবং সেই পরিচয়ের মধ্যে দিয়েই কোন কারণে সে মিত্রানীর প্রতি বিরূপ হয়ে ওঠে এবং সেই বিরূপতা হয়তো এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছেছিল—যার ফলে ঐ নিষ্ঠুর হত্যা সংঘটিত হয়েছে।

তাহলে আপনি বলতে চান মিঃ রায়—মিত্রানীর পরিচিত জনেদের মধ্যে কেউ ঠিক তাই—আর সেই পরিচিত জনদের কথা ভাবতে গেলে প্রথমেই ঐ বন্ধুদের কথাই মনে পড়া স্বাভাবিক নয় কি?

তা অবিশ্যি—

অবশ্যই ওরা ছাড়াও মিত্রানীর আরো পরিচিতজন থাকতে পারে—সেটা তখনই আমরা ভাববো, যখন সেদিন যারা উপস্থিত ছিল, তারা প্রত্যেকে সন্দেহের তালিকা থেকে মুক্তি পাবে। কিন্তু আগেই যে পাঁচজনের নাম করেছি তারা সেই তালিকা থেকে আমার মতে বাদ পড়ে।

কেন?

আপনার নেওয়া জবানবন্দি বা স্টেটমেন্টগুলো ভাল করে পরীক্ষা করে দেখুন, তাহলেই আপনার প্রশ্নের জবাব পাবেন,-মণিময়, ক্ষিতীশ, সতীন্দ্র ও পাপিয়া এরা একমাত্র পাপিয়া ব্যতীত–সকলেই যে যার জীবনে প্রতিষ্ঠিত, বিবাহিত, সংসারধর্ম করছে–এদের পক্ষে ঐ ধরনের একটা নৃশংস হত্যার ব্যাপারে লিপ্ত হওয়া স্বাভাবিক কি?

কেন? ওদের মধ্যেও তো কোন আক্রোশ বা ঈর্ষার কারণ থাকতে পারে মিত্রানীকে কেন্দ্র করে–সুশীল নন্দী বললেন।

তা থাকতে পারে হয়ত এবং যদি থাকেই, স্বভাবতই যে প্রশ্নটা আমার মনে হচ্ছে—কি কারণে আক্রোশ বা ঈর্ষা—

কত কারণ তো থাকতে পারে—সুশীল নন্দী বললেন।

কথাটা মিথ্যা বলেননি আপনি—তবু একটা কিন্তু থেকে যায়—

কিসের কিন্তু–

কিন্তুটা হচ্ছে মিত্রানী কি তাহলে তার কিছুটা অন্তত আভাস পেত না। শুধু তাই নয়—ওদের জবানবন্দি থেকেও হয়ত তার কিছুটা ইঙ্গিত আমরা পেতাম—যেটা বাকী দুজনার জবানবন্দি থেকে অর্থাৎ সুহাস মিত্র ও কাজল বোসের স্টেটমেন্ট থেকে আমরা পেতে পারি–কিন্তু সে কথা আমরা পরে ভাববো। তার আগে আমি আপনার একটু সাহায্য চাই–

বলুন কি সাহায্য চান?

আমি ওদের প্রত্যেকের সঙ্গে আলাদা আলাদা করে কথা বলতে চাই—

বেশ তো। সে আর এমন কঠিন কি! আমি ব্যবস্থা করবো।

যত তাড়াতাড়ি সম্ভব—

তাই হবে—

তাহলে আজ আমি উঠি। কি

রীটী বিদায় নিল। জ্যোতিভূষণও কিরীটীর সঙ্গে সঙ্গে বের হয়ে এলেন।

বেলা তখন অনেকটা গড়িয়ে গিয়েছে, বৈশাখের সূর্য মধ্য-গগনে প্রখর তাপ ছড়াচ্ছে।

গাড়িতে উঠতে হীরা সিং শুধায়, কিধার জায়গা সাব?

লালবাজার হয়ে চল—বাবুকে নামিয়ে দিয়ে যাবো।

গাড়ি চলেছে কলকাতার পথে–চলমান গাড়ির খোলা জানালাপথে আগুনের হল্কার মত তপ্ত হাওয়া যেন এসে চোখমুখ ঝলসে দিচ্ছে।

গাড়িতে উঠে একটা সিগারে অগ্নিসংযোগ করে কিরীটী। থানায় জ্যোতিভূষণ একটা কথাও বলেননি, দুজনের কথাবার্তা শুনে যাচ্ছিলেন।

কিরীটীর দিকে একবার তাকালেন জ্যোতিভূষণ, সিগার মুখে গাড়ির ব্যাক সীটে হেলান দিয়ে অন্যমনস্কভাবে বাইরের দিকে তাকিয়ে বসে আছে।

মিঃ রায়!

কিছু বলছিলেন জ্যোতিবাবু?

আচ্ছা, মিত্রানীর হত্যার ব্যাপারটা আপনার কি মনে হচ্ছে পূর্ব-পরিকল্পিত না সাড়ন প্রোভোকেশন!

অবশ্যই পূর্ব-পরিকল্পিত বলেই মনে হচ্ছে—কিন্তু এক জায়গায় ব্যাপারটা যেন ঠিক মিলছে না—

কি রকম? প্রশ্নটা করে তাকালেন জ্যোতিভূষণ কিরীটীর মুখের দিকে।

ধরুন যদি পূর্বপরিকল্পিত হয়—হত্যাকারীর পক্ষে চান্স পাওয়াটা যেন ফিফটিফিফটি হচ্ছে, অর্থাৎ যদি ঝড় ও ধুলোর আঁধি না উঠতো, চারিদিক একটা অন্ধকারের যবনিকায় না ঢেকে যেতো, হত্যাকারী হত্যা করবার সুযোগই পেতো না, অবিশ্যি যদি হত্যাকারী মিত্রানীর পরিচিত জনেদের মধ্যেই কেউ হয়ে থাকে।

আমার মনে আছে মিঃ রায়, সেদিনকার কাগজেও আবহাওয়ার পূর্বাভাসে দেখেছিলাম বিকালের দিকে বজ্রবিদ্যুৎসহ ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনার কথাটা। এবং পর পর কয়েকদিনই বিকেলের দিকে সে সময় ঝড়বৃষ্টি হচ্ছিল। হত্যাকারী হয়ত সেইটুকুর উপরেই ভরসা করে প্রস্তুত হয়েছিল।

হতে পারে—তাহলে চান্স পাওয়াটা হত্যাকারীর পক্ষে ফিফটি-ফিফটিই থেকে যাচ্ছে—অর্থাৎ চান্স না পেলে সেদিন সে মিত্রানীকে হত্যা করতে পারতো না—মিত্রানী খুন হতো না। ভাল কথা, ময়না তদন্তের রিপোর্টটা কবেক পাওয়া যাবে? পেলেই আমাকে একটু জানাবেন। আমি বাড়িতেই থাকবো।

 

জ্যোতিভূষণকে লালবাজারে নামিয়ে কিরীটী ফিরে এলো। এবং সারাটা দিন কিরীটী আর কোথাও বের হলো না।

লালবাজার থেকে ফোন এলো সন্ধ্যের দিকে।

কিরীটী কৃষ্ণা আর সুব্রত বসে বসে চা পান করছিল।

কিছুক্ষণ পূর্বে সুব্রত এসেছে।

ফোনের রিং হতেই কিরীটী বললে, দেখ তো সুব্রত, বোধ হয় লালবাজার থেকে জ্যোতিবাবু ফোন করছেন!

সুব্রত ফোনের রিসিভারটা তুলে নিল, হ্যালো—

কিরীটীবাবু আছেন?

আছে।

বলুন লালবাজার থেকে জ্যোতিভূষণ কথা বলছি।

এগিয়ে গিয়ে ফোনটা সুব্রতর হাত থেকে নিল কিরীটী। কিরীটী কথা বলছি, তারপর পেলেন পোস্টমর্টেম রিপোর্ট?

হ্যাঁ।

শ্বাসরোধ করে মৃত্যু ছাড়া দেহে আর কিছু পাওয়া গিয়েছে কি?

মিঃ রায়, মনে হচ্ছে আপনি যেন আরো কিছু আশা করছেন!

করেছিলাম বলেই তো আই অ্যাম ইগারলি ওয়েটিং ফর দি রিপোর্ট!

শি ওয়াজ রেপড। হাউ হরিবল!

হরি তো বটেই, তবে আমি ছায়ার পিছনে যেন কায়ার আভাস পাচ্ছি—দি ম্যান বিহাইন্ড দি কারটেন, আর এখন অত অস্পষ্ট মনে হচ্ছে না–ঠিক আছে, থ্যাঙ্ক ইউ।

রিপোর্টটা কি আপনি দেখতে চান?

পরে দরকার হলে আপনাকে জানাব।

ফোনটা নামিয়ে রেখে কিরীটী আবার এসে সোফায় বসল।

প্রশ্ন করে কৃষা, ময়না তদন্তের রিপোর্ট পেলে?

হ্যাঁ।

সুব্রত বললে, কার-মিত্রানী দেবীর?

হ্যাঁ, তার উপর বলাৎকার করা হয়েছিল—

তাহলে—সুব্রত যেন কি বলতে চায় কিন্তু তার বলা হলো না—

কিরীটী কতকটা যেন তাকে থামিয়ে দিয়েই বললে, তুই তো সব শুনেছিস সুব্রত—এবারে তোর কি মনে হয়, বাইরের কেউ, না ঐ মিত্রানীর পরিচিত জনদের মধ্যেই কেউ–

কৃষ্ণা জবাবটা দিল, বাইরের কেউও-তো হতে পারে।

কৃষ্ণা, না—গণ্ডিটা অত্যন্ত ছোট—মিত্রানীর পরিচিত জনদের মধ্যেই কেউ এবং সম্ভবত যারা ঐদিন ঐসময় ঐখানে উপস্থিত ছিল তাদেরই মধ্যে একজন—যার তিনটি বস্তুই ছিল, অর্থাৎ সুবিধা সুযোগ ও হত্যার উদ্দেশ্য!

কি উদ্দেশ্য হতে পারে? কৃষ্ণার প্রশ্ন।

ব্যর্থ প্রেমের আক্রোশ বা বহুদিন ধরে অবদমিত কামভাব, ঠিক প্যাশান নয়, মিত্রানীর প্রতি একটা লালসা—যে কারণে প্রথমে ঐ অকস্মাৎ হাতের মুঠোয় আসা সুযোগকে যেমন সে নষ্ট হতে দেয়নি, তেমনি বহুদিনের লালসার পরিতৃপ্তি সাধন করতেও সে এতটুকু পশ্চাদপদ হয়নি। কিঙ হার বাই থ্রোটিং অ্যান্ড দেন রেপড হার।

পর পর হত্যা ও ধর্ষণ—বিশেষ করে হত্যার নিষ্ঠুর পদ্ধতি দেখে সেটাই বেশী করে মনে হয়!

 

দিন দুই পরে শনিবার সুশীল নন্দীর ফোন এলো।

মিঃ রায়–কাল সকলে বিকালের দিকে আমার এখানে আসছে আপনি যেমন বলেছিলেন—

কিরীটী জবাবে বলেছিল, ঠিক আছে। আমি যাবো, কটার সময় তারা আসছে? এই ধরুন পাঁচটা থেকে সাড়ে পাঁচটার মধ্যে। আমার কথা কিছু তাদের বলছেন?

না, আমিই তাদের সঙ্গে আরো কিছু আলোচনা করতে চাই এইটুকুই বলেছি। সুশীল নন্দী বললেন।

ধন্যবাদ জানিয়ে অতঃপর কিরীটী ফোনের রিসিভারটা সবে নামিয়ে রেখেছে, সুব্রত এসে ঘরে ঢুকল।

এই যে সুব্রত–এসে গেছিস তুই, ভালই হলো, নচেৎ একটু পরেই হয়ত তোকে। ফোন করতাম।

সুব্রত কোন কথা না বলে একটা খালি সোফার উপরে উপবেশন করলো।

কিরীটীই বললে, কাল শনিবার সুশীল নন্দীর ওখানে একবার যাবো বিকেলের দিকে, তুইও থাকবি আমার সঙ্গে

মিত্রানীর বন্ধু ও বান্ধবীদের সঙ্গে কথা বলবি? সুব্রত শুধাল।

হ্যাঁ।

কিন্তু পাঁচজনকে তো আগেই লিস্ট থেকে বাদ দিয়েছিস তুই!

তা দিয়েছি ঠিকই, তবু সকলেরই মুখোমুখি একবার আমি হতে চাই—তাতে করে মিত্রানীর মৃত্যুতে কার মনে কি রকম রেখাপাত করেছে, কিছুটা অন্তত তার আভাস পাবো হয়তো।

কিন্তু ওরাই তো সব নয়—একজন তো বাকী থেকে যাচ্ছে, যদিও সে ঘটনার দিন স্পটে উপস্থিত ছিল না–

সজল চক্রবর্তী?

হ্যাঁ।

কথাটা যে আমার মনে হয়নি সুব্রত তা নয়, ঘটনার সময় সেদিনকার স্পটে সে না থাকলেও মিত্রানীর পরিচিত জনদের মধ্যে সেও একজন। সে নিশ্চয়ই এতদিনে ব্যাপারটা জানতে পেরেছে—কাজেই তার মনে মিত্রানীর হত্যার ব্যাপারটা কতখানি রেখাপাত করেছে তাও জানা প্রয়োজন তো বটেই, তাছাড়া মিত্রানী সম্পর্কে কোন নতুন তথ্যও হয়ত সে দিতে পারে।

কৃষ্ণা এতক্ষণ ঘরের এক কোণে বসে গভীর মনোযোগের সঙ্গে একখানা বই পড়ছিল, দুই বন্ধুর আলোচনায় কোন সাড়া দেয়নি, সে এবারে বললে, দেখো, একটা কথা তোমাকে গতকাল থেকেই বলবো ভাবছিলাম!

কি বল তো? স্ত্রীর মুখের দিকে তাকাল।

দলের মেয়ে দুটিকেই বোধ হয় তুমি তোমার বাদের মানে অমিশনের লিস্টে যোগ করে নিতে পারো–

তুমি বোধ হয় পোস্টমর্টেমের রিপোর্টটার কথাই ভাবছো কৃষ্ণা, কিন্তু এটা তো স্বীকার করবে ঐ চরম ঘটনাটা ঘটাবার আগে বিক্ষিপ্ত কোন ইতিহাস বা ঘটনা ঐ ব্যাপারের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।

তা যে পারে না আমি বলছি না, তবে

তাছাড়া এটাও তুমি নিশ্চয়ই স্বীকার করবে কৃষ্ণা, রহস্য উদঘাটনের ব্যাপারে এমন অনেক কিছু আপাতদৃষ্টিতে অপ্রয়োজনীয় মনে হলেও, পরে কোন এক সময় সেটা কোন মূল্যবান সূত্র হয়ে দাঁড়াতে পারে! কি জানো কৃষা, ঠিক সেই কারণে ঐ দশটি নরনারীর পরিচয়ের ইতিহাস যতটা সম্ভব আমি জানতে চাই—যদি কোথাও কিছু এমন খোঁজ পাই যেটা হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরে এগুতে পারব।

কৃষ্ণা আর কথা বাড়াল, সোফা থেকে উঠে পড়ে বললে, বোসো তোমরা, আমি চা নিয়ে আসি।

কৃষ্ণা ঘর থেকে বের হয়ে গেল।

Category: আলোকে আঁধারে
পূর্ববর্তী:
« ০৬. সে রাত্রে ছাড়া পেতে পেতে
পরবর্তী:
০৮. ওদের সকলের পৌঁছাবার আগেই »

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বাংলা লাইব্রেরি : উল্লেখযোগ্য বিভাগসমূহ

লেখক ও রচনা

অনুবাদ সাহিত্য

সেবা প্রকাশনী

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

কোরআন

হাদিস

ত্রিপিটক

মহাভারত

রামায়ণ

পুরাণ

গীতা

বাইবেল

বিবিধ রচনা

বাংলা ওসিআর

Download Bangla PDF

হেলথ

লাইব্রেরি – ফেসবুক – PDF

top↑