• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • নতুন সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • পুরানো সব ক্যাটাগরি
  • My Account →
  • নতুন সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • পুরানো সব ক্যাটাগরি
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

১৪. ভোর বেলাই বংশী এসেছে

লাইব্রেরি » বিমল মিত্র » সাহেব বিবি গোলাম » ১৪. ভোর বেলাই বংশী এসেছে

ভোর বেলাই বংশী এসেছে। বললে—শালাবাবু, আপনাকে কাল রাত্তিরে দু’বার খুঁজে গিয়েছি, ছোটমা পাঠিয়েছিল দেখতে।

ভূতনাথ তাড়াতাড়ি ‘মোহিনী-সিঁদুরের কৌটোটা প্যাকেটে মুড়ে বংশীর হাতে দিয়ে বললে—এটা গিয়ে বৌঠানকে দে, আর আর এই টাকা ক’টাও দিয়ে আয়।

বংশী বললে-ছোটমা বলেছে, আপনাকে নিজে যেতে। আজ ভোর বেলাই যে চিন্তাকে পাঠিয়েছিল আবার।

সকালবেলা। এখন আপিসে যাবার তাড়া। অনেক কাজ বাকি। ব্রজরাখাল ক’দিন বাড়ি আসছে না। মেতে আছে গুরুভাইদের নিয়ে। রান্না-বান্নার দিকটা একটু দেখতে হবে। রাত্রে রান্না করা হয়েছিল। তার বাসনগুলো মাজতে হবে। রাত্রের খাওয়ার জন্যে বাজারেও একবার যাওয়ার দরকার।

ভূতনাথ বললে—তা হলে আজ রাত্রে তুই আসিস, আমি নিজে গিয়ে বৌঠানকে দিয়ে আসবো’খন।

বংশী চলে গেল কিন্তু আপিসে যাবার পথে মনে পড়লো। সন্ধ্যে বেলা তো ননীলালের সঙ্গে দেখা করার কথা আছে তার। হেদোর ধারে দাঁড়িয়ে থাকবে যে সে।

একবার মনে হলো যাবে না সে। আর কিসের সম্পর্ক তার ননীলালের সঙ্গে। ননীলালের কাছ থেকে আর কিছু আশা রাখে না সে।

আপিসে যেতে পাঠকজী হাসতে হাসতে এল। সেলাম করলো।

ভূতনাথ জিজ্ঞেস করলে—অত হাসিমুখ কেন পাঠকজী?

লম্বা পাঞ্জাবী পরা ফলাহারী পাঠক। এখনও বুঝি কুস্তি করে। ভারী জোয়ান চেহারা। পরিশ্রমে কাবু হয় না, হনুমানজীর ওপর সমস্ত ভার ছেড়ে দিয়েছে জীবনের। গোঁফে তা দেয়।

ভূতনাথ আবার জিজ্ঞেস করলে—মাইনে বাড়লো নাকি পাঠকজী তোমার।

পাঠকজী বলেছে—যতদিন দিদিমণি থাকবে বাড়িতে, ততদিন তার মাইনে বাড়বার কোনো আশা নেই। তারপর বলে—লেকিন হনুমানজী রাখে তো মারে কৌন, কেরানীবাবু?

পাঠকজীর বয়স বেশি নয়। কিন্তু প্রচুর স্বাস্থ্যের জন্যে একটু বয়স দেখায়। কারখানায় বসে প্যাকেট তৈরি করে আর ভজন গায় আপন মনে। বেপরোয়া মানুষ। কত কেরানীবাবু এ-বাড়িতে এল গেল, পাঠকজী কিন্তু হনুমানজীর কৃপায় এখনও টিকে আছে। কেন যে টিকে আছে কে জানে।

পাঠকজীকে জিজ্ঞাসা করলে বলে—সব হনুমানজীর কিরপা হুজুর।

লোকটা হনুমানজীর কথা বলে বটে, কিন্তু ওই পর্যন্তই। মুখেই ওর যত ভক্তি। ভূতনাথের কতদিন সন্দেহ হয়েছে, আপিস থেকে যেন চুরিটা চামারিটা করে। এখানে বউ নেই। বলে–বিয়ে করেনি। আসলে বিয়ে করেছিল, বউ মারা গিয়েছে। খবর পেয়েছে ভূতনাথ। এই বাড়ির এক কোণে একটা ছোট ঘরে রান্না করে আর রাত্রে সেখানেই শুয়ে থাকে। এ-বাড়ির অনেক দিনের লোক।

—তা হাসি কেন অত পাঠকজী?

এবার হাসির কারণটা প্রকাশ করে বললে পাঠক। পাঠকও তা হলে খবর পেয়েছে? ফলাহারীর মনে হয়েছে—দিদিমণির বিয়ের পর শ্বশুর ঘরে তো চলে যাবে দিদিমণি, তখন বাবুকে বলে মাইনেটা বাড়িয়ে নেবে সে। বাবু তো লোক ভালো।

ভূতনাথও কিছু বললে না। দরকার নেই প্রকাশ করে দিয়ে। আশায় থাকা ভালো।

—আপনারও ভালো হবে কেরানীবাবু, দেখবেন।

কে জানে হয় তো সত্যি! পাঠকজী এতদিন ধরে দেখছে—ও হয় তত ঠিকই চিনেছে জবাকে! কিন্তু ভূতনাথের কিছুতেই মাথায় আসে না ব্যাপারটা। রহস্যময়ী মনে হয় জবাকে। যেন পাঠকজীর কথাটাও পুরোপুরি বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে না। অমন যার বাবা, মাকেও যেন ভালো বলেই মনে হয়। অন্তত পাগল হবার আগে জবার মতন অমন অস্থির প্রকৃতির নিশ্চয়ই ছিলো না। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই কেমন ধীর-স্থির। আবেগ আছে কিন্তু অবিবেচক নয় যেন। শুধু জবার বেলাতেই একটু অন্ধ। অথচ জবা যেন বাড়ির কাউকেই মানুষ বলে মনে করে না। যেন তারা সবাই জবারই কর্মচারী। ইচ্ছে করলে জবা তাদের বরখাস্ত করতে পারে। একটু যেন বেশি সংসারী। হিসেবী। কে-কোথায় ফাঁকি দিচ্ছে, সেদিকে যেন গোপনে দৃষ্টিও রাখে। কথায় ঝাল মেশানো। ভূতনাথ ভেবে দেখলে—তার জানা-শোনা কোনো মেয়ের সঙ্গেই জবার যেন কোনো মিল নেই। রাধা ছিল সরল সাদাসিদে। ব্রজরাখালের স্ত্রী হয়েও সে যে নন্দজ্যাঠার মেয়ে, তা সে ভোলেনি। আর আন্নাসে ছিলো ছেলেমানুষ। গাছে ওঠাতেও যেমন, আবার সই-এর বিয়ের বাসর জাগতেও তেমনি। আর হরিদাসী ছিল ছোটবেলা থেকেই গিন্নী। বিয়ে হবার আগেই যেন সে স্ত্রী হয়ে গিয়েছে। আর বৌঠান! পটেশ্বরী বৌঠানের সঙ্গে মাত্র একদিনের আলাপ। ‘কিন্তু তার সম্বন্ধে এত কথা শুনেছে—যেন তার সব জানা হয়ে গিয়েছে। বৌঠান তো ভূতনাথের চেয়ে বয়সে কিছু ছোট, কিন্তু তবু যেন সামনে গেলে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে ভালো লাগে। মনে হয় মাথাটা ঠেকিয়ে রাখে আলোপর পা-জোড়ার ওপর। বৌঠান যেন একাধারে সব। মা হয়নি বৌঠান, কিন্তু মা হলেই যেন মানাতো। স্ত্রীর মর্যাদা পায়নি বৌঠান, কিন্তু ছোটবাবু চাইলেও যেন তাকে সহধর্মিণী করে নিতে পারবেন না—বৌঠান যেন ব্যক্তিত্বে ছোটবাবুর চেয়েও উঁচুতে। আর এ-বাড়ির জবা। জবা সত্যিই রহস্যময়ী! ধরা সে দেয় না, কিন্তু কেউ ধরে এটাই যেন সে চায়। কিন্তু নিজের আভিজাত্য যেন সমস্ত হৃদয় জুড়ে বসেছে। স্নেহ মমতা দয়া দাক্ষিণ্য প্রেম ভালোবাসা সমস্ত তার কাছে তার পরে।

কাজ করতে করতে সেদিন সন্ধ্যে হয়ে গিয়েছে। হঠাৎ একটা জরুরি কাগজ নিয়ে ওপরে যেতে হলো ভূতনাথকে। সুবিনয়বাবুর সই দরকার। সিঁড়িতে উঠে ডান দিকে হলের মধ্যে যাবার মুখে হঠাৎ থমকে দাঁড়াতে হলো। ওপাশেই সুবিনয়বাবুর সঙ্গে জবার কথা হচ্ছে। খানিকটা কানে আসতেই ভূতনাথ সেখানে দাঁড়িয়ে পড়লো।

সুবিনয়বাবু বলছেন—তুমি পছন্দ করেছে—আমি এতে কী বলবো মা।

জবা বলছে—তবু আপনি একবার বলুন আপনার অনুমতি আছে এ বিয়েতে।

—আমি তত কোনো দিন তোমার কোনো ইচ্ছেতে বাধা দিইনি মা, নিজে বরাবর বাবাকে দুঃখ দিয়েছি বলে—আমি চাইনে মা তোমার কোনো ইচ্ছেতে আমি বাধাস্বরূপ হই—আর তোমার মা যদি ভালো থাকতেন তো তাকে আমি জিজ্ঞেস করে দেখতাম, কিন্তু তিনি তো এখন এ সংসারের বাইরে।

জবা খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বললে—কিন্তু আপনি তো দেখেছেন বাবা–আপনি তো চিনেছেন তাকে।

শুধু একদিন নয়, ওরা আমাদের সমাজের পুরোনো লোক— ওকে বিদ্বান বুদ্ধিমান আর খুব স্থিরবুদ্ধি বলে মনে হয়েছে আমার, ওর বাবাকে আমি বহুদিন থেকে চিনি। তোমার জন্মদিনে যারা যারা এসেছিলেন, তাঁদের মধ্যে থেকে তুমি ঠিক মানুষটিকেই বেছে নিয়েছে বলে মনে করি—আমি আশীর্বাদ করি, তোমরা সুখী হবে।

জবা বললে—কিন্তু কি জানি কেমন যেন ভয় করছে আমার। আমি আপনাকে ছেড়ে থাকবো কেমন করে?

—তুমি থাকবে মা আমার কাছে—তোমরা দুজনেই থাকবে। নইলে এসব কে দেখবে, আমরা আর ক’দিন? উনি তো

-থাকার মধ্যে—আর আমি? যতদিন বেঁচে থাকি আমাকেও তোমরাই দেখবে—দেখবে না মা?

জবা চুপ করে রইল।

সুবিনয়বাবু বললেন—আর এই ‘মোহিনী-সিঁদুর’, ওটা যতদিন আছে থাক, তোমরা আজকালকার ছেলেমেয়ে, যদি ইচ্ছে হয় চালিও, আর যদি না চলে তবে ক্ষতিও নেই। তোমাদের জন্যে যথেষ্ট অর্থ রেখে যাবো মা–তোমাদের কোনো দিন উপার্জন করতে হবে না, তবে যদি পারো অন্য ব্যবসা করো—নতুন যুগ আসছে। আমি আর কিছু চাইনে, পরম গতিও চাই না, অষ্টসিদ্ধিও চাই না। সেই গানটা একবার গাইবি মা, অনেক দিন শুনিনিজয়জয়ন্তীর ধ্রুপদ-নাথ তুমি ব্ৰহ্ম তুমি বিষ্ণু–

জবা একটু পরেই গান আরম্ভ করলে—

নাথ তুমি ব্ৰহ্ম তুমি বিষ্ণু
তুমি ঈশ তুমি মহেশ
তুমি আদি তুমি অন্ত,
তুমি অনাদি তুমি অশেষ…

নিঃশ্বব্দে ভূতনাথ সিঁড়ি দিয়ে নেমে এল। তখনও জবার গান চলেছে। কাল সকাল বেলা কাগজটা সই করালেই চলবে। টেবিল পরিষ্কার করে আরো খানিকক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে গানটা শুনতে লাগলো ভূতনাথ। গানে সত্যিই যেন জবার তুলনা নেই। অন্তত এই একটা বিষয়ে সে যেন সকলের চেয়ে বড়।

রাস্তা দিয়ে সোজা আসতে আসতে একবার সময়টা আন্দাজ করলে। ননী হয় তো হেদোর ধারে দাঁড়িয়ে আছে এতক্ষণ। বাঁ দিকের একটা গলি দিয়ে সোজা গেলেই হেদোর কোণটা পড়বে। ভূতনাথ হেদোর সামনে এসে দাঁড়াতেই চারপাশে নজর দিয়ে দেখলে। মনে হলো দক্ষিণ দিকের একটা আলোর নিচে যেন ননীলাল দাঁড়িয়ে আছে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছে। কাছে যেতেই ভুল ভাঙলো। ননীলাল নয়, অন্য লোক। অনেকটা যেন ভৈরববাবুর মতন দেখতে। আরো খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো ভূতনাথ। তবে হয়তো তার দেরি দেখে চলেই গিয়েছে। ভালোই হয়েছে। ভূতনাথ রাস্তায় পা বাড়িয়েই ভাবলে ভালোই হয়েছে। দেখা হয়ে গেলে আর এক কাণ্ড হতো। হয় তো এড়াতে পারতো না।

আবার বড়বাড়ির দিকে ঘোর পথ দিয়ে চলতে লাগলো ভূতনাথ। তাড়াতাড়ি পেঁছুতে হবে। বৌঠানকে সিঁদুরটা দিতে হবে আজ। হঠাৎ পেছনে কে যেন ডাকলে—শালাবাবু

অবাক হয়ে গিয়েছে ভূতনাথ। এখানে এত রাত্রে কে তাকে ওই নামে ডাকবে। ভালো করে দেখে ভূতনাথ বললে-শশী! তুই!

ছুটুকবাবুর চাকর-শশী! শশীর এ কী চেহারা হয়েছে। এত রাত্রে এখানে কেন? গানের আসর কি তবে বসছে না আজ?

শশী বললে—শালাবাবু কিছু পয়সা দিতে পারেন?

পয়সা! পয়সা তো সঙ্গে নিয়ে আসেনি ভূতনাথ। বললে—পয়সা কি হবে? আর এত রাত্রে এখানে কেন তুই? ছুটুকবাবু কোথায়?

—আজ্ঞে ছুটুকবাবু তাড়িয়ে দিয়েছে আমায়।

শণীর চুল উস্কোখুস্কো। মনে হয় যেন অনেকদিন খায়নি। অথচ শশীর চুলের কি বাহার ছিল। ঢেউ-খেলানো চুলটার কী কসরৎ করতে। কাল-পরশুই যেন দেখেছে বড়বাড়িতে।

—কেন, তোকে তাড়িয়ে দিলে কেন?

সঙ্গে সঙ্গে শশীও চলতে লাগলো। বললে—এতদিন ছুটুকবাবুর সেবা করলাম, আপনি তো দেখেছেন সব, গানের আসরে আমি না হলে চলতো না, রাত একটা দুটো পর্যন্ত আমি নিজের হাতে সিদ্ধি বেটেছি, গেলাশ সাজিয়েছি, এখন আমার অসুখ হতেই তাড়িয়ে দিলে।

ভূতনাথ ভালো করে শশীর আপাদমস্তক দেখলে। রোগটা কী! জিজ্ঞেস করলে রোগটা কি তোর?

শশী শালাবাবুর পায়ে হাত দিয়ে মাথায় ঠেকালে। বললে—এই বামুনের পা ছুঁয়ে বলছি, মাইরি শালাবাবু জগন্নাথের দিব্বি, আমার কোনো দোষ নেই, আমি বাড়ির বাইরে একটা রাতও কাটাই না, নেশা-ভাঙটা পর্যন্ত করি না, আমার নামে মিছিমিছি দোষ দিয়েছে গিরি।

—গিরি!

–হ্যাঁ, মেজমা’র ঝি গিরি।

—সে কেন লাগবে তোর পেছনে?

—আপনি সব জানেন না শালাবাবু, গানের আসর যখন শেষ হয়, তখন কতদিন ঘুম পায় আমার, কিন্তু তখন গিরি আসে ছুটুকবাবুর ঘরে। ছুটুকবাবু তখন নেশায় অজ্ঞান থাকে, আমি হেন চাকর বলেই সব কষ্ট মুখ বুজে সহ্য করি।

ভূতনাথ যেন কিছু বুঝতে পারলে। গিরির চেহারাটা কল্পনা করার চেষ্টা করলে ভূতনাথ। হঠাৎ দেখা হয়ে গেলে গিরির সেই লম্বা ঘোমটা টেনে দেওয়া। আর অসাক্ষাতে বাড়ির মধ্যে গলা ফাটিয়ে ঝগড়া করা। তারপর সেই প্রথম রাত্রে যেদিন ছুটুকবাবুর আসরে তবলা বাজাতে গিয়েছিল, সেদিন সেই মধ্যরাত্রের অন্ধকারে ঝাপসা ছায়ামূর্তি।

শশী বললে-বংশীকে জিজ্ঞেস করে দেখবেন শালাবাবু–ছুটুকবাবুর যখন অসুখ হয়েছিল এই শশী সেদিন কি সেবা করেছিল, ব্যথায় ছুটুকবাবু ছটফট করেছে, নিজের ছুচিবেয়ে মা পর্যন্ত কাছে মাড়ায়নি, এই শশীই সেদিন পূজ-রক্ত পরিষ্কার করে দিয়েছে, কাপড় সাফ করে দিয়েছে। বাবুদের বেলায় কোনো দোষ নেই— চাকরদের বেলাতেই যত অশুদ্ধ।

বাড়ির কাছাকাছি এসে গিয়েছিল হাঁটতে হাঁটতে।

শশী বললে—আর ওদিকে যাবে না হুজুর, মধুসূদন দেখতে পেলেই অনগ্ধ বাধাবে।

—মধুসূদন কী করবে তোর!

—আজ্ঞে, মধুসূদন কি কম লোক, বলে—চাবুক মেরে পিঠের চামড়া তুলে দেবে এ তল্লাটে এলে—অথচ বুড়ো সব জানে, কার দোষ, কার দোষ নয়, সব জানে বুড়ো। একটা পয়সা নেই যে দেশে চলে যাই।

শেষ পর্যন্ত হতাশ হয়েই শশী চলে গেল।

বড়বাড়িতে ঢোকবার মুখে এক ভদ্রলোকের সঙ্গে মুখখামুখি হয়ে গেল ভূতনাথের।

ভদ্রলোক সামনা-সামনি এসে বললেন—ব্রজরাখালবাবু এ বাড়িতে থাকেন?

ভূতনাথ বললো।

একবার ডেকে দেবেন তাঁকে, বড় দরকার। ভূতনাথ তাড়াতাড়ি ভেতরে এসে চারদিক দেখে নিলে। আশেপাশের দু’একজনকে জিজ্ঞেস করলে। তারপর এসে বললে—তিনি

তো বাড়িতে নেই এখন–কিছু বলতে হবে?

ভদ্রলোক কেমন যেন অস্থিরভাবে এদিক-ওদিক চাইতে লাগলেন। বললেন—আজ তিন-চার দিন দেখা নেই তার—এখানে আছেন তো তিনি?

–আছেন এখানে, তবে সব দিন এখানে আসেন না রাত্রে ভূতনাথ বললে।

—আজ যদি আসেন তো একটা খবর দেবেন তাকে, বলবেন, মেছোবাজারের সেই ফুলবালা দাসী, আজ দুপুর থেকে আবার ভেদবমি শুরু হয়েছে তার, একটা ওষুধ নিয়ে যেন যান আজ রাত্রেইব্রজরাখালবাবু আপনার কে হন?

—আমার ভগ্নীপতি।

ভদ্রলোক যেন খুব ব্যস্ত। বললেন—তাহলে এখন চলি আমি, বলবেন তাকে, ভুলবেন না যেন।

ভূতনাথ বললে—ফুলবালা দাসীর নাম করলেই চিনতে পারবেন তো তিনি?

ভদ্রলোক ফিরে দাঁড়ালেন। বললেন—তা চিনবেন বৈকি! উনি আর শিবনাথ শাস্ত্রী ফুলবালাকে পাদরীদের হাত থেকে বাঁচালেন, হিন্দুর সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দিলেন, সেই ফুলবালা আবার বিধবা হলো। একটা পয়সা নেই হাতে যে, নিজের পেটটা চালায়,ওই ব্ৰজরাখালবাবু না থাকলে ফুলবালা হয় তো দেখতেন কবে খৃস্টান হয়ে যেতো। নিজের পকেট থেকে মাসোহারা দিয়ে এতদিন চালাচ্ছেন–আর নামটা ভুলে যাবেন? আর যদিই চিনতে না পারেন তো বলবেন কদম এসেছিল।

–কদম?

–হ্যাঁ, আমার নাম। আমার ডাক-নাম। আর পুরো নামটা যদি মনে থাকে তো বলবেন—যুবক সঙ্ঘর কদমকেশর বোস। তারপর যাবার সময় বললে—উনিই তো যুবক সঙ্ঘের প্রেসিডেন্ট কি না।

হন হন করে ভদ্রলোক চলে গেলেন। এতক্ষণে ভূতনাথ ভালো করে দেখবার চেষ্টা করলে–কামিজ গায়ে, অল্প-অল্প দাড়ি গোঁফ উঠেছে। অন্ধকারে ঠিক ঠাহর হয় না, তবু বেশি বয়স হয়নি যেন ভদ্রলোকের। লোকটি অন্ধকারের মধ্যে মিলিয়ে যাবার পর ভূতনাথ বাড়ির ভেতর আবার ঢুকলো।

Category: সাহেব বিবি গোলাম
পূর্ববর্তী:
« ১৩. ১৮৯৭ সাল
পরবর্তী:
১৫. সেদিন আবার »

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বাংলা লাইব্রেরি : উল্লেখযোগ্য বিভাগসমূহ

লেখক ও রচনা

অনুবাদ সাহিত্য

সেবা প্রকাশনী

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

কোরআন

হাদিস

ত্রিপিটক

মহাভারত

রামায়ণ

পুরাণ

গীতা

বাইবেল

বিবিধ রচনা

বাংলা ওসিআর

Download Bangla PDF

হেলথ

লাইব্রেরি – ফেসবুক – PDF

top↑