৬১-৬৩. ছয় ঘর মুসলমান হয়নি বটে

৬১.

ছয় ঘর মুসলমান হয়নি বটে, কিন্তু ভোজ খেতে রূপা, শরমী এবং এরকম দু-চারজন বাদে আর সবাই গিয়েছিল। জীবনে ভোজ খাওয়ার সুযোগ বাজিকরের কটাই বা আসে।

শারিবা এখনো হাসপাতালে। পলবি-হানিফের বিয়ে হয় উৎসবের পরদিনই বিশিষ্ট অতিথিদের সাক্ষী রেখে। পরদিন তারা হাসপাতালে শারিবার সঙ্গে দেখা করে।

শারিবাকে আরো দশদিন হাসপাতালে থাকতে হয়। সেই দশদিন হানিফ-পলবিও শহরে থাকে। শারিবা ছাড়া পেলে হানিফ ছুটি নেয় অফিস থেকে। সে পলবিকে নিয়ে মালদায় নিজের বাড়ি যাবে। যদিও খুব আপন বলতে সেখানে তার কেউ নেই, তবু তো স্বজন কিছু আছে।

বাদা-কিসমৎ আর মোহরের যাবতীয় কথা শারিবা এদের কাছ থেকে শোনে। একদিন রূপা আসে। বলে, ঘরোৎ চল শারিবা।

ঘরোৎ গিয়া খামো কি?

হামি জিন্দা আছি, শারিবা।

তুমু খাটবেন, আর হামি বসে খামো?

এলা এটা কথা? শরীল সারলে নিজেই খাটবি।

আসলে ভাঙা বাজিকরপায় এই মুহূর্তে শারিবার যেতে মন চাইছিল না। সে যে কোনো একটা ছুতো খুঁজছিল। শেষপর্যন্ত রূপাকে সরাসরিই বলে, তুমু ফিরা যান, বাপ। হামি হানিফ ভাইয়ের কাছে কেছুদিন থাকমো। এটাকাজ কী চাকরি যদি পাওয়া যায়, সি চেষ্টাই দেখমো।

রূপা একটু শঙ্কিত হয়। বলে, তুই কি হামাক্ পর করি দিবার চাছিস, শারিবা?

শারিবা উঠে এসে বাপের দু-হাত নিজের হাতে নেয়। বলে, এংকা ভাবেন ক্যান, বাপ? কাজ কাম তত খুঁজি নিবার হবে। হানিফ ভাই সরকারি লোক, ভালোও বাসেন হামাক্। কেছুদিন দেখবা দেন। শরীলটা এটু সুস্থ হলে দেখশ করি আসমমা সবার সাথে।

একটু থেমে আবার বলে, আরেকটা কথা, হামার মাওরে বলেন, আমি তারই বেটা আছি, পর হই নাই।

রূপা শারিবার কথার বাস্তব দিকটা মেনে নেয় অগত্যা। হানিফকে বলে, জামাই তুমার হাতে রাখি গেলাম হামার পরানের পরান। দেখভাল করবা আর ফিরোৎ দিবা।

হানিফ তাকে অভয় দেয়। রূপা ফিরে আসে।

 

৬২.

মালদায় যাওয়ার পরই হানিফ একত্রে দুটি চেষ্টা করতে থাকে। প্রথমত, শারিবার একটা গতি করা, আর তারপরে নিজের বদলির ব্যবস্থা। তার বিভাগীয় অফিস যেহেতু মালদাতেই, বদলির ব্যাপারে খুব একটা বেগ পেতে হয় না তাকে।

শারিবাকে নিয়ে তারপর সে যায় একটা রাস্তার পাশের চালাওঠা মোটর গ্যারেজে। চার-পাঁচজন যুবক সেখানে নানা ধরনের কাজ করে। মোটরের চাকায় পাম্প করা থেকে ওয়েলডিং অবধি অনেক কিছুই সেখানে হয়। অথচ গ্যারেজ বা দোকানটি অত্যন্ত অগোছালো, যেন দু-দিনের জন্য ব্যবস্থা। এক বৃদ্ধ, গোলগোল কাচের চশমা নাকে, একটা বড় মাপের খাকি জামা গায়ে, যার দু-টো হাতাই বগলের কাছ থেকে নেই, তদারক করে যুবকদের। যতই অগোছালো থোক, কাজের ব্যস্ততা খুবই।

হানিফ বৃদ্ধের কাছে গিয়ে বলে, চাচা আসলাম।

সে একটা খাটিয়ায় বসে পড়ে বৃদ্ধের পাশেবৃদ্ধ চশমার মোটা কাচে ঠাহর করে বলে, কোন শালারে, সকালবেলা গলায় মধু।

আমি হানিফ, চাচা। অনেকদিন তুমার গাল শুনি না, তাই কলজেটা কেমন ড্যাপ মারি গিছে। দাও, দুটাশুনাও তো!

ওরে আমার শালারে, সক্কালবেলা, বিনিপয়সায় গাল শুনবে! ছাড় শালা, সিগ্রেট ছাড়, চা বল সব্বার জন্যে।

চা, সিগারেট, খোশগল্প হয়। হানিফের বিয়ের কথা শুনে আরেক প্রস্থ গালি শোনায় চাচা হানিফকে। শেষে শারিবাকে দেখিয়ে বলে, ও গাঁওয়ার ধর্মেন্দরটা কুনঠি থিকা আনলি?

ও শারিবা, আমার শালা।

শারিবা! তুই কি হিঁদু বিহা করেছিস নাকি হানফ?

আরে না না হিঁদু নয়, মুসলমানই। সিই তোমাদের উকিলবাবু আমিনুল সাহেব গেল না বাদা-কিসমতে মুসলমান করাতে, সেই মুসলমান।

নুতন মুসলমান? কামাল কল্লিরে, শোরের ছাও।

এখন কথাটা শোনো। শারিবারে কাম শিখাতে হবে, মেকানির কাম।

পারব না, আমার লোকের দরকার নাই।

তোমার পয়সা থোরাই খাবে ও। নিজে খাটে খাবে। এখন কামটা তো শিখাও।

হ্যাঁ, ওই বলে আমার ঘাড়ে চাপায়ে, নিজে ফুরুৎ হবা। ওসব তাল আমি বুঝি না!

শেষপর্যন্ত চাচার দোকানে শারিবার শিক্ষানবিশি শুরু হয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত, কখনো কখনো রাতেও কালিঝুলি মেখে শারিবা চাচার কাছ থেকে কাজ শেখে। ইঞ্জিন, চেসিস, কারবুরেটর, পেট্রল, ডিজেল এসব অদ্ভুত শব্দ শেখে। চেনে ক্লাচ, গিয়ার, ব্রেকের নিখুঁত কারিকুরি। চাচার কাছে গাল খায়, চড়চাপড়ও খায়। এইভাবে দিন মাস পার হয়ে বছর গড়ায়।

দু-বছর পরে শারিবা বলে, হানিফ ভাই, একবার বাড়ি যামো।

পলবি বলে, আম্মোও যামো। কতদিন বাপরে দেখি না, আপন মানুষ দেখি না।

 

একবছরে বাদা-কিসমতে পরিবর্তন কিছু হয়েছে। রাস্তা আরো দীর্ঘ হয়েছে। মোহরের হাট আরো বড় হয়েছে, আরো অনেক স্থায়ী দোকান হয়েছে। এখন নিয়মিত বাসও আসে।

বাজিকরপাড়ায় হিন্দু-মুসলমান পার্থক্য আবছা হলেও চোখে পড়ে। কিন্তু মানুষগুলো একইরকম রয়ে গেছে। সেই একই নিরম্ন হাঘরে সমাজ বহির্ভূত অসহায় বাজিকর।

কেমন আছেন, মামা?

ইয়াসিন দু-বছরে অনেক বৃদ্ধ হয়েছে। বলে, বাপ যেমন ছিলাম তেমনই আছি। তোর বাপই ঠিক বলিছিল, হামরা পাখমারা আর বাদিয়া মোছলমানের মতোই বেজাত মোছলমান হেই গেলাম।

বেজাত মোছলমান!

হাঁ! হাজিসাহেব কহেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া, মোছলমানের কিরাকাম মানো, হাদিস মানো, তবিই তুমু সাচ্চা মোছলমান হবা। জাতে উঠবা। তা বাপ, সবই তো করি, কেন্তু জাতে তো উঠি না!

জাতে উঠেন না!

না বাপ, বেটিগুলার বিহা হয় না। মোছলমান হয়া হামরাদের ঘর তো ফের কমি গেল।

হাজিসাহেরা একসাথ ওঠ বস করেন না?

নামাজ পড়া যদি একসাথ ওঠ বস হয়, তো সিটা করে, আর কেছু লয়।

খানাপিনা?

ইয়াসিন মাথা নাড়ে।

কাজ কাম দেয়?

এনা দেয়, যেংকা ছিল।

আধি জমি?

আধি জমি রেকড হবার কথা শুনা যাচ্ছে। কাজিই এখন আর আধি লয়, এখন আলগা চুক্তি, মুনিষ-মাহির কি দিন-পাটা।

শারিবা চুপ করে বসে থাকে।

শা-জাদি বলে, ছাড় ইসব ছিড়া কথা, আন্ কথা ক’। টাউনোৎ খুব খাটনি তোর, না? তাই মুখটা এনা কালা হইছে?

শা-জাদি বলে, বয়স কত হোই গেল রে শারিবা, ইবার বিয়া সাদি করবা না?

শারিবা তখন অন্য কথা ভাবে। শারিবা ভাবে তার নানির কথা। তার নানি যেসব প্রাচীন কথা বলত, সেইসব পাপপুণ্যের কথা। বাজিকরদের নসিবের কথা। লুবিনি ধূসর চোখে পাতালু নদীর বাঁকের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকত জ্যোৎস্না রাতে। তারপর কাঁপা কাঁপা হাতে শাবিবাকে অলীক সব দৃশ্য দেখাত। লুবিনি বলত, হাঁই দেখ শারিবা, হাই দেখ রহু। ও

রহু কি করে, নানি?

রহু বাজিকরদের দেখে।

হামি দেখশর পাচ্ছি নাই, নানি।

নমনকুড়িতে পীতেম বলত, হাঁই দেখ লুবিনি, হাঁই দেখ রহু।

রহু কি করে নানা?

রহু বাজিকরদের দেখে।

হামি দেখার পাচ্ছি নাই, নানা।

রাজমহলের গাছের নিচে দাঁড়িয়ে অশরীরী দনু বলত, হাঁই দেখ পীতেম, হাঁই দেখ রহু।

পীতেম দেখতে পেত রহুকে, দেখতে পেত জামিরও। কিন্তু সেই কিশোরী বয়সে লুবিনি রহুকে দেখতে পায়নি, অথচ মরার আগে সে বহুকে দেখত। আবার সে যখন শারিবাকে দেখাত, শারিবাও রহুকে দিশা করতে পারত না।

এখন তার মনে হয় এদের সবার মতো সেও হয়ত একসময় রহুকে দেখতে শুরু করবে। এতে তার ভয় হয়। নানির বলা অসংখ্য কথা সে একসময় আবিষ্ট হয়ে শুনত এবং বিশ্বাস করত নানির বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দৃষ্টি দিয়ে। এখন যদিও শারিবা এসব কথার কোনো অর্থ পরিষ্কারভাবে ধরতে পারে না, তবুও কেমন ভয় হয় অন্য আর সবার মতো একদিন রহু তাকে দেখা দেবে। বিষণ্ণ মূর্তিতে।

রহু বলবে, তুমি কে?

আমি শারিবা।

শারিবা কে?

শারিবা বাজিকর।

তবে তো তোমার খুব দুঃখ।

শারিবা বলবে, হ্যাঁ আমার বড় দুঃখ, আমার দুঃখের আসান নেই।

অথচ এখন তো শারিবা লুবিনির অসংখ্য গল্পকথার মধ্যে অন্য অর্থ খুঁজে বের করবার চেষ্টা করে। সমাজ তাকে কেন ত্যাগ করল? কেন এখনো গ্রহণ করে না। এখন এসব চিন্তা সে সূত্রবদ্ধ করার চেষ্টা করে। গ্যারেজে দুবছর শ্রমিকের কাজ করে তার হীনমন্যতা অনেক কেটে গেছে। শহরের জীবন যদিও অনেক জটিল কিন্তু তার বিস্তারও অনেক বেশি। মোহরের হাটখোলায় চায়ের দোকানে এখনো সম্প্রদায়িভিত্তিক কাপ ও কাচের গেলাস আছে, শহরে নেই। এখানে আর কিছু থাক আর নাই থাক, জাতের কথা গায়ে লেখা থাকে, শহরে অন্তত এরকম

অশ্লীলভাবে থাকে না।

ঘরে ফিরে এসে রূপা বলে, দেখে আসলি বেটা কেমন মোছলমান হয়েছে? আগে বলি নাই? তখন কেও হামার কথা শোনল না!

শারিবা একথারও উত্তর দেয় না। রূপা ও শরমী আরো ধর্মপ্রাণ হয়েছে, আরো আবেগ দিয়ে তারা বিষহরির পাঁচালি গান করে, বিষহরির ঘটের জন্য আলাদা একখানা চালা তুলেছে সেখানে ফুল, বেলপাতা, ধূপদীপ দেয়। রূপা এবং শরমীর আরো উন্নতি দেখতে পায় শারিবা। দুজনের গলাতেই হলুদ রঙের নতুন তুলসীর মালা। সন্ধ্যাবেলা রূপাকে সে নতুন গানও গাইতে শোনে—

শুনেছি রাম তারকব্রহ্ম
নয় সে মানব জটাধারী,
মহাপাতক হইয়াছ তুমি
করি লক্ষ্মীকান্তের লক্ষ্মী চুরি।

এবং পরদিন এক বৈরাগী ঠাকুর এলে শারিবা দেখে রূপা ও শমী বড় অকুণ্ঠ সেবা যত্ন করে তার। বৈরাগী তাদের ইহকাল পরকাল ও পাপপুণ্য নিয়ে অনেক রহস্যময় ও অজানা কথা বলে। তারা সেসব মনোেযোগ দিয়ে শোনে।

সবচেয়ে আশ্চর্যজনক পরিবর্তন হয়েছে আকালুর। পাশী আকালু এখন আর নিজে গাছে ওঠে না। অসংখ্য তালগাছ ইজারা নেয় সে। তাড়ির গদি সরকারের কাছ থেকে ডেকে নেয়, দোকান খোলে। চৈত্র মাস থেকে তার ব্যবসা কয়েক মাদ রমরমা থাকে। সে ভালো টাকাই রোজগার করে। শীতের দিনে খেজুরগাছ ইজারা নেয় সে গৃহস্থের কাছ থেকে। রস নামিয়ে গুড় তৈরি করে। এতেও ভালো পয়সা থাকে তার।

আকালু স্থানীয় একটি পোলিয়া মেয়েকে বিয়ে করেছে। বাজিকরপাড়ায় থাকলেও তার ঘরদোরেই লক্ষ্মীর শ্ৰী আছে। এত তাড়ি নামায়, কিন্তু নিজে কখনো এক চুমুক মুখে তোলে না। তার বউ খুবই কাজের মেয়ে, ভালো গুড় জ্বাল দেয়।

শারিবা বলে, তবি তুই বাজিকরের বিটি বিহা করলু না।

কথায় কি আকালু হারে। বলে, বাজিকরের বিটি হামি বিহা করমো, তো বাজিকরের বেটাগুলা যাবে কুন্‌ঠি?

মোহর হাটখোলা এখন একযা বাজারের চেহারা নিয়েছে। আকালুর সেখানে একখানা মুদি দোকানও আছে। সে আজকাল লোককে টাকাও ধার দেয় সুদের বিনিময়ে। মোহর হাটখোলা এখন সরগরম জায়গা। সারাদিনে এদিকে ওদিকে চারখানা মোটর বাস যাতায়াত করে। লোজন হরদম শহরে যায়, শহর থেকে আসে। শারিবা শুনে অবাক হয় বাজিকরপাড়ায় কয়েকজন যুবক শহরে মাঝেমধ্যে সিনেমা দেখতে যায়।

পাড়ার মধ্যে পথ চলতে শারিবা ওমরের ঘরখানার সামনে হঠাৎ থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে। ঘরের দাওয়ায় বছর তিনেকের একটি শিশু খেলছে। আসার দিনই রূপার কাছে সবার খোঁজখবর নিতে গিয়ে সে শুনছিল ওমরের মা বছরখানেকের হল মারা গেছে। এই শিশুটিকে দেখে সে কিছুই চিন্তা করত না যদি না পরক্ষণেই মালতী ঘরের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসত। মালতীকে দেখে শারিবা স্থাণু হয়ে যায়। যায়।

মালতীকে এখন তপস্বিনীর মতো দেখায়। তার একমাথা রুক্ষ চুল, দিঘির মতো বিশাল চোখ ও সমস্ত শরীরে কৃচ্ছসাধনের জন্য একটা টানটান তীক্ষ্ণতা।

মালতী শারিবাকে দেখে, কোনো কথা বলে না। খেলতে খেলতে শিশুটি উঠোনে নেমে এসেছিল। শারিবা তার মাথা স্পর্শ করে, শিশু অবাক হয়ে তার দিকে তাকায়। তারপর শারিবা আবার রাস্তা ধরে চলতে শুরু করে।

হাঁটতে হাঁটতে সে মোহরে আকালুর দোকানে আসে। আকাল তাকে মালতীর বৃত্তান্ত বলে।

হ্যাঁ, শিশুটি ওমরেরই ছেলে। মালতীর বাপ-মা চেষ্টা করেও তার আর বিয়ে দিতে পারেনি। প্রথমত, বাজিকরের ছোঁয়া মেয়েকে বিয়ে করার লোকের অভাব। আর দ্বিতীয়ত, মালতী কিছুতেই বিয়ে করতে রাজি হয়নি। তারপর মালতীর বাপ মরে। এতদিন যদিবা কোনোমতে চলছিল, কিন্তু এখন ভাইদের সংসারে মালতী তার শিশুকে নিয়ে সমস্যা হয়ে দাঁড়াল। তাছাড়া, মালতীর মতো মেয়ের কাছে পুরুষমানুষ গোপনে আসতে চাইবে, এও তো স্বাভাবিক। কিন্তু মালতী তার জীবনের প্রধান ঘটনাগুলোর কোনো স্বাভাবিক ব্যাখ্যা পায়নি কারো কাছ থেকে। কাজেই একদিন সন্ধার পর তিক্তবিরক্ত হয়ে সে এক ব্যক্তিকে দায়ের কোপ মারে।

ঘটনাচক্রে সে ব্যক্তি বাইশ দিগরের অন্তর্ভূক্ত, যা মালতীর বাপ ছিল না।

এতে ভীষণ গণ্ডগোল হয়। ভায়রো যদিও ছিল না, তাই বলে দিগর একবারে ভেঙে যায়নি। মালতীর ভাইদের উপর চাপ আসে নানারকমের। সুযোগ বুঝে ভাইবউরাও এই কাঁটা উপড়ে ফেলার ব্যবস্থা করে। মালতীর বড় ভাইয়ের মেয়ে বিয়ের উপযুক্ত হয়েছিল। কিন্তু দুই দুই ঘর পাত্রপক্ষ মালতীর অজুহাতে কথাবার্তা বেশিদূর এগোতে দেয়নি।

কাজেই মালতীকে ঘর ছেড়ে আসতে হয়। কাউকে কিছু না জানিয়ে সে ওমরের জীর্ণ ঘরখানা দখল করে। খবর পেয়ে ইয়াসিন এসে তাকে বলেছিল, একি বেপার? তুমি এঠি থাকবা কেংকা?

মালতী এ ঘর তার স্বামীর ঘর হিসাবে দাবি করেছিল, তাতে বাজিকরপাড়ায় বিস্ময়ের ঢেউ বয়ে যায়।

কিন্তু ইয়াসিন আবার ঝামেলার ভয় করেছিল। সে মালতীর দাদাদের কাছেও গিয়েছিল। তারা এ সম্পর্কে ভালোমন্দ কোনো কথাই বলেনি। ইয়াসিন তারপর দিগরের মাতব্বরদের কাছে গিয়েছিল। কিন্তু সেখানেও ভাঙন শুরু হয়েছে। এসব ছুটকো ব্যাপার নিয়ে কেউ আর মাথা ঘামাতে বিশেষ রাজি ছিল না। মালতী সেই থেকে এখানেই আছে।

শারিবা বলে আছে তো, খায় কি? খোয়ায় কি চেংড়াটা?

ক্যান কাম করে। মালতী স্থাষের কাম জানে, খোলানের কাম জানে। আর খুব পয়-পরিষ্কার। যারোজগার করে মা-বেটা দুজনার চলি যায় কোনো মতে। আর সবাই যখন পাকুড়পাতা, নাজনাপাতা খায়, সেও তাই খায়।

দোকান থেকে ওঠার সময় এক প্যাকেট বিস্কুট কেনে শারিবা।

আকালু বলে, মালতীর কাছে যাবি?

শারিবা বলে, আজ নয়, কাল।

পরদিন শারিবা মালতীর বাড়ি যায়। মালতী ঘরে ছিল না। আগের দিনের মতো তার ছেলে দাওয়ায় খেলছিল।

শারিবা দাওয়ায় একপাশে বসে তাকে কাছে ডেকে নেয়। অপরিচিত মানুষ দেখে শিশুর চোখে আতঙ্ক হয় একটু। তাছাড়া সে পুরুষমানুষের সাহচর্যে অভ্যস্ত নয়। শারিবা পকেট থেকে বিস্কুট বের করে তার মুখে দেয়।

কি নাম তুমার?

শিশুর ভয় কাটে না। এক অপরিচিত মানুষের কোলের মধ্যে বন্দী সে।

শারিবা বলে ভয় কিরে বেটা? খা, বিস্কুট খা।

মালতী পুকুরঘাট থেকে ফিরে দেখে তার ছেলে শারিবার কোলে বসে অনর্গল কথা বলে যাচ্ছে। ছেলেকে আদর করলে কোন মা না সন্তুষ্ট হয়। কিছু না বলে সে ঘরে ঢুকে যায় এবং এক টুকরো খেজুরপাতার চ্যাটাই নিয়ে বেরিয়ে আসে।

মাটিং বসলেন, দাদা?

আরি ঠিক আছে।

শারিবা চ্যাটাইটা মালতীর হাত থেকে নিয়ে তার উপরে বসে। বলে, ছেলা তো তুমার খুবই চালাক।

মালতী হাসে। ঘাড় বেঁকিয়ে শারিবাকে তার দিকে তাকাতে হয়, কেননা মালতী দাঁড়িয়েছে দরজার কাছে, তার সঙ্গে কোনাকুনি, সামনাসামনি নয়।

শারিবা তার পরেও ছেলের সাথেই কথা বলে, মালতীর সাথে কি যে কথা বলা যায়, তা সে ভেবেই পায় না, একটা অপরাধবোধ তার ভেতরে কাজ করে, যা সে কখনো ভুলতে পারে না। ওমরকে সে বাঁচাবে বলেছিল, কিন্তু বাঁচাতে পারেনি।

ওঠার সময় মালতী নিয়মমতো আবার আসার কথা বলে। নিয়মমতো শারিবাও ‘আচ্ছা বলে।

পরদিন শারিবা আকালুর দোকান থেকে আরার বিস্কুটের পাকেট কিনলে আকালু চোখ নাচিয়ে বলে, ক্যারে শারিবা?

শারিবা আহত হয় ও লজ্জা পায় সে কোনো কথা বলে না, হাত বাড়িয়ে একটা বিস্কুটের প্যাকেট তুলে নেয় শুধু।

আকালুই আবার বলে, মালতী কিন্তু হাঁসুয়ার কোপ মারে শারিবা, সে খ্যাল রাখে।

শারিবা এবার বিরক্ত ও অপমানিতও বোধ করে। সে বলে, তোর অনেক পয়সা হচ্ছে নারে আকালু?

কি কথায় কি কথা!

ঠিক কথা। শারিবাক্ চেনো না তুই?

ছাড় সে উসব কথা, মজা করলাম। কথাডা কি বিহাসাদি কি বুঢ়া বয়সে করবু? তোর বাপ বলিছিল—

এভাবে পরপর তিন-চারদিন শারিবা বিস্কুট নিয়ে মালতীর বাড়ি যায়। মালতীর ছেলেটি তার খুব নেওটা হয় ও মালতীও খানিকটা সহজ হয় তার কাছে।

এই দু-বছর বাজিকরপাড়াতেও যে কী বিপুল পরিবর্তন হয়েছে, তার খবর শারিবার পুরোপুরি জানা ছিল না। শুধু নমোশূদ্রদের লোভী পুরুষরাই মালতীকে জ্বালাতন করে না, বাজিকরদের জোয়ান ছেলেরাও করে। শারিবার ঘনঘন মালতীর ঘরে যাতায়াতে দু-একজন নজর রাখে এবং আকারে ইঙ্গিতে দু-চার কথা বলে। শারিবা সতর্ক হয়।

তারপর তাকে ফিরে যাওয়ার কথা ভাবতে হয়। যে কটা সামান্য টাকা সে নিয়ে এসেছিল, তা খরচ হয়ে গেছে প্রায়।

যাওয়ার আগের দিন সে মালতীর সঙ্গে দেখা করতে আসে।

সে বলে, কাল চলি যামো, ঠিক করিছি।

কাল?

হাঁ।

ফের কবে আসপেন?

এখন কই কেংকা?

মালতী চুপ করে থাকে।

শারিবাই আবার বলে, এটা কথা ক-বার চাছি।

ক-ন।

কি বা আবার ভাবেন তুমি—

ক-ন।

ই চেংড়া ছাবাল নিয়া কতদিন এংকা একা থাকবা তাই ভাবি।

করমো কি?

ই ভাবে তো মেয়ামানষে থাকবা পারে না।

রূপায় কি?

রূপায় তো এটাই, বিহা কর।

মালতী হাসে, ম্লান হাসি। তারপর তার চোখে জল আসে। মুখ আড়াল করতে সে ভেতরে ঢুকে যায়।

শারিবা দ্বিধায় পড়ে যায়। কথাটা বলে কি ভুল করলাম? সে ভাবে। সে অনেকক্ষণ একা বসে থাকে। মুসলমানি ও হিন্দুয়ানিতে বিভক্ত বাজিকরেরা রহুকে বিস্মৃত হয়ে গেছে, একথা এবার সে গভীরভাবে ভেবেছে। হতাশার হাত থেকে মুক্তি পাবার জন্য সে আর রহু চণ্ডালের হাড় খুঁজবে না, একথা বোঝে শারিবা। অনেক চিন্তা করেও সে বুঝতে পারে না, এতে বাজিকরের ভালো হল কি খারাপ হল।

শহরে হানিফের সহায়তায় সে একটা চাকরির দরখাস্ত করেছিল। সরকারি বাসের ক্লিনারের চাকরি। দরখাস্তের যে জায়গায় ধর্মের কথা লেখা আছে, সেখানে কি লেখা হবে সে নিয়ে বড় সমস্যা হয়েছিল। হানিফ পরামর্শ দিয়েছিল, যা হোক একটা লিখে দিতে হয়, হিন্দু নয় মুসলমান। কেন যেন শারিবা রাজি হয়নি। বলেছিল, লিখেন—বাজিকর। বাজিকর! এমন আবার ধর্ম হয় নাকি? হয় না? নাহলে কেন এত লাঞ্ছনা? দরখাস্ত লেখক বলেছিল, এতে চাকরি হবে না। হয়ও নি, সে যে-কোনো কারণেই হোক না কেন।

এখন শারিবা এত তীব্র দ্বন্দ্বে ভোগে। রহুকে যারা রক্তের মধ্যে বাঁচিয়ে রেখেছিও সেই দনু, পীতেম, জামির এরা কি বাজিকরের পৃথক অস্তিত্ব রক্ষা করতে চেয়েছিল, না চেয়েছিল বাজিকর সবার সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাক? রূপা কিংবা ইয়াসিন ঠিক কাজ করেছে, না পৃথক অস্তিত্বের দম্ভ নিয়ে শারিবা ঠিক কাজ করছে? এইসব সমস্যার সমাধান এখন খুবই জরুরি। তার বয়স এখন। বত্রিশ-তেত্রিশ হবে। এখনো পর্যন্ত সে বিয়ে করেনি, ঘরসংসার করেনি, তার সমাজে এবং পুরো গ্রামসমাজেই আশ্চর্যের বটে। লুবিনি তাকে বলত বুঢ়া’, বলত সে নাকি পীতেমের থেকেও বৃদ্ধ। অথচ এই বার্ধক্য লুবিনিই সঞ্চারিত করেছে তার মধ্যে। শারিবা শুধু বৃদ্ধ নয়, শারিবা প্রাচীন। তাই শারিবা আলোছায়ায় সঞ্চরমাণ বহুর মতো বিষণ্ণ। ৪)

দীর্ঘ সময় বসে থাকার পরে যখম মালতী ঘর থেকে বার হয় না, তখন শারিবা মনস্থির করে ফেলে। সে মালতীকে আঘাত করেছে, এতে সে স্থির নিশ্চয় হয়, দুঃখ ও লজ্জা পায়। সে উঠে দাঁড়িয়ে বলে, মালতী আমি উঠি।

মালতী দরজার কাছে এসে দাঁড়ায়, তার চোখ সিক্ত। শারিবা তার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ চিন্তা করে, আমার সঙ্কোচ বোধ করার কি আছে। আমি অত্যন্ত দরকারি একটা কথা বলেছি। সে সোজাসুজি তাকায় মালতীয় চোখে। বলে, যদি বেথা দিয়া থাকি তুমাক, তবি মাপ করি দিবা। কেন্তু যি কথাটা কলাম সিটা ভাববার।

মালতীর চোখ আবার উপচে পড়ে। সে কিছুই বলতে পারে না, কোনো কথা নয়।

 

৬৩.

সারাদিন শারিবা থাকে একটা ঘোরের মধ্যে। সে কাল শহরে চলে যাবে, আবার কি ফিরে আসবে এই মানুষগুলোর মধ্যে? বাজিকরদের সঙ্গে যোগসূত্র রাখার আর কি কোনো দরকার আছে? শা-জাদিও রূপাকে সে কী বলে যাবে? শরমীকে কী বলবে? শরমী তাকে বিয়ের জন্য বড় বেশি চাপ দিচ্ছে।

রাতের অন্ধকার নামলে শারিবা পাতালু নদীর দিকে চলতে শুরু করে। আজ আকাশে চাঁদ আছে। পৃথিবী রহস্যময়। অনেকক্ষণ নদীর পাড়ে সে একা বসে থাকে। তারপর একসময় ফিরবার জন্য সে উঠে দাঁড়ায়, তারপর অন্যকিছু চিন্তা করে গ্রামে ফেরার বদলে নদীর বাঁওড়ের দিকে এগোয়।

নিস্তব্ধ বাঁওড়ের চারপাশে একমাত্র হাওয়ার শব্দ। চাঁদের আলোয় দীর্ঘ গাছ এবং নিচের ঝোপঝাড়ে আলোছায়ার লুকোচুরি। নদীর পাড় থেকে ঘাসের জঙ্গল উঠে গেছে একদিকে। আধামানুষ সমান ঘাসের জঙ্গল। সেখানে সঞ্চরণশীল ছায়ার দিকে শারিবা একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে। লুবিনি এই ছায়ার মধ্যে ঢুকে বসে আছে। এখন সে ভাবে, তবে কি রহু তৃপ্ত? বাজিকরদের আর কিছু না হোক স্থিতি হয়েছে। আর কোনো বাজিকর কোনোদিন এই গ্রাম ছেড়ে নতুন করে রাস্তায় বেরোবার কথা ভাববে না। এখন তার যা কিছু ভাবনা তা এই দরিদ্র হতশ্রী কুঁড়েঘরগুলোকে কেন্দ্র করে, এতে শারিবার আর কোনো সংশয় থাকে না। কিন্তু শারিবার রক্তের অস্থিরতা কাটে না কেন? কেন লুবিনির কঁপা কাঁপা হাত তাকে এখনো অনেক কিছু দেখাতে চায়? সে আলোছায়ার দিকে তাকিয়ে পীতেমের মার খাওয়া দেখে, পেমার আর্তনাদ শোনে, নমনকুড়ির বন্যার জল ক্রমশ বেড়ে উঠে সর্বনাশ হতে দেখে, নৌকার গলুইয়ের উপর রক্তাক্ত জামিরকে দেখে। সে দেখে লুবিনিকে ধর্ষিতা হতে, হাতির পায়ের চাপে ঘর ভাঙছে, শিশু মরছে। পলায়নপর বাজিকর গোষ্ঠীকে সে দেখে জল কাদা ভেঙে পাতালু নদীর তীর ঘেঁষে ছুটতে। সে দেখে সেই ভীবৎস রাত, যখন তার ভাই সাপের কামড়ে মারা যায়। আরো কত জানাঅজানা দৃশ্য সে সম্মোহিতের মতো দেখে। তারপর সবশেষে ওমরের ছিন্ন মুণ্ড যখন আকাশপথে তার দিকে ছুটে আসতে থাকে তখন সে হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসে পড়ে। দু-হাতে মুখ ঢেকেও রেহাই পায় না সে। ওমরকে সে বলতে শোনে, শারিবা তুই হামা বাচাবু বলিছিলি!

এসবের কোনো উত্তর কি আছে শারিবার কাছে? সে চোখের থেকে হাত সরিয়ে পৃথিবীর দিকে তাকায়। পীতেম থেকে শারিবার মধ্যেকার এই একশো বছরে বাজিকর স্থিতি পেয়েছে। এখন আর তাকে সহজে কেউ উচ্ছেদ করতে পারবে না, একথা এখন সব বাজিকরই বোঝে। আবার যদিও মাত্র কয়েক বছর আগেই ওমরের কবন্ধ যে অপরাধে এই নদীতে নিক্ষিপ্ত হয়েছিল, আজ যদি, শারিবা সেই মালতীকেই বিয়ে করে তবে নিশ্চয়ই আর সেরকম হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তার প্রথম কারণ বাজিকরেরা স্থিতি পেয়েছে, আর দ্বিতীয় কারণ ভায়রো যে ব্যবস্থাকে প্রাণপণ শক্তিতে আঁকড়ে রেখেছিল, তার মৃত্যুর পর বড় দ্রুত ভেঙে পড়ছে সেই ইমারত। বিরোধ বাড়ছে দিগর এবং দিগরবহির্ভূত মানুষদের মধ্যে। সব দিগরবহির্ভূত মানুষেরা বাজিকরদেরও সমর্থন চায়। শারিবা কালই ইয়াসিনকে বলবে সেইসব মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে যারা ভায়রো, আজুরা ও অন্যান্য ভূস্বামীর হিসাববহির্ভূত জমি দখলের চক্রান্ত করছে। এইভাবেই স্থায়িত্ব আসবে।

শারিবা শান্ত হয়। কিন্তু তারপরেই তার ইন্দ্রিয় প্রখর হয়। ঘাসের জঙ্গলের কাছে একটি ঘনীভূত ছায়া শুধু ছায়াই নয়, মনুষ্য আকৃতি বিশিষ্ট। এই অত্যন্ত অনাবৃত প্রাকৃতিক পরিবেশে এই সঞ্চরণশীল ছায়া দেখে সে শিহরিত হয়। প্রথমেই তার লুবিনি বর্ণিত রহুর কথা মনে হয় সে স্থির হয়ে অপেক্ষা করে।

ছায়াশরীর ঘাসের ঝোপের আবছা আড়াল ছেড়ে উন্মুক্ত বেলাভূমিতে আসে ও সমর্পণের ভঙ্গিতে মাটিতে বসে। শারিবা মালতীকে চিনতে পারে। মালতী এমন রুদ্ধ আবেগে কাঁদে যে শারিবার উঠে গিয়ে তাকে সান্ত্বনা দিতে সাহস হয় না। মালতী এইভাবে দীর্ঘ সময় কাঁদে।

তারপর একসময় শারিবা ধীরে ধীরে মালতীর কাছে গিয়ে দাঁড়ায়, তার মাথায় হাত রাখে। মালতী আতঙ্কিত চিৎকারে নদীতীরের স্তব্ধতা খান খান করে।

শারিবা তাকে দু-হাতে ধরে ও বলে, মালতী আমি শারিবা।

মালতী বিস্ফারিত চোখে তাকে দেখে, থরথর করে দেহ কাঁপে তার, সে নিমজ্জমান মানুষের মতো শারিবাকে দু-হাতে আঁকড়ে ধরে।

অনেকক্ষণ এভাবে থাকার পর শারিবা তাকে ঠিকভাবে বসায়। বলে, তুমি চিলালা ক্যান?

ডর লাগিছিল। ভাবলাম সি বুঝি হামার মাথাৎ হাত রাখে।

পাগল।

মানুষ মরলে কুথায় যায়?

মাটিৎ মিশা যায়।

সাচা? আর কেছু থাকে না?

থাকে, যি মানুষ মরে, অন্য মানুষের মনে থাকে সি। ইয়াই হামার জানা।

তবি যি মানষে কয়—

আর কিছু জানা নাই হামার।

তাই!

ইখানে আসিছিলা ক্যান?

সকালে কথাডা ক-লেন, মন যে বড় উতলা হল। তাই ভাবছিলাম চেংড়ার বাপের মন বুঝি। জীবনটা তো কাটাবা হবে।

সিটাই ভাববার কথা। ওমরকে তো ভুল কছি না। ওমর থাকুক মোসর মমানে।

মালতী একটা দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে।

শারিবা বলে, আর কোনো কথা আছে মনে?

মালতী বলে, আমার চেংড়া?

শারিবা বলে, আমার চেংড়া হবে।

শারিবা উঠে দাঁড়িয়ে মালতীকে হাত ধরে তোলে, তারপর দুজনে গ্রামের দিকে ফিরতে থাকে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *