২৫. আমার জন্য বাঁচো শুভদীপ

জ্ঞান হতেই প্রথম চন্দ্রাবলীর মুখ তার মনে পড়ে। আর কান্না পায়। জ্ঞান এবং অজ্ঞানের মধ্যবর্তী অবস্থায় আকুল হয়ে কাঁদতে থাকে সে। এবং ক্রন্দনের মধ্যেই সে লাভ করে পূর্ণ জ্ঞান।

তাকে ঘিরে ছিল ভিড়। ভিড়ে সে দেখতে পায় শ্যামলিম ও দেবনন্দনকে। যে-মুলিয়ারা তাকে বাঁচিয়েছিল তাদের সঙ্গে দরাদরি করছিল প্রণয়। চার হাজার টাকা হেঁকেছিল তারা। শেষ পর্যন্ত দেড়শো টাকায় রফা হয়।

দেড়শো টাকা। মাত্র দেড়শো টাকা তার জীবনের দাম। যদি কানাকড়িও না হত, সে কষ্ট পেত না। জীবনের তুল্যমূল্য একমাত্র জীবন—আজ মাত্র কিছুক্ষণ আগেই উপলব্ধি করেছে সে।

একটু সুস্থ বোধ করতেই বন্ধুদের কাঁধে ভর দিয়ে অতিথিশালায় চলে যায় সে। শুয়ে থাকে সারা দুপুর। ঘুমোয়। জাগে। ঘুমোয়। ভাবে না কিছুই। ক্লান্তি। বড় ক্লান্তি তার শরীর জুড়ে। সন্ধেবেলা বন্ধুরা বেরিয়ে যায়। সে বসে থাকে একা। একসময় সে-ও বেরিয়ে পড়ে। অতিথিশালা থেকে বেরিয়ে একটি ফোন বুথে যায়। একটি মুখস্থ নম্বর ডায়াল করে। ওপারে শব্দ হয়। সে শ্রবণযন্ত্র কানে চেপে ধরে। বুক ধক ধক করে। মুহূর্তে মনস্থির করে সে। যদি অন্য কেউ ধরে—ছেড়ে দেবে। তখন অন্য প্রান্ত কথা বলে ওঠে। তার চেনা, তার প্রিয়, তার অত্যন্ত আপনার কণ্ঠটি কথা বলে ওঠে। সে তখন ধীরে ধীরে তার ডুবে যাওয়া ও ভেসে ওঠার কাহিনি শোনায়। আর দু’একটি কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়ে ও প্রান্ত। সে যন্ত্র নামিয়ে রাখো মূল্য চুকিয়ে বেরিয়ে আসে বাইরে পায়ে পায়ে সমুদ্রের কাছে দাঁড়ায়। ঢেউয়ের থেকে জল ছিটকে ভিজিয়ে দেয় তাকে। সে সমুদ্রের দিকে তাকায়। আদিগন্ত বিস্তৃত অন্ধকার। তারই মধ্যে কালো মেয়ের হাসির মতো ফুটে উঠছে ঢেউয়ের ফেণী। এই সমুদ্রে সে জীবন দিতে চেয়েছিল। সমুদ্র নেয়নি। ফিরিয়ে দিয়েছে। আর তার কিছু চাইবার নেই। সে দেখতে পাচ্ছে, শুনতে পাই, অনুভব করতে পারছে মহাজগৎ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে বাণী। অমোঘ এক উচ্চারণ। তার প্রিয় কণ্ঠে——

“আমার জন্য বাঁচো শুভদীপ। অন্তত আমার জন্য বেঁচে থাকো তুমি।”

সমাপ্ত

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *