০৭. গভীর ভাবনা তাকে পথ চলা

গভীর ভাবনা তাকে পথ চলা বিষয়ে অন্যমনস্ক করেছিল। সে দেখতে পায়নি একটি উঁচু ও বিশাল দরজা খুলে যাচ্ছে এবং তার ধাক্কা লাগতে যাচ্ছে। অতএব সে এক ভারী ধাতব আঘাতে ছিটকে পড়ে মাটিতে। চশমা খুলে হারিয়ে যায়। ব্যাগ আছড়ে পড়ে। কপালে তীব্র মন্ত্রণা অনুভব করে সে, আর তার দৃষ্টিপাত অন্ধকার সংসর্গে লিপ্ত হয়।

পরে সে শুনেছিল পাঁচ মিনিট তার জ্ঞান থাকেনি। বা গোটা সময়টা ধরলে দশ মিনিটই হবে।

বিশাল ভারী ধাতব দরজা খোলার সময় এক চিৎকৃত সাবধানবাণী শুনতে পায়নি সে। এবং ধাক্কা খেয়ে অনিবার পড়ে গিয়েছে। তখন লোকবাহিত হয়ে সে সেই দরজারই ভিতরে প্রবেশ করে এবং দরজা আবার বন্ধ হয়ে যায়।

একটি ছোট দপ্তরখানায় সে শুয়ে ছিল যখন তার জ্ঞান ফেরে। নিচু ঘরটির কাঠের জানালা গলে আলো পড়ছিল তার মুখে।

দপ্তরখানা না বলে একে কারও বাসস্থানও অনুমান করা যায়। কারণ সে শুয়ে আছে একটি রীতিমতো বিছানায়। দেওয়ালের হুকে ঝোলানো দেখতে পাচ্ছে শার্ট-প্যান্ট। আবার দুটি আলমারি তার পায়ের দিকে। ফাইলে ঠাসা। সে অনুমান করে, একটি চেয়ার টেবিলও থাকবে নিশ্চয়ই। একটি টেবিল-আলো।

তাকে ঘিরে আছে কয়েকজন। কিন্তু প্রায় মুখের ওপর ঝুঁকে আছে একটি মুখ। নিখুঁত দাড়িগোঁফ কামানো মেদবহুল মধ্যবয়সী মুখ। ভাঙাভাঙা বাংলায় সেই মুখ জানতে চায় ব্যথা করছে কি না। সে তখন কপালে ব্যথা অনুভব করে। মাথা তুলতেই মাথার মধ্যে ব্যথার ঝনঝন। সে মাথা নামিয়ে নেয় বালিশে আর শুনতে পায় মানুষগুলি হাত-মুখ নেড়ে সমবেতভাবে তাকে উঠতে বারণ করছে। সে তখন চশমার খোঁজ করে। ব্যাগ কোথায় জানতে চায়। একজন তাড়াতাড়ি চশমা এনে তার বালিশের পাশে রাখে। আরেকজন ব্যাগ তুলে তাকে দেখায় এবং নিশ্চিন্ত করে। বাইরে থেকে ভেসে আসে কুকুরের হিংস্র গর্জন।

একটি লোক বরফকুচি ভর্তি পাত্র এনে সেই মধ্যবয়সীর হাতে দেয়। তিনি একটি রুমালে কুচিগুলি বেঁধে নিয়ে চেপে ধরেন তার ব্যথাদীর্ণ কপালে। সঙ্গে সঙ্গে সে জ্বালা টের পায়। আঘাতে থেঁতলে গেছে কপাল। সে ভ্রু কুঁচকোয়। মধ্যবয়সী ইংরিজিতে বলেন, বরফকুচিতে সে সেরে উঠবে তাড়াতাড়ি। ইতিমধ্যেই হয়তো আরাম পাচ্ছে সে।

সে ক্লান্ত বোধ করে। একবার চোখ বন্ধ করে। চুপ করে থাকে। খোলে আবার। দেখে মধ্যবয়সীর ব্যগ্র উদগ্রীব মুখ। সেই সুৰ দুঃখপ্রকাশ করে। অনিচ্ছাকৃত আঘাত দেবার কারণে তার যেন অনুশোচনার অবধি নেই। সে মৃদু হাসে। মানুষটি নাম বলেন। জন। কথা বলতে বলতেই বরফের শুশ্রুষা চালিয়ে যান তিনি। তার কপাল যেয়ে বরফগলা জল গড়িয়ে চুলে লেগে যায়। কিছু বা বালিশ ভিজিয়ে ফেলে। এবার শুভদীপের নাম জানতে চান তিনি। বাড়ি কোথায় জানতে চান। সে নাম বলে। বাড়ি কোথায় বলে না। বরং উঠে বসতে চায়। জন তাকে শুইয়ে দেয় আবার বলেন, সে আহত। তার চিকিৎসা ও বিশ্রাম দরকার। তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাবার প্রস্তাব আসে। অথবা ট্যাক্সিতে চাপিয়ে বাড়িতে পৌঁছে দেবার প্রস্তাব। সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। মাথায় সাংঘাতিক কিছু যন্ত্রণা হচ্ছে এমন নয়। আজ তার অনেক কাজ। অনেকগুলি বিজ্ঞাপন তাকে সংগ্রহ করতে হবে।

জন, চারপাশে ভিড় করে থাকা লোকজনকে কাজে যোগ দিতে অনুরোধ করেন। তারা চলে যায়। শুভদীপ জানতে চায় সে কোথায় আছে। মধুর হাসিতে মুখ ভরে যায় জনের। সে অত্যন্ত পুণ্যবান বলেই এখানে আসতে পেরেছে বলেন তিনি। যে-কোনও ব্যক্তি এখানে প্রবেশানুমতি পায় না। মুখে রহস্য মেখে প্রশ্ন করেন তিনি, শুভদীপ নৈঃশব্দ্যের স্তম্ভ কী তা জানে কি না। নৈঃশব্দ্যের স্তম্ভ। Tower of silence নৈঃশব্দ্যের স্তম্ভ। Tower of silence। শুভদীপ শোনেনি কখনও। বরফকুচির শুশ্রুষা দিতে দিতে জন শোনান তখন। Tower of silenceনৈঃশব্দ্যের স্তম্ভ। পাশি সম্প্রদায়ের পরমগতির স্থল। মৃত্যুর পর চরম প্রার্থিত শান্তি।

তার আবছা মনে পড়ে। পার্শিরা মরদেহটি পাখির আহারের জন্য দান করে। তার সঙ্গে নৈঃশব্দের স্তম্ভ কীভাবে সম্পর্কিত।

জন তার প্রশ্ন উপলব্ধি করেন। ব্যাখ্যা করেন তিনি। Tower of silence। একটি উঁচু স্তম্ভ—যেখানে কোনও মৃত পার্শির মরদেহ রাখা হয় শেষকৃত্যের জন্য। সে চোখ বিস্ফারিত করে। কল্পনা করার চেষ্টা করে দৃশ্যটি। এবং শিউরোয়। কিন্তু মানুষটির মুখে তৃপ্তির বিচ্ছুরণ দেশে সংযত হয় সে। পাখিরা ঠুকরে ঠুকরে মৃতদেহ খাচ্ছে—এ দৃশ্য দৃষ্টিসুখকর নয়। কিন্তু মানুষের শরীর প্রিয়জন, বাবা-মা-ভাই-বন্ধু-সন্তানের শরীর পুড়ে যাচ্ছে। মাথার খুলি ফেটে যাচ্ছে, রক্ত-মাংস পুড়ে গুটিয়ে দলা পাকিয়ে উঠছে, শব্দ উঠছে ফট-ফট-এই বা কী নয়নলোভন৷ সে শান্ত থাকে অতএব। শুয়ে শুয়ে জনের কথা শোনে। তার মুখের দিকে চেয়ে চেয়ে তার মনে হয়-জন মধ্যবয়সী নয়, যেন বৃদ্ধ, প্রবৃদ্ধ। গভীর বয়স তার ত্বকের গভীরে আছে।

Tower of silence-এর দেখাশুনো করেন জন। রক্ষণাবেক্ষণ করেন। করছেন সেই আঠারো বছর বয়স থেকে পঁয়ত্রিশ বছর। এখানেই তার যৌবন এসেছে। চলে গেছে। এখানেই তার চুলে লেগেছে পাক। এখানেই তিনি থেকেছেন দিনের পর দিন, রাতের পর রাত এবং এই উচু প্রাচীর ঘেরা জায়গাটির বাইরে যে জগৎ তার সম্পর্কে হারিয়েছেন সব টান। সব তৃষ্ণা। বাইরে গেলে এখন তার প্রাণ ছটফট করে। দম বন্ধ হয়ে আসে। কতক্ষণে ফিরে আসবেন এই শান্তিস্থলে—এমনই মনে হয়।

এখানকার বহু গাছ তাঁর হাতে লাগানো এবং তারই তত্ত্বাবধানে বেড়ে ওঠা। এখানকার সব ফুল-পাখি-প্রজাপতি কীট ও পতঙ্গদের তিনি চেনেন আপনজনের মতো। দু’খানি কুকুর আছে, তাদের স্নান করানো ও খাওয়ানো—সারাদিনে তার এটুকুই হাতে-কলমে কাজ। বাকিটা তত্ত্বাবধান।

মা-বাবা মারা গিয়েছেন তার শৈশবেই। চার ভাইবোনের মধ্যে ছোট জন। বোন সংসারে থিতু। দাদারা বড় ব্যবসায়ী। তিনি তাই পিছুটানহীন। অনায়াসে চলে এসেছেন শান্তিস্থলে। এই Tower of silence—এই শান্তিস্থল—এই কোলাহলপূর্ণ শহরের মধ্যে থেকেও যেন পরিপূর্ণ নীরবতাময়। বাইরের সব শব্দ এর উচু উচু প্রাচীরগুলিতে প্রতিহত হয়ে ফিরে যায়। এবং ভেতরকে শান্তিময় রাখে। এই শান্তির জন্য, নৈঃশব্দ্যের জন্য, তিনি নিবেদিতপ্রাণ। এমনকী যৌবনে বিয়ে করার কথাও মনে হয়নি তার।

এই উঁচু প্রাচীরময় স্থানেই তার থাকা। তার জীবন। বহুজনের শেষ শান্তি দেখতে দেখতে, বহু পরিবারের শোক-সন্তাপের সঙ্গী হতে হতে আজ তার আত্মীয় শহরময়। এমন কোনও পার্শি পরিবার নেই যারা জনকে চেনে না। এমন কোনও পার্শি পরিবার নেই এ শহরে, যার কোনওনাকোনও সদস্যের শেষযাত্রায় জন সঙ্গী থাকেননি।

মাঝে মাঝে যখন পথে বেরোন, দেখতে পান, কত দ্রুত বদলে যাচ্ছে এই শহর। জনবসতি হয়েছে আরও ঘন। যানবাহন হয়েছে আরও থিকথিকে। শব্দ হয়েছে অনেক বেশি বিবাদমান। বাতাসে ধোয়াধুলোময়লার পুরু স্তর। গাছের পাতার সবুজ রং টাঁকা পড়ে যায়। আকাশ থাকে নীল।

এখান থেকে বিবর্ণ আকাশ তিনি দেখতে পান। কিন্তু এই বিশাল ক্ষেত্রে, উঁচু প্রাচীর ঘেরা, বৃক্ষমণ্ডিত এই পরিবেশে, শেষযাত্রার এই শান্তিভূমিতে ধোঁয়া-ধুলো-আবর্জনা নেই। শব্দ নেই। বিবদমান শব্দ নেই। ধ্বনি নেই এমন যাতে মস্তিষ্ক ভেদ করে তির চলে যায়।

শুভদীপ উঠে বসে এবার। তার কিছুটা সুস্থ লাগছে। বিস্ময়ে অভিভূত সে এখন। এত ঘুরেছে সে এ শহরে, এত গিয়েছে এই রাস্তায়, কিন্তু Tower of silence-এর অস্তিত্ব জানে না। সে পুরো জায়গাটি ঘুরে দেখার ইচ্ছে প্রকাশ করে। জন সানন্দে রাজি থাকেন। কিন্তু জানিয়ে দেন, সে যেন Tower of silence-এ যাবার ইচ্ছে প্রকাশ না করে। জন এবং মৃতের আত্মীয় ছাড়া আর কারও সেখানে প্রবেশাধিকার নেই।

সে রাজি হয়। বিছানা থেকে নামে। আর তার নামার সময় জন তার কাধ ধরে থাকেন। তার মাথা ঘুরে যায়। মাথায় এমনকী যন্ত্রণাও অনুভব করে সে। কপালেও। কিন্তু প্রকাশ করে না। শরীরের কোনও যন্ত্রণা, কোনও বৈকল্যই প্রকাশ করে না সে। ঘরজোড়া রোগ ও ওষুধগন্ধে নিজেকে জড়াতে চায় না।

সে জনকে ধন্যবাদ দেয়। চশমা পরে। জল চায় খাবার। জন কারওকে জল আনতে আদেশ করলে সে জুতো পরতে থাকে। সে বিস্মিত হয়। কে তার জুতো খুলে দিল। পায়ে হাত দেওয়া সম্পর্কে আজকালের এ সংস্কার তাকে বিচলিত করে। জনের দিকে তাকিয়ে তার গতকালের সেই মুসলমান ভদ্রলোককে মনে পড়ে। কেন মনে পড়ে সে বুঝতে পারে না। জনের সঙ্গে তার চেহারার মিল ছিল না কোনও। তবু এই সমস্ত কিছুর মধ্যে একটি সংযোগ আছে বলে মনে হয় তার।

গতকাল সে এক কবরখানায় ঢুকেছিল। আজ সে চলে এসেছে অন্য এক মৃত্যু-আয়োজনে। যেন কোন অদৃশ্য নিয়ন্ত্রক তাকে এভাবেই চালিত করছে এখন। সে ঈশ্বর মানেনি কখনও। নিজস্ব যুক্তিবোধ দ্বারা সমস্ত কার্যকারণের পেছনেই এতকাল মানুষের ইচ্ছা ও প্রবৃত্তিকে দেখে এসেছে সে। প্রকৃতির ভূমিকা ও ক্রিয়াকলাপ আবিষ্কার করেছে। ঈশ্বর মানার জন্য পুজো-পাঠের জন্য মাকে, শুচুকে এবং চাকলীকেও তিরস্কার করেছে সে। অথচ এখন তার মনে হচ্ছে সে সারাক্ষণ আপন ইচ্ছার বশে নেই।

 

অন্য কেউ, অন্য কিছু তাকে চালিত করছে। এই বোধেরই নাম ঈশ্বর কিনা সে জানে না। এমনকী সে জানে না মৃত্যুর জন্য আকাঙিক্ষত তার চিত্ত দুর্বলতার বশবর্তী হল কি না।

জনের সঙ্গে বেরিয়ে আসে সে। তার রোমাঞ্চ হয় কেমন। কেমন গাছমছমে ভাব। সে যেন ক্রমে দেখে নিচ্ছে মৃত্যুর কাছে তার পৌঁছনোর আগেই—দেহের পরিণতিগুলি। মানুষের অন্তিম লগ্নের প্রভূত, বিপুল ও বিচিত্র আয়োজন। সে চাক্ষুষ করে নিচ্ছে। অনুভব করে নিচ্ছে। মৃত্যু মানে এ দেহেরই মৃত্যু। নশ্বর দেহ ছেড়ে বেরিয়ে যচ্ছে অবিনশ্বর আত্মা আর জড়পদার্থে তৈরি শরীর মিলিয়ে যাচ্ছে জলে, মাটিতে, হাওয়ায়।

জনের সঙ্গে পাশাপাশি হেঁটে যায় সে। এতক্ষণে জনকে সে সম্পূর্ণ দেখতে পায়। খর্বকায় কিন্তু বিপুলপ্রস্থ জন থপ থপ হেঁটে যাচ্ছেন। কিছুটা হেলেদুলে। চোখে মুখে লেগে আছে প্রশান্ত আবেশ। কথা বলছেন। এ শহরে পাৰ্শি পরিবার হাতে গোনা। তাই বন্ধনও প্রগাঢ়।

শুভদীপ কিছু শোনে, কিছু শোনে না। দেখতে থাকে এই বিশাল বাগান। ঋজু বৃক্ষে ভরা। অথচ পাতা পড়ে জঞ্জাল হয়ে নেই। সবুজ ঘাসের গায়ে যত্নের ছোপ। পাখির গান ও কলরব শোনা যাচ্ছে নিরন্তর। গতকালও কবরস্থানে এই কলরব সে শুনেছিল। কিন্তু বিকেল গড়িয়ে সন্ধে নামছিল বলে সেই রবে গন্তি মেশা ছিল। এখন এই ডাক অনেক বেশি সতেজ, সমুজ্জ্বল।

নানারকম ফুলের গাছেও ঝলমলে এই বাগান। সে ফুল দেখার জন্য দাঁড়ায়। জন কর্মরত মালি ইত্যাদি কর্মীর সঙ্গে কথা বলেন। তার দৃষ্টি ঝাপসা লাগে। চশমা খোলে সে। ধুলো ও হাতের ছাপে ময়লা হয়ে আছে পরকাদ্বয়। সে মুছে নেয় রুমালে। আর মুছতে মুছতে উঁটি দুখামি নজর করে। ভাঙেনি দেখে আশ্বস্ত হয়।

এই চশমা। চন্দ্রাবলীর উপহার দেওয়া চশমা। ঘুরতে ঘুরতে, জনের কথা শুনতে শুনতে চন্দ্রাবলীর মধ্যে ডুবে যায় সে আজও। যেমন ডুবেছে। প্রত্যেক দিন। গত কাল। গত পরশু। গত তরশু[ ডুবে যাচ্ছে সেই কবে থেকে। ডাটিভাঙা চশমা পরত সে। চারীর ভাল লাগেনি। অর্থের বিনিময়ে আতিথ্য পদ্ধতিতে জীবনযাপন করত যখন চন্দ্রাবলী, রবিদাকে ছেড়ে এসে, তখন শুধুমাত্র ইস্কুলের ওপর নির্ভর না করে কয়েকটি বাড়ি গিয়ে গান শেখাতে শুরু করে সে। বস্তুত অর্থের প্রয়োজন ছিল তার। দুপুরেও কিছু করার ছিল না। তার ইস্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকদের সাহায্যে কয়েকজন গৃহিণীকে গান শেখাবার কাজ পেয়ে যায় সে। এই বাড়তি অর্ধের কিছু সে ব্যয় করত শুভদীপেরই জন্য। কিছু নাটক, চলচ্চিত্র বা উদ্যানের প্রবেশমুল্যে। আর মাঝে-মধ্যে বেরিয়ে পড়ত তারা। বিজ্ঞাপন সংগ্রহের কাজে শহরের বাইরে যাচ্ছে এমনই বলত শুভদীপ বাড়িতে। আর চন্দ্রাবলীর কোনও বাধা ছিল না। আতিথ্য নেওয়া জীবনে সে ছিল সর্বার্থেই মুক্ত। এইসব দিনগুলিতে সে কখনও শুভদীপাকে অর্থব্যয় করতে দেয়নি।

বেড়াতে তারা ভালবাসত দু’জনেই। কিন্তু এই কয়েক মাস কেটে গেলেই যে ভ্রমণপিপাসা জেগে উঠত তাদের, তার মধ্যে শরীরও ছিল অনেকখানি। সে তো জেগেই থাকত, তৃষ্ণার্ত হয়েই থাকত মহুলির দ্বারা। সুতরাং সে শুধু মোচন করত নিজেকে। নিজের মোচন ঘটাত। উপভোগ করত না। উপভোগের জন্য তার চাহিদা সুন্দর শরীর। খেত, ক্ষীণ, নরম ও ভরাট। সুদৃশ্য ও সুগঠিত। মহুলির শরীর। যা সে সম্পূর্ণ পায়নি কখনও। এমনকী মহুলির না হলেও মালবিকাদির শরীর। কিন্তু সে কালকের মালবিকা মেয়েটির সাদামাটা বুক পেট নিমতল সৌন্দর্যের তরে চায় না। এবং বিরাট, বিশাল, কালো ও কুদর্শনে তার তৃপ্তি ছিল না এতটুকু। তবু শরীরের এত তীব্র খিদে সে চলে গিয়েছিল তালসারি। গিয়েছিল মাইথন। এবং কোণার্ক।

তালসারিতে তাদের প্রার্থিত নির্জনতা ছিল। অনেকটা বালিয়াড়ি পার হয়ে তারা পেয়েছিল সুগভীর খাঁড়ি। খাঁড়ি পার হলে+ধু বালিয়াড়ি পার, হলে, সমুদ্রের রেখা। বহু দূর সে-সমুদ্র স্নানের উপযোগী নয়। নরম পাড় সমুদ্রকে ছুঁয়েই তলিয়ে গেছে হঠাৎ। যেন এই ছিল তার সারা জীবনের সাধনা। সমুদ্রকে ছোঁয়া। তবে ঢেউয়ের সঙ্গে আছড়ে পড়া জলে অল্প গা ভিজিয়ে নেওয়া যায়।

খাঁড়ির গায়ে সার সার নৌকা বাঁধা। তারা দু’জন নৌকা চেপে পার হয়েছিল খাড়ি। আর সৈকতে পৌঁছেছিল। বালির মধ্যে পা ডুবছিল তাদের আর গতি হচ্ছিল শ্লথ। বর্ষা তখন লাগছিল সবে আকাশে। কিন্তু ছায়া ফেলেনি। গরম বালু। গরম হাওয়া। চন্দ্রাবলীর সালোয়ারে বালু মাখামাখি। কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছিল টুপটাপ। কী এক অপার খুশিতে দু’চোখে ছিল বালুকাবেলার চিকচিক। একটু হাঁপ-ধরা স্বরে গান গাইছিল সে। সুর ঝরিয়ে চলেছিল। তার দিকে তাকিয়ে হেসে প্রশ্ন করেছিল এ সুর সে চেনে কিনা। সে মাথা নেড়েছিল। চেনে না। ছায়াপট। বলেছিল সে। তারপর বাণী শুনিয়েছিল। সুর যে কথাগুলি আশ্রয় করে আছে সেই কথা। এমন বহু বাণী মুখস্থ ছিল তার।

সাঁঈকে সঙ্গ সাসুর আঈ।
সঙ্গ না রহি স্বাদ না জানৌ।
বয়ো জোবন সুপনেকী নাঈ।
সখী-সহেলি মঙ্গল গাবেঁ
সুখদুখ মাথে হরদি চঢ়াঈ।
ভয়ে বিবাহ চলি বিন দূলহ
বাট জাত সমধী সমঝাঈ।
কহৈঁ কবীর হম গৌণে জৈবে তরব কন্ত লৈ
তুর বজাঈ।

সে একটি বর্ণও বোঝেনি। তাই অর্থ জানতে চেয়েছিল। বুঝিয়েছিল সে। সে বিশ্বাস করত, সুর যে বাণীকে আশ্রয় করে, তার প্রত্যেকটি অর্থ বোধগম্য না হলে গানের প্রকাশ সঙ্গত হয় না। গান নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করত সে। পড়াশোনাও করত। কিন্তু গান মাধ্যমে কখনও সে বিখ্যাত হতে চায়নি। সে বরং তার জীবনের অর্ধেক দিয়েছিল গানকে। অর্ধেক সে লালন করত একটি নিটোল সংসারের স্বপ্নে ভরা।

সেদিন, বালিতে পা ডুবিয়ে চলতে চলতে গানের অর্থ বলে সে। সে কি ভেবে এসেছিল, এটাই বলবে, এমনই গাইবে বালিয়াড়িতে পা দিয়েই? কিন্তু সে স্বীকার করতে বাধ্য হয় অন্তত নিজের কাছে ততখানি জটিল, ততখানি সুপরিকল্পিত ছিল না চন্দ্রাবলী মেয়েটি তার ছিল আবেগ। আপাদমস্তক চটচটে আবেগ।

“স্বামীর সঙ্গে শ্বশুরবাড়ি এসেছি।
কিন্তু থাকতে পারিনি সঙ্গে।
জানি না স্বামীসঙ্গের স্বাদ। স্বপ্নের
মতো কেটে গেল এ যৌবন। সখীরা
ঙ্গলিক গায় আর আমার মাথায়
দেয় সুখ-দুঃখের হলুদ। বিয়ে হয়ে
গেল আমার। কিন্তু স্বামীকে ছাড়াই
চলেছি। জ্ঞাতি-গোষ্ঠী পথ দেখিয়ে
নিয়ে যাচ্ছে। কবীর বলছে, আমি
দ্বিতীয় বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি যাব।
প্রিয়তমকে নিয়ে তুরী বাজিয়ে চলে
যাব।”

সমুদ্রের গা-ঘেঁষা পারে যখন পৌঁছেছিল তারা, পেছনে তাকিয়ে দেখেছিল, খাঁড়ির পারে সার-সার নৌকাগুলিকে বিন্দুর মতো লাগছে। সুতরাং নৌকার মানুষের কাছে তারাও ছিল বিন্দুবৎ। বিপুল ঢেউ সমুদ্রে ছিল না। হাওয়ার আদরে জলের গায়ে অল্প অল্প দোলা। দিগন্তবিস্তৃত জল। তরঙ্গ নেই বলে সমুদ্র যেন তেমন করে সমুদ্র নয় এখানে। অনেকটা, সুন্দরবনে গিয়ে মোহনা যেমন দেখেছিল তেমনই। জলে নানা রঙের ছড়া। পারের বালুতে মিশে গৈরিক জল কিছু দূর অবধি গিয়ে বুজাভ। তারপর নীল। নীলের পর চকচকে। রৌদ্র পড়ে সুবিস্তৃত আলোয় প্রতিফলিত পরকলা। কোনও এক অদৃশ্য বৃহৎ চোখের বৃহত্তর কাচ।

সে সমুদ্রের দিকে মুখ করে স্তব্ধ দাড়িয়েছিল। একটিও কথা বলতে তার ভাল লাগছিল না। কিন্তু চন্দ্রাবলী আনন্দে দিশেহারা হয়ে পড়ে। বড় অস্থির সে তখন। বড় চঞ্চল।

একটা গোটা সমুদ্রবেলায় তারা মাত্র দু’জন। যেন এই বেলাভূমি, তারা আসবে বলেই সাজিয়ে রেখেছে প্রকৃতি। তার ওপর চন্দ্রাবলী খুশি বাজিয়ে ঘুরছিল। তার চলায় নৃত্যছন্দ প্রকাশ ছিল সেদিন। দু’হাত দু’পাশে ছড়িয়ে সে আঃ বলছিল, উঃ বলছিল। কিছুক্ষণ ছুটোছুটি করে হঠাৎ সে প্রশান্ত হয়ে যায়। ধীর পায়ে এগিয়ে আসে শুভদীপের কাছে এবং চোখে চোখ রাখে নিঃশব্দে কিছুক্ষণ।

শুভদীপ সমুদ্র থেকে চোখ ফিরিয়ে চন্দ্রাবতীতে নিবদ্ধ করতে চায়নি। কিন্তু চন্দ্রাবলী দৃষ্টি আকর্ষণ করে তার। এবং একটি ইচ্ছার কথা জানায়। খোলা আকাশের নীচে, গায়ে রোদুর মেখে, ধুলোবালি জড়িয়ে সঙ্গমের ইচ্ছা। স্বপ্নের পুরুষের সাথে সঙ্গম।

অতএব সে তার দীর্ঘ কেশ মুক্ত করে দেয়। দোপাট্টা ফেলে দেয় বালুকাবেলায়। হাওয়ায় দোপাট্টা উড়ে যেতে থাকে। কামিজ খুলে ফেলে সে। অন্তর্বাস খুলে ফেলে। উথলে ওঠে কালো ভারী স্তন। সালোয়ার খুলে ফেলে। মেদবহুল পেট নেমে আসে নিষিদ্ধ বস্তার মতো। এবার সে শেষতম অন্তর্বাসে টান দেয়। তার চুল ওড়ে। পোশাক বিক্ষিপ্ত ছড়িয়ে যায়। মত্ত হস্তিনীর মতো হেলেদুলে সে এগোয়। চোখের পলক ফেলে না। শরীরের মেদ-মাংস থরথর নড়ে।

আর শুভদীপের বিবমিষা আসে। সে পিছু হটে। দেখতে পায়, চন্দ্রাবলীর খোলা ঠোঁট ঝুলে আছে। নড়ছে। চোখ সম্মোহিত। শুভদীপ কেন তার জীবনে এত দেরি করে এল তাই বলছে বারবার। আর ঝাপ দিচ্ছে। শুভদীপকে জড়িয়ে নিতে ঝাপ দিচ্ছে অবলীলায়। আর শুভদীপ তাকে ঠেলে ফেলে দিচ্ছে, ঘৃণ্য ঘেয়ে লোম ওঠা কুকুরী যেমন ঠেলে ফেলে দেয় মানুষ।

চন্দ্রাবলী বিস্ময়াহত তাকিয়েছিল তার দিকে। তারপর ধীরে ধীরে জল গড়িয়ে দিচ্ছিল চোখ থেকে। এই বিশাল বালুচর, যার ওপর তারা দু’জন ছাড়া আর কেউ ছিল না, যা ছিল তাদের একার, একান্তের—তার ওপর দাড়িয়ে এই প্রত্যাখ্যানে তার বুক ভেঙে খানখান।

শুভদীপের দিকে পিঠ ফিরিয়ে একটি একটি করে পোশাক পরে নিয়েছিল সে। তারপর প্রশ্ন করেছিল, শুভদীপ কি ভালবাসেনি তাকে? কেন তা হলে সে থেকে যাচ্ছে তার সঙ্গে সারাক্ষণ? কে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হচ্ছে তারা?

কথা বলতে ভাল লাগছে না এমন অজুহাত দেয় সে। অতিথি নিবাসে ফিরে সে আলোচনায় যোগ দেবে—এমন বলে। চন্দ্রাবলী জোর করে না।

সমুদ্র দেখার অভিলাষ চলে গিয়েছিল তাদের।নীরবে হাঁটতে হাঁটতে তারা খাড়ির কাছে পৌঁছয়। যাওয়া এবং প্রবর্তনের চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত করে চন্দ্রাবলী স্তব্ধ হয়ে ছিল। হাতছানি দিয়ে নৌকা ডেকেছিল শুভদীপ। তারপর অতিথিনিবাসে ফিরে স্নান করে নেয় দু’জনে। এবং স্নান করা মাত্রই শুভদীপের তীব্র কাম জাগে। তৎক্ষণাৎ কামার্ত পুরুষ হিসেবে সে চন্দ্রাবলীকে শুইয়ে দেয় বিছানায়। চন্দ্রাবলী এতটুকু আপত্তি করে না।

বরং নিজেকে সমর্পণ করে।

এবং যখন সে অন্তঃস্থিত, যখন তার দেহ সংলগ্ন হয়ে আছে চন্দ্রাবলীর দেহে, যখন পরস্পরের পরামরাজিতে ঘটে গিয়েছে আলিঙ্গন—যখন সে, শুভদীপ, স্বদেহ প্রকাশ করে নগ্ন রাত্রির দেহে শুয়ে আছে টানটান আর আবিষ্ট নিদ্রার ন্যায়—তখন তার পিঠে হাত রেখে, গালে চেপে গাল, তাকে আবার পুরনো প্রশ্নের মুখোমুখি করে দেয় চন্দ্রাবলী। জিজ্ঞাসা করে, সে কি তবে ভালবাসাবিহীন শরীর সংযোগ করে? কেন করে? কেন?

ঘোর টুটে যায়। শুভদীপ কঠোর মুখে তাকায় তখন। উঠে পড়তে থাকে। সংলগ্ন স্নানঘরে যায় আর পোশাকে আবৃত করে দেহ। চন্দ্রাবলী শুয়ে থাকে। খোলা। আনমনা। উদাস। শুভদীপ সহ্য করতে পারে না। যে-দেহে সে উপগত হয়েছে কয়েক মুহূর্ত আগে, স্বেচ্ছায়, স্বকামনায়, সেদেহ অবান্তর মনে হয়। উন্নত পেট ও বিপুল বক্ষদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় সে।

চন্দ্রাবলী প্রশ্ন করে ফের। একই প্রশ্ন। অবিকল। শুভদীপ জল খায়। চন্দ্রাবলীর থেকে দূরত্ব বজায় রেখে বালিশে পিঠ ঠেকিয়ে বসে। তারপর কঠোর কণ্ঠে বলে সেই সেদিনের কথা। রায়মাটাং বনে যাবার পথে থেকে যাওয়া তাদের। শিলিগুড়ি শহরে। আর সে-রাত্রে পরিচয় গভীর ছিল না, প্রেম ছিল না, ভালবাসার সম্ভাবনা ছিল না, কিন্তু শরীর সর্বময় ছিল। স্বেচ্ছায়। কেন?

চন্দ্রাবলী ভেঙে পড়েছিল। কান্না আটকে যাওয়া বিকৃত স্বর ভেঙে ভেঙে বোঝাবার চেষ্টা করেছিল, সুন্দরবনের সেই অসামান্য ভ্রমণকালে শুভদীপের শির চাঁদ স্পর্শ করে, আর সে, চন্দ্রাবলী, জল সাক্ষী রেখে, জ্যোৎস্না সাক্ষী রেখে, নৌকার গলুইয়ের শুভলক্ষ্মীকে সাক্ষী রেখে, বনবিবি ও দক্ষিণরায়ের আশীর্বাদ দিয়ে শুভদীপকে ভালবেসে ফেলে। এমন ভালবাসা সে কারওকে বাসেনি আগে। কখনওব্রসেনি। সে শুধু সর্বাংশে শুভদীপকেই নিয়ে নেয় সেদিন। তার ভুল-ভ্রান্তি ন্যায়-অন্যায় সমেত। তার ভাল-মন্দ, কল্যাণ-অকল্যাণ সমেত। তাই শরীর বিষয়ে কোনও দ্বিধা ছিল না তার। আজও নেই। যাকে মনের মধ্যে বসিয়ে দেওয়া যায়, সে যে শরীরেও থাকে সারাক্ষণ।

শুভদীপ তখন মহুলির কথা বলে দেয়। বলে দেয় মহুলিকে সে ভালবাসে। ভালবাসবে। বলে দেয় আর রোষে দগ্ধ হতে থাকে। কেন এই রোষ সে নিজেও জানে না। এবং টের পায়, মহুলির কথা বলতে বলতে অদ্ভুত আরামে ভরে যাচ্ছে মন। চন্দ্রাবলী কাদছে। হো-হো কাঁদছে। বালিশে মুখ চেপে শব্দ কামড়ে কাঁদছে। খোলা চুল ভোলা পিঠময়। কান্নার দমকে ভারী নিতম্বে দোল লাগছে। তার খেয়াল নেই সে নগ্ন। অনাবৃত। কাদছে। আর শুভদীপের আরাম হচ্ছে। অদ্ভুত আরাম। সে ব্যাগ খুলে ছবি বার করছে। মহুলির ছবি। এই সফরেও সে মহুলিকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে।

ছবি হাতে নিয়ে চন্দ্রাবলী আশ্চর্য শান্ত হয়ে যায়। রাগে না। চেচায় না। চোখের জল মুছে ফেলে। যত্ন করে পাশে ছবিটি রেখে সে একে একে পোশাক পরে নেয়। আবার ছবিটি হাতে নিয়ে দেখে। ফিরিয়ে দেয়। উদাস চোখে জানালার কাছে দাঁড়ায়। যেন, মহুলির সৌন্দর্যের কাছে বিনা যুদ্ধে তার আত্মসমর্পণ।

বিছানায় মিলনের দাগ লেগে আছে তখনও। চন্দ্রাবলীর হালকা ঘরোয়া, পোশাকেও লেগে গিয়েছে দাগ। সে তার চুল তুলে মস্ত খোঁপা করছে। আরও একবার স্নানের আয়োজন নিয়ে চলে যাচ্ছে স্নানঘরে। নিঃশব্দে কেটে গিয়েছে কিছুক্ষণ। শুভদীপের আর মহুলির ছবি দেখতে ভাল লাগছিল না। যেন সুর বেপথুমান হল। তাল কেটে গেল সময়ের। সে ছবিটি ঢুকিয়ে রাখল ফের। আর তখন, নিঃশব্দ ধারাস্নানের ভেতর থেকে বেপথুমান সুর টেনে, বেতালকে তালে বেঁধে শব্দাবলি ছড়িয়ে দিল বাতাসে। বন্ধ দরজা ঠেলে সেই সব শব্দ এসে পৌঁছল বিছাৰ্যায়। সে শব্দগুলিকে আলাদা করতে পারল না। স্নানঘরের দরজা খুলে গেল। চন্দ্রাবলী সুরের ধারায় ভেজানোনা চুল সুরের হাওয়ায় শুকোতে লাগল। শুভদীপ চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইল। সে না চাইলেও তার মন চন্দ্রাবলীর সুর ছাড়িয়ে অন্য কোথাও যেতে পারল না।

নৈনা অন্তরি আব তু জু হে নৈন ঝঁপেউঁ।
না হৌঁ দেখৌঁ ঔরকু না তুঝ দেখন দেউঁ

–এসো আমার চোখে, আমি বুজে ফেলব চোখ। আমি আর কারওকে দেখব না। তোমাকেও আর দেখতে দেব মা অন্য একজনকেও।

কবীর রেখ সিন্দুরকি কাজল দিয়া ন জাই।
নৈ রমইয়া রবি রহা দুজা কহাঁ সমাই॥

–কবীর বলে, যেখানে সিঁদুররেখা দেবার কথা, সেখানে দেওয়া যায় কাজল। আমার দু’চোখে রামকে দিয়েছি আসন, সেখানে অন্যের স্থান। কোথায় হবে।

মন পরতিতি ন প্রেম-রস নাঁ ইস, তনমেঁ ঢংগ।
কেয়া জানোঁ উস পীবসুঁ কৈসেঁ রহসি রংগ॥

—বিশ্বাস করতে পারি না কিছু মনের মধ্যে প্রেমের নাগাল পাই না। এ শরীরে যে প্রিয়তমকে আকর্ষণ করার মতো কিছুই নেই। কী কৌশলে তার সঙ্গে রঙ্গরহস্যে ডুব দেব আমি?

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *