২৭. সৃষ্টিতত্ত্ব ও কোরআন

সৃষ্টিতত্ত্ব ও কোরআন

ড. মরিস বুকাইলি ১৯৭৬ সালের ৯ নভেম্বর ফ্রেঞ্চ মেডিসিন একাডেমীতে একটি বক্তৃতা প্রদান করেন এবং সেই ভাষণে প্রথম তিনি দেখানোর চেষ্টা করেন যে, “তাঁর” সম্পর্কে কোরআনের প্রত্যেকটি বক্তব্য আধুনিক গবেষক, বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদদের মনোযোগ আকর্ষণের দাবিদার। তাঁর সেই ভাষণটির শিরোনাম ছিল : “ফিজিওলজিক্যাল এ্যান্ড এমব্রাইওলজিক্যাল ডেটা ইন দ্য কোরআন।” এটি ১৯৭৬ সালেই ফ্রেঞ্চ মেডিসিন একাডেমী কর্তৃক বুলেটিন আকারে প্রকাশিত হয়। ওই ভাষণে তিনি আরো দেখানোর প্রয়াস পান যে, সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কে কোরআনের যে বক্তব্য, তা পরিমাণে প্রচুর এবং কোরআনের ওইসব বক্তব্যে বিশ্লেষণে এতদসংক্রান্ত আরো বহু তথ্য-উপাত্ত প্রাপ্তি সম্ভব।

তাঁর উক্ত ভাষণে মানুষের আদি উৎস সম্পর্কিত কোরআনের যেসব বক্তব্য আলোচিত হয়েছিল, তা ছিল নিম্নরূপঃ

বিশ্বসৃষ্টি সম্পর্কে কোরআনের বক্তব্য বাইবেলের বক্তব্য থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। শুধু তাই নয়, বিশ্বসৃষ্টি সম্পর্কে কোরআনের ওইসব বক্তব্য আধুনিক বিজ্ঞান গবেষণাজাত তথ্য-পরিসংখ্যানের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

আধুনিক বিজ্ঞান আমাদের জানাচ্ছে যে, সূর্য, চন্দ্র, পৃথিবী এককথায় গ্রহ-নক্ষত্র সবকিছুই মহাশূন্যে ঘূর্ণায়মান; এবং মহাশূন্যের ঘূর্ণায়মান প্রতিটি বস্তুই বিবর্তনের ধারায় ক্রমবিকাশমান। এসব বিষয়ে কোরআনের বক্তব্য বিজ্ঞানের সুপ্রমাণিত তথ্যের সাথে বলতে গেলে অভিন্ন।

পবিত্র কোরআন বহু আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে, মানুষের দ্বারা মহাশূন্য বিজিত হবে।

পবিত্র কোরআনে চৌদ্দ শ’ বছর আগেই পানি-প্রবাহের গতিপথ ও ভূ-প্রকৃতি সম্পর্কে যে-সব বক্তব্য দেয়া হয়েছে একমাত্র আধুনিক যুগে এসে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও গবেষণার আলোকে সে-সব সত্য বলে প্রতিপন্ন হয়েছে।

নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে যারা কোরআনের বক্তব্য বিশ্লেষণে আগ্রহী হবেন, পূর্বোক্ত তথ্যাবলী তাঁদের বিস্মিত না করে পারবে না। আমাদের এই গবেষণা পুস্তকে এসববিষয়ে আরো বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষিত ও পর্যালোচিত হবে। এখানে গোড়াতেই আবারও বলে নিতে চাই যে, আমাদের এই পর্যালোচনায় বৈজ্ঞানিক গবেষণার সেই মূল ধারাটি অক্ষুণ্ণ থাকবে–বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণের যাবতীয় গবেষণা যে ধারায় পরিচালিত হয়। সেই নিরিখে আরো একটি কথা বলে নিতে চাই। তাহল, সার্ধ চৌদ্দশ’ বছর আগে অবতীর্ণ কোরআনের মত একটি ধর্মগ্রন্থে কিভাবে এহেন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার দ্বারা সুপ্রমাণিত এবং বস্তুনিষ্ঠ গবেষণার দ্বারা সুপ্রতিষ্ঠিত সিদ্ধান্ত স্থানলাভ করতে পেরেছে–সেই বিষয়টিই মানুষের জ্ঞানবুদ্ধির কাছে বিরাট একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে বিরাজ করছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *