৩. বাঙলার জাতিবিন্যাস ও নৃতাত্ত্বিক জ্ঞাতিত্ব

তৃতীয় অধ্যায় – বাঙলার জাতিবিন্যাস ও নৃতাত্ত্বিক জ্ঞাতিত্ব

আগের অধ্যায়ে দেখান হয়েছে যে উপজাতি ও তফশীলভুক্ত জাতিসমূহ পশ্চিমবঙ্গের মোট হিন্দু জনসংখ্যার ৩২.৪৯ শতাংশ। এরাই হচ্ছে বাঙলার আদিম অধিবাসী, এবং এরাই রচনা করেছে বাঙলার নৃতাত্ত্বিক বনিয়াদ। পশ্চিমবঙ্গের মোট হিন্দু জনসংখ্যার বাকি ৬৭.৫১ শতাংশ তফশীল-বহির্ভুত জাতিসমূহ। মোটামুটিভাবে আমরা তাদের বাঙলার উচ্চজাতি বলে বর্ণনা করি।

বাঙলার উচ্চজাতিসমূহ প্রায় সকলেরই বিস্তৃত-শিরস্কতার ছাপ বহন করছে। এই বিস্তৃত-শিরস্কতার বিস্তৃতি কিছু পরিমাণে উপজাতি ও তফশীলভুক্ত জাতিসমূহের মধ্যেও ঘটেছে। বাঙলার উচ্চজাতিসমূহের মধ্যে বিস্তৃত-শিরস্কতার লক্ষণ দেখে রীজলি কিরূপ ভ্রমে পড়েছিলেন, সে সম্বন্ধে আমরা আগেই আলোচনা করেছি। আমরা দেখেছি যে, বাঙালি তার বিস্তৃত-শিরস্কতা আলপীয় নরগোষ্ঠী থেকে পেয়েছে। মনে হয় এই আলপীয় গোষ্ঠীর লোকেরা সমূদ্রপথে এশিয়া-মাইনর বা বালুচিস্তান থেকে পশ্চিম উপসাগরের উপকুল ধরে অগ্রসর হয়ে, ক্রমশ সিন্ধু, কাথিয়াবাড়, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, কুর্গ, কন্নাদ ও তামিলনাড়ু প্রদেশে পৌঁছায়। তাদেরই একটা বড় দল পূর্ব উপকূল ধরে বাঙলায় ও ওড়িশায় এসে বসবাস শুরু করেছিল। এরাই উচ্চশ্রেণির বাঙালাদের পূর্ব-পুরুষ। তবে এরাও রক্তের বিশুদ্ধতা রক্ষা করতে সমর্থ হয়নি। এদের সংমিশ্রণ ঘটেছিল কিছু পরিমাণে অস্ট্রিক ও দ্রাবিড় ভাষাভাষী লোকেদের সঙ্গে।

যদিও আলপীয়রা আর্য-ভাষাভাষী ছিল, তবুও তাদের ভাষার সঙ্গে পঞ্চনদের উপত্যকায় আগত ‘নর্ডিক’ পর্যায়ভুক্ত বৈদিক আর্যদের ভাষার কিছু পার্থক্য ছিল। গ্রিয়ার্সন এই পার্থক্য লক্ষ্য করেছিলেন। ‘মুঞ্জুশ্রীমূলকল্প’ নামক একখানি প্রাচীন গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, বাঙলাদেশের আর্য-ভাষাভাষী লোকেরা ‘অসুর’ জাতিভুক্ত। এটা মহাভারতের এক উক্তি থেকেও সমর্থিত হয়। সেখানে বলা হয়েছে যে অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ পুণ্ড ও সুহ্মদেশের লোকেরা দীর্ঘতমা ঋষির ঔরসে, মহিষী সুদেষ্ণার গর্ভে অসুর-রাজ বলির ক্ষেত্রজ সন্তান। মনে হয় এই উক্তির পিছনে আছে দীর্ঘতর কোনো জাতির সহিত রক্ত সংমিশ্রণের কাহিনি।

এখন কথা হচ্ছে এই অসুর জাতির লোকেরা কারা, এবং তারা কোথা থেকেই বা বাঙলাদেশে এসেছিল। বৈদিক ও বেদোত্তর সংস্কৃত সাহিত্যে ‘অসুর’ শব্দটির খুব ব্যাপক ব্যবহার দেখা যায় দেবগণের বিরোধী হিসাবে। ঋগ্বেদে শব্দটির বহু উল্লেখ আছে। ঋগ্বেদের বিভিন্ন মণ্ডলের যে সকল সূক্ত ও ঋকে ‘অসুর’ শব্দটির উল্লেখ আছে সেগুলো যথাক্রমে ১।২৪।১৪, ১৫৪।৩, ২।১।৬, ৩।৩।৪, ৪।২।৫, ৫।১২।১, ৬।২২।২, ৭।২।৩, ৭। ৬।২, ৭।৬।২, ৭।১৩।১, ৭।১৩।১, ৭।৩০।৩, ৭।৩৬ ২, ৭।৫৬।২৪, ৭।৬৫।২৪, ৬০।৬৫।২, ৭।৯৯।৫, ৮।৯।২৩, ৯।৭৩।১ ও ১০/১০/২। সিন্ধুর অসুর-রাজ ও অন্যান্য অসুর-রাজগণের উল্লেখও ঋগ্বেদে আছে। আমরা অনুমান করেছি যে, অসুররা বিস্তৃত-শিরস্ক জাতি ছিল। প্রথম অধ্যায়ে আমরা প্রাচীন নরকঙ্কাল সম্বন্ধে যে আলোচনা করেছি তা থেকেও, জানতে পারি যে, হরপ্পা যুগে গুজরাট ও সিন্ধুপ্রদেশে বিস্তৃত- শিরস্ক জাতি বিদ্যমান ছিল। ভারতের মেগালিথ নির্মাণকারীরাও বিস্তৃত- শিরস্ক জাতি ছিল। মেগালিথে অনুরূপ প্রোথিত শিরাখণ্ড বাঙলার মেদিনীপুর ও বাঁকুড়া জেলায় পাওয়া গিয়েছে।

অনেকে মনে করেন যে ‘অসুর’ বলতে আর্যপূর্ব-যুগের ভারতের এক দেশজ জাতি বুঝাত। যদি অসুররা বৈদিক আর্যগণের আগমনের পূর্বেই ভারতে এসে থাকে, তা হলে তারা যে দেশজ এই মতবাদ গ্রহণ করতে কোনো আপত্তি নেই। বৈদিক সাহিত্যে আমরা ‘দাস’, ‘দস্যু’, ‘নিষাদ’ প্রভৃতি আরও অনেক দেশজ জাতির নাম পাই। সুতরাং বৈদিক আর্যগণের ভারতে আগমনের পূর্বে এদেশে যে একাধিক জাতি বাস করত, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এদের অনেককেই অনার্য-ভাষাভাষী বলা হয়েছে। কিন্তু সকলেই যে অনার্য-ভাষাভাষী ছিল, তার সপক্ষে কোনো প্রমাণ নেই। বরং বৈদিক আর্যগণের ভারতে আগমনের পূর্বে আগত আলপীয় নরগোষ্ঠীর লোকেরা যে আর্য-ভাষাভাষী ছিল, তার সপক্ষে অনেক প্ৰমাণ আছে। যদি আর্য ও অসুররা উভয়েই আর্য ভাষাভাষী হয়, তা হলে সহজেই অনুমান করা যেতে পারে যে ভারতে আগমনের পূর্বে উভয়েই একই সাধারণ বাসস্থানে বাস করত। এই স্থানে বাসকালে অসুরদের মধ্যে একটা বিশেষ ধরনের জীবনচর্যা ও ধর্ম গড়ে উঠেছিল। এই জীবনচর্যা ও ধর্ম বৈদিক আর্যগণের জীবনচর্যা ও ধর্ম থেকে বহুলাংশে পৃথক ছিল। বৈদিক আর্যগণ ভারতে আগমনের পূর্বে অনেকগুলো নতুন দেবতার আরাধনার পত্তন করেছিল। এই নতুন দেবতাগণকে তারা ‘দেইবো’ (প্রাচীন ইন্দো-ইউরোপীয়), বা ‘দইব’ (ইন্দো-ইরানিয়) বা দেব (সংস্কৃত) নামে অভিহিত করত। আর আর্য-ভাষাভাষী অপর গোষ্ঠী তাদের আরাধ্যমণ্ডলীকে ‘অসুর’ নামে অভিহিত করত। এই পরম্পরা থাকার দরুন প্রাচীন পারসীকরা ও বৈদিক আর্যগণও তাদের অনেক দেবতাকে কখনো কখনো ‘অসুর’ নামে অভিহিত করত। বস্তুত: প্রাচীন বৈদিক সাহিত্যে অসুরগণের যেমন নিন্দাবাদ ও কটাক্ষ করা হয়েছে, তেমনই আবার দেব-উপাসকগণের প্রধান আরাধ্য দেবতা ইন্দ্র ও অন্যান্য দেবতাগণকে ‘অসুর’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। এ থেকেই প্রমাণিত হয় যে, দেব-উপাসকগণ ও অসুর-উপাসকগণ উভয়েই কোনো সময় এক সাধারণ অঞ্চলে বাস করত। উত্তরকালে এই অসুরপন্থারা এশিয়া মাইনর, ইরান ও ভারতে বসতি স্থাপন করে। এরাই যে উচ্চবর্ণ বাঙালির পূর্বপূরুষ সে কথা আগেই বলা হয়েছে। (লেখকের ‘বাঙলার সামাজিক ইতিহাস’, প্রকাশক: জিজ্ঞাসা, দ্রষ্টব্য)।

দুই.

তবে আগেই বলা হয়েছে যে বাঙলায় আগত আলপীয়রা তাদের রক্তের বিশুদ্ধতা রক্ষা করতে সমর্থ হয়নি। তারা বাঙলার আদি-অস্ত্রাল ও তাদের পূর্বে আগত দ্রাবিড় ভাষাভাষীদের সঙ্গে ক্ষেত্রবিশেষে খানিকটা সংমিশ্রিত হয়ে গিয়েছিল। বাঙলার বিভিন্ন জাতিসমূহের মধ্যে কি পরিমাণ এই সকল নৃতাত্ত্বিক উপাদান আছে, সে সম্বন্ধে আমরা একটু পরেই আলোচনা করব। কিন্তু তার আগে আমরা বাঙলার আদি ও পরবর্তীকালের সমাজবিন্যাস সম্বন্ধে কিছু বলে নিতে চাই। বাঙলায় ব্রাহ্মণ্য সমাজের অনুপ্রবেশ অনেক পরে ঘটেছিল। আদিতে বাঙলার সামাজিক সংগঠন কৌমভিত্তিক ছিল। এই সকল কৌমজাতির অন্যতম ছিল পুণ্ড ও কর্কট। মনে হয় পুণ্ডদের বংশধর হচ্ছে বর্তমান পোদ জাতি, ও কর্বটদের বংশধর হচ্ছে কৈবর্ত। এছাড়া, প্রাচীন বাঙলায় আরও কৌমভিত্তিক জাতি ছিল, যথা বাগ্দী, হাড়ি, ডোম, বাউরী ইত্যাদি। বাগ্দীরাই যে একসময় বাঙলার সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতি ছিল, তা আমরা প্রাচীন গ্রিস দেশীয় লেখকদের রচনাবলী থেকে জানতে পারি। এরা ঋগ্বেদে উল্লিখিত ‘বঙ্গদৃ’ জাতির বংশ কি না তাও বিবেচ্য

যদিও খ্রিষ্টপূর্ব যুগ থেকেই বাঙলাদেশে ব্রাহ্মণ্যধর্মের অনুপ্রবেশ ঘটেছিল, তথাপি গুপ্তযুগের পূর্বে ব্রাহ্মণ্যধর্ম বাঙলাদেশে বিশেষ প্রতিষ্ঠালাভ করতে পারেনি। কিন্তু গুপ্তযুগের পরে পালরাজগণের সময় বৌদ্ধধর্ম দ্বারা বাঙলাদেশ প্লাবিত হয়ে গিয়েছিল। সুতরাং সে যুগে জাতিভেদের যে বিশেষ কড়াকাড়ি নিয়ম ছিল না, তা সহজেই অনুমেয়। পালরাজগণের পরে সেনরাজগণ বাঙলায় আবার ব্রাহ্মণ্য-ধর্মের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। সুতরাং নতুন করে আবার একটা জাতিবিন্যাসের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। কিন্তু পালরাজগণের চার শত বৎসরের রাজত্বকালে সবই একাকার হয়ে গিয়েছিল। এর ফলে বহু সংকর জাতি সৃষ্টি হয়েছিল। বৃহদ্ধর্মপুরাণ (যা সেনরাজগণের রাজত্বকালের অব্যবহিত পরেই রচিত হয়েছিল) থেকে আমরা জানতে পারি যে এক ব্রাহ্মণ ছাড়া বাঙলার আর সব জাতিই সংকর জাতি। তবে এইসকল সংকর জাতিসমূহকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছিল—১. উত্তম সংকর, ২. মধ্যম সংকর, ও ৩. অন্ত্যজ। সে যাই হোক, বাঙলার জাতিসমূহ যে সংকর জাতি তা বৃহদ্ধর্মপুরাণ ও ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। বাঙলার জাতিসমূহের নৃতাত্ত্বিক পরিমাপ থেকেও তা প্রমাণিত হয়। তবে এই সংমিশ্রণ যে কার সঙ্গে কার ঘটেছিল, তার প্রকৃত হদিশ পাওয়া যায় না, কেন না বিভিন্ন পুরাণ ও ধর্মশাস্ত্রসমূহে এদের বিভিন্ন রকম উৎপত্তির কথা বলা হয়েছে। কোথাও বা কোনো জাতি অনুলোম-বিবাহের ফসল, আবার কোথাও বা তারা প্রতিলোম-বিবাহের ফসল। এটা নিচের তালিকা থেকে পরিষ্কার বোঝা যাবে-

জাতিপিতামাতাপ্রমাণসূত্র(৩)
১. অন্বষ্ঠ১. ব্রাহ্মণ
২. ক্ষত্রিয়
বৈশ্য
বৈশ্য
৫, ৭, ১, ১২
২. আগুরিকরণরাজপুত্র
৩. উগ্ৰ১. ক্ষত্রিয়
২. ব্রাহ্মণ
৩. বৈশ্য
শূদ্র
শূদ্র
শূদ্র
১, ৫, ১২, ৬

৪. কর্মকার১. বিশ্বকর্মা
২. শূদ্র
৩. শূদ্র
ঘৃতাচি
বৈশ্য
ক্ষত্রিয়


৫. করণক্ষত্রিয়বৈশ্য
৬. চর্মকার১. শূদ্র
২. বৈদেহক
৩. বৈদেহক
৪. অয়োগব
৫. তিবর
৬. তক্ষণ
ক্ষত্রিয়
ব্রাহ্মণ
নিষাদ
ব্ৰাহ্মণ
চণ্ডাল
বৈশ্য





৭. তিলিগোপবৈশ্য
৮. তেলিবৈশ্যব্রাহ্মণ
৯. তামলিবৈশ্যব্ৰাহ্মণ
১০. কংসবণিকব্ৰাহ্মণবৈশ্য
১১. চণ্ডালশূদ্রব্ৰাহ্মণ
১২. নাপিত১. ব্রাহ্মণ
২. ক্ষত্রিয়
৩. ব্রাহ্মণ
৪. ক্ষত্রিয়
শূদ্র
শূদ্র
বৈশ্য
নিষাদ



১৩. বাগ্দীক্ষত্রিয়বৈশ্য
১৪. হাড়িলেটচণ্ডাল
১৫. সুবর্ণবণিক১. অন্বষ্ঠ
২. বিশ্বকর্মা
বৈশ্য
ঘৃতাচি

১৬. গন্ধবণিক১. ব্রাহ্মণ
২. অন্বষ্ঠ
বৈশ্য
রাজপুত্র

১৭. কায়স্থব্ৰাহ্মণবৈশ্য
১৮. কৈবর্ত১. নিষাদ
২. শূদ্র
৩. ব্ৰাহ্মণ
৪. নিষাদ
অয়োগব
ক্ষত্রিয়
শূদ্র
মগধ



১৯. গোপ১. বৈশ্য
২. ক্ষত্রিয়
ক্ষত্রিয়
শূদ্র

২০. ডোমলেটচণ্ডাল
২১. তন্তবায়১. শূদ্র
২. বিশ্বকর্মা
ক্ষত্রিয়
ঘৃতাচি

২২. ধীবর১. গোপ
২. বৈশ্য
শূদ্র
ক্ষত্রিয়

২৩. নিষাদ১. ব্রাহ্মণ
২. ব্ৰাহ্মণ
৩. ক্ষত্রিয়
শূদ্র
বৈশ্য
শূদ্র
কৌটিল্য

২৪. পোদবৈশ্যশূদ্র
২৫. মালাকার১. বিশ্বকর্মা
২. ক্ষত্রিয়
ঘৃতাচি
ব্ৰাহ্মণ

২৬. মাহিষ্যক্ষত্রিয়বৈশ্য৪, ১২
২৭. মোদকক্ষত্রিয়শূদ্র
২৮. রজক১. বৈদেহক
২. ধীবর
৩. করণ
ব্রাহ্মণ
তিবর
বৈশ্য


২৯. বারুজীবী১. ব্রাহ্মণ
২. গোপ
শূদ্র
তন্তুবায়

১৩
৩০. বৈশ্য১. ব্রাহ্মণ
২. শূদ্র
বৈশ্য
বৈশ্য

৩১. শুঁড়ি১. বৈশ্যতিবর
(৩) ১. বৌধায়ন ধর্মসূত্র, ২. বৃহদ্ধর্মপুরাণ, ৩. ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, ৪. গৌতম ধর্মসূত্র, ৫. মনুসংহিতা, ৬. মহাভারত, ৭. পরাশয়, ৮. সূত্র সংহিতা, ৯. উপাশন সংহিতা, ১০. বিষ্ণু ধর্মসূত্র, ১২. যাজ্ঞবল্ক্য, ১৩. জাতিমালা।

পুরাণ ও ধর্মশাস্ত্রসমূহে বর্ণিত জাতিসমূহের উৎপত্তি-কাহিনি যে একেবারে কল্পনাপ্রসূত, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কেন না, প্রথমত পরস্পর- বিরোধী মতবাদ, ও দ্বিতীয়ত উত্তর ভারতের বর্ণবাচক জাতি হিসাবে ‘ক্ষত্রিয়’ ও ‘বৈশ্য’ জাতি কোনোদিনই বাঙলায় ছিল না। গুপ্তযুগের বহু লিপিতে ব্রাহ্মণ ব্যতীত বহু লোকের উল্লেখ আছে, কিন্তু এই সকল লিপিতে কেহ নিজেকে ক্ষত্রিয় বা বৈশ্য বলে দাবি করেননি। তবে পুরাণ ও ধর্মশাস্ত্রসমূহের বর্ণনা থেকে পরিষ্কার বুঝতে পারা যাচ্ছে যে, বাঙলার জাতিসমূহ যে মাত্ৰ নানাজাতির রক্তের মিশ্রণের ফসল তা নয়, পুনর্মিশ্রণেরও ফল।

পরবর্তীকালে বাঙলায় যে সমাজবিন্যাস রচিত হয়েছিল, তা হচ্ছে ১. ব্রাহ্মণ, ২. বৈদ্য, ৩. কারস্থ, ৪. নবশাখ, ৫. অন্যান্য জাতি। যেসব জাতির হাতে ব্রাহ্মণরা জলগ্রহণ করে তারাই সবশাখ। তাদের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে তিলি, তাঁতী, মালাকার, সদেগাপ, নাপিত, বারুই কামার, কুম্ভকার, গন্ধবণিক, মোদক। অন্যান্য জাতিসমূহ ছিল জল-অনাচরণীয়। সুবর্ণবণিকদের জল- আচরণীয় জাতির তালিকা থেকে বাদ দেবার কারণ সম্বন্ধে বলা হয় যে, বল্লভানন্দ নামে প্রসিদ্ধ সুবর্ণবণিক রাজা বল্লাল সেনকে অর্থ সরবরাহ করতে অসম্মত হওয়ায় বল্লাল সেন তাদের অবনমিত করেন।

তিন.

এবার আমরা বাঙলার জাতি, উপজাতি ও তফশীলভুক্ত জাতিসমূহের নৃতাত্ত্বিক জ্ঞাতিত্ব সম্বন্ধে আলোচনা করব। প্রথমেই এদের নৃতাত্ত্বিক পরিমাপ দেওয়া যাক।

জাতিশিরাকার-জ্ঞাপক সূচক-সংখ্যানাসিকাকার- জ্ঞাপক সূচক- সংখ্যাদেহ-দৈর্ঘ্য মিঃ মিঃ
ব্রাহ্মণ (৪)৭৮.৮৭০.৮১৬৭৬
কায়স্থ৭৮.৪৭০.৭১৬৩৬
সদেগাপ৭৮.৬৭৪.২১৬৩৩
গোয়ালা৭৭.৩৭৪.৬১৬৪৬
কৈবর্ত৭৭.৫৭৬.৬১৬২৯
পোদ৭৭.৮৭৬.৪১৬২৫
রাজবংশী৭৫.৪৭৬.৯১৬০৭
বাগ্‌দী৭৬.৪৮০.৮১৬০৩
বাউবী৭৫.১৮৪.৩১৫৮৫
চণ্ডাল৭৮.১৭৪.২১৬১৯
মুসলমান৭৭.৯৭৭.৫১৬৩৪
সাঁওতাল৭৬.১৮৮.৮১৬১৪
মুণ্ডা৭৪.৫৮৯.৯১৫৮৯
ওরাঁও৭৫.৪৮৬.১১৬২১
মালপাহাড়িয়া৭৫.৮৯৩.৬১৫৭৭
(৪) ড. বিরজাশঙ্কর গুহ ক গৃহীত পরিমাপ হচ্ছে-
ব্রাহ্মণ – ৭৮.৯ – ৬৭.৭ – ১৬৮০
কায়স্থ – ৮০.৮ – ৬৮.৯ – ১৬৯০

আপাতদৃষ্টিতে এটা মনে হবে যে, এরা কেউই বিস্তৃত-শিরস্ক নয়, সবাই নাতি-দীর্ঘশিরস্ক বা মাঝারি আকারের মাথার লোক। আগেই বলা হয়েছে যে, বাঙলায় আসবার পর আলপীয়রা বাঙলার দেশজ জাতিসমূহের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। দেশজ জাতিসমূহ দীর্ঘশিরস্ক নরগোষ্ঠীর লোক ছিল। সুতরাং এই সংমিশ্রণের প্রতিক্রিয়া গড়-পরিমাপের উপর প্রতিফলিত হয়েছে। সুতরাং বিভিন্ন জাতির অন্তর্ভুক্ত যে সকল ব্যক্তির পরিমাপ গ্রহণ করা হয়েছে, তাদের শিরাকার-জ্ঞাপক সূচক- সংখ্যার বিস্তৃতির (Range) দিকে নজর দিলে আমরা অন্য দৃশ্য দেখতে পাব। যেমন, যদিও ব্রাহ্মণদের গড় শিরাকার-জ্ঞাপক সংখ্যা ৭৮.৮, তথাপি যে সকল ব্রাহ্মণের পরিমাপ গ্রহণ করা হয়েছে, তাদের শিরাকার- জ্ঞাপক সূচক-সংখ্যার বিস্তৃতি হচ্ছে ৭২ থেকে ৮৭। অনুরূপভাবে কায়স্থদের শিরাকার-জ্ঞাপক সূচক-সংখ্যার বিস্তৃতি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮৮, এবং সদোপদের ঠিক ব্রাহ্মণদের মত ৭২ থেকে ৮৭। লক্ষ্য করা যাবে যে, যদিও ব্রাহ্মণ ও কায়স্থদের শিরাকার জ্ঞাপক সূচক-সংখ্যার গড় প্রায় একই, এবং বিস্তৃতির দিক থেকে যদিও ব্রাহ্মণ ও সদোপদের বিস্তৃতি এক, তথাপি এদের গড়ের মধ্যে মিল নেই। গড়ের পার্থক্য নির্ভর করেছে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে বিস্তৃত-শিরস্ক ব্যক্তির অনুপাতের কম বেশির উপর। বস্তুতঃ উপরে যেসকল জাতি ও উপজাতির পরিমাপ দেওয়া হয়েছে, তাদের সকলেরই মধ্যে বিস্তৃত-শিরস্কতা (তার মানে ৮০র উপর শিরাকার-জ্ঞাপক সূচকসংখ্যা) বর্তমান আছে। গড় যত নিচের দিকে গিয়েছে, সেই জাতির মধ্যে বিস্তৃত-শিরস্ক ব্যক্তির সংখ্যা তত কম। সেটা ঊর্ধ্বতম বিস্তৃত-শিরস্কের শিরাকার-জ্ঞাপক সূচক-সংখ্যা থেকেও প্রকাশ পায়। যথা, কৈবর্তদের মধ্যে ৮৭, পোদের ৮৫, চণ্ডালদের ৮৯, বাগদীদের ৮৩, বাউরীদের ৮১, ভূমিজদের ৮৪, সাঁওতালদের ৮৮, মুণ্ডাদের ৮১ ও ওঁরাওদের ৮৭। অনুরূপভাবে সবচেয়ে নিম্নতম দীর্ঘ- শিরস্ক ব্যক্তিদের শিরাকার-জ্ঞাপক সূচক-সংখ্যা-ও তাদের সংখ্যা পরিমাণ গড়কে প্রভাবান্বিত করেছে। যথা ব্রাহ্মণদের ৭১, সদেগাপদের ৭২, বাউরীদের ৭১, কায়স্থ, কৈবর্ত, পোদ ও চণ্ডালদের ৭০, বাগ্দীদের ৬৮, ভূমিজদের ৬৭, সাঁওতালদের ও মুণ্ডাদের ৬৯ ও ওরাঁওদের ৬৭। বস্তুতঃ বাঙলাদেশে নৃতাত্ত্বিক পর্যায়ের সংমিশ্রণ এমনভাবে ঘটেছে যে, পরবর্তীকালে পুরাণ-কারগণ বাঙলার জাতিসমূহকে সঙ্কর’ জাতি বলে অভিহিত করে অন্যায় কিছু করেননি।

তবে একথা এখানে মনে রাখতে হবে যে, মাত্র শিরাকার-জ্ঞাপক সূচক-সংখ্যার উপর নির্ভর করে নৃতাত্ত্বিক জ্ঞাতিত্ব নিরূপণ করা যায় না। এর সঙ্গে নাসিকাকার-জ্ঞাপক সূচক-সংখ্যা ও দেহ-দৈর্ঘ্যের পরিমাপ ও বিচার করতে হয়। সেদিক থেকে দেখা যাবে যে, আমরা উপরে প্রদর্শিত জাতিসমূহের যে তালিকা দিয়েছি তাতে আমরা যত উচ্চশ্রেণি থেকে নিম্নশ্রেণির দিকে যাব, তত বেশি চওড়া নাক ও খাটো দেহ-দৈর্ঘ্য (উভয়ই আদি-অস্ত্রাল জাতির লক্ষণ) দেখতে পাব। নিচে আমরা বিভিন্ন জাতির শির ও নাসিকাকার-জ্ঞাপক সুচক-সংখ্যাসমূহের পরিসীমা দেখালাম—

জাতিশির-সূচক সংখ্যানাসিকা-সূচক সংখ্যাদেহ-দৈর্ঘ্য মিঃ মিঃ
ব্রাহ্মণ৭২-৮৭৫৮-১০০১৫৫০-১৭৩৪
কায়স্থ৭০-৮৮৫৬-৮৯১৫৪৪-১৮১০
সদেগাপ৭২-৮৭৫৫-৯৮১৫১০-১৭৮০
কৈবর্ত৭০-৮৭৬৩-১০৩১৪৯০-১৭৭৬
পোদ৭০-৮৫৬৩-৯১১৪৯০-১৮৫০
চণ্ডাল৭০-৮৯৬২-৮৯১৪৭২-১৭৩৪
বাগদী৬৮-৮৩৬২-১০০১৪৩৪-১৭২২
ভূমিজ৬৭-৮৪৭২-১১৩১৪৬০-১৭৮২
সাঁওতাল৬৯-৮৮৭৪-১১০১৫১০-১৭৭০
মুণ্ডা৬৯-৮১৭৪-১১২১৪৪৬-১৭১৮
ওঁরাও৬৭-৮৭৭০-১১৩১৪৮০-১৭৪8

যাক, আমরা এবার গড়ের দিকে একটু বিচার করি। কায়স্থদের শিরাকার-জ্ঞাপক সূচক-সংখ্যা ও নাসিকাকার-জ্ঞাপক সূচক-সংখ্যা প্রায় ব্রাহ্মণদের সঙ্গে সমান। কিন্তু কায়স্থদের দেহ-দৈর্ঘ্য ব্রাহ্মণদের চেয়ে কম। সদোপদেরও শিরাকার-জ্ঞাপক সূচক-সংখ্যা ব্রাহ্মণ ও কায়স্থদের সঙ্গে প্রায় সমান, কিন্তু তাদের নাক কিছু বেশি প্রসারিত ও দেহ-দৈর্ঘ্য ব্রাহ্মণদের চেয়ে অনেক কম। গোয়ালা, কৈবর্ত ও পোদদের বিস্তৃত শিরস্কতা অনেক কম, কিন্তু নাক বেশি প্রসারিত, এবং দেহ-দৈর্ঘ্য গোয়ালাদের অপেক্ষা কৈবর্তদের কম, ও তাদের চেয়েও কম পোদদের। যদিও রাজবংশীদের নাক কৈবর্তদের সঙ্গে সমানভাবে প্রসারিত, তথাপি তারা নাতিদীর্ঘ-শিরস্ক ও কৈবতদের চেয়ে দেহ-দৈর্ঘ্যে অনেক খাটো। তবে রাজবংশীদের সঙ্গে যে মঙ্গোলীয় পর্যায়ের সংমিশ্রণ ঘটেছে, তা দৈহিক উচ্চতায় অনেক কম। সাঁওতাল ও মুণ্ডাদের নৃতাত্ত্বিক পরিমাপ দেখলে পরিষ্কার বুঝতে পারা যাবে যে, বাগ্দী ও বাউরীদের উপর আদি- অস্ত্রাল প্রভাব খুব বেশি পরিমাণে রয়েছে। পোদদের সঙ্গে বাঙলার মুসলমানদের বিশেষ নৃতাত্ত্বিক প্রভেদ নেই।

আরও বলা দরকার, বাঙলার বিভিন্ন শ্রেণির ব্রাহ্মণদের মধ্যে নৃতাত্ত্বিক প্রভেদ বিশেষ কিছু নেই। নিচের তালিকায় প্রদত্ত পরিমাপ দেখলে এটা বুঝতে পারা যাবে।

ব্ৰাহ্মণ শ্রেণিশিরাকার-জ্ঞাপক সূচক-সংখ্যানাসিকাকার-জ্ঞাপন সংখ্যাদেহ-দৈর্ঘ্য মিঃ মিঃ
রাঢ়ী৭৯.৫৬৫.৮১৬৬১
বারেন্দ্র৮০.১৬৫.৩১৬৫৮
পাশ্চাত্ত্য৭৮.৯৬৪.১১৬৫৮
বৈদিক দাক্ষিণাত্য৭৯.৯৬৭.৫১৬৭৫

বাঙলার বৈদ্যদের পরিমাপও অনেকটা এরূপ।

অঞ্চল-ওয়ারী সমীক্ষা করে দেখা গিয়েছে যে রাঢ়, সমতট ও বঙ্গের উচ্চ জাতি-সমূহের মধ্যে গোল মাথা ও লম্বা দেহ, অন্যান্য জাতি ও মুসলমানদের চেয়ে বেশি পরিমাণে দৃষ্ট হয়। উচ্চ জাতিসমূহের মধ্যে যে আলপীয় উপাদান সবচেয়ে বেশি, তা এ থেকেই প্রমাণ হয়।

তবে সংমিশ্রণ যে সব জাতেরই মধ্যে ঘটেছে, এবং এক জাতির মধ্যেও বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রকমের সংমিশ্রণ ঘটেছে, তা নিচে প্রদত্ত রাজবংশীদের নৃতাত্ত্বিক পরিমাপ থেকে বুঝতে পারা যায়।

 শিরাকার-জ্ঞাপক
সূচক-সংখ্যা
নাসিকাকার-জ্ঞাপক
সূচক-সংখ্যা
দেহ-দৈর্ঘ্য
মিঃ মিঃ
ক. ক্ষত্রির রাজবংশী (জলপাইগুড়ি)৭৬.২৭২.৮১৬০৮
খ. দেশী রাজবংশী (পঃ দিনাজপুর)৭৮.৩৭১.৫১৬০০
গ. পলিয় রাজবংশী (মালদহ)৭৬.৮৭৪.০১৫৯২
ঘ. রাজবংশী (মুর্শিদাবাদ)৭৭.৭৭৪.০১৬১০
ঙ. রাজবংশী (চব্বিশপরগনা)৭৫.৪৭৬.৯১৬১৭

তবে একথা এখানে বলা প্রয়োজন যে, জলপাইগুড়ির রাজবংশীদের মধ্যে বৈশিষ্ট্যমূলক মঙ্গোলীয় চোখের খাঁজ (Epicanthic fold) লক্ষিত হয়। কিন্তু পশ্চিমদিনাজপুরে দেশি রাজবংশীদের মধ্যে উহার অভাব দেখা যায়। তা থেকে বুঝতে পারা যায় যে জলপাই-গুড়ির রাজবংশীদের সঙ্গে মঙ্গোলীয় রক্তের সংমিশ্রণ ঘটেছে, আর দেশি রাজবংশীদের সঙ্গে ঘটেছে দ্রাবিড় রক্তের সংমিশ্ৰণ।

তবে নৃতাত্ত্বিক পরিমাপের সামান্য হেরফের থাকলেও আমরা কয়েকটি বিশেষ জাতির মধ্যে একটা নৃতাত্ত্বিক ঐক্য লক্ষ্য করি। ব্রাহ্মণ, বৈদ্য, কায়স্থ ও সদেগাপরা একই পর্যায়ের মধ্যে পড়ে। অনুরূপভাবে গোয়ালা, কৈবর্ত ও পোদরা একই শ্রেণিভুক্ত। চণ্ডালরা কেবল ব্যতিক্রম। আর সাঁওতাল, মুণ্ডা, ওঁরাও, মালপাহাড়িযা প্রভৃতি উপজাতিসমূহ একই পর্যায়ভুক্ত।

আমরা উপরে যে, আলোচনা করেছি, তা থেকে আমরা যে সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি, তা হচ্ছে-

১. বাঙলার ব্রাহ্মণ, বৈদ্য, কায়স্থ, সদোপ প্রভৃতি উচ্চ জাতিসমূহের মধ্যে আলপীয় (আর্মেনয়ড সহ) উপাদানই প্রধান। তবে মিশ্রণও যথেষ্ট ঘটেছে। কুলজী গ্রন্থসমূহ অনুসারে বাঙলার রাঢ়ী শ্রেণির ব্রাহ্মণরা যে দাবি করেন, তাঁরা আদিশূর কর্তৃক কান্যকুব্জ থেকে আনীত পঞ্চব্রাহ্মণের বংশধর, তার পিছনে কোনোরূপ নৃতাত্ত্বিক সমর্থন নেই। উত্তর প্রদেশের ব্রাহ্মণরা দীর্ঘ-শিরস্ক। বাঙালি ব্রাহ্মণরা বাঙলার অন্যান্য জাতির নায় বিস্তৃত-শিরস্ক।

২. অন্যান্য জাতিসমূহের মধ্যে আলপীয় উপাদান আপেক্ষিকভাবে কম।

৩. তফশীলভুক্ত জাতিসমূহের মধ্যে দেশজ উপাদানই (আদি-অস্ত্রাল ও দ্রাবিড়) বেশি।

৪. উপজাতিসমূহ দুই পর্যায়ে বিভক্ত—

ক. সাঁওতাল, মুণ্ডা ওঁরাও প্রভৃতি আদি-অস্ত্রাল।

খ. উত্তরপূর্ব সীমান্তের উপজাতিসমূহ; যথা; লেপচা, ভুটিয়া প্রভৃতি মঙ্গোলীয় পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *