• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • নতুন সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • পুরানো সব ক্যাটাগরি
  • My Account →
  • নতুন সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • পুরানো সব ক্যাটাগরি
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

০৯. অদ্ভুত শব্দটা কানে আসতেই

লাইব্রেরি » সমরেশ মজুমদার » অর্জুন সমগ্র - সমরেশ মজুমদার » ফলে বিষের গন্ধ (১৯৯৬) » ০৯. অদ্ভুত শব্দটা কানে আসতেই

অদ্ভুত শব্দটা কানে আসতেই মেজর দাঁড়িয়ে গেলেন। শব্দটা অনেকটা শিএর মতো। একটানা কিছুক্ষণ বেজে থেমে যাচ্ছে। পৃথিবীর অনেক জঙ্গলে মেজর ঘুরেছেন। সে-তুলনায় ড়ুয়ার্সের এই জঙ্গল কিছুই নয়। গাছগুলো তেমন ঘন নয়, হিংস্র প্রাণী নেই বললেই চলে। নেহাত কপালে লেখা না থাকলে বুড়ো বাঘ বা গণ্ডাবে দর্শন পাওয়া যায় না। অর্জুনের সঙ্গে দৌড়তে দৌড়তে আছাড় খেয়ে পড়েছিলেন তিনি। ভেবেছিলেন হাত পা ভেঙেছে। কিছুই হয়নি টের পেয়ে মনে হল জঙ্গলটা একবার দেখে নেওয়া যাক। এই জঙ্গলের কোনও এক বিশেষ জায়গায় সেই বিষফুল ফোটে। অর্জুন বা অমল সোমের আগে যদি তিনি সেটা আবিষ্কার করতে পারেন, তা হলে তাঁর খ্যাতি বাড়বে। জঙ্গলের ভেতর গাড়ি চলার পথ ধরে দুবৃত্তরা এখন যতই ছোটাছুটি করুক, তার নাগাল পাবে না।

শিসের আওয়াজ লক্ষ করে মেজর এগোলেন। শব্দটা বাড়ছে স্পষ্ট হচ্ছে, অর্থাৎ কাছাকাছি শব্দের উৎস আছে। মেজর সতর্ক হলেন। পায়ের তলায় বুনো ঘাস আর শুকনো পাতার ছড়াছড়ি। হঠাৎ শব্দটা থেমে গেল। যেন তাকে দেখতে পেয়েই থামল। মেজর স্থির হয়ে দাঁড়ালেন। হঠাৎ ঝটপট শব্দ হল। একটা ছোট হরিণ ছুটতে ছুটতে গাছের নিচে এসে দাঁড়াল। মেজরের মাত্র হাত-আটেক দূরে দাঁড়িয়ে সে অবাক চোখে তাকাল। বড় মায়া হল ওকে দেখে। একটা কালো গাছের গুড়ির পাশে হরিণটা দাঁড়িয়ে তাঁকে দেখছে। মেজর জিভে শব্দ করতেই হরিণটা গাছের দিকে সরে গেল। এবং তখনই ঘটনাটা ঘটে গেল। গাছের শরীর আচমকা চওড়া হয়ে হরিণটাকে ঢেকে ফেলল। ছোট্ট প্রাণীটির শরীর মুহূর্তেই কালো হয়ে গেল। একটু ঝটপটানির সময় বিচ্ছিন্ন হল গাছ কিন্তু সেটা কয়েক মুহূর্তের জন্য, আবার তা জোড়া লেগে গেল গাছের গায়ে। শুধু গুঁড়ির কাছটা ফুলে রইল হরিণের শরীরের জন্য। এরকম বিস্ময়কর ব্যাপার এই জঙ্গলে ঘটতে পারে, মেজর কল্পনাও করেননি। শুধু এই জঙ্গল কেন, পৃথিবীর কোথাও কোনও গাছ শরীর বাড়িয়ে হরিণের বাচ্চাকে খেয়ে নিতে পারে তা কেউ কি কখনও বিশ্বাস করবে? ঝটপটানির সময় গাছ যখন বিচ্ছিন্ন হয়েছিল, তখন অংশটিকে কয়েক মুহূর্তের জন্যে নড়তে দেখেছিলেন তিনি। এখনও মনে হচ্ছে জায়গাটা নড়ছে। পায়ে পায়ে এগিয়ে গিয়ে দূরত্ব রেখে দাঁড়িয়ে তাঁর চোখ চড়ক গাছ হয়ে গেল। গাছ নয়। গুড়িটার অনেকটা জুড়ে রয়েছে বিশাল বিশাল কালো পিপড়ে। গায়ে গায়ে এমন চাপ বেঁধে রয়েছে, সামান্য দুর থেকেও তাদের আলাদা করে চেনা যাচ্ছে না। মাংসখেকো পিপড়ে। এদেরই এক স্বজাতি আফ্রিকার জঙ্গলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে একটা হাতির বাচ্চাকে সাবাড় করে দিতে পারে। কিন্তু তারা থাকে ঢিবির মধ্যে লুকিয়ে। এভাবে গাছের শরীরে লেপ্টে ঝুলে থেকে শিকারের জন্য অপেক্ষা করার বুদ্ধি তাদের নেই। যত ছোটই হোক হরিণটা পিপড়েগুলোকে নিয়ে ছুটে দূরে চলে যেতে পারল না। অর্থাৎ চটজলদি মেরে ফেলার কায়দা পিপড়েগুলো জানে। এখন দল বেঁধে হরিণটাকে খেয়ে নিচ্ছে ওরা। হয়তো আগামী কাল কিছু হাড় খুঁজে পাওয়া যাবে ওখানে। মেজর গাছটার আশপাশে কোনও পুরনো হাড় দেখতে পেলেন না। তিনি রুমালে মুখ মুছলেন। হরিণটার বদলে তিনি যদি গাছটার পাশে দাঁড়িয়ে বিশ্রাম নিতেন? পিপড়ের বিষ যদি তাঁকে অসাড় করে দিত, তা হলে তিনি কিছুই করতে পারতেন না। অর্জুনরা হাড়গোড় দেখে কি তাকে চিনতে পারত।

সন্তর্পণে জায়গাটা এড়ালেন তিনি। এমন তো হতেই পারে, পিপড়েগুলো এক জায়গায় রোজ থাকে না। খানিকটা যাওয়ার পর একটা পরিষ্কার গাছের গোড়ায় কিছু হাড় পড়ে থাকতে দেখে তাঁর ধারণা সত্যি বলে প্রমাণ পেলেন। তিনি ঠিক করলেন, কাল সকালে ক্যামেরা নিয়ে এসে ছবি তুলবেন এবং একটা শিশিতে কয়েকটা জ্যান্ত পিঁপড়ে ধরে নিয়ে যাবেন প্রমাণ হিসেবে।

বিকেল ফুরিয়ে যাচ্ছে। জঙ্গলে অন্ধকার খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। মেজর বুঝলেন এবার তাঁকে ফিরতে হবে। যত হালকা জঙ্গলই তোক না কেন, রাত নামলে তার চেহারা বদলে যায়। কিন্তু কিছুটা পথ হাঁটার পর তাঁর মনে হল, বাংলোর দিকে তিনি যাচ্ছেন না। তখন কোন পথে এদিকে চলে এসেছেন তা যেন ঠাওর করতে পারছেন না। এবং তখনই তিনি ডালপালা ভাঙার শব্দ পেলেন। দিনের আলো তখন নিভুনিভু। অভিজ্ঞতা থেকে মেজর বুঝলেন, ওই শব্দ হাতি কিংবা বাইসন ছাড়া কেউ করতে পারে না। এই জঙ্গলে গণ্ডার আছে কি না জানা নেই, তবে তাদের চরিত্র তাঁর জানা নেই। তিনি দৌড়াতে লাগলেন।

ভারী শরীর নিয়ে কিছুক্ষণ ছোটার পর দম নেওয়ার জন্য দাঁড়ালেন মেজর। এই জঙ্গলে দ্রুত ছোটাও সম্ভব নয়। কিন্তু এতেই তাকে জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে হচ্ছিল। সেটা স্বাভাবিক হতে-না-হতেই অদ্ভুত একটা মিষ্টি গন্ধ নাকে এল। সঙ্গে সঙ্গে মেজরের মাথা ঝিমঝিম করতে লাগল। শরীরে সেই ভাবটা ছড়িয়ে যাচ্ছিল। মেজর দ্রুত পিছু হটতে লাগলেন। যখন গন্ধটা আর নাকে নেই, তখন উবু হয়ে বসে পড়লেন তিনি।

এখন চারপাশে পাখির চিৎকার ছাড়া কোনও শব্দ নেই। ধাতস্থ হতে বেশ কিছুটা সময় লাগল। উঠে দাঁড়িয়ে মেজর উত্তেজিত হলেন। তাঁর মনে হল তিনি পেয়ে গেছেন। যে-খবর বিদেশি কাগজে ছাপা হয়েছিল, তা মিথ্যে নয়। ওই গন্ধের বৃত্ত থেকে তিনি যদি সরে না আসতেন, তা হলে তাঁর মৃতদেহ আজ রাত্রেই জানোয়ারের খাবার হয়ে যেত। ওই বিষফুল অবশ্যই ওখানে আছে। তিনি জায়গাটা চেনার চেষ্টা করলেন। অন্ধকার এখন বেশ জমাট। তবু একটা পত্রহীন গাছকে তিনি চিহ্ন হিসেবে ঠিক করলেন। কাল দিনের আলো ফুটলেই এদিকে চলে আসতে হবে। মেজর পা বাড়ালেন।

 

রেঞ্জার ততক্ষণে লোকজন জোগাড় করে ফেলেছেন। আহত লোকটিকে ইতিমধ্যে ফরেস্ট অফিসে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার কথা। রেঞ্জার স্বীকার করলেন মাঝে-মাঝেই দুবৃত্তরা জঙ্গলে হানা দেয়। তাদের তে এত আধুনিক অস্ত্র থাকে যে বাধা দেওয়ার সাহস তাঁরা পান না। আর এই লোকগুলোর পেছনে এদিকের কিছু ক্ষমতাবান মানুষ আছেন বলেই পুলিশও তেমন সক্রিয় নয়।

কিন্তু মেজরের সন্ধানে তখনই একটা অভিযান সংগঠিত করতে তৎপর হয়েছেন রেঞ্জার। জঙ্গলে ভয়াবহ ঘটনা যে ঘটবে না, তা কেউ জোর দিয়ে বলতে পারে না। অর্জুন খুব নার্ভাস হয়ে পড়েছিল সন্ধে নামতেই। রাত্রে মেজরের পক্ষে পথ চিনে আসা আরও দুরূহ হবে। অমল সোম গম্ভীর হয়ে। বেতের চেয়ারে বসেছিলেন, আহত লোকটিকে অনেক জেরা করেও তিনি জানতে পারেননি মোটর সাইকেল আরোহীর পরিচয় কী! কেন এসেছিল। লোকটা ঠোট টিপে যন্ত্রণার ভান করে গিয়েছে। অমল সোম বুঝেছেন ওটা ভানই, কারণ লোকটা খুব বেশি আহত হয়নি। এখানে এসেই নীল চ্যাটার্জির সঙ্গে বিরোধে যেতে হবে তিনি ভাবেননি। এই সব ফালতু ঝামেলা তাঁকে আসল কাজ করতে দেবে না।

তিনি রেঞ্জারকে জিজ্ঞেস করলেন, নিম টি এস্টেট এখান থেকে কতদূর?

মাইল দশেক।

আগামীকাল সকালে সেখানে যাওয়া যাবে?

নিশ্চয়ই। কাউকে খবর পাঠাতে হবে?

পাঠানো ভদ্রতা। মিসেস ব্যানার্জি নামে এক ভদ্রমহিলা বোধ হয় ওই চা বাগানের মালিক। আমি তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চাই।–অমল সোম বললেন।

ঠিক এইসময় জঙ্গলের ভেতর গাড়ির আওয়াজ পাওয়া গেল। সন্ধে নেমে গেলে শুধু সরকারি অফিসার ছাড়া গাড়ি নিয়ে জঙ্গলে কেউ আসেন না। ঢোকার ব্যাপারে বিধিনিষেধ রয়েছে। রেঞ্জার উৎসুক হয়ে তাকালেন। ডি এফ ও সাহেব আসতে পারেন।

কিন্তু বাঁক ঘুরে যে গাড়িদুটোকে আসতে দেখা গেল, তার প্রথমটা নীল জিপসি। গাড়ি দুটো দাঁড়িয়ে গেল বাংলোর সামনে। দরজা খুলে ড্রাইভার চিৎকার করে উঠল, অ্যাই, কে আছিস? সামনে আয়।

অর্জুন উঠে দাঁড়াচ্ছিল, তাকে ইশারায় বসতে বলে রেঞ্জার এগিয়ে গেলেন, বলুন।

ও তুমি এখানে। তা চাঁদু, হঠাৎ ডানা গজাল কেন?

আমি আপনার কথা কিছুই বুঝতে পারছি না।

বোঝাব। যে লোকগুলো আজ এসেছে, তারা কোথায়?

ওঁরা আমাদের বড় সাহেবের গেস্ট।

ঘোস্ট করে ছেড়ে দেব। নীল চ্যাটার্জি চিৎকার করল, অ্যাই! বেরিয়ে আয়।

অমল সোম উঠে রেলিংয়ের পাশে দাঁড়ালেন।

শোন! এই এলাকা আমার। এখানে থাকতে হলে আমার কথা শুনে চলতে হবে। নতুন লোকদের প্রথমবার আমি একটা সুযোগ দিই। এর পর কেউ যদি আমার কোন লোককে অপমান করে, তা হলে তাকে এমন শাস্তি দেব যে, বাছাধন উঠে দাঁড়াতে পারবে না। কান খাড়া করে শুনে নে তোরা। অ্যাই রেঞ্জার, আমার নোকটা কোথায়?

তাকে ফরেস্ট অফিসে রাখা হয়েছে।

নীল চ্যাটার্জি ইশারা করতে পেছনের গাড়িটা বেরিয়ে গেল। ওই গাড়ি যে। জলপাইগুড়ির বরেন ঘোষালের ছোট ভাই চালাচ্ছে, তা বুঝতে অসুবিধে হল না। এবার নীল জিজ্ঞেস করল, এখানে কেন আসা হয়েছে?

সম্বোধন তুই থেকে তুমিতে উঠল। অমল সোম কোনও জবাব দিলেন। রেঞ্জার বললেন, বেড়াতে। বললাম তো বড়সাহেবের গেস্ট ওঁরা।

বেড়ানোর আর জায়গা পেল না। আমার সঙ্গে যারা লাগে, তাদের প্রথমবার সতর্ক করি। দ্বিতীয়বারে ঠাকুদার নাম ভুলিয়ে দিই। তৃতীয়বারে বাবার নাম আর চতুর্থবার নিজের। প্রথমবার হয়ে গেল আজ। গাড়িতে উঠে বসল নীল চ্যাটার্জি। তারপর গাড়ি ঘুরিয়ে যেমন এসেছিল তেমন বেরিয়ে গেল।

রেঞ্জার উঠে এল ওপরে, সরি স্যর। বুঝতেই পারছেন কী অবস্থায় আছি।

অমল সোম বললেন, ছেলেটা আপনার সঙ্গে ওইরকম ব্যবহার করল, আপনি কিছু বলতে সাহস পেলেন না। একজন সরকারি কর্মচারী হিসেবে আপনি কি কিছুই করতে পারেন না?

আমি বড়সাহেবকে বলেছি। থানায় জানানো হয়েছে। কিন্তু থানা যদি অ্যাকশন না নেয়, তা হলে তো আমরা অসহায়। শুধু-শুধু আপনাকেও অপমান করে গেল, বড়সাহেব জানলে আমার মুখ দেখানোর উপায় থাকবে না। রেঞ্জারকে দুঃখিত দেখাচ্ছিল।

এবার অর্জুন কথা বলল, অমলদা, আপনি কেন চুপ করে রইলেন?

কথা বলার সময় তখন ছিল না, অর্জুন। উন্মাদের হাতে অস্ত্র থাকলে তাকে এড়িয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। যাক, ওরা যে-জন্যে এসেছিল তা সফল হল। অমলদার দৃষ্টি লক্ষ করে ওরা দেখল দ্বিতীয় গাড়িটা বাংলোর সামনে দিয়ে দ্রুত চলে গেল। অর্জুন বলল, লোকটাকে নিয়ে গেল?

সেটাই তো স্বাভাবিক। অমল সোম বললেন।

সার, আপনি নিম টি-এস্টেটে যেতে চাইছিলেন, ওখানেই নীলবাবু থাকেন।

ঠিকই। সেজন্যেই যাচ্ছি। অমল সোম বললেন, আর দেরি করবেন, বেরিয়ে পড়ুন।

বাংলোর বাইরে এখন ঘন অন্ধকার। গোটাদুয়েক টর্চ, চারজন বনকর্মী, যাদের হাতে অস্ত্র বলতে লাঠি, জঙ্গলে ঢুকল। অর্জুন রেঞ্জারের সঙ্গে হাঁটছিল।

অর্জুন বলল, লোকটা ওই রকম অসভ্য ব্যবহার সবার সঙ্গে করে?

হ্যাঁ। তবে যেখানে স্বার্থ থাকে, সেখানে যথেষ্ট ভদ্রলোক। আসলে কী করে জানি না ও কয়েক বছরের মধ্যে প্রচণ্ড প্রভাবশালী হয়ে পড়েছে। কেউ ঘাঁটাতে সাহস পায় না। চাকরির জন্যে আমি এই বনবাদাড়ে পড়ে আছি। ও ইচ্ছে করলে আমার বারোটা বাজিয়ে দিতে পারে।

নীল চ্যাটার্জি কি শুধু চায়ের ব্যবসাই করে?

ওর যে কীসের ব্যবসা নেই, সেটাই বোঝা মুশকিল।

রেঞ্জারের নির্দেশে কর্মীরা চিৎকার করতে লাগল। টর্চের আলো গাছেদের গায়ে-গায়ে ধাক্কা খাচ্ছিল। অর্জুন চিৎকার করল, মেজর। মেজর! শুনছেন?

কিন্তু কোনও সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না।

হঠাৎই গাছের আড়াল থেকে একটা লোক বেরিয়ে এল। টর্চের আলো তার ওপর পড়তেই লোকটা চট করে আড়ালে চলে গেল। রেঞ্জার চিৎকার করলেন, কে ওখানে?

গলা ভেসে এল, আপনারা যাকে খুঁজছেন, তিনি বোধ হয় ওপাশের গর্তে পড়ে আছেন।

তুমি কে? রেঞ্জার ধমকে উঠলেন।

কোনও উত্তর এল না। বেঞ্জার কর্মীদের হুকুম দিলেন, ধরো তো লোকটাকে।

কিন্তু টর্চের আলোয় লোকটাকে খুঁজে পাওয়া গেল না। রাতের অন্ধকারে কাছাকাছি গা-ঢাকা দিয়ে থাকলেও হদিস পাওয়া সম্ভব নয়। লোকটা জঙ্গলে আনাড়ি নয়।

রেঞ্জার বলল, অদ্ভুত ব্যাপার! অন্ধকারে চিনতে পারলাম না, কিন্তু রাত-বিরেতে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানোর মতো লোক তো এই অঞ্চলে নেই।

অর্জুনের মাথায় তখন মেজরের চিন্তা। সে রেঞ্জারকে বলতেই মেজরকে খুঁজে বের করতে আর সময় লাগল না। শুকনো পাতায় ভর্তি একটা গর্তে মেজর পাশ ফিরে শুয়ে আছেন, টর্চের আলোয় মনে হচ্ছিল আরামে ঘুমোচ্ছেন। কিন্তু তিনি যে অজ্ঞান হয়ে আছেন, সেটা টের পেতে দেরি হল না। বনকর্মীরা ধরাধরি করে ওঁকে বের করে নিয়ে এলেন। অর্জুন মুখের কাছে হাত নিয়ে গিয়ে বুঝল নিঃশ্বাস পড়ছে।

বিস্তর ডাকাডাকির পর মেজর চোখ খুললেন। কিন্তু তাঁর কথা বলার সামর্থ্য ছিল না। বনকর্মীদের সাহায্যে ওঁকে জঙ্গল থেকে বের করে নিয়ে আসা হল। বাংলোর বিছানায় শুইয়ে দেওয়ার পর অর্জুন জিজ্ঞেস করল, এখানে ডাক্তার পাওয়া যাবে না?

রেঞ্জার বললেন, আশেপাশের প্রতিটি চা বাগানে একজন করে ডাক্তার আছেন, কিন্তু এই রাত্রে তাঁরা কেউই আসবেন না। আপনি যদি চান, তা হলে গাড়ি বের করে ওঁকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারি। শরীরে কোনও ক্ষতচিহ্ন নেই, কিছু হলে হার্টের ব্যাপার হতে পারে।

অমল সোম বিছানার পাশে এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন। বললেন, একটু দেখি।

তিনি ওঁর নাড়ি পরীক্ষা করলেন। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, খুব দুর্বল লাগছে?

মেজর কোনওমতে শব্দ উচ্চারণ করতে পারলেন, হু।

অমল সোম অর্জুনকে বললেন, একটু গরম দুধ খাইয়ে দিলে কাজ হতে পারে।

গরম দুধ পেতে অসুবিধা হল না। বাবুর্চি সেটা এনে দিতে অর্জুন একটু একটু করে মেজরকে খাইয়ে দিল। অমল সোম বললেন, ওকে এবার ঘুমোতে দাও।

একজনকে অপেক্ষা করতে বলে রেঞ্জার বাকি বনকর্মীদের ছেড়ে দিলেন। দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে রেঞ্জার বললেন, অদ্ভুত ব্যাপার ঘটছে আজ। ভদ্রলোক অজ্ঞান হয়ে পড়ে রইলেন আর সেই খবরটা দিয়ে গেল ভূতের মতো একজন। না হয় বুঝলাম চুরিটুরির ধান্দায় লোকটা জঙ্গলে ঢুকেছিল। কিন্তু আমাদের খবর দেওয়ার গরজ তো হওয়া উচিত নয়।

অমল সোম বললেন, হ্যাঁ। এই ব্যাপারটা অদ্ভুত। তবে অপরাধীদের মনেও মাঝে মাঝে বিবেক জেগে ওঠে। জেল পালানো অথবা গ্রেপ্তার এড়ানো অপরাধীদের কাছে এই জঙ্গল তো লুকিয়ে থাকার পক্ষে দারুণ।

অর্জুন জিজ্ঞেস করল, কিন্তু মেজর তো অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো ভীরু নন।

সেটা উনি জেগে না উঠলে বোঝা যাবে না। যাক, আজ অনেক হয়েছে। এবার খেয়ে নাও। রেঞ্জারসাহেব, আপনিও এখানে খেয়ে নেবেন নাকি?

রেঞ্জার আপত্তি জানালেন, না, না,। আমি এবার চলি। বাবুর্চি, সাহেবদের খানা লাগাও। বাবুর্চি বারান্দার এককোণে দাঁড়িয়ে ছিল, আদেশ পাওয়া মাত্র নীচে নেমে গেল।

রেঞ্জার বললেন, কাল সকাল আটটায় গাড়ি পাঠাব?

বেশ। অমল সোম মাথা নাড়লেন।

ঠিক তখনই চিৎকার শোনা গেল। বাবুর্চি চেঁচাচ্ছে। রেঞ্জারের পেছন পেছন ছুটে গেল অর্জুন। কিচেনেল দরজা খোলা। বাবুর্চি তাদের দেখে হাউমাউ করে বলল, কোই আদমি খানা চুরি কিয়া সাব। সবজি আউর রোটি লে লিয়া।

কিচেনের পেছন দিকের জানলা খোলা। রেঞ্জার জানালা দিয়ে টর্চের আলো ফেলতে কাউকে দেখা গেল না। একচিলতে মাঠ, মাঠের পর জঙ্গল।

বাবুর্চি যে পাত্রে রুটি রেখেছিল, তার ঢাকনা একপাশে পড়ে আছে। অর্ধেক রুটি নেই, সঙ্গে নেই সবজির বড় বাটি। অথচ চিকেনে হাত দেয়নি চোর।

রেঞ্জার বললেন, কেউ যদি খাবার চুরি করতে আসে, তা হলে আগে চিকেন নেবে। এ কী ধরনের চোর? তুমি দরজা বন্ধ করে যাওনি?

হ্যাঁ সাব। তালা নেহি দিয়া।

ঠিক আছে। যা আছে তাই সাহেবদের দিও। রেঞ্জার বেরিয়ে এলেন।

অর্জুন বলল, এই চোর দেখছি নিরামিষ খেতে অভ্যস্ত।

খাওয়াদাওয়ার শেষে বিছানায় শুয়ে এপাশ-ওপাশ করতে করতে অর্জুনের মনে পড়ে গেল। সুন্দর এখন জঙ্গলে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। পার্বতী বড়ুয়া বলেছিলেন যে, এদিকের জঙ্গলে ফল নেই, মাটি খুঁড়ে কিছু অবশ্য পাওয়া যায়। সুন্দরকে খাদ্য সমস্যায় পড়তে হবে। এই চোর সুন্দর নয় তো? সে কণ্ঠস্বর মনে করার চেষ্টা করল। একদিন সুন্দর তার সঙ্গে কথা বলেছে, স্বর মনে রাখা তাই সম্ভব নয়। কিন্তু সুন্দর কি অত দূর থেকে এখানে চলে এসেছে পায়ে হেঁটে? আর এই এলাকাটা তো নীল চ্যাটার্জির বাগানের কাছে। সুন্দরের পক্ষে তো দূরত্ব বাড়ানোই স্বাভাবিক, নীলের কাছাকাছি জঙ্গলে থাকবে কেন?

এই সময় মেজর পাশের খাটে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কিছু বললেন।

অর্জুন জিজ্ঞেস করল, কিছু বলবেন?

মাথা! মাথায় মেরেছে। আঃ। মেজর আবার নাক ডাকা শুরু করলেন।

মেজরের মাথায় কে মারল? সুন্দর? কেন?

Category: ফলে বিষের গন্ধ (১৯৯৬)
পূর্ববর্তী:
« ০৮. তুমি আমাকে গাড়ি চালানো শেখাচ্ছ চাঁদু
পরবর্তী:
১০. মেজরের মাথার ঠিক পেছনে »

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বাংলা লাইব্রেরি : উল্লেখযোগ্য বিভাগসমূহ

লেখক ও রচনা

অনুবাদ সাহিত্য

সেবা প্রকাশনী

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

কোরআন

হাদিস

ত্রিপিটক

মহাভারত

রামায়ণ

পুরাণ

গীতা

বাইবেল

বিবিধ রচনা

বাংলা ওসিআর

Download Bangla PDF

হেলথ

লাইব্রেরি – ফেসবুক – PDF

top↑