গ্রন্থভূক্ত কবিতা (কাব্যগ্রন্থ)
গান
অগ্রন্থিত কবিতা
গল্প
চলচ্চিত্র কাহিনী ও চিত্রনাট্য
সম্পাদকীয়, গদ্য ও বক্তৃতা
সাক্ষাৎকার
1 of 2

উপন্যাসের খসড়া

উপন্যাসের খসড়া

যুবকটি দুরকমই ভেবেছিলো। যদি যুবতী ফিরে আসে এবং একসাথে থাকতে রাজি হয়, তাহলে নিজের সমস্ত উড়নচন্ডিপনার সাথে শেষবারের মতো সে লড়বে। আর তা না হলে সম্পূর্নভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে সে। মানসিক ইভলমেন্ট না থাকলে সে অন্য মেয়েকে নিয়ে ভাবতে পারবে। অথবা সে আবার আগের মতো একা একা থাকতে শুরু করবে। শামুকের মতো গুটিয়ে নেবে নিজেকে।

নারীটি চিরকালীন নারীর মতো তার কুয়াশা বা আশা কোনোটিকে স্পষ্ট করতে পারলো না। অথবা স্পষ্ট করতে চাইলো না। স্পষ্ট হোক বা অস্পষ্টই হোক, মানুষ চায়— তাকে চাইতেই হয়। এই চাওয়া এবং প্রাপ্তির মধ্যে আবহমানকালের এক অপূর্নতা নিয়তির মতো সেঁটে আছে। তবু আকাংখা জমে, মেঘ হয়। কখনো ঝড়, কখনো বৃষ্টি, আবার কখনো শুধু মেঘে মেঘে, অন্ধকারে। নারীটি কিছুই স্পষ্ট করলো না।

গতকাল বিকেল থেকেই যুবতী পাখা মেলতে চাইছিলো। যুবক তখন শিকল পরালো তাকে। শিকল বন্ধন নয়, বন্দিত্বের প্রতীক। তবু সে শিকলই। নারীটি ডানা ঝাপটায়, যুবক পালক ছিঁড়ে ফেলতে চায়।

তারপর তারা আর বর্তমান বন্দিত্ব নিয়ে কেউ কোনো কথা বলে না। আলিঙ্গন তাদের উষ্ণ কোরে তোলে। চুম্বন তাদের কামার্ত করে, শৃঙ্গার তাদের উৎসবে ডেকে নিয়ে যায়। তখন কোনো বন্ধন থাকে না, কোনো মুক্তি থাকে না। তখন কোনো স্মৃতি থাকে না, কোনো স্বপ্ন থাকে না। তখন তাদের কোনো সমস্যাও থাকে না।

বিছানায় নিটোল নগ্ন রমনী তখন ঝলসায় অবসাদে। পুরুষটি কড়া তামাক পোড়ায় দু আঙুলের ভেতর। তার চোখ শ্রান্ত সুন্দরের প্রতিটি চড়াই উৎরাই পেরোয়। সুন্দরের চুড়ায় গিয়ে বর্শার মতো গেঁথে থাকে তার চোখ। চোখদুটো বড়ো পান্ডুর। শ্যাওলা জমা মজা পুকুরের মতো। তার চোখদুটি এখন ধু-ধু বালিয়াড়ি।

এক সময় ভালোবাসার গভীর স্পর্শে দুটি শরীর আর অন্ধকার মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়।

কিন্তু সকালের রোদ জানালার পর্দা স্পর্শ করলেই নারীটি চিরকালীন নারী হয়ে ওঠে। অস্পষ্টতার ভেতরে সে পাখা মেলতে চায়। যুবক আবার শিকলে জড়ায় তাকে।

যুবতীটি পাখা মেলবেই, কারন তার স্মৃতি রক্তাক্ত, তার স্বপ্ন বিপর্যস্ত, তার আকাংখা বিক্ষিপ্ত। দ্বিধা এবং সংশয় তাকে সম্পূর্ন গ্রাস করেছে। যুবকের কোনো প্রতিশ্রুতিই তাকে আর নাড়া দেয় না। কিন্তু যুবকটি আরো একবার, অন্তত একটি বারের মতো নিজের সাথে লড়াইতে নামতে চায়— যে লড়াইয়ে চিরদিনই একা সে পরাজিত হয়েছে। সে চায় সঙ্গী। সে চায় সহযোদ্ধা।

মানব মানবী এখন চূড়ান্ত মুখোমুখি। যুবকটি তার ভেবে রাখা দুটির যে কোনো একটি সিদ্ধান্তে যেতে চাইছে। নারী সিদ্ধান্তহীন। একবার চোখ ভিজে যায়, একবার স্পর্শ ভুলিয়ে দেয় বর্তমান। একবার কষ্ট এসে কন্ঠের নিচেয় দলা পাকিয়ে থাকে, একবার চুম্বনে চুম্বনে ফিরে আসে আটটি বছর।

খাবার টেবিলে নাস্তা সাজানো থাকে। তারা কেউই ক্ষুধার কথা মনে করতে পারে না। পরস্পরের দিকে তাকিয়ে থেকে তারা আগামীর কথা ভাবতে পারে না। শিকড় ছেঁড়ার গভীর গোপন শব্দ শোনে দুজন। বুকের মধ্যে মুখ লুকোয়— কষ্ট কমে না।

যুবকটি চেনে স্বকালের অন্তর্গত মুখ, সভ্যতার খাঁচায় পোরা গিনিপিগ। যে কোনো শর্তেই সে নারীটির সঙ্গ চায়, স্বপ্ন চায়, মনোযোগ চায়। নারীটির অন্তর জুড়ে অপমান। ভালোবাসার মানুষ সে তো একার, একান্ত নিজের। অন্য চোখ, অন্য শরীর তাকে ছুঁয়ে গেছে, নষ্ট করেছে।

কাকে মনোযোগ বলি, একাগ্রতা বলি কাকে! যে মন হাজার মনের কাছে গিয়ে খুঁজেছে শান্তি অথচ শরীরে লাগায়নি তার এতোটুকু ছোঁয়া। অথবা যে শরীর শত শরীরের বাঁকে বাঁকে ঘুরেছে অথচ মনে যার লাগেনি এতোটুকু অন্য স্পর্শ!

একাগ্রতা কার? কোনটি বিশ্বস্ততা? নিমগ্নতা কাকে বলা যাবে?

জীবন গড়ায়— মুখোমুখি মানব মানবী শেষবারের মতো (আসলে কি শেষ অব্দি শেষ কিছু আছে?) আলিঙ্গন করে। শেষ চুম্বনে কাঁপে ব্যথিত ওষ্ঠ। চোখ ভিজে যায়— বিদায়৷৷

০২.০৬.৮৭ মোংলা বন্দর

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *