০৯. মনুসংহিতা – নবম অধ্যায়

মনুসংহিতা – নবম অধ্যায়

১। পুরুষস্য স্ত্রিয়াশ্চৈব ধর্ম্ম্যে বর্ত্মনি তিষ্ঠতোঃ।

সংযোগে বিপ্রয়োগে চ ধর্ম্মান্ বক্ষ্যামি শাশ্বতান্‌॥

ধর্মপথে স্থিত সংযুক্ত ও বিযুক্ত পুরুষ ও স্ত্রীলোকের সনাতন ধর্ম বলব।

২। অস্বতন্ত্রাঃ স্ত্রিয়ঃ কার্য্যাঃ পুরুষৈঃ স্বৈর্দ্দিবানিশম্‌।

বিষয়েষু চ সজ্জন্ত্য সংস্থাপ্যা আত্মনো বশে॥

স্ত্রীলোকদের (স্বামী প্রভৃতি) ব্যক্তিগণ তাদের দিনরাত পরাধীন রাখবেন, (অনিষিদ্ধ) রূপাদি বিষয়াসক্ত স্ত্রীলোকদেরও নিজের বশে রাখতে হবে।

৩। পিতা রক্ষতি কৌমারে ভর্ত্তা রক্ষতি যৌবনে।

রক্ষন্তি স্থবিরে পুত্রা ন স্ত্রী স্বাতন্ত্র্যমৰ্হতি॥

(স্ত্রীলোককে পিতা কুমারী জীবনে, স্বামী যৌবনে ও পুত্র বার্ধক্যে রক্ষা করে; (কখনও) স্ত্রীলোক স্বাধীনতার যোগ্য নয়।

৪। কালেহদাতা পিতা বাচ্যো বাচ্যশ্চানুপযন্‌ পতিঃ।

মৃতে ভৰ্ত্তরি পূত্রস্তু বাচ্যো মাতুররক্ষিতা॥

বিবাহযোগ্য কালে কন্যা সম্প্রদান না করলে পিতা, (ঋতুকালে) স্ত্রীগমন না করলে পতি, স্বামীর মৃত্যুর পরে মাতার রক্ষণাবেক্ষণ না করলে পুত্র নিন্দনীয় হয়।

৫। সূক্ষ্মেভ্যোহপি প্রসঙ্গেভ্যঃ স্ত্রিয়ো রক্ষ্যা বিশেষতঃ।

দ্বয়োর্হি কুলয়োঃ শোকামাবহেয়ুররক্ষিতাঃ॥

সূক্ষ্ম দুঃসঙ্গ থেকেও বিশেষভাবে স্ত্রীলোক রক্ষণীয়; অরক্ষিত স্ত্রীলোক (পিতৃ মাতৃ) উভয় কুলের দুঃখ জন্মায়।

৬। ইমং হি সর্ব্ববর্ণানাং পশ্যন্তো ধর্ম্মমুত্তমম্।

যতন্তে রক্ষিতুং ভার্য্যাং ভর্ত্তারো দুর্ব্বলা অপি॥

সকল বর্ণের এই উৎকৃষ্ট ধর্ম লক্ষ্য করে দুর্বল পতিগণও স্ত্রীকে রক্ষা করতে চেষ্টা করেন।

৭। স্বাং প্রসূতিং চরিত্রঞ্চ কুলমাত্মানমেব চ।

স্বঞ্চ ধর্ম্মং প্রযত্নেন জায়াং রক্ষন্ হি রক্ষতি॥

সযত্নে স্ত্রীকে রক্ষা করে মানুষ নিজের সন্তান, চরিত্র, বংশ, নিজেকে এবং নিজের ধর্মকে রক্ষা করে।

৮। পতির্ভার্য্যাং সম্প্রবিশ্য গর্ভো ভূত্বেহ জায়তে।

জায়ায়াস্তদ্ধি জায়াত্বং যদস্যাং জায়তে পুনঃ॥

স্বামী স্ত্রীর মধ্যে (শুক্ররূপে) প্রবেশ করে গর্ভ হয়ে এই পৃথিবীতে জন্মে। জায়ার জায়াত্ব হয় এই জন্য যে (পতি) তার মধ্যে পুনরায় জন্মে।

৯। যাদৃশং ভজতে হি স্ত্রী সুতং সূতে তথাবিধম্।

তস্মাৎ প্ৰজাবিশুদ্ধার্থং স্ত্রিয়ং রক্ষেৎ প্রযত্নতঃ॥

স্ত্রী যেমন পুরুষকে ভজনা করে তেমন পুত্র প্রসব করে। সুতরাং, সন্তানের বিশুদ্ধির জন্য স্ত্রীলোককে সযত্নে রক্ষা করবে।

১০। ন কশ্চিদ্‌ যোষিতঃ শক্তঃ প্রসহ্য পরিরক্ষিতুম্‌।

এতৈরুপায়যোগৈস্তু শক্যাস্তাঃ পরিরক্ষিতুম্॥

কেউ বলপূর্বক (সংরোধ বা তাড়নাদি দ্বারা) স্ত্রীলোকদের রক্ষা করতে পারে না। এই (বক্ষ্যমাণ) উপায়গুলিতে তাদের রক্ষা করা যায়।

১১। অর্থস্য সংগ্রহে চৈনাং ব্যয়ে চৈব নিযোজয়েৎ।

শৌচে ধর্মেহন্নপক্ত্যাঞ্চ পারিণাহ্যস্যবেক্ষণে॥

অর্থের সংগ্রহ, ব্যয়, (দ্রব্যাদির ও শরীরের) শুদ্ধি, (দেবার্চনাদি) ধর্ম, অন্নপাক ও (শয্যা কটাহাদির) পরিদর্শনে স্ত্রীকে নিযুক্ত করবে।

১২। অরক্ষিতা গৃহে রুদ্ধাঃ পুরুষৈরাপ্তকারিভিঃ।

আত্মানমাত্মনা যাস্তু রক্ষেয়ুস্তাঃ সুরক্ষিতাঃ॥

যে স্ত্রীলোকেরা (দুঃশীল হেতু) নিজেদের নিজেরা রক্ষা না করে, তাদের বিশ্বস্ত আজ্ঞাবহ ব্যক্তিগণ গৃহে সংরোধ করে রাখলেও তারা অরক্ষিতা হয়। যারা (ধর্মজ্ঞতাবশতঃ) নিজেদের নিজেরা রক্ষা করে, তারা সুরক্ষিতা হয়।

১৩। পানং দুর্জ্জনসংসর্গঃ পত্যা চ বিরহোহটনম্‌।

স্বপ্নোহন্যগেহবাসশ্চ নারীসংদূষণানি ষট্‌॥

মদ্যপান, দুষ্টলোকের সংসর্গ, স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি, ঘুরে বেড়ান, (অকালে) নিদ্রা, পরগৃহে বাস—এই ছয়টি নারীর (ব্যভিচারাদি) দোষের কারণ।

১৪। নৈতা রূপং পরীক্ষন্তে নাসাং বয়সি সংস্থিতিঃ।

সুরূপং বা বিরূপং বা পুমানিত্যেব ভুঞ্জতে॥

এরা রূপ বিচার করে না, (যৌবনাদি) বয়সে এদের আদর নেই, রূপবান্ বা কুরূপ পুরুষ মাত্রেই তার সঙ্গে সম্ভোগ করে।

১৫। পৌংশ্চল্যাচ্চলচিত্তাচ্চ নৈঃস্নেহ্যাচ্চ স্বভাবতঃ।

রক্ষিতা যত্নতোহপীহ ভর্ত্তৃষ্বেতা বিকুৰ্বতে॥

পুরুষদর্শনে সম্ভোগাদি অভিলাষশীলতা হেতু, অস্থিরচিত্ততা হেতু, স্বভাবতঃ স্নেহরহিতত্ব হেতু এরা সযত্নে রক্ষিতা হলেও পতিদের বিরুদ্ধে ব্যভিচারাদি কুকর্ম করে।

১৬। এবং স্বভাবং জ্ঞাত্বাসাং প্রজাপতিনিসর্গজম্।

পরমং যত্নমাতিষ্ঠেৎ পুরুষো রক্ষণং প্রতি॥

ব্রহ্মা কর্তৃক এদের এইরূপ স্বভাব সৃষ্ট জেনে পুরুষ (স্ত্রীলোকের) রক্ষা বিষয়ে অতি যত্ন অবলম্বন করবে।

১৭। শয্যাসনমলঙ্কারং কামং ক্রোধমনার্জ্জবম্‌।

দ্রোহভাবং কূচর্য্যাঞ্চ স্ত্রীভ্যো মনুরকল্পয়ৎ॥

শয়ন, উপবেশন, অলংকার, কাম, ক্রোধ, কুটিলতা, পরহিংসা, মন্দ আচরণ—এইগুলি স্ত্রীলোকের (স্বভাবগত করে) মনু সৃষ্টি করেছিলেন।

১৮। নাস্তি স্ত্রীণাং ক্রিয়া মন্ত্রৈরিতি ধর্মে ব্যবস্থিতিঃ।

নিরিন্দ্রিয়া হ্যমন্ত্রাশ্চ স্ত্রিয়োহনৃতমিতি স্থিতিঃ॥

স্ত্রীলোকদের মন্ত্রসহকারে (জাতকর্মাদি) সংস্কার নেই—এই ধর্ম বিহিত। এরা (ধর্মের প্রমাণ রূপ শ্রুতি স্মৃতিরহিতত্ব হেতু) ধর্মজ্ঞ নয়, (পাপনাশক মন্ত্র জপ রহিতত্ব হেতু) মন্ত্রহীন এবং মিথ্যার ন্যায় (অশুভ)— এই শাস্ত্রীয় নিয়ম।

১৯। তথা চ শ্রুতয়ো বহ্ব্যো নিগীতা নিগমেষ্বপি।

স্বালক্ষণ্যপরীক্ষার্থং তাসাং শৃণুত নিষ্কৃতীঃ॥

(স্ত্রীলোকের ব্যভিচারশীলত্ব সম্বন্ধে) বহু শ্রুতিবাক্য নিগমে পঠিত হয়। তাদের ব্যভিচারের প্রায়শ্চিত্তরূপ সেই শ্রুতি শোন।

২০। যন্মে মাতা প্রলুলুভে বিচরন্ত্যপতিব্রতা।

তন্মে রেতঃ পিতা বৃঙ্‌ক্তামিত্যস্যৈতন্নিদর্শনম্॥

আমার মাতা যে অপতিব্রতা হয়ে পরপুরুষ সম্ভোগেচ্ছা করেছেন, ঐ ইচ্ছায় দুষ্ট (মাতৃরজঃস্বরূপ) শুক্রকে আমার পিতা শুদ্ধ করুন—(এইরূপ অর্থযুক্ত মন্ত্র নিগমে কথিত)।

২১। ধ্যায়ত্যনিষ্টং যৎ কিঞ্চিৎ পাণিগ্রাহস্য চেতসা।

তস্যৈষ ব্যভিচারস্য নিহ্নবঃ সম্যগুচ্যতে॥

(স্ত্রীলোক) স্বামীর (পরপুরুষ গমন রূপ) অপ্রিয় যা কিছু কার্য মনে মনে করে, তার থেকে নিষ্কৃতির এই মন্ত্র কথিত (সাক্ষাৎ ব্যভিচারের নয়)।

২২। যাদৃগ্‌গুণেন ভর্ত্রা স্ত্রী সংযুজ্যেত যথাবিধি।

তাদৃগ্‌গুণা সা ভবতি সমুদ্রেণেব নিম্নগা॥

সমুদ্রের সঙ্গে মিশে নদী যেমন (সমুদ্রের গুণ প্রাপ্ত হয়, তেমনই যেরূপ গুণযুক্ত স্বামীর সঙ্গে যথাবিধি স্ত্রী সংযুক্ত হন, তিনি তার মতোই গুণযুক্ত হন।

২৩। অক্ষমালা বসিষ্ঠেন সংযুক্তাধমযোনিজা।

শারঙ্গী মন্দপালেন জগামাভ্যর্হণীয়তাম্॥

শূদ্ৰজাতীয় অক্ষমালা বশিষ্ঠের সঙ্গে এবং শারঙ্গী মন্দপালের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে অতি মাননীয় হয়েছিলেন।

২৪। এতাশ্চান্যাশ্চ লোকেহস্মিন্নপকৃষ্টেপ্রসূতয়ঃ।

উৎকর্ষং যোষিতঃ প্ৰাপ্তাঃ স্বৈঃ স্বৈৰ্ভর্ত্তৃগুণেঃ শুভৈঃ॥

এই সকল এবং অন্য স্ত্রীলোকগণ এই পৃথিবীতে নিকৃষ্টকুলে জাত হয়ে নিজ নিজ স্বামীর শুভ গুণে উৎকর্ষ প্রাপ্ত হয়েছিলেন।

২৫। এষোদিতা লোকাযাত্রা নিত্যং স্ত্রীপুংসয়োঃ শুভা।

প্রেত্যেহ চ সুখোদর্কান্ প্রজাধর্মান্‌ নিবোধত॥

স্ত্রী পুরুষের এই লৌকিক সনাতন শুভ আচার বলা হল। ইহলোকে ও পরলোকে পরিণামে সুখকর সন্তানধর্ম শোন।

২৬। প্রজনার্থং মহাভাগাঃ পূজার্হা গৃহদীপ্তয়ঃ।

স্ত্রিয়ঃ শ্রিয়শ্চ গেহেষু ন বিশেষোহস্তি কশ্চন॥

সন্তানের হেতু স্ত্রীলোকেরা বহুকল্যাণভাজন, (বস্ত্রালংকারাদি দ্বারা) পুজনীয়া, গৃহশোভাকারিণী ; গৃহে স্ত্রীলোক ও শ্ৰী (লক্ষ্মী)তে কোন ভেদ নেই।

২৭। উৎপাদনমপত্যস্য জাতস্য পরিপাল্‌ন্‌ম্‌।

প্রত্যহংলোকযাত্রায়াঃ প্রত্যক্ষং স্ত্রীনিবন্ধনম্‌ ॥

সন্তানোৎপাদন, জাতসন্তানের প্রতিপালন ও প্রতিদিন (অতিথিসেবাদি) লোক-ব্যবহারের প্রত্যক্ষ কারণ স্ত্রী।

২৮। অপত্যং ধর্মকাৰ্য্যাণি শুশ্রূষা বতিরুত্তমা।

দারাধীনস্তথা স্বর্গঃ পিতৃনামাত্মনশ্চ হ॥

সন্তানোৎপাদন, ধর্মকার্য, (আত্ম) শুশ্রূষা, উত্তম সুখ, পিতৃপুরুষের ও নিজের স্বর্গলাভ ভার্যার উপরে নির্ভর করে।

২৯। পতিং যা নাভিচরতি মনোবাগ্‌দেহসংযতা।

সা ভর্ওৃলোকানাপ্নোতি সদ্ভিঃ সাধ্বীতি চোচ্যতে॥

যে স্ত্রীলোক কায়মনোবাক্যে সংযত হয়ে পতির অনিষ্ট চিন্তা করে না, সে পতিলোকসমূহ লাভ করে ও সজ্জন কর্তৃক সাধ্বী নামে অভিহিত হয়।

৩০। ব্যভিচারাওু ভর্ওৃঃ স্ত্রী লোকে প্রাপ্নোতি নিন্দ্যতাম্।

শৃগালযোনিন্ঞাপ্নোতি পাপরোগৈশ্চ পীড্যতে ॥

(পরপুরুষ সম্পর্ক দ্বারা স্বামীর ব্যভিচার করলে স্ত্রী পৃথিবীতে নিন্দনীয় হয় এবং শৃগালজন্ম প্রাপ্ত হয় ও (যক্ষ্মা কুষ্ঠাদি) পাপরোগে পীড়িত হয়।

৩১। পুত্রং প্রত্যুদিতং সদ্ভিঃ পূৰ্ব্বজৈশ্চ মহর্ষিভিঃ।

বিশ্বজন্যমিমং পুণ্যমুপন্যাসং নিবোধত ॥

পুত্রসম্বন্ধে সং প্রাচীন মহর্ষিগণ বিশ্বের হিতকারক এই (বক্ষ্যমাণ) যে উপন্যাস (বিচার) করেছেন, তা শোন।

৩২। ভর্ওৃঃ পুত্ৰং বিজানন্তি শ্রুতিদ্বৈধস্তু ভর্ওরি।

আহুরুৎপাদকং কেচিদপরে ক্ষেত্ৰিণং বিদুঃ॥

পুত্র পতির হয় (মুনিগণ) এই কথা বলেন। পতি সম্বন্ধে দুই প্রকার শ্রুতি আছে। কেউ কেউ বলে (বিবাহ না করে) যে সন্তানোৎপাদন করে, সে (একপ্রকার পতি); (পুত্রোৎপাদন না করেও) বিবাহকারীকে (অন্য কর্তৃক পুত্রোৎপাদন হেতু পতি বলা যায়)।

৩৩। ক্ষেত্ৰভূতা স্মৃতা নারী বীজভূতঃ স্মৃতঃ পুমান্‌।

ক্ষেত্ৰবীজ সমাযোগাৎ সম্ভবঃ সৰ্ব্বদেহিনাম্ ॥

নারী ক্ষেত্রস্বরূপ, পুরুষ বীজস্বরূপ। ক্ষেত্র ও বীজের মিলনে সকল দেহীর উৎপত্তি হয়।

৩৪। বিশিষ্টং কুএচিদ্বীজং স্ত্রী যোনিস্ত্বেব কুএচিৎ।

উভয়ন্তু সমং যত্র সা প্রসূতিঃ প্রশসাতে ॥

কোন স্থলে বীজ প্রধান১, কোন স্থলে স্ত্রীযোনি (বা ক্ষেত্র) প্রধান।২ যেখানে উভয়ই সমান, সেই সন্তান প্রশস্ত।

৩৫। বীজস্য চৈব যোন্যাশ্চ বীজমুৎকৃষ্টমুচ্যতে।

সৰ্ব্বভূতগ্রসূতির্হি বীজলক্ষণলক্ষিতা ॥

বীজ ও ক্ষেত্রের মধ্যে বীজকে উৎকৃষ্ট বলা হয়; কারণ, সকল জীবের সন্তান বীজলক্ষণযুক্ত।

৩৬। যাদৃশংতৃপ্যতে বীজং ক্ষেত্রে কালোপপাদিতে।

তাদৃগ্ৰোহতি তৎ তস্মিন্‌ বীজং স্বৈর্ব্যঞ্জিতং গুণৈঃ॥

যথাকালে যে ক্ষেত্রে যে বীজ উৎপন্ন হয়, সেই ক্ষেত্রে ঐ বীজ নিজের গুণে ব্যক্ত হয়ে অনুরূপ অঙ্কুরোদগম হয়।

৩৭। ইয়ং ভূমির্হি ভূতানাং শাশ্বতী যোনিরুচ্যতে।

ন চ যোনিগুণান্ কাংশ্চিদ্বীজং পুষ্যতি পুষ্টিষু॥

এই ভূমি বৃক্ষগুল্মদির সনাতন উৎপত্তি কারণ রূপে উক্ত হয়েছে। বীজ পুষ্টির ব্যাপারে উৎপত্তিকারণের কোন গুণ গ্রহণ করে না।

৩৮। ভূমাবপ্যেককেদারে কালোপ্তানি কৃষীবলৈঃ।

নানারূপাণি জায়ন্তে বীজানীহ স্বভাবতঃ ॥

এক ক্ষেত্রে ভূমিতে কৃষকগণ কর্তৃক যথাকালে উপ্ত বীজ সমূহ স্বভাবতঃ নানারূপে জন্মে।

৩৯। ব্রীহয়ঃ শালয়ো মুদ্‌গাস্তিলা মাষাস্তথা যবাঃ।

যথাবীজং প্ররোহন্তি লশুনানীক্ষবস্তথা ॥

(ষষ্টিকাদি) ধান, (কলমাদি) শালি, মুগ, তিল, মায, যব, রসোন ও ইক্ষুর অঙ্কুর বীজের অনুরূপ হয়।

৪০। অনাদুপ্তং জাতমন্যদিত্যেতন্নোপপদ্যতে।

উপ্যতে যদ্ধি যদ্বীজং তং তদেব প্ররোহতি ॥

এক বীজ উপ্ত হয়ে অন্য শস্য রূপে জন্মে না। যার বীজ উপ্ত হয়, তাই জন্মে।

৪১। তৎ প্রাজ্ঞেন বিনীতেন জ্ঞানবিজ্ঞানবেদিনা।

আয়ুষ্কামেন বপ্তব্যং ন জাতু পরযোষিতি ॥

সুতরাং প্রাজ্ঞ, শিক্ষিত, জ্ঞানবিজ্ঞানজ্ঞ, দীর্ঘায়ুকামী ব্যক্তিকর্তৃক পরস্ত্রীতে বীজ কখনও উপ্ত হওয়া উচিত নয়।

৪২। অত্র গাথা বায়ুগীতাঃ কীৰ্ত্তয়ন্তি পুরাবিদঃ।

যথা বীজং ন বপ্তব্যং পুংসা পরপরিগ্রহে ॥

অতীতকালজ্ঞ ব্যক্তিগণ বায়ুগীত গাথা কীর্তন করেন—পুরুষ পরস্ত্রীতে বীজবপন করবে না।

৪৩। নশ্যতীষুর্যথা বিদ্ধঃ স্বে বিদ্ধমনুবিধ্যতঃ।

তথা নশ্যতি বৈ ক্ষিপ্রং বীজং পরপরিগ্রহে ॥

যেমন (অন্য কর্তৃক) বিদ্ধ (মৃগের) ছিদ্রে নিক্ষিপ্ত বাণ নিষ্ফল হয়,৩ তেমনই পরস্ত্রীতে উপ্ত বীজ শীঘ্র নষ্ট হয়।

৪৪। পৃথোরপীমাং পৃথিবীং ভার্য্যাং পূর্ব্ববিদোবিদুঃ।

স্থাণুচ্ছেদস্য কেদারমাহুঃ শল্যবতো মৃগম্ ॥

পুরাবিদ্‌গণ এই পৃথিবীকে (পূর্বে অনেক স্বামী থাকা সত্ত্বেও) পৃথুর স্ত্রী বলেন, যে জঙ্গল কেটে আবাদ করে তার নামে ঐ ভূমি বিখ্যাত হয় ; (তেমনই) প্রথম যে মৃগকে শরবিদ্ধ করে ঐ মৃগ তারই বলে কথিত হয়।

৪৫। এতাবানেব পুরুষো যজ্জায়াত্মা প্রজেতি হ।

বিপ্রাঃ প্ৰাহুস্তথা চৈতদ্‌যো ভর্ওা সা স্মৃতাঙ্গনা ॥

স্ত্রী, নিজে ও সন্তান—এই পুরুষ (সে একা পুরুষ নয়)। ব্রাহ্মণগণ বলেছেন—যে পতি সে স্ত্রী (অর্থাৎ যার স্ত্রী তদুৎপন্ন সন্তান তারই, উৎপাদকের নয়)।

৪৬। ন নিষ্ক্রয়বিসর্গাভ্যাং ভর্ওুভাৰ্য্যা বিমুচ্যতে।

এবং ধর্ন্মং বিজানীমঃ প্রাক্‌ প্রজাপতিনির্ন্মিতম্ ॥

বিক্রয় বা ত্যাগের দ্বারা পতির ভার্যাসম্বন্ধ যায় না। পূর্বে প্রজাপতিনির্মিত এরূপ ধর্ম আমরা জানি।

৪৭। সকৃদংশো নিপততি সকৃৎ কন্যা প্রদীয়তে।

সকৃদাহ দদানীতি এীণ্যেতানি সতাং সকৃৎ॥

(পিত্রাদি থেকে প্রাপ্ত সম্পত্তির) ভাগ একবারই হয়, এবারই কন্যা সম্প্রদান হয়, ‘দদানি (দিই) শব্দ একবারই বলা হয়—সজ্জনের পক্ষে এই তিনটি একবারই হয়।

৪৮। যথা গোহশ্বোষ্ট্রদাসীষু মহিষ্যজাবিকাসু চ।

নোৎপাদকঃ প্রজাভাগী তথৈবান্যাঙ্গনাস্বপি॥

যেমন গাভী, অশ্ব, উট, দাসী, মহিষ, ছাগল ও ভেড়াতে উৎপাদক সন্তানের অধিকারী হয় না, তেমনই পরস্ত্রীতে উৎপাদিত সন্তান উৎপাদকের হয় না।

৪৯। যেহক্ষেত্রিণো বীজবন্তঃ পবক্ষেত্রপ্রবাপিণঃ।

তে বৈ শস্যসা জাতস্য ন লভন্তে ফলং ক্কচিৎ॥

যারা ক্ষেত্রস্বামী নয়, বীজের মালিক, তারা পরের ক্ষেত্রে বীজবপন করলে উৎপন্ন শস্যের ফললাভ করে না।

৫০। যদন্যগোষু বৃষভো বৎসানাং জনয়েচ্ছতম্।

গোমিনামেব তে বৎসা মোঘং স্কন্দিতমার্ষাভম্ ॥

যেমন অন্যের গাভীতে একশত বৎস উৎপাদন করলে সেই বৎসগুলি গোস্বামীরই হয় (বৃষস্বামীর নয়); বৃষের যে শুক্রসেচন তা বৃষস্বামীর পক্ষে নিষ্ফল হয়।

৫১। তথৈবাক্ষেত্রিণো বীজং পরক্ষেত্ৰপ্রবাপিণঃ।

কুৰ্ব্বন্তি ক্ষেত্ৰিণামর্থং ন বীজী লভতে ফলম্॥

তেমনই স্ত্রীর স্বামীভিন্ন ব্যক্তি পরস্ত্রীতে বীজবপন করে ঐ স্ত্রীর পতির অর্থ সৃষ্টি করে ; যার বীজ সে ফললাভ করে না।

৫২। ফলন্ত্বনভিসন্ধায় ক্ষেত্রিণাং বীজিনাং তথা।

প্রত্যক্ষং ক্ষেত্রিণামর্থো বীজাদ্‌ যোনিৰ্গরীয়সী॥

(এই স্ত্রীতে উৎপন্ন সস্তান) ক্ষেত্ৰী (স্ত্রীর স্বামী) ও বীজী (সন্তানোৎপাদক এই উভয়ের হবে বলে অভিসন্ধি না থাকলে পরস্ত্রীতে উৎপন্ন সন্তান) প্রত্যক্ষরূপে ক্ষেত্রীর সম্পত্তি ; বীজ অপেক্ষা ক্ষেত্র শ্রেয়।

৫৩। ক্রিয়াভ্যূপগমাত্ত্বেতদ্বীজার্থং যৎ প্রদীয়তে।

তস্যেহ ভাগিনৌ দৃষ্টৌ বীজী ক্ষেত্রিক এব চ॥

এতে যে সন্তান হবে, তা আমাদের উভয়ের হবে, এইরূপ নিয়ম করে স্ত্রীকে স্বামী বীজার্থে অপরের কাছে দিলে এইরূপে উৎপন্ন সন্তান বীজী ও ক্ষেত্রিকের হবে।

৫৪। ওঘবাতাহৃতং বীজং যস্য ক্ষেত্রে প্ররোহতি।

ক্ষেত্রিকস্যৈব তদ্বীজং ন বপ্তা লভতে ফলম্ ॥

জলের ঢেউ ও বায়ু দ্বারা চালিত বীজ যার ক্ষেত্রে অঙ্কুরিত হবে, সেই বীজ ক্ষেত্রস্বামীরই হবে, বপনকারী ফললাভ করবে না।

৫৫। এষ ধর্মো গবাশ্বস্য দাস্যুষ্ট্রাজাবিকস্য চ।

বিহঙ্গমহিষীণাঞ্চ বিজ্ঞেয়ঃ প্রসবং প্রতি ॥

সন্তান সম্বন্ধে গাভী, অশ্ব, দাসী, উট, ছাগল, ভেড়া, পাখী ও মহিষীর এই ব্যবস্থা।

৫৬। এতদ্বঃ সারফল্গুত্বং বীজযোন্যোঃ প্রকীর্ওিতম্‌।

অতঃপরং প্রবক্ষ্যামি যোষিতাং ধর্ন্মমাপদি॥

বীজ ও ক্ষেত্রের সারতা অসারতা সম্বন্ধে এই কথা তোমাদের বললাম। এরপরে নারীর আপদ্ধর্ম বলব।

৫৭। ভ্রাতুর্জ্যেষ্ঠস্য ভার্য্যা যা গুরুপত্ম্যনুজস্য সা।

যবীয়সস্তু ভার্য্যা যা স্নুষা জ্যেষ্ঠস্য সা স্মৃতা॥

জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার স্ত্রী কনিষ্ঠের গুরুপত্নী (তুল্য)। কনিষ্ঠ ভ্রাতার স্ত্রী জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার পুত্রবধু (তুল্য)।

৫৮। জ্যেষ্ঠেযবীয়সো ভার্য্যাং যবীয়ান্ বাগ্ৰজস্ক্রিয়ম্।

পতিতৌ ভবতো গত্বা নিযুক্তাবপ্যনাপদি॥

আপদকাল৪ ভিন্ন নিযুক্ত৫ হয়েও জ্যেষ্ঠভ্রাতা কনিষ্ঠের স্ত্রীতে বা কনিষ্ঠভ্রাতা জ্যেষ্ঠভ্রাতার স্ত্রীতে গমন করলে পতিত হবে।

৫৯। দেবরাদ্বা সপিণ্ডাদ্বা স্ক্রিয়া সম্যঙ্‌ নিযুক্তয়া।

প্রজেন্সিতাধিগন্তব্যা সন্তানস্য পরিক্ষয়ে॥

সন্তানের অভাবে (পতি প্রভৃতি গুরুজন কর্তৃক) সম্যক্‌ক্রপে নিযুক্ত হয়ে স্ত্রীলোক দেবর বা সপিণ্ড থেকে সন্তান লাভ করবে।

৬০। বিধবায়াং নিযুক্তস্তু ঘৃতাক্তো বাগ্‌যতো নিশি।

একমুৎপাদয়েৎ পুত্রং ন দ্বিতীয়ং কথঞ্চন॥

বিধবাতে (সন্তান উৎপাদনে) নিযুক্ত ব্যক্তি ঘৃতাক্ত দেহে মৌনী হয়ে রাত্রিবেলা একটি পুত্র উৎপাদন করবে, দ্বিতীয় পুত্র কখনই নয়।

৬১। দ্বিতীয়মেকে প্রজনং মন্যন্তে স্ত্রীষু তদ্বিদঃ।

অনির্বৃতং নিয়োগাৰ্থং পশ্যন্তো ধমতস্তয়োঃ॥

(নিয়োগে পুত্ৰজনন) বিধিজ্ঞ কোন কোন ব্যক্তি এক পুত্র অপুত্র (সুতরাং) নিয়োগ প্রয়োজন অসিদ্ধ—এই ভাবে স্ত্রীলোকের দ্বিতীয় পুত্রজনন ধর্মসম্মত মনে করেন।

৬২। বিধবায়াং নিয়োগার্থে নিৰ্বৃতে তু যথাবিধি।

গুরুবচ্চ স্নুষাবচ্চ বর্ওেয়াতাং পরম্পরম্॥

বিধবা নারীতে, নিয়োগ বিধি অনুসারে সম্পন্ন হলে (ঐ নারী ও সন্তানোৎপাদক) পরস্পর পুত্রবধু ও জ্যেষ্ঠভ্রাতার ন্যায় ব্যবহার করবে।

৬৩। নিযুক্তৌ যৌ বিধিং হিত্বা বৰ্ত্তেয়াতান্তু কামতঃ।

তাবুভৌ পতিতৌ স্যাতাং স্নুষাগ-গুরুতল্পগৌ॥

নিযুক্ত হয়ে যারা৬ নিয়মলঙ্ঘনপূর্বক কামবশে আচরণ করে, তারা উভয়েই পতিত হয়, তারা পুত্রবধূগামী ও গুরুদারগামী রূপে গণ্য হয়।

৬৪। নান্যস্মিন্ বিধবা নারী নিয়োক্তব্যা দ্বিজাতিভিঃ।

অন্যস্মিন্ হি নিযুঞ্জানা ধর্মং হন্যুঃ সনাতনম্॥

দ্বিজগণকর্তৃক বিধবানারী অন্য লোকের সঙ্গে নিযুক্ত হতে পারে না। অন্য পুরুষে নিযুক্তা নারী সনাতন ধর্ম নষ্ট করবেন।

৬৫। নোদ্বাহিকেষু মন্ত্রেষু নিয়োগঃ কীৰ্ত্ত্যতে ক্কৃচিৎ।

ন বিবাহবিধাবুক্তং বিধবাবেদনংপুনঃ॥

বিবাহ সংক্রান্ত মন্ত্রে কোথাও নিয়োগ উক্ত হয়নি। বিবাহ বিধায়ক শাস্ত্রে বিধবার পুনরায় বিবাহ উক্ত হয়নি।

৬৬। অয়ং দ্বিজৈর্হি বিদ্বদ্ভিঃ পশুধর্মো বিগর্হিতঃ।

মনুষ্যাণামপি প্রোক্তো বেনে রাজ্যং প্রশাসতি॥

এই (নিয়োগ) পণ্ডিত দ্বিজগণ কর্তৃক নিন্দিত পশুধর্ম। (অধার্মিক) বেন রাজার রাজত্বকালে মানুষের পক্ষে (এই প্রথা) অনুমোদিত হয়েছিল।

৬৭। স মহীমখিলাং ভুঞ্জন্‌ রাজর্ষিপ্রবরঃ পুরা।

বর্ণানাং সঙ্কর চক্রে কামোপহতচেতনঃ॥

সেই রাজর্ষিপ্রবর৭ প্রাচীনকালে সমগ্র পৃথিবী ভোগ করে কামোপহতচিত্ত হয়ে বর্ণসংকর সৃষ্টি করেছিলেন।

৬৮। ততঃ প্রভৃতি যো মোহাৎ প্রমীতপতিকাংস্ত্রিয়ম্।

নিযোজয়ত্যপত্যার্থং তৎ বিগর্হন্তি সাধবঃ॥

সেই সময় থেকে যে মোহবশে বিধবাকে সন্তানার্থে নিযুক্ত করে, তাকে সজ্জনগণ নিন্দা করেন।

৬৯। ষস্যা ভ্রিয়েত কন্যায়া বাচা সত্যে কৃতে পতিঃ।

তামনেন বিধানেন নিজো বিন্দেত দেবরঃ॥

যে বাগ্‌দত্তা কন্যার পতি মৃত হয়, তাকে এই নিয়মানুসারে নিজের দেবর গ্রহণ করবেন।

৭০। যথাবিধ্যধিগমৈানাং শুক্লবস্ত্রাং শুচিত্ৰতাম্।

মিথো ভজেতাপ্রসবাৎ সকৃৎ সকৃদৃতাবৃতেী ॥

শুক্লবস্ত্রপরিহিতা শুদ্ধাচারা এই নারীকে গ্রহণ করে পরস্পর প্রতি ঋতুকালে এক বার করে সম্ভোগ করবে।

৭১। ন দত্ত্বা কস্যচিৎ কন্যাং পুনর্দদ্যাদ্বিচক্ষণঃ।

দত্ত্বা পুনঃ প্রযচ্ছন্‌ হি প্রাপ্নোতি পুরুষানৃতম্॥

প্রাজ্ঞ ব্যক্তি কন্যাকে একজনের কাছে সম্প্রদান করে অন্য লোকের কাছে দিবেন না। (একবার) সম্প্রদান করে পুনরায় সম্প্রদান করলে পুরুষ বিষয়ে মিথ্যাসাক্ষ্যদানের পাপভাগী হয়।

৭২। বিধিবৎপ্রতিগৃহ্যাপি ত্যজেৎ কন্যাং বিগর্হিতাম্।

ব্যাধিতাং বিপ্রদুষ্টাং বা চ্ছদ্মনা চোপপাদিতাম্‌ ॥

কন্যাকে যথাবিধি গ্রহণ করেও (বৈধব্যাদি) দুর্লক্ষণযুক্ত, রোগার্ত, (ক্ষতযোনিত্বাদি) দোষযুক্ত অথবা (অধিকাঙ্গাদি গোপনপূর্বক) ছলে প্রদত্ত কন্যাকে (সপ্তপদীগমনের পূর্বে) ত্যাগ করবে।

৭৩। যস্তু দোষবতীং কন্যামনাখ্যায়োপপাদয়েৎ।

তস্য তদ্বিতথং কুর্য্যাৎ কন্যাদাতুর্দুরাত্মনঃ॥

যে দোষযুক্ত কন্যাকে দোষ প্রকাশ না করে দান করে, সেই দুরাত্মা কন্যাদাতার দান ব্যর্থ করবে।

৭৪। বিধায় বৃত্তিং ভার্য্যায়াঃ প্রবসেং কৰ্য্যবান্‌ নরঃ।

অবৃত্তিকর্ষিতা হি স্ত্রী প্রদুষ্যেৎ স্থিতিমত্যপি॥

যার কাজ আছে সে স্ত্রীর (গ্রাসাচ্ছাদনাদি) বৃত্তির ব্যবস্থা করে প্রবাসে যাবে। বৃত্তির অভাবে ক্লিষ্টা শীলবতী স্ত্রীও (পরপুরুষসম্পর্কে) দূষিত হয়।

৭৫। বিধায় প্রোষিতে বৃত্তিং জীবেন্নিয়মমাস্হিতা।

প্রোষিতে ত্ববিধায়ৈব জীবেচ্ছিল্পৈরগর্হিতৈঃ॥

(স্ত্রীর) জীবিকার ব্যবস্থা করে (স্বামী) প্রবাসে গেলে স্ত্রী (দেহপ্রসাধন পরগৃহগমনাদি পরিহারপূর্বক) নিয়ম পালন করে জীবন ধারণ করবেন। ব্যবস্থা না করে (স্বামী) প্রবাসে গেলে (স্ত্রী) (সুতা কাটা প্রভৃতি) শুদ্ধ শিল্পকর্মদ্বারা জীবন ধারণ করবেন।

৭৬। প্রোষিতো ধর্মকার্য্যার্থং প্রতীক্ষ্যোহষ্টো নরঃ সমাঃ।

বিদ্যার্থং ষড্‌যশোহর্থং কামার্থং ক্রীংস্তুবৎসরান্॥

(স্বামী) ধর্মানুষ্ঠানের জন্য প্রবাসে গেলে (স্ত্রী তার) জন্য আট বৎসর, বিদ্যার্জন বা যশ লাভের জন্য গেলে ছয় বৎসর এবং (অপর স্ত্রী সম্ভোগরূপ) কামের জন্য গেলে তিন বৎসর প্রতীক্ষা করবেন ; (তৎপর পতি সকাশে যাবেন)।

৭৭। সংবৎরং প্রতীক্ষেত দ্বিষন্তীং যোষিতং পতিঃ।

উর্ধ্বং সংবৎসরাও্বেনাং দায়ং হৃত্বা ন সংবসেৎ॥

স্ত্রী পতিকে দ্বেষ করলে পতি একবৎসর প্রতীক্ষা করবেন, এক বৎসর পরে (স্বদত্ত অলংকারাদি) ধন হরণ করে তার সঙ্গে সহবাস করবেন না।

৭৮। অতিক্রামেৎ প্রমত্তং বা মত্তং রোগাৰ্ত্তমেব বা।

সা ত্ৰীন্‌ মাসান্ পরিত্যাজ্যা বিভূষণপরিচ্ছদা॥

যে (স্ত্রী দ্যূতক্রীড়াদি) প্রমাদযুক্ত, (মদ্যপানে) মত্ত বা রোগাৰ্ত (স্বামীকে শুশ্রূষাদি না করে) অবজ্ঞা করে, তাকে স্বামী অলংকার ও বস্ত্রাদি থেকে বঞ্চিত করে তিন মাস পর্যন্ত পরিত্যাগ করবেন (অর্থাৎ তার সঙ্গে সহবাস করবেন না)।

৭৯। উন্মত্তং পতিতং ক্লীবমবীজং পাপরোগিণম্।

ন ত্যাগোহস্তি দ্বিষন্ত্যাশ্চ ন চ দায়াপবৰ্ত্তনম্‌॥

উন্মত্ত, পতিত, ক্লীব, নির্বীজ (যার শুক্র বাধিত), (যক্ষ্মা কুষ্ঠাদি) পাপরোগগ্রস্ত স্বামীকে দ্বেষ করলে স্ত্রী ত্যাজ্য হয় না, তার ধন থেকেও সে বঞ্চিত হয় না।

৮০। মদ্যপাহসাধুবৃত্তা চ প্রতিকূলা চ যা ভবেৎ।

ব্যাধিতা বাধিবেত্তব্যা হিংস্রার্থীঘ্নী চ সৰ্ব্বদা॥

মদ্যপায়িনী, অসদাচারিণী, প্রতিকুলাচারিণী, রোগার্তা, হিংস্ৰা বা অতিব্যয়কারিণী স্ত্রী সর্বদা অধিবেদনীয়া৮।

৮১। বন্ধ্যাষ্টমেহধিবদ্যাব্দে দশমে তু মৃতপ্রজা।

একাদশে স্ত্রীজননী সদ্যস্ত্বপ্রিয়বাদিনী॥

বন্ধ্যা স্ত্রী (প্রথম রজোদর্শন থেকে) অষ্টম বৎসরে, যার সন্তান হয়ে মরে যায় সে দশম বৎসরে, অনববত কন্যাপ্রসবা একাদশ বৎসরে এবং অপ্রিয়বাদিনী সদ্য অধিবেদনীয়া।

৮২। যা রোগিণী স্যাওু হিতা সম্পন্না চৈব শীলতঃ।

সানুজ্ঞাপ্যাধিবেত্তব্যা নাবমান্যা চ কর্হিচিৎ॥

যে স্ত্রী রোগার্তা, বা পতির অনুকুলা ও সুশীলা তাঁকে বলে (তাঁর অনুমতি নিয়ে) তিনি অধিবেদনীয়া ; তিনি কখনও অবমাননার যোগ্যা নন।

৮৩। অধিবিন্না তু যা নারী নির্গচ্ছেদ্রুষিতা গৃহাৎ।

সা সদ্যঃ সন্নিরোদ্ধব্যা ত্যাজ্যা বা কুলসংন্নিধৌ॥

যে অধিবিন্না নারী রাগ করে বাড়ী থেকে বেরিয়ে যান, তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে (দড়ি প্রভৃতি দিয়ে) বেঁধে রাখা উচিত অথবা পিত্রাদির সমক্ষে তিনি পরিত্যাজ্যা।

৮৪। প্রতিষিদ্ধাপি চেদ্‌ যা তু মদ্যমভ্যুদয়েষ্বপি।

প্রেক্ষাসমাজং গচ্ছেদ্বা সা দণ্ড্যা কৃষ্ণলানি ষট্‌॥

যে স্ত্রী নিবারিতা হয়েও বিবাহাদি উৎসবেও মদ পান করেন বা নৃত্যাদি স্থানে লোকসমাজে যান, তিনি ছয় কৃষ্ণল দণ্ডনীয়া।

৮৫। যদি স্বাশ্চাপবাশ্চৈব বিন্দেরন্‌ যোষিতো দ্বিজাঃ।

তাসাং বর্ণক্রমেণ স্যাজ্জৈষ্ঠ্যং পূজা চ বেশ্ম চ॥

যদি দ্বিজগণ সবর্ণা ও অসবর্ণা নারীকে বিবাহ করেন, তাহলে তাদের বর্ণানুক্রমে জ্যেষ্ঠত্ব, (বস্ত্রালংকারাদি দ্বারা) সম্মান ও (উৎকৃষ্ট নিকৃষ্ট) গৃহ নির্ধারিত হয়।

৮৬। ভর্ওুঃ শবীবশুশ্রূষাং ধর্মকাৰ্য্যঞ্চ নৈত্যিকম্‌।

স্বা চৈব কুর্য্যাৎ সৰ্ব্বেষাং নাস্বজাতিঃ কথঞ্চন॥

সকল বর্ণের ক্ষেত্রে পতির শরীরশুশ্রূষা ও নিত্য ধর্মানুষ্ঠান সবর্ণা স্ত্রী করবেন, কখনও অসবর্ণা স্ত্রী করবেন না।

৮৭। ষন্তু তৎ কারয়েন্মোহাৎ সজাত্যা স্থিতয়ান্যয়া।

যথা ব্রাহ্মণচাণ্ডালঃ পূৰ্ব্বদৃষ্টস্তথৈব সঃ॥

যে সবর্ণা স্ত্রী থাকতে অন্য স্ত্রীকে দিয়ে মোহবশে সেই কা করায়, সে পূর্বসুরিগণ কর্তৃক ব্রাহ্মণচাণ্ডাল৯ নামে অভিহিত হয়।

৮৮। উৎকৃষ্টায়াভিরূপায় বরায় সদৃশায় চ।

অপ্রাপ্তামপি তাং তস্মৈ কন্যাং দদ্যাদ্‌ যথাবিধি॥

কন্যা বিবাহযোগ্যা না হলেও তাকে উৎকৃষ্ট, সুরূপ ও সবর্ণ বরের কাছে বিধি অনুসারে সম্প্রদান করবে।

৮৯। কামমা-মরণাৎ তিষ্ঠেদ্‌গৃহে কন্যর্ওুমত্যপি।

ন চৈবৈনাং প্রযচ্ছেৎ তু গুণহীনায় কর্হিচিৎ॥

বরং কন্যা ঋতুমতী হযেও আমরণ (পিতৃগৃহে) থাকবে, তথাপি কখনও তাকে নির্গুণ বরের হাতে দিবে না।

৯০। এীণি বর্ষাণ্যুদীক্ষেত কুমার্য্যূতুমতী সতী।

ঊর্ধ্বংতু কালাদেতস্মাদ্বিন্দেত সদৃশং পতিম্॥

কুমারী কন্যা ঋতুমতী হয়ে তিন বৎসর অপেক্ষা করবে, এই কালের পরে (নিজেই) সমান জাতি ও গুণবিশিষ্ট বরকে পতিত্বে বরণ করবে।

৯১। অদীয়মানা ভার্ওারমধিগচ্ছেদ্‌য়দি স্বয়ম্।

নৈনঃ কিঞ্চিদবাপ্নোতি ন চ যং সাধিগচ্ছতি॥

(পিত্রাদি কর্তৃক) অদত্তা কন্যা যদি নিজে পতি প্রাপ্ত হয়, তাহলে সে এবং যাকে সে বরণ করে ঐ ব্যক্তি কোন পাপের ভাগী হয় না।

৯২। অলঙ্কারং নাদদীত পিএ্যং কন্যা স্বয়ংবরা।

মাতৃকং ভ্রাতৃদত্তং বা স্তেনা স্যাদ্‌য়দি তং হরেৎ॥

স্বয়ংবরা কন্যা পিতা, মাতা ও ভ্রাতা কর্তৃক দত্ত অলংকার গ্রহণ করবে না, করলে সে চোর হবে।

৯৩। পিত্রে ন দদ্যাচ্ছুল্কন্তু কন্যামৃতুমতীং হরন্।

স হি স্বাম্যাদভিক্রামেদৃতূনাং প্রতিরোধনাৎ॥

ঋতুমতী কন্যাকে বিবাহ করে তার পিতাকে শুল্ক দিবে না; কারণ, ঋতুকার্য সন্তান জন্ম রোধ হেতু (কন্যার) অধিকার থেকে তিনি বঞ্চিত হয়েছেন।

৯৪। ত্রিংশদ্বর্ষোদ্বহেৎ কন্যাং হৃদ্যাং দ্বাদশবার্ষিকীএম্‌।

এ্যষ্টবর্ষোহষ্টবর্ষাং বা ধর্ন্মে সীদতি সত্বরঃ॥

ত্রিশ বৎসর বয়স্ক পুরুষ মনোরমা দ্বাদশবর্ষীয়া কন্যাকে বিবাহ করবে অথবা চব্বিশ বৎসর বয়স্ক পুরুষ আট বত্সর বয়স্ক কন্যাকে বিবাহ করবে। ত্বারাবান্‌ ব্যক্তি (অর্থাৎ যে এই বয়স সীমার কম বয়সে বিবাহ করে সে) গার্হস্থ্যধর্মে অবসাদ প্রাপ্ত হয়।

৯৫। দেবদত্তাং পতির্ভার্য্যাং বিন্দতে নেচ্ছয়াত্মনঃ।

তাং সাধ্বীং বিভৃয়ান্নিত্যং দেবানাং প্রিয়মাচরন্॥

পতি দেবতা কর্তৃক দত্ত স্ত্রী লাভ করে, নিজের ইচ্ছায় নয়। দেবগণের প্রিয় আচরণকারী ব্যক্তি সেই সাধ্বী স্ত্রীকে সর্বদা ভরণপোষণ করবে।

৯৬। প্রজনার্থং স্ত্রিয়ঃ সৃষ্টাঃ সন্তানার্থঞ্চ মানবাঃ।

তস্মাৎ সাধারণোধর্মঃ শ্রুতৌ পত্ম্যা সহোদিতঃ॥

সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য স্ত্রীলোক ও সন্তান উৎপাদনার্থে পুরুষ সৃষ্ট হয়েছে। সেই হেতু (অগ্ন্যাধানাদি) সাধারণ ধর্ম বেদে পত্নীসহ করণীয় বলা হয়েছে।

৯৭। কন্যায়াং দত্তশুল্কায়াং ম্রিয়েত যদি শুষ্কদঃ।

দেবরায় প্রদাতব্যা যদি কন্যানুমন্যতে॥

কন্যাশুল্ক দানের পরে (বিবাহের পূর্বে) যদি শুষ্কদাতা মৃত হয়, তাহলে কন্যার অনুমতিক্রমে তাকে তার দেবরের কাছে দেয়।

৯৮। আদদীত ন শূদ্রোহপি শুল্কং দুহিতরং দদৎ।

শুল্কংহি গৃহুন্‌ কুরুতে ছন্নং দুহিতৃবিক্রয়ম্॥

শূদ্রও কন্যাদান করতে শুল্ক গ্রহণ করবে না, শুল্ক গ্রহণ করে প্রচ্ছন্নভাবে কন্যা বিক্রয় করা হয়।

৯৯। এতৎ তু ন পরে চক্রুর্নাপরে জাতু সাধবঃ।

যদন্যস্য প্রতিজ্ঞায় পুনরন্যস্য দীয়তে॥

একজনকে কন্যাদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে অপর লোকের কাছে তাকে দেওয়া, এ কাজ প্রাচীন শিষ্ট ব্যক্তিগণ করেননি, বর্তমান কালের সজ্জনরাও করেন না।

১০০। নানুশুশ্রূম জাত্বেতৎ পূর্ব্বেষ্বপি হি জন্মসু।

শুল্কসংজ্ঞেন মূল্যেন চ্ছন্নং দুহিতৃবিক্রয়ম্॥

পূর্ব কল্পসমুহেও আমরা শুনিনি যে, শুল্কনামক মূল্যের বিনিময়ে প্রচ্ছন্ন কন্যাবিক্রয় হয়েছে।

১০১। অন্যোন্যস্যাব্যভিচারো ভবেদামরণান্তিকঃ।

এষ ধর্মঃ সমাসেন জ্ঞেয়ঃ স্ত্রীপুংসয়োঃ পরঃ॥

মরণ পর্যন্ত পরস্পরের অব্যভিচার—স্ত্রীপুরুষের সংক্ষেপে এই শ্রেষ্ঠ ধর্ম।

১০২। তথা নিত্যং যতেয়াতাং স্ত্রীপুংসৌ তু কৃতক্রিয়ৌ।

যথা নাভিচরেতাং তৌ বিযুক্তাবিতরেতরম্॥

বিবাহিত স্ত্রী পুরুষ এরূপ যত্ন করবে, যাতে তারা (ধর্মার্থকামবিষয়ে) পরস্পরের ব্যভিচার না করে।

১০৩। এষ স্ত্রীপুংসয়োরুক্তো ধর্ধ্মো বো রতিসংহিতঃ।

আপদ্যপত্যপ্রাপ্তিশ্চ দায়ভাগং নিবোধত॥

স্ত্রী পুরুষের অনুরাগযুক্ত এই ধর্ম ও আপদ্‌কালে (ক্ষেত্ৰজাদি) পুত্রলাভ বলা হল। (এখন) (পিত্রাদির) ধনবিভাগ ব্যবস্থা শুনুন।

১০৪। উর্ধ্বং পিতুশ্চ মাতুশ্চ সমেত্য ভ্রাতরঃ সমম্।

ভজেরন্‌ পৈতৃকং রিক্‌থমনীশাস্তে হি জীবতোঃ ॥

পিতা ও মাতার মৃত্যুর পরে ভ্রাতৃগণ মিলিত হয়ে পৈতৃক সম্পত্তি ভাগ করবে ; কারণ, তাঁরা জীবিত থাকতে পুত্রগণ অধিকারী নয়।

১০৫। জ্যেষ্ঠ এব তু গৃহ্নীয়াৎ পিত্রাং ধনমশেষতঃ।

শেষাস্তমুপজীরেযুর্যথৈব পিতরং তথা ॥

জ্যেষ্ঠ ভ্রাতাই সমস্ত পৈতৃক ধন গ্রহণ করবে, অন্য ভ্রাতৃগণ জীবিকার জন্য পিতার ন্যায় তার উপরে নির্ভর করবে।

১০৬। জ্যেষ্ঠেন জাতমাত্রেণ পুত্রী ভবতি মানবঃ।

পিতৃণামনৃণশ্চৈব স তস্মাৎ সর্ব্বমর্হতি ॥

জ্যেষ্ঠ পুত্র জন্মানমাত্রই মানুষ পুত্রবান্ হয়, পিতৃঋণ থেকে মুক্ত হয়, সুতরাং সমগ্র সম্পত্তি তার প্রাপ্য।

১০৭। যস্মিন্ নৃণং সন্নয়তি যেন চানন্ত্যমশ্লুতে।

স এব ধৰ্ম্মজঃ পুত্রঃ কামজানিতরাণ্‌ বিদুঃ ॥

যে জাত হলে পিতা ঋণ শোধ করেন এবং মোক্ষলাভ করেন, সে-ই ধর্মজ পুত্র, অপর পুত্রদের কামজ বলে।

১০৮। পিতেব পালয়েৎ পুত্ৰান্ জ্যেষ্ঠো ভ্রাতৃন্‌ যবীয়সঃ।

পুএবচ্চাপি বৰ্ত্তেরন জ্যেষ্ঠে ভ্রাতরি ধর্ন্মতঃ ॥

পিতা যেমন পুত্রগণকে তেমন জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা কনিষ্ঠ ভ্রাতাগণকে পালন করবে, তারা ধর্মানুসারে জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার প্রতি পুত্রের ন্যায় আচরণ করবে।

১০৯। জ্যেষ্ঠঃ কুলং বর্ধয়তি বিনাশয়তি বা পুনঃ।

জ্যেষ্ঠঃ পূজাতামো লোকে জ্যেষ্ঠঃ সদ্ভিরগর্হিতঃ ॥

জ্যেষ্ঠ পুত্র বংশের উন্নতি বা বিনাশ করে। জ্যেষ্ঠ পুত্র পৃথিবীতে সর্বাপেক্ষা অধিক পূজনীয়। জ্যেষ্ঠপুত্র সজ্জন কর্তৃক অনিন্দিত।

১১০। যো জ্যেষ্ঠো জ্যেষ্ঠবৃত্তিঃ স্যান্মাতেব স পিতেব সঃ।

অজ্যেষ্ঠবৃত্তির্যস্তু স্যাৎ স সংপূজ্যস্তু বন্ধুবৎ ॥

যে জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা (কনিষ্ঠদের প্রতি) পিতার ন্যায় আচরণ করেন, তিনি তাদের মাতা এবং পিতাও বটেন। যে জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা ঐরূপ ব্যবহার করেন না, তিনি মাতুলাদির ন্যায় সম্মানযোগ্য।

১১১। এবং সহ বসেয়ুর্বা পৃথগ্‌বা ধন্মকাম্য্যয়া।

পৃথগ্‌ বিবর্ধতে ধৰ্ম্মস্তস্মাদ্ধর্ন্মা পৃথক্‌ক্রিয়া ॥

এইরূপে (ভ্রাতৃগণ) একত্র বাস করবে বা (প্রতিগ্ৰহ মহাযজ্ঞাদির অনুষ্ঠানের জন্য) ধর্মাকাঙক্ষী হয়ে পৃথক্‌ পৃথক্‌ বাস করবে। পৃথক্‌ভাবে (অনুষ্ঠিত মহাযজ্ঞাদি হেতু) ধর্ম বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয় , সুতরাং, পৃথক্‌ হওয়া ধর্মসম্মত।

১১২। জ্যেষ্ঠস্য বিংশ উদ্ধারঃ সৰ্ব্বদ্রব্যাচ্চ যদ্বরম্‌।

ততোর্হদ্ধং মধ্যমস্য স্যাৎ তুরীয়ন্তু যবীয়সঃ ॥

(সমগ্র সম্পত্তির) বিশ ভাগের এক ভাগ জ্যেষ্ঠভ্রাতার প্রাপ্য, সকল দ্রব্যের যা শ্রেষ্ঠ, তা জ্যেষ্ঠের হবে। তার অর্ধেক মধ্যম ভ্রাতার, চতুর্থ ভাগ কনিষ্ঠের হবে।

১১৩। জ্যেষ্ঠশ্চৈব কনিষ্ঠশ্চ সংহরেতাং যথোদিতম্‌।

যেহন্যে জ্যেষ্ঠকনিষ্ঠাভ্যাং তেষাং স্যান্মধ্যমং ধনম্ ॥

জ্যেষ্ঠ ও কনিষ্ঠ উক্ত বিধিতে ধন গ্রহণ করবে, অন্য ভ্রাতৃগণ মধ্যমের ভাগ (চত্বারিংশদ্ভাগ) পাবে।

১১৪। সৰ্ব্বেষাং ধনজাতানামাদদীতাগ্র্যমগ্রজঃ।

যচ্চ সাতিশয়ং কিঞ্চিদ্দশতশ্চাপ্নুয়াদ্বরম্ ॥

জ্যেষ্ঠ সকল ধনের মধ্যে শ্রেষ্ঠধন পাবেন, একটি উৎকৃষ্ট দ্রব্য থাকলে তাও তাঁর প্রাপ্য। (গবাদি পশুর) দশটির মধ্যে একটি শ্রেষ্ঠপশু (জ্যেষ্ঠ পাবেন)।

১১৫। উদ্ধারো ন দশস্বস্তি সম্পন্নানাং স্বকর্মসু।

যং কিঞ্চিদেব দেয়ন্তু জ্যায়সে মানবর্দ্ধনম্‌ ॥

(উক্ত) দশ পশু সম্বন্ধে অধ্যয়নাদিকর্মে সমৃদ্ধ ভ্রাতৃগণের মধ্যে জ্যেষ্ঠের শ্রেষ্ঠ ভাগ হবে না, তাঁর সম্মানার্থে সামান্য কিছু দেয়।

১১৬। এবং সমুদ্ধৃতোদ্ধারে সমানংশান্‌ প্রকল্পয়েৎ।

উদ্ধারেহনুদ্ধৃতে ত্বেষামিয়ং স্যাদংশকল্পনা ॥

এইরূপে জ্যেষ্ঠ বিশ ভাগাদি নিলে পরে ভ্রাতৃগণের মধ্যে সম্পত্তি সমান অংশে বিভক্ত হবে। জ্যেষ্ঠ বিশভাগাদি না নিলে এদের মধ্যে এই (বক্ষ্যমাণ রূপ) বিভাগ হবে।

১১৭। একাধিকং হরেজ্জ্যেষ্ঠঃপুত্রোহধ্যৰ্দ্ধং ততোহনুজঃ।

অংশমংশং যবীয়াংস ইতি ধৰ্ম্মো ব্যবস্থিতঃ ॥

জ্যেষ্ঠপুত্র একটি অধিক অংশ (অর্থাৎ মোট দুই অংশ) গ্রহণ করবেন, তার পরের ভ্রাতা নিবে দেড় ভাগ, কনিষ্ঠ ভ্রাতৃগণ এক এক ভাগ নিবে।১০ এই ব্যবস্থা বিহিত।

১১৮। স্বেভ্যোহংশেভ্যস্তু কন্যাভ্যঃ প্রদদ্যুর্ভ্রাতরঃ পৃথক্‌।

স্বাৎ স্বাদংশাচ্চতুর্ভাগং পতিতাঃ স্যুরদিৎসবঃ ॥

ভ্রাতৃগণ পৃথক্‌ভাবে নিজ নিজ অংশ থেকে চতুর্থ ভাগ কন্যাগণকে দিবে।১১ যারা দিতে চায় না, তারা পতিত হবে।

১১৯। অজাবিকং সৈকশফং ন জাতু বিষমং ভজেৎ।

অজাবিকন্তু বিষমং জ্যেষ্ঠস্যৈব বিধীয়তে ॥

অজ, মেঘ, একখুরবিশিষ্ট (অশ্বাদি) কখনও অসমান (সংখ্যক) হলে বিভক্ত হয় না। অসমান সংখ্যক হলে (যেটি বেশী তা) জ্যেষ্ঠেরই হবে।১২

১২০। যবীয়ান্‌ জ্যেষ্ঠ ভার্য্যায়াং পুত্ৰমুৎপাদয়েদ্‌ যদি।

সমস্তএ বিভাগঃ স্যাদিতি ধর্মো ব্যবস্থিতঃ ॥

কনিষ্ঠ ভ্রাতা জ্যেষ্ঠের স্ত্রীতে যদি (নিয়োগ প্রথায়) পুত্র উৎপাদন করে, তাহলে কনিষ্ঠ ভ্রাতা ও ঐ পুত্র সমান অংশভাগী হবে (অর্থাৎ পুত্র জ্যেষ্ঠের স্ত্রীতে জাত হলেও পিতার ন্যায় অতিরিক্ত ভাগ পাবে না), এই ব্যবস্থা বিহিত।

১২১। উপসর্জ্জনং প্রধানস্য ধর্মতো নোপপদ্যতে।

পিতা প্রধানং প্রজনে তস্মাদ্ধৰ্ম্মেণ তং ভজেৎ ॥

(অপ্রধান ক্ষেত্ৰজপুত্র) প্রধান (ক্ষেত্রীর পিতৃধর্মানুসারে অধিক ভাগের) অধিকারী হয় না। সন্তান জন্মে (ক্ষেত্রী) পিতা প্রধান, সুতরাং, ধর্মানুসারে (পূর্বোক্ত নিয়মানুসারে পিতৃব্যের সঙ্গে সমান) ভাগ হবে।

১২২। পুত্রঃ কনিষ্ঠো জোষ্ঠায়াং কনিষ্ঠায়াঞ্চ পূৰ্ব্বজঃ।

কথং তত্র বিভাগঃ স্যাদিতি চেৎ সংশয়ো ভবেৎ ॥

জ্যেষ্ঠ স্ত্রীতে কনিষ্ঠ পুত্রের জন্ম হলে এবং কনিষ্ঠা স্ত্রীতে জ্যেষ্ঠ পুত্রের জন্ম হলে সেখানে কিরূপে ধনবিভাগ হবে ; এই সন্দেহ হলে (বক্ষ্যমাণ ব্যবস্থা অবলম্বনীয়)।

১২৩। একং বৃষভমদ্ধারং সংহরেত স পূর্ব্বজঃ।

ততোহপরে জ্যেষ্ঠবৃষস্তদূনানাং স্বমাতৃতঃ ॥

জ্যেষ্ঠ স্ত্রীতে জাত পুত্র একটি শ্রেষ্ঠ বৃষ উদ্ধার (বা অতিরিক্ত) হিসাবে পাবে। অন্য ভ্রাতৃগণ সেই জ্যেষ্ঠা স্ত্রীর গর্ভজাত পুত্র থেকে (জ্যেষ্ঠ হলেও) মায়ের দিক থেকে কনিষ্ঠ (হওয়ায়) প্রত্যেকে এক একটি বৃষ পাবে।

১২৪। জ্যেষ্ঠস্তু জাতো জ্যেষ্ঠায়াং হরেদ্‌বৃষভষোড়শাঃ।

ততঃ স্বমাতৃতঃ শেষা ভজেরন্নিতি ধারণা ॥

জ্যেষ্ঠ স্ত্রীতে জাত জ্যেষ্ঠ পুত্র পনেরটি গাভী ও একটি বৃষ (উদ্ধার হিসাবে) পাবে। তারপর যারা অন্যমাতৃজাত তারা নিজ নিজ মাতার (বিবাহক্রমে জ্যেষ্ঠতা) অনুসারে অবশিষ্ট গোসমূহ পাবে—এই ব্যবস্থা।

১২৫। সদৃশস্ত্রীষু জাতানাং পুত্রাণামবিশেষতঃ।

ন মাতৃতো জ্যৈষ্ঠ্যমস্তি জন্মতো জ্যৈষ্ঠ্যমুচ্যতে ॥

স্বামীর সবর্ণা স্ত্রীদের গর্ভজাত পুত্রদের বিশেষ নিয়ম না হয়ে মাতৃগণের (বিবাহানুসারে) জ্যেষ্ঠত্ব হবে না, জন্ম দ্বারা জ্যেষ্ঠত্ব উক্ত হয়।

১২৬। জন্মজ্যেষ্ঠেন চাহ্বানং সুব্রহ্মণ্যাস্বপি স্মৃতম্।

যময়োশ্চৈব গর্ভেযু জন্মতো জ্যেষ্ঠতা স্মৃতা ॥

(জ্যোতিষ্টোমে প্রযুক্ত) সুব্রহ্মণ্যা (নামক) মন্ত্রেও জন্মদ্বারা জ্যেষ্ঠ কর্তৃক (ইন্দ্রের )আহ্বান বিহিত। গর্ভে (সমকালে নিষিক্ত) যমজ পুত্র দ্বয়ের মধ্যে জন্মক্রমে জ্যেষ্ঠতা বিহিত।

১২৭। অপুত্রোহনেন বিবিনা সুতাং কুর্ব্বীত পুত্রিকাম্‌।

যদপত্যং ভবেদস্যাং তন্মম স্যাৎ স্বধাকরম্ ॥

অপুত্রক ব্যক্তি এই (বক্ষ্যমাণ নিয়মে) কন্যাকে পুত্রিকা (পুত্র) করবে। এই কন্যাতে যে পুত্র হবে, সে আমার শ্রাদ্ধপিণ্ডাধিকারী হবে।

১২৮। তানেন তু বিধানেন পুরা চক্রেহথ পুত্রিকাঃ।

বিবৃদ্ধার্থং স্ববংশস্য স্বয়ং দক্ষঃ প্রজাপতিঃ ॥

এই নিয়মেই প্রাচীন কালে দক্ষ প্রজাপতি নিজে স্ববংশের বৃদ্ধির জন্য অনেক পুত্রিকা (পুত্র) করেছিলেন।

১২৯। দদৌ স দশ ধর্মায় কশ্যপায় ত্রয়োদশ।

সোমায় রাজ্ঞে সৎকৃত্য প্রতাত্মা সপ্তবিংশতিম্‌ ॥

সস্তুষ্টচিত্তে (অলংকারাদি দ্বারা) সম্মান করে তিনি (ভাবী পুত্রিকাপুত্রের আশায়) (ভগবান্‌) ধর্মকে দশ, কশ্যপকে ত্রয়োদশ, সোমরাজাকে সপ্তবিংশতি কন্যা দান করেছিলেন।

১৩০। যথৈবাত্মা তথা পুত্রঃপুত্ৰেণ দুহিতা সমা।

তস্যামাত্মনি তিষ্ঠন্ত্যাং কথমন্যো ধনং হরেৎ ॥

যেমন নিজে তেমন পুত্র, কন্যা পুত্রের সমান। সেই (পিতার) আত্মা (স্বরূপ পুত্রিকা) থাকতে কি করে অন্য ব্যক্তি (পিতৃ) ধন গ্রহণ করবে?

১৩১। মাতুস্তু যৌতুকং যৎ স্যাৎ কুমারীভাগ এব সঃ।

দৌহিত্র এব চ হরেদপুত্রস্যাখিলং ধনম্ ॥

মাতার যা যৌতুক তা কুমারীকন্যার প্রাপ্য। অপুত্রক ব্যক্তির সমগ্ৰ ধন দৌহিত্র নিবে।

১৩২। দৌহিত্রো হ্যখিলং রিক্‌থমপুত্ৰস্য পিতুর্হরেৎ।

স এব দদ্যাদ্‌দ্বৌ পিণ্ডৌ পিত্রে মাতামহায় চ ॥

অপুত্রক মাতামহের ধন (পুত্রিকাপুত্র রূপ) দৌহিত্র পাবে। সে-ই পিতা ও মাতামহের উদ্দেশ্যে দুইটি পিণ্ড দিবে।

১৩৩। পৌত্রদৌহিত্রয়োর্লোকে ন বিশেষোহস্তি ধর্মতঃ।

তয়োর্হি মাতাপিতরৌ সম্ভূতৌ তস্য দেহতঃ ॥

পৃথিবীতে পৌত্র ও দৌহিত্রের ধর্মানুসারে কোন প্রভেদ নেই। তাদের পিতা মাতা (ধনস্বামীর) শরীর থেকে জাত।

১৩৪। পুত্রিকায়াং কৃতায়ান্তু যদি পুত্রোহনুজায়তে।

সমস্তত্র বিভাগঃ স্যাজ্জেষ্ঠতা নাস্তি হি স্ক্রিয়াঃ ॥

পুত্রিকা করার পরে যদি পুত্র জন্মে তাহলে সেক্ষেত্রে সমান ভাগ হবে; স্ত্রীলোকের (অর্থাৎ কন্যার) জ্যেষ্ঠতা নেই।

১৩৫। আপুত্ৰায়াং মৃতায়ান্তু পুত্রিকায়াং কথঞ্চন।

ধনং তৎপুত্রিকার্ওা হবেতৈবাবিচারয়ন্‌ ॥

পুত্রিকা কোন প্রকারে অপুত্রবতী অবস্থায় মৃত হলে সেই ধন পুত্রিকাপতি নির্বিচারে গ্রহণ করবে।

১৩৬। অকৃতা বা কৃতা বাপি স্বং বিন্দেৎ সদৃশাং সুতম্।

পৌত্রী মাতামহাস্তেন দদ্যাৎ পিণ্ডং হরেদ্ধনম্‌ ॥

কন্যা অকৃতা (বিবাহকালে মনে মনে পুত্রিকা বলে) নির্দিষ্ট না হলে অথবা কৃতা (বাক্য উচ্চারণপূর্বক) নির্দিষ্ট হলে সবর্ণ পতির ঔরসে পুত্র লাভ করলে মাতামহ তার দ্বারা ‘পৌত্রী’ হন; সে তাঁর উদ্দেশ্যে পিণ্ড দিবে এবং তাঁর ধন গ্রহণ করবে।

১৩৭। পুত্রেণ লোকান্‌ জয়তি পৌত্রেণানন্ত্যমশ্লুতে।

অথ পুত্রস্য পৌত্ৰেণ ব্ৰধ্নস্যাপ্নোতি বিষ্টপম্‌ ॥

(মানুষ) পুত্রের দ্বারা (স্বর্গাদি) লোক জয় করে, পৌত্ৰদ্বারা মোক্ষ প্রাপ্ত হয়, পুত্রের পৌত্রদ্বারা সূর্যলোক প্রাপ্ত হয়।

১৩৮। পুন্নাম্নো নরকাদ্‌ যস্মাৎ এায়তে পিতরং সুতঃ।

তস্মাৎ পুত্র ইতি প্রোক্তঃ স্বয়মেব স্বয়ম্ভুবা ॥

যেহেতু পুত্র পিতাক পুৎ নামক নরক থেকে রক্ষা করে, সেই জন্য ব্রহ্মা স্বয়ং তাকে পুত্র বলেছেন।

১৩৯। পৌত্রদৌহিত্রয়োর্লোকে বিশেষো নোপপদ্যতে।

দৌহিত্রোহপি হ্যমুত্রৈনং সন্তারয়তি পৌত্রবৎ ॥

পৃথিবীতে পৌত্র ও দৌহিত্রের প্রভেদ নেই। দৌহিত্রও পরলোকে মানুষকে পৌত্রের ন্যায় নিস্তার করে।

১৪০। মাতুঃ প্রথমতঃ পিণ্ডং নিৰ্ব্বপেৎ পুত্রিকাসুতঃ।

দ্বিতীয়ন্তু পিতুস্তস্যাস্তৃতীয়ং তৎপিতুঃ পিতুঃ ॥

পুত্রিকাপুত্র প্রথম পিণ্ড মাকে, দ্বিতীয় পিতাকে ও তৃতীয় পিতামহকে দিবে।

১৪১। উপপন্নো গুণৈঃ সর্ব্বৈঃ পুত্রো যস্য তু দত্রিমঃ।

স হারেতৈব তদ্রিক্‌থং সম্প্রাপ্তোহপ্যন্যগোত্রতঃ ॥

যার দত্রিওমপুত্র সকল গুণসম্পন্ন, সে অন্যগোত্র থেকে প্রাপ্ত হলেও তার সম্পত্তি গ্রহণ করবে।

১৪২। গোত্ররিক্‌থে জনয়িতুর্ন হরেদ্দত্রিমঃ ক্কচিৎ।

গোত্ররিক্‌থানুগঃ পিণ্ডো ব্যপৈতি দদতঃ স্বধা ॥

দত্রিমপুত্র কখনও জনকের গোত্র ও সম্পত্তি পায় না। গোত্র ও সম্পত্তির অধিকার পিণ্ডদানের কারণ ; দত্তকদাতার শ্রাদ্ধাদিতে দত্তকের অধিকার অপগত হয়।

১৪৩। অনিযুক্তাসুতশ্চৈব পুত্ৰিণ্যাপ্তশ্চ দেবরাৎ।

উভৌ তৌ নার্হতো ভাগং জারজাতককামজৌ ॥

(গুরুজনাদি কর্তৃক) অনিযুক্তা স্ত্রীতে জাত পুত্র এবং সপুত্রা নিযুক্তাতে দেবর থেকে প্রাপ্ত পুত্র—এই উভয়ে পৈতৃক ধনের অংশভাগী হয় না; কারণ, (অনিযুক্তা জাত) জারজাত ও নিযুক্তাজাত) কামজ পুত্র।

১৪৪। নিযুক্তায়ামপি পুমান্‌ নার্য্যাং জাতোহবিধানতঃ।

নৈবার্হঃ পৈতৃকং বিক্‌থং পতিতোৎপাদিতো হি সঃ ॥

নিযুক্তা নারীতেও (নিয়মলঙ্ঘনপূর্বক) জাত পুত্র পৈতৃক সম্পত্তির অধিকারী হয় :না কারণ, সে পতিতোৎপাদিত।

১৪৫। হরেৎ তত্র নিযুক্তায়াং জাতঃ পুত্রো যথৌরসঃ।

ক্ষেত্রিকস্য তু তদ্বীজং ধর্ন্মতঃ প্রসবশ্চ সঃ ॥

(যথাবিধি) নিযুক্ত নারীতে জাত পুত্র ঔরসপুত্রের ন্যায় (ধনস্বামীর সম্পত্তি) গ্রহণ করবে তার বীজ ক্ষেত্রিকের এবং ধর্মানুসারে তার সন্তান।

১৪৬। ধনং যো বিভৃয়াদ্‌ ভ্রাতুর্মৃস্য স্ত্রিয়মেব চ।

সোহপত্যং ভ্রাতুরুৎপাদ্য দদ্যাৎ তস্যৈব তদ্ধনম্ ॥

যে মৃত ভ্রাতার ধন এবং স্ত্রীকে রক্ষা করে, সে (গুরুজন কর্তৃক নিযুক্তা ঐ ভ্রাতৃজায়াতে) পুত্র উৎপাদন করে ঐ ধন সেই পুত্রকে দিবে।

১৪৭। যা নিযুক্তান্যতঃ পুত্রং দেবরাদ্বাপ্যবাপ্নুয়াৎ।

তং কামজমরিক্‌থীয়ং বৃথোপন্নং প্রচক্ষতে ॥

নিযুক্তা নারী দেবর বা অন্য সপিণ্ড থেকে যে পুত্র লাভ করে, সে কামজ হলে পৈতৃকধনভাগী নয়, তাকে বৃথোৎপন্ন বলা হয়।

১৪৮। এতদ্বিধানং বিজ্ঞেয়ং বিভাগস্যৈকযোনিষু।

বহুীষু চৈকজাতানাং নানাস্ত্রীষু নিবোধত ॥

(সবর্ণা স্ত্রীতে) এক পুরুষ কর্তৃক উৎপন্ন সন্তানদের এই (উক্ত) ব্যবস্থা জ্ঞেয়। (সবর্ণাসবর্ণ) অনেক স্ত্রীতে একপুরুষ থেকে জাত পুত্রদের বিভাগ ব্যবস্থা শোন।

১৪৯। ব্রাহ্মণস্যানুপূর্ব্ব্যেণ চতস্ৰস্তু যদি স্ক্রিয়ঃ।

তাসাং পুত্ৰেষু জাতেষু বিভাগেইয়ং বিধিঃ স্মৃতঃ ॥

ব্রাহ্মণের বর্ণানুক্রমে যদি চারটি স্ত্রী থাকে তাহলে তাদের মধ্যে এই (বক্ষ্যমাণ) বিধি উক্ত হয়েছে।

১৫০। কীনাশো গোবৃষো যানমলঙ্কারশ্চ বেশ্ম চ।

বিপ্রস্যৌদ্ধারিকং দেয়মেকাংশশ্চ প্রধানতঃ ॥

(বিভাগের পূর্বে) ব্রাহ্মণী পুত্রকে একজন কৃষক, একটি গাভী, একটি বৃষ, (অশ্বাদি) যান, অলংকার, (প্রধান) গৃহ এবং সকল অংশের মধ্যে একটি প্রধান অংশ উদ্ধার (অতিরিক্ত অংশ) হিসাবে দেয়।

১৫১। এ্যংশং দায়দ্ধরেদ্বিপ্রো দ্বাবংশৌ ক্ষত্রিয়াসুতঃ।

বৈশ্যাজঃ সার্দ্ধমেবাংশমংশং শুদ্ৰাসুতো হরেৎ ॥

সম্পত্তির তিন অংশ ব্রাহ্মণ, দুই অংশ ক্ষত্রিয়াপুত্র, দেড় ভাগ বৈশ্য এবং এক ভাগ শূদ্রাপুএ নিবে।

১৫২। সর্ব্বং বা রিক্‌থজাতং তদ্দশধা পরিকল্প্য চ।

ধর্ন্ম্যং বিভাগংকুব্বীত বিধিনানেন ধর্ন্মবিৎ ॥

সমগ্র সম্পত্তি দশভাগে বিভক্ত করে ধর্ষজ্ঞ ব্যক্তি এই (বক্ষ্যমাণ) নিয়মে ধর্মসম্মত ভাগ করবেন।

১৫৩। চতুরোহংশান্‌ হরেদ্ধিপ্রস্ত্রীনংশান্‌ ক্ষত্রিয়াসুতঃ।

বৈশ্যাপুত্রো হরেদ্‌দ্ব্যংশমংশং শূদ্ৰাসুতো হরেৎ ॥

ব্রাহ্মণ চার, ক্ষত্রিয়াপুত্র তিন, বৈশ্যাপুত্র দুই এবং শূদ্রাপুত্র এক অংশ নিবে।

১৫৪। যদ্যপি স্যাওু সৎপুত্রোহপ্যসৎপুত্রোহপি বা ভবেৎ।

নাধিকং দশমাদ্‌দদ্যাচ্ছুদ্রাপুত্ৰায় ধৰ্ম্মতঃ ॥

যদিও ব্রাহ্মণের সকল দ্বিজবর্ণের স্ত্রীর পুত্র থাকে বা না থাকে, তথাপি ধর্মানুসারে দশমভাগের বেশী শূদ্রাপুত্রকে দিবেন না।

১৫৫। ব্রাহ্মণক্ষত্রিয়বিশাং শূদ্ৰাপুত্রো ন রিক্‌থভাক্‌।

যদেবাস্য পিতা দদ্যাৎ তদেবাস্য ধনং ভবেৎ ॥

ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যের শূদ্ৰাপুত্র সম্পত্তির অধিকারী হয় না। তার পিতা যেটুকু দেয়, তাই তার ধন হয়।

১৫৬। সমবর্ণাসু যে জাতাঃ সৰ্ব্বে পুত্রা দ্বিজন্মনাম্।

উদ্ধাবং জ্যায়সে দত্ত্বা ভজেরন্নিতরে সমম্ ॥

দ্বিজদের সবর্ণা স্ত্রীতে যে সকল পুত্র জন্মে, তাদের জ্যেষ্ঠভ্রাতাকে উদ্ধার (অতিরিক্ত ভাগ) দিয়ে অপর ভ্রাতৃগণ (অবশিষ্ট সম্পত্তিকে) সমান ভাগে বিভক্ত করবে।

১৫৭। শূদ্রস্য তু সবর্ণৈব নান্যা ভার্য্যা বিধীয়তে।

তস্যাং জাতাঃ সমাংশাঃ স্যুর্যদি পুত্রশতং ভবেৎ ॥

শূদ্রের কিন্তু সবর্ণাই একমাত্র ভার্য্যা, অন্য স্ত্রী বিহিত নয়। তাতে জাত শত পুত্র হলে তারা সমান অংশভাগী হবে।

১৫৮। পুত্ৰান্ দ্বাদশ যানাহ নৃণাং স্বায়ম্ভুবো মনুঃ।

তেষাং ষড্‌বন্ধুদায়াদাঃ ষডদায়াদবান্ধবাঃ ॥

স্বায়ম্ভুব মনু মানুষের যে দ্বাদশ পুত্র বলেছেন, তাদের মধ্যে ছয় জন বন্ধুদায়াদ,১৩ ছয় জন অদায়াদবান্ধব।

১৫৯। ঔরসঃ ক্ষেত্ৰজশ্চৈব দত্তঃ কৃত্রিম এব চ।

গূঢ়োৎপন্নোহপবিদ্ধশ্চ দায়াদা বান্ধবাশ্চ ষট্‌ ॥

ঔরস, ক্ষেত্রজ, দত্ত(ক), কৃত্রিম, গূঢ়োৎপন্ন ও অপবিদ্ধ—এই ছয় জন দায়াদবান্ধব।

১৬০। কানীনশ্চ সহোঢ়শ্চ ক্রীতঃ পৌনর্ভবস্তথা।

স্বয়ংদত্তশ্চ শৌদ্রশ্চ ষডদায়াদবান্ধবাঃ ॥

কানীন, সহোঢ়, ক্রীত, পৌনৰ্ভব, স্বয়ংদত্ত ও শৌদ্র—এই ছয়জন আদায়াদবান্ধব।

১৬১। যাদৃশং ফলমাপ্নোতি কুপ্লবৈঃ সন্তরন্‌ জলম্‌।

তাদৃশং ফলমাপ্নোতি কুপুত্রৈঃ সন্তরংস্তমঃ ॥

খারাপ ভেলা দিয়ে জল পার হতে যেমন ফল পাওয়া যায়, তেমন ফল নিন্দিত পুত্র দ্বারা (দুঃখপাপাদি) অতিক্রম করতে পাওয়া যায়।

১৬২। যদ্যেকরিক্‌থিনৌ স্যাতামৌরসক্ষেত্ৰজৌ সুতৌ।

যস্য যৎ পৈতৃকংরিকথং স তদ্‌ গহ্নীত নেতরঃ ॥

যদি ঔরস পুত্র ও (তৎপরে জাত) ক্ষেত্ৰজপুত্র এক (ক্ষেত্রিকের) সম্পত্তির ভাগী হয়, তাহলে যার যা পৈতৃক সম্পত্তি সে তা পাবে, অন্যে পাবে না (অর্থাৎ ঔরসপুত্র ক্ষেত্রিকের এবং ক্ষেত্রজ উৎপাদকের ধন পাবে)।

১৬৩। এক এবৌরসঃ পুত্রঃ পিত্রাসা বসুনঃ প্রভু।

শেষাণামানৃশংস্যার্থং প্রদদ্যাত্তু প্রজীবনম্‌ ॥

একমাত্র ঔরসপুত্র পৈতৃক ধনের অধিকারী। অবশিষ্টদের প্রতি অনুকম্পাবশতঃ জীবনধারণোপযোগী গ্রাসাচ্ছাদন দিবে।

১৬৪। ষষ্ঠংতু ক্ষেত্ৰজস্যাংশং প্রদদ্যাৎ পৈতৃকাদ্ধনাৎ।

ঔরসো বিভজন্‌ দায়ং পিএাং পঞ্চমমেব বা ॥

ঔরসপুত্র পৈতৃক সম্পত্তি ভাগ করলে পৈতৃকধন থেকে ক্ষেত্রজপুত্রকে ষষ্ঠ বা পঞ্চম অংশ দিবে।

১৬৫। ঔরস ক্ষেত্ৰজৌ পুত্রৌ পিএ্যরিক্‌থসা ভাগিনৌ।

দশাপরে তু ক্রমশো গোত্ররিক্‌থাংশভাগিনঃ ॥

ঔরস ও ক্ষেত্রজ পুত্র পৈতৃকসম্পত্তির অধিকারী। অন্য দশ পুত্ৰ ক্ৰমে (পূর্বপূর্বাভাবে) গোত্র ও সম্পত্তির অংশভাগী হবে।

১৬৬। স্বক্ষেত্রে সংস্কৃতায়ান্তু স্বয়মুৎপাদয়েদ্ধি যম্।

তমৌরসং বিজানীয়াৎ পুত্ৰং প্রথমকল্পিতম্‌ ॥

কন্যাবস্থায় বিবাহিতা নিজ স্ত্রীর গর্ভে যাকে স্বামী নিজে উৎপাদন করে, তাকে ঔরস ও মুখা পুত্র বলে জানবে।

১৬৭। যস্তল্পজঃ প্রমীতসা ক্লীবস্য ব্যাধিতস্য বা।

স্বধর্মেণ নিযুক্তায়াং স পুত্রঃ ক্ষেত্ৰজঃ স্মৃতঃ ॥

মৃত, ক্লীব বা রোগার্ত ব্যক্তির ধর্ম অনুসারে নিযুক্ত স্ত্রীতে উৎপাদিত পুত্ৰ ক্ষেত্রজ নামে খ্যাত।

১৬৮। মাতা পিতা বা দদ্যাতাং যমদ্ভিঃ পুত্ৰমাপদি।

সদৃশং প্রীতিসংযুক্তং স জ্ঞেয়ো দত্রিমঃ সুতঃ ॥

মাতা বা পিতা (প্রতিগ্রহীতার অপুত্রকত্বাদি) আপদ্‌কালে তার সমানজাতীয় যে পুত্রকে প্রীতিপূর্বক দান করেন, সে দত্রিমপুত্র বলে জ্ঞেয়।

১৬৯। সদৃশন্তু প্রকুর্য্যাদ্‌ যং গুণদোষবিচক্ষণম্‌।

পুত্রং পুত্রগুণৈর্যুক্তং স বিজ্ঞেয়শ্চ কৃত্রিমঃ ॥

গুণদোষজ্ঞ পুত্রগুণযুক্ত সমানজাতীয় যে পুত্রকে গ্রহণ করা হয়, সে কৃত্রিম বলে জ্ঞেয়।

১৭০। উৎপদ্যতে গৃহে যস্য ন চ জ্ঞায়েত কস্য সঃ।

স গৃহে গূঢ় উৎপন্নস্তস্য স্যাদ্‌যস্য তল্পজঃ ॥

যার গৃহে গোপনে পুত্র উৎপাদিত হয় এবং সে কার সন্তান তা জানা যায় না, সেই (গূঢ়জ সন্তান) যার স্ত্রীতে জাত তার পুত্র।

১৭১। মাতাপিতৃভ্যামুৎসৃষ্টং তয়োরন্যতরেণ বা।

যং পুত্রং পরিগৃহ্নীয়াদপবিদ্ধঃ স উচ্যতে ॥

মাতা পিতা বা তাদের একজন কর্তৃক পরিত্যক্ত পুত্রকে গ্রহণ করলে সে (গ্রহীতার) অপবিদ্ধ পুত্র বলে কথিত হয়।

১৭২। পিতৃবেশ্মনি কন্যা তু যং পুত্ৰং জনয়েদ্রহঃ।

তং কানীনং বদেন্নাম্না বোঢ়ূঃ কন্যাসমুদ্ভবম্ ॥

পিতৃগৃহে কন্যা গোপনে যে পুত্রকে জন্ম দিয়েছে, সে ঐ কন্যা বিবাহকারীর কানীন পুত্র নামে কথিত হয়।

১৭৩। যা গর্ভিণী সংস্ক্রিয়তে জ্ঞাতাজ্ঞাতাপি বা সতী।

বোঢ়ূঃ স গর্ভো ভবতি সহোঢ় ইতি চোচ্যতে ॥

যে গর্ভবতী নারী, (তার গর্ভ) জ্ঞাত বা অজ্ঞাত হোক, বিবাহিতা হয়, তার গর্ভস্থ সন্তান বিবাহকারীর হয় এবং সহোঢ় বলে কথিত হয়।

১৭৪। ক্রীণীয়াদ্‌ যস্ত্বপত্যার্থং মাতাপিত্রোর্যমন্তিকাৎ।

স ক্ৰীতকঃ সুতস্তস্য সদৃশোহসদৃশোহপি বা ॥

যাকে নিজের পুত্র করবে বলে তার মাতাপিতার নিকট থেকে ক্রয় করা হয়, সে ক্রেতার তুল্যগুণ বিশিষ্ট হোক বা না হোক, তার ক্রীতক পুত্র হয়।

১৭৫। যা পত্যা বা পরিত্যক্তা বিধবা বা স্বয়েচ্ছয়া।

উৎপাদয়েৎ পুনর্ভূত্বা স পৌনৰ্ভব উচ্যতে ॥

পতিকর্তৃক পরিত্যক্তা বা বিধবা স্বেচ্ছায় পুনরায় বিবাহ করে যে পুত্রকে জন্মদান করে, সে পৌনৰ্ভব নামে কথিত হয়।

১৭৬। সা চেদক্ষতযোনিঃ স্যাদগতপ্রত্যাগতাপি বা।

পৌনৰ্ভবেণ ভর্এা সা পুনঃ সংস্কারমর্হতি ॥

সেই নারী যদি অক্ষতযোনি অবস্থায় অন্য ব্যক্তিকে আশ্রয় করে তাহলে সেই দ্বিতীয় পতি পুনর্বিবাহ নামক সংস্কারের যোগ্য হয়। অথবা কুমারী অবস্থায় বিবাহকারী পতিকে ত্যাগপূর্বক স্ত্রী যদি অন্যকে আশ্রয় করে পুনরায় পূর্ব পতির নিকট ফিরে আসে, তাহলে সেই কুমারী অবস্থার পতির সঙ্গে সে পুনর্বিবাহ সংস্কারের যোগ্য হয়।

১৭৭। মাতাপিতৃবিহীনো ষস্ত্যক্তো বা স্যাদকারণাৎ।

আত্মানং স্পর্শয়েদ্‌ষস্মৈ স্বয়ংদত্তন্তু স স্মৃতঃ ॥

মাতাপিতৃহীন বা অকারণে পরিত্যক্ত যে লোক কারও কাছে নিজেকে দান করে, সে তার স্বয়ংদত্ত (পুত্র) বলে খ্যাত হয়।

১৭৮। যং ব্রাহ্মণস্ত্ত শূদ্রায়াং কামাদুৎপাদয়েৎ সুতম্।

স পারয়ন্নেব শবস্তস্মাৎ পারশবঃ স্মৃতঃ ॥

ব্রাহ্মণ কামবশে (পরিণীতা) শূদ্ৰানারীতে যে পুত্র উৎপাদন করে, সে জীবিতাবস্থায়ই শব(তুল্য) বলে পারশব নামে খ্যাত।

১৭৯। দাস্যাং বা দাসদাস্যাং বা যঃ শূদ্রস্য সুতো ভবেৎ।

সোহনুজ্ঞাতো হরেদংশমিতি ধর্ন্মো ব্যবস্থিতঃ ॥

কারও দাসীর বা দাসের দাসীর গর্ভে যে শূদ্ৰপুত্র হয়, সে (শূদ্রপিতার) অনুমতিক্রমে (পৈতৃক সম্পত্তির) ভাগ পাবে—এই ব্যবস্থা বিহিত।

১৮০। ক্ষেত্ৰজাদীন্‌ সুতানেতানেকাদশ যথোদিতান্‌।

পুত্রপ্রতিনিধীনাহুঃ ক্ৰিয়ালোপান্মনীষিণঃ ॥

অপুত্রক ব্যক্তির (জলপিণ্ডদানাদি) ক্রিয়ার লোপ না হয়, এজন্য ক্ষেত্ৰজাদি উক্ত একাদশ পুত্রকে মনীষিগণ পুত্ৰপ্রতিনিধি বলেছেন।

১৮১। য এতেহভিহিতাঃ পুত্রাঃ প্রসঙ্গাদন্যবীজজাঃ।

যস্য তে বীজতো জাতাস্তস্য তে নেতরস্য তু ॥

(ঔরসপুত্র) প্রসঙ্গে অন্যবীজোৎপন্ন এই উক্ত (ক্ষেত্ৰজাদি) পুত্রগণ যার বীজ থেকে জাত তারই হবে, অন্যের (অর্থাৎ ক্ষেত্রীর নয়, যদি তার ঔরস পুত্র বা পুত্রিকাপুত্র থাকে)।

১৮২। ভ্রাতৃণামেকজাতানামেকশ্চেৎ পুত্রবান্ ভবেৎ।

সার্ব্বাস্তাংস্তেন পুত্রেণ পুত্রিণো মনুরব্রবীৎ॥

এক মাতাপিতা থেকে জাত ভ্রাতৃগণের মধ্যে একজন যদি পুত্রবান্‌ হয়, সেই পুত্র দ্বারা তাদের সকলকে মনু পুত্রবান্ বলেছেন।

১৮৩। সর্ব্বাসামেকপত্নীনামেকা চেৎ পুত্রিণী ভবেৎ।

সর্ব্বাস্তাস্তেন পুত্ৰেণ প্ৰাহ পুত্রবতীৰ্মনুঃ ॥

এক পতির সকল স্ত্রীর মধ্যে একজন পুত্রবতী হলে তার দ্বারা তাদের সকলকে মনু পুত্রবতী বলেছেন।

১৮৪। শ্রেয়সঃ শ্রেয়সোহলাভে পাপীয়ান্ রিক্‌থমৰ্হতি।

বইবশ্চেওু সদৃশাঃ সর্ব্বে রিক্‌থস্য ভাগিনঃ ॥

(ঔরসাদিক্রমে পূর্ব পূর্ব পুত্র পর পর পুত্র অপেক্ষা উৎকৃষ্ট)—উৎকৃষ্ট পুত্রদের অভাবে নিকৃষ্টপূত্র সম্পত্তির অধিকারী হবে। একপ্রকার অনেক পুত্র থাকলে তারা সকলে সম্পত্তির (সমান?) অধিকারী হয়।

১৮৫। ন ভ্রাতরো ন পিতরঃ পুত্রা বিক্‌থহরাঃ পিতুঃ।

পিতা হরেদপুএস্য রিক্‌থং ভ্রাতর এব চ ॥

ভ্রাতৃগণ বা মাতাপিতা কারও সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয় না, পুত্রগণ পিতার সম্পত্তির অধিকারী হয়। অপুত্রক ব্যক্তির সম্পত্তি পিতা (তদভাবে) ভ্রাতৃগণ গ্রহণ করে।

১৮৬। ত্রয়াণামুদকং কার্য্যং ত্ৰিষু পিণ্ডঃ প্রবর্ওতে।

চতুর্থঃ সম্প্রদাতৈষাং পঞ্চমো নোপপদ্যতে ॥

পিত্রাদি তিন পুরুষের তর্পণ করণীয়, ঐ তিনজনকে পিণ্ডও দেয়, চতুর্থ এঁদের (জলপিণ্ড)দাতা ; পঞ্চম পুরুষের বিষয়ে অধিকার নেই (সুতরাং উক্ত পূর্বপুরুষের সম্পত্তিতেও অধিকার নেই)।

১৮৭। অনন্তরঃ সপিণ্ডাদ্‌যস্তস্য তস্য ধনং ভবেৎ।

অত উর্ধ্বং সকুল্যঃ স্যাদাচাৰ্য্যঃ শিষ্য এব বা ॥

সপিণ্ডের পরে যে ব্যক্তি, সে ধনাধিকারী হবে। তার পরে হবে সকুল্য, তদভাবে আচার্য অথবা শিষ্য।

১৮৮। সর্ব্বেষামপ্যভাবে তু ব্রাহ্মণা রিক্‌থভাগিনঃ ।

ত্রৈবিদ্যাঃ শুচয়ো দান্তাস্তথা ধর্মো ন হীয়তে ॥

(উক্ত) সকল উত্তরাধিকারীর অভাবে ত্রিবেদজ্ঞ, পবিত্র, জিতেন্দ্রিয় ব্রাহ্মণগণ (মৃত ব্যক্তির) সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হন ; এভাবে ধর্মহানি হয় না।

১৮৯। অহাৰ্য্যং ব্রাহ্মণদ্ৰব্যং রাজ্ঞা নিত্যমিতি স্থিতি।

ইতরেষান্তু বর্ণানাং সর্ব্বাভাবে হরেন্নৃপঃ ॥

ব্রাহ্মণের ধন কখনও রাজার গ্রহণীয় নয়—এই ব্যবস্থা। অন্যান্য বর্ণের ক্ষেত্রে সকল উত্তরাধিকারীর অভাবে রাজা (মৃতব্যক্তির)সম্পত্তি নিবেন।

১৯০। সংস্থিতস্যানপতাসা সগোত্রাৎ পুত্ৰমাহরেৎ।

তত্র যদ্‌রিক্‌থজাতং স্যাৎ তৎ তস্মিন্‌ প্রতিপাদয়েৎ ॥

মৃত অপুত্রক ব্যক্তির (স্ত্রীতে) সগোত্র দ্বারা পুত্র উৎপাদন করবে। যে সম্পত্তিসমূহ থাকে, তা তাকে দিতে হয়।

১৯১। দ্বৌ তু যৌ বিবদেয়াতাং দ্বাভ্যাং জাতৌ স্ক্রিয়া ধনে।

তযোর্যদ্‌ যস্য পিত্ৰ্যং স্যাৎ তৎ স গৃহ্নীত নেতরঃ ॥

দুইজন (ঔরস ও পৌনৰ্ভব পুত্র) মৃতব্যক্তির সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ করলে তাদের মধ্যে যে সম্পত্তি যার পিতার সেই সম্পত্তি সে নিবে, অপর ব্যক্তি নয়।১৪

১৯২। জনন্যাং সংস্থিতায়ান্তু সমং সৰ্ব্বে সহোদরাঃ।

ভজেরন্‌ মাতৃকং বিক্‌থং ভগিন্যশ্চ সনাভয়ঃ ॥

মাতার মৃত্যুর পরে সকল সহোদর ভ্রাতৃগণ এবং সহোদর (অবিবাহিতা) ভগিনীগণ মাতার সম্পত্তি সমান অংশে পাবে।

১৯৩। যাস্তাসাং স্যুদুহিতবস্তাসামপি যথার্হতঃ।

মাতামহ্যা ধনাং কিঞ্চিৎ প্রদেয়ং প্রীতিপূৰ্ব্বকম্‌ ॥

যাদের যারা (অবিবাহিতা) কন্যা, তাদেরও মাতামহীর ধনের কিছু অংশ প্রীতিপূর্বক দেয়।

১৯৪। অধ্যগ্ন্যধ্যাবাহনিকং দত্তঞ্চ প্রীতিকর্ন্মণি।

ভ্রাতৃমাতৃপিতৃপ্রাপ্তং ষড্‌বিধং স্ত্রীধনং স্মৃতম্‌ ॥

(বিবাহকালে অগ্নিসন্নিধানে প্রাপ্ত) অধ্যগ্নি, অধ্যাবাহনিক (পিতৃগৃহ থেকে পতিগৃহে নীয়মানা কন্যাকর্তৃক লব্ধ), (পতিপ্রভৃতি কর্তৃক) প্রীতিপূর্বক দত্ত, ভ্রাতা মাতা বা পিতার থেকে প্রাপ্ত, স্ত্রীধন এই ছয় প্রকার।

১৯৫। অম্বাধেয়ঞ্চ যদ্দত্তং পত্যা প্রীতেন চৈব যৎ।

পত্যৌ জীবতি বৃত্তায়াঃ প্রজায়াস্তব্ধনং ভবেৎ ॥

অন্বাধেয় (বিবাহের পরে পিতা, মাতা, স্বামী, পিতৃকুল, মাতৃকুল থেকে লব্ধ) ও পতি কর্তৃক প্রীতিপূর্বক দত্ত ধন (ও পুর্বোক্ত ছয় প্রকার স্ত্রীধন) স্বামীর জীবিতাবস্থায় (স্ত্রীর মৃত্যু হলে) তার সন্তান পাবে।

১৯৬। ব্রাহ্ম-দৈবার্ষ-গান্ধৰ্ব্ব-প্রাজাপত্যেষু যদ্বসু।

অপ্ৰজায়ামতীতায়াং ভর্ওুরেব তদিষ্যতে ॥

ব্রাহ্ম, দৈব, আর্ষ, গান্ধর্ব ও প্রাজাপত্য বিধিতে বিবাহিতা নারীর যে ধন, তা তার নিঃসন্তান অবস্থায় মৃত্যুর পরে স্বামীরই হবে।

১৯৭। যৎ ত্বস্যাঃ শ্যাদ্ধনং দত্তং বিবাহেষ্বাসুরাদিষু।

অপ্রজায়ামতীতায়াং মাতাপিত্ৰোস্তদুঘতে ॥

আসুরাদি (নিন্দিত পদ্ধতিতে) বিবাহে নারীকে যে ধন দেওয়া হয়, তা তার নিঃসন্তান অবস্থায় মৃত্যুর পরে তার মাতা পিতার হবে।

১৯৮। স্ক্রিয়াস্তু যদ্ভবেদ্বিত্তং পিত্রা দত্তং কথঞ্চন।

ব্রাহ্মণী তদ্ধরেৎ কন্যা তদপত্যস্য বা ভবেৎ ॥

স্ত্রীলোকের পিতৃদত্ত যা কিছু ধন, তা ব্রাহ্মণীকন্যা বা তার সন্তান পাবে।১৫

১৯৯। ন নির্হারং স্ক্রিয়ঃ কুর্য্যুঃ কুটুম্বাদ্বহুমধ্যগাৎ।

স্বকাদপি চ বিত্তাদ্ধি স্বস্য ভর্ওুরনাজ্ঞয়া ॥

ভ্রাতা প্রভৃতি বহু স্বজনের সাধারণ ধন থেকে স্ত্রীলোক অলংকারাদির জন্য ধনসঞ্চয় করবে না, স্বামীর আদেশ ব্যতীত তাঁর ধন থেকেও নয়।

২০০। পত্যৌ জীবতি যঃ স্ত্রীভিরলঙ্কারো ধৃতো ভবেৎ।

ন তং ভজেরন্‌ দায়াদা ভজমানাঃ পতন্তি তে ॥

পতির জীবদ্দশায় স্ত্রীলোক যে অলংকার ধারণ করে, তা (স্বামীর মৃত্যুর পরে পুত্রাদি) উত্তরাধিকারীরা নিবে না, নিলে তারা পতিত হবে।

২০১। অনংশৌ ক্লীবপতিতৌ জাত্যন্ধবধিরৌ তথা।

উন্মত্ত-জড়-মূকাশ্চ যে চ কেচিন্নিরিন্দ্রিয়াঃ ॥

ক্লীব, পতিত, জন্ম থেকে অন্ধ বা বধির, উন্মত্ত, জড়, মূক ও (কাণা পঙ্গু প্রভৃতি) বিকলেন্দ্রিয় ব্যক্তিগণ পৈতৃক সম্পত্তির অংশভাগী হয় না।

২০২। সৰ্ব্বেষামপি তু ন্যাষ্যং দাতুং শক্ত্যা মনীষিণা।

গ্রাসাচ্ছাদনমত্যন্তংপতিতো হ্যদদদ্ভবেৎ ॥

সম্পত্তির অংশভাগী বুদ্ধিমান্‌ ব্যক্তি উক্ত সকলকেই যথাশক্তি আমরণ গ্রাসাচ্ছাদন দিবে, এই ন্যায়সম্মত ব্যবস্থা ; না দিলে পতিত হবে।

২০৩। যদ্যর্থিতা তু দারৈঃ স্যাৎ ক্লীবাদীনাংকথঞ্চন।

তেষামুৎপন্নতন্তূনামপত্যং দায়মৰ্হতি ॥ ২০৩

যদি ক্লীবাদির১৬ কোন প্রকারে বিবাহেচ্ছা জন্মে, তাহলে তাদের সন্তান (পিতামহের সম্পত্তির)উত্তরাধিকারী হবে।

২০৪। যৎকিঞ্চিৎ পিতরি প্রেতে ধনং জ্যেষ্ঠোহধিগচ্ছতি।

ভাগো যবীয়রাং তত্র যদি বিদ্যানুপালিতঃ ॥

পিতার মৃত্যুর পরে (অবিভক্ত) জ্যেষ্ঠ পুত্র (নিজের গুণে) যা কিছু ধন উপার্জন করে, তার ভাগ বিদ্বান্ কনিষ্ঠ পুত্রগণ পাবে।

২০৫। অবিদ্যানান্তু সর্ব্বেষামীহাতশ্চেদ্ধনং ভবেৎ।

সমস্তএ বিভাগঃ স্যাদপিএ্যইতি ধারণা ॥

বিদ্যাহীন সকল (অবিভক্ত) ভ্রাতার (কৃষি বাণিজ্যাদি) চেষ্টায় যদি ধন উপার্জিত হয়, তাহলে সেই অপৈতৃক ধন সমানভাগে বিভক্ত হবে—এই ব্যবস্থা।

২০৬। বিদ্যাধনন্তু যদ্‌যস্য তৎ তস্যৈব ধনং ভবেৎ।

মৈত্ৰ্যমৌদ্বাহিকঞ্চৈব মাধুপর্কিকমেব চ ॥

বিদ্যাদ্বারা অর্জিত ধন, বন্ধু থেকে লব্ধ ধন, বিবাহকালে (শ্বশুরাদি থেকে) লব্ধ ধন ও

ঋত্বিক্‌কর্মদ্বারা লব্ধ ধন যার তারই হবে (অর্থাৎ অন্য শরিকদের সঙ্গে বিভক্ত হবে না)।

২০৭। ভ্রাতৃণাং যস্তু নেহেত ধনং শক্তঃ স্বকর্মণা।

ন নির্ভাজ্যঃ স্বকাদংশাৎ কিঞ্চিদ্দও্বোপজীবনম্‌ ॥

ভ্রাতৃগণের মধ্যে নিজকর্মের দ্বারা (জীবিকার্জনে সক্ষম) যে ভ্রাতা (পৈতৃক) ধনের আকাঙ্ক্ষা করে না, তাকে (অপর ভ্রাতৃগণ) নিজ অংশ থেকে কিছু জীবিকাৰ্থে দিয়ে পৃথক করা সঙ্গত।

২০৮। অনুপঘ্নন্ পিতৃদ্ৰব্যং শ্রমেণ যদুপাৰ্জয়েৎ।

স্বয়মীহিতলব্ধং তন্নাকামো দাতুমর্হতি ॥

পৈতৃক ধন ব্যয় না করে নিজের পরিশ্রমলব্ধ যে ধন, ইচ্ছা না করলে (তার ভাগ) অপরকে দিতে হয় না।

২০৯। পৈতৃকন্তু পিতা দ্রব্যমনবাপ্তং যদাপ্নুয়াৎ।

ন তৎ পুত্রের্ভজেৎ সাৰ্ধমকামঃ স্বয়মর্জ্জিতম্ ॥

যে পৈতৃকধন পিতা (উত্তরাধিকার সূত্রে) পাননি (তৎপিতাকর্তৃক উপেক্ষিত এবং তার উদ্ধার করা) সেই ধন তাঁর স্বয়মর্জিত ; ঐ ধন ইচ্ছা না করলে পুত্রদের সঙ্গে ভাগ করতে হয় না।১৭

২১০। বিভক্তাঃ সহ জীবন্তো বিভজেরন্‌ পুনর্যদি।

সমস্ত বিভাগঃ স্যাজ্যৈষ্ঠ্যং তত্র ন বিদ্যতে ॥

ভ্রাতৃগণ বিভক্ত হয়ে একত্র বাস করার পরে যদি পুনরায় সম্পত্তিভাগ করে, তাহলে সমান ভাগ হবে, জ্যেষ্ঠ পুত্রের (পূর্বোক্ত বিধি অনুসারে) অধিক প্রাপ্তি হবে না।

২১১। যেষাং জ্যেষ্ঠঃ কনিষ্ঠো বা হীয়েতাংশপ্রদানতঃ।

ম্রিয়েতোন্যতারো বাপি তস্য ভাগো ন লুপ্যতে ॥

ভ্রাতৃগণের জ্যেষ্ঠ বা কনিষ্ঠ (সন্ন্যাসাদিহেতু) নিজ ভাগ থেকে বঞ্চিত বা মৃত হলে তার ভাগ লুপ্ত হয় না।

২১২। সোদর্য্যা বিভজেরংগুং সমেত্য সহিতাঃ সমম্।

ভ্রাতরো যে চ সংসৃষ্ট ভগিন্যশ্চ সনাভয়ঃ ॥

সহোদর ভ্রাতা, সংসৃষ্ট১৮ ভ্রাতা এবং সহোদরা ভগিনীগণ একত্র হয়ে উক্ত অংশ সমানভাবে ভাগ করে নিবে।

২১৩। যো জ্যেষ্ঠো বিনিকুর্ব্বীত লোভাদ্‌ ভ্রাতৃন্‌ যবীয়সঃ।

সোহজ্যেষ্ঠঃ স্যাদভাগশ্চ নিয়ন্তব্যশ্চ রাজভিঃ ॥

যে জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা লোভ হেতু কনিষ্ঠ ভ্রাতৃগণকে বঞ্চনা করে, সে অজ্যেষ্ঠ, সে জ্যেষ্ঠের প্রাপ্য অতিরিক্ত ধন পাবে না এবং রাজা কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হবে।

২১৪। সৰ্ব্ব এব বিকৰ্ম্মস্থা নার্হন্তি ভ্রাতরো ধনম্।

ন চাদত্বা কনিষ্ঠেভ্যো জ্যেষ্ঠঃ কুর্ব্বীত যৌতকম্ ॥

সকল নিষিদ্ধকৰ্মকারী ভ্রাতা ধনপ্রাপ্তির অযোগ্য। কনিষ্ঠ ভ্রাতাদের না দিয়ে জ্যেষ্ঠ সাধারণ ধন থেকে নিজের খ্যাতির জন্য অসাধারণ দান করবে না।

২১৫। ভ্রাতৃণামবিভক্তানাং যদুত্থানং ভবেৎ সহ।

ন পুত্ৰভাগং বিষমং পিতা দদ্যাৎ কথঞ্চন ॥

অবিভক্ত ভ্রাতৃগণের যৌথভাবে যদি ধনোপার্জন হয়, তাহলে পিতা পুত্রদের মধ্যে ধনবিভাগ কালে কোন প্রকারেই অসমান ভাগ করবেন না।

২১৬। ঊর্দ্ধং বিভাগাজ্জাতন্ত্র পিমেব হরেদ্ধনম্‌।

সংসৃষ্টান্তেন বা যে স্যুর্বিভজেত স তৈঃ সহ ॥ ২১৬

সম্পত্তিভাগের পরে জাত পুত্র পিতার ধনই পাবে (অন্যান্য ভ্রাতৃগণ কর্তৃক প্রাপ্ত ধন থেকে কিছু পাবে না)। অথবা পিতার সঙ্গে যে পুত্রগণ সংসৃষ্ট থাকবে তাদের সঙ্গে সে (সংসৃষ্ট ধন) ভাগ করে নিবে।

২১৭। অনপত্যস্য পুত্রসা মাতা দায়মবাপ্নুয়াং।

মাতৰ্য্যপি চ বৃত্তায়াং পিতৃর্মাতা হরেদ্ধনম ॥

নিঃসন্তান পুত্রের সম্পত্তি মাতা নিবেন। মাতাও মৃত হলে পিতামহী সেই ধন পাবেন।

২১৮। ঋণে ধনে চ সৰ্ব্বস্মিন্ প্রবিভক্তে যথাবিধি।

পশ্চাদ্দৃশ্যেত যৎকিঞ্চিৎ তৎ সৰ্ব্বং সমতাং নয়েৎ ॥

সকল ঋণ ও ধন বিভক্ত হওয়ার পরে যা কিছু পাওয়া যায়, তার সবই সমানভাবে বিভক্ত হবে।

২১৯। বং পত্ৰমলঙ্কারং কৃতান্নমুদকং স্ত্রিয়ঃ।

যোগক্ষেমং প্রচাৰঞ্চ ন বিভাজ্যং প্রচক্ষতে ॥

বস্ত্র, বাহন, অলংকার, কৃতান্ন, (কৃপাদির সর্বোগ্য) জল, স্ত্রী (দাসী প্রভৃতি) যোগক্ষেম (মন্ত্ৰিপুরোহিতাদি), গবাদির চারণভূমি—এইগুলিকে অবিভাজ্য বলা হয়েছে।

২২০। অমুক্তো বিভাগে যঃ পুত্রণাঞ্চ ক্রিয়াবিধিঃ।

ক্রমশঃ ক্ষেত্ৰজাদীনাং দৃতধর্মান্ নিবোধত ॥

এই দায়বিভাগ ও (ক্ষেত্ৰজাদি) পুত্রগণের ক্রমে বিভাগব্যবস্থা বললাম। দ্যূতধর্ম (জুয়াখেলার নিয়ম) শোন।

২২১। দ্যূতং সমাহবয়ঞ্চৈব রাজা রাষ্ট্রান্নিবারয়েৎ।

রাজাকরণাবেতে দ্বৌ দোষৌ পৃথিবীক্ষিতাম্ ॥

দ্যুত (বাজি রেখে পাশা খেলা প্রভৃতি) ও সমাহবয় (পশু নিয়ে জুয়া খেলা) রাজা রাজ্যে নিষেধ করবেন। এই দুই দোষ রাজাদের রাজ্যনাশকারী।

২২২। প্রকাশমেতৎ তাস্কৰ্যং যদ্দেবনসমাহ্বযৌ।

তয়োর্নিত্যং প্রতীঘাতে নৃপতির্যত্নবান্ ভবেৎ ॥

দ্যূত ও সমাহুয় প্রকাশ্য চুরি। এই দুইটির নিবারণে রাজা সর্বদা সচেষ্ট হবেন।

২২৩। অগ্রাণিভিষৎ ক্রিতে তল্লোকে দতমুচ্যতে।

প্রাণিভিঃ ক্রিয়তে য স বিজ্ঞেয়ঃ সমাহুয়ঃ ॥

(অক্ষশলাকাদি) অপ্রাণী দিয়ে যা অনুষ্ঠিত হয়, তা লোকের মধ্যে দূত বলে অভিহিত হয়, (কুক্কুটাদি) প্রাণী দিয়ে যা হয়, তা সমায় নামে জ্ঞেয়।

২২৪। দ্যূতং সমাহুয়ঞ্চৈব যঃ কুয্যাৎ কারয়েত বা।

তান্‌ সর্ব্বান্ ঘাতয়েদ্রাজা শূদ্রাংশ্চ দ্বিজলিঙ্গিনঃ ॥

যে দ্যূত বা সমায় করে বা করায় তাদের সকলের এবং (দ্বিজচিহ্ন যজ্ঞোপবীতাদি ধারী)। শূদ্রগণের রাজা হস্তচ্ছেদনাদি করবেন।

২২৫। কিতবান্‌ কুশীলবান্‌ কুরান পাষণ্ডস্থাংশ্চ মানবান্‌।

বিকৰ্ম্মস্থান্ শোণ্ডিকাংশ্চ ক্ষিপ্রং নির্বাসয়েৎ পুরাৎ ॥

কিতব (তাদিসেবী), কুশীলব (নর্তক গায়ক), বেদবিদ্বেষী, শ্রুতিস্মৃতিবাহ্যত্ৰতধারী, পরকর্মজীবী এবং মদ্যকারকে শীঘ্র রাজ্য থেকে নির্বাসিত করবেন।

২২৬। এতে রাষ্ট্রে বর্তমান রাজ্ঞঃ প্রচ্ছন্নতস্করাঃ।

বিকর্মক্রিয়য়া নিত্যং বাধন্তে ভদ্রিকাঃ প্রজাঃ ॥

রাজার রাজ্যে এই গুপ্ত চোরেরা বঞ্চনাত্মক কার্যের দ্বারা সজ্জনদের পীড়া দেয়।

২২৭। দ্যুতমেতৎ পুরাকল্পে দৃষ্টং বৈরকরং মহৎ।

তস্মাদ্‌দ্যূতং ন সেবেত হাস্যাৰ্থমপি বুদ্ধিমান্ ॥

এই দ্যুত প্রাচীন কালে অতি শত্রুতাজনক বলে বিবেচিত হয়েছিল। সুতরাং বুদ্ধিমান ব্যক্তি আনন্দের জন্যও ন্যূতক্রীড়া করবেন না।

২২৮। প্রচ্ছন্নং বা প্রকাশং বা তন্নিষেবেত যো নরঃ।

তস্য দণ্ডবিকল্পঃ স্যাদ্‌ষথেষ্টং নৃপতেস্তথা ॥

যে গোপনে বা প্রকাশ্যে তা করে, তার দণ্ড ব্যবস্থা রাজার ইচ্ছামত হবে।

২২৯। ক্ষত্রবিট্‌দ্ৰযোনিস্তু দণ্ডংদাতুমশকুবন্‌।

আণ্যং কর্মণা গচ্ছেদ্বিপ্রো দদাচ্ছনৈঃ শনৈঃ ॥

ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র দণ্ডদানে অক্ষম হলে কাজ করে ঋণমুক্ত হবে, (অক্ষম) ব্রাহ্মণ ধীরে ধীরে পরিশোধ করবেন।

২৩০। স্ত্রীবালোন্মত্তবৃদ্ধানাং দরিদ্রাণাঞ্চ রোগিণম্।

শিফাবিদলরজ্জাদ্যৈর্বিদধ্যাপতির্দমম্ ॥

স্ত্রী, বালক, উন্মত্ত, বৃদ্ধ, দরিদ্র ও রোগীকে শিফা,১৯ বেণুদল (মেধাতিথি—বৃক্ষত্বক্), দড়ি প্রভৃতি দিয়ে রাজা শাস্তি দিবেন.

২৩১। যে নিযুক্তাস্তু কাৰ্যেষু হন্যুঃ কাৰ্য্যাণি কার্ষিণা।

ধোষ্মণা পচ্যমানাস্তান্ নিঃস্বান্ কারয়েন্নৃপঃ ॥

যারা বিচার পর্যবেক্ষণাদি কার্যে (উৎকোচ) ধনের উত্তাপে (রাজা কর্তৃক) নিযুক্ত হয়ে বিচারপ্রার্থী লোকদের কার্য নষ্ট করে, তাদের রাজা নিঃস্ব করে দিবেন।

২৩২। কূটশাসনকর্তৃংশ্চ প্রকৃতীনাঞ্চ দূষকান্।

স্ত্রীবালত্ৰাহ্মণমাংশ্চ হন্যাদ্দিট্সবিনস্তথা ॥

যারা রাজাজ্ঞাপত্রে মিথ্যাকথা লেখে, অমাত্যদের মধ্যে ভেদসৃষ্টি করে, স্ত্রীলোক, বালক বা ব্রাহ্মণ হত্যা করে, তাদেরও শত্রুসেবীকে রাজা হত্যা করবেন।

২৩৩। তীরিতঞ্চানুশিষ্টঞ্চ যত্র ক্কচন যদ্ভবেৎ।

কৃতং তদ্ধর্মতো বিদ্যান্ন তদ্ভূয়ো নিবৰ্তয়েৎ ॥

যে মামলা শেষ হয়ে গেছে, যাতে দণ্ড নির্ণীত হয়েছে, ধর্মানুসারে তার নিষ্পত্তি হয়েছে বলে জানবে ; পুনরায় সেই মামলার বিচার করবেন না।

২৩৪। অমাত্যাঃ প্রাড়্‌বিবাকো বা যৎ কুর্য্যুঃ কাৰ্য্যমন্যথা।

তৎস্বয়ং নৃপতিঃ কুর্য্যাঃ তান্ সহস্রঞ্চ দণ্ডয়েং ॥

অমাত্য বা বিচারক যে বিচার অন্যায়ভাবে করে, তা রাজা নিজে করবেন এবং তাদের এক হাজার পণ দণ্ড দিবেন।

২৩৫। ব্রহ্মহা চ সুরাপশ্চ স্তেয়ী চ গুরুতল্লগঃ।

এতে সৰ্ব্বে পৃথগ্ জ্ঞেয়া মহাপাতকিনো নরাঃ ॥

ব্ৰহ্মহত্যাকারী, সুরাপায়ী,২০ চোর,২১ গুরুদারগামী—এরা প্রত্যেকে মহাপাতকী বলে জ্ঞেয়।

২৩৬। চতুর্ণামপি চৈতেষাং প্রায়শ্চিত্তমকুর্বতাম্।

শারীরং ধনসংযুক্তং দণ্ডং ধর্ম্যং প্রকল্পয়েত্ ॥

এই চারজন প্রায়শ্চিত্ত না করলে শাস্ত্রানুসারে এদের শারীরিক শাস্তি ও ধনদণ্ড বিধান করবেন।

২৩৭। গুরুতল্পে ভগঃ কাৰ্যঃ সুরাপানে সুরাধ্বজঃ।

স্তেয়ে চ শ্বপদং কাৰ্য্যং ব্রহ্মণ্যশিরাঃ পুমান্ ॥

গুরুপত্নীগমনে অপরাধীর কপালে স্ত্রীযোনিচিহ্ন, সুরাপানে সুরাপাত্রচিহ্ন, চৌর্যে কুকুরচিহ্ন, ব্রহ্মহত্যায় কবন্ধ চিহ্ন এঁকে দিতে হয়।

২৩৮। অসম্ভোজ্যা হাসংযাজ্যা অসম্পাঠ্যবিবাহিনঃ।

চরেয়ূঃ পৃথিবীং দীনাঃ সৰ্ব্বধর্মবহিষ্কৃতাঃ ॥

এদের সঙ্গে কেউ ভোজন করবে না, এদের যাজন করবে না, এদের অধ্যাপনা করবে না, এদের সঙ্গে বিবাহসম্বন্ধ করবে না। সকল ধর্মবহির্ভূত ও অতি দুঃখিত হয়ে এরা পৃথিবীতে বিচরণ করবে।

২৩৯। জ্ঞাতিসম্বন্ধিভিস্তুতে ত্যক্তব্যাঃ কৃতলক্ষণাঃ।

নির্দ্দয়া নির্নমস্কারাস্তন্মনোরনুশাসনম্॥

এই চিহ্নিত ব্যক্তিগণ জ্ঞাতিও মাতুলাদিকর্তৃক পরিত্যাজ্য। এদের দয়া বা নমস্কার করা উচিত নয়—এই মনুর আদেশ।

২৪০। প্রায়শ্চিত্তস্তুকুর্ব্বাণাঃ সর্ব্ববর্ণা যথোদিতম্।

নাঙ্ক্যা রাজ্ঞা ললাটে স্যুর্দাপ্যাস্তৃত্তমসাহসম্‌ ॥

সকল বর্ণের (অপরাধী) শাস্ত্রোক্ত প্রায়শ্চিত্ত করলে তারা রাজা কর্তৃক (উক্ত ভগাদি চিহ্নে) চিহ্নিত হবে না; তাদের উত্তম সাহস দণ্ড দিতে হবে

২৪১। আগঃসু ব্রাহ্মণস্যৈব কায্যো মধ্যমসাহসঃ।

বিবাসস্যা বা ভবেদ্ৰাষ্ট্রাৎ সদ্রব্যঃ সপরিচ্ছদঃ ॥

উক্ত অপরাধে (সগুণ) ব্রাহ্মণের মধ্যম সাহস দণ্ড বিধেয় অথবা (ইচ্ছাকৃত অপরাধে) রাজ্য থেকে ধনধান্যাদি পরিচ্ছদ সহ দেশ থেকে নির্বাসনযোগ্য।

২৪২। ইতরে কৃতবন্ত পাপান্যেতান্যকামতঃ।

সর্বস্বহারমর্হন্তি কামতন্তু প্রবাসনম্ ॥

অন্যান্য বর্ণের লোকেরা এই সকল পাপ অজ্ঞাতসারে করলে তাদের সর্বস্ব হরণ করতে হবে ; ইচ্ছাকৃত অপরাধে তাদের নির্বাসন হবে।

২৪৩। নাদদীত নৃপঃ সাধুর্মহাপাতকিনো ধনম্‌।

আদদানন্তু তল্লোভাত্তেন দোষেণ লিপ্যতে ॥

সজ্জন রাজা মহাপাপীর ধন (দণ্ডরূপে) গ্রহণ করবেন না; লোভহেতু গ্রহণ করলে সেই দোযে দৃষিত হবেন।

২৪৪। অন্সু প্রবেশ্য তং দণ্ডং বরুণায়োপপাদয়েৎ।

শ্রুতবৃত্তোপপন্নে বা ব্রাহ্মণে প্রতিপাদয়েৎ ॥

(মহাপাপী থেকে লব্ধ) দণ্ড জলে নিমজ্জিত করে বরুণকে দিবেন অথবা বিদ্যা ও শীল সম্পন্ন ব্রাহ্মণকে দিবেন।

২৪৫। ঈশো দণ্ডস্য বরুণা রাজ্জং দণ্ডধরো হি সঃ।

ঈশঃ সর্ব্বস্য জগতে ব্রাহ্মণো বেদপারগঃ ॥

বরুণ দণ্ডের অধীশ্বর, কারণ, তিনি রাজাদের দণ্ডধর। বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ সমগ্র জগতের পতি।

২৪৬- যত্র কর্জ্জয়াতে রাজা পাপকৃদ্‌ভ্যো ধনাগমম্।

২৪৭ তত্র কালেন জায়ত্তে মানব দীর্ঘজীবিনঃ ॥

নিপদান্তে চ শস্যানি যথোপ্তানি বিশাং পৃথক্‌।

বলাশ্চ ন প্রমীয়ন্তে বিকৃতং ন চ জায়তে ॥

যেখানে রাজা পাপাচারীর ধন গ্রহণ করেন না, সেখানে সম্পূর্ণ কালে মানুষ জন্মে ও দীরঘ হয়। বৈশ্যগণ যে প্রকারে ধান্যাদি বপন করে, সেই প্রকারে পৃথক্‌ পৃথক্ ঐ সকল শস্য উন্মো, বালকগণ মলে না, (কাণ খঞ্জাদি) বিকলাঙ্গ লোক জন্মে না।

২৪৮। ব্রাহ্মণাত্মাপমান তু কামাদবরবর্ণজম্।

হ্যাচ্চিত্ৰৈর্বধোপায়েরুদ্ধেজনকরৈর্নৃপঃ ॥

শদ্র ব্রাহ্মণের (শারীরিক বা ধনগ্রহণে) পীড়া দিলে তাকে (নাসিকাকর্ণ ছেদনাদি) নানা উদ্বেগজনক উপায়ে রাজা বধ করবেন।

২৪৯। যাবানবধ্যসা বাধে তাবাম্বধস্য মোক্ষণে।

অধর্মো নৃপতেদৃষ্টে ধর্মন্তু বিনিচ্ছতঃ ॥

অবধের বধ বাজার যে অধর্ম হয়, বধ্যর মোচনে তাই হয় ; (শাস্ত্রানুসারে) দণ্ডদানে ধর্ম হয়।

২৫০। উদিতোহয়ং বিস্তরশো মিথো বিবদমানমোঃ।

অষ্টাদশসু মার্গেষু বাবহারস্য নির্ণয়ঃ ॥

পরস্পর বিবদমান ব্যক্তিদের (ঋণাদানাদি) অষ্টাদশ বিবাদপদে এই ব্যবহারনির্ণয় সবিস্তার বলা হল।

২৫১। এবং ধৰ্ম্মাণি কায্যাণি সম্যক্ কুন্মহীপতিঃ।

দেশানলা লিপ্সেত লক্কাংশ্চ পবিপালয়েৎ ॥

এইভাবে রাজা ধর্মসম্মত কার্য উপযুক্তভাবে করে অলব্ধ দেশ লাভ করতে ইচ্ছা করবেন এবং লন্ধৰাজা পালন করবেন।

২৫২। সম্যঙ্‌নিবিষ্টদেশ কৃতদুৰ্গশ্চ শাস্ত্ৰতঃ।

কণ্টকোদ্বরণে নিমাতিষ্ঠ্যেদ্‌যত্নমুত্তমম্ ॥

উপযুক্ত স্থান আশ্রয় করে শাস্ত্রানুসারে দুর্গ নির্মাণপূৰ্ব্বক (চোরাদি ক্ষুদ্র) শত্রু দমনে সর্বদা অতিশয় যত্ন করবেন।

২৫৩। রক্ষণাদার্যবৃত্তানাং কণ্টকানাঞ্চ শোধনাৎ।

নবেন্দ্রাস্রিদিং যাতি প্রজাপালনতৎপরাঃ ॥

প্রজাপালনে তৎপর রাজগণ সদাচারী ব্যক্তিদের রক্ষা ও চোরাদির দমন করে স্বর্গে গমন করেন।

২৫৪। অশসংস্করান্‌ যন্তু বলিং গহ্ণতি পার্থিবঃ।

তসা প্রক্ষুভ্যতে রাষ্ট্রং গচ্চি পরিহীয়তে ॥

যে রাজা চোরদের শাসন না করে রাজস্ব গ্রহণ করেন, তাঁর রাজ্য বিক্ষুব্ধ হয় এবং তিনি স্বর্গলাভের অযোগ্য হন।

২৫৫। নিয়ন্তু ভবেদ্‌যস্য রাষ্ট্রং বাহুবলাশ্রিতম্।

তস্য তদ্ধর্দ্ধতে নিত্যং সিচ্যমান ইব দুমঃ ॥

রাজার বাহুবলে (চোরাদি থেকে) যাঁর রাজ্য নির্ভয় হয়, তাঁর সেই রাজ্য সর্বদা জলসিক্ত বৃক্ষের ন্যায় বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।

২৫৬। দ্বিবিধাংস্তস্করান্‌ বিদ্যাৎ পরদ্ৰব্যাপহারকান্‌।

প্রকাশাংস্টাপ্রকাশাংশ্চ চারচক্ষুর্মহীপতিঃ ॥

পরের দ্রব্য অপহরণকারী চোর দুই প্রকার। গুপ্তচররূপ চক্ষুযুক্ত রাজা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য চোরদের জানবেন।

২৫৭। প্রকাশবঞ্চকাস্তেষাং নানাপণ্যোপজীবিনঃ।

প্রচ্ছন্নবঞ্চকাত্বেতে যে স্তেনাবিকাদয়ঃ ॥

তাদের মধ্যে নানা পণ্যদ্রব্যের দ্বারা জীবিকার্জনকারীরা প্রকাশ্য প্রতারক। যারা (সিঁধকাটা প্রভৃতি উপায়ে) চুরি করে এবং বনে আশ্রয় নিয়ে লোকের ধন হরণ করে, তারা গুপ্তচোর।

২৫৮- উৎকোচকাশ্চোপধিকা বঞ্চকাঃ কিতবাস্তথা।

২৬০। মঙ্গলাদেশবৃত্তাশ্চ ভদ্রাশ্চেক্ষণিকৈঃ সহ ॥

অসম্যক্কারিণশ্চৈব মহামাত্রাশ্চিকিৎসকাঃ।

শিল্পোপচারযুক্তাশ্চ নিপুণাঃ পণ্যঘোষিতঃ ॥

এবমাদীন্‌ বিজানীয়াৎ প্রকাশানলোককটকান্‌।

নিগূঢ়চারিণশ্চান্যাননার্য্যানার্য্যলিঙ্গিনঃ ॥

যারা বিচারপ্রার্থীর নিকট থেকে উৎকোচ গ্রহণ করে অন্যায় কাজ করে, যারা ভয় দেখিয়ে ধনার্জন করে, যারা স্বর্ণ প্রভৃতি নির্মিত দ্রব্য গ্রহণ করে তাতে অন্য দ্রব্য মিশ্রিত করে, যারা পাশা বা পণ্য নিয়ে জুয়া খেলে, যারা ‘ধনপুত্ৰলক্ষ্মীলাভ হবে’ এইরূপ মিথ্যাবাক্যে লোককে তুষ্ট করে জীবিকার্জন করে, যারা বাইরে সদাচারী অথচ প্রচ্ছন্নপাপী, যারা হস্তরেখাদি দেখে শুভাশুভ ফলের কথা বলে জীবিকার্জন করে, যারা অনুপযুক্তভাবে হস্তিশিক্ষা দেয়, চিকিৎসক, যার শিল্পোপায়ে উৎসাহ দিয়ে ধনগ্রহণ করে, (পরের বশীকরণাদিতে) নিপুণ গণিকা—এইরূপ প্রকাশ্য লোকবঞ্চকদের, প্রচ্ছন্নভাবে বিচরণকারী (শূদ্ৰাদিকে) এবং যারা ব্রাহ্মণাদির বেশ ধারণ করে ধন অর্জন করে তাদের (গুপ্তচর দিয়ে জানবেন।

২৬১। তান্ বিদিত্বা সুচরিতৈর্গূঢ়স্তকর্মারিভিঃ।

চারৈশ্চানেকসংস্থানৈঃ প্রোৎসাদ্য বশমানয়েৎ ॥

ঐ বঞ্চকগণকে সভ্য ও প্রচ্ছন্ন তাদৃশ কর্মকারীকে দিয়ে (যেমন, বণিকদের চৌর্যে বণিকে দিয়ে) এবং (সপ্তমাধ্যায়ে উক্ত কাপটিকাদি) অনেক স্থানস্থিত চরের দ্বারা জেনে তাদের সর্বস্ব হরণ করে নিজবশে আনবেন।

২৬২। তেষাং দোষানভিখ্যাপ্য স্বে স্বে কর্মণি তত্ত্বতঃ।

কুব্বীত শাসনং রাজা সম্যক্ সারাপরাধতঃ ॥

তাদের নিজ নিজ কর্মে প্রকৃত দোষ ঘোষণা করে তাদের অপরাধ, ধন ও শরীরাদির সামর্থ্য অনুসারে শাসন করবেন।

২৬৩। ন হি দণ্ডাদৃতে শক্যঃ কর্ওুং পাপবিনিগ্রহঃ।

স্তেনানাং পাপবুদ্দীনাং নিভৃতং চরতাং ক্ষিতৌ ॥

পৃথিবীতে নির্জনে বিচরণকারী পাপবুদ্ধি চোরদের, দণ্ড ব্যতিরেকে, পাপকার্য দমন করা যায় না।

২৬৪- সভাপ্রপাপুপশালাবেশদ্যানুবিক্রয়াঃ।

২৬৬। চতুষ্পথাশ্চৈত্যবৃক্ষাঃ সমাজাঃ প্রেক্ষণানি চ ॥

জীণোদ্যানান্যরণ্যানি কারুকাবেশনানি চ ॥

শূন্যানি চাপ্যগারাণি বনান্যুপবনানি চ ॥

এবংবিধান্‌ নৃপো দেশান্ গুল্মৈঃ স্থাবরজঙ্গমৈঃ।

তঙ্করপ্রতিযেধার্থং চারৈশ্চাপ্যনুচারয়েৎ ॥

সভা, জলদানগৃহ, পিষ্টকাদিবিক্রয়গৃহ, বেশ্যালয়, মদ্যা বিক্রয়স্থান, চতুষ্পথ, প্রসিদ্ধ বৃক্ষমূল, জনসমাগমস্থান, প্রেক্ষণ (প্রেক্ষাগৃহ?), জীর্ণ উদ্যান, শিল্পগৃহ, শূন্যগৃহ, আম্রাদিন, উপবন—এইরূপ স্থানগুলিতে রাজা পদাতিক সৈন্য, অনেকস্থানস্থিত ও সঞ্চরমাণ চর, চোরদের নিবৃত্ত করার জন্য, নিযুক্ত করবেন।

২৬৭। তৎসহায়ৈরনুগতৈর্নানাকর্মপ্রবেদিভিঃ।

বিদ্যাসাদয়েচ্চৈব নিপুণৈঃ পূৰ্ব্বতস্করৈঃ ॥

যারা ঐ সকল ব্যক্তির অনুগত এবং যারা চোরাদির (সিঁধকাটা প্রভৃতি) নানা কাজ সম্বন্ধে অভিজ্ঞ এইরূপ পূর্বচোরদের নিকট থেকে চোরাদি সম্বন্ধে জানবেন এবং তাদের সর্বস্ব হরণ করবেন।

২৬৮। ভক্ষ্যভোজ্যোপদেশৈশ্চ ব্রাহ্মণানাঞ্চ দৰ্শনৈঃ।

শৌর্য্যকৰ্ম্মাপদেশৈশ্চ কুর্য্যুস্তেষাং সমাগমম্ ॥

সেই চরস্বরূপ পূর্বচোরগণ (নানা স্বাদু খাদ্যদ্রব্য, ব্রাহ্মণদর্শন, বীরত্বপূর্ণ কার্য দর্শন প্রভৃতির ছলে ঐ চোরদের একত্র সমবেত করবে।

২৬৯। যে তত্র নেপসর্পেযুর্মলপ্রণিহিতাশ্চ যে।

তান্ প্ৰসহ্য নৃপো হন্যাৎ সমিত্রজ্ঞাতিবান্ধবান্ ॥

যারা (শাস্তির ভয়ে) উক্তস্থানে আসবে না, যারা রাজপ্রেরিত চরস্বরূপ পূর্বচোরের সঙ্গে (দণ্ডভয়ে) মিলিত হবে না, রাজা বলপূর্বক তাদের, বন্ধু, জ্ঞাতি ও অন্যান্য স্বজনসহ হত্যা করবেন।

২৭০। ন হোঢ়েন বিনা চৌরং ঘাতয়েদ্ধার্মিকো নৃপঃ।

সহোঢ়ং সোপকরণং ঘাতয়েদবিচারয়ন্‌ ॥

হৃতদ্রব্য, সন্ধিচ্ছেদোপকরণ ব্যতিরেকে (চৌর্য সম্বন্ধে নিশ্চিত না হয়ে) ধার্মিক রাজা কাউকে হত্যা করবেন না। হৃতদ্রব্য ও চৌর্যের উপকরণ কারও কাছে থাকলে তাকে নির্বিচারে হত্যা করবেন।

২৭১। গ্রামেস্বপি চ যে কেচিদ্দৌরাণাং ভক্তদায়কাঃ।

ভাণ্ডাবকাশদাশ্চৈব সর্ব্বাংস্তানপি ঘাতয়েৎ ॥

গ্রামসমূহেও চোরদের যারা খেতে দেয়, চোরের উপযুক্ত ভাণ্ডাদি এবং আশ্রয় দেয়, তাদের সবাইকেও বধ করবেন।

২৭২। রাষ্ট্রেষু রক্ষাধিকৃতান্ সামন্তাংশ্চৈব চোদিতান্‌।

অভ্যাঘাতেষু মধ্যস্থাঞ্ছিষ্যাদ্দৌরানিব দ্রুতম্ ॥

রাজ্যে রক্ষাকার্যে নিযুক্ত ও সীমান্তবাসী যদি চোরকার্যে মধ্যস্থ হয়, তাহলে তাদের চোরের ন্যায় শীঘ্র দণ্ড দিবেন।

২৭৩। যশ্চাপি ধর্মসময়াৎ প্রতো ধর্মজীবনঃ।

দণ্ডেনৈব তমপপ্যাষেৎ স্বকাদ্ধৰ্ম্মাদ্ধি বিচ্যুতম্ ॥

যে (যজনাদি) ধর্মকার্যের দ্বারা জীবিকার্জন করে, সে স্বধর্মচ্যুত হলে তাকেও দণ্ডদ্বারা পীড়া দিবেন।

২৭৪। গ্রামঘাতে হিতাভঙ্গে পথি মোষাভিদর্শনে।

শক্তিতে নাভিধাবন্তো নিৰ্বাস্যাঃ সপরিচ্ছদাঃ ॥

চোরাদি গ্রামে লুঠ করলে, জলের বাঁধ ভাঙ্গলে, পথে চুরি দেখলে যারা প্রতিকারার্থে যথাশক্তি ধাবিত হয় না, তারা (গো-অশ্যাদি) পবিচ্ছদ সহ নির্বাসনের যোগা।

২৭৫। রাজ্ঞঃ কোষাপহর্তৃংশ্চ প্রতিকূলেষু চ স্থিতান্‌।

ঘাতয়েদ্বিবিধৈর্দণ্ডররীণাঞ্চোপজাপকান্ ॥

রাজার ধনাগার থেকে যারা ধন চুরি করে, রাজার বিরুদ্ধাচরণ করে, রাজার সঙ্গে শত্রুর শত্রুতা বৃদ্ধি করে, তাদের (হাত,পা, জিভ কাটা প্রভৃতি) নানাপ্রকার দণ্ডদ্বারা হত্যা করবেন।

২৭৬। সন্ধিং ছিত্ত্বা তু যে চৌর্য্যং রাত্রৌ কুৰ্ব্বত্তি তস্করাঃ।

তেষাং ছিত্ত্বা নৃপো হস্তে তীক্ষশূলে নিবেশয়েৎ ॥

যে চোরেরা সিঁধ কেটে রাত্রে চুরি করে, রাজা তাদের হাত দুটি কেটে তীক্ষ্ণ শূলে স্থাপন করবেন।

২৭৭। অঙ্গুলী গ্রন্থিভেদস্য চ্ছেদয়ে প্রথমে গ্রহে।

দ্বিতীয়ে হস্তচরণৌ তৃতীয়ে বধমর্হতি ॥

গাঁটকাটার প্রথম অপরাধে তার (অঙ্গুষ্ঠ ও তর্জনী এই দুইটি আঙ্গুল ছেদন করবেন, দ্বিতীয় অপরাধে তার হাত পা কাটবেন, তৃতীয় অপরাধে সে বধ্য।

২৭৮। অগ্নিদান্‌ ভক্তদাংশ্চৈব তথা শাবকাশদান্‌।

সন্নিধাতৃংশ্চ মোষস্য হন্যাদ্দৌরমিবেশ্বরঃ ॥

যারা (গাঁটকাটাকে জেনে শুনে শীতনিবারণাদির জন্য) আগুন দেয়, খেতে দেয়, অস্ত্র ও আশ্রয় দেয় এবং যারা চোরাই মাল রাখে, তাদের রাজা চোরের ন্যায় বধ করবেন।

২৭৯। তড়াগভেদকং হন্যাদন্সু শুদ্ধবধেন বা।

যদ্বাপি প্রতিসংস্কৃয্যাদ্দাপ্যস্তূত্তমসাহসম্‌ ॥

যে (জনসাধারণের উপকারক) জলাশয় (বাঁধ ভাঙ্গা প্রভৃতি উপায়ে) নষ্ট করে, তাকে জলে ডুবিয়ে বা অন্য উপায়ে বধ করবেন। যদি (অপরাধী) পূর্বের ন্যায় মেরামত করে দেয়, তাহলে তাকে উত্তম সাহস দণ্ড দিবেন।

২৮০। কোষ্ঠাগারায়ুধাগারদেবতাগারভেদকান্‌।

হস্ত্যশ্ব-রথহর্তৃংশ্চ হন্যাদেবাবিচারয়ন্‌ ॥

যারা (রাজার ধান্যাদি) কোষ্ঠাগার, অস্ত্রাগার, দেবপ্রতিমাগৃহ নষ্ট করে অথবা যারা হস্তী, অশ্ব, রথ অপহরণ করে, তাদের নির্বিচারে হত্যা করবেন।

২৮১। যস্তু পূর্ব্বনিবিষ্টস্য তড়াগস্যোদকং হারেৎ।

আগমং বাপ্যপাং ভিদ্যাৎ স দাপ্যঃ পূৰ্ব্বসহসম্ ॥

যে (প্রজার জন্য) পূর্বে নির্মিত জলাশয়ের জল হরণ করে বা জল আসার পথ নষ্ট করে, তাকে প্রথম সাহস দণ্ড দিবেন।

২৮২। সমুৎসৃজেদ্ৰাজমার্গে যজ্বমেধ্যমনাপদি।

স দ্বৌ কার্ষপণৌ দদ্যাদমেধ্যঞ্চাশু শোধয়েৎ ॥

আপদ্‌কাল ভিন্ন অন্য সময়ে যে রাজপথে অপবিত্র দ্রব্য নিক্ষেপ করে, সে দুই কর্ষাপণ (দণ্ড) দিবে এবং অপবিত্র দ্রব্য পরিষ্কার করবে।

২৮৩। আপদগতোহথবা বৃদ্ধো গর্ভিণী বাল এব বা।

পরিভাষণমর্হত্তি তচ্চ শোধ্যমিতি স্থিতিঃ ॥

বিপন্ন, বৃদ্ধ, গর্ভবতী নারী বা বালক (ঐরূপ করলে) তিরস্কৃত হবে, সেই অপবিত্র দ্রব্য তারা পরিষ্কার করবে।

২৮৪। চিকিৎসকানাং সর্ব্বেষাং মিথ্যাপ্রচরতাং দমঃ।

অমানুষেষু প্রথমো মানুষেষু তু মধ্যমঃ ॥

যে কোন চিকিৎসক মিথ্যা চিকিৎসা করলে পশুর চিকিৎসাবিষয়ে প্রথম সাহস ও মানুষের বিষয়ে মধ্যম সাহস দণ্ড হবে।

২৮৫। সংক্রমবজযষ্টীনাং প্রতিমানাঞ্চ ভেদকঃ।

প্রতিকুর্য্যাচ্চ তং সৰ্ব্বং পঞ্চ দদ্যাচ্ছতানি চ ॥

সংক্রম (জলের উপর দিয়ে যাতায়াতের সুবিধার জন্য স্থাপিত কাষ্ঠ বা শিলা), রাজদ্বারাদিতে স্থাপিত চিহ্ন, পুকরিণী প্রভৃতিতে স্থাপিত যষ্টি এবং দেবপ্রতিমার নাশক ঐগুলি নূতন করে করবে এবং পাঁচ শত পণ দণ্ড দিবে।

২৮৬। অদূষিতানাং দ্রব্যাণাং দূষণ ভেদনে তথা।

মণীনাপবোধে চ দণ্ডঃ প্রথমসাহসঃ ॥

অদূষিত দ্রব্যের দূষণে, ভেদানে ও মণি বিদারণে প্রথম সাহস দণ্ড হবে।

২৮৭। সমৈর্হি বিষমং যন্তু চরদ্বৈ মূল্যতোহপি বা।

স প্রাপ্নুয়াদ্দমং পূৰ্ব্বং নরো মধ্যমমেব বা ॥

যে সমান মূল্যের দ্রব্য এক ব্যক্তিকে বহু মুল্যে দেয়, অন্য ব্যক্তির নিকট অল্পমূল্যে বিক্রয় করে, সে প্রথম বা মধ্যম সাহস দণ্ডনীয় হবে।

২৮৮। বন্ধনানি চ সবণি বা মার্গে নিরেশয়েৎ।

দুঃখিতা যত্র দৃশ্যেরন্‌ বিকৃতাঃ পাপকারিণঃ ॥

সকল (কারাগারাদি) বন্ধনগৃহ রাজপথে স্থাপন করবেন, যাতে ক্ষুধা পিপাসায় অভিভূত, দীর্ঘকেশনখশ্মাশ্রযুক্ত পাপচারিগণকে (অন্য অন্যায়কারীরা) দেখতে পায় (ও দেখে নিবৃত্ত হয়)।

২৮৯। প্রাকারস্য চ ভেত্তারং পরিখাণাঞ্চ পুরকম্।

দ্বারাণাঞ্চৈব ভঙ্‌ক্তারং ক্ষিপ্রমেব প্রবাসয়েৎ ॥

যে প্রাকার ভেদ করে, পরিখা পূর্ণ করে ও তার দ্বার ভাঙ্গে তাকে শীঘ্র নির্বাসিত করবেন।

২৯০। অভিচারেষু সর্ব্বেষু কৰ্ত্তব্যো দ্বিশতো দমঃ।

মূলকর্মণি চানাপ্তেঃ কৃত্যাসু বিবিধাসু চ ॥

সকল অভিচারক্রিয়ায়২২ (মাতা পিতা ভার্যাদি ভিন্ন অন্য ব্যক্তিকর্তৃক) মোহ জন্মিয়ে ধনগ্ৰহণাদির জন্য বশীকরণে, উচ্চাটনাদি নানাপ্রকার ক্রিয়ায় দুই শত পণ দণ্ড কর্তব্য।

২৯১। অবীজবিক্রয়ী চৈব বীজোৎকৃষ্টং তথৈব চ।

মর্য্যাদাভেদকশ্চৈব বিকৃতং প্রাপ্নুয়াদ্বধম্ ॥

(যে ধানাদি অঙ্কুরিত হওয়ার অযোগ্য তার) বীজ (যোগ্য বলে) যে বিক্রয় করে, যে (নিকৃষ্ট বীজে কিছু উৎকৃষ্ট বীজ মিশিয়ে) উৎকৃষ্ট বলে বিক্রয় করে, যে গ্রামাদির সীমা নষ্ট করে, তারা (নাসাকর্ণচরণাদি কর্তনে) বধ্য হবে।

২৯২। সৰ্ব্বকণ্টকপাপিষ্ঠং হেমকাবস্তু পার্থিবঃ।

প্রবৰ্তমানমন্যায়ে চ্ছেদয়েল্লবশঃ ক্ষুরৈঃ ॥ ২৯২

সকল কণ্টকের (ক্ষুদ্র শত্রুর মধ্যে সবাপেক্ষা পাপী স্বর্ণকার অন্যায় কর্মে প্রবৃত্ত হলে তাকে রাজা ক্ষুর দিয়ে টুকরো টুকরো করে কাটবেন।

২৯৩। সীতাদ্ৰব্যাপহরণে শস্ত্রাণামৌষধস্য চ।

কালমাসাদ্য কার্যঞ্চ রাজা দণ্ডং প্রকল্পয়েৎ ॥

যে ভূমি কর্ষিত হচ্ছে তার কর্ষণের উপকরণ, অস্ত্র ও ঔষধের হরণে (উপযোগিতার কাল বা তা ছাড়া অন্য কাল প্রাপ্ত হয়ে প্রয়োজনানুসারে রাজা দণ্ড দিবেন।

২৯৪। মামাতো পুরং রাষ্ট্রং কোষদণ্ডেী সুহৃৎ তথা।

সপ্ত প্রকৃতয়ো হেতাঃ সপ্তাং রাজামুচ্যতে ॥

স্বামী (রাজা), অমাত্য, রাজধানী, রাষ্ট্র, কোষ, দণ্ড, মিত্র—এই সাতটি প্রকৃতি ; রাজ্যকে সপ্তাঙ্গ বলা হয়।

২৯৫। সপ্তানাং প্রকৃতীনান্তু রাজ্যস্যাসাং যথাক্রমম্‌।

পূৰ্ব্বং পূৰ্ব্বং গুরুতরং জানীয়াসনং মহৎ ॥

রাজ্যের এই সাত প্রকৃতির মধ্যে যথাক্রমে পূর্বপূর্বটিব ব্যসন (বিনাশ বা বিপন্নভাব পরপরটি অপেক্ষা গুরুতর।

২৯৬। সপ্তাঙ্গস্যেহ রাজস্য বিষ্টব্ধস্য ত্ৰিদণ্ডবৎ।

অন্যান্যগুণবৈশেষ্যান্ন কিঞ্চিদতিরিচ্যতে ॥

(যেমন চতুরঙ্গুল গোলোম বেষ্টন হেতু সন্ন্যাসীর) ত্রিদণ্ডের মধ্যে কোন দণ্ডের প্রাধান্য নেই, তেমন সপ্তাহের মধ্যে পরম্পর গুণবৈশিষ্ট্য হেতু কোন অঙ্গের শ্রেষ্ঠত্ব নেই। ২৩

২৯৭। তেষু তেষু তু কৃত্যেষু তত্তদঙ্গং বিশিষ্যতে।

যেন যৎ সাধ্যতে কাৰ্যং তত্তস্মিন্ শ্রেষ্ঠমুচ্যতে ॥

বিভিন্ন কার্যে বিভিন্ন অঙ্গ বৈশিষ্ট্য লাভ করে। যার দ্বারা যা সম্পন্ন হয়, তাই সেই কার্যে শ্রেষ্ঠ বলে উক্ত হয়।

২৯৮। চারেণোৎসাহযোগেন ক্রিয়য়ৈব চ কৰ্ম্মণাম্‌।

স্বশক্তিং পরশক্তিঞ্চ নিত্যং বিদ্যাম্মহীপতিঃ ॥

গুপ্তচর ও সৈন্যদের পোত্মাহন দ্বারা রাজা নিজের ও পরের শক্তি সর্বদা জানবেন।

২৯৯। পীড়নানি চ সর্ব্বাণি ব্যসনানি তথৈবচ।

আরভেত ততঃ কাৰ্য্যং সঞ্চিত্য গুরুলাঘবম্ ॥

মারকাদি পীড়ন, নিজের ও অপরের রাজ্যে ব্যসন, তাদের গুরুত্ব লঘুত্ব পর্যালোচনা করে (সন্ধি বিগ্রহাদি) কার্য আরম্ভ করবেন।

৩০০। আরভেতৈব কর্মাণি শ্রান্তঃ শ্রান্তঃ পুনঃ পুনঃ।

কর্মণ্যিারভমাণং হি পুরুষং শ্রীর্নিষেবতে ॥

বার বার ক্লান্ত হয়েও রাজা পুনঃ পুনঃ কর্ম নিশ্চয়ই আরম্ভ করবেন, কারণ, যে পুরুষ কর্ম আরম্ভ করে, তাকে’লক্ষ্মী সেবা করেন।

৩০১। কৃতং ত্রেতাযুগঞ্চৈব দ্বাপরং কলিরেব চ।

রাজ্ঞো বৃত্তানি সব্বাণি রাজা হি যুগমুচ্যতে ॥ ৩০১

সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর, কলি—এইগুলি সব রাজার কর্ম, কারণ, রাজা যুগ বলে কথিত হন।

৩০২। কলিঃ প্রসুপ্তো ভবতি ন জাগ্ৰদ্দ্বাপর যুগম্।

কর্মস্বভুদ্যতন্ত্রেতা বিচরংন্তু কৃতং যুগম্ ॥

(রাজা) নিদ্রিত (নিরুদাম) হলে কলি হয়, তিনি জাগ্রত হলে হয় দ্বাপর যুগ, (তিনি) কার্মানুষ্ঠানে উদ্যত হাল হয় ত্রেতা, (তিনি শাস্ত্রানুসারে কর্ম করে) বিচরণ করলে হয় সত্যযুগ।

৩০৩। ইন্দ্ৰস্যার্কাসা বায়োশ্চ মস্য বরুণস্য চ।

চন্দ্ৰস্যাগ্নেঃ পৃথিবাশ্চ তেজোবৃত্তংনৃপশ্চরেৎ ॥

ইন্দ্র, সূর্য, বায়ু, যম, বরুণ, চন্দ্র, অগ্নি ও পৃথিবীর তেজের অনুরূপ অনুষ্ঠান রাজা করেন।

৩০৪। বার্ষিকাশ্চতুরো মাসান্ যথেন্দ্রোহভিপ্রবৰ্ষতি।

তথাভিবর্ষেৎ স্বং রাষ্ট্রং কামৈরিন্দ্ৰব্ৰতং চরন্ ॥

যেমন ইন্দ্র (শস্যাদি বৃদ্ধির জন্য) বৎসরে চার মাস বর্ষণ করেন, তেমনই রাজা ইন্দ্রাচরিত অনুষ্ঠানপূর্বক স্বরাজ্যে ঈঙ্গিত দ্রব্য প্রদানের দ্বারা প্রজাগণকে পূর্ণকাম করবেন।

৩০৫। অষ্টৌ মাসান্ যথাদিত্যস্তোয়ং হরতি রশ্মিভিঃ।

তথাহারেৎ করং রাষ্ট্রান্নিত্যমর্কব্রতং হি তৎ ॥

যেমন সূর্য আটমাস কিরণদ্বারা জল হরণ করে, তেমনই (রাজা) কর গ্রহণ করবেন ; সেই কার্যই সূর্যব্রত।

৩০৬। প্রবিশ্য সর্বভূতানি যথা চরতি মারুতঃ।

তথা চালৈঃ প্রবেষ্টব্যং ব্রতমেতদ্ধি মারুতম্ ॥

যেমন বায়ু সকল জীবে প্রবেশ করে বিচরণ করে, তেমনই (রাজা) গুপ্তচর দ্বারা (সকলের মধ্যে) প্রবেশ করবেন; এটিই মারুতব্রত।

৩০৭। যথা যনঃ প্রিয়দ্বেষ্যৌ প্রাপ্তকালে নিযচ্ছতি।

তথা বাওয়া নিয়ন্তব্যঃ প্রজাস্তুদ্ধি যমব্রতম্‌ ॥

যেমন যম সময় হলে প্রিয় অপ্রিয়কে নিয়মিত করে, তেমনই রাজা কর্তৃক প্রজাগণ নিয়ন্ত্রণযোগ্য ; তাই যমব্রত।

৩০৮। বরুণেন যথা পাশৈর্বন্ধ এবাভিদৃশ্যতে।

তথা পাপান্নিগৃহ্ণীয়াতমেতদ্ধি বারুণম্ ॥

যেমন বরুণ কর্তৃক পাশবদ্ধ (লোক সমাজে) দৃষ্ট হয়, তেমনই (রাজা) পাপাচারীদের নিগৃহীত করবেন ; এটিই বারুণব্রত।

৩০৯। পরিপূর্ণং যথা চন্দ্রং দৃষ্টা হৃষ্যন্তি মানবাঃ।

তথা প্রকৃতয়া যস্মিন্ স চান্দ্ৰব্ৰতিকো নৃপঃ ॥

যেমন পূর্ণচন্দ্রকে দেখে মানুষ আনন্দিত হয়, তেমন প্রকৃতিবর্গ (অমাত্যাদি) (যে রাজাকে দেখে হৃষ্ট হয়) তিনি চন্দ্ৰব্ৰতধারী রাজা।

৩১০। প্রতাপযুক্তস্তেজস্বী নিত্যং স্যাৎ পাপকর্মসু।

দুষ্টসামন্তহিংস্রশ্চ তদাগ্নেয়ং ব্রতং স্মৃতম্ ॥

রাজা পাপাচারীদের প্রতি সর্বদা প্রতাপযুক্ত ও তেজস্বী এবং দুষ্ট সামন্তগণের প্রতি হিংসাপরায়ণ হবেন ; এটি আগ্নেয়ব্রত বলে খ্যাত।

৩১১। যথা সব্বাণি ভূতানি ধরা ধারয়তে সমম্।

তথা সব্বাণি ভূতানি বিভ্রতঃ পার্থিবং ব্ৰতম্ ॥

যেমন পৃথিবী সকল সৃষ্টপদার্থকে সমানভাবে ধারণ করে, তেমন যে (রাজা) সকল পদার্থ ধারণ করেন তাঁর এই হল পার্থিব ব্রত।

৩১২। এতৈরুপায়ৈরন্যৈশ্চি যুক্তো নিত্যমতন্দ্রিতঃ।

স্তেনান্‌ রাজা নিগৃহ্ণীয়াৎ স্বরাষ্ট্রে পর এব চ ॥

এই সকল এবং অন্য উপায়ে সর্বদা অনলস হয়ে রাজা নিজের এবং পরের রাজ্যে চোরদের নিগ্রহ করবেন।

৩১৩। পরামপ্যাপদং প্রাপ্তো ব্রাহ্মণান্‌ ন প্রকোপয়েৎ।

তে হ্যেনং কুপিতা হন্যুঃ সদ্যঃ সবলবাহনম্‌ ॥

অত্যন্ত বিপদে পতিত হলেও ব্রাহ্মণদের রাগাবেন না ; কারণ, তাঁরা ক্রুদ্ধ হলে তাঁকে সৈন্য ও বাহন সহ নিহত করবেন।

৩১৪। যৈঃ কৃতঃ সৰ্ব্বভক্ষ্যোহগ্নিরপেয়শ্চ মহোদধিঃ।

ক্ষয়ী চাপ্যায়িতঃ সোম: কো ন নশ্যেৎ প্রকোপ্য তান্ ॥

যাঁরা কুপিত হয়ে অগ্নিকে সর্বভুক্ত করেছেন, সমুদ্র (জল)কে অপেয় করেছেন, চন্দ্রকে ক্ষয়শীল করে (অনুগ্রহ করে পরে) পূণাবয়ব করেছেন, তাঁদের কুপিত করে কে না বিনষ্ট হবে?

৩১৫। লোকানন্যান্ সূজেয়ুর্যে লোকপালাংশ্চ কোপিতাঃ।

দেবান্ কুর্ষ্যুরদেবাংশ্চ কঃ ক্ষিণ্বংস্তান্ সমৃধ্নয়াৎ ॥

যাঁরা কুপিত হয়ে স্বগদি লোকসমূহ এবং অন্য লোকপালগণকে সৃষ্টি করতে পারেন, দেবগণকে অদেব (মানুষ) করতে পারেন, তাঁদের ক্ষুন্ন করে কে সমৃদ্ধিলাভ করবে?

৩১৬। যানুপাশ্ৰিত্য তিষ্ঠন্তি লোক দেবাশ্চ সৰ্ব্বদা।

ব্ৰহ্ম চৈব ধনং ষেষাং কে হিংসাত্তান্ জিজীবিষ্ণুঃ ॥

যাঁদের আশ্রয় করে মানুষ ও দেবগণ সর্বদা স্থিতিলাভ করে, বেদই যাঁদের ধন, বাঁচতে ইচ্ছা করে কে তাঁদের হিংসা করে?

৩১৭। অবিদ্বাশ্চৈব বিদাংশ্চ ব্রাহ্মণো দৈতং মহৎ।

প্রণীতশ্চাপ্রণীতশ্চ যথাগিদৈর্বতং মহৎ ॥

যেমন অগ্নি প্রণীত বা অপ্রণীত হউক তা মহাদেবতা, তেমন ব্রাহ্মণ বিদ্বান্ বা অবিদ্বান্ হোন তিনি মহা দেবতা।

৩১৮। শ্মশানেস্বপি তেজস্বী পাবকো নৈব দুষ্যতি।

হূয়মানশ্চ যজ্ঞেযু ভূয় এবাভিবর্দ্ধতে ॥

তেজোমান্‌ অগ্নি শ্মশানেও দৃষিত হয় না, যজ্ঞে হৃত হয়ে অত্যন্ত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।

৩১৯। এবং যদ্যপ্যনিষ্টেষু বৰ্ত্ততে সৰ্ব্বকর্মসু।

সর্ব্বথা ব্রাহ্মণাঃ পূজ্যাঃ পরমং দৈবতং হি তৎ ॥

এইরূপে ব্রাহ্মণগণ যদিও সকল কুৎসিত কর্মে প্রবৃত্ত হন, তথাপি তাঁরা পূজনীয় ; কারণ, তাঁরা পর দেবতা।

৩২০। ক্ষত্রস্যাতিপ্রবৃদ্ধস্য ব্রাহ্মণান প্রতি সর্বশঃ।

ব্রহ্মৈব সন্নিয়ন্তৃ স্যাং ক্ষত্রং হি ব্ৰহ্মসম্ভবম্ ॥

ব্রাক্ষণই ব্রাহ্মণদের প্রতি সর্বথা পীড়াদায়ক ক্ষত্রিয়কে (শাপ অভিচারাদি দ্বারা) দমন করেন ; কারণ, ক্ষত্রিয় ব্রাহ্মণ থেকে উদ্ভূত।

৩২১। অদ্ভ্যোহগ্নির্ব্রক্ষতঃ ক্ষত্ৰমশ্মানে লোহমুত্থিতম্‌।

তেষাং সর্ব্বত্রগং তেজেঃ স্বাসু যোনিষু শাম্যতি ॥

ক্সে থেকে গি, ব্রাহ্মণ থেকে ক্ষত্রিয়, পাথর থেকে লৌহনির্মিত (অস্ত্র) উদ্ভূত হয়। তাদের সর্বস্থানগামী তেজ আপন উৎপত্তিস্থলে শান্ত হয়।

৩২২। নাব্রহ্ম মৃস্নোতি নক্ষত্রং ব্রহ্ম বর্দ্ধতে।

ব্রহ্ম ক্ষএঞ্চ সংপৃক্তমিহ চামুত্র বর্ধতে ॥

ব্রাহ্মণহীন ক্ষত্রিয় উন্নতি লাভ করে না, ক্ষত্রিয়হীন ব্রাহ্মণ বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয় না, ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয় মিলিত হয়ে ইহলোক ও পরলোকে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।

৩২৩। দত্ত্বা ধনন্তু বিপ্ৰেভ্যঃ সৰ্ব্বদণ্ডসমুত্থিতম।

পুত্রে বাজ্যং সমাজ কুর্ব্বীতি প্ৰায়ণং রণে ॥

সকল দণ্ডল ধন ব্রাহ্মণদের দিয়ে পুত্রের উপর রাজ্যভার ন্যস্ত করে (রাজা) সংগ্রামে (তভাবে অনশনালিতে) প্রাণত্যাগ করবেন।

৩২৪। এবং চরন্ সদা যুক্তো রাজধর্মেষু পার্থিবঃ।

হিতেষু চৈব লোকস্য সর্ব্বান্ ভৃত্যান্ নিযোজয়েৎ ॥

এইভাবে রাজা সর্বদা রাজধর্মে রত হয়ে লোকহিতে সকল ভৃত্যদের নিযুক্ত করবেন।

৩২৫। এষোহখিলঃ কৰ্ম্মবিধিরুক্তো রাঃ সনাতনঃ।

ইমং কর্মবিধিঃ বিদ্যাং ক্ৰমশো বৈশ্যশূদ্রয়োঃ ॥

রাজার এই সমগ্র সনাতন কর্মবিধি উক্ত হল। বৈশ্য ও শূদ্রের এই (বক্ষ্যমাণ) কর্মবিধি জানবে।

৩২৬। বৈশ্যস্তু কুসংস্কারঃ কৃত্বা দারপরিগ্রহম্‌।

বার্ত্তায়াং নিত্যযুক্তঃ স্যাৎ পশূনাঞ্চৈব রক্ষণে ॥

বৈশ্য উপনয়ন পর্যন্ত সংস্কারে সংস্কৃত হয়ে, বিবাহ করে কৃষি প্রভৃতি কার্যে ও পশুপালনে সর্বদা নিযুক্ত হবে।

৩২৭। প্রজাপতির্হি বৈশ্যায় সৃষ্টৃা পরিদদে পশূন্।

ব্রাহ্মণায় চ রাজ্ঞে চ সর্ব্বাঃ পরিদদে প্রজাঃ ॥

প্রজাপতি পশুসমূহ সৃষ্টি করে বৈশ্যকে দিয়েছিলেন এবং সকল প্রজাকে সৃষ্টি করে ব্রাহ্মণ ও রাজাকে (রক্ষার্থ) দিয়েছিলেন।

৩২৮। ন চ বৈশাস্য কামঃ স্যান্ন রক্ষেয়ং পশূনিতি।

বৈশ্যে চেচ্ছতি নেন রক্ষিব্যাঃ কথঞ্চন ॥

পশুপালন (রূপ নীচকর্ম) করব না, বৈশ্যের এরূপ ইচ্ছা না হয়। বৈশ্য ইচ্ছুক হলে (পশুসমুহ) কোন প্রকারে অন্য কর্তৃক রক্ষণীয় নয়।

৩২৯। মণিমুক্তাপ্রবালানাং লোহানাং তাবস্য চ।

গন্ধানাঞ্চ রসানাঞ্চ বিদ্যাদর্ঘবলাবলম্‌ ॥

মণিমুক্তা, প্রবাল, ধাতু, বস্ত্র, গন্ধ ও রসের মুল্যের উৎকর্ষ অপকর্ষ বৈশ্য জানবে।

৩৩০। বীজানামুপ্তিবিচ্চ স্যাৎ ক্ষেত্ৰদোষগুণস্য চ।

মানযোগঞ্চ জানীয়াৎ তুলাযোগাংশ্চ সৰ্ব্বশঃ ॥

বীজবপন ও ক্ষেত্রের দোষ গুণ সম্বন্ধে এবং সকল প্রস্থ দ্রোণাদি) পরিমাণ ও তুলাদণ্ডে ওজন (বৈশ্য) জানবে।

৩৩১। সাবাসারঞ্চ ভাণ্ডানাং দেশানাঞ্চ গুণাগুণান।

লাভালাভংচ পণ্যানাং পশুনাং পরিবর্ধন ॥

দ্রব্যের সার ও অসারত্ব, দেশসমূহের গুণদোষ, পণ্যদ্রব্যসমূহের লাভক্ষতি এবং পশুসমূহের বৃদ্ধি সম্বন্ধে (বৈশ্য) জানবে।

৩৩২। ভৃত্যানাঞ্চ ভূতিং বিদ্যাদ্ভাশ্চ বিবিধ নৃণাম্।

দ্রব্যাণাং স্থানযোগাংশ্চ ক্রয়বিক্রয়মেব চ ॥

ভৃত্যদের বেতন, মানুষের নানা ভাষা, দ্রব্যসমূহের স্থানযোগ (এরূপে স্থাপন করতে হয়, এই দ্রব্যে এই পদার্থ মিশ্রিত করলে নষ্ট হয় না ইত্যাদি) এবং তাদের ক্রয়-বিক্রয় (এই কালে এত মুল্যে বিক্রয় করলে ভাল হয় ইত্যাদি বৈশ্য) জানবে।

৩৩৩। ধর্মেণ চ দ্রব্যবৃদ্ধাবাতিষ্ঠেদ যত্নমুওমম্‌।

দদাচ্চ সৰ্ব্বভূতানামন্নমেব প্রযত্নতঃ ॥

(বৈশ্য) ধর্মানুসারে ব্যবৃদ্ধির বিষয়ে অত্যন্ত যত্ন নিবে এবং সকল প্রাণীকে সযত্নে অন্নই দান করবে।

৩৩৪। বিপ্রাণাং বেদবিদুষাং গৃহস্থানাং যশস্বিনাম্।

শুশ্রূষৈব তু শূদ্রস্য ধৰ্ম্মো নৈঃশ্রেয়সঃ পরঃ ॥

বেদজ্ঞ, গৃহস্থ, কীর্তিমান্ ব্রাহ্মণদের শুশ্রূষাই শূদ্রের স্বগাদিয়ে লাভজনক শ্রেষ্ঠ ধর্ম।

৩৩৫। শুচিরুৎকৃষ্টশুশ্রষুর্মদুবাগনহংকৃতঃ।

ব্রাহ্মণাদ্যাশ্রয়ো নিত্যমুকৃষ্টাং জাতিমশ্নতে ॥

পবিত্র, উচ্চবর্ণের শুশ্রূষাকরী, মৃদুভাষী, নিরহংকার এবং ব্রাহ্মণাদি (উচ্চবর্ণের) আশ্রিত (শূদ্র) সর্বদা (পরলোকে ব্রাহ্মণাদি) উৎকৃষ্ট জন্ম লাভ করে।

৩৩৬। এষোহনাপদি বর্ণানামুক্তঃ কর্মবিধিঃ শুভঃ।

আপদ্যপি হি যস্তেষাং ক্রমশস্তান্নিবোধত ॥

আপদকাল ভিন্ন অন্য সময়ের জন্য বর্ণসমূহের শুভ কর্মবিধি উক্ত হল। আপদ্‌কালেও তাদের যা ধর্ম তা ক্ৰমে শোন।

মানবধর্মশাস্ত্রে ভৃগুলোক্ত সংহিতায় নবম অধ্যায় সমাপ্ত।

পাদটীকা

১এপ গুলে নিয়োগপ্রথা ভিন্ন বিবাহিত নারীতে ভাত পুত্ৰ উৎপাদকের হয়।

২এরূপ হলে যার স্ত্রীতে সন্তান চাত হয়, তারই সন্তানরূপে সে পরিগণিত হয়; যেমন ব্যাস। বিচিত্ৰবীর্য রাজার পত্নী ক্ষত্রিয়াতে ব্রাহ্মণ কর্তৃক উৎপাদিত হলেও ক্ষেত্ৰপ্ৰাধান্য হেতু ধৃতরাষ্ট্রাদি ক্ষত্রিয়ই হয়েছিলেন, ব্রাহ্মণ নন।

৩অথবা আকাশে নিক্ষিপ্ত বাণ যেমন ব্যর্থ হয়।

৪সান্তনাভাব।

৫নিয়োগপ্রান না পরের শ্লোক দ্রষ্টব্য। এই প্রথা সুদীর্ঘকাল পূর্বে নিবিদ্ধ হয়েছিল।

৬কুল্লূকের ব্যাখ্যানুসারে জেষ্ঠ ও কনিষ্ঠ ভ্রাতা নিয়ম না মেনে যথাক্রমে কনিষ্ঠ ভ্রাতৃবধু ও জোষ্ঠভ্রাতৃবধু গমন করলে এইরূপ দেশভাগী হয়। কিন্তু, প্রশ্ন হতে পারে—জোষ্ঠ ভ্রাতা তে নিয়োগপ্রথায় কনিষ্ঠ ভ্রাতৃবধুগমন করতে পারে না। বিধবানারীর পক্ষে কি স্বামীর জ্যেষ্ঠভ্রাতা কর্তৃক নিয়োগপ্রথায় সন্তান অনুমোদিত?

৭পূর্বের শ্লোকে তাকে অধার্মিক বলা হয়েছে। সমগ্র পৃথিবীর ভোগ হেতু এখানে তাঁকে শ্রেষ্ঠ রাজর্ষি বলা হয়েছে।

৮অর্থাৎ এরূপ স্ত্রী থাকতে অন্য স্ত্রীকে বিবাহ করা উচিত।

৯শূদ্রের ঔরসে ব্রাহ্মণীর গর্ভেজ্ঞাত পুত্র।

১০কুল্লুকের ব্যাখ্যানুসারে এই ব্যবস্থা প্রযোজ্য হবে যখন জ্যেষ্ঠ ও তারপরের ভ্রাতা বিদাদি গুণযুক্ত এবং কনিষ্ঠ নির্গুণ।

১১কুল্লুক বলেছেন, অবিবাহিত ন্যায় বিবাহার্থে এই ব্যবস্থা ; অর্থাৎ কন্যা সম্পত্তির কোন অংশ পাবে না।

১২যেমন চার ভ্ৰাতা, পাঁচটি ছাগ হলে প্রত্যেকে একটা করে নিয়ে পঞ্চমটি জ্যেষ্ঠকে দিবে।

১৩বন্ধু বা বান্ধব শব্দে বোঝায় তর্পণ পিণ্ডাদির অধিকারী। দায়াদ শব্দে বোঝায় সম্পত্তির উত্তরাধিকারী।

১৪ঔরস পুত্র জন্মের পরে পিতার মৃত্যু হাল খাতা বালকপুত্রের হাতে সম্পত্তি না নিয়ে নিজে গ্রহণ করে পুনরায় যদি পুরুষান্তর আশ্রয়র পৌনর্ভর পুত্ৰ উৎপাদন করে তাহলে এই ব্যবস্থা হবে।

১৫ব্রাহ্মণের নানাবর্ণের স্ত্রীর মধ্যে ক্ষত্রিয়াদি বিধবা স্ত্রী নিঃসন্তান অবস্থায় মৃত হলে তার ধন সবর্ণ অসবর্ণ সপত্নীর সন্তানগণের মধ্যে ব্রাহ্মণ সপত্নী কনা অভাবে তার সন্তান পাবে।

১৮ক্লীবের ঔরস সন্তান সম্ভবপর নয়, ক্ষেত্রজ সন্তান হতে পারে।

১৭পিতার জীবদ্দশায় তার সম্পত্তি পুত্রদের সঙ্গে ভাগ করার প্রশ্ন কি করে ওঠে—এই সন্দেহ হতে পারে। শাস্ত্রের ব্যবস্থানুসারে পিতা ইচ্ছ করলে তাঁর সন্তানোৎপাদন ক্ষমতার অভাবে এবং মাতার রজোনিবৃত্তি হলে পিতা পুত্রের মধ্যে সম্পত্তিভাগ হতে পারে।

১৮সহোদর বা বৈমাত্রেয় ভ্রাতা যারা পৃথক হওয়ার পরে পুনরায় একত্রে বাস করে।

১৯লতা (মেধতিথি)।

২০গৌড়ী, মণী ও পৈষ্টী—সুরা এই তিন প্রকার। এইগুলি তৈরি হয় যথাক্রমে গুড়, মধু ও ভাত থেকে। যে কোন দ্বিজ পৈষ্টী সুন্না, ব্রাহ্মণ যে কোন সুরা পান অলে তারা মহাপাতকী হয়।

২১ব্রাহ্মণের সোনা চুরি মহাপাতক।

২২অদৃষ্ট উপায়ে মন্ত্রদিশক্তি দ্বারা মারণের নান অভিচার।

২৩অর্থাৎ অঙ্গগুলি পরস্পর সম্বন্ধযুক্ত।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *