০৬. মনুসংহিতা – ষষ্ঠ অধ্যায়

মনুসংহিতা – ষষ্ঠ অধ্যায়

১। এবং গৃহাশ্রমে স্থিত্বা বিধিবৎ স্নাতকো দ্বিজঃ।

বনে বসেৎ তু নিয়তো যথাবদ্বিজিতেন্দ্রিয়ঃ॥

স্নাতক দ্বিজ নিয়মানুসারে এইভাবে গৃহস্থাশ্রমে থেকে কৃতনিশ্চয় হয়ে এবং যথাযথভাবে জিতেন্দ্রিয় হয়ে বনে বাস করবেন।

২। গৃহস্থস্তু যদা পশ্যেদ্বলীপলিতমাত্মনঃ।

অপত্যস্যৈব চাপত্যং তদারণ্যং সমাশ্রয়েৎ॥

গৃহস্থ যখন নিজের চর্মশিথিলতা ও পক্ককেশ এবং পুত্রের সন্তান দেখবেন, তখন বনে আশ্রয় নিবেন।

৩। সন্ত্যজ্য গ্রাম্যমাহারং সর্বঞ্চৈব পরিচ্ছদম্।

পুত্ৰেষু ভার্যাং নিক্ষিপ্য বনং গচ্ছেৎ সহৈব বা॥

সকল প্রকার গ্রাম্য আহার ও (গাভী, অশ্ব, শয্যা আসনাদি) পরিচ্ছদ ত্যাগ করে স্ত্রীকে পুত্রদের কাছে রেখে অথবা তাঁর সঙ্গে বনগমন করবেন।

৪। অগ্নিহোত্রং সমাদায় গৃহ্যঞ্চাগ্নিপরিচ্ছদম্‌।

গ্রামাদরণ্যং নিঃসৃত নিবসেন্নিয়তেন্দ্রিয়ঃ॥

শ্ৰৌত অগ্নি, আবসথ্যাগ্নি ও স্রুক্‌ স্রুবাদি অগ্নির উপকরণসমূহ নিয়ে গ্রাম থেকে বনে ইন্দ্রিয়সংযমপূর্বক বাস করবেন।

৫। মুন্যন্নৈর্বিবিধৈর্মেধ্যৈঃ শাকমূলফলেন বা।

এতানেব মহাযজ্ঞান্‌ নিৰ্বপেদ্বিধিপূর্বকম্॥

নানাবিধ নীবারাদি পবিত্র অন্ন, শাক, মূল বা ফলের দ্বারা এই মহাযজ্ঞসমূহের যথাবিধি অনুষ্ঠান করবেন।

৬। বসীত চর্ম চীরং বা সায়ং স্নায়াৎ প্ৰগে তথা।

জটাশ্চ বিভৃয়ান্নিত্যং শ্মশ্রুলোমনখানি চ॥

(মৃগাদির) চর্ম বা বস্ত্রখণ্ড (অথবা বৃক্ষবল্কল) পরিধান করবেন, প্রাতে ও সন্ধ্যায় স্নান করবেন, সর্বদা জটা, শ্মশ্রু (দাড়ি), লোম ও নখ ধারণ করবেন।

৭। যদ্ভক্ষ্যং স্যাৎ ততো দদ্যাদ্বলিং ভিক্ষাঞ্চ শক্তিতঃ।

অম্মূলফলভিক্ষাভিরর্চয়েদাশ্রমাগতান্‌॥

যা আহার্য, তার থেকে বলি (বৈশ্বদেব ও নিত্য শ্রাদ্ধ) দিবেন, যথাশক্তি ভিক্ষাদান করবেন, জল, মূল, ফল ও ভিক্ষা দ্বারা আশ্রমে আগত অতিথিদের অর্চনা করবেন।

৮। স্বাধ্যায়ে নিত্যযুক্তঃ স্যাদ্দান্তো মৈত্রঃ সমাহিতঃ।

দাতা নিত্যমনাদাতা সর্বভূতানুকম্পকঃ॥

সর্বদা বেদাধ্যয়নে রত হবেন, (শীতাতপাদি দ্বন্দ্ব) সহনশীল, (সকলের প্রতি) বন্ধুভাবাপন্ন, সংযতচিত্ত, সতত দানশীল, প্রতিগ্ৰহনিবৃত্ত ও সর্বজীবে অনুকম্পাবান্ হবেন।

৯। বৈতানিকঞ্চ জুহুয়াদগ্নিহোত্রং যথাবিধি।

দর্শমস্কন্দয়ন্‌ পর্ব পৌর্ণমাসঞ্চ যোগতঃ॥

নিয়মানুসারে বৈতানিক অগ্নিহোত্র হোম করবেন, দর্শ পৌর্ণমাস যাগ শক্তি-অনুসারে ত্যাগ করবেন না।

১০। বাসন্তশারদৈর্মেধ্যৈর্মুন্যন্নৈঃ স্বয়মাহূতৈঃ।

পুরোডাশাংশ্চরূংশ্চৈব বিধিবন্নির্বপেৎ পৃথ্‌ক॥

বসন্তকালীন ও শরৎকালীন পবিত্র ও নিজের আহৃত নীবারাদি অন্নদ্বারা পুরোডাশ ও চরু যথাবিধি প্রস্তুত করবেন।

১২। দেবতাভ্যস্তু তদ্ধুত্বা বন্যং মেধ্যতরং হবিঃ।

শেষমাত্মনি যুঞ্জীত লবণঞ্চ স্বয়ংকৃতম্॥

বনজাত পবিত্র হবিদ্বারা দেবগণের হোম করে অবশিষ্ট হবি নিজে ভক্ষণ করবেন, নিজের প্রস্তুত লবণ আহার করবেন।

১৩। স্থলজৌদকশাকানি পুষ্পমূলফলানি চ।

মেধ্যবৃক্ষোদ্ভবান্যদ্যাৎ স্নেহাংশ্চ ফলসম্ভবান্॥

স্থলজ ও জলজ শাক, পুষ্প, মূল, ফল, পবিত্রবৃক্ষোদ্ভূত দ্রব্য এবং (ইঙ্গুদী আদি) ফলসম্ভূত তৈল আহার করবেন।

১৪। বর্জয়েন্মধুমাংসঞ্চ ভৌমানি কবকানি চ।

ভূস্তৃণং শিগ্রুকঞ্চৈব শ্লেষ্মাতকফলানি চ॥

মধু, মাংস, ভৌমাদি,১ ছত্রাক, (মালবদেশে প্রসিদ্ধ) ভূস্তৃণ (শাক), (বাহ্লীকদেশে প্রসিদ্ধ) শিগ্রুক (শাক) এবং চাল্‌তে ফল বর্জন করবেন।

১৫। ত্যজেদাশ্বযুজে মাসি মুন্যন্নং পূর্বসঞ্চিতম্‌।

জীর্ণানি চৈব বাসাংসি শাক-মূল-ফলানি চ॥

পূর্বসঞ্চিত নীবারাদি অন্ন, জীর্ণবস্ত্র, শাক, মূল ও ফল আশ্বিন মাসে ত্যাগ করবেন।

১৬। ন ফালকৃষ্টমশ্লীয়াদুৎসৃষ্টমপি কেনচিৎ।

ন গ্রামজাতান্যার্তোহপি মূলানি চ ফলানি চ॥

লাঙ্গলকৃষ্ট ভূমিতে উৎপন্ন শস্য কেউ পরিত্যাগ করলেও তা এবং গ্রামে উৎপন্ন মূল ও ফল ক্ষুধাপীড়িত হলেও ভক্ষণ করবেন না।

১৭। অগ্নিপক্কাশনো বা স্যাৎ কালপক্কভুগেব বা।

অশ্মকুট্টো ভবেদ্বাপি দন্তোলূখলিকোহপি বা॥

অথবা অগ্নিপক্ক দ্রব্য, কালপক্ক (ফলাদি) দ্রব্য, প্রস্তর দ্বারা চূর্ণ বা দন্তরূপ উদূখল মুষল দ্বারা চূর্ণ দ্রব্যভক্ষণ করবেন।

১৮। সদ্যঃ প্রক্ষালকো বা স্যান্মাসসঞ্চয়িকোহপি বা।

ষন্মাসনিচয়ো বা স্যাৎ সমানিচয় এব বা॥

অথবা মাত্র একদিনের, একমাসের, ছয়মাসের বা এক বৎসরের উপযোগী (খাদ্য) সঞ্চয় করবেন।

১৯। নক্তঞ্চান্নং সমশ্লীয়াদ্দিব্য বাহৃত্য শক্তিতঃ।

চতুর্থকালিকো বা স্যাৎ স্যাদ্বাপ্যষ্টমকালিকঃ॥

শক্তি অনুসারে অন্ন আহরণ করে রাত্রিবেলা বা দিনে ভোজন করবেন অথবা একদিন উপবাস করে পরের দিন বা তিনদিন উপবাস করে চতুর্থ দিন রাত্রিবেলা ভোজন করবেন।

২০। চান্দ্রায়ণবিধানৈর্বা শুক্লে কৃষ্ণে চ বর্তয়েৎ।

পক্ষান্তয়োর্বাপ্যশ্নীয়াদ্‌ষবাগূং ক্কথিতাং সকৃৎ॥

অথবা চান্দ্রায়ণ বিধি অনুসারে শুক্লপক্ষ ও কৃষ্ণপক্ষে জীবনধারণ করবেন। বা পূর্ণিমা-অমাবস্যায় সিদ্ধ ষবাগূ২ একবার আহার করবেন।

২১। পুষ্পমূলফলৈর্বাপি কেবলৈৰ্বৰ্তয়েৎ সদা।

কালপক্কৈঃ স্বয়ংশীর্ণৈর্বৈখানসমতে স্থিতঃ॥

অথবা বানপ্রস্থ ধর্মাবলম্বী ব্যক্তি সর্বদা শুধু পুষ্প, মূল ও ফলদ্বারা বা (বিনা অগ্নিতে) কালপক্ক ও স্বয়ং পতিত ফলাদি দ্বারা জীবন ধারণ করবেন।

২২। ভূমৌ বিপরিবর্তেত তিষ্ঠেদ্বা প্রপদৈৰ্দিনম্‌।

স্থানাসনাভ্যাং বিহরেৎ সবনেষূপয়ন্নপঃ॥

(অনাবৃত) ভূমিতে লুটিয়ে যাতায়াত করবেন (অর্থাৎ নির্দিষ্টস্থানে বসবেন বা পর্যটন করবেন) বা পদাগ্রে দণ্ডায়মান হয়ে দিনযাপন করবেন। (কিছুকাল) দাঁড়িয়ে ও (কিছুকাল) বসে সময় কাটাবেন। সবনসমূহে (অর্থাৎ প্রাতে, মধ্যাহ্নে ও সন্ধ্যায়) স্নান করবেন।

২৩। গ্রীষ্মে পঞ্চতপাস্তু স্যাদ্বর্ষাস্বভ্রাবকাশিকঃ।

আর্দ্রবাসাস্তু হেমন্তে ক্রমশো বর্দ্বয়ংস্তপঃ॥

গ্রীষ্মকালে পঞ্চতপা৩ হবেন, বর্ষাকালে অনাবৃত স্থলে (গাত্রাবরণ ব্যতিরেকে) বৃষ্টিধারায় দণ্ডায়মান থাকবেন, হেমন্তকালে আর্দবস্ত্রে থাকবেন; (এই ভাবে) ক্ৰমে তপস্যাবৃদ্ধি করবেন।

২৪। উপস্পৃশংস্ত্রিষবণং পিতৃন্ দেবাংশ্চ তর্পয়েৎ।

তপশ্চরংশ্চোগ্রতরং শোষয়েদ্দেহমাত্মনঃ॥

তিনবেলা স্নান করে পিতৃপুরুষ ও দেবগণের তর্পণ করবেন এবং কঠোর তপস্যা করে নিজ দেহ শোষণ করবেন।

২৫। অগ্নীনাত্মনি বৈতানান্‌ সমারোপ্য যথাবিধি।

অনগ্নিরনিকেতঃ স্যান্মুনির্মূলফলাশনঃ॥

বৈতান অগ্নিসমূহ আত্মাতে বিধি অনুসারে আরোপিত করে অগ্নিশূন্য ও গৃহশূন্য অবস্থায় মৌনী ও মূল ফলাহারী হবেন।

২৬। অপ্রযত্নঃ সুখার্থেষু ব্রহ্মচারী ধরাশয়ঃ।

শরণেষ্বমমশ্চৈব বৃক্ষমূলনিকেতনঃ॥

(স্বাদুদ্ৰব্যভক্ষণ, শীতাতপনিবারণাদি) সুখকর বিষয়ে যত্নশীল না হয়ে, ব্রহ্মচারী ও ভূমিশায়ী হবেন, গৃহের প্রতি মমতাহীন হয়ে বৃক্ষমূলে বাস করবেন।

২৭। তাপসেষ্বেব বিপ্ৰেষু যাত্রিকং ভৈক্ষমাহরেৎ।

গৃহমেধিষু চান্যেষু দ্বিজেষু বনবাসিষু॥

(ফলমূলাভাবে) বানপ্রস্থাবলম্বী ব্রাহ্মণদের নিকট থেকেই শুধু জীবনধারণোপযোগী ভিক্ষা আহরণ করবেন, (ব্রাহ্মণাভাবে) অন্যান্য বনবাসী ও গৃহস্থ দ্বিজের নিকট থেকেও ভিক্ষা আহরণ করবেন।

২৮। গ্রামাদাহৃত্য বাশ্নীয়াদষ্টৌ গ্রাসান্‌ বনে বসন্।

প্রতিগৃহ্য পুটেনৈব পাণিনা শকলেন বা॥

(উক্তরূপ ভিক্ষার অভাবে) গ্রাম থেকে পত্রপুটে, হস্তে বা শরাবাদির খণ্ডে ভিক্ষা আহরণ করে বনে বাসপূর্বক আট গ্রাস ভোজন করবেন।

২৯। এতাশ্চান্যাশ্চ সেবেত দীক্ষা বিপ্রো বনে বসন্‌।

বিবিধাশ্চৌপনিষদীরাত্মসংসিদ্ধয়ে শ্রুতীঃ॥

বানপ্রস্থাশ্রমী ব্রাহ্মণ এই সকল এবং (বানপ্রস্থ শাস্ত্রোক্ত) অন্যান্য নিয়ম পালন করে আত্মসংশোধনের জন্য উপনিষদে স্থিত বিবিধ শ্রুতি অভ্যাস করবেন।

৩০। ঋষিভির্ব্রাহ্মণৈশ্চৈব গৃহস্থৈরেব সেবিতাঃ।

বিদ্যাতপোবিবৃদ্ধ্যর্থং শরীরস্য চ শুদ্ধয়ে॥

(ব্রহ্মদর্শী) ঋষিগণ, পরিব্রাজকগণ ও গৃহস্থগণ বিদ্যা ও তপস্যা বৃদ্ধি ও শরীরের শুদ্ধির জন্য উপনিষদ্ প্রভৃতির সেবা করেন।

৩১। অপরাজিতাং বাস্থায় ব্ৰজেদ্দিশমজিহ্মগঃ।

আ নিপাতাচ্ছরীরস্য যুক্তো বার্যনিলাশনঃ॥

(অপ্রতিবিধেয় রোগে আক্রান্ত হয়ে) ঈশান দিক্‌ আশ্রয় করে সোজাভাবে যোগযুক্ত হয়ে দেহের পতন না হওয়া পর্যন্ত জল ও বায়ুভক্ষণ করবেন।

৩২। আস্যাং মহর্ষিচর্যাণাং ত্যক্ত্বান্যতময়া তনুম্‌।

বীতশোকভয়ো বিপ্ৰো ব্ৰহ্মলোকে মহীয়তে॥

শোক ও ভয়হীন হয়ে মহর্ষিগণের এই সকল আচার অনুষ্ঠানের অন্যতম দ্বারা দেহ ত্যাগ করে ব্রাহ্মণ ব্রহ্মলোকে পূজিত হন।

৩৩। বনেষু তু বিহৃত্যৈবং তৃতীয়ং ভাগমায়ুষঃ।

চতুর্থমায়ুষো ভাগং ত্যাক্ত্বা সঙ্গান্‌ পরিব্রজেৎ॥

এইভাবে জীবনের তৃতীয় ভাগ বনে বনে কাটিয়ে চতুর্থ ভাগে বিষয়াসক্তি পরিহারপূর্বক প্রব্রজ্যা (সন্ন্যাস) গ্রহণ করবেন।

৩৪। আশ্ৰমাদাশ্রমং গত্বা হুতহোমো জিতেন্দ্রিয়ঃ।

ভিক্ষাবলিপরিশ্রান্তঃ প্ৰব্ৰজন্‌ প্ৰেত্য বর্ধতে॥

আশ্রম থেকে আশ্ৰমান্তরে গমন করে, হোমানুষ্ঠান করে, জিতেন্দ্রিয় হয়ে, ভিক্ষাদান ও বলিদান দ্বারা ক্লান্ত হয়ে প্রব্রজ্যা অবলম্বন করলে পরলোকে (ব্রহ্মপ্রাপ্তিরূপ) ঋদ্ধি প্রাপ্ত হয়।

৩৫। ঋণানি ত্ৰীণ্যপাকৃত্য মনো মোক্ষে নিবেশয়েৎ।

অনপাকৃত্য মোক্ষন্তু সেবমানো ব্ৰজত্যধঃ॥

(ঋষিঋণ, দেবঋণ, পিতৃঋণ এই) তিন ঋণ পরিশোধ করে মনকে মোক্ষবিষয়ে নিবিষ্ট করবেন। ঋণ শোধ না করে মোক্ষের সেবা করলে অধোগতি প্রাপ্তি হয়।

৩৬। অধীত্য বিধিবদ্বেদান্ পুত্ৰাংশ্চোৎপাদ্য ধর্মতঃ।

ইষ্ট্বা চ শক্তিতে যজ্ঞৈর্মনো মোক্ষে নিবেশয়েৎ॥

যথাবিধি বেদসমূহ পাঠ করে ধর্মানুসারে পুত্রগণের জন্ম দিয়ে, যথাশক্তি যজ্ঞ করে মনকে মোক্ষে নিবিষ্ট করবেন।

৩৭। অনধীত্য দ্বিজো বেদাননুৎপাদ্য তথা সুতান্।

অনিষ্ট্বা চৈব যজ্ঞৈশ্চ মোক্ষমিচ্ছন্‌ ব্ৰজত্যধঃ॥

বেদপাঠ, পুত্রোৎপাদন ও যজ্ঞ না করে মোক্ষ আকাঙ্ক্ষা করলে দ্বিজের অধোগতি হয়।

৩৮। প্রাজাপত্যাং নিরূপোষ্টিং সর্ববেদসদিক্ষণাম্‌।

আত্মন্যগ্নীন্‌ সমারোপ্য ব্রাহ্মণঃ প্ৰব্ৰজেদ্‌ গৃহাৎ॥

সর্বস্বদক্ষিণা যাতে দেওয়া হয়, সেই প্রজাপ্রাত্য ইষ্টি (যজ্ঞ) করে, আত্মাতে অগ্নি আরোপিত করে ব্রাহ্মণ গৃহ থেকে প্রব্রজ্যা অবলম্বন করবেন।

৩৯। যো দত্ত্বা সর্বভূতেভ্যঃ প্ৰব্ৰজত্যভয়ং গৃহাৎ।

তস্য তেজোময়া লোকা ভবন্তি ব্রহ্মবাদিনঃ॥

যিনি সর্ব জীবকে অভয় দান করে গৃহ থেকে প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেন, সেই ব্রহ্মবাদী ব্যক্তির তেজোময় (হিরণ্যগর্ভাদির) লোক লাভ হয়।

৪০। যস্মাদণ্বপি ভূতানাং দ্বিজান্নোৎপদ্যতে ভয়ম্‌।

তস্য দেহাদ্বিমুক্তস্য ভয়ং নাস্তি কুতশ্চন॥

যে দ্বিজ থেকে জীবের অণুমাত্র ভয়ও জন্মে না, দেহমুক্ত সেই ব্যক্তির কিছুর থেকেই ভয় হয় না।

৪১। অগারাদভিনিষ্ক্রান্তঃ পবিত্রোপচিতো মুনিঃ।

সমুপোঢ়েষু কামেষু নিরপেক্ষঃ পরিব্রজেৎ॥

গৃহ থেকে নির্গমন করে পবিত্র (দণ্ডকমণ্ডলু প্রভৃতি) উপকরণসম্পন্ন ও মৌনী হয়ে (স্বাদু অন্নাদি) কাম্যবস্তু অন্য কর্তৃক সমীপে আনীত হলেও তার প্রতি নিঃস্পৃহ হয়ে প্রব্রজ্যা গ্রহণ করবেন।

৪২। এক এব চরেন্নিত্যং সিদ্ধার্থমসহায়বান্।

সিদ্ধিমেকস্য সম্পশ্যন্‌ ন জহাতি ন হীয়তে॥

(সহায়হীন) এক ব্যক্তির সিদ্ধি হয়—এই কথা লক্ষ্য করে সিদ্ধিলাভের জন্য সহায়হীন হয়ে একাকীই সর্বদা বিচরণ করবেন। (এইরূপ ব্যক্তি) কারও ত্যাগ হেতু দুঃখ ভোগ করেন না, কাউকে ত্যাগদুঃখ তিনি দেন না।

৪৩। অনগ্নিরনিকেতঃ স্যাদ্‌গ্রামমন্নার্থমাশ্রয়েৎ।

উপেক্ষকোহসংকুসুকো মুনির্ভাবসমাহিতঃ॥

(লৌকিক) অগ্নিশূন্য ও গৃহহীন হবেন, অন্নের জন্য গ্রাম আশ্রয় করবেন, রোগে প্রতিকাররহিত, স্থিরমতি, মৌনী ও ব্রহ্মে সমাহিতচিত্ত হবেন।

৪৪। কপালং বৃক্ষমূলানি কুচেলমসহায়তা।

সমতা চৈব সর্বস্মিন্নেতন্মুক্তস্য লক্ষণম্॥

(মৃন্ময়) শরাবাদি পাত্র, বৃক্ষমূল, স্থূলজীর্ণবস্ত্র (কৌপীনকন্থা), একাকিত্ব, সকলের প্রতি সমভাব—এই হল মুক্ত ব্যক্তির লক্ষণ।

৪৫। নাভিনন্দেত মরণং নাভিনন্দেত জীবিতম্‌।

কালমেব প্রতীক্ষেত নির্দেশং ভৃতকো যথা॥

মৃত্যু বা জীবন কামনা করবেন না। ভৃত্য যেমন নির্দেশের প্রতীক্ষায় থাকে, তেমনই (মরণের) প্রতীক্ষা করবেন।

৪৬। দৃষ্টিপূতং ন্যসেৎ পাদং বস্ত্রপূতং জলং পিবেৎ।

সত্যপূতাং বদেদ্বাচং মনঃপূতং সমাচরেৎ॥

পথ দেখে পদক্ষেপ করবেন, বস্ত্রপূত (ছাঁকা) জল পান করবেন, সত্য দ্বারা পূত বাক্য বলবেন, মনের প্রিয় আচরণ করবেন।

৪৭। অতিবাদাংস্তিতিক্ষেত নাবমন্যেত কঞ্চন।

ন চেমং দেহমাশ্ৰিত্য বৈরং কুর্বীত কেনচিৎ॥

অপমানজনক বাক্য সহ্য করবেন, কাউকে অপমান করবেন না, এই দেহ ধারণ করে কারও সঙ্গে শত্রুতা করবেন না।

৪৮। ক্রুধ্যন্তং ন প্রতিক্রুধ্যেদাক্রুষ্টঃ কুশলং বদেৎ।

সপ্তদ্বারাবকীর্ণাঞ্চ ন বাচমনৃতাং বদেৎ॥

ক্রুদ্ধ ব্যক্তির প্রতি উল্টে ক্রোধ প্রকাশ করবেন না, কেউ নিন্দা করলে তাকে (ভদ্র, উত্তম প্রভৃতি) ভাল কথা বলবেন, সপ্তদ্বার৪ গ্রাহ্য বিষয় সংক্রান্ত মিথ্যা কথা বলবেন না।

৪৯। অধ্যাত্মরতিরাসীনো নিরপেক্ষা নিরামিষঃ।

আত্মনৈব সহায়েন সুখার্থী বিচরেদিহ॥

আধ্যাত্মিক বিষয়ে আসক্ত, (যোগাসনে) আসীন, (সকল দ্রব্যের প্রতি) উদাসীন, বিষয়বাসনারহিত, একাকী ও (মোক্ষ) সুখের অভিলাষী হয়ে সংসারে বিচরণ করবেন।

৫০। ন চোৎপাতনিমিত্তাভ্যাং ন নক্ষত্রাঙ্গবিদ্যয়া।

নানুশাসনবাদাভ্যাং ভিক্ষাং লিপ্সেত কর্হিচিৎ॥

ভূমিকম্পাদি উৎপাত ও নেত্রস্পন্দনাদি নিমিত্তের (দুর্লক্ষণের) তাৎপর্য ব্যাখ্যা, (শুভাশুভ) নক্ষত্রবিদ্যা ও (হস্তরেখাবিচারাদি) অঙ্গবিদ্যা ও শাস্ত্রের মর্মকথন দ্বারা কখনও ভিক্ষালাভে ইচ্ছুক হবেন না।

৫১। ন তাপসৈর্ব্রাহ্মণৈর্বা বয়োভিরপি বা শ্বভিঃ।

আকীর্ণং ভিক্ষুকৈর্বান্যৈরগারমুপসংব্রজেৎ॥

বানপ্রস্থাশ্রমী বা অন্যান্য ব্রাহ্মণ, (ভক্ষণশীল) পক্ষী, কুকুর বা অন্য ভিক্ষুকসংকুল গৃহে (ভিক্ষার্থে) গমন করবেন না।

৫২। ক্‌প্তকেশনখশ্মশ্রুঃ পাত্রী দণ্ডী কূসুম্ভবান্‌।

বিচরেন্নিয়তো নিত্যং সর্বভূতান্যপীড়য়ন্‌॥

কেশ, নখ ও শ্মশ্রু (দাড়ি) ছেদনপূর্বক, ভিক্ষাপাত্র, দণ্ড ও কমণ্ডলু ধারণ করে কোন জীবকে পীড়া না দিয়ে ঈশ্বরে মনঃসংযোগপূর্বক সর্বদা বিচরণ করবেন।

৫৩। অতৈজসানি পাত্রাণি তস্য স্যুর্নির্ব্রাণানি চ।

তেষামদ্ভিঃ স্মৃতং শৌচং চমসানামিবাধ্বরে॥

তাঁর পাত্র সোনারূপাদি উজ্জ্বল ধাতুনির্মিত হবে না, ঐগুলি ছিদ্রহীন হবে। যজ্ঞে চমসের ন্যায় তাদের শুদ্ধি জলে হয় বলে কথিত।

৫৪। অলাবুং দারুপাত্ৰঞ্চ মৃন্ময়ং বৈদলং তথা।

এতানি যতিপাত্রাণি মনুঃ স্বায়ম্ভুবোহব্রবীৎ॥

লাউ, কাষ্ঠপাত্র, মৃন্ময়পাত্র ও বংশদণ্ডনির্মিত পাত্র—এইগুলিকে স্বায়ম্ভুব মনু সন্ন্যাসীর পাত্র বলেছেন।

৫৫। এককালং চরেদ্ভৈক্ষং ন প্রসজ্জেত বিস্তরে।

ভৈক্ষে প্রসক্তো হি যতির্বিষয়েষপি সজ্জতি॥

একবার ভিক্ষা করবেন, ভিক্ষাবাহুল্য করবেন না। ভিক্ষালব্ধ অম্নে অত্যাসক্ত সন্ন্যাসী। (ধাতুবৃদ্ধি হেতু কামিনী আদি) বিষয়সমূহে আসক্ত হতে পারেন।

৫৬। বিধুমে সন্নমূসলে ব্যঙ্গারে ভুক্তবজ্জনে।

বৃত্তে শরাবসম্পাতে ভিক্ষাং নিত্যং যতিশ্চরেৎ॥

(গৃহস্থের গৃহে) পাকধুম বিগত হলে, উদৃখল মুষলের কার্য সম্পন্ন হলে, পাকাগ্নি নির্বাপিত হলে, লোকজনের আহার হলে, (উচ্ছিষ্ট) শরাবাদি ফেলে দিলে সন্ন্যাসী সর্বদা ভিক্ষা করবেন।

৫৭। অলাভে ন বিষাদী স্যাল্লাভে চৈব ন হর্ষয়েৎ।

প্রাণঘাত্ৰিকমাত্রঃ স্যান্মাত্ৰাসঙ্গাদ্বিনির্গতঃ॥

ভিক্ষা না পেলে বিষগ্ন হবেন না, পেলে হৃষ্ট হবেন না, মাত্র প্রাণধারণের উপযুক্ত অন্ন ভক্ষণ করবেন; দণ্ডকমণ্ডলু প্রভৃতির ক্ষেত্রেও ‘এটি খারাপ, একে নেব না’, ‘এটি ভাল, একে নেব’ এই মনোভাব অবলম্বন করবেন না।

৫৮। অভিপূজিতলাভাংস্তু জুগুন্সেতৈব সর্বশঃ।

অভিপৃজিতলাভৈশ্চ যতিমুক্তোহপি বধ্যতে॥

সমাদরে পূজিত হয়ে ভিক্ষাগ্রহণ করবেন না, সর্বপ্রকারে সেই ভিক্ষার নিন্দা করবেন। পূজিত হয়ে ভিক্ষালাভে, মুক্ত হয়েও সন্ন্যাসী (জন্মমরণাদি বন্ধনে) বদ্ধ হন।

৫৯। অল্পান্নাভ্যবহারেণ রহঃস্থানাসনেন চ।

হ্রিয়মাণানি বিষয়ৈরিন্দ্রিয়াণি নিবর্তয়েৎ॥

অল্প অন্ন ভক্ষণ করে, নির্জনস্থানে অবস্থান ও উপবেশন করে বিষয়সমূহ কর্তৃক আকৃষ্ট ইন্দ্রিয়গণকে নিবৃত্ত করবেন।

৬০।  ইন্দ্রিয়াণাং নিরোধেন রাগদ্বেষক্ষয়েণ চ।

অহিংসয়া চ ভূতানামৃতত্বায় কল্পতে॥

ইন্দ্রিয়সমুহের সংযম, রাগ দ্বেষের ক্ষয় এবং জীবগণের অহিংসা দ্বারা (মানুষ) অমৃতত্ব লাভ করে।

৬১। অবেক্ষত গতীর্ণৃণাং কর্মদোষসমুদ্ভবাঃ।

নিরয়ে চৈব পতনং যাতনাশ্চ যমক্ষয়ে॥

মানুষের কর্মদোষজনিত অবস্থা, নরকে পতন এবং যমালয়ে যন্ত্রণা চিন্তা করবেন।

৬২। বিপ্রয়োগং প্রিয়ৈশ্চৈব সংযোগঞ্চ তথাপ্রিয়ৈঃ।

জরয়া চাভিভনং ব্যাধিভিশ্চপপীড়নম্॥

প্রিয়জনের সঙ্গে বিচ্ছেদ, অপ্রিয় জনের সঙ্গে মিলন, জরার আক্রমণ ও রোগের দ্বারা পীড়ন (চিন্তা করবেন)।

৬৩। দেহাদুক্রমণঞ্চাম্মাৎ পুনর্গর্ভে চ সম্ভবম্‌।

যোনিকোটিসহস্রেষু সৃতীশ্চাস্যাস্তরাত্মনঃ॥

এই দেহ থেকে আত্মার উৎক্ৰমণ, পুনরায় গর্ভে উৎপত্তি, সহস্র সহস্র কোটি যোনিতে গমন (চিন্তা করবেন)।

৬৪। অধর্মপ্রভবঞ্চৈব দুঃখযোগং শরীরিণাম্‌।

ধর্মার্থপ্রভবঞ্চৈব সুখসংযোগমক্ষয়ম্॥

জীবাত্মার অধর্মজনিত দুঃখভোগ এবং ধর্ম ও অর্থ থেকে উদ্ভূত অবিনশ্বর সুখ ভোগ (চিন্তা করবেন)।

৬৫। সূক্ষ্মতাঞ্চাম্ববেক্ষেত যোগেন পরমাত্মনঃ।

দেহেষু চ সমুৎপত্তিমুত্তমেধধমেষু চ॥

(বিষয়ান্তর থেকে) চিত্তবৃত্তিনিরোধ করে পরমাত্মার সূক্ষ্মতা ও কর্মানুসারে) উৎকৃষ্ট ও নিকৃষ্ট দেহে জন্ম (চিন্তা করবেন।

৬৬। দুষিতোহপি চরেদ্ধর্মং যত্র তত্রাশ্রমে রতঃ।

সমঃ সর্বেষু ভূতেষু ন লিঙ্গং ধর্মকারণম্॥

যে কোন আশ্রমে (সেই আশ্রমবিরুদ্ধ আচার দ্বারা) দূষিত হয়েও সর্বজীবে সমদর্শী হয়ে ধমাচরণ করবেন; (দণ্ডকমণ্ডলু প্রভৃতি) চিহ্ন ধর্মের কারণ নয়।

৬৭। ফলং কতকবৃক্ষস্য যদ্যপাম্বুপ্রসাদক্‌।

ন নামগ্ৰহণাদেব তস্য বারি প্রসীদতি॥

কতকবৃক্ষের ফল যদিও জল নির্মল কারক, তথাপি তার নাম গ্রহণেই জল নির্মল হয় না।

৬৮। সংরক্ষণার্থং জন্তূনাং রাত্রাবনি বা সদা।

শরীরসাত্যয়ে চৈব সমীক্ষ্য বসুধাং চরেৎ॥

নিজের শরীরে কষ্ট হলেও (পিপীলিকাটি ক্ষুদ্র) প্রাণীর রক্ষার জন্য রাত্রে বা দিনে সর্বদা (পথ) দেখে মাটিতে চলাফেরা করবেন।

৬৯। অহ্না রাত্র্যা চ যান্‌ জন্তূন্‌ হিনস্ত্যজ্ঞানতো যতিঃ।

তেষাং স্নাত্বা বিশুদ্ধ্যর্থং প্রাণায়ামান্ ষড়াচরেৎ॥

সন্ন্যাসী দিনে ও রাত্রে অজ্ঞাতসারে যে প্রাণী বধ করেন (সেই পাপের) ক্ষালনের জন্য ছয়বার প্রাণায়াম করবেন।

৭০। প্রাণায়ামা ব্রাহ্মণস্য ত্রয়োহপি বিধিবৎ কৃতাঃ।

ব্যাহৃতিপ্ৰণবৈর্ষুক্তা বিজ্ঞেয়ং পরমং তপঃ॥

ব্রাহ্মণ কর্তৃক ব্যাহৃতি ও প্রণব (ওঁকার) যুক্ত যথাবিধি কৃত তিনটি প্রাণায়ামও শ্রেষ্ঠ তপস্যা বলে জ্ঞেয়।

৭১। দহ্যস্তে ধ্যায়মানানাং ধাতৃনাং হি যথা মলাঃ।

তথেন্দ্রিয়াণাং দহ্যন্তে দোষাঃ প্রাণস্য নিগ্রহাৎ॥

যে ধাতুসমূহে তাপ দেওয়া হয়, তাদের ময়লা যেমন দগ্ধ হয়, তেমনই প্রাণবায়ুর নিগ্রহ হেতু ইন্দ্রিয়সমূহের দোষগুলি দগ্ধ হয়।

৭২। প্রাণায়ামৈর্দহেদ্দোষান্ ধারণাভিশ্চ কিল্বিষম্‌ম।

প্রত্যাহারেণ সংসর্গান্‌ ধ্যানেনানীশ্বরান্ গুণান॥

প্রাণায়ামের দ্বারা দোয়, ধারণাদি৫ দ্বারা পাপ, প্রত্যাহার৬ দ্বারা বিষয়সম্পর্ক ও ধ্যান দ্বারা অনীশ্বর৭ গুণ নষ্ট করবেন।

৭৩। উচ্চাবচেযু ভুতেষু দুর্জ্ঞেয়ামকৃতাত্মভিঃ।

ধ্যানযোগেন সম্পশ্যেদ্‌গতিমস্যান্তরাত্মনঃ॥

উৎকৃষ্ট ও নিকৃষ্ট যোনিতে আত্মার জন্ম যা (শাস্ত্রাদি দ্বারা) অসংস্কৃত লোকের দুর্জ্ঞেয়, তা ধ্যানবলে অবগত হবেন।

৭৪। সমাগ্‌দর্শনসম্পন্নঃ কর্মভির্ন নিবধ্যতে।

দর্শনেন বিহীনন্তু সংসারং প্রতিপদ্যতে॥

ব্রহ্মজ্ঞানী ব্যক্তি কর্মদ্বারা বদ্ধ হন না; ব্ৰহ্ম জ্ঞানহীন ব্যক্তি কিন্তু (জন্ম মরণ রূপ) সংসার লাভ করেন।

৭৫। অহিংসয়েন্দ্রিসঙ্গেবৈদিকশ্চৈব কর্মভিঃ।

তপসশ্চরণৈশ্চোগ্রৈঃ সাধযুন্তীহ তংপদম্‌॥

অহিংসা, বিষয়ের প্রতি ইন্দ্রিয়গণের অনাসক্তি, বেদবিহিত কর্ম ও কঠিন তপস্যাদ্বারা ইহলোকে (মানুষ) ব্রহ্মে লীন হতে পাবে।

৭৬- অস্থিস্থুণং স্নাযু্যুতং মাংসশোণিতলেপনম্‌।

৭৭। চর্মাবনদ্ধং দুর্গন্ধি পূর্ণং মুত্রপুরীষয়োঃ॥

জরাশোকসমাবফষ্টং রোগায়তনমাতুবম্‌।

রজস্বলমনিত্যপঞ্চ ভূতাবাসমিমং ত্যজেৎ॥

অস্থিরূপ স্তম্ভে শিরারূপ (রজ্জুদ্বারা) বদ্ধ, মাংস ও রক্তদ্বারা লিপ্ত, চর্মদ্বারা আচ্ছাদিত, দুর্গন্ধ, মলমুত্রে পূর্ণ, জবা ও শোকে অভিভূত, ব্যাধির আধার, (ক্ষুধা পিপাসায়) কাতর, রজোগুণযুক্ত, বিনাশশীল, (পৃথিবীআদি) পঞ্চভূতের বাসস্থান এই (দেহ) ত্যাগ করবেন।

৭৮। নদীকূলং যথা বৃক্ষো বৃক্ষং বা শকুনির্যথা।

তথা ত্যজন্নিমং দেহং কৃচ্ছ্রাদ্‌গ্রাহাদ্বিমুচ্যতে॥

বৃক্ষ যেমন নদীতীরকে, পক্ষী যেমন বৃক্ষকে তেমন এই দেহকে ত্যাগ করে (মানুষ) সংসার ক্লেশৰূপ গ্রাহ (একপ্রকার হিংস্র জলচরপ্রাণী) থেকে মুক্ত হয়।

৭৯। প্রিয়েষু স্বেষু সুকৃতমপ্রিয়েষু চ দুষ্কৃতম্।

বিসৃজ্য ধ্যানযোগেন ব্রহ্মাভ্যেতি সনাতনম্॥

নিজের প্রিয়জনদের সুকৃত ও অপ্রিয়জনদের দুষ্কৃত দিয়ে ধ্যানযোগে শাশ্বত ব্ৰহ্মলাভ হয়।

৮০। যদা ভাবেন ভবতি সর্বভাবেষু নিস্পৃহঃ॥

তদা সুখমবাপ্নোতি প্রেত্য চেহ চ শাশ্বতম্॥

যখন বিষয়দোষের চিন্তাদ্বারা সকল বিষয়ে (মানুষ) স্পৃহাহীন হয়, তখন ইহলোক ও পরলোকে শাশ্বত সুখ লাভ করে।

৮১। অনেন বিধিনা সর্বাংস্ত্যত্ত্বা সঙ্গান্‌ শনৈঃ শনৈঃ।

সর্বদ্বন্দ্ববিনির্মুক্তো ব্ৰহ্মণ্যেবাবতিষ্ঠতে॥

এই নিয়মে ধীরে ধীরে সকল আসক্তি ত্যাগ করে, (শীত আতপ, সুখ-দুঃখাদি) সকল দ্বন্দ্বমুক্ত হয়ে শুধু ব্রহ্মে অবস্থান করবেন (অর্থাৎ ব্রহ্মচিন্তামগ্ন থাকবেন)।

৮২। ধ্যানিকং সর্বমেবৈতদ্‌ যদেতদভিশব্দিতম্‌।

ন হ্যনধ্যাত্মবিৎ কশ্চিৎ ক্রিয়াফলমুপাশ্নুতে॥

এই যা কিছু বলা হল তার সবই ধ্যানসাধ্য; আধ্যাত্মিক বিষয়ে অজ্ঞ কোন লোকের প্রকৃত ধ্যানক্রিয়ার ফললাভ লাভ হয় না॥

৮৩। অধিযজ্ঞং ব্ৰহ্ম জপেদাধিদৈবিকমেব চ।

আধ্যাত্মিকঞ্চ সততং বেদান্তাভিহিতঞ্চ যৎ॥

যন্ত্রসংক্রান্ত বেদ ও দেবতা প্রতিপাদক ও জীবাত্মাবোধক বেদ এবং যা বেদান্তে বলা হয়েছে,

তা সর্বদা জপ করবেন।

৮৪। ইদং শরণমনামিদমেব বিজানতাম্‌।

ইদমন্বিচ্ছতাং স্বর্গমিদমানন্ত্যমিচ্ছতাম্‌॥

এই (বেদ) মুখের আশ্রয়, বেদার্থতত্ত্বজ্ঞের এটিই (আশ্রয়), স্বর্গকামীর এটি (আশ্রয়), যারা আনন্ত্য (পূনর্জন্মাভাব) চায়, তাদের (আশ্রয়)।

৮৫। অনেন ক্রমযোগেণ পরিব্রজতি যো দ্বিজঃ।

স বিধূয়েহ পাপানং পরং ব্রহ্মাধিগচ্ছতি॥

এইভাবে যে দ্বিজ প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেন, তিনি ইহলোকে পাপ ত্যাগ করে পরমব্রহ্ম প্রাপ্ত হন।

৮৬। এষ ধর্মোহনুশিষ্টো বো যতীনাং নিয়তাত্মনাম্‌।

বেসন্ন্যাসিকানান্তু কর্মযোগং নিবোধত॥

সংযতাত্মা সন্ন্যাসীদের এই ধর্ম তোমাদের বলা হল। বেদ সন্ন্যাসীদের৮ কর্মযোগ শোন।

৮৭। ব্রহ্মচারী গৃহস্থশ্চ বানপ্রস্থো যতিস্তথা।

এতে গৃহস্থপ্রভবাশ্চত্বারঃ পৃথগাশ্ৰমাঃ॥

ব্রহ্মচারী, গৃহস্থ, বানপ্রস্থ ও সন্ন্যাসী—এই চারটি স্বতন্ত্র আশ্রম গৃহস্থ থেকে উদ্ভূত।

৮৮। সর্বেহপি ক্রমশস্ত্বেতে যথাশাস্ত্রং নিষেবিতাঃ।

যথোক্তকারিণং বিপ্রং নয়ন্তি পরমাং গতিম্॥

এই সকল আশ্রম শাস্ত্রানুসারে সেবিত হলে যথোক্ত কর্মকারী ব্রাহ্মণকে (মোক্ষরূপ) শ্রেষ্ঠ গতিতে নিয়ে যায়।

৮৯। সর্বেষামপি চৈতেষাং বেদস্মৃতিবিধানতঃ।

গৃহস্থ উচ্যতে শ্রেষ্ঠঃ স ত্রীনেতান্‌ বিভর্তি হি॥

বেদ ও স্মৃতির বিধান অনুসারে এই সকল আশ্রমের মধ্যে গৃহস্থ শ্রেষ্ঠ বলে কথিত হয়েছেন। তিনি এই (অপর) তিনি আশ্রমকে পোষণ করেন।

৯০। যথা নদীনদাঃ সর্বে সাগরে যান্তি সংস্থিতিম্‌।

তথৈবাশ্রমিণঃ সর্বে গৃহস্থে যান্তি সংস্থিতিম্‌॥

যেমন সকল নদনদী সমুদ্রে স্থিতিলাভ করে, তেমনই (অন্য) সকল আশ্রমী গৃহস্থে স্থিতিপ্রাপ্ত হয়।

৯১। চতুর্ভিরপি চৈবৈতৈর্নিত্যমাশ্রমিভির্দ্বিজৈঃ।

দশলক্ষণকো ধর্মঃ সেবিতব্যঃ প্রযত্নতঃ॥

এই চার আশ্ৰমাবলম্বী দ্বিজগণ কর্তৃকই দশলক্ষণাত্মক ধর্ম সযত্নে পালনীয়।

৯২। ধৃতিঃ ক্ষমা দমোহস্তেয়ং শৌচমিন্দ্রিয়নিগ্রহঃ।

ধীর্বিদ্যা সত্যমক্রোধো দশকং ধর্মলক্ষণম্॥

ধৃতি (সন্তোষ), ক্ষমা, দম (বিষয়সংস্পর্শেও চিত্তের অবিকার), অস্তেয় (পরের ধন-অপহরণ না করা), শুচিতা, ইন্দ্রিয়সংযম, ধী (শাস্ত্ৰতত্ত্বজ্ঞান), বিদ্যা (আত্মজ্ঞান), সত্য, ক্রোধাভাব—এই দশটি ধর্মের লক্ষণ।

৯৩। দশ লক্ষণানি ধর্মস্য যে বিপ্রাঃ সমধীয়তে।

অধীত্য চানুবর্তন্তে তে যাতি পরমাং পতিম্॥

যে ব্রাহ্মণগণ ধর্মের দশ লক্ষণ পাঠ করেন এবং পাঠ করে তাদের অনুসরণ করেন, তাঁরা (মোক্ষরূপ) শ্রেষ্ঠ গতি প্রাপ্ত হন।

৯৪। দশলক্ষণকং ধর্মমনুতিষ্ঠন্‌ সমাহিতঃ।

বেদান্তং বিধিবচ্ছ্রুত্বা সন্ন্যাসেদন্‌ণ দ্বিজঃ॥

সংযতচিত্তে দশ লক্ষণাত্মক ধর্মের অনুষ্ঠান করে যথাবিধি বেদান্ত শ্রবণ করে (দেবঋণ, ঋষিঋণ, পিতৃঋণ এই তিন) ঋণ থেকে মুক্ত হয়ে দ্বিজ সন্ন্যাস অবলম্বন করবেন।

৯৫। সংন্যস্য সর্বকর্মাণি কর্মদোষানপানুদন্‌।

নিয়তো বেদমভ্যস্য পুত্রৈশ্বর্যে সুখং বসেৎ॥

সকল কর্ম পরিত্যাগপূর্বক দুষ্কর্মজাত দোষ নষ্ট করে ইন্দ্রিয়সংযমপূর্বক বেদাভ্যাস করে। পুত্রের গৃহে (পুত্রের উপার্জনে নির্ভর করে জীবিকা চিন্তারহিত হয়ে) সুখে বাস করবেন।

৯৬। এবং সংন্যস্য কর্মাণি স্বকার্যপরমোহস্পৃহঃ।

সন্ন্যাসেনাপহত্যৈনং প্রাপ্নোতি পরমাং গতিম্॥

এইভাবে কর্মসমূহ পরিত্যাগপূর্বক, (আত্মসাক্ষাৎকাররূপ) নিজ কার্যকে শ্রেষ্ঠ মনে করে, (স্বাথাদি লাভেও) স্পৃহাহীন হয়ে, সন্ন্যাস দ্বারা পাপ নষ্ট করে মানুষ (মোক্ষরূপ) শ্রেষ্ঠ গতি লাভ করে।

৯৭। এষ বোহভিহিতো ধর্মো ব্রাহ্মণস্য চতুর্বিধঃ।

পুণ্যোহক্ষয়ফলঃ প্ৰেত্য রাজ্ঞাং ধর্মং নিবোধত॥

ব্রাহ্মণের এই পবিত্র, পরলোকে অক্ষয়ফলপ্রদ চারপ্রকার ধর্ম তোমাদের বললাম। ক্ষত্রিয়দের ধর্ম শোন।

মানবধর্মশাস্ত্রে ভৃগুপ্ৰোক্ত সংহিতায় ষষ্ঠ অধ্যায় সমাপ্ত।

পাদটীকা

 ১ভূমিজাত। গোবিন্দরাজেরর মতে, ভৌম শব্দ ছত্রাকের বিশেষণ; ভূমিজাত ছত্রাক নিষিদ্ধ বৃক্ষজাত ব্রাক ভক্ষ্য। মেধতিথির মতে, ভৌলিক শব্দের অর্থ গোজিহ্বিকা নামক পদার্থ। কুল্লুকভট্ট এঁদের মত মানেন নি।

 ২জাউ, মণ্ড।

 ৩চারদিকে অগ্নিকুণ্ড পরিবেষ্টিত হয়ে সূর্যের নীচে বসে।

 ৪চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্ব্বা, ত্বক্‌, মন ও বুদ্ধি এই সাতটি সপ্তদ্বার। এদের গ্রাহ্য বিষয় যাথা—কামিনীর দর্শন, কামিনীর বাক্য, তার মুখপদ্মগন্ধ, মুখামৃত, দেহ, তদ্বিষয়ক চিন্তা ও কামনা।

 ৫যোগাঙ্গ। একান্তে পরত্রহ্মাদিতে মন সমাহিত করা।

 ৬যোগাঙ্গ। ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয় থেকে ইন্দ্রিয়সমূহের নিবর্তন।

 ৭ঈশ্বর বা পরমাত্মাতে যেগুলি থাকে না অর্থাৎ ক্রোধলোভাদি।

 ৮বেদবিহিত অগ্নিহোত্রাদি কর্মত্যাগী কুটীচর সংঞ্জক সন্নাসী। (কুল্লুক)।

গৃহস্থ (গোবিন্দরাজ)।

নিরাশ্রম (মেধাতিথি)।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *