০৫. মনুসংহিতা – পঞ্চম অধ্যায়

মনুসংহিতা – পঞ্চম অধ্যায়

১। শ্রুত্বৈতানৃষয়ো ধর্মান্‌ স্নাতকস্য যথোদিতান্‌।

ইদমুচুৰ্মহাত্মানমনলপ্রভবং ভৃগুম ॥

ঋষিগণ স্নাতকের এই যথোক্ত ধর্ম শুনে অগ্নি থেকে সম্ভুত মহাত্মা ভৃগুকে এই বলেছিলেন।

২। এবং যথোক্তং বিপ্রাণাং স্বধর্মমনুতিষ্ঠতাম্‌।

কথং মৃত্যুঃ প্রভবতি বেদশাস্ত্রবিদাং প্রভো॥

হে প্রভু, যে বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণগণ যথোক্ত স্বধর্ম পালন করেন, কি করে তাঁদের (বেদবিহিত আয়ুর পূর্বে) মৃত্যু হয়।

৩। স তানুবাচ ধর্মাত্মা মহর্ষীন্ মানবো ভৃগুঃ।

শ্রূয়তাং যেন দোষেণ মৃত্যুর্বিপ্রান্ জিঘাংসতি ॥

মনুর সন্তান সেই ধার্মিক ভৃগু সেই মহর্ষিগণকে বললেন—যে দোষে মৃত্যু তাঁদের নিহত করতে ইচ্ছা করে, তা শুনুন।

৪। অনভ্যাসেন বেদানামাচারস্য চ বর্জনাৎ।

আলস্যান্নদোষাচ্চ মৃত্যুর্বিপ্রান্ জিঘাংসতি॥

বেদাভ্যাসের অভাব, আচারবর্জন, আলস্য ও অন্নদোষ হেতু মৃত্যু ব্রাহ্মণগণকে নিহত করতে ইচ্ছা করে।

৫। লশুনং গৃঞ্জনঞ্চৈব পলাণ্ডুং কবকানি চ।

অভক্ষ্যাণি দ্বিজাতীনামমেধ্যপ্ৰভবাণি চ॥

রসোন, গৃঞ্জন (গাঁজর), পেঁয়াজ, ছত্রাক ও অপবিত্র স্থানে উৎপন্ন দ্রব্য দ্বিজের অভক্ষ্য।

৬। লোহিতান্ বৃক্ষনির্যাসান্‌ ব্ৰশ্চনপ্রভবাংস্তথা।

শেলুং গব্যঞ্চ পেয়ূষং প্রযত্নেন বিবর্জয়েৎ ॥

বৃক্ষের রক্তবর্ণ (কঠিনতাপ্রাপ্ত) নির্যাস, বৃক্ষচ্ছেদনজনিত নির্যাস, চালতে ও গাভীর প্রসবের দশদিনের মধ্যে তার দুগ্ধরূপ পেয়ুষ (যা আগুনের তাপে ঘন হয়) (ব্রাহ্মণ) সযত্নে বর্জন করবেন।

৭। বৃথাক্‌সরসংযাবং পায়সাপূপমেব চ।

অনুপাকৃতমাংসানি দেবান্নানি হবীংষি চ ॥

(দেবতাকে দিয়ে) বৃথা সতিল সিদ্ধান্ন, ঘৃত, ক্ষীর ও গুড়মিশ্রিত গমচুৰ্ণ, পায়স, পিষ্টক, অসংস্কৃত পশুমাংস, দেবতাকে (নিবেদনের পূর্বে) নৈবেদ্যাদি অন্ন ও (হোমের পূর্বে) ঘৃতাদি (হোমদ্রব্য বর্জনীয়)।

৮। অনির্দশায়া গোঃ ক্ষীরমৌষ্ট্রমৈকশফং তথা।

আবিকং সন্ধিনীক্ষীরং বিবৎসায়াশ্চ গোঃ পয়ঃ॥

গাভীর প্রসবের পরে দশদিনের মধ্যে তার দুধ, উটের, একরবিশিষ্ট পশুর, ভেড়ার, সন্ধিনী১র ও মৃতবৎসা গাভীর দুধ বর্জনীয়।

৯। আরণ্যানাঞ্চ সর্বেষাং মৃগাণাং মাহিষং বিনা।

স্ত্রীক্ষীরঞ্চৈব বর্জানি সর্বশুক্তানি চৈব হি॥

মহিষ ছাড়া সকল বন্য জন্তুর ও স্ত্রীলোকের দুধ ও সকলপ্রকার শুক্ত (স্বভাবত যে মিষ্টদ্রব্য কালক্রমে অম্ন হয়) বর্জনীয়।

১০। দধি ভক্ষ্যঞ্চ শুক্তেষু সর্বঞ্চ দধিসম্ভবম্‌।

যানি চৈবাভিষুয়ন্তে পুষ্প-মূল-ফলৈঃ শুভৈঃ ॥

শুক্রসমূহের মধ্যে দধি, সকল দধিজাত দ্রব্য ও যে সকল উৎকৃষ্ট পুষ্প, মূল ও ফল জলের সঙ্গে মিশ্রিত হয়, ঐগুলি ভক্ষ্য।

১১। ক্রব্যাদান্‌ শকুনান্‌ সর্বাংস্তথা গ্রামনিবাসিনঃ।

অনির্দিষ্টাংশ্চৈকশফাংষ্টিট্টিভঞ্চ বিবর্জয়েৎ ॥

মাংসাশী পক্ষী, সকল গ্রামবাসী পক্ষী, (শাস্ত্রে ভক্ষ্য বলে) নির্দিষ্ট নয়, এমন একখুর পশু এবং টিট্টিভ পক্ষী বর্জন করবে।

১২। কলবিঙ্কং প্লবং হংসং চক্রাঙ্গং গ্রামকুকক্কুটম্‌।

সারসং রজ্জুবালঞ্চ দাতুহ্যং শুকসারিকে ॥

চড়ুই পাখী, প্লব, হংস, চক্রবাক, গ্রাম্যকুক্কুট, সারস, রজ্জুবাল, দাত্যুহ (ডাহুক) শুক (টিয়া) ও সারিকা (শালিক),

১৩। প্রতুদান্‌ জালপাদাংশ্চ কোযষ্টিনখবিষ্কিরান্‌।

নিমজ্জতশ্চ মৎস্যাদান্‌ সৌনং বল্লুরমেব চ ॥

যে সব পাখী ঠোঁট দিয়ে ঠুকরে খায়, যাদের পা জালের ন্যায়, কোষষ্টিনামক পাখী যারা নখ দিয়ে আঁচড়ে খায়, যারা ডুবে মাছ খায়, পশুচারণ স্থানে অবস্থিত মাংস (ভক্ষ্য হলেও), শুদ্ধমাংস,

১৪। বকঞ্চৈব বলাকাঞ্চ কাকোলং খঞ্জরীটকম্‌।

মংস্যাদান্‌ বিড়বরাহাংশ্চ মৎস্যানেব চ সর্বশঃ॥

বক, বলাকা, কাকোল (দাঁড়কাক), খঞ্জন, মৎস্যাশী কুম্ভীরাদি জন্তু এবং সর্বপ্রকার মৎস্য—এইগুলি বর্জন করবে।

১৫। যো যস্য মাংসমশ্নাতি স তন্মাংসাদ উচ্যতে।

মৎস্যাদঃ সর্বমাংসাদস্তম্মাণ্মৎস্যান্ বিবর্জয়েৎ ॥

যে যার মাংস ভক্ষণ করে, সে সেই মাংসভোজী বলে কথিত হয়। মৎস্যাশী সকল মাংসভোজী, সুতরাং মৎস্যসমূহ বর্জন করবে।

১৬। পাঠীনরোহিতাবাদ্যৌ নিযুক্তৌ হব্যকব্যয়োঃ।

রাজীবান্‌ সিংহতুণ্ডাংশ্চ সশল্কাংশ্চৈব সর্বশঃ ॥

দেবকার্যে ও পিতৃকার্যে প্রযুক্ত (বোয়াল) ও রোহিত (ভক্ষ্য); রাজীব, সিংহতুণ্ড (সিঙ্গী মাছ) এবং সকল প্রকার আঁশযুক্ত মৎস্য ভক্ষণ করবে।

১৭। ন ভক্ষয়েদেকচরানজ্ঞাতাংশ্চ মৃগদ্বিজান্।

ভক্ষ্যেধপি সমুদ্দিষ্টান্‌ সর্বান্ পঞ্চনখাংস্তথা॥

(সর্পাদি) জন্তু যারা একাকী বিচরণ কবে, যে পশুপাখী অজ্ঞাত, (নিষেধাভাবে) যেগুলি ভক্ষ্য বলে মনে হয় সেগুলি ও সকল প্রকার (বানরাদি) পঞ্চনখবিশিষ্ট জন্তু ভক্ষণ করবে না।

১৮। শ্বাবিবং শলাকং গোধাং খড়গকূর্মশশাংস্তথা।

ভক্ষ্যান্ পঞ্চনখেবাহুরনুষ্ট্রাংশ্চৈকতোদতঃ ॥

পঞ্চনখ জন্তুসমূহের মধ্যে শ্বাবিধ, শজারু, গোসাপ, গণ্ডার, কচ্ছপ ও খরগোস ভক্ষ্য ; উট ছাড়া একপাটি দন্তবিশিষ্ট পশু ভক্ষ্য।

১৯। ছত্রাকং বিড়বরাহঞ্চ লশুনং গ্রামকুক্কুটম্।

পলাণ্ডুং গৃঞ্জনঞ্চৈব মত্যা জগ্‌ধ্বা পতেদ্বিজঃ॥

ছত্রাক, গ্রাম্যশূকর, রসোন, গ্রাম্যকুক্কুট, পেঁয়াজ ও গৃঞ্জন (গাঁজর), জ্ঞাতসারে খেলে দ্বিজ পতিত হন।

২০। অমত্যৈতানি ষড়জগধ্বা কৃচ্ছ্রং সান্তপনং চরেৎ।

যতিচান্দ্রায়ণং বাপি শেষেষুপবসেদহঃ ॥

অজ্ঞানবশতঃ এই ছয়টি খেলে সান্তপন ব্রতের বা যতিচান্দ্রায়ণ ব্রতের অনুষ্ঠান করবে, অবশিষ্ট (রক্তবর্ণ বৃক্ষনির্যাসাদি) ভক্ষণে একদিন উপবাস করবে।

২১। সংবৎসরস্যৈকমপি চরেৎ কৃচ্ছ্রং দ্বিজোত্তমঃ।

অজ্ঞাতভুক্তশুদ্ধ্যর্থং জ্ঞাতস্য তু বিশেষতঃ ॥

অজ্ঞাতদ্রব্যের ভোজনজনিত পাপের প্রায়শ্চিত্তের জন্য ব্রাহ্মণ বৎসরের মধ্যে একবার প্রাজাপতা ব্রতের অনুষ্ঠান করবেন ; জ্ঞাতবস্তুর ভোজনে কিন্তু বিশেষ (প্রায়শ্চিত্ত বিহিত আছে)।

২২। যজ্ঞার্থং ব্রাহ্মণৈর্বধ্যাঃ প্রশস্তা মৃগপক্ষিণঃ।

ভৃত্যানাঞ্চৈব বৃত্ত্যৰ্থমগস্ত্যো হ্যাচরৎ পুরা ॥

যজ্ঞের জন্য এবং অবশ্যপালনীয় (বৃদ্ধ মাতাপিত্রাদির) জীবনধারণের জন্য ব্রাক্ষণগণ কর্তৃক প্রশস্ত পশুপাখী বধ্য। প্রাচীনকালে অগস্ত্যমুনি এরূপ আচরণ করেছিলেন।

২৩। বভুবুৰ্হি পুরোডাশা ভক্ষ্যাণাং মৃগপক্ষিণাম্।

পুরাণেস্বপি যজ্ঞেষু ব্ৰহ্মক্ষত্রসবেষু চ॥

প্রাচীনকালের ব্রাহ্মণক্ষত্রিয়দের যজ্ঞে পশুপক্ষীর মাংস দিয়ে পুরোডাশ প্রস্তুত হয়েছিল।

২৪। যৎকিঞ্চিৎ স্নেহসংযুক্তং ভক্ষ্যং ভোজ্যমগর্হিতম্।

তৎ পর্যুষিতমপ্যাদ্যং হবিঃশেষঞ্চ যদ্ভবেৎ ॥

যা কিছু স্নেহসংযুক্ত অনিন্দিত ভক্ষ্য ও হোমাবশিষ্ট যা থাকে তা বাসী হলেও ভক্ষ্য।

২৫। চিরস্থিতমপি ত্বাদ্যমস্নেহাক্তং দ্বিজাতিভিঃ।

যবগোধূমজং সর্বং পয়সশ্চৈব বিক্রিয়া॥

স্নেহরহিত যব ও গম সম্ভুত দ্রব্য ও সকল প্রকার দুগ্ধজাত পদার্থ দীর্ঘকালের বাসী হলেও দ্বিজগণের ভক্ষ্য।

২৬। এতদুক্তং দ্বিজাতীনাং ভক্ষ্যাভক্ষ্যমশেষতঃ।

মাংসস্যাতঃ প্রবক্ষ্যামি বিধিং ভক্ষণবর্জনে ॥

দ্বিজগণের এই ভক্ষ্য অভক্ষ্য দ্রব্য বলা হল। অতঃপর ভক্ষ্যাভক্ষ্য মাংসের বিধি বলব।

২৭। প্রোক্ষিতং ভক্ষয়েণ্মাংসং ব্রাহ্মণানাঞ্চ কাম্যয়া।

যথাবিধি নিযুক্তস্ত্ত প্রাণানামেব চাত্যয়ে ॥

(যজ্ঞে) মন্ত্রপূত অথবা ব্রাহ্মণের অনুমতিক্রমে মাংস ভক্ষণ করবে। (শ্রাদ্ধে ও মধুপর্কে) নিযুক্ত হয়ে এবং (অন্য খাদ্যাভাবে) প্রাণসংশয়ে মাংস ভক্ষ্য।

২৮। প্রাণস্যান্নমিদং সর্বং প্রজাপতিরকল্পয়ৎ।

স্থাবরং জঙ্গমঞ্চৈব সর্বং প্রাণস্য ভোজনম্ ॥

সকল স্থাবর (উদ্ভিদ্‌) ও জঙ্গম (প্রাণী) ব্রহ্মা প্রাণীর প্রাণধারণের জন্য সৃষ্টি করেছিলেন। (সুতরাং এইগুলি সবই প্রাণ (অত্যয়ে) ভোজ্য।

২৯। চরাণামন্নমচবা দংষ্ট্রিণামপ্যদংষ্ট্রিণঃ।

অহস্তাশ্চ সহস্তানাং শুরাণাঞ্চৈব ভীরবঃ ॥

বিচরণশীল (হরিণাদি) পশুর খাদ্য স্থাবর (তৃণ), দস্তযুক্ত (হিংস্র ব্যাঘ্রাদি) পশুর খাদ্য দন্তহীন (সামান্যদন্ত বিশিষ্ট) হরিণাদি, হস্তযুক্ত (মনুষ্যগণের) খাদ্য হস্তহীন (মৎস্যাদি) প্রাণী, (সিংহাদি বীর) পশুদের খাদ্য ভীরু (হস্তী প্রভৃতি)।

৩০। নাত্তা দূষ্যত্যদন্নাদ্যান্‌ প্রাণিনেইহন্যহন্যপি।

ধাত্রৈব সৃষ্টা হ্যাদ্যাশ্চ প্রাণিনোইত্তার এব চ ॥

প্রতিদিন ভক্ষ্য প্রাণিসকল ভক্ষণ করে ডোক্তা দোষভাগী হয় না। বিধাতাই ভক্ষ্য প্রাণী ও ভক্ষকগণকে সৃষ্টি করেছেন।

৩১। যজ্ঞায় জগ্ধির্মাংসস্যেত্যেষ দৈবো বিধিঃ স্মৃতঃ।

অতোহন্যথাপ্রবৃত্তিস্তু রাক্ষসো বিধিরুচ্যতে ॥

যজ্ঞের জন্য মাংসভক্ষণ—এই দৈব বিধি কথিত হয়। যজ্ঞ ব্যতিরেকে মাংসভোজনের প্রবৃত্তি রাক্ষস বিধি বলে কথিত হয়।

৩২। ক্রীত্বা স্বয়ং বাপ্যুৎপাদ্য পরোপকৃতমেব বা।

দেবান্ পিতৃংশ্চার্চয়িত্বা খাদম্মাংসং ন দুষ্যতি ॥

ক্রীত বা নিজে পশুপালন করে তার মাংস বা অপর কর্তক প্রদত্ত মাংস দেবগণ ও পিতৃগণকে অর্চনা করে ভক্ষণ করলে দোষভাগী হয় না।

৩৩। নাদ্যাদবিধিনা মাংসং বিধিজ্ঞোহনাপদি দ্বিজঃ।

জগ্‌ধ্বা হ্যবিধিনা মাংসং প্ৰেত্য তৈরদ্যতেহ্বশঃ ॥

আপদ্‌কাল ভিন্ন বিধি দ্বিজ অবৈধ মাংস ভক্ষণ করবেন না। অবৈধ মাংস ভক্ষণ করে পরলোকে আত্মরক্ষায় অক্ষম হয়ে (যাদের মাংস ইহলোকে ভক্ষণ করা হয়) তাদের দ্বারা ভক্ষিত হয়।

৩৪। ন তাদৃশং ভবত্যেনো মৃগহস্তুৰ্ধনার্থিনঃ।

যাদৃশং ভবতি প্ৰেত্য বৃথামাংসানি খাদতঃ ॥

ধনকামী ব্যাধের তেমন পাপ হয় না, যেমন পরলোকে বৃথামাংসভোজীর হয়।

৩৫। নিযুক্তস্তু যথান্যায়ং যো মাংসং নাত্তি মানবঃ।

স প্রেত্য পশুতাং যাতি সম্ভবানেকবিংশতিম্ ॥

(শ্রাদ্ধে ও মধুপর্কে) যথাবিধি নিযুক্ত হয়ে যে মাংসভক্ষণ করে না, সে মরে গিয়ে একুশ জন্ম পশুত্ব প্রাপ্ত হয়।

৩৬। অসংস্কৃতান্ পশন মন্ত্রৈর্নাদ্যাদ্বিপ্রিঃ কদাচন।

মন্ত্রৈস্ত্ত সংস্কৃতানদ্যাচ্ছাশ্বতং বিধিমাস্থিতঃ ॥

ব্রাহ্মণ কথনও অমন্ত্রপূত পশুমাংস ভক্ষণ করবেন না। কিন্তু নিত্যসিদ্ধ (পশুগাদিতে) মন্ত্র দ্বারা সংস্কৃত মাংস ভোজন করতে পারেন।

৩৭। কুর্যাদ্‌ঘৃতপশুং সঙ্গে কুর্যাৎ পিষ্টপশুং তথা।

ন ত্বেব তু বৃথা হন্তুং পশুমিচ্ছেৎ কদাচন॥

ইচ্ছা হলে ঘৃতময়ী বা পিষ্টকময়ী পশু প্রতিকৃতি করে ভোজন করবে। কখনও বৃথা (যন্ত্রাদি ভিন্ন অন্য সময়) পশুহত্যা করতে ইচ্ছা করবে না।

৩৮। যাবন্তি পশুরোমাণি তাবৎকৃত্বো হ মারণম্।

বৃথাপশুঘ্নঃ প্রাপ্নোতি প্ৰেত্য জন্মনি জন্মনি॥

(যদি উপলক্ষ্য ব্যতীত) যে পশু বধ করা হয়, সেই পশুর যত সংখ্যক লোম আছে, বৃথা পশুঘাতী মৃত্যুর পরে তত জন্মে মারিত হয়।

৩৯। যজ্ঞার্থং পশবঃ সৃষ্টাঃ স্বয়মেব স্বয়ম্ভুবা।

যজ্ঞস্য ভূত্যৈ সর্বস্য তস্মাদ্‌যজ্ঞে বধোহবধঃ ॥

ব্রহ্মা নিজেই যজ্ঞের জন্য পশুগণকে সৃষ্টি করেছেন। যজ্ঞ সকলের উন্নতির কারণ ; সুতরাং, যজ্ঞে পশুবধ বধ নয়।

৪০। ওষধ্যঃ পশবো বৃক্ষাস্তির্যঞ্চঃ পক্ষিণস্তথা।

যজ্ঞার্থং নিধনং প্রাপ্তাঃ প্রাপ্নুবন্ত্ত্যচ্ছ্রিতীঃ পুনঃ ॥

ওষধি (যে গাছ ফল পাকলে মরে যায়), পশুগণ, বৃক্ষসমূহ, কচ্ছপাদি তির্যগ্‌জাতি ও পক্ষিগণ যজ্ঞের জন্য নিহত হলে পুনরায় উচ্চ জন্ম লাভ করে।

৪১। মধুপর্কে চ যজ্ঞে চ পিতৃদৈবতকর্মণি।

অত্রৈব পশবো হিংস্যা নান্যত্রেত্যব্রবীন্মনুঃ ॥

মধুপর্কে২, যজ্ঞে, পিতৃকার্যে ও দৈবকার্যেই শুধু পশুহত্যা বিহিত, অন্য স্থলে নয়—এই কথা মনু বলেছেন।

৪২। এবর্থেষু পশুন্‌ হিংসন্‌ বেদতত্ত্বার্থবিদ্‌ দ্বিজঃ।

আত্মানঞ্চ পশুঞ্চৈব গময়ত্যুত্তমাং গতিম্ ॥

এই সকল উপলক্ষ্যে পশুহত্যা করে বেদতত্ত্বজ্ঞ দ্বিজ নিজেকে ও (ঐ) পশুকে সদগতি লাভ করান।

৪৩। গৃহে গুরাবরণ্যে বা নিবসন্নাত্মবান্‌ দ্বিজঃ।

নাবেদবিহিতাং হিংসামাপদ্যপি সমাচরেৎ ॥

গৃহে, গুরুগৃহে বা বনে বাস করে প্রশস্তাত্মা দ্বিজ বেদনিষিদ্ধ হিংসা বিপদ্‌কালেও করবেন না।

৪৪। যা বেদবিহিতা হিংসা নিয়তাস্মিংশ্চরাচরে।

অহিংসামেব তাং বিদ্যাদ্বেদাদ্ধর্মো হি নির্বভৌ॥

এই চরাচর জগতে যে হিংসা বেদবিহিত, তাকে অহিংসা বলেই জানবে ; কারণ, বেদ থেকে ধর্ম প্রকাশিত হয়েছিল।

৪৫। যোহহিংসকানি ভূতানি হিনস্তাত্মসুখেচ্ছয়া।

স জীবংশ্চ মৃতশ্চৈব ন ক্বচিং সুখমেধতে ॥

যে নিজের সুখের ইচ্ছায় অহিংসক প্রাণীকে হিংসা করে, সে জীবৎকালে ও মৃত্যুর পরে কোথাও সুখ পায় না।

৪৬। যো বন্ধনবধক্লেশা প্রাণিনাং ন চিকীর্ষতি।

স সর্বস্য হিতপ্ৰেপ্সু সুখমতান্তমশ্লতে ॥

যে প্রাণীদের বন্ধন বধৰূপ ক্লেশ দিতে ইচ্ছা করে না, সকলের হিতকামী, সেই ব্যক্তি অত্যন্ত সুখ ভোগ করে।

৪৭। যদ্ধ্যায়তি যৎকুরুতে ধৃতিং বধ্নাতি যত্র চ।

তদবাপ্নোত্যযত্নেন যে হিনস্তি ন কিঞ্চন ॥

যে কিছুরই হিংসা করে না সে যা ধ্যান করে, যা করে যে পরামার্থতত্ত্বের ধ্যানাদিতে মন সংযোগ করে, তা অনায়াসে পায়।

৪৮। নাকৃত্বা প্রাণিনাং হিংসাং মাংসমুৎপদাতে কচিৎ।

ন চ প্রাণিবধঃ স্বর্গ্যস্তস্মন্মাংসং বিবর্জয়েৎ ॥

প্রাণিহিংসা না করে কখনও মাংস উৎপন্ন হয় না। প্রাণিবধও স্বর্গলাভের সহায়ক নয়, সুতরাং, মাংস বর্জন করবে।

৪৯। সমুৎপত্তিঞ্চ মাংসস্য বধবন্ধৌ চ দেহিনাম।

প্রসমীক্ষ্য নিবৰ্তেত সর্বমাংসস্য ভক্ষণাৎ ॥

(রক্ত শুক্রের থেকে) মাংসের উৎপত্তিকে (ঘৃণাজনক) বিবেচনা করে, প্রাণীর বধবন্ধন (নিষ্ঠুর কর্ম) জেনে সকল মাংসভক্ষণ থেকে বিরত হবে।

৫০। ন ভক্ষয়তি যো মাংসং বিধিংহিত্বা পিশাচবৎ।

স লোকে প্রিয়তাং যাতি ব্যাধিভিশ্চ ন পীড্যতে ॥

যে অবৈধভাবে পিশাচের ন্যায় মাংসভক্ষণ করে না, সে জগতে প্রিয় হয় এবং রোগাৰ্ত হয় না।

৫১। অনুমন্তা বিশসিতা নিহন্তা ক্রয়বিক্রয়ী।

সংস্কর্তা চোপহর্তা চ খাদকশ্চেতি ঘাতকাঃ ॥

(পশু হত্যার) অনুমতিদাতা, বিশসিতা (যে অস্ত্র দ্বারা) পশুদেহ খণ্ড খণ্ড করে, পশুঘাতী, মাংসের ক্রেতা ও বিক্রেতা, মাংসের পাচক, পরিবেশক ও খাদক ঘাতক (বলে কথিত)।

৫২। স্বমাংসং পরমাংসেন যো বর্ধয়িতুমিচ্ছতি।

অনভার্চা পিতৃন্ দেবাংস্ততোহন্যো নাস্ত্যপুণ্যকৃৎ ॥

যে পিতৃপুরুষ ও দেবগণকে অর্চনা না করে পরের মাংস দ্বারা নিজের মাংস বর্ধিত করতে চায়, তার অপেক্ষা অধিক পাপাচারী নেই।

৫৩। বর্ষে বর্ষেহশ্বমেধেন যো যজেত শতং সমাঃ।

মাংসানি চ না খাদেদ্‌যস্তয়োঃ পুণ্যফলং সমম্ ॥

যে শত বৎসর প্রতি বর্ষে অশ্বমেধ যজ্ঞ করে, যে মাংসভক্ষণ করে না—এদের উভয়ের পুণ্যফল সমান।

৫৪। ফলমূলাশনৈর্মুন্যন্নানাংচ ভোজনৈঃ।

ন তৎফলমবাপ্নোতি যন্মাংসপরিবর্জনাৎ ॥

পবিত্র ফল মূল ভক্ষণ দ্বারা নীবারাদি ভোজনের দ্বারা সেই ফল পাওয়া যায় না, যা মাংসবর্জন থেকে পাওয়া যায়।

৫৫। মাংসভক্ষয়িতামুত্র যস্য মাংসমিহাদ্ম্যহ্ম।

এতন্মাংসস্য মাংসত্বং প্রবদন্তি মনীষিণঃ ॥

ইহলোকে যার মাংসভক্ষণ করছি, সে পরলোকে আমাকে ভক্ষণ করবে—মনীষিগণ মাংস শব্দের এই অর্থ বলেছেন।

৫৬। ন মাংসভক্ষণে দোষো ন মদ্যে ন চ মৈথুনে।

প্রবৃত্তিরেষা ভূতানাং নিবৃত্তিপ্ত মহাফলা ॥

মাংসভক্ষণে, মদ্যপানে ও মৈথুনে দোষ নেই ; এই হল জীবের প্রবৃত্তি ; নিবৃত্তি মহাফলজনক।

৫৭। প্রেতশুদ্ধিং প্রবক্ষ্যামি দ্রব্যশুদ্ধিং তথৈব চ।

চতুর্ণামপি বর্ণানাং যথাবদনুপূর্বশঃ ॥

চারবর্ণেবই মৃতাশৌচে শুদ্ধি ও দ্রব্যশুদ্ধি আনুপূর্বিক বলব।

৫৮। দন্তজাতেহনুজাতে চ কৃতচুড়ে চ সংস্থিতে।

অশুদ্ধা বান্ধবাঃ সর্বে সূতকে চ তথোচ্যতে ॥

বালকের দন্ত জাত হলে, চূড়াকরণ বা উপনয়ন হলে যদি ঐ বালকের মৃত্যু হয়, তাহলে সকল (সপিণ্ড সমানোদক) বান্ধব অশুদ্ধ হয়। জননাশৌচ বলা হচ্ছে।

৫৯। দশাহং শাবমাশৌচং সপিণ্ডেষু বিধীয়তে।

অর্বাক্ সঞ্চয়নাদস্থ্‌নাং ত্র্যহমেকাহমেব চ ॥

(সগুণ নির্গুণাভেদে ব্রাহ্মণ) সপিণ্ডের মৃতাশৌচ দশ দিন ব্যাপী অথবা চার, তিন ও একদিন ব্যাপী।

৬০। সপিণ্ডতা তু পুরুষে সপ্তমে বিনিবর্ততে।

সমানোদকভাবস্তু জন্মনাম্নোরবেদনে ॥

সপিণ্ডতা সপ্তম পুৰুষে নিবৃত্ত হয়, সমানোদকভাব কিন্তু ‘আমাদের বংশে অমুক নামে একজন জন্মেছিলেন’ এইভাবে জন্ম নাম উভয়ই অজ্ঞাত হলে নিবৃত্ত হয়।

৬১। যথেদং শাবমার্শেীচং সপিণ্ডেষু বিধীয়তে।

জননেহপ্যেমেব স্যান্নিপূণাং শুদ্ধিমিচ্ছতাম্ ॥

সম্পূর্ণ শুদ্ধিকামীর পক্ষে সপিণ্ডদের এই যে মৃতাশৌচ বিহিত হয়েছে, জন্মেও এইরূপই হবে।

৬২। সর্বোষাং শাবমাশৌচং মাতাপিত্ৰোস্তু সূতকম্।

সূতকং মাতুরেব স্যাদুপস্পৃশ্য পিতা শুচিঃ ॥

মরেণাশৌচে সকলের অস্পৃশ্যত্ব সমান, জননাশৌচে শুধু মাতাপিতারই অস্পৃশ্যত্ব হয়।

অস্পৃশ্যত্ব শুধু মায়েরই দশরাত্র হয়, পিতা স্নান করে শুদ্ধ হন।

৬৩। নিরস্য তু পুমান্ শুক্রমুপস্পৃশ্যেব শুধ্যতি।

বৈজিকাদভিসম্বন্ধাদনুরুন্ধ্যাদঘং এ্যহম্ ॥

(কামবশে) শুক্রপাত করে পুরুষ স্নান করেই শুদ্ধ হয়। বীজের সম্বন্ধ থাকলেই জননে ও মরণে তিনদিন ব্যাপী অশৌচ হয়।

৬৪। অহ্না চৈকেন রাত্র্যা চ ত্রিরাত্রৈরেব চ ত্রিভিঃ।

শবস্পৃশো বিশুধ্যত্তি ত্রাহাদুদকদায়িনঃ ॥

তিন গুণিত তিন দিন অর্থাৎ নয়দিন ও একদিন এই দশ দিন অশৌচ হয়। শস্পর্শকারীর দশদিন অশৌচ হয়, সমানোদকের শব স্পর্শ করলে হয় তিন দিন।

৬৫। গুরোঃ প্রেতস্য শিষ্যস্তু পিতৃমেধং সমাচরন্।

প্রেতাহারৈঃ সমং তত্র দশরাত্রেণ শুধ্যতি ॥

(অসপিণ্ড) আচার্যের মৃত্যু হলে শিষ্য পিতৃমেধ (অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াসমূহ) করলে সপিণ্ডদের ন্যায় দশ রাত্রে শুদ্ধ হয়।

৬৬। রাত্রিভির্মাসতুল্যাভিৰ্গৰ্ভস্রাবে বিশুধ্যতি।

রজস্যুপরতে সাধ্বী স্নানেন স্ত্রী রজস্বলা ॥

গর্ভস্রাব যে মাসে হয়, তত সংখ্যক রাত্রিতে শুদ্ধি হয়। রজস্বলা স্ত্রী, রজোনিবৃত্তি হলে, (পঞ্চম দিনে) স্নান দ্বারা দেবকার্যে অধিকারী হয়।

৬৭। নৃণামকৃতচুড়ানাং বিশুদ্ধিনৈশিকী স্মৃতা।

নির্বৃত্তচুড়কানান্তু ত্রিরাত্রাচ্ছুদ্ধিবরিষ্যতে ॥

চূড়াকরণের পূর্বে বালক মৃত হলে অহোরাত্রে শুদ্ধি হয়। চূড়াকরণের পরে বালক মৃত হলে তিন রাত্রে শুদ্ধি হয়।

৬৮। উনদ্বিবার্ষিক প্রেতং নিদধ্যুর্বান্ধবা বহিঃ।

অলঙ্কৃত্য শুচৌ ভূমাবস্থিসঞ্চয়ানাদৃতে ॥

দুই বংসেরর কম বয়স্ক মৃত বালকের দেহ বান্ধবেরা গ্রামের বাইরে নিয়ে তাকে অলংকৃত করে অস্থিসঞ্চয়ন ব্যতিরেকে পবিত্র ভূমিতে পুতে রাখবে।

৬৯। নাস্য কার্যোহগ্নিসংস্কারো ন চ কার্যোদকক্রিয়া।

অরণ্যে কাষ্ঠবং ত্যক্ত্বা ক্ষপেয়ুস্ত্র্যহমেব চ ॥

একে পোড়ান হবে না, এর তর্পণও করণীয় নয়। একে বনে কাঠের মতো রেখে তিন রাত্রি অশৌচ পালন করতে হয়।

৭০। নাত্রিবর্ষস্য কর্তর্যা বান্ধবৈরুদকক্রিয়া।

জাতদন্তস্য বা কুযুর্ন্যম্নি বাপি কৃতে সতি ॥

তিন বৎসরের কম বয়স্ক বালকের বান্ধবগণ কর্তৃক (অগ্নিসংস্কার) ও তর্পণ করণীয় নয়। যে বালক জাতদন্ত বা যার নামকরণ হয়েছে, সেই বালকের তর্পণাদি কর্ম করলে (প্রেতোপকার হয়)।

৭১। সব্রহ্মচারিণ্যেকাহমতীতে ক্ষপণং স্মৃতম্।

জন্মন্যেকোদকানান্তু ত্রিরাত্রাচ্ছুদ্ধিরিষ্যতে ॥

সহধ্যায়ী ব্রহ্মচারীর মৃত্যু হলে এক রাত্রি অশৌচ হয়। সমানোদকদের সন্তান জন্মে তিন রাত্রে শুদ্ধি ঈপ্সিত।

৭২। স্ত্রীণামসংস্কৃতানাম্ত্ত ত্রাহাচ্ছুধ্যন্তি বান্ধবাঃ।

যথোক্তেনৈব কল্পেন শুধ্যন্তি তু সনাভয়ঃ ॥

অবিবাহিতা (কিন্তু বাগ্‌দত্তা) স্ত্রীলোকের (মৃত্যুতে) (পতি প্রভৃতি) বান্ধবগণ তিন রাত্রে শুদ্ধ হয়। পিতৃপক্ষীয়গণ ঐরূপ তিনরাত্রে শুদ্ধ হয়।

৭৩। অক্ষারলবণান্নাঃ স্যুর্নিমজ্জেমুশ্চ তে ত্র্যহম্।

মাংসাশনঞ্চ নাশ্মীয়ুঃ শয়ীরংশ্চ পৃথক্‌ ক্ষিতৌ ॥

(মৃতাশৌচে) অকৃত্রিম লবণ সহকারে অন্নভোজন করবে, তিন দিন (নদ্যাদিতে) স্নান করবে, মাংসভক্ষণ করবে না, ভূমিতে (স্ত্রীর থেকে) পৃথক্‌ভাবে শোবে।

৭৪। সন্নিধাবেষ বৈ কল্পঃ শাবাশৌচস্য কীর্তিতঃ।

অসন্নিধাবয়ং জ্ঞেয়ো বিধিঃ সম্বন্ধিবান্ধবৈঃ ॥

মৃতব্যক্তির সঙ্গে এক স্থানে থাকলে মৃতাশৌচের এই ব্যবস্থা কথিত হয়। মৃত ব্যক্তি দূরস্থিত হলে সম্বন্ধী ও বান্ধবদের এই (বক্ষ্যমাণ) বিধি জ্ঞাতব্য।

৭৫। বিগতস্তু বিদেশস্থং শৃণুয়াদ্‌য়ো হানিৰ্দশম্।

যচ্ছেষং দশরাত্রস্য তাবদেবাশুচির্ভবেৎ॥

প্রবাসী ব্যক্তির মৃত্যুসংবাদ দশ দিনের মধ্যে শুনলে দশ রাত্রের যতটুকু অবশিষ্ট ততদিনই অশৌচ হবে।

৭৬। অতিক্রান্তে দশাহে চ ত্রিরাত্ৰমশুচিৰ্ভবেৎ।

সংবৎসরে ব্যতীতে তু স্পৃষ্টৈৃবাপো বিশুধ্যতি ॥

দশ দিনের পরে শুনলে তিন বাত্রি অশৌচ হবে। এক বৎসর অতিক্রান্ত হলে স্নানমাত্রেই শুদ্ধি হয়।

৭৭। নির্দশং জ্ঞাতিমরণং শ্রুত্বা পূত্ৰস্য জন্ম চ।

সবাসা জলমাপ্লুত শুদ্ধো ভবতি মানবঃ ॥

দশ দিন পরে জ্ঞাতিমরণ ও পুত্রের জন্ম শুনলে সবস্ত্র স্নান করে লোক শুদ্ধ হয়।

৭৮। বালে দেশান্তরস্থে চ পৃথক্‌ পিণ্ডে চ সংস্থিতে।

সবাসা জলমাপ্লুত্য সদ্য এব বিশুধ্যতি ॥

অন্য দেশস্থিত (অজাতদন্ত) বালক বা সমানোদক মৃত হলে সবস্ত্র স্নান করে সদ্য শুদ্ধ হওয়া যায়।

৭৯। অন্তর্দশাহে স্যাতাং চেৎ পুনর্মরণজন্মনী।

তাবৎ স্যাদশুচির্বিপ্রো যাবৎ তৎস্যাদনির্দশম্ ॥

দশ দিন জননাশৌচের মধ্যে পুনরায় মরণ বা জন্ম হলে প্রথম অশৌচের সঙ্গে দ্বিতীয় অশৌচ অপগত হয়।

৮০। ত্রিরাত্রমান্থরাশৌচমাচার্যে সংস্থিতে সতি।

তস্য পুত্রে চ পত্ন্যাঞ্চ দিবারাত্রমিতি স্থিতিঃ ॥

আচার্য মৃত হলে তিন রাত্র অশৌচ হয়। তাঁর পুত্র বা পত্নী মৃত হলে অহোরাত্র অশৌচ হয়—এই সিদ্ধান্ত।

৮১। শ্ৰোত্ৰিয়ে তূপসম্পন্নে ত্রিরাত্ৰমশুচির্ভবেৎ।

মাতুলে পক্ষিণীং রাত্রিং শিষ্যর্ত্বিগ্বান্ধবেষু চ ॥

(বন্ধুভাবে এক গৃহবাসী) বেদাধ্যায়ী মৃত হলে তিন রাত্রি অশৌচ হয়। পুরোহিতের, শিষ্য ও বান্ধবের মৃত্যুতে পক্ষিণী (দুই দিন ও মধ্যবর্তী একরাত্রি) অশৌচ হয়।

৮২। প্রেতে রাজনি সজ্যোতির্যস্য স্যাদ্বিষয়ে স্থিতঃ।

অশ্রোত্রিয়ে ত্বহঃ কৃৎস্নমণূচানে তথা গুরৌ ॥

(ব্রাহ্মণাদি) যে রাজার রাজ্যে বাস করেন, তাঁর মৃত্যু হলে সজ্যোতি (দিনে মরলে দিনে, রাত্রে মরলে রাত্রিতে) অশৌচ হয়। (অবেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ) কোন ব্রাহ্মণের গৃহে মারা গেলে সেই সম্পূর্ণ দিন অশৌচ হয় ; সাঙ্গোপাঙ্গ বেদাধ্যাপক গুরুর মৃত্যুতেও এই বিধি।

৮৩। শুধ্যেদ্বিপ্রো দশাহেন দ্বাদশাহেন ভূমিপঃ।

বৈশ্যঃ পঞ্চদশাহেন শূদ্রো মাসেন শুধ্যাতি ॥

ব্রাহ্মণ দশ দিনে, ক্ষত্রিয় বার দিনে, বৈশ্য পনের দিনে ও শূদ্র এক মাসে অশৌচমুক্ত হয়।

৮৪। ন বর্ধয়েদঘাহানি প্রত্যুহেন্নাগ্নিষু ক্রিয়া।

ন চ তৎকর্ম কুর্বাণঃ সনাভ্যোহপ্যশুচির্ভবেৎ ॥

অশৌচের দিন বর্ধিত করবে না, অগ্ৰিহোত্র কর্মের ব্যাঘাত করবে না। পুত্রাদি কোন সপিণ্ড প্রতিনিধিরূপে সেই হোমাদি কর্ম করলে অশুচি হবে না।

৮৫। দিবাকীর্তিমুদক্যাঞ্চ পতিতং সূতিকাং তথা।

শবং তৎস্পৃষ্টিনঞ্চৈব স্পৃষ্ট্বা স্নানেন শুধ্যাতি ॥

চণ্ডাল, রজস্বলা স্ত্রী, পতিত, (প্রসবের দশ দিনের মধ্যে) প্রসূতি, মৃতদেহ, মৃতদেহ যে স্পর্শ করেছে—এদের স্পর্শ করলে স্নানের দ্বারা শুদ্ধ হয়।

৮৬। আচম্য প্রযতো নিত্যং জপেশুচিদর্শনে।

সৌরান্ মন্ত্রান্ যথোৎসাহং পাবমানীশ্চ শক্তিতঃ ॥

প্রত্যহ আচমন করে পবিত্র হওয়ার পরে (চণ্ডালাদি) অশুচিদর্শনে স্যোৎসাহে (উদুত্যম ইত্যাদি) সূর্যমন্ত্র ও পাবমানী মন্ত্র যথ্যশক্তি জপ করবে।

৮৭। নারং স্পৃষ্ট্বাস্থি সস্নেহং স্নাত্বা বিপ্রো বিশুধ্যতি।

আচম্যৈব তু নিঃস্নেহং গামালভ্যার্কমীক্ষ্য বা ॥

মৃত মানুষের মাংসমজ্জালিপ্ত অস্থি স্পর্শ করে ব্রাক্ষণ স্নান করে শুদ্ধ হয়। শুষ্ক অস্থি স্পর্শে আচমনপূর্বক গাভী স্পর্শ করে বা সূর্য দর্শন করে শুদ্ধ হয়।

৮৮। আদিষ্টী নোদকং কুর্যাদাব্রতস্য সমাপনাৎ।

সমাপ্তে তূদকং কৃত্বা ত্রিরাত্রেণৈব শুধ্যতি ॥

(মাতা, পিতা ও আচার্য ভিন্ন অন্য সপিণ্ড মৃত হলে) ব্রহ্মচারী ব্রহ্মচর্যব্রত সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত পিণ্ডদানাদি প্রেতকার্য করবেন না (ও অশৌচ পালন করবেন না)। ব্ৰত সমাপ্ত হলে প্রেতকার্য করে তিন রাত্রেই শুদ্ধ হওয়া যায়।

৮৯। বৃথাসঙ্করজাতানাং প্রব্রজ্যাসু চ তিষ্ঠতাম্।

আত্মনস্ত্যাগিনাঞ্চৈব নিবর্তেতোদকক্রিয়া ॥

স্বধর্মত্যাগী, (হীনবর্ণের স্ত্রীতে উত্তমবর্ণ দ্বারা উৎপাদিত) সংকর জাত ব্যক্তি (বেদবহির্ভূত রক্তপটাদিধারী) পরিব্রাজক, ও (অশাস্ত্রীয় উপায়ে) আত্মঘাতী ব্যক্তির উদকদানাদি ক্রিয়া করবে না।

৯০। পাষণ্ডমাশ্রিতানাঞ্চ চরন্তীনাঞ্চ কামতঃ।

গর্ভভর্তৃদ্রুহাঞ্চৈব সুরাপীনাঞ্চ যোষিতাম্ ॥

(বেদবিরোধী) পাষণ্ডধর্মাবলম্বী, স্বৈরিণী, গর্ভপাতকারিণী, পতিঘাতিনী ও মদ্যপায়িনী। নারীদের (পারলৌকিক ক্রিয়া) নিষিদ্ধ।

৯১। আচার্যং স্বমুপাধ্যায়ং পিতরং মাতরং গুরুম্।

নির্হৃত্য তু ব্ৰতী প্রেতান্ ন ব্ৰতেন বিযুজ্যতে ॥

ব্রহ্মচারী নিজের আচার্য, উপাধ্যায়, পিতা, মাতা বা গুরুর মৃতদেহ দহন বহনাদি করলে ব্রত থেকে বিচ্যুত হন না।

৯২। দক্ষিণেন মৃতং শূদ্রং পুরদ্বারেণ নিৰ্হরেৎ।

পশ্চিমোত্তরপূর্বৈস্তু যথাযোগং দ্বিজন্মনঃ ॥

শূদ্রের মৃতদেহ দক্ষিণ পূরদ্বার দিয়ে এবং দ্বিজগণের মৃতদেহ যথাক্রমে পশ্চিম, উত্তর ও পূর্ব দ্বার দিয়ে বহন করবে।

৯৩। ন রাজ্ঞামঘদোষোহস্তি ব্ৰতিং ন চ সত্ৰিণাম্।

ঐন্দ্ৰং স্থানমুপাসীনা ব্রহ্মভূতা হি তে সদা ॥

রাজা, ব্রহ্মচারী ও যজ্ঞসম্পাদকের (নিজ নিজ কর্তব্য সম্পাদনে) অশৌচ দোষ হয় না ; কারণ আধিপত্যে৩ অধিষ্ঠিত হয়ে তাঁরা সর্বদা ব্রহ্মের ন্যায় (নিস্পাপ)।

৯৪। রাজ্ঞো মাহাত্মিকে স্থানে সদ্যঃ শৌচং বিধীয়তে।

প্রজানাং পরিরক্ষার্থমাসনসঞ্চাত্র কারণম্ ॥

রাজপদে অধিষ্ঠিত বাজার সদ্যশৌচ বিহিত। লোকের রক্ষার জন্য তাঁর আসনারোহণ এর কারণ।

৯৫। ডিম্ব্যহবহতানাঞ্চ বিদ্যুতা পার্থিবেন চ।

গোর্ব্রাহ্মণস্য চৈবার্থে যস্য চেচ্ছতি পার্থিবঃ ॥

রাজাহীন যুদ্ধে নিহত, বজ্ৰদ্বারা হত, রাজদণ্ডে নিহত, গাভী বা ব্রাহ্মণের জন্য হত এবং রাজা যাকে ইচ্ছা করেন তার (সদ্যশৌচ হয়)।

৯৬। সোমাগ্ন্যর্কানিলেন্দ্রাণাং বিত্তাপ্পত্যোর্যমস্য চ।

অষ্টানাং লোকপালানাং বপুর্ধারয়তে নৃপঃ ॥

চন্দ্র, অগ্নি, সূর্য, বায়ু, ইন্দ্র, কুবের, বরুণ ও যম—এই আট লোকপালের দেহ রাজা ধারণ করেন।

৯৭। লোকেশাধিষ্ঠিত রাজা নাস্যাশৌচং বিধীয়তে।

শৌচাশৌচং হি মর্ত্যানাং লোকেশপ্রভবাপ্যয়ম্ ॥

রাজা (উক্ত) লোকপালাধিষ্ঠিত; এঁর অশৌচ হয় না; কারণ, যিনি মানুষের শৌচ, অশৌচ বিধান করতে সক্ষম, সেই লোকেশ্বর রাজার অশৌচ কেন হবে?

৯৮। উদ্যতৈরীহবে শস্ত্রৈঃ ক্ষত্রধর্মহতস্য চ।

সদ্যঃ সন্তিষ্ঠতে যজ্ঞস্তথাশৌচমিতি স্থিতিঃ ॥

যে উত্তোলিত অস্ত্র দ্বারা ক্ষত্রিয়ের ধর্মানুসারে যুদ্ধে নিহত হয়, সে তৎক্ষণাৎ (জ্যোতিষ্টোমাদি) যজ্ঞফল প্রাপ্ত হয় ও সদ্যশুচি হয়, শাস্ত্রের এই সিদ্ধান্ত।

৯৯। বিপ্রঃ শুধ্যত্যপঃ স্পৃষ্ট্বা ক্ষত্রিয়ো বাহনায়ুধম ॥

বৈশ্যঃ প্রতোদং রশ্মীন্‌ বা যষ্টিং শূদ্রঃ কৃতক্রিয়ঃ ॥

অশৌচাবসানে ব্রাহ্মণ জল, ক্ষত্রিয় বাহন বা অস্ত্র, বৈশ্য (বৃষাদির) তাড়ন দণ্ড বা লাগাম ও শূদ্র যষ্টি স্পর্শ করে শুদ্ধ হয়।

১০০। এতদ্বোহভিহিতং শৌচং সপিণ্ডেযু দ্বিজোত্তমাঃ।

অসপিণ্ডেষু সর্বেষু প্রেতশুদ্ধিং নিবোধত ॥

হে ব্রাহ্মণগণ, সপিণ্ডদের ক্ষেত্রে এই শৌচবিধি আপনাদের বলা হল। সকল অসপিণ্ডের মৃতাশৌচে শুদ্ধি শুনুন।

১০১। অসপিণ্ডং দ্বিজং প্রেতং বিপ্রো নির্হৃত্য বন্ধুবৎ।

বিশুধ্যতি ত্রিরাত্রেণ মাতুরাপ্তাংশু বান্ধবান্ ॥

অসপিণ্ড দ্বিজের মৃতদেহ বন্ধুর ন্যায় বহনদহনাদি করে এবং মাতার সহোদরাদি বান্ধবের মৃতদেহ বহনদহনদি করে ব্রাহ্মণ তিন রাত্রে শুদ্ধ হন।

১০২। যদ্যন্নমত্তি তেষাম্ত্ত দশাহেনৈব শুধ্যতি।

অনদন্নন্নমহ্নৈব ন চেৎ তস্মিন্ গৃহে বসেৎ ॥

তাঁদের অন্নভক্ষণ করলে দশ দিনে শুদ্ধ হয়। অন্নভক্ষণ না করলে বা তাদের বাড়িতে না থাকলে এক দিবারাত্রে শুদ্ধ হয়।

১০৩। অনুগমোচ্ছয়া প্রেতং জ্ঞাতিমজ্ঞাতিমেব বা।

স্নাত্বা সচেলং স্পৃষ্ট্বাগ্নিং ঘৃতং প্রাশ্য বিশুধ্যতি ॥

ইচ্ছাপূর্বক জ্ঞাতি বা অজ্ঞাতির মৃতদেহের অনুগমন করে সবস্ত্র স্নানপূর্বক অগ্নি স্পর্শ ও ঘৃতপান করে শুদ্ধ হয়।

১০৪। ন বিপ্রং স্বেষু তিষ্ঠৎসু মৃতং শূদ্রেণ নায়য়েং।

অস্বর্গ্যা হ্যাহুতিঃ সা স্যাচ্ছূদ্রসংস্পর্শদূষিতা ॥

আত্মীয়স্বজন থাকলে ব্রাহ্মণের মৃতদেহ শূদ্রদ্বারা বহন করবে না ; (সেই) শরীরাহুতি শূদ্র স্পর্শে দৃষিত হলে স্বর্গলাভের প্রতিকুল হয়।

১০৫। জ্ঞানং তপোহগ্নিরাহারো মৃন্মনো বার্যুপাঞ্জনম্।

বায়ঃ কর্মার্ককালৌ চ শুদ্ধেঃ কর্তৃণি দেহিনাম্ ॥

জ্ঞান, তপস্যা, অগ্নি, (হবিষ্যান্নের) ভক্ষণ, মৃত্তিকা, মন, জল দিয়ে উপলেপন, বায়ু, সৎকর্ম ও সূর্যদর্শনাদি কাল মানুষের শুদ্ধিজনক।

১০৬। সর্বেষামেব শৌচানামর্থশৌচং পরং স্মৃতম্।

যোহর্থে শুচিৰ্হি স শুচির্ন মৃদ্বারিশুচিঃ শুচিঃ ॥

সর্বপ্রকার শুচিতার মধ্যে অর্থে শুচিতা শ্রেষ্ঠ বলে কথিত। যে অর্থে শুচি, সে-ই শুচি ; মৃত্তিকা বা জলের দ্বারা যে শুচি সে নয়।

১০৭। ক্ষান্ত্যা শুধ্যস্তি বিদ্বাংসো দানেনাকার্যকারিণঃ।

প্রচ্ছন্নপাপা জপ্যেন তপসা বেদবিত্তমাঃ ॥

পণ্ডিতগণ ক্ষমা দ্বারা, দুষ্কর্মকারিগণ দানের দ্বারা, গোপনে পাপকারী জপের দ্বারা ও বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণগণ তপস্যা দ্বারা শুদ্ধ হন।

১০৮। মৃত্তোয়ৈঃ শুধ্যতে শোধ্যং নদী বেগেন শুধ্যতি।

রজসা স্ত্রী মনোদুষ্টা সন্ন্যাসেন দ্বিজোত্তমঃ ॥

(মলিন) শোধনীর বস্তু মৃত্তিকা ও জল দ্বারা শুদ্ধ হয়, (মলমূত্রাদি দূষিত) নদী স্রোতের দ্বারা, মনে মনে (পরপুরুষকামনায়) দূষিত স্ত্রীলোক ঋতু দ্বারা, ও ব্রাহ্মণ সন্ন্যাসের দ্বারা শুদ্ধ হয়।

১০৯। অদ্ভির্গার্ত্রাণি শুধ্যন্তি মনঃ সত্যেন শুধ্যাতি।

বিদ্যাতপোভ্যাং ভূতাত্মা বুদ্ধি জ্ঞানেন শুধ্যতি ॥

জলের দ্বারা দেহ, সত্য দ্বাবা মন, জীবাত্মা বিদ্যা ও তপস্যা দ্বারা এবং বুদ্ধি জ্ঞানের দ্বারা শুদ্ধ হয়।

১১০। এষ শৌচসা বঃ প্রোক্তঃ শারীরস্য বিনির্ণয়ঃ।

নানাবিধানাং দ্রব্যাণাং শুদ্ধেঃ শৃণুত নির্ণয়ম্ ॥

শারীরিক শুদ্ধির এই সিদ্ধান্ত আপনাদের বলা হল। বিবিধ দ্রব্যের শুদ্ধিব্যবস্থা শুনুন।

১১১। তৈজসানাং মণীনাঞ্চ সর্বস্যাশ্মময়স্য চ।

ভস্মনাদ্ভির্মৃদাচৈব শুদ্ধিরুক্তা মনীষিভিঃ ॥

স্বর্ণাদি নির্মিত তৈজস দ্রব্য, মণি ও সকল পাথরের দ্রব্যের ভস্ম, জল ও মৃত্তিকা দ্বারা শুদ্ধি মনীষিগণ বলেছেন।

১১২। নির্লেপং কাঞ্চনং ভাণ্ডমদ্ভিরেব বিশুধ্যতি।

অব্জমশ্বময়ঞ্চৈব রাজতঞ্চানুপষ্কৃতম্ ॥

(উচ্ছিষ্টাদি) প্রলেপহীন স্বর্ণপাত্র, (শঙ্খাদি) জলজ বস্তু, পাথরের দ্রব্য, রেখাদিহীন রৌপ্য পাত্র জলের দ্বারাই শুদ্ধ হয়।

১১৩। অপামগেশ্চ সংযোগাদ্ধৈমং রূপ্যঞ্চ নির্বভৌ।

তস্মাৎ তয়োঃ স্বযোন্যৈব নির্ণেকো গুণবত্তরঃ ॥

যেহেতু জল ও অগ্নির সংযোগে সোনা রূপা উৎপন্ন হয়েছে, সেইজন্য তাদের উভয়ের নিজের জন্মকারণ দিয়ে শুদ্ধিই প্রশস্ত।

১১৪। তাম্ৰায়ঃকাংস্যরৈত্যানাং ত্রপুণঃ সীসকস্য চ।

শৌচং যথার্হং কর্তব্যং ক্ষারাম্লোদকবারিভিঃ ॥

তামা, লোহা, কাঁসা, পিতল, রাং ও সীসা যথাযোগ্য ভস্ম, অন্ন ও জলের দ্বারা শোধনীয়।

১১৫। দ্ৰবাণীঞ্চৈব সর্বেষাং শুদ্ধিরুৎপবনং স্মৃতম্‌।

প্রোক্ষণং সংহতানাঞ্চ দারবাণাঞ্চ তক্ষণম্ ॥

সকল প্রকার তরল পদার্থের শুদ্ধি (কুশপত্র দ্বারা) আলোড়ন। স্থূলবস্তুর শুদ্ধি জলসিঞ্চন, কাঠের জিনিসের শুদ্ধি চাঁচা।

১১৬। মার্জনং যজ্ঞপাত্ৰাণাং পাণিনা যজ্ঞকর্মণি।

চমসানাং গ্রহাণাঞ্চ শুদ্ধিঃ প্রক্ষালনেন তু ॥

যজ্ঞকর্মে চমস, গ্রহাদি যজ্ঞপাত্রের শুদ্ধি প্রথমে হাত দিয়ে মাজা (ও পরে) জল দিয়ে ধোয়া।

১১৭। চরূণাং স্রুক্‌স্রুবাণাঞ্চ শুদ্ধিরুষ্ণেন বারিণা।

স্ফ্যশূর্পশকটানাঞ্চ মূসলোলূখলস্য চ ॥

চরু, স্রুক্, স্রুব, স্ফ্য (খড়্গাকৃতি কাষ্ঠ), শূর্প (কুলো), শকট, মুষল ও উলুখলের শুদ্ধি জল দিয়ে হয়।

১১৮। অদ্ভিস্ত্ত প্রোক্ষণং শৌচং বহুনাং ধন্যবাসসাম্‌।

প্রক্ষালনেন ত্বল্পানামদ্ভিঃ শৌচং বিধীয়তে ॥

স্তুপীকৃত ধান্য ও বস্ত্রের শুদ্ধি হয় জলসিঞ্চন দ্বারা। এইগুলি অল্প হলে প্রক্ষালন দ্বারা শুদ্ধি বিহিত।

১১৯। চেলবচ্চর্মণাং শুদ্ধির্বৈদলানাং তথৈব চ।

শাক-মূল-ফলানাঞ্চ ধান্যবচ্ছুদ্দিরিষ্যতে ॥

(স্পৃশ্য) পশুচর্ম, বংশাদি দল নির্মিত বস্তু (চাটাই ইত্যাদি), শাক, মূল ও ফলের শুদ্ধি ধান্যের ন্যায়।

১২০। কৌশেয়াবিকয়োরূষৈঃ কুতপানামরিষ্টকৈঃ।

শ্রীফলৈরংশুপট্টানাং ক্ষৌমাণাং গৌরসৰ্ষপৈঃ ॥

রেশমী বস্ত্র, মেষলোমাদি নির্মিত কম্বলাদি ক্ষারমৃত্তিকাদ্বারা, নেপালী কম্বল নিম্বফলচুর্ণ দ্বারা অংশুপট্ট (সিল্কের কাপড়) বিল্বফলের নির্যাসদ্বারা, ক্ষৌম (অর্থাৎ অতসী গাছের ছালের) বস্ত্র সাদা সর্ষের চূর্ণ দ্বারা শুদ্ধ হয়।

১২১। ক্ষৌমবচ্ছঙ্খশৃঙ্গাণামস্থিদন্তময়স্য চ।

শুদ্ধির্বিজ্ঞানতা কার্যা গোমূত্রেণোদকেন বা ॥

জ্ঞানী ব্যক্তি শৃঙ্গ, অস্থি ও (গজ) দন্ত নির্মিত দ্রব্যের শোধন গোমূত্র বা জলের দ্বারা করবেন।

১২২। প্রোক্ষণাৎ তৃণকাষ্ঠঞ্চ পলালঞ্চৈব শুধ্যতি।

মার্জনোপাঞ্জনৈর্বেশ্ব পুনঃপাকেন মৃন্ময় ॥

জলসিঞ্চনের দ্বারা তৃণ, ইন্ধনাদি কাষ্ঠ ও পলাল৪ শুদ্ধ হয়। গৃহ মার্জন ও উপলেপন দ্বারা এবং মৃত্তিকা ভাণ্ড উত্তপ্ত হলে শুদ্ধ হয়।

১২৩। মদ্যৈমূত্রৈঃ পুরীর্ষৈবা ষ্ঠীবনৈঃ পূযশোণিতৈঃ।

সংস্পৃষ্টং নৈব শুধ্যেত পুনঃ পাকেন মৃন্ময়ম্ ॥

মাটির ভাণ্ড মদ, মুত্র, মল, থুথু, পৃষ ও রক্তদ্বারা দূষিত হলে অগ্নিতাপে শুদ্ধ হয় না।

১২৪। সম্মার্জনোপাঞ্জনেন সেকেনোল্লেখনেন চ।

গবাঞ্চ পরিবাসেন ভূমিঃ শুধ্যতি পঞ্চভিঃ ॥

সংমার্জন, (গোময়াদি দ্বারা) বিলেপন, (গোমূত্র দ্বারা) সেচন, উল্লেখন (চাঁচা) এবং (এক দিবারাত্র) গাভীর বাস দ্বারা ভূমি শুদ্ধ হয়।

১২৫। পক্ষিজনগ্ধং গবাঘ্রাতমবধূতমবক্ষুতম্।

দূষিতং কেশকীটৈশ্চ মৃৎপ্রক্ষেপেণ শুধ্যতি ॥

পক্ষী কর্তৃক ভক্ষিত দ্রব্য, যাকে গাভী ঘ্রাণ করেছে, যা পাদস্পৃষ্ট, যার উপরে হাঁচা হয়েছে, যা কেশ ও কীটের দ্বারা দূষিত, তা মৃত্তিকা প্রক্ষেপে শুদ্ধ হয়।

১২৬। যাবন্নাপৈত্যমেধ্যাক্তাদ্‌গন্ধো লেপশ্চ তৎকৃতঃ।

তাবন্মৃদ্বারি চাদেয়ং সর্বাসু দ্রব্যশুদ্ধিষু ॥

যতক্ষণ পর্যন্ত (মলমূত্রাদি অপবিত্র দ্রব্যের সংস্পর্শে) গন্ধ বা লেপ না যায়, ততক্ষণ সকল

দ্রব্যের শুদ্ধিতে মাটি ও জল প্রয়োগ করা উচিত।

১২৭। ত্রীণি দেবাঃ পবিত্রাণি ব্রাহ্মণানামকল্পয়ন্

অদৃষ্টমদ্ধির্নির্ণিক্তং যচ্চ বাচা প্ৰশস্যতে ॥

দেবগণ ব্রাহ্মণদের পক্ষে পবিত্র বলে তিনটি দ্রব্য সৃষ্টি করেছেন—যার কোন প্রকার উপঘাত (দূষিতভাব) দৃষ্ট হয়নি, যা উপঘাতের আশঙ্কায় জল দিয়ে ধোয়া হয়েছে এবং উপঘাতের আশঙ্কায় যা পবিত্র বলে প্রশংসিত হয়।

১২৮। আপঃ শুদ্ধা ভূমিগতা বৈতৃষ্ণ্যং যাসু গোর্ভবেৎ।

অব্যাপ্তাশ্চেদমেধ্যেন গন্ধবৰ্ণরসান্বিতাঃ ॥

যতটুকু জলে গাভীর পিপাসা নিবৃত্ত হয়, ততটুকু পবিত্র ভূমিতে থেকে গন্ধ, বর্ণ ও রস যুক্ত হলে এবং অপবিত্র দ্রব্য দ্বারা লিপ্ত না হলে শুদ্ধ হয়।

১২৯। নিতং শুদ্ধঃ কারুহস্তঃ পণ্যে যচ্চ প্রসারিতম্‌।

ব্রহ্মচারিগতং ভৈক্ষ্যং নিত্যং মেধ্যমিতি স্থিতিঃ ॥

(মালাকারাদি) কারুশিল্পীর হস্ত ও বিক্রয়ের জন্য প্রসারিত পণ্যদ্রব্য সতত শুদ্ধ। ব্রহ্মচারীর ভিক্ষালব্ধ অন্ন সর্বদা পবিত্র, এই সিদ্ধান্ত।

১৩০। নিত্যমাস্যং শুচি স্ত্রীণাং শকুনিঃ ফলপাতনে।

প্রস্রবে চ শুচির্বৎসঃ শ্বা মৃগগ্রহণে শুচিঃ ॥

স্ত্রীলোকের মুখ সর্বদা শুদ্ধ, পক্ষীর (চঞ্চু) ভ্রষ্ট ফল শুদ্ধ, দুগ্ধদোহনে গোবৎসের মুখ শুদ্ধ, মারণার্থ মৃগগ্রহণে কুকুর শুদ্ধ।

১৩১। শ্বভিহর্তস্য যন্মাংসং শুচি তন্মনুরব্রবীৎ।

ক্রব্যাদ্ভিশ্চ হতস্যান্যৈশ্চণ্ডালাদ্যৈশ্চ দস্যুভিঃ ॥

কুকুর কর্তৃক নিহত (পশুপাখীর), মাংসাশী (পশুপাখী) কর্তৃক নিহত জীবের মাংস এবং চণ্ডালাদি ও দস্যুরা মেরে যে মাংস আনে, তাকে মনু শুদ্ধ বলেছেন।

১৩২। ঊর্ধ্বং নাভের্যানি খানি তানি মেধ্যানি সর্বশঃ।

যান্যধস্তান্যমেধানি দেহাচ্চৈব মলাশ্চ্যুতাঃ ॥

নাভির উপরে যে সকল ইন্দ্রিয় আছে ঐগুলি সকল প্রকারে পবিত্র, নীচে যেগুলি আছে ঐগুলি এবং শরীর থেকে নিঃসৃত মল অপবিত্র।

১৩৩। মক্ষিকা বিপ্রুষচ্ছায়া গৌরশ্ব সূর্যরশ্ময়ঃ।

রজো ভূর্বায়ুরগ্নিশ্চ স্পর্শে মেধ্যানি নির্দিশেৎ ॥

মক্ষিকা (অপবিত্র দ্রব্য স্পর্শ করলেও শুচি), মুখের জলকণা, (পতিত ব্যক্তির) ছায়া, গাভী অশ্ব, সূর্যকিরণ, ধূলি, ভূমি, বায়ু, অগ্নি (চণ্ডালাদি স্পৃষ্ট হলেও) স্পর্শে শুচি বলে জানবে।

১৩৪। বিণ্মৃত্রোৎসর্গশুদ্ধ্যর্থং মৃদ্বার্য্যদেয়মর্থবৎ।

দৈহিকানাং মলানাঞ্চ শুদ্ধিষু দ্বাদশস্বপি ॥

মলমূত্র ত্যাগে শুদ্ধির জন্য এবং (বক্ষ্যমাণ) বার প্রকার দেহ সংক্রান্ত (বসা প্রভৃতি) মলের শুদ্ধিতে প্রয়োজনানুসারে মাটি ও জল গ্রহণীয়।

১৩৫। বসা শুক্রমসৃঙ্‌মজ্জা মূত্রবিট্‌ ঘ্রাণকর্ণবিট্‌।

শ্লেষ্মাশ্রু দূষিকা স্বেদো দ্বাদশৈতে নৃণাং মলাঃ ॥

বসা (চর্বি), শুক্র, রক্ত, মজ্জা, মূত্র, বিষ্ঠা, নাসিকামল, কর্ণমল, শ্লেষ্মা, অশ্রু, নেত্ৰমল ও ঘর্ম মানুষের এই দ্বাদশ প্রকার (শারীরিক) মল।

১৩৬। একা লিঙ্গে গুদে তিস্রস্তথৈকত্র করে দশ।

উভয়োঃ সপ্ত দাতব্যা মৃদঃ শুদ্ধিমভীপ্সতা ॥

শুদ্ধিকামী ব্যক্তির লিঙ্গে একবার, গুহ্যদ্বারে তিনবার, এক (বাম) হস্তে দশবার ও উভয় হস্তে একত্রে সাতবার মৃত্তিকা ও জল প্রযোজ্য।

১৩৭। এতচ্ছৌচং গৃহস্থানাং দ্বিগুণং ব্রহ্মচারিণাম্‌।

ত্রিগুণং স্যাদ্বনস্থানাং যতীনাস্তু চতুর্গুণম্‌॥

এই শুদ্ধি গৃহস্থের জন্য বিহিত, ব্রহ্মচারীর দ্বিগুণ, বানপ্রস্থের তিনগুণ ও সন্ন্যাসীর চতুর্গুণ।

১৩৮। কৃত্বা মূত্রং পুরীষং বা খান্যাচান্ত উপস্পৃশেৎ।

বেদমধ্যেষামাণশ্চ অন্নমশ্নংশ্চ সর্বদা॥

মূত্র বা মল ত্যাগ করে বেদাধ্যয়নকামী হয়ে এবং অন্নভক্ষণকালে সর্বদা আচমনপূর্বক (নাভির উপরিস্থ) ইন্দ্রিয়সমূহ স্পর্শ করবে।

১৩৯। ত্রিরাচামেদপঃ পূর্বং দ্বিঃ প্রমৃজ্যাং ততো মুখম্‌।

শারীরং শৌচমিচ্ছন্‌ হি স্ত্রী শূদ্ৰস্তু সকৃৎ সকৃৎ॥

শারীরিক শৌচকামী ব্যক্তি প্রথমে তিনবার আচমন করবে, দুইবার মুখমার্জন করবে; স্ত্রীলোক ও শূদ্র এক একবার জল পান করবে।

১৪০। শূদ্রাণাং মাসিকং কার্যং বপনং ন্যায়বর্তিনাম্‌।

বৈশ্যাবচ্ছৌচকল্পশ্চ দ্বিজোচ্ছিষ্টঞ্চ ভোজনম্॥

ন্যায়ানুসারী শূদ্রের প্রতিমাসে কেশমুণ্ডন বিধেয়, জনন মরণশৌচে তার বৈশ্যের ন্যায় শুদ্ধিব্যবস্থা এবং দ্বিজের উচ্ছিষ্ট তার ভক্ষ্য।

১৪১। নোচ্ছিষ্টং কুর্বতে মুখ্যা বিপ্রুষোহঙ্গে পতন্তি যাঃ।

ন শ্মশ্রুণি গতান্যাস্যং ন দন্তান্তরধিষ্ঠিতম্‌॥

মুখনিঃসৃত জলকণা দেহে পতিত হলে দেহ উচ্ছিষ্ট হয় না। শ্মশ্রু (দাড়ি) লোম মুখমধ্যে প্রবিষ্ট হলে উচ্ছিষ্ট হয় না, দুই দাঁতের মধ্যস্থিত অন্নাদিখণ্ড উচ্ছিষ্ট নয় (কারণ, গলাধঃকরণ হলেই শুদ্ধি)

১৪২। স্পৃশন্তি বিন্দবঃ পাদৌ য আচাময়তঃ পরান্‌।

ভৌমিকৈস্তে সমা জ্ঞেয়া ন তৈরপ্রযতো ভবেৎ॥

অপরকে আচমনের জল দিতে যে জলবিন্দুগুলি (জলদাতার) পায়ে পড়ে সেইগুলি বিশুদ্ধভূমিস্থিত জলের তুল্য বলে জ্ঞাতব্য; ঐগুলি দ্বারা অশুচি হয় না।

১৪৩। উচ্ছিষ্টেন তু সংস্পৃষ্টো দ্রব্যহস্তঃ কথঞ্চন।

অনিধায়ৈব তদ্‌দ্ৰব্যমাচান্তঃ শুচিতামিয়াৎ॥

যার হাতে কোন বস্তু আছে, সে কোনপ্রকারে উচ্ছিষ্টমুখ ব্যক্তি কর্তৃক স্পৃষ্ট হলে সেই দ্রব্য নীচে না রেখেই আচমন করে শুচি হয়।

১৪৪। বান্তো বিরিক্তঃ স্নাত্বা তু ঘৃতপ্রাশনমাচরেৎ।

আচামেদেব ভুক্‌ত্বান্নং স্নানং মৈথুনিনঃ স্মৃতম্॥

বমন বা ভেদ হলে স্নানপূর্বক ঘৃত পান করবে। অন্ন ভক্ষণ করে আচমন করলেই শুদ্ধি হয়। স্ত্রী সম্ভোগকারীর স্নান বিহিত।

১৪৫। সুপ্ত্বা ক্ষুত্বা ভুক্‌ত্বা চ নিষ্ঠীব্যোক্‌ত্বানৃতানি চ।

পীত্বাপোহধ্যেষ্যমাণশ্চ আচামেৎ প্রযতোহপি সন্॥

ঘুমিয়ে, হেঁচে, খেয়ে, থথু ফেলে, মিথ্যা কথা বলে জলপান করে শুদ্ধি হয়। বেদাধ্যয়নকামী ব্যক্তি শুদ্ধ হলেও আচমন করবেন।

১৪৬। এষ শৌচবিধিঃ কৃৎস্নো দ্রব্যশুদ্ধিস্তথৈব চ।

উক্তো বঃ সর্ববর্ণানাং স্ত্রীণাং ধর্মান্‌ নিবোধত॥

সকল বর্ণের এই সম্পূর্ণ শৌচবিধি ও দ্রব্যশুদ্ধি আপনাদের বলা হল। স্ত্রীলোকদের ধর্ম শুনুন।

১৪৭। বালয়া বা যুবত্যা বা বৃদ্ধয়া বাপি যোষিতা।

ন স্বাতন্ত্র্যেণ কর্তব্যং কিঞ্চিৎ কার্যং গৃহেষ্বপি॥

বাড়ীতেও বালিকা, যুবতী বা বৃদ্ধা নারী স্বাধীনভাবে কিছু করবেন না।

১৪৮। বাল্যে পিতুর্বশে তিষ্ঠেৎ পাণিগ্রাহস্য যৌবনে।

পুত্রাণাং ভর্তরি প্রেতে ন ভজেৎ স্ত্রী স্বতন্ত্রতাম্‌॥

বাল্যকালে পিতার, যৌবনে পতির ও পতিমৃত হলে পুত্রদের অধীনে স্ত্রীলোক থাকবেন; স্ত্রীলোক স্বাধীনভাবে থাকবেন না।

১৪৯। পিত্রা ভর্ত্রা সুতৈর্বাপি নেচ্ছেদ্বিরহমাত্মনঃ।

এষাং বিরহেণ স্ত্রী গর্হ্যে কুর্যাদুভে কুলে॥

পিতা, পতি বা পুত্রের সঙ্গে বিচ্ছেদ কামনা করবেন না; কারণ, এদের বিরহে নারী (পিতৃ মাতৃ) উভয় কুলকে নিন্দনীয় করেন।

১৫০। সদা প্রহৃষ্টয়া ভাব্যং গৃহকার্যেষু দক্ষয়া।

সুসংস্কৃতোপস্করয়া ব্যয়ে চামুক্তহস্তয়া॥

স্ত্রীলোক সর্বদা আনন্দিত ও গৃহকর্মে দক্ষ হবেন! তিনি গৃহোপকরণ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখবেন এবং ব্যয়ে অমুক্তহস্ত (হিসাবী) হবেন।

১৫১। যস্মৈ দদ্যাৎ পিতা ত্বেনাং ভ্রাতা বানুমতে পিতুঃ।

তং শুশ্রূষেত জীবন্তং সংস্থিতঞ্চ ন লঙ্ঘয়েৎ॥

স্ত্রীলোককে পিতা বা পিতার অনুমতিক্রমে তার ভ্রাতা যার নিকট সম্প্রদান করেন, তাকে জীবিতাবস্থায় সেবা করবেন, মৃত হলে (ব্যভিচারাদি দ্বারা বা শ্রাদ্ধতৰ্পণাদি না করে) তার অবমাননা করবেন না।

১৫২। মঙ্গলার্থং স্বস্ত্যয়নং যজ্ঞশ্চাসাং প্রজাপতেঃ।

প্রযুজ্যতে বিবাহেষু প্রদানং স্বাম্যকারণম্॥

স্ত্রীলোকের বিবাহে যে স্বস্ত্যয়ন বা প্রজাপতি যাগ করা হয়, তা তার মঙ্গলের জন্য। (বিবাহের পূর্বে) বাগ্‌দান কন্যার উপরে (ভাবী পতির) স্বামিত্বজনক।

১৫৩। অনৃতাবৃতুকালে চ মন্ত্রসংস্কারকৃৎ পতিঃ।

সুখস্য নিত্যং দাতেহ পরলোকে চ যোষিতঃ॥

ঋতুকালে, ঋতুভিন্ন অন্য কালে বিবাহকারী পতি ইহলোকে ও পরলোকে সর্বদা নারীর সুখদাতা।

১৫৪। বিশীলঃ কামবৃত্তো বা গুণৈর্বা পরিবর্জিতঃ।

উপচর্যঃ স্ত্রিয়া সাধ্ব্যা সততং দেববৎ পতিঃ॥

পতি দুশ্চরিত্র, কামুক বা গুণহীন হলেও তিনি সাধ্বী স্ত্রী কর্তৃক সর্বদা দেবতার ন্যায় সেব্য।

১৫৫। নাস্তি স্ত্রীণাং পৃথগ্‌ যজ্ঞো ন ব্রতং নাপ্যুপোষণম্।

পতিং শুশ্রূষতে যেন তেন স্বর্গে মহীয়তে।

(পতির থেকে) স্বতন্ত্র ভাবে স্ত্রীলোকের যজ্ঞ, ব্ৰত বা উপবাস নেই। তিনি যে পতিসেবা করেন, তাতেই স্বর্গে পূজিতা হন।

১৫৬। পাণিগ্রাহস্য সাধ্বী স্ত্রী জীবতো বা মৃতস্য বা।

পতিলোকমভীপ্সন্তী নাচরেৎ কিঞ্চিদপ্রিয়ম্॥

পতিলোককামী সাধ্বী নারী জীবিত বা মৃত পতির অপ্রিয় কিছু করবেন না।

১৫৭। কামন্তু ক্ষপয়েদ্দেহং পুষ্পমূলফলৈঃ শুভৈঃ।

ন তু নামাপি গৃহ্নীয়াৎ পত্যৌ প্রেতে পরস্য তু॥

স্ত্রী বরং পবিত্র মল, মূল, ফুল খেয়ে দেহ ক্ষয় করবেন, তথাপি পতি মৃত হলে অন্যের নামোচ্চারণ করবেন না।

১৫৮। আসীতামরণাৎ ক্ষান্তা নিয়তা ব্রহ্মচারিণী।

যো ধর্ম একপত্নীনাং কাঙ্ক্ষন্তী তমনুত্তমম্‌॥

একপতিনিষ্ঠা স্ত্রীর যা প্রধান ধর্ম তা যে নারী আকাঙ্ক্ষা করেন, তিনি আমরণ ক্ষমাশীলা, নিয়মানুবর্তিনী ও ব্রহ্মচারিণী হয়ে থাকবেন।

১৫৯। অনেকানি সহস্রাণি কুমারব্রহ্মচারিণাম্‌।

দিবং গতানি বিপ্রাণামকৃত্বা কুলসন্ততিম্॥

অনেক সহস্র অকৃতদার ব্রহ্মচারী সন্তান উৎপাদন না করে স্বর্গ গমন করেছেন।

১৬০। মৃতে ভর্তরি সাধ্বী স্ত্রী ব্রহ্মচর্যে ব্যবস্থিতা।

স্বর্গং গচ্ছত্যপুত্রাপি যথা তে ব্রহ্মচারিণঃ॥

পতি মৃত হলে, ব্রহ্মচর্য অবলম্বন করে সাধ্বী স্ত্রী অপুত্রক হলেও উক্ত ব্রহ্মচারিগণের ন্যায় স্বর্গে গমন করেন।৫

১৬১। অপত্যলোভাদ্‌ যা তু স্ত্রী ভর্তারমতিবর্ততে।

সেহ নিন্দামবাপ্নোতি পতিলোকাচ্চ হীয়তে॥

সন্তান লোভে যে নারী স্বামীকে লঙ্ঘন করেন (অর্থাৎ ব্যাভিচারিণী হন) তিনি ইহকালে নিন্দিত হন এবং পতিলোক থেকে ভ্রষ্ট হন।

১৬২। নান্যোৎপন্না প্রজাস্তীহ ন চাপান্যপরিগ্রহে।

ন দ্বিতীয়শ্চ সাধ্বীনাং ক্কচিদ্ভর্তোপদিশ্যতে॥

অন্যপুরুষ কর্তৃক উৎপন্ন সন্তান (স্ত্রীর) সন্তান নয়। পরপত্নীগামী পুরুষেরও সে সন্তান নয়। কখনও সাধ্বী নারীর দ্বিতীয় পতি৬ উপদিষ্ট হয় না।

১৬৩। পতিং হিত্বাপকৃষ্টং স্বমুৎকৃষ্টং যা নিষেবতে।

নিন্দ্যৈব সা ভবেল্লোকে পরপূর্বেতি চোচ্যতে॥

যে নারী নিজের নিকৃষ্ট পতিকে ত্যাগ করে উৎকৃষ্ট ব্যক্তির ভজনা করেন, তিনি পৃথিবীতে নিন্দনীয়া হন এবং পরপূর্বা (পূর্বে এর অন্য পতি ছিল) সংজ্ঞায় অভিহিত হন।

১৬৪। ব্যভিচারাত্তু ভর্তুঃ স্ত্রী লোকে প্রাপ্নোতি নিন্দ্যতাম্‌।

শৃগালযোনিং প্রাপ্নোতি পাপরোগৈশ্চ পীড্যতে॥

স্ত্রী স্বামীকে অবহেলা করে ব্যভিচারিণী হলে সংসারে নিন্দনীয় হয়, শৃগালের জন্ম প্রাপ্ত হয় এবং (যক্ষ্মা কুষ্ঠাদি) পাপরোগের দ্বারা আক্রান্ত হয়।

১৬৫। পতিং যা নাভিচরতি মনোবাগ্‌দেহসংযতা।

সা ভর্তৃলোকানাপ্নোতি সদ্ভিঃ সাধ্বীতি চোচ্যতে॥

কায়মনোবাক্যে যে নারী পতিকে লঙ্ঘন করেন না, তিনি পতিলোক প্রাপ্ত হন এবং সজ্জন কর্তৃক সাধ্বী বলে কথিত হন।

১৬৬। অনেন নারীবৃত্তেন মনোবাগ্‌দেহসংযতা।

ইহাগ্র্যাং কীর্তিমাপ্নোতি পতিলোকং পরত্র চ॥

কায়মনোবাক্যে সংযত হয়ে এই নারীধর্ম পালনের দ্বারা (স্ত্রীলোক) ইহলোকে শ্রেষ্ঠ কীর্তি, পরলোকে পতিলোক প্রাপ্ত হন।

১৬৭। এবংবৃত্তাং সর্বণাং স্ত্রীং দ্বিজাতিঃ পূর্বমারিণীম্‌।

দাহয়েদগ্নিহোত্রেণ যজ্ঞপাত্ৰৈশ্চ ধর্মবিৎ॥

এইরূপ সদাচারসম্পন্না সবর্ণা স্ত্রী পতির পূর্বে মৃত হলে ধর্মজ্ঞ দ্বিজ অগ্নিহোত্রীয় অগ্নি ও যন্ত্রপাত্র দ্বারা তাঁর দাহ করবেন।

১৬৮। ভার্যায়ৈ পূর্বমারিণ্যৈ দত্ত্বাগ্নীনন্ত্যকর্মণি।

পুনর্দারক্রিয়াং কুর্যাৎ পুনরাধানমেব চ॥

পূর্বে মৃত স্ত্রীকে অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়ায় আগুন দিয়ে পুনরায় বিবাহ করবেন অথবা (শ্ৰৌত বা স্মাৰ্ত) অগ্নি অবলম্বন করবেন।

১৬৯। অনেন বিধিনা নিত্যং পঞ্চযজ্ঞান্ ন হাপয়েৎ।

দ্বিতীয়ম্যয়ুযো ভাগং কৃতদারো গৃহে বসেৎ॥

এই নিয়মে প্রত্যহ পঞ্চযজ্ঞের হানি করবেন না। বিবাহ করে আয়ুর দ্বিতীয় ভাগ গৃহে বাস করবেন।

মানবধর্মশাস্ত্রে ভৃগুপ্ৰোক্ত সংহিতায় পঞ্চম অধ্যায় সমাপ্ত।

পাদটীকা

১ যে ঋতুমতী গাভী বৃষের মিলিত হয়ে চায়।

২, ৩ ২/১৪০ এর অনুবাদ দ্রষ্টব্য।

৪ ২/১৪১ এর অনুবাদ দ্রষ্টব্য।

৫ “রাজ্যাভিষেকাখামাধিপতাকারণম্।” কুল্লুক।

৬ খড়, তুষ।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *