০৪. মনুসংহিতা – চতুর্থ অধ্যায়

চতুর্থ অধ্যায়

১। চতুর্থমায়ুষো ভাগমুষিত্বাদ্যং গুরৌ দ্বিজঃ।

দ্বিতীয়মায়ুষো ভাগং কৃতদারো গৃহে বসেৎ ॥

আয়ুষ্কালের১ প্রথম চতুর্থ ভাগ দ্বিজ গুরুগৃহে বাস করে পরের দ্বিতীয় ভাগ বিবাহিত অবস্থায় গৃহে বাস করবেন।

২। অদ্রোহেণৈব ভূতানামল্পদ্রোহেণ বা পুনঃ।

যা বৃত্তিস্তাং সমাস্থায় বিপ্রো জীবেদনাপদি ॥

আপদ্‌কাল ভিন্ন অন্য সময়ে ব্রাহ্মণ এমন বৃত্তি অবলম্বন করে জীবনধারণ করবেন, যাতে প্রাণীদের অনিষ্ট না হয় বা অল্প অনিষ্ট হয়।

৩। যাত্রামাত্ৰপ্ৰসিদ্ধ্যর্থং স্বৈঃ কর্মভিরগর্হিতৈঃ।

অক্লেশেন শরীরস্য কুর্বীত ধনসঞ্চয়ম্॥

(ব্রাহ্মণ) নিজের অনিন্দিত কর্মদ্বারা শরীরকে কষ্ট না দিয়ে শুধু প্রাণধারণের জন্য অর্থসঞ্চয় করবেন।

৪। ঋতামৃতাভ্যাং জীবেৎ তু মৃতেন প্রমৃতেন বা।

সত্যানৃতাখ্যয়া বাপি ন শ্ববৃত্ত্যা কদাচন॥

ঋত, অমৃত, মৃত, মৃত বা সত্যানৃ— এই বৃত্তিগুলির দ্বারা জীবনধারণ করবেন, কখনও কুকুরের বৃত্তিদ্বারা নয়২।

৫। ঋতমুঞ্ছশীলং জ্ঞেয়মমৃতং স্যাদযাচিতম্‌।

মৃতন্তু যাচিতং ভৈক্ষং প্রমৃতং কর্ষণং স্মৃতম্ ॥

ঋত উঞ্ছশিল৩, অমৃত অযাচিত (ভক্ষ্য), মৃত যাচিত ভিক্ষালব্ধ খাদ্য, প্রমৃত কর্ষণ বলে কথিত।

৬। সত্যানৃতন্ত্ত বাণিজ্যং তেন চৈবাপি জীব্যতে।

সেবা শ্ববৃত্তিরাখ্যাতা তস্মাৎ তাং পরিবর্জয়েৎ ॥

সত্যানৃত৪ বলতে বোঝায় বাণিজ্য, এর দ্বারাও (বরং আপাদ্‌কালে) জীবনধারণ করা যায়। (পরের) সেবা শ্ববৃত্তি বলে কথিত ; সুতরাং একে বর্জন করবে।

৭। কুসূলধান্যকো বা স্যাৎ কুম্ভীধান্যক এব বা।

ত্র্যহৈহিকো বাপি ভবেদশ্বস্তনিক এব বা ॥

কুসূলধান্যক বা কুম্ভীধান্যক হবেন অথবা তিন দিনের উপযোগী ধান্য সঞ্চয় করবেন, কিম্বা আগামী কালের জন্যও সঞ্চয় করবেন না।

৮। চতুর্ণামপি চৈতেষাং দ্বিজানাং গৃহমেধিনাম্।

জ্যায়ান্ পরঃ পরো জ্ঞেয়ো ধর্মতো লোকজিত্তমঃ ॥

গৃহস্থ দ্বিজগণের এই চার বৃত্তির (অর্থাৎ কুসূলধান্যাদির) মধ্যে পর পর বৃত্তি শ্রেয়, ধর্মানুসারে (স্বর্গাদি) লোক জয় করার জন্য উৎকৃষ্ট।

৯। ষট্‌কর্মৈকো ভবত্যেষাং ত্রিভিরন্যঃ প্রবর্ততে।

দ্বাভ্যামেকশ্চতুর্থস্তু ব্ৰহ্মসত্ৰেণ জীবতি ॥

এই সকল (গৃহস্থের) মধ্যে (বৃহৎপরিবার) ব্যক্তি হন ষট্‌কর্মা,৫ (অল্পপরিবার) অপর ব্যক্তি তিন৬ বৃত্তি অবলম্বন করেন, কেউ বা দুই৭ বৃত্তি দ্বারা, চতুর্থ ব্যক্তি ব্ৰহ্মসত্র৮ দ্বারা জীবন ধারণ করেন। (মেধাতিথি মতে) উক্ত ব্যক্তিগণ যথাক্রমে কুসূলধান্যক, কুম্ভীধান্যক, ত্র্যহৈহিক ও অশ্বস্তনিক।

১০। বর্তয়ংশ্চ শিলোঞ্ছাভ্যামগ্নিহোত্রপরায়ণঃ।

ইষ্টীঃ পার্বায়নান্তীয়াঃ কেবলা নির্বপেৎ সদা॥

শিলোঞ্ছদ্বারা জীবনধারী (ব্যয়সাধ্য কর্মে অক্ষম বলে শুধু) অগ্নিহোত্র অনুষ্ঠান করবেন এবং সর্বদা কেবল দর্শপৌর্ণমাসাদি যন্ত্র করবেন।

১১। ন লোকবৃত্তং বৰ্তেত বৃত্তিহেতোঃ কথঞ্চন।

অজিহ্মামশঠাং শুদ্ধাং জীবেদ্‌ব্রাহ্মণজীবিকাম্‌ ॥

জীবিকার জন্য কখনও লোকবৃত্ত৯ করবেন না। সরল ও শঠতাহীন ব্রাহ্মণের জীবিকা দ্বারা জীবনধারণ করবেন।

১২। সন্তোষং পরমাস্থায় সুখার্থী সংযতো ভবেৎ।

সন্তোষমূলং হি সুখং দুঃখমূলং বিপর্যয়ঃ ॥

সুখাৰ্থী ব্যক্তি পরম সন্তোষ অবলম্বন করে (প্রচুর ধনার্জনে) সংযম অবলম্বন করবেন ; কারণ, সুখের মূল সন্তোষ, এর বিপরীত দুঃখের মূল।

১৩। অতোহন্যতময়া বৃত্ত্যা জীবংস্ত্ত স্নাতকো দ্বিজঃ।

স্বর্গায়ুষ্যযশস্যানি ব্ৰতানীমানি ধারয়েৎ ॥

এইগুলির অন্যতম বৃত্তি দ্বারা জীবনধারণ করে স্নাতক দ্বিজ স্বর্গলাভের যোগ্য, আয়ুবর্ধক ও যশস্কর এই (বক্ষ্যমাণ) ব্ৰতগুলি অবলম্বন করবেন।

১৪। বেদোদিতং স্বকং কর্ম নিত্যং কুর্যাদতন্দ্ৰিতঃ।

তদ্ধি কুর্বন্‌ যথাশক্তি প্রাপ্নোতি পরমাং গতিম্ ॥

প্রত্যহ অনলসভাবে বেদোক্ত নিজ কর্ম করবেন। যথাশক্তি ঐ কর্ম করে (লোক) মোক্ষলাভ করে।

১৫। নেহেতার্থান্‌ প্রসঙ্গেন ন বিরুদ্ধেন কর্মর্ণা।

ন বিদ্যমানেধ্বর্থেষু নার্ত্যামপি যতস্ততঃ ॥

গীতবাদ্যাদি দ্বারা ও শাস্ত্রনিষিদ্ধ (অযাজ্যযাজনাদি) কর্মের দ্বারা অথোপার্জনের প্রয়াস করবেন না। অর্থ থাকলে বা না থাকলেও (পতিতাদি) যার তার কাছ থেকে (অর্থ সংগ্রহ) করবেন না।

১৬। ইন্দ্রিয়ার্থেষু সর্বেষু ন প্রসজ্যেত কামতঃ।

অতিপ্রসক্তিঞ্চৈতেষাং মনসা সন্নিবর্তয়েৎ ॥

(রূপাদি) সকল ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয়ে কামবশে অত্যন্ত আসক্ত হবেন না। এদের প্রতি অত্যাসক্তি মনে মনে নিবৃত্ত করবেন।

১৭। সর্বান্ পরিত্যজেদর্থান্‌ স্বাধ্যায়স্য বিরোধিনঃ।

যথা তথাধ্যাপয়ংস্তু সা হ্যস্য কৃতকৃত্যতা ॥

বেদাধ্যয়নবিরোধী (অতি ধনীর গৃহে গমন, কৃষি প্রভৃতি) সকল বিষয় পরিত্যাগ করবেন। (বেদাধ্যয়নবিরোধী ভিন্ন অন্য) যে কোন উপায়ে অধ্যাপনা করে তাতেই কৃতার্থ হবেন।

১৮। বয়সঃ কর্মণোহর্থস্য শ্রুতস্যাভিজনস্য চ।

বেষবাগ্‌বুদ্ধিসারূপ্যমাচরন্‌ বিচরেদিহ ॥

বয়স, কর্ম, ধন, বেদবিদ্যা এবং বংশের উপযোগী বেশ, বাক্য ও বুদ্ধি অবলম্বন করে সংসারে বিচরণ করবেন।

১৯। বুদ্ধিবৃদ্ধিকরাণ্যশু ধন্যানি চ হিতানি চ।

নিত্যং শাস্ত্ৰাণ্যবেক্ষেত নিগমাংশ্চৈব বৈদিকান্ ॥

প্রত্যহ বুদ্ধিবৃদ্ধিজনক, শীঘ্র অর্থপ্রাপ্তির সহায়ক ও হিতকর শাস্ত্ৰসমুহ ও বেদার্থবোধক নিগমাদি শাস্ত্র পর্যালোচনা করবেন।

২০। যথা যথা হি পুরুষঃ শাস্ত্রং সমধিগচ্ছতি।

তথা তথা বিজানাতি বিজ্ঞানঞ্চাস্য রোচতে ॥

মানুষ যেমন যেমন শাস্ত্র আয়ত্ত করে, তেমন তেমন জ্ঞানলাভ করে, (শাস্ত্রান্তর সম্বন্ধে) জ্ঞানও উজ্জ্বল হয়।

২১। ঋষিযজ্ঞং দেবযজ্ঞং ভূতযজ্ঞঞ্চ সর্বদা।

নৃযজ্ঞং পিতৃযজ্ঞঞ্চ যথাশক্তি ন হাপয়েৎ ॥

শক্তি অনুসারে ঋষিজ্ঞ, দেবযজ্ঞ, ভূতযজ্ঞ, নৃযজ্ঞ ও পিতৃযজ্ঞ পরিত্যাগ করবেন না।

২২। এতানেকে মহাযজ্ঞান্‌ যজ্ঞশাস্ত্রবিদো জনাঃ।

অনীহমানাঃ সততমিন্দ্রিয়েধ্বেব জুহ্‌তি ॥

কোন কোন যন্ত্রশাস্ত্রজ্ঞ ব্যক্তি এইগুলিকে মহাযজ্ঞ বলেন। এইগুলির বাহ্যিক অনুষ্ঠান না করে সর্বদা (পাঁচটি) জ্ঞানেন্দ্রিয়েই (পঞ্চরূপ) জ্ঞানাদি সংযম করেন।

২৩। বাচ্যেকে জুহ্‌তি প্রাণং প্রাণে বাচঞ্চ সর্বদা।

বাচি প্রাণে চ পশ্যন্তো যজ্ঞনির্বৃত্তিমক্ষয়াম্ ॥

বাক্যে ও প্রাণবায়ুতে যজ্ঞের অক্ষয়ফললাভ হয় জেনে কেউ কেউ (অধ্যাপনা ও ঈশ্বরের মহিমাগাদি) বাক্যে প্রাণকে ও (ধ্যানধারণাদি) প্রাণে বাক্যকে হোম করেন।

২৪। জ্ঞানেনৈবাপরে বিপ্রা যজন্ত্যেতৈর্মখৈঃ সদা।

জ্ঞানমূলাং ক্রিয়ামেষাং পশ্যন্তো জ্ঞানচক্ষুষা ॥

অন্য ব্রাহ্মণ জ্ঞানচক্ষুতে এইগুলির ক্রিয়াকে জ্ঞানমূল দেখে সর্বদা (ব্রহ্ম) জ্ঞানদ্বারাই এই যজ্ঞগুলির অনুষ্ঠান করেন।

২৫। অগ্নিহোত্রঞ্চ জুহুয়াদাদ্যন্তে দ্যুনিশোঃ সদা।

দর্শেন চার্ধর্মাসান্তে পৌর্ণমাসেন চৈব হি ॥

(উদিতহোমকর্তা) দিবারাত্রির প্রথমে, (অনুদিত হোমকর্তা) দিবারাত্রির শেষে সর্বদা অগ্নিহোত্র যজ্ঞ করবেন ; অর্ধমাসান্তে (অমাবস্যায়) দর্শ ও (পূর্ণিমায়) পৌর্ণমাস নামক যাগ করবেন।

২৬। সস্যান্তে নবসস্যেষ্ট্যা তথর্ত্বত্তে দ্বিজোহধ্বরৈঃ।

পশুনা ত্বয়নস্যাদৌ সমান্তে সৌমিকৈৰ্মখৈঃ॥

দ্বিজ (সঞ্চিত শস্য) শেষ হলে (আগ্ৰয়ণরূপ) যাগ নূতন শস্যজন্ম উপলক্ষ্যে সম্পাদন করবেন, ঋতু১০ সমাপ্ত হলে (চাতুর্মাস্য) যাগ, (উত্তর ও দক্ষিণ) অয়নের প্রথমে পশুযাগ ও বৎসরের শেষে সোমরসসাধ্য (অগ্নিষ্টোমাদি) যাগ করবেন।

২৭। নানিষ্ট্বা নবসস্যেষ্ট্যা পশুনা চাগ্নিমান্‌ দ্বিজঃ।

নবান্নমদ্যান্মাংসং বা দীর্ঘমায়ুর্জিজীবিষুঃ ॥

দীর্ঘায়ুকামী সাগ্নিক ব্রাহ্মণ নবশস্য যাগ ও পশুযাগ না করে নবান্ন বা মাংস ভক্ষণ করবেন না।

২৮। নবেনানৰ্চিতা হ্যস্য পশুহব্যেন চাগ্নয়ঃ।

প্রাণানেবাত্তুমিচ্ছত্তি নবান্নামিষগর্দ্ধিনঃ॥

নবশস্যযাগ ও পশুহব্য দ্বারা অর্চিত না হলে অগ্নিগণ নবান্ন ও মাংস লোলুপ ব্যক্তির প্রাণই ভক্ষণ করতে ইচ্ছা করে।

২৯। আসনাশনশয্যাভিরদ্ভির্মূলফলেন বা।

নাস্য কশ্চিদ্বসেদ্‌গেহে শক্তিতোহনর্চিতোহতিথিঃ ॥

তাঁর গৃহে আসন, ভোজ্য, শয্যা, জল, মূল বা ফলদ্বারা যথাশক্তি পূজিত না হয়ে কোন অতিথি বাস করবেন না।

৩০। পাষণ্ডিনো বিকৰ্মস্থান্‌ বৈড়ালব্ৰতিকান্‌ শঠান্‌।

হৈতুকান্ বকবৃত্তীংশ্চ বাঙ্মাত্রেণাপি নাৰ্চয়েৎ ॥

পাষণ্ড১১, নিষিদ্ধবৃত্তিধারী, বৈড়ালব্ৰতাবলম্বী১২, শঠ, হৈতুক ও বকবৃত্তিধারী১৩ ব্যক্তিকে কখনও বাক্যদ্বারাও সম্মান করবেন না।

৩১। বেদবিদ্যাব্রতস্নাতান্‌ শ্রোত্রিয়ান্‌ গৃহমেধিনঃ।

পূজয়েদ্ধব্যকব্যেন বিপরীতাংশ্চ বর্জয়েৎ ॥

গৃহস্থগণ বিদ্যাস্নাতক, ব্রতস্নাতক ও বিদ্যাব্রত উভয়স্নাতক বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণগণকে হব্য কব্য দ্বারা পূজা করবেন ; যাঁরা এর বিপরীত, তাঁদের বর্জন করবেন।

৩২। শক্তিতোহপচমানেভ্যো দাতব্যং গৃহমেধিনা।

সংবিভাগশ্চ ভূতেভ্যঃ কর্তব্যোহনুপরোধতঃ ॥

যে ব্রহ্মচারী প্রভৃতি অন্নপাক করেন না তাঁদের গৃহস্থ যথাশক্তি অন্ন দান করবেন। পরিবারস্থ লোকের ক্ষতি না করে বৃক্ষাদি ভূত১৪ সমূহের জন্য জলাদি দ্বারা সংবিভাগ কর্তব্য।

৩৩। রাজতো ধনমন্বিচ্ছেৎ সংসীদন্‌ স্নাতকঃ ক্ষুধা।

যাজ্যাস্তেবাসিনোর্বাপি ন ত্বন্যত ইতি স্থিতিঃ ॥

স্নাতক ক্ষুধাক্লিষ্ট হয়ে রাজার থেকে বা যজমান অথবা ছাত্রের থেকে ধন কামনা করবেন, অন্যের থেকে নয়— এই শাস্ত্রসম্মত বিধি।

৩৪। ন সীদেৎ স্নাতকো বিপ্রঃ ক্ষুধা শক্তঃ কথঞ্চন।

ন জীর্ণমলবদ্বাসা ভবেচ্চ বিভবে সতি ॥

স্নাতক ব্রাহ্মণ (প্রতিগ্রহাদি দ্বারা) সক্ষম হলে কখনও ক্ষুধাক্লিষ্ট হবেন না। অর্থ থাকলে ছিন্ন বা মলিন বস্ত্র পরিধান করবেন না।

৩৫। ক্লৃপ্তকেশনখশ্মশ্ৰুর্দান্তঃ শুক্লাম্বরঃ শুচিঃ।

স্বাধ্যায়ে চৈব যুক্তঃ স্যান্নিত্যমাত্মহিতেষু চ ॥

(স্নাতক) কেশ, নখ ও শ্মশ্রু ছেদন করে, জিতেন্দ্রিয়, পরিষ্কার বন্ত্রপরিহিত, শুচি হয়ে বেদাধ্যয়নে ও নিজের হিতানুষ্ঠানে রত থাকবেন।

৩৬। বৈণবীং ধারয়েদ্‌ যষ্টিং সোদকঞ্চ কমণ্ডলুম্‌।

যজ্ঞোপবীতং বেদঞ্চ শুভে রৌক্মে চ কুণ্ডলে॥

(তিনি) বাঁশের দণ্ড, জলপূর্ণ কমণ্ডলু, যজ্ঞোপবীত, বেদ (বা কুশমুষ্টি) ও সুন্দর সুবর্ণকুণ্ডলয়দ্বয় ধারণ করবেন।

৩৭। নেক্ষেতোদ্যমাদিত্যং ন্যস্তং যন্তং কদাচন।

নোপসৃষ্টং ন বারিস্হং ন মধ্যং নভসো গতম্‌ ॥

(তিনি) উদীয়মান, অস্তায়মান, রাহুগ্রস্ত, জলমধ্যগত বা আকাশমধ্যস্থ সূর্যকে দেখবেন না।

৩৮। ন লঙ্ঘয়েদ্বৎসতন্ত্রীং ন প্রধাবেচ্চ বৰ্ষতি।

ন চোদকে নিরীক্ষেত স্বং রূপমিতি ধারণা ॥

যে দড়ি দিয়ে বাছুর বাঁধা থাকে, তা ডিঙিয়ে যাবেন না, বৃষ্টি হলে দৌড়াবেন না এবং জলে নিজের রূপ দেখবেন না— এই শাস্ত্ৰসিদ্ধান্ত।

৩৯। মৃদং গাং দৈবতং বিপ্রং ঘৃতং মধু চতুষ্পথম্‌।

প্রদক্ষিণানি কুর্বীত প্রজ্ঞাতাংশ্চ বনস্পতীন্‌ ॥

মৃত্তিকারাশি, গাভী, দেবতা, ব্রাহ্মণ, ঘৃত, মধু, চতুষ্পথ এবং প্রসিদ্ধ বিশাল বৃক্ষকে ডান দিকে রেখে গমন করবেন।

৪০। নোপগচ্ছেৎ প্রমত্তোহপি স্ত্রিয়মার্তবদর্শনে।

সমানশয়নে চৈব নশয়ীত তয়া সহ ॥

কামার্ত হলেও ঋতুদর্শনকালে স্ত্রীসংভোগ করবেন না এবং (ঐ সময়ে) তাঁর সঙ্গে এক শয্যায় শোবেন না।

৪১। রজসাভিপ্লুতাং নারীং পারস্য হ্যপগচ্ছতঃ।

প্রজ্ঞা তেজো বলং চক্ষুরায়ুশ্চৈব প্রহীয়তে॥

রজস্বলা নারীগমন যে করে তার প্রজ্ঞা, তেজ, বল, চক্ষু ও আয়ু নষ্ট হয়।

৪২। তাং বিবর্জয়তস্তস্য রজসা সমভিপ্লুতাম্।

প্রজ্ঞা তেজো বলং চক্ষুরায়ুশ্চৈব প্রবর্ধতে॥

রজস্বলা নারীকে বর্জন করলে তার প্রজ্ঞা, তেজ, বল, দৃষ্টিশক্তি ও আয়ু বৃদ্ধি পায়।

৪৩। নাশ্লীয়াদ্ভাৰ্যয়া সার্ধং নৈনামীক্ষেত চাশ্নতীম্।

ক্ষুবতীং জৃম্ভমাণাং বা ন চাসীনাং যথাসুখম্‌ ॥

স্ত্রীর সঙ্গে আহার করবেন না, তাঁর আহারকালে তাঁকে দেখবেন না। স্ত্রীর হাঁচবার, হাই তোলার বা আরাম করে (অসংযতভাবে) বসে থাকার সময়ে তাঁকে দেখবেন না।

৪৪। নাঞ্জয়ন্তীং স্বকে নেত্রে ন চাভ্যক্তামনাবৃতাম্।

ন পশ্যেৎ প্রসবত্তীঞ্চ তেজস্কামো দ্বিজোত্তমঃ॥

স্ত্রীর নিজের চোখে কাজল দেওয়ার সময়, তাঁর গায়ে তৈলমর্দন হলে, তিনি অনাবৃত থাকলে বা সন্তান প্রসব করতে থাকলে তেজকামী ব্রাহ্মণ তাঁকে দেখবেন না।

৪৫- নান্নমদ্যাদেকবাসা ন নগ্নঃ স্নানমাচরেৎ।

৪৭। ন মূত্রং পথি কুর্বীত ন ভস্মনি ন গোব্ৰজে ॥

ন ফালকৃষ্টে ন জলে ন চিত্যাং ন চ পর্বতে।

ন জীর্ণদেবায়তনে ন বল্মীকে কদাচন॥

ন সসত্ত্বেষু গর্তে ন গচ্ছন্নাপি চ স্থিতঃ।

ন নদীতীরমাসাদা ন চ পর্বতমস্তকে ॥

এক বস্ত্রে অন্ন ভক্ষণ করবেন না, উলঙ্গ হয়ে স্নান করবেন না, পথে, ভস্মের উপরে, গোচারণভূমিতে, লাঙ্গলে চাষ করা জমিতে, জলে, চিতিতে১৫, পর্বতে, জীর্ণমন্দিরে, উই ঢিপিতে, সর্পাদির গর্তে, চলতে চলতে, দাঁড়িয়ে, নদীতীরে বা পর্বতশিখরে মূত্রত্যাগ করবেন না।

৪৮। বায়ুগ্নিবিপ্রমাদিত্যমপঃ পশ্যংস্তথৈব গাঃ।

ন কদাচন কুর্বীত বিণ্মুত্ৰস্য বিসর্জনম্ ॥

বায়ু, অগ্নি, ব্রাহ্মণ, সূর্য, জল বা গাভী দেখতে দেখতে কখনও মল মূত্র ত্যাগ করবেন না।

৪৯। তিরস্কৃত্যোচ্চরেৎ কাষ্ঠলোষ্টপত্ৰতৃণাদিনা।

নিয়ম্য প্রযতো বাচং সংবীতাঙ্গোহবগুণ্ঠিতঃ ॥

কাঠ, মাটি, পাতা, ঘাস প্রভৃতি দ্বারা আবৃত স্থানে অনুচ্ছিষ্ট ও মৌনী অবস্থায় শরীর আচ্ছাদিত করে মাথা ঢেকে মূত্রত্যাগ করবে।

৫০। মূত্রোচ্চারসমুৎসর্গং দিবা কুর্যাদুদ্‌ঙমুখঃ।

দক্ষিণাভিমুখো রাত্রৌ সন্ধ্যয়োশ্চ তথা দিবা ॥

দিনে এবং (দিবা রাত্রির) উভয় সন্ধিক্ষণে উত্তরমুখী হয়ে মূত্রত্যাগ ও পুরীষোৎসর্গ বিধেয়, রাত্রে দক্ষিণমুখী (হয়ে করা উচিত)।

৫১। ছায়ায়ামন্ধকারে বা রাত্রাবহনি বা দ্বিজঃ।

যথাসুখমুখঃ কুর্যাৎ প্রাণবাধাভয়েষু চ ॥

রাত্রিবেলা ছায়ায় বা অন্ধকারে, দিনের বেলা ছায়ায় বা (কুয়াসাদিজনিত) অন্ধকারে (দিগ্‌বিশেষাজ্ঞানে) (চোর বা ব্যাঘ্ৰাদিকৃত) প্রাণবিনাশের আশঙ্কা থাকলে যেদিকে ইচ্ছা সেদিকে মুখ করে দ্বিজ (মূত্র পুরীষ উৎসর্গ করবেন)।

৫২। প্রত্যগ্নিং প্রতিসূর্যংচ প্রতিসোমোদকদ্বিজান্‌।

প্রতিগাং প্রতিবাতং চ প্রজ্ঞা নশ্যতি মেহতঃ ॥

অগ্নি, সুর্য, চন্দ্র, জল, দ্বিজ, গাভী বা বায়ুর অভিমুখী হয়ে মূত্র পুরীষ উৎসর্গ যে করে, তার প্রজ্ঞা নষ্ট হয়।

৫৩। নাগ্নিং মুখেনোপধমেন্নগ্নাং নেক্ষেত চ স্ত্রিয়ম্।

নামেধ্যং প্রক্ষিপেদগ্নৌ ন চ পাদৌ প্রতাপয়েৎ ॥

মুখে ফুঁ দিয়ে আগুন জ্বালাবে না, (মৈথুন ভিন্ন অন্য সময়ে) বিবস্ত্রা নারীর দিকে তাকাবে না, আগুনে কোন অপবিত্র দ্রব্য নিক্ষেপ করবে না এবং পা গরম করবে না।

৫৪। অধস্তান্নোপদধ্যাচ্চ ন চৈনমভিলংঘয়েৎ।

ন চৈনং পাদতঃ কুর্যান্ন প্রাণাবাধমাচরেৎ ॥

(খাট প্রভৃতির) নীচে (অঙ্গারপাত্রাদি) রাখবে না, আগুন ডিঙ্গিয়ে যাবে না, পায়ের দিকে তাকে রাখবে না, প্রাণপীড়াকর কর্ম করবে না।

৫৫। নাশ্নীয়াৎ সন্ধিবেলায়াং ন গচ্ছেন্নাপি সংবিশেৎ।

ন চৈব প্রলিখেদ্‌ ভূমিং নাত্মনোপহরেৎ স্রজম্ ॥

সন্ধ্যাবেলা ভোজন ও কোথাও গমন করবে না, ঘুমাবে না। মাটিতে দাগ কাটবে না, (নিজের পরিহিত) মালা নিজে অপসারণ করবে না।

৫৬। নাপ্সু মূত্রং পুরীষং বা ষ্ঠীবনং বা সমুৎসৃজেৎ।

অমেধালিপ্তমন্যদ্বা লোহিতং বা বিষাণি বা ॥

জলে মূত্র পুরীয উৎসর্গ করবে না, থুথু ফেলবে না এবং অপবিত্র দ্রব্য, রক্ত বা বিষ নিক্ষেপ করবে না।

৫৭। নৈকঃ সুপ্যাচ্ছুন্যগেহে শ্রেয়াংসং ন প্রবোধয়েৎ।

নোদক্যাভিভাষেত যজ্ঞং গচ্ছেন্ন চাবৃতঃ ॥

খালি বাড়ীতে একা ঘুমাবে না, (বিত্ত বিদ্যা প্রভৃতি হেতু) যিনি শ্রেষ্ঠ, তাঁকে জাগাবে না, রজস্বলা নারীর সঙ্গে কথা বলবে না, (ঋত্বিক্‌রূপে) বৃত না হয়ে যজ্ঞে যাবে না।

৫৮। অগ্ন্যগারে গবাং গোষ্ঠে ব্ৰহ্মণানাং চ সন্নিধৌ।

স্বাধ্যায়ে ভোজনে চৈব দক্ষিণং পাণিমুদ্ধরেৎ ॥

অগ্নিশালায়, গোষ্ঠে (গরু চরাবার মাঠে) এবং ব্রাহ্মণদের সান্নিধ্যে, বেদপাঠ ও ভোজনকালে ডান হাত (বস্ত্র থেকে) বাইরে রাখবে।

৫৯। না বারয়েদ্‌ গাং ধয়ন্তীং ন চাচক্ষীত কস্যচিৎ।

ন দিবীন্দ্রায়ুধকং দৃষ্টা কস্যচিদ্ দর্শয়েদ্‌ বুধঃ ॥

(জল বা দুগ্ধ) পানরত গাভীকে বারণ করবে না, (অপরের দুগ্ধাদি) পানরত গাভী সম্বন্ধে তাকে বলবে না। আকাশে রামধনু দেখে (নিষিদ্ধ বস্তু দর্শনের দোষজ্ঞ) ব্যক্তি কাউকে দেখাবে না।

৬০। নাধার্মিকে বসেদ্‌গ্রামে ন ব্যাধিবহুলে ভূশম্।

নৈকঃ প্রপদ্যেতাধ্বানং ন চিরং পর্বতে বসেৎ॥

যে গ্রামে অধার্মিক লোক বাস করে সেখানে বাস করবে না, (যে গ্রামে) অনেক লোক (নিন্দিত দুশ্চিকিৎস্য) রোগে ভোগে সেখানে দীর্ঘকাল বাস করবে না। একাকী পথ চলবে না ; পাহাড়ে দীর্ঘকাল বাস করবে না।

৬১। ন শূদ্ররাজ্যে নিবসেন্নাধার্মিকজনাবৃতে।

ন পাষণ্ডিগণাক্রান্তে নোপসৃষ্টেহস্ত্যজৈর্নৃভিঃ ॥

যে রাজ্যে শূদ্র রাজা সেখানে, যে গ্রামাদি (বাহ্যতঃ) অধার্মিক জন পরিবৃত সেখানে, (বেদবাহ্যলিঙ্গধারী) পাষণ্ডিগণের দ্বারা বশীভূত স্থানে এবং (চণ্ডালাদি) অন্ত্যজজনকর্তৃক উপদ্রুত স্থানে বাস করবে না।

৬২। ন ভুঞ্জীভোদ্ধৃতস্নেহং নাতিসৌহিত্যমাচরেৎ।

নাতিপ্ৰগে নাতিসায়ং ন সায়ং প্রাতরাশিতঃ ॥

যে দ্রব্যের থেকে স্নেহপদার্থ (তৈল) উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে, তা (খইলাদি) ভক্ষণ করবে না, অতি তৃপ্তিকর খাদ্য খাবে না, সুর্যের উদয় ও অস্তকালে ভোজন করবে না। প্রাতে অধিক ভোজন করে সন্ধ্যাবেলা ভোজন করবে না।

৬৩। ন কুর্বীত বৃথাচেষ্টাং ন বার্যঞ্জলিনা পিষেৎ।

নোৎসঙ্গে ভক্ষয়েদ্‌ভক্ষ্যান্ন জাতু স্যাৎ কুতূহলী ॥

বৃথাচেষ্টা (অর্থাৎ এমন কাজ যার দৃষ্ট বা অদৃষ্ট ফল নেই) করবে না। আঁজলে নিয়ে জল পান করবে না। কোলে খাদ্য রেখে খাবে না। (অনাবশ্যক বিষয়ে) কৌতুহলী হবে না।

৬৪। ন নৃত্যেদথবা গায়েন্নবাদিত্রাণি বাদয়েৎ।

নাস্ফোটয়েন্ন চ ক্ষ্বেড়েন্ন রক্তো বিরাবয়েৎ ॥

(অশাস্ত্রীয়) নৃত্য, গীত ও বাদ্য করবে না। করতলের দ্বারা বাহুতে ধ্বনি উৎপাদন করবে না। দন্তদ্বারা অব্যক্ত শব্দ করবে না। অনুরাগের বশে গর্দভাদির মত শব্দ করবে না।

৬৫। ন পাদৌ ধাবয়েৎকাংস্যে কদাচিদপি ভাজনে।

ন ভিন্নভাণ্ডে ভুঞ্জীত ন ভাবপ্রতিদূষিতে॥

কাঁসার পাত্রে কখনও পাদপ্রক্ষালন করবে না। ভাঙ্গা পাত্রে ভোজন করবে না। যাতে মনে ঘৃণা হয়, তাতে ভোজন করবে না। (ভাঙ্গা পাত্র-পৈঠনসির প্রমাণ বলে কুল্লুকভট্ট লিখেছেন যে, সোনা, রূপা বা তামা ভিন্ন অন্য উপাদানে নির্মিত পাত্রের পক্ষে এই নিষেধ প্রযোজ্য।)

৬৬। উপানহৌ চ বাসশ্চ ধৃতমন্যৈর্ন ধারয়েৎ।

উপবীতমলংকারং স্রজং করকমেব চ ॥

অপরের ব্যবহৃত জুতা, কাপড়, পৈতা, অলংকার, ফুলের মালা ও কমণ্ডলু ব্যবহার করবে না।

৬৭। নাবিনীতৈর্ব্রজেদ্‌ধুর্যৈ র্ন চ ক্ষুদ্‌ব্যাধিপীড়িতৈঃ।

ন ভিন্নশৃঙ্গাক্ষিখুরৈ র্ন বালধিবিরূপিতৈঃ ॥

এমন বাহন (হাতী, ঘোড়া প্রভৃতি) নিয়ে চলবে না, যা পোবা বা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নয়, যা ক্ষুধাক্লিষ্ট বা রোগাৰ্ত, যার শিং, চোখ, খুর বা ল্যাজ ভাঙ্গা (চোখের ক্ষেত্রে বুঝতে হবে কাণা বা অন্ধ)।

৬৮। বিনীতৈস্তু ব্ৰজেন্নিত্যমাশুগৈর্লক্ষণান্বিতৈঃ।

বর্ণরূপোপসম্পন্নৈঃ প্রতোদেনাতুদন্‌ ভূশম্ ॥

সর্বদা এমন বাহন নিয়ে চলবে, যা প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত, শীঘ্রগামী, সুলক্ষণসম্পন্ন, সুন্দর বর্ণযুক্ত এবং মনোজ্ঞাকৃতিবিশিষ্ট ; এদের প্রতোদের দ্বারা খুব বেশী আঘাত করতে হয় না। (প্রতোদ— যা দিয়ে আঘাত করা যায় ; যেমন হাতীর বেলা অঙ্কুশ, ঘোড়ার ক্ষেত্রে চাবুক এবং ষাঁড়ের পক্ষে লাঠি)।

৬৯। বালাতপঃ প্রেতধূমো বর্জ্যং ভিন্নং তথাসনম্।

ন ছিন্দ্যান্নখলোমানি দস্তৈর্নোৎপাটয়েন্নখ্যন্‌ ॥

সদ্য উদিত সূর্যের তাপ, দাহ্যমান শবের ধোঁয়া এবং ভাঙ্গা (বা ছেঁড়া) আসন বর্জনীয়। নখ ও লোম (বাড়লেও) ছিড়বে না। দাঁত দিয়ে নখ উৎপাটিত করবে না। (বালাতপ— মেধাতিথির মতে, এ রকম তাপ মাত্র তিন মুহূর্ত সেবনীয়। ১ মুহূর্ত= ৪৮ মিনিট।)

৭০। ন মৃল্লোষ্টং চ মৃদ্বীয়ান্নছিন্দ্যাৎ করজৈস্তৃণম্।

ন কর্ম নিষ্ফলং কুর্যান্নায়ত্যামসুখোদয়ম্‌॥

(বিনা কারণে) মাটির ঢেলা চূর্ণ করবে না। নখ দিয়ে তৃণচ্ছেদন করবে না। যে ব্যাপার ব্যর্থ, ভবিষ্যতে সুখকর নয়, তা করবে না।

৭১। লোষ্টমর্দী তৃণচ্ছেদী নখখাদী চ যো নরঃ।

স বিনাশং ব্রজত্যাশু সূচকোহশুচিরেব চ॥

যে মাটির ঢেলা (অকারণে) চুর্ণ করে, (উক্তরূপে) তৃণচ্ছেদী ও নখোৎপাটক, সূচক (যে পরের দোষ বলে বেড়ায় এবং যে অপবিত্র (বাহ্য ও আভ্যন্তর শৌচরহিত—এরা শীঘ্রই (ধনেপ্রাণে) বিনষ্ট হয়।

৭২। ন বিগর্হ্য কথাং কুর্যাদ্‌ বহির্মাল্যং ন ধারয়েৎ।

গবাং চ যানং পৃষ্ঠেন সর্বথৈব বিগর্হিতম্॥

পণ রেখে শাস্ত্রীয় বা বৈষয়িক কথা বলবে না, কেশগুচ্ছের বাইরে মালা ধারণ করবে না, গরুর পিঠে চড়ে যাওয়া সর্বপ্রকারে নিন্দিত।

৭৩। অদ্বারেণ চা নাতীয়াদ্‌গ্রামং বা বেশ্ম বাবৃতম্।

রাত্রৌ চ বৃক্ষমূলানি দূরতঃ পরিবর্জয়েৎ ॥

(প্রাকারাদিদ্বারা) বেষ্টিত গ্রামে বা গৃহে দ্বার ভিন্ন অন্যস্থান দিয়ে (অর্থাৎ, প্রাকারাদি লঙ্ঘন করে) প্রবেশ করা উচিত নয়। রাত্রিবেলা গাছের মূলদেশ দূর থেকেই পরিহর্তব্য।

৭৪। নাক্ষৈঃ ক্রীড়েৎ কদাচিত্তু স্বয়ং নোপানহৌ হরেৎ।

শয়নস্থো ন ভুঞ্জীত ন পাণিস্থং ন চাসনে ॥

কখনও পাশা খেলবে না, নিজে (পা ছাড়া অন্য প্রত্যঙ্গ দিয়ে) জুতো (স্থানান্তরে) নিবে না। শুয়ে ভোজন করবে না, হাতে অনেক পরিমাণে খাদ্য নিয়ে বা আসনে (ভোজনপাত্র রেখে) আহার করবে না।

৭৫। সর্বং চ তিলসংবদ্ধং নাদ্যাদস্তমিতে রবৌ।

ন চ নগ্নঃ শয়ীতেহ ন চোচ্ছিষ্টঃ ক্বচিদ্বজেৎ ॥

তিলমিশ্রিত কোন দ্রব্য সূর্যাস্তের পরে খাবে না। উলঙ্গ হয়ে শোবে না, উচ্ছিষ্ট অবস্থায় কোথাও যাবে না।

৭৬। আর্দ্রপাদস্তু ভুঞ্জীত নার্দ্রপাদস্তু সংবিশেৎ।

আর্দ্রপাদস্তু ভুঞ্জানো দীর্ঘমায়ুরবাপ্লুয়াৎ ॥

ভেজা পায়ে ভোজন করবে (কিন্তু) ঘুমাবে না। ভেজা পায়ে যে ভোজন করে, সে দীর্ঘায়ুলাভ করে।

৭৭। অচক্ষুর্বিষয়ং দুর্গং ন প্রপদ্যেত কর্হিচিৎ।

ন বিণ্‌মূত্রমুদীক্ষেত ন বাহুভ্যাং নদীং তরেৎ ॥

(তরুগুল্মলতাগহনত্বহেতু) অদৃশ্য (অরণ্যাদি) দূর্গম স্থানে (সাপ চোরাদি লুকিয়ে থাকার আশঙ্কায়) যাবে না। মূত্র পুরীষের দিকে তাকাবে না। হাত দিয়ে (অর্থাৎ সাঁৎরে) নদী পার হবে না।

৭৮। অধিতিষ্ঠেন্ন কেশাংস্তু নভস্মাস্হিকপালিকাঃ।

ন কার্পাসাস্থি ন তুষান্ দীর্ঘায়ুর্জিজীবিষুঃ ॥

দীর্ঘায়ুকামী ব্যক্তি চুল, ছাই, হাড়, ভাঙ্গা মাটির পাত্রের টুকরো, কার্পাস তুলোর বীজ ও তুষের উপরে দাঁড়াবে না।

৭৯। ন সংবসেচ্চ পতিতৈর্ন চাণ্ডালৈর্ন পুক্কসৈঃ।

ন মুর্খের্নাবলিপ্তেশ্চ নাস্ত্যৈর্নান্ত্যাবসায়িভিঃ॥

পতিত, চণ্ডাল, পুক্কস১৬, মুর্খ, ধনাদিমদগর্বিত, রজকাদি নীচজাতীয় লোক এবং অন্ত্যাবসায়ীদের১৭ সঙ্গে থাকবে না (এক গাছের ছায়ায় বা কাছে থাকা নিষিদ্ধ)।

৮০। ন শূদ্রায় মতিং দদ্যান্নোচ্ছিষ্টং ন হবিষ্কৃতম্।

ন চাস্যোপদিশেদ্ধর্মং ন চাস্য ব্ৰতমাদিশেৎ॥

শূদ্রকে (লৌকিক বিষয়ে) উপদেশ, উচ্ছিষ্ট, হবিব শেষ ও ধর্মোপদেশ দিবেন না, তাকে (প্রায়শ্চিত্তরূপ) ব্রত সম্বন্ধে উপদেশ দিবেন না।

৮১। যো হাস্য ধর্মমাচষ্টে যশ্চৈবাদিশতি ব্ৰতম্।

সোহসংবৃতং নাম তমঃ সহ তেনৈব মজ্জতি ॥

যে তাকে ধর্ম বলে বা ব্রতোপদেশ দেয়, সে তারই সঙ্গে অসংবৃত নামক নরকে নিমগ্ন হয়।

৮২। ন সংহতাভ্যাং পাণিভ্যাং কণ্ডুয়েদাত্মনঃ শিরঃ।

ন স্পৃশেচ্চৈতদুচ্ছিষ্টো ন চ স্নাযাদ্বিনা ততঃ ॥

দুই হাত একত্র করে মাথা চুলকাবে না, উচ্ছিষ্টমুখে মাথা ছোঁবে না, মাথা না ডুবিয়ে স্নান করবে না।

৮৩। কেশগ্রহান্ প্রহারাংশ্চ শিবস্যেতান্‌ বিবর্জয়েৎ।

শিরঃস্নাতশ্চ তৈলেন নাঙ্গং কিঞ্চিদপি স্পৃশেৎ ॥

মাথায় চুল ধরে মারবে না, তেল মাখান মাথায় স্নাত ব্যক্তি অন্য অঙ্গস্পর্শ করবে না।

৮৪। ন রাজ্ঞঃ প্রতিগৃহ্নীয়াদরাজন্যপ্রসূতিতঃ।

সুনাচক্ৰধ্বজবতাং বেশেনৈব চ জীবতাম্ ॥

ক্ষত্রিয় ভিন্ন রাজার থেকে, পশু বধ বা মাংসবিক্রয় দ্বারা জীবিকার্জনকারী, তৈলিক, শৌণ্ডিক ও বেশ্যা দিয়ে জীবিকার্জনকারীর কাছ থেকে প্রতিগ্রহ করবে না।

৮৫। দশসূনাসমং চক্রং দশচক্রসমো ধ্বজঃ।

দশধ্বজসমো বেশো দশবেশসমমা নৃপঃ ॥

দশজন মাংস বিক্রয়ীর দোষের সমান দোষ একজন তৈলিকের, দশজন তৈলিকের সমান দোষ এক শৌণ্ডিকের, দশজন শৌণ্ডিকের দোষের সমান দোষ এক বেশ্যাজীবীর, দশ বেশ্যাজীবীর দোষের সমান দোষ এক (ক্ষত্রিয় ভিন্ন) রাজাতে থাকে।

৮৬। দশসূনাসহস্রাণি যো বাহয়তি সৌনিকঃ।

তেন তুল্যঃস্মৃতো রাজা ঘোরস্তস্য প্রতিগ্রহঃ॥

যে পশুঘাতী দশ হাজার পশুর মারণস্থান স্থাপন করে, তার সমান (অক্ষত্রিয়) রাজা ; তাঁর থেকে প্রতিগ্ৰহ ভয়ানক।

৮৭। যো রাজ্ঞঃ প্রতিগৃহ্নাতি লুব্ধস্যোচ্ছাস্ত্রবর্তিনঃ।

স পর্যায়েণ যাতীমান্‌ নরকানেকবিংশতিম্ ॥

লুব্ধ, শাস্ত্র লঙ্ঘনকারী রাজার থেকে যে প্রতিগ্রহ করে, সে ক্রমে এই (বক্ষ্যমাণ) একুশটি নরকে গমন করে।

৮৮- তামিস্রমন্ধতামিস্রং মহারৌরবরৌরবৌ।

৯০। নরকং কালসূত্রঞ্চ মহানরকমেব চ॥

সঞ্জীবনং মহাবীচিং তপনং সংপ্রতাপনম্‌।

সঙঘাতঞ্চ সকাকোলং কুঙ্মলং প্রতিমূর্তিকম্ ॥

লোহশঙ্কুমৃজীষঞ্চ পন্থানং শাল্মলীং নদীম্‌।

অসিপত্রবনঞ্চৈব লোহদারকমেব চ॥

তামিস্র, অন্ধতমিস্র, মহারৌরব, রৌরব, কালসূত্র, মহানরক, সঞ্জীবন, মহাবীচি, তপন, সংপ্রতাপন, সংঘাত, কাকোল, কুঙ্মল, পৃতিমূৰ্তিক, লোহশঙ্কু, ঋজীষ, পস্থা, শাল্মলি, নদী, অসিপত্রবন এবং লোহাদারক।

৯১। এতদ্বিদন্ত্যে বিদ্বাংসো ব্রাহ্মণা ব্রহ্মবাদিনঃ।

ন রাজ্ঞঃ প্রতিগৃহ্নত্তি প্রেত্য শ্রেয়োহভিকাঙ্ক্ষিণঃ॥

এই কথা জেনে বিদ্বান্‌ বেদাধ্যায়ী পরলোকে মঙ্গলাকাঙ্ক্ষী ব্রাহ্মণগণ রাজার কাছ থেকে প্রতিগ্রহ করবেন না।

৯২। ব্রাহ্মে মুহূর্তে বুধ্যেত ধর্মার্থৌ চানুচিন্তয়েৎ।

কায়ক্লেশাংশ্চ তন্মুলান্‌ বেদতত্ত্বাৰ্থমেব চ॥

ব্রাহ্মমুহূর্তে উঠে ধর্ম ও অর্থ চিন্তা করবে, ধর্ম ও অর্থের মূল স্বরূপ শারীরিক ক্লেশ স্বীকার করবে এবং ব্ৰহ্মকর্মাত্মক বেদতত্ত্বাৰ্থ (নির্ধারণ করবেন)।

৯৩। উত্থায়াবশ্যকং কৃত্বা কৃতশৌচঃ সমাহিতঃ।

পূর্বাংসন্ধ্যাং জপংস্তিষ্ঠেং স্বকালে চাপরাঞ্চিরম্‌ ॥

উঠে বেগ হলে মলমূত্র ত্যাগ করে, শৌচ বিধি পালন করে, সমাহিতচিত্তে প্রাতঃসন্ধ্যায় গায়ত্রী জপ করবে এবং অপর (অর্থাৎ সায়ং) সন্ধ্যা যোগ্য কালে (আরম্ভ করে) দীর্ঘকাল (নক্ষত্রোদয়ের পর পর্যন্ত) সমাপন করবেন।

৯৪। ঋষয়ো দীর্ঘসন্ধ্যত্বাদ্দীৰ্ঘমায়ুরবাপ্নুয়ুঃ।

প্রজ্ঞাং যশশ্চ কীর্তিংচ ব্রহ্মবৰ্চসমেব চ॥

ঋষিগণ দীর্ঘকাল সন্ধ্যা করেন বলে দীর্ঘায়ু, প্রজ্ঞা, যশ, কীর্তি ও ব্রহ্মতেজ লাভ করেন।

৯৫। শ্রাবণ্যাং প্রৌষ্ঠপদ্যাং বাপ্যুপাকৃত্য যথাবিধি।

যুক্তশ্ছন্দাংস্যধীয়ীত মাসান্ বিপ্রহর্ধপঞ্চমান্ ॥

শ্রাবণী পূর্ণিমা বা ভাদ্রী পূর্ণিমাতে বিধি অনুসারে উপাকর্ম (নামক গৃহ্যকর্ম) সম্পন্ন করে মনোযোগসহকারে ব্রাহ্মণ সাড়ে চার মাস বেদাধ্যয়ন করবেন।

৯৬। পুষ্যে তু চ্ছন্দসাং কুর্যাদ্বহিরুৎসর্জনং দ্বিজঃ।

মাঘশুক্লস্য বা প্রান্তে পূর্বাহ্নে প্রথমেহহনি ॥

দ্বিজ পুষ্যানক্ষত্রে অথবা মাঘমাসের শুক্লপক্ষে প্রথম দিনে পূর্বাহ্নে (গ্রামের) বাইরে (গৃহ্যবিহিত) ছন্দসমূহের উৎসর্গ নামক কর্ম করবেন।

৯৭। যথাশাস্ত্ৰন্তু কৃত্বৈবমুৎসর্গং ছন্দসাং বহিঃ।

বিরমেৎ পক্ষিণীং রাত্রিং তদেবৈকমহর্নিশম্ ॥

শাস্ত্রানুসারে এইরূপে বাইরে ছন্দ উৎসর্গ করে পক্ষিণী১৮ রাত্রি বা সেই (উৎসর্গ) দিনরাত্রি বেদাধ্যয়নে বিরত থাকবেন।

৯৮। অত ঊর্ধ্বন্তু চ্ছন্দংসি শুক্লেষু নিয়তঃ পঠেৎ।

বেদাঙ্গানি চ সর্বাণি কৃষ্ণপক্ষেষু সম্পঠেৎ ॥

তারপর শুক্লপক্ষে সংযত হয়ে বেদপাঠ করবেন এবং সকল বেদাঙ্গ কৃষ্ণপক্ষে পাঠ করবেন।

৯৯। নাবিস্পষ্টমধীয়ীত ন শুদ্ৰজনসন্নিধৌ।

ন নিশান্তে পরিশ্রান্তো ব্রহ্মাধীত্য পুনঃ স্বপেৎ॥

অস্পষ্টরূপে, শূদ্রসমীপে, বেদপাঠ করবে না। রাত্রিশেষে বেদপাঠে ক্লান্ত হলে আর নিদ্রা যাবেন না।

১০০। যথোদিতেন বিধিনা নিত্যংছন্দস্কৃতং পঠেৎ।

ব্রহ্ম ছন্দস্কৃতং চৈব দ্বিজো যুক্তোহ্যনাপদি॥

প্রতিদিন উক্ত বিধি অনুসারে ছন্দোবদ্ধ মন্ত্র পাঠ করবেন। দ্বিজ আপদ্‌কাল ভিন্ন অন্য সময়ে মনোযোগের সহিত ছন্দোবদ্ধ মন্ত্র পাঠ করবেন।

১০১। ইমান্ নিত্যমনধ্যায়ানধীয়ানো বিবর্জয়েৎ।

অধ্যাপনঞ্চ কুর্বাণঃ শিষ্যাণাং বিধিপূর্বকম্‌ ॥

যথাবিধি বেদাধ্যায়ী ও বেদাধ্যাপক এই (বক্ষ্যমাণ) নিত্য অনুধ্যায় দিনগুলি বর্জন করবেন।

১০২। কর্ণশ্রবেহনিলে রাত্রৌ দিবা পাংশুসমূহনে।

এতৌ বর্ষাস্বনধ্যায়াবধ্যায়জ্ঞাঃ প্রচক্ষতে ॥

রাত্রিকালে বাতাসের শব্দ কর্ণগোচর হলে, দিনে বাতাসে ধুলি উড়িয়ে নিলে, বর্ষাকালে অধ্যয়নবিধিজ্ঞ ব্যক্তিগণ এই দুই উপলক্ষ্যকে অনধ্যায় বলেন।

১০৩। বিদ্যুৎস্তনিতবর্ষেষু মহোল্কানাঞ্চ সংপ্লবে।

আকালিকমনধ্যায়মেতেষু মনুরব্রবীৎ ॥

বিদ্যুদ্‌গর্জনে, বর্ষণে ও ইতস্ততঃ বিশাল উল্কাপাতে আকালিক (অর্থাৎ পূর্বদিন যে সময়ে আরম্ভ হয়েছিল পরের দিন সেই সময় পর্যন্ত) অনধ্যায় মনু বলেছেন।

১০৪। এতাংস্ত্বভ্যূদিতান্‌ বিদ্যাদ্‌ যদা প্রাদুষ্কৃতাগ্নিষু।

তদা বিদ্যাদনধ্যায়মনৃতৌ চাভ্রদর্শনে ॥

(প্রাতে ও সন্ধ্যায় হোমের জন্য) অগ্নি প্রজ্বলিত হলে যদি এই বিদ্যুদাদি উদিত হয়, বা বর্ষাভিন্নকালে (যে সময় হোমার্থ অগ্নিপ্রজ্বলিত হয় সেই সময়) মেঘদর্শনে অনধ্যায় জানবে।

১০৫। নির্ঘাতে ভূমিচলনে জ্যোতিষাষ্ণোপসর্জনে।

এতানাকালিকান্‌ বিদ্যাদনধ্যায়ানৃতাবপি॥

বর্ষায় এবং বর্ষা ভিন্ন কালে আকাশস্থ উৎপাতধ্বনিতে, ভূমিকম্পে, (সূর্যাদি জ্যোতিষ্কপদার্থের) উপসর্গে (পরিবেষ্টন ও গৃহপীড়ায়) আকালিক অনধ্যায় জানবে।

১০৬। প্রাদুষ্কৃতেম্বগ্নিষু তু বিদ্যুৎস্তনিতনিস্বনে।

সজ্যোতিঃ স্যাদনধ্যায়ঃ শেষে রাত্রৌ যথা দিবা ॥

হোমের জন্য অগ্নি জ্বালিত হলে (বর্ষভিন্ন কেবল) বিদ্যুৎ ও গর্জনধ্বনি হলে সজ্যোতি অনধ্যায় হয়। (অর্থাৎ দিনে হলে যতক্ষণ সূর্যজ্যোতি থাকে ততক্ষণ, রাত্রে হলে যতক্ষণ নক্ষত্রজ্যোতি থাকে ততক্ষণ) অনধ্যায় হয় ; বর্ষণ হলে অহোরাত্র (অনধ্যায় হয়)।

১০৭। নিত্যানধ্যায় এব স্যাদ্‌গ্রামেষু নগরেষু চ।

ধর্মনৈপুণ্যকামানাং পূতিগন্ধে চ সর্বদা॥

ধর্মের আধিক্যকামীদের পক্ষে গ্রামে বা নগরে এবং দুর্গন্ধস্থানে নিত্য অনধ্যায় (হয়)।

১০৮। অন্তর্গতশবে গ্রামে বৃষলস্য চ সন্নিধৌ।

অনধ্যায়ো রুদ্যমানে সমবায়ে জনস্য চ ॥

যে গ্রামের মধ্যে শব থাকে সেখানে, অধার্মিক জন সমীপে, ক্রন্দনধ্বনি শ্রুত হলে এবং জনসমাগমে অনধ্যায় হয়।

১০৯। উদকে মধ্যরাত্রে চ বিণ্মুত্রসা বিসর্জনে।

উচ্ছিষ্টঃ শ্ৰাদ্ধভুক্‌ চৈব মনসাপি ন চিন্তয়েৎ॥

জলে, মধ্যরাত্রে, মলমূত্রত্যাগকালে, উচ্ছিষ্টমুখে অথবা শ্রাদ্ধভোজন দিনে (বেদের) চিন্তা মনে মনেও করবে না।

১১০। প্রতিগৃহ্য দ্বিজো বিদ্বানেকোদ্দিষ্টস্য কেতনম্‌।

ত্র্যহং ন কীর্তয়েদ্‌ব্রহ্ম রাজ্ঞো রাহ্যেশ্চ সূতকে॥

বিদ্বান ব্রাহ্মণ একোদ্দিষ্ট শ্রাদ্ধে নিমন্ত্রণ গ্রহণ করে তিন দিন বেদাধ্যয়ন করবেন না। রাজার পুত্রজন্মে, চন্দ্র বা সূর্যগ্রহণে ত্রিরাত্রি অনধ্যায় হয়।

১১১। যাবদেকানুদ্দিষ্টস্য গন্ধো লেপশ্চ তিষ্ঠতি।

বিপ্রস বিদুষো দেহে তাবদ্‌ব্ৰহ্ম ন কীৰ্তয়েৎ॥

একোদ্দিষ্ট ভোর্জী বিদ্বান্‌ ব্রাহ্মণের দেহে যে পর্যন্ত শ্রাদ্ধীয় চন্দনাদিগন্ধ ও প্রলেপ থাকে, ততদিন তিনি বেদাধ্যয়ন করবেন না।

১১২। শয়ানঃ প্রৌঢ়পাদশ্চ কৃত্বা চৈবাবসক্‌থিকাম্‌।

নাধীয়ীতামিষং জগ্‌ধ্বা সূতকান্ন্যাদ্যমেব চ॥

শুয়ে, আসনে পা রেখে, এক উরুর উপরে অন্য উরু রেখে, মাংসভক্ষণ করে বা জননমরণাশৌচের অন্নভোজন করে বেদাধ্যয়ন করবে না।

১১৩। নীহারে বাণশব্দে চ সন্ধ্যয়োরেব চোভয়োঃ।

অমাবস্যাচতুর্দশ্যোঃ পৌর্ণমাস্যষ্টকাসু চ ॥

কুয়াসায়, বাণের শব্দ হলে, প্রাতঃসন্ধ্যা ও সায়ংসন্ধ্যাকালে এবং অমাবস্যা, চতুর্দশী, পূর্ণিমা ও অষ্টমী তিথিতে (অনধ্যায় হয়)।

১১৪। অমাবস্যা গুরুংহন্তি শিষ্যং হন্তি চতুর্দশী।

ব্ৰহ্মাষ্টকা-পৌর্ণমাস্যৌ তস্মাত্তাঃ পরিবর্জয়েৎ ॥

অমাবস্যায় (অধ্যয়ন অধ্যাপন) গুরুকে নিহত করে, চতুর্দশীতে শিষ্যকে, অষ্টমী ও পূর্ণিমা বেদ নষ্ট করে। সুতরাং ঐগুলি বর্জন করবে।

১১৫। পাংশুবর্ষে দিশাং দাহে গোমায়ুবিরুতে তথা।

শ্বখরোষ্ট্রে চ রুবতি পঙ্‌ক্তৌ চ ন পঠেদ্বিজঃ ॥

ধুলিবর্ষণ, দিগ্‌দাহ হলে, শেয়াল, কুকুর, গাধা ও উট ডাকলে, পংক্তিতে (উপবিষ্ট হয়ে) দ্বিজ বেদপাঠ করবেন না।

১১৬। নাধীয়ীত শ্মশানান্তে গ্রামান্তে গোব্ৰজেহপি বা।

বসিত্বা মৈথুনং বাসঃ শ্রাদ্ধিকং প্রতিগৃহ্য চ ॥

শ্মশানপ্রান্তে, গ্রামপ্রান্তে অথবা গোচারণভূমিতে, স্ত্রীসংসর্গে পরিহিত বস্ত্র পরিধান করে এবং শ্রাদ্ধীয় (সিদ্ধান্নাদি) অন্ন গ্রহণ করে বেদাধ্যয়ন করবে না।

১১৭। প্রাণি বা যদি বাহপ্রাণী যৎকিঞ্চিচ্ছ্রাদ্ধিকং ভবেৎ।

তদালভ্যাপানধ্যায়ঃ পাণ্যাস্যো হি দ্বিজঃস্মৃতঃ ॥

শ্রাদ্ধীয় দ্রব্য, (গো-অশ্বাদি) প্রাণীই হোক বা (বস্ত্রমাল্যাদি) অপ্রাণীই হোক, তা (হস্তে) গ্রহণ করলে অন্যায় হয় ; কারণ, দ্বিজের হস্ত মুখস্বরূপ।

১১৮। চৌরৈরুপপ্লুতে গ্রামে সম্ভ্রমে চাগ্নিকারিতে।

আকালিকমনধ্যায়ং বিদ্যাৎ সর্বাদ্ভূতেষু চ ॥

চোরকর্তৃক উপদ্রুত গ্রামে, অগ্নিকাণ্ডজনিত ব্যাকুল অবস্থায় এবং সকল অদ্ভুতে১৯ আকালিক অনধ্যায় জানবে।

১১৯। উপাকর্মণি চোৎসর্গে ত্রিরাত্রং ক্ষপণং স্মৃতম্।

অষ্টকাসু ত্বহোরাত্ৰমৃত্বস্তাসু চ রাত্রিষু ॥

উপকর্ম ও উৎসৰ্গনামক কর্মে তিন রাত্রি অনধ্যায় হয়। অষ্টকাসমূহে২০ দিবারাত্র অনধ্যায়, ঋতুর অবসানের দিনে ও রাত্রে অনধ্যায় হয়।

১২০। নাধীয়ীতাশ্বমারূঢ়ো ন বৃক্ষং ন চ হস্তিনম্‌।

ন নাবং ন খরং নোষ্ট্রং নেরিণস্হো ন যানগঃ ॥

অশ্ব, বৃক্ষ, হস্তী, নৌকা, গর্দভ, উষ্ট্র বা যানে আরোহণ করে এবং উষরদেশে অবস্থান করে বেদাধ্যয়ন করবে না।

১২১। ন বিবাদে ন কলহে ন সেনায়াং ন সঙ্গরে।

ন ভুক্তমাত্রে নাজীর্ণে ন বমিত্বা ন শুক্তকে॥

বাক্‌কলহে, (দণ্ডাদণ্ডি প্রভৃতি) কলহে, সেনামধ্যে, যুদ্ধে, ভোজনের অব্যবহিত পরে, খাদ্যবস্তু জীর্ণ না হলে, বমি করে বা অম্ল উদগারে (বেদাধ্যয়ন) করবে না।

১২২। অতিথিঞ্চাননুজ্ঞাপ্য মারুতে বাতি বা ভৃশম্।

রুধিরে চ স্রুতে গাত্রাচ্ছস্ত্ৰেণ চ পরিক্ষতে ॥

অতিথিকে না বলে, বেগে বায়ু প্রবাহিত হলে, দেহ থেকে রক্তক্ষরণ হলে বা শস্ত্রাঘাত হলে (বেদাধ্যয়ন করবে না)।

১২৩। সামধ্বনাবৃগজুষী নাধীয়ীত কদাচন।

বেদস্যাধীত্য বাপ্যন্তমারণ্যকমধীত্য চ ॥

সামবেদের অধ্যয়নধ্বনি হতে থাকলে কখনও ঋগ্বেদ ও যজুর্বেদ অধ্যয়ন করবে না। এক বেদ পাঠ সমাপ্ত করে অথবা আরণ্যক অধ্যয়ন করে (সেই দিবারাত্রির মধ্যে অন্য বেদ অধ্যয়ন করবে না)।

১২৪। ঋগ্বেদো দেবদৈবত্যে যজুর্বেদস্তু মানুষঃ।

সামবেদঃ স্মৃতঃ পিত্র্যস্তস্মাৎ তস্যাশুচির্ধ্বনিঃ ॥

ঋগ্বেদের দেবই দেবতা (অর্থাৎ তাতে কেবল দৈবকর্মেই বিহিত হয়েছে), যজুর্বেদের মনুষ্য দেবতা (অর্থাৎ তাতে মানুষের কর্মানুষ্ঠানই উক্ত আছে), সামবেদ পিতৃদৈবত (অর্থাৎ তাতে পিতৃকার্যের অনুষ্ঠান অভিহিত হয়েছে। অতএব সামবেদের ধ্বনি (ঋক্ ও যজুর্বেদের অধ্যয়ন পক্ষে) অপবিত্র।

১২৫। এতদ্বিদন্তো বিদ্বাংসস্ত্রয়ীনিষ্কর্ষমন্বহম্‌।

ক্রমশঃ পূর্বমভ্যস্য পশ্চাদ্‌বেদমধীয়তে॥

বিদ্বান্ ব্যক্তিগণ এই (দেবতাবিষয়) জেনে প্রত্যহ প্রথমে বেদত্রয়ের সারভূত প্রণবব্যাহৃতি সহকারে গায়ত্রী জপ করে পরে বেদাধ্যয়ন করেন।

১২৬। পশু-মণ্ডুক-মার্জার-শ্ব-সর্প-নকুলাখুভিঃ।

অন্তরাগমনে বিদ্যাদনধ্যায়মহর্নিশম্॥

(বেদাধ্যয়নকালে) গুরুশিষ্যের মধ্য দিয়ে পশু, ভেক, বিড়াল, কুকুর, সাপ, বেজী বা ইঁদুর গমন করলে অহোরাত্র অনধ্যায় জানবে।

১২৭। দ্বাবেব বর্জয়েন্নিত্যমনধ্যায়ৌ প্রযত্নতঃ।

স্বাধ্যায়ভূমিঞ্চাশুদ্ধামাত্মানঞ্চাশুচিং দ্বিজঃ ॥

(উচ্ছিষ্টাদি দ্বারা) অশুদ্ধ বেদাধ্যয়ন স্থান এবং স্বয়ং অপবিত্র— এই দুইটি অধ্যায়হেতু দ্বিজ যত্নসহকারে বর্জন করবেন।

১২৮। অমাবাস্যামষ্টমীঞ্চ পৌর্ণমাসীং চতুর্দশীম্‌।

ব্রহ্মচারী ভবেন্নিত্যমপ্যৃতৌ স্নাতকো দ্বিজঃ ॥

স্নাতক দ্বিজ অমাবস্যা, অষ্টমী, পূর্ণিমা ও চতুর্দশীতে ঋতুকালেও (স্ত্রীগমন না করে) ব্রহ্মচারী থাকবেন।

১২৯। ন স্নানমাচরেদ্ভুক্‌ত্বা নাতুরো ন মহানিশি।

ন বাসোভিঃ সহাজস্রং নাবিজ্ঞাতে জলাশয়ে ॥

আহার করে, রুগ্ন হলে ও রাত্রির মধ্য দুই প্রহরে স্নান করবে না। বহু বস্ত্রসহ এবং (কুম্ভীরাদিসংকুল) অজ্ঞাত জলাশয়ে স্নান করবে না।

১৩০। দেবতানাং গুরো রাজ্ঞঃ স্নাতকাচার্যয়েস্তথা।

নাক্রামেৎ কামতশ্ছায়াং বভ্রুণো দীক্ষিতস্য চ ॥

দেবগণের (অর্থাৎ দেবপ্রতিমার), (পিতা প্রভৃতি) গুরুর, রাজার, স্নাতকের, আচার্যের, কপিলবর্ণ ব্যক্তির ও (যজ্ঞে) দীক্ষিত লোকের ছায়া স্বেচ্ছায় অতিক্রম করবে না।

১৩১। মধ্যন্দিনেহর্ধরাত্রে চ শ্রাদ্ধং ভুক্তা চ সামিষম্‌।

সন্ধ্যয়োরুভয়োশ্চৈব ন সেবেত চতুষ্পথম্ ॥

মধ্যাহ্নে, অর্ধরাত্রে, শ্রাদ্ধে মাংসভোজন করে, এবং প্রাতে ও সন্ধ্যায় চতুষ্পথে থাকবে না।

১৩২। উদ্বর্তনমপস্নানং বিণ্মৃত্রে রক্তমেব চ।

শ্লেষ্মনিষ্ঠ্যতবাস্তানি নাধিতিষ্ঠেং তু কামতঃ ॥

শরীরের মলনাশক পিষ্টক, স্নানাবশিষ্ট জল, মলমূত্র, রক্ত, কফ, থুথু ও বমি এইগুলি স্বেচ্ছায় স্পর্শ করবে না।

১৩৩। বৈরিণং নোপসেবেত সহায়ঞ্চৈব বৈরিণঃ।

অধার্মিকং তস্করঞ্চ পরস্যৈব চ যোষিতম্ ॥

শত্রু, শত্রুর সহায়ক, অধার্মিক, চোর ও পরস্ত্রীর সঙ্গ করবে না।

১৩৪। ন হী দৃশমনায়ুষ্যং লোকে কিঞ্চন বিদ্যতে।

যাদৃশং পুরুষস্যেহ পরাদারোপসেবনম্॥

মানুষের পক্ষে পরদারগমনের তুল্য আয়ুক্ষয়কর ব্যাপার আর কিছু নেই।

১৩৫। ক্ষত্রিয়ঞ্চৈব সর্পঞ্চ ব্রাহ্মণঞ্চ বহুশ্রুতম্‌।

নাযমন্যত বৈ ভূষ্ণুঃ কৃশানপি কদাচন ॥

ধন, আয়ু প্রভৃতির বৃদ্ধিকামী ব্যক্তি ক্ষত্রিয়, সাপ, বহুবেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ— প্রতিকারে অক্ষম এদের কখনও অবমাননা করবে না।

১৩৬। এতৎত্রয়ং হি পুরুষং নির্দহেদবমানিতম্।

তস্মাদেতৎত্রয়ং নিত্যং নাবমন্যেত বুদ্ধিমান্ ॥

এই তিনটি অবমানিত হলে মানুষকে দগ্ধ করে। অতএব এই তিনটিকে বুদ্ধিমান্‌ ব্যক্তি কখনও অপমান করবে না।

১৩৭। নাত্মানমবমন্যেত পূর্বাভিরসমৃদ্ধিভিঃ।

আমৃত্যোঃ শ্রিয়মন্বিচ্ছেন্নৈনাং মন্যেত দুর্লভাম্ ॥

(প্রথমে সম্পত্তির জন্য উদ্যোগী হয়ে কৃতকর্ম না হলে) নিজেকে অবমাননা করবে না। আমরণ শ্রীবৃদ্ধি আকাঙ্ক্ষা করবে, একে দুর্লভ মনে করবে না।

১৩৮। সত্যং ব্ৰুয়াৎ প্রিয়ং ব্রুয়ান্ন ব্ৰুয়াৎ সত্যমপ্রিয়ম্।

প্রিয়ঞ্চ নানৃতং ব্রুয়াদেষ ধর্মঃ সনাতনঃ ॥

সত্যকথা বলবে, প্রিয় কথা বলবে, অপ্রিয় সত্য বলবে না, মিথ্যা প্রিয় কথাও বলবে না— এই সনাতন ধর্ম।

১৩৯। ভদ্রং ভদ্ৰমিতি ব্ৰুয়াদ্ভদ্ৰমিত্যেব বা বদেৎ।

শুষ্কবৈরং বিবাদঞ্চ ন কু্র্যাৎ কেনচিৎ সহ॥

(কারও সঙ্গে দেখা হলে) ভাল ভাল এই কথা বলবে, অথবা ভদ্র, (পুণ্য, প্রশস্ত প্রভৃতি ভদ্র পর্যায়) শব্দ বলবে। কারও সঙ্গে অনর্থক ঝগড়া করবে না।

১৪০। নাতিকল্যং নাতিসায়ং নাতিমধ্যন্দিনে স্থিতে।

নাজ্ঞাতেন সমং গচ্ছেন্নৈকো ন বৃষলৈঃ সহ ॥

অতিপ্রত্যুষে, ঘোর সন্ধ্যাকালে, মধ্যাহ্নে দুই প্রহরে, অপরিচিত লোকের সঙ্গে, একাকী বা শূদ্রের সঙ্গে কোথাও যাবে না।

১৪১। হীনাঙ্গানতিরিক্তাঙ্গন্‌ বিদ্যাহীনান্‌ বয়োহধিকান্‌।

রূপদ্রব্যবিহীনাংশ্চ জাতিহীনাংশ্চ নাক্ষিপেৎ ॥

(স্বাভাবিক অঙ্গ অপেক্ষা) হীনাঙ্গ, অধিকাঙ্গ, বিদ্যাহীন, বয়োবৃদ্ধ, রূপ ও ধনহীন ও নীচ জাতির লোককে (কানা, বৃদ্ধ প্রভৃতি শব্দ দ্বারা) নিন্দা করবে না।

১৪২। ন স্পৃশেৎ পাণিনোচ্ছিষ্টো বিপ্রো গোব্ৰাহ্মণানলান্‌।

ন চাপি পশ্যেদশুচিঃসুস্থো জ্যোতির্গণান্ দিবি॥

ব্রাহ্মণ উচ্ছিষ্ট মুখে গাভী, ব্রাহ্মণ ও অগ্নি হস্তদ্বারা স্পর্শ করবেন না। সুস্থ অবস্থায় অপবিত্র হয়ে আকাশে জ্যোতিষ্ক দর্শন করবেন না।

১৪৩। স্পৃষ্টৈতানশুচির্নিত্যমদ্ভিঃ প্রাণানুপস্পৃশেৎ।

গাত্রাণি চৈব সর্বাণি নাভিং পাণিতলেন তু॥

এইগুলিকে অশুচি অবস্থায় স্পর্শ করে সর্বদা জল নিয়ে চক্ষু প্রভৃতি ইন্দ্রিয়, সর্বগাত্র ও নাভি স্পর্শ করবেন।

১৪৪। অনাতুরঃ স্বানি খানি ন স্পৃশেদনিমিত্ততঃ।

রোমাণি চ রহস্যানি সর্বাণ্যেব বিবর্জয়েৎ ॥

রুগ্ন না হলে বিনা কারণে নিজের ইন্দ্রিয়সমূহ স্পর্শ করবে না; গোপনীয় স্থানের সব লোম বর্জন করবে।

১৪৫। মঙ্গলাচারযুক্তঃ স্যাৎ প্রযতাত্মা জিতেন্দ্রিয়ঃ।

জপেচ্চ জুহুয়াচ্চৈব নিত্যমগ্নিমতন্দ্রিতঃ ॥

(গোরোচনাদি ধারণ রূপ) মঙ্গল যুক্ত, (গুরুসেবাদি) আচারবান্, শুচি ও জিতেন্দ্রিয় হবে ; সর্বদা অনলস হয়ে (গায়ত্র্যাদি) জপ ও (অগ্নিতে) হোম করবে।

১৪৬। মঙ্গলাচারযুক্তানাং নিত্যঞ্চ প্রযতাত্মনাম্।

জপতাং জুহুতাঞ্চৈব বিনিপাতো ন বিদ্যতে ॥

মঙ্গলাচারযুক্ত, সতত শুচি এবং জপ ও হোমকারী ব্যক্তির (দৈব ও মনুষ্যকৃত) উপদ্রব হয় না।

১৪৭। বেদমেবাভ্যসেন্নিত্যং যথাকালমতন্দ্রিতঃ।

তং হ্যস্যাহুঃ পবং ধর্মমুপধর্মোহস্য উচ্যতে ॥

আলস্যশুন্য হয়ে যথাকালে প্রত্যহ বেদাভ্যাসই করবে, তাকে ব্রাহ্মণের শ্রেষ্ঠ ধর্ম বলা হয়েছে ; অন্য নিকৃষ্ট ধর্ম বলা হচ্ছে।

১৪৮। বেদাভ্যাসেন সততং শৌচেন তপসৈব চ।

অদ্রোহেণ চ ভূতানাং জাতিং স্মরতি পৌর্বিকীম্‌ ॥

সতত বেদাভ্যাস, শুচিতা, তপস্যা ও প্রাণির প্রতি অহিংসা দ্বারা জাতিস্মর হয়।

১৪৯। পৌর্বিকীং সংস্মরন্‌ জাতিং ব্ৰহ্মৈবাভ্যস্যতে পুনঃ।

ব্রহ্মাভ্যাসেন চাজস্রমনস্তং সুখমশ্লুতে॥

জাতিস্মর হয়ে পুনরায় বেদাভ্যাস করা হয়। বেদপাঠদ্বারা অনন্ত অবিনাশী (মোক্ষ) সুখ লাভ করে।

১৫০। সবিত্রান্‌ শান্তিহেমাংশ্চ কুর্যাৎ পর্বসু নিত্যশঃ।

পিতৃংশ্চৈবাষ্টকাস্বৰ্চেন্নিত্যমন্বষ্টকাসু চ ॥

(পূর্ণিমা অমাবস্যা প্রভৃতি) পর্বদিনে সূর্যের উদ্দেশ্যে শাস্তিহোম করবে এবং (অগ্রহায়ণী পূর্ণিমার পরে) তিন কৃষ্ণাষ্টমীতে পিতৃগণের উদ্দেশ্যে অষ্টকাশ্ৰাদ্ধ ও তার পরদিন (কৃষ্ণানবমীতে) অন্বষ্টকা শ্রাদ্ধ করবে।

১৫১। দূবাদাবসথান্মূত্রং দৃরাৎ পাদাবসেচনম্।

উচ্ছিষ্টান্নং নিষেকঞ্চ দূরাদেব সমাচরেৎ ॥

অগ্নিশালার থেকে দূরে মুত্রত্যাগ ও পাদপ্রক্ষালন করবে। উচ্ছিষ্ট অন্ন ও শুক্রনিক্ষেপ দূরেই করবে।

১৫২। মৈত্রং প্রসাধনং স্নানং দন্তধাবনমঞ্জনম্‌।

পূর্বাহ্ণ এব কুর্বীত দেবতানাঞ্চ পূজনম্ ॥

মলত্যাগ, সজ্জা, স্নান, দন্তধাবন, কাজল পরা এবং দেবপূজা পূর্বাহ্ণেই করণীয়।

১৫৩। দৈবতানভিগচ্ছেত্তু ধার্মিকাংশ্চ দ্বিজোত্তমান্।

ঈশ্বরঞ্চৈব রক্ষার্থং গুরূনেব চ পর্বসু ॥

(বিপদ থেকে) রক্ষার জন্য পর্বদিনে দেবপ্রতিমা, ধার্মিক ব্যক্তি, ব্রাহ্মণ, রাজা ও (পিত্রাদি) গুরুর নিকট গমন করবে।

১৫৪। অভিবাদয়েদ্‌বৃদ্ধাংশ্চ দদ্যাচ্চৈবাসনং স্বকম্।

কৃতাঞ্জলিরুপাসীত গচ্ছতঃ পৃষ্ঠতোহম্বিয়াৎ ॥

বৃদ্ধদের অভিবাদন করবে, নিজের আসন দিবে, করযোড়ে তাঁদের কাছে বসবে, তাঁদের অনুগমন করবে।

১৫৫। শ্রুতিস্মৃত্যুদিতং সম্যঙ্‌নিবদ্ধং স্বেষু কর্মসু।

ধর্মমূলং নিষেবেত সদাচারমতন্দ্রিতঃ ॥

বেদ ও স্মৃতিশাস্ত্রে সম্যক্ রূপে উক্ত, ধর্মের মূল, অধ্যয়নাদি নিজ নিজ কর্ম, সদাচার অনলসভাবে পালন করবে।

১৫৬। আচারাল্লভতে হ্যায়ুরাচারাদীপ্সিতাঃ প্রজাঃ।

আচারাদ্ধনমক্ষযামাচারো হস্ত্যলক্ষণম্ ॥

আচার থেকে আয়ুলাভ হয়, আচার থেকে অভীষ্ট সন্তান লাভ হয়, আচার থেকে অক্ষয় ধন লাভ হয়। আচার অশুভ লক্ষণ নষ্ট করে।

১৫৭। দুরাচারো হি পুরুষো লোকে ভবতি নিন্দিতঃ।

দুঃখভাগী চ সততং ব্যাধিতোহল্পায়ুরেব চ ॥

মন্দ আচার পরায়ণ ব্যক্তি জগতে নিন্দিত, দুঃখী, সর্বদা রোগগ্রস্ত ও অল্পায়ু হয়।

১৫৮। সর্বলক্ষণহীনোহপি যঃ সদাচারবান্ নরঃ।

শ্রদদ্‌ধানোহনসূয়শ্চ শতং বর্ষাণি জীবতি ॥

সকল শুভলক্ষণহীন হলেও শ্রদ্ধাবান্‌, সদাচারী লোক যে পরদোষ বর্ণনা করে না, সে একশত বৎসর বাঁচে।

১৫৯। যদ্‌যৎপরবশং কর্ম তৎতদ্‌যত্নেন বর্জয়েৎ।

যদ্্‌যদাত্মবশন্তু স্যাৎ তৎ তৎ সেবেত যত্নতঃ ॥

যে যে কাজ পরের উপর নির্ভরশীল, তা সযত্নে বর্জন করবে। যা যা নিজের আয়ত্তে, তা যত্নসহকারে করবে।

১৬০। সর্বং পরবশং দুঃখং সর্বামাত্মবশং সুখম্।

এতদ্বিদ্যাৎ সমাসেন লক্ষণং সুখদুঃখয়োঃ ॥

সকল পরবশ কর্ম দুঃখজনক, নিজায়ত্ত কর্ম সুখকর। সংক্ষেপে সুখদুঃখের এই লক্ষণ জানবে।

১৬১। যৎকর্ম কুর্বতোহস্য স্যাৎ পরিতোযোহস্তরাত্মনঃ।

তৎ প্রযত্নেন কুর্বীত বিপরীতস্তু বর্জয়েৎ ॥

যে কর্ম করতে মনের সন্তোষ হয়, তা সযত্নে করবে, এর বিপরীত কর্ম বর্জন করবে।

১৬২। আচার্যঞ্চ প্রবক্তারং পিতরং মাতরং গুরুম্‌।

ন হিংস্যাদ্‌ব্রাহ্মণান্ গাশ্চ সর্বাংশ্চৈব তপস্বিনঃ ॥

আচার্য, বেদব্যাখ্যাতা, পিতা, মাতা, গুরু, ব্রাহ্মণ, গাভী ও সকল তপস্বিগণকে হিংসা করবে না।

১৬৩। নাস্তিক্যং বেদনিন্দাঞ্চ দেবনাঞ্চ কুৎসনম্‌।

দ্বেষং দম্ভঞ্চ মানঞ্চ ক্রোধং তৈক্ষ্যঞ্চ বর্জয়েৎ ॥

নাস্তিকতা, বেদনিন্দা, দেবতানিন্দা, মাৎসর্য, দম্ভ (অনম্রতা), অভিমান, ক্রোধ ও ক্রুরতা পরিত্যাগ করবে।

১৬৪। পরস্য দণ্ডং নোদ্‌যচ্ছেৎ ক্রুদ্ধো নৈব নিপাতয়েৎ।

অন্যত্র পুত্ৰাচ্ছিষ্যাদ্বা শিষ্ট্যর্থং তাড়য়েত্তু তৌ ॥

অপরকে (প্রহার করার জন্য) দণ্ড উত্তোলন করবে না, ক্রুদ্ধ হয়ে পুত্র বা শিষ্য ভিন্ন (অপরের গায়ে) দণ্ড পাতিত করবে না ; শাসন করার জন্য সেই দুই জনকে তাড়ন করবে।

১৬৫। ব্রাহ্মণায়াবগুর্যৈব দ্বিজাতির্বকাম্যয়া।

শতং বর্ষাণি তামিস্রে নরকে পরিবর্ততে ॥

বধকামনায় ব্রাহ্মণের প্রতি দণ্ড উত্তোলন করলেই (অর্থাৎ পাতন না করলেও) দ্বিজ তামিস্র নামক নরকে এক শত বৎসর পরিভ্রমণ করেন।

১৬৬। তাড়যিত্বা তৃণেনাপি সংরম্ভান্মতিপূর্বকম্‌।

একবিংশতিমাজাতীঃ পাপযোনিষু জায়তে ॥

ক্রোধবশে জ্ঞাতসারে তৃণদ্বারাও যে (ব্রাহ্মণকে) তাড়ন করে, সে একুশ জন্ম (কুকুরাদি) পাপজাতিতে জন্মে।

১৬৭। অযুধ্যমানস্যোৎপাদ্য ব্রাহ্মণস্যাসৃগঙ্গতঃ।

দুঃখং সুমহদাগ্নেতি প্রেত্যাপ্রাজ্ঞতয়া নরঃ ॥

যে অযুধ্যমান ব্রাহ্মণের দেহ থেকে রক্তপাত করে, সে নির্বুদ্ধিতা হেতু পরলোকে সাতিশয় দুঃখ ভোগ করে।

১৬৮। শোণিতং যাবতঃ পাংশুন্‌ সংগৃহ্নাতি মহীতলাৎ।

তাবতোহব্দানমুত্রান্যৈঃ শোণিতোৎপাদকোহদ্যতে ॥

(অস্ত্ৰাহত অযুধ্যমান ব্রাহ্মণের অঙ্গনির্গত) রক্তে মাটিতে যতগুলি ধূলিকণা পিণ্ডাকৃতি হয়, তত বৎসর পরলোকে রক্তপাতকারী অপর(শৃগালাদি) জন্তু কর্তৃক ভক্ষিত হয়।

১৬৯। ন কদাচিদ্‌দ্বিজে তস্মাদ্বিদ্বানবগুড়েদপি।

ন তাড়য়েৎ তৃণেনাপি ন গাত্রাৎ স্রাবয়েদসৃক্‌ ॥

অতএব বিদ্বান্‌ ব্যক্তি কখনও দ্বিজের প্রতি দণ্ড উত্তোলনও করবেন না, তৃণদ্বারাও তাঁকে প্রহার করবেন না এবং তাঁর দেহ থেকে রক্তপাত করবেন না।

১৭০। অধার্মিকো নরো যো হি যস্য চাপ্যনৃতং ধনম্‌।

হিংসারতশ্চ যো নিত্যং নেহাসৌ সুখমেধতে ॥

অধার্মিক লোক, যার অর্থ (মিথ্যা সাক্ষ্য দান, বিচারে মিথ্যা ভাষণাদি ও উৎকোচ গ্রহণাদি) অসদুপায়ে অর্জিত, যে হিংসারত, সে কখনও এই সংসারে সুখে থাকে না।

১৭১। ন সীদন্নপি ধর্মেণ মনোহধর্মে নিবেশয়েৎ।

অধার্মিকাণাং পাপানামাশু পশ্যন্ বিপর্যয়ম্॥

অধার্মিক পাপীদের অচিরে অবস্থা বিপর্যয় লক্ষ্য করে কেউ ধর্মপথে থেকে কষ্ট পেলেও অধর্মে মনোনিবেশ করবে না।

১৭২। নাধর্মশ্চরিতো লোকে সদ্যঃ ফলতি গৌরিব।

শনৈরাবর্তমানস্তু কর্তুর্মুলানি কৃস্ততি ॥

গাভী যেমন দোহনাদিহেতু সদ্যফল দেয়, পৃথিবীতে অধর্ম আচরিত হলে তেমনভাবে তৎক্ষণাৎ তার ফল ফলে না। ধীরে ধীরে আবর্তমান (ফলোম্মুখী) হয়ে অধর্মাচারীর মূল ছেদন করে। (গো শব্দের পৃথিবী অর্থ করলে— মাটিতে বীজ বপনমাত্রেই যেমন শস্য পাওয়া যায় না, তেমন)

১৭৩। যদি নাত্মনি পুত্ৰেষু ন চেৎ পুত্রেযু নপ্তৃষু।

ন ত্বেব তু কৃতোহধর্মঃ কর্তুর্ভবতি নিষ্ফলঃ ॥

যদি (অধর্মের ফল) নিজের উপরে না ফলে, তাহলেও পুত্র বা পৌত্রের উপরে ফলে ; এইরূপে অধর্মচারী কর্তৃক আচরিত অধর্ম নিষ্ফল হয় না।

১৭৪। অধর্মেণৈধতে তাবত্ততো ভদ্ৰাণি পশ্যতি।

ততঃ সপত্নান্ জয়তি সমূলস্তু বিনশ্যতি ॥

অধর্মদ্বারা (প্রথমে) শ্রীবৃদ্ধি হয়, তারপর (ভৃত্য গবাশ্বাদি লাভ রূপ) মঙ্গল হয়, তারপর শত্রুজয় হয় (কিন্তু অবশেষে অধার্মিক ব্যক্তি) সমূলে বিনষ্ট হয়।

১৭৫। সত্যধর্মার্যবৃত্তেযু শৌচে চৈবারমেং সদা।

শিষ্যাংশ্চ শিষ্যাদ্ধর্মেণ বাগ্বাহুদরসংযতঃ ॥

সত্যধর্ম, সদাচার ও শুচিতায় সর্বদা আনন্দে থাকবে। শিষ্যদের ধর্মানুসারে শাসন করবে ; (সত্যভাষণ দ্বারা) বাক্য, (বাহুবলে পরপীড়া না করে) বাহু ও (যথালব্ধ আহারে) উদর সংযত করবে।

১৭৬। পরিত্যজেদর্থকামৌ যৌ স্যাতাং ধর্মবর্জিতৌ।

ধর্মঞ্চাপ্যসুখোদৰ্কং লোকবিক্রুষ্টমেব চ॥

ধর্মহীন অর্থ ও কাম এবং লোকনিন্দিত ও ভবিষ্যতে দুঃখকর ধর্ম পরিত্যাগ করবে।

১৭৭। ন পাণিপাদচপলো ন নেত্রচপলোহনৃজুঃ।

ন স্যাদ্বাক্‌চপলশ্চৈব ন পরদ্রোহকর্মধীঃ ॥

হস্তে, পদে, বাক্যে ও নেত্রে চঞ্চল ও কুটিল হবে না এবং পরের অপকার চিন্তা করবে না।

১৭৮। যেনাস্য পিতরো যাতা যেন যাতাঃপিতামহাঃ।

তেন যায়াৎ সতাং মার্গং তেন গচ্ছন্ন রিষ্যতে ॥

যে পথে পিতা পিতামহ গিয়েছেন, সেই সৎপথে গমন করবে ; সেই পথে গিয়ে (লোক অধর্মের দ্বারা) হিংসিত হয় না।

১৭৯- ঋত্বিক্‌পুরোহিতাচার্যৈর্মাতুলাতিথিসংশ্ৰিতৈঃ।

১৮০। বালবৃদ্ধাতুরৈর্বৈদ্যৈর্জ্ঞাতিসম্বন্ধিবান্ধবৈঃ॥

মাতাপিতৃভ্যাং জামী ভির্ভ্রাত্রা পুত্রেণ ভাৰ্যয়া।

দুহিত্রা দাসবর্গেণ বিবাদং ন সমাচরেৎ ॥

ঋত্বিক (যজ্ঞাদি কর্মে হোতা), পুরোহিত (শান্তিকর্মকর্তা), আচার্য, মাতুল, অতিথি, আশ্রিত লোক, বালক, বৃদ্ধ, পীড়িত ব্যক্তি, চিকিৎসক, জ্ঞাতি, (জামাতা শ্যালকাদি) কুটুম্ব, (মাতুল পক্ষের) আত্মীয়, মাতা, পিতা, জামি (ভগিনী, ভাতৃবধূ প্রভৃতি), ভ্রাতা, পুত্র, পত্নী, কন্যা ও ভৃত্যবর্গের সঙ্গে বিবাদ করবে না।

১৮১। এতৈর্বিবাদান্‌ সন্ত্যজ্য সর্বপাপৈঃ প্রমুচ্যতে।

এভিৰ্জিতৈশ্চ জয়তি সর্বান্ লোকানিমান্ গৃহী ॥

এদের সঙ্গে বিবাদ পরিত্যাগ করে সকল পাপ থেকে গৃহস্থ মুক্ত হয় এবং এদের জয় করলে এই (বক্ষ্যমাণ) লোকগুলিকে জয় করে।

১৮২। আচার্যো ব্রহ্মলোকেশঃ প্রাজাপত্যে পিতা প্রভুঃ।

অতিথিস্ত্বিন্দ্রলোকেশো দেবলোকস্য চর্ত্বিজঃ ॥

আচার্য ব্রহ্মলোকের, পিতা প্রাজাপত্য লোকের, অতিথি ইন্দ্রলোকের ও ঋত্বিক্‌গণ দেবলোকের প্রভু।

১৮৩। জাময়োহপ্সরসাং লোকে বৈশ্বদেবস্য বান্ধবাঃ।

সম্বন্ধিনো হ্যপাং লোকে পৃথিব্যাং মাতৃমাতুলৌ ॥

জামিগণ অপ্সরালোকের, মাতৃপক্ষীয় আত্মীয়গণ বৈশ্বদেবলোকের, (জামাতা শ্যালকাদি) সম্বন্ধিগণ জললোকের, মাতা ও মাতুল পৃথিবীর (প্রভু)।

১৮৪। আকাশেশাস্তু বিজ্ঞেয়া বালবৃদ্ধকৃশাতুরাঃ।

ভ্রাতা জ্যেষ্ঠঃ সমঃপিত্রা ভার্যা পুত্রঃ স্বকা তনুঃ ॥

বালক, বৃদ্ধ, ধনহীন (আশ্রিত ব্যক্তি) ও পীড়িত ব্যক্তি আকাশের প্রভু। জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা পিতৃতুল্য। স্ত্রী ও পুত্র নিজের শরীর।

১৮৫। ছায়া স্বো দাসবৰ্গশ্চ দুহিতা কৃপণংপরম্‌।

তস্মাদেতৈরধিক্ষিপ্তঃ সহেতাসংজ্বরঃ সদা ॥

নিজের ভৃত্যবর্গ (নিজের) ছায়া, কন্যা পরম কৃপাপাত্র। সুতরাং, এদের দ্বারা তিরস্কৃত হয়ে অসন্তপ্তচিত্তে সর্বদা সহ্য করবে।

১৮৬। প্রতিগ্রহসমর্থোহপি প্রসঙ্গং তত্র বর্জয়েৎ।

প্রতিগ্রহেণ হাস্যাশু ব্রাহ্মং তেজঃ প্রশাম্যতি ॥

প্রতিগ্রহে সক্ষম হলেও তাতে অত্যাসক্তি ত্যাগ করবে। প্রতিগ্রহ দ্বারা ব্ৰহ্মতেজ শীঘ্র নষ্ট হয়।

১৮৭। ন দ্রব্যাণামবিজ্ঞায় বিধিং ধর্ম্যং প্রতিগ্রহে।

প্রাজ্ঞঃ প্রতিগ্ৰহং কুর্যাদবসীদন্নপি ক্ষুধা ॥

ক্ষুধাপীড়িত হয়েও প্রাজ্ঞ (ব্রাহ্মণ) প্রতিগ্ৰহ বিষয়ে ধর্মসম্মত বিধি না জেনে প্রতিগ্ৰহ করবেন না।

১৮৮। হিরণ্যং ভূমিমশ্বং গামন্নং বাসস্তিলান্ ঘৃতম্।

প্রতিগৃহ্নন্নবিদ্বাংস্তু ভস্মীভবতি দারুবৎ ॥

মুখ ব্যক্তি স্বর্ণ, ভূমি, অশ্ব, গাভী, অন্ন, বস্ত্র, তিল ও ঘৃত প্রতিগ্রহ করে কাষ্ঠের ন্যায় ভস্মীভূত হয়।

১৮৯। হিরণ্যমায়ুরন্নঞ্চ ভূর্গৌশ্চাপ্যোষতস্তনুম্।

অশ্বশ্চক্ষুস্ত্বচং বাসো ঘৃতং তেজস্তিলাঃ প্রজাঃ॥

স্বর্ণ ও অন্ন আয়ু, ভূমি ও গাভী শরীর, অশ্ব চক্ষু, বস্ত্র ত্বক, ঘৃত তেজ, ও তিল সন্তান দগ্ধ করে।

১৯০। অতপাস্ত্বনধীয়ানঃ প্রতিগ্ৰহরুচির্দ্বিজঃ ॥

অন্তস্যশ্মপ্লবেনেব সহ তেনৈব মজ্জতি ॥

যে দ্বিজ তপস্যা করেন না, বেদাধ্যয়ন করেন না, যিনি প্রতিগ্রহে লোলুপ, তিনি জলে পাথরের ভেলার ন্যায় (অযোগ্যপাত্রে) দানকারীর সঙ্গে (নরকে) নিমগ্ন হন।

১৯১। তস্মাদবিদ্বান্‌ বিভিয়াদ্‌যস্মাত্তস্মাৎ প্রতিগ্ৰহাৎ।

স্বল্পকেনাপ্যবিদ্বান্ হি পঙ্কে গৌরিব সীদতি॥

অতএব (প্রতিগ্ৰহ সম্বন্ধে) অজ্ঞ ব্যক্তি যে কোন প্রতিগ্রহকে ভয় করবে। অজ্ঞ ব্যক্তি অল্প পরিমাণ প্রতিগ্ৰহ হেতুও কর্দমে গাভীর ন্যায় অবসন্ন হয়।

১৯২। ন বার্যপি প্রযচ্ছেৎ তু বৈড়ালব্ৰতিকে দ্বিজে।

ন বকব্ৰতিকে বিপ্রে নাবেদবিদি ধর্মবিৎ ॥

বৈড়ালতিক, বকব্রতিক ও অবেদজ্ঞ দ্বিজকে ধর্মজ্ঞ ব্যক্তি জলও দিবেন না।

১৯৩। ত্রিম্বপ্যেতেষু দত্তংহি বিধিনাপ্যর্জিতং ধনম্‌।

দাতুৰ্ভবত্যনর্থায় পরত্রাদাতুরেব চ ॥

এই তিনজনকে প্রদত্ত বৈধ উপায়ে অর্জিত ধনও পরলোকে দাতা ও গ্রহীতার অনর্থের কারণ হয়।

১৯৪। যথা প্লবেনৌপলেন নিমজ্জত্যুদকে তরন্।

তথা নিমজ্জতোহধস্তাদজ্ঞৌ দাতৃপ্রতীচ্ছকৌ ॥

যেমন কোন লোক পাথরের ভেলায় (নদী প্রভৃতি) পার হতে গিয়ে তার সহিত নিমগ্ন হয়, তেমনই অজ্ঞ দাতা ও গ্রহীতা নিম্নে (নরকে) নিমগ্ন হয়।

১৯৫। ধর্মধ্বজী সদালুব্ধশ্ছাদ্মিকো লোকদম্ভকঃ।

বৈড়ালব্রতিকো জ্ঞেয়ো হিংস্রঃ সর্বাভিসন্ধকঃ॥

ধর্মধ্বজী (যে বহুলোকের সমক্ষে ধর্মাচরণ করে এবং নিজের ধার্মিকতা প্রচার করে), সর্বদা (পর ধনে) লোলুপ, ছলপরায়ণ, (গচ্ছিত ধনাদির অপহারক) লোকবঞ্চক, হিংসাপরায়ণ ও সর্বাভিসন্ধক (যে পরগুণ সহ্য করতে না পেরে সকলকে তুচ্ছ করে) বৈড়ালব্ৰতিক বলে জ্ঞাতব্য।

১৯৬। অধোদৃষ্টির্নৈষ্কৃতিকঃ স্বার্থসাধনতৎপরঃ।

শঠো মিথ্যাবিনীতশ্চ বকব্রতচরো দ্বিজঃ ॥

(বিনয় প্রকাশের জন্য) নীচের দিকে যে তাকিয়ে থাকে, নিষ্ঠুরাচারী, (পরের অনিষ্ট করে) স্বার্থসিদ্ধিতে তৎপর, শঠ ও কপটবিনয়ী—এইরূপ দ্বিজ বকব্রতী।

১৯৭। যে বকব্ৰতিনো বিপ্রা যে চ মার্জারলিঙ্গিনঃ।

তে পতন্ত্যন্ধতামিস্রে তেন পাপেন কর্মণা ॥

বকব্ৰতী ও বিড়ালব্ৰতী ব্রাহ্মণ সেই পাপকর্ম হেতু অন্ধতমিস্র নামক নরকে পতিত হয়।

১৯৮- ন ধর্মস্যাপদেশেন পাপং কৃত্বা ব্রতং চরেৎ।

১৯৯। ব্ৰতেন পাপং প্রচ্ছাদ্য কুর্বন স্ত্রীশূদ্রদম্ভনম্॥

প্রেত্যেহ চেদৃশা বিপ্রা গর্হান্তে ব্ৰহ্মবাদিভিঃ।

ছদ্মনাচরিতং যচ্চ ব্রতং রক্ষাংসি গচ্ছতি ॥

পাপ করে (প্রায়শ্চিত্তরূপ প্রাজাপত্যাদি) ব্রত যে ধর্মের ছলে অনুষ্ঠান করে এবং ব্রতের দ্বারা পাপ আচ্ছাদিত করে (আমি প্রায়শ্চিত্ত করছি না, ধর্মের জন্য এই অনুষ্ঠান করছি এই বলে) স্ত্রীলোক ও শূদ্রকে ভোলায়—এইরূপ ব্রাহ্মণগণ মৃত্যুর পরে ও ইহলোকে ব্রহ্মবাদী (ব্রাহ্মণগণ) কর্তৃক নিন্দিত হন ; ছলপূর্বক আচরিত যে ব্রত, তা রাক্ষসগামী হয়।

২০০। অলিঙ্গী লিঙ্গিবেষেণ যো বৃত্তিমুপজীবতি।

স লিঙ্গিনাং হরত্যেনস্তির্যগ্‌যোনৌ চ জায়তে ॥

ব্রহ্মচারী না হয়ে যে ব্রহ্মচারিবেশে জীবিকার্জন করে, সে ব্রহ্মচারীদের পাপ হরণ করে এবং (কুকুরাদি) নীচ যোনিতে জন্মে।

২০১। পরকীয়নিপানেষু ন স্নায়াচ্চ কদাচন।

নিপানকর্তুঃ স্নাত্বা তু দুষ্কৃতাংশেন লিপ্যতে ॥

পরের (অনুৎসৃষ্ট) জলাশয়ে কখনও স্নান করবে না, (করলে) জলাশয় খননকারীর পাপের অংশভাগী হয়।

২০২। যানশয্যাসনান্যস্য কৃপোদ্যানগৃহাণি চ।

অদত্তান্যুপভুঞ্জান এনসঃ স্যাৎ তুরীয়ভাক্‌ ॥

যান, শয্যা, আসন, কূপ, উদ্যান, গৃহ— এইগুলি প্রদত্ত না হওয়া সত্ত্বেও উপভোগ করলে (দ্ৰবাস্বামীর) পাপের চতুর্থাংশভাগী হয়।

২০৩। নদীষু দেবখাতেষু তড়াগেষু সরঃসু চ।

স্নানং সমাচরেন্নিত্যং গর্ত-প্রস্রবণেষু চ ॥

নদী, হ্রদ, তড়াগ, সরোবর, গর্ত (যা চার ক্রোশের কম পথ ব্যাপ্ত হয়ে আছে) বা প্রস্রবণে প্রত্যহ স্নান করবে।

২০৪। যমান্‌ সেবেত সততং ন নিত্যং নিয়মান্‌ বুধঃ।

যমান্‌ পতত্যকুর্বাণো নিয়মান্ কেবলান্ ভজন্‌ ॥

পণ্ডিত ব্যক্তি যম২০ সর্বদা সেবা করবেন, কেবল সর্বদা নিয়ম২১ অভ্যাস করবেন না। শুধু নিয়ম অভ্যাস করে যম অভ্যাস না করলে তোক পতিত হয়।

২০৫। নাশ্রোত্রিয়ততে যজ্ঞে গ্রামযাজিকৃতে তথা।

স্ত্রিয়া ক্লীবেন চ হুতে ভুঞ্জীত ব্রাহ্মণঃ ক্বচিৎ॥

অনধীতবেদ ব্রাহ্মণ যে যজ্ঞ করেন, যে যজ্ঞ বহুলোকের যাজক সম্পাদন করেন, যে যজ্ঞে স্ত্রী বা ক্লীব হোম করে, সেই যজ্ঞে ব্রাহ্মণ কোথাও ভোজন করবেন না।

২০৬। অশ্লীকমেতৎ সাধুনাং যত্র জুহুত্যমী হবিঃ।

প্রতীপমেতদ্দেবানাং তস্মাত্তৎ পরিবর্জয়েৎ ॥

যে যজ্ঞে উক্ত ব্যক্তিগণ হোম করে, তা সজ্জনগণের শ্রীহানিকর ; তা দেবগণের প্রতিকূল, সুতরাং তা বর্জন করবে।

২০৭- মওক্রুদ্ধাতুরাণাঞ্চ ন ভুঞ্জীত কদাচন।

২১৭। কেশকীটাবপন্নঞ্চ পদা স্পৃষ্টঞ্চ কামতঃ ॥

ভ্রূণঘ্নাবেক্ষিতঞ্চৈব সংস্পৃষ্টঞ্চাপ্যুদক্যয়া।

পতত্রিণবলীঢ়ঞ্চ শুনা সংস্পৃষ্টমেব চ ॥

গবা চান্নমুপাঘ্রাতং ঘুষ্টান্নঞ্চ বিশেষতঃ।

গণান্নং গণিকান্নঞ্চ বিদুষা চ জুগুপ্সিতম্ ॥

স্তেনগায়নয়োশ্চান্নং তক্ষ্ণোবার্ধুষিকস্য চ।

দীক্ষিতস্য কদর্যস্য বদ্ধস্য নিগড়স্য চ॥

অভিশস্তস্য ষণ্ঢস্য পুংশ্চল্যা দাম্ভিকস্য চ।

শুক্তং পর্যুষিতষ্ণৈব শূদ্রস্যোচ্ছিষ্টমেব চ ॥

চিকিৎসকস্য মৃগয়োঃ ক্রুরস্যোচ্ছিষ্টভোজিনঃ।

উগ্ৰান্নং সুতিকান্নঞ্চ পর্যাচান্তমনির্দশম্ ॥

অনর্চিতং বৃথামাংসমবীরায়াশ্চ যোষিতঃ।

দ্বিষদন্নং নগর্যন্নং পতিতান্নমবক্ষুতম্‌॥

পিশুনানৃতিনোশ্চান্নং ত্রৃতুবিক্রয়িণস্তথা।

শৈলুষতুন্নবায়ান্নং কৃতঘ্নস্যান্নমেব চ॥

কর্মারস্য নিষাদস্য রঙ্গাবতারস্য চ।

সুবর্ণকর্তুর্বেণস্য শস্ত্রবিক্রয়িণস্তথা॥

শ্ববতাং শৌণ্ডিকানাঞ্চ চৈলনির্ণেজকস্য চ।

রঞ্জকস্য নৃশংসস্য যস্য চোপপতির্গৃহে ॥

মৃষ্যন্তি যে চোপপতিং স্ত্রী জিতানাঞ্চ সর্বশঃ।

অনির্দশঞ্চ প্রেতান্নমতুষ্টিকরমেব চ ॥

মত্ত, ক্রুদ্ধ ও রোগার্তের অন্ন, কেশ বা কীটযুক্ত, ইচ্ছাপূর্বক পাদস্পৃষ্ট, ভ্রূণ২২ ঘাতী কর্তৃক দৃষ্ট, রজস্বলা নারী-স্পৃষ্ট, পক্ষী যাকে লেহন করেছে, কুকুরস্পৃষ্ট, গাভী কর্তৃক ঘ্রাত, বিশেষতঃ (কে অভুক্ত আছ, এস, অন্ন প্রস্তুত, এই ভাবে) ঘোষিত অন্ন, মিলিত বহু মঠবাসীর ও বেশ্যার অন্ন, পণ্ডিত ব্যক্তিকর্তৃক নিন্দিত অন্ন, চোর, গায়ক, তক্ষা (ছুতোর), কুসীদজীবী, (অগ্নিযোমীয়, যাগ না করে যজ্ঞে) দীক্ষিত ব্যক্তি, কৃপণ, শৃঙ্খলিত ব্যক্তি, অভিশস্ত, ক্লীব, ব্যভিচারিণী, (বিড়ালব্ৰতাদি দ্বারা) ছলকারীর অন্ন, শুক্ত (স্বভাবতঃ মিষ্ট দ্রব্য দধি প্রভৃতির সংযোগে বিকৃত), বাসি, শূদ্রের উচ্ছিষ্ট, চিকিৎসক, ব্যাধ, বক্রস্বভাব, উচ্ছিষ্টভোজী ও নিষ্ঠুরকর্মার অন্ন, প্রসূতির জন্য প্রস্তুত অন্ন, পর্যাচান্ত২৩, অশৌচের দশ দিন অতীত হওয়ার পূর্বে সূতিকান্ন, পূজনীয় ব্যক্তিকে অবজ্ঞাপূর্বক প্রদত্ত অন্ন, বৃথামাংস, পতিপুত্রবিহীন স্ত্রীলোক ও শত্রুর অন্ন, নগরস্বামীর অন্ন, পতিত ব্যক্তির অন্ন, যার উপরে হাঁচি দেওয়া হয়েছে সেই অন্ন, পরোক্ষে নিন্দাকারী ও কূটসাক্ষীর অন্ন, যে নিজের যজ্ঞফল বিক্রয় করে তার, নট, তন্তুবায়, কৃতঘ্নের অন্ন, কর্মকার, নিষাদ২৪, (নটগায়ক ব্যতিরিক্ত) রঙ্গোপঞ্জীবী, স্বর্ণকার, বাঁশ ছেদন করে যে জীবিকার্জন করে (বুরুড়-বিশ্বরূপ), লোহাবিক্রেতা, কুকুরপোষক, মদ্যবিক্রেতা, রজক, বস্ত্ররঞ্জক, নিষ্ঠুর এবং যার বাড়ীতে উপপতি আছে তার অন্ন, যে উপপতিকে সহ্য করে তার এবং স্ত্রৈণ ব্যক্তির অন্ন, দশ দিন অপগত হওয়ার পূর্বে মৃতাশৌচযুক্ত ব্যক্তির অন্ন ও অতৃপ্তিকর অন্ন কখনও ভোজন করবে না।

২১৮। রাজান্নং তেজ আদত্তে শুদ্ৰান্নং ব্ৰহ্মবৰ্চসম্।

আয়ুঃ সুবর্ণকারান্নং যশশ্চর্মাবকর্তিনঃ ॥

রাজার অন্ন তেজ, শুদ্ৰান্ন ব্রহ্মতেজ, স্বর্ণকারান্ন আয়ু ও কর্মকারের অন্ন যশ হরণ করে।

২১৯। কারুকান্নং প্রজাংহন্তি বলং নির্ণেজকস্য চ।

গণান্নং গণিকান্নঞ্চ লোকেভ্যঃ পরিকৃস্ততি ॥

(পাচকাদি) কারুকের অন্ন সন্তান ও রজকান্ন বল নষ্ট করে। মিলিত বহু মঠবাসীর ও বেশ্যার অন্ন (তপস্যালব্ধ) স্বর্গাদি লোক থেকে বিচ্যুত করে।

২২০। পূযং চিকিৎসকস্যান্নং পূংশ্চল্যাস্ত্বন্নমিন্দ্রিয়ম্‌।

বিষ্ঠা বার্ধুষিকস্যান্নং শস্ত্রবিক্ৰয়িণো মলম্ ॥

চিকিৎসকের, ব্যভিচারিণী নারীর, কুসীদজীবীর ও লোহাবিক্রেতার অন্ন যথাক্রমে পূয, শুক্র, বিষ্ঠা, (বিষ্ঠা ভিন্ন শ্লেষ্মাদি) মল (ভোজনের তুল্য)।

২২১। য এতেহন্যে ত্বভোজ্যান্নাঃ ক্রমশঃ পরিকীর্তিতাঃ।

তেষাং ত্বগস্থিরোমাণি বদন্ত্যন্নং মণীষিণঃ ॥

এই যাদের অন্ন ক্ৰমে অভোজ্য বলে কথিত হল, পণ্ডিতগণ তাদের অন্নকে বলেন তাদের চর্ম, অস্থি ও লোম।

২২২। ভুক্ত্বাতোহন্যতমস্যান্নমমত্যা ক্ষপণং এ্যহম্।

মত্যা ভুক্ত্বা চরেৎকৃচ্ছ্রংরেতোবিণ্মুত্ৰমেব চ॥

এদের অন্যতম ব্যক্তির অন্ন অজ্ঞাতসারে ভোজন করলে তিন দিন উপবাস (বিধেয়), জ্ঞানপূর্বক ভোজনে ও শুক্র, বিষ্ঠা এবং মূত্র ভোজনে কৃচ্ছ্র (অর্থাৎ প্রাজাপত্য) অনুষ্ঠান করবে।

২২৩। নাদ্যাচ্ছুদ্রস্য পক্বানাং বিদ্বানশ্রাদ্ধিনো দ্বিজঃ।

আদদীতামমেবাম্মাদবৃত্তাবেকরাত্রিকম্॥

বেদ দ্বিজ শ্রাদ্ধাদি (পঞ্চ যজ্ঞহীন) শূদ্রের পক্ক অন্ন ভোজন করবেন না। অন্য অন্নাভাবে এর থেকে (ব্রাহ্মণ) এক রাত্রির উপযুক্ত অপক্ব অন্নই গ্রহণ করবেন।

২২৪। শ্রোত্রিয়স্য কদর্যস্য বদান্যস্য চ বার্দ্ধুষেঃ।

মীমাংসিত্বোভয়ং দেবাঃ সমমন্নমকল্পয়ন্ ॥

বেদজ্ঞ অথচ কৃপণ, উদার অথচ কুসীদজীবী— দেবগণ বিচার করে এই উভয়ের অন্ন সমান বলে সিদ্ধান্ত করেছেন।

২২৫। তান্‌ প্রজাপতিরাহৈত্য মা কৃদ্ধং বিষমং সর্মম।

শ্রদ্ধাপূতং বদান্যস্য হতমশ্রদ্ধয়েতরৎ ॥

ব্রহ্মা দেবগণের নিকট এসে বললেন— অসমানকে সমান মনে করো না। (কুসীদজীবী) উদার ব্যক্তিকর্তৃক শ্রদ্ধাসহকারে দত্ত অন্ন পবিত্র, বেদাধ্যয়ী কৃপণের অশ্রদ্ধা সহকারে দত্ত অন্ন অপবিত্র।

২২৬। শ্রদ্ধয়েষ্টঞ্চ পূর্তঞ্চ নিত্যং কুর্যাদতন্দ্রিতঃ।

শ্রদ্ধাকৃতে হ্যক্ষয়ে তে ভবতঃ স্বাগতৈর্ধনৈঃ ॥

সর্বদা অনলসভাবে শ্রদ্ধাসহকারে ইষ্ট২৫ ও পূর্ত২৬ করবে। ন্যায়সম্মত উপায়ে অর্জিত ধনের দ্বারা শ্রদ্ধাসহকারে কৃত ঐ দুইটি অবিনাশী (ফল দাতা)।

২২৭। দানধর্মং নিষেবেত নিত্যমৈষ্টিকপৌর্তিকম্।

পরিতুষ্টেন ভাবেন পাত্রমাসাদ্য শক্তিতঃ ॥

সন্তুষ্ট চিত্তে উপযুক্ত পাত্র পেয়ে যথাশক্তি সর্বদা ইষ্টাপূর্ত সংক্রান্ত দানধর্ম পালন করবে।

২২৮। যৎকিঞ্চিদপি দাতব্যং যাচিতেনানসূয়য়া।

উৎপৎসাতে হি তৎপাত্রং যত্তারয়তি সর্বতঃ ॥

যাচিত হয়ে বিদ্বেষ না করে সামান্য হলেও দান করা উচিত ; কারণ, সেই দানপাত্র (কোন সময়) উপস্থিত হয়ে (দাতাকে) সর্বপ্রকারে ত্রাণ করবে।

২২৯। বারিদস্তৃপ্তিমাপ্নোতি সুখমক্ষয্যমন্নদঃ।

তিলপ্রদঃ প্ৰজামিষ্টাং দীপদশ্চক্ষুরুত্তমম্ ॥

জলদাতা তৃপ্তি, অন্নদাতা অবিনশ্বর সুখ, তিলদাতা অভীষ্ট সন্তান, দীপদাতা উত্তম চক্ষু প্রাপ্ত হয়।

২৩০। ভূমিদো ভূমিমাপ্নোতি দীর্ঘমায়ুর্হিরণ্যদঃ।

গৃহদোহগ্র্যাণি বেশ্মানি রূপ্যদো রূপমুত্তমম্ ॥

ভূমিদাতা ভূমি, স্বর্ণদাতা দীর্ঘায়ু, গৃহদাতা শ্রেষ্ঠ গৃহ, রৌপ্যদাতা উৎকৃষ্ট রূপ প্রাপ্ত হয়।

২৩১। বাসোদশ্চন্দ্রসালোক্যমশ্বিসালোক্যমশ্বদঃ।

অনডুদ্দঃ শ্রিয়ং পুষ্টাং গোদো ব্ৰধ্নস্য বিষ্টপম্ ॥

বস্ত্রদাতা চন্দ্রলোক, অশ্বদাতা অশ্বিনীলোক, বৃষদাতা প্রচুর সম্পদ ও গাভীদাতা সূর্যলোক প্রাপ্ত হয়।

২৩২। যানশয্যাপ্রদো ভার্যামৈশ্বর্যভয়প্রদঃ।

ধান্যদঃ শাশ্বতং সৌখ্যং ব্রহ্মদো ব্ৰহ্মসাষ্টিতাম্‌।

যান ও শয্যাদাতা স্ত্রী, অভয়দাতা ঐশ্বর্য, ধান্যদাতা চিরন্তন বন্ধুত্ব, বেদদাতা (বেদাধ্যাপক) ব্ৰহ্মলোক প্রাপ্ত হয়।

২৩৩। সর্বেষামেব দানানাং ব্রহ্মদানং বিশিষ্যতে।

বার্যন্নগোমহীবাসস্তিলকাঞ্চনসর্পিষাম্॥

জল, অন্ন, গো, ভূমি, বস্ত্র, তিল, স্বর্ণ ও ঘৃত— এই সকল দান অপেক্ষা বেদদান শ্রেষ্ঠ।

২৩৪। যেন যেন তু ভাবেন যদ্‌যদ্দানং প্রযচ্ছতি।

তত্তত্তেনৈব ভাবেন প্রাপ্নোতি প্রতিপূজিতঃ ॥

যে যে ভাবে যে যে দান করা হয়, সেই সেই ভাবে (জন্মান্তরে) ফললাভ করে দাতা পূজিত হয়।

২৩৫। যোহর্চিতং প্রতিগৃহ্নাতি দদাত্যর্চিতমেব চ।

তাবুভৌ গচ্ছতঃ স্বর্গ নরকন্তু বিপর্যয়ে॥

যে শ্রদ্ধাসহকৃত দান গ্রহণ করে, এবং যে শ্রদ্ধাসহ দান করে তারা উভয়ে স্বর্গে গমন করে ; এর বিপরীত হলে তারা নরকে যায়।

২৩৬। ন বিস্ময়েত তপসা বদেদিষ্টা চ নানৃতম্।

নার্তোহপ্যপবদেদ্বিপ্রান্ ন দত্ত্বা পরিকীর্তয়েৎ ॥

(চান্দ্রায়ণাদি কষ্টকর) ব্রত করে (কি করে এই দুষ্কর কর্ম করলাম এই ভেবে) বিস্মিত হবে না, যজ্ঞ করে মিথ্যা কথা বলবে না, পীড়িত হয়েও ব্রাহ্মণের নিন্দা করবে না, দান করে সেই বিষয় বলবে না।

২৩৭। যজ্ঞোহনৃতেন ক্ষরতি তপঃ ক্ষরতি বিস্ময়াৎ।

আয়ুর্বিপ্রাপবাদেন দানঞ্চ পরিকীর্তনাৎ ॥

মিথ্যা হেতু যজ্ঞ, বিস্ময় হেতু তপস্যা (বা কৃচ্ছ্রসাধন), ব্রাহ্মণ-নিন্দা হেতু আয়ু এবং ঘোষণাহেতু দান নষ্ট হয়।

২৩৮। ধর্মং শনৈঃ সঞ্চিনুয়াদ্বল্মীকমিব পৃত্তিকাঃ।

পরলোকসহায়ার্থং সর্বভূতান্যপীড়য়ন্‌ ॥

এক প্রকার পিপীলিকা যেমন বল্মীক (উইঢিপি) সঞ্চয় করে তেমনই কোন প্রাণীকে কষ্ট না দিয়ে পরলোকের উপকারার্থ ধীরে ধীরে ধর্ম করবে।

২৩৯। নামুত্র হি সহায়ার্থং পিতা মাতা চ তিষ্ঠতঃ।

ন পুত্রদারা ন জ্ঞাতির্ধর্মস্তিষ্ঠতি কেবলঃ ॥

পরলোকে সাহায্যের জন্য পিতামাতা থাকেন না, পুত্র-স্ত্রী বা জ্ঞাতিও নয় ; একমাত্র ধর্ম থাকে।

২৪০। একঃ প্রজায়তে জন্তুরেক এব প্রলীয়তে।

একোহনুভুঙ্‌ক্তে সুকৃতমেক এব চ দুষ্কৃতম্ ॥

প্রাণী একাই জন্মে, একাই মরে ; একা পুণ্যফল ভোগ করে, একা পাপের ফল ভোগ করে।

২৪১। মৃতং শরীরমুৎসৃজ্য কাষ্ঠলোষ্টসমং ক্ষিতৌ।

বিমূখা বান্ধবা যান্তি ধর্মস্তমনুগচ্ছতি ॥

মৃতদেহকে কাঠ বা মাটির ঢেলার ন্যায় মাটিতে ত্যাগ করে বান্ধবেরা মুখ ফিরিয়ে চলে যায়, ধর্ম তাকে অনুসরণ করে।

২৪২। তস্মাদ্ধর্মং সহায়াৰ্থং নিত্যং সঞ্চিনুয়াচ্ছনৈঃ।

ধর্মেণ হি সহায়েন তমস্তবতি পুস্তরম্॥

সুতরাং, সহায়লাভের জন্য প্রত্যহ ধীরে ধীরে ধর্ম সঞ্চয় করবে। ধর্ম সহায় হলে দুস্তর অন্ধকার অতিক্রম করা যায়।

২৪৩। ধর্মপ্রধানং পুরুষং তপসা হতকিল্বিষম্।

পরলোকং নয়ত্যাশু ভাস্বন্তং খশরীরিণম্॥

যার নিকট ধর্ম প্রধান, যার পাপ তপস্যাদ্বারা নষ্ট হয়েছে, এইরূপ ব্ৰহ্মস্বরূপ দীপ্যমান ব্যক্তিকে (ধর্ম) শীঘ্র পরলোকে নিয়ে যায়।

২৪৪। উত্তমৈরুত্তমৈর্নিত্যং সম্বন্ধানাচরেৎ সহ।

নিনীযুঃ কুলমুৎকর্ষমধমানধমাংস্ত্যজেৎ ॥

(নিজের) বংশের উৎকর্ষকামী ব্যক্তি উৎকৃষ্ট বংশের সঙ্গে সর্বদা (কন্যাদানাদি) সম্বন্ধ স্থাপন করবেন এবং অধম বংশ পরিত্যাগ করবেন।

২৪৫। উত্তমানুত্তমান্‌ গচ্ছন্‌ হীনান্‌ হীনাংশ্চ বর্জয়ন্‌।

ব্রাহ্মণঃ শ্ৰেষ্ঠতামেতি প্রত্যবায়েন শূদ্রতাম্‌ ॥

উৎকৃষ্ট বংশের সঙ্গে সম্বন্ধ করলে এবং নিকৃষ্ট বংশ বর্জন করলে ব্রাহ্মণ শ্রেষ্ঠত্ব প্রাপ্ত হন। বিপরীত আচরণের দ্বারা শূদ্রত্বপ্রাপ্ত হন।

২৪৬। দৃঢ়কারী মৃদুর্দান্তঃ ক্রুরাচারৈরসংবসন্।

অহিংস্রো দমদানাভ্যাং জয়েৎ স্বর্গং তথাব্ৰতঃ ॥

দৃঢ়কারী (কর্তব্য বিষয়ে দৃঢ়-নিশ্চয়), শান্তস্বভাব, (শীতাতপাদি দ্বন্দ) সহিষ্ণু ও অহিংসাপরায়ণ ব্যক্তি, নিষ্ঠুরকর্মা লোকের সঙ্গে বাস না করে, ইন্দ্রিয়সংযম ও দানের দ্বারা স্বর্গলাভ করে।

২৪৭। এধোদকং মূলফলমন্নমভ্যুদ্যতঞ্চ যৎ।

সর্বতঃ প্রতিগৃহ্ণীয়ান্মধ্বথাভয়দক্ষিণম্ ॥

কাঠ, জল, ফল, মূল, অযাচিত আমান্ন, মধু ও অভয়দান সকলের কাছ থেকেই গ্রহণ করা যায়।

২৪৮। আহৃতাভ্যুদ্যতাং ভিক্ষাং পূরস্তাদপ্রচোদিতাম্।

মেনে প্রজাপতির্গ্রাহ্যামপি দুষ্কৃতকর্মণঃ ॥

(দানস্থানে) আনীত ও গ্রহীতার অভিমুখে স্থাপিত, গ্রহীতা কর্তৃক অযাচিত, দাতা কর্তৃক পূর্বে অঘোষিত ভিক্ষাকে প্রজাপতি পাপকারীর থেকেও গ্রহণীয় মনে করেছিলেন।

২৪৯। নাশ্নন্তি পিতরস্তস্য দশবর্ষাণি পঞ্চ চ।

ন চ হব্যং বহত্যগ্নির্যস্তামভ্যবমন্যতে ॥

যে ঐ প্রকার (ভিক্ষা) গ্রহণ করে না, পিতৃগণ পনের বৎসর তার প্রদত্ত দ্রব্য ভক্ষণ করেন না এবং অগ্নি তার প্রদত্ত হবি বহন করে না।

২৫০। শয্যাং গৃহান্‌ কুশান্ গন্ধানপঃ পুষ্পং মণীন্ দধি।

ধানা মৎস্যান্ পয়ো মাংসং শাকঞ্চৈব ন নির্নুদেৎ ॥

শয্যা, গৃহ, কুশ, গন্ধদ্রব্য, জল, ফুল, মণি, দধি, ভাজা যব, মৎস্য, দুগ্ধ, মাংস ও শাক (অযাচিতভাবে উপস্থিত হলে) সেইগুলি প্রত্যাখ্যান করবে না।

২৫১। গুরূন্‌ ভৃত্যাংশ্চোজ্জিহীর্যন্নৰ্চিয্যন্‌ দেবতাতিথীন্‌।

সর্বতঃ প্রতিগৃহ্ণীয়ান্ন তু তৃপ্যেৎ স্বয়ং ততঃ ॥

(মাতা পিতাদি) গুরু, ক্ষুধাক্লিষ্ট ভার্যাদির উদ্ধার করতে ইচ্ছা করে ও দেবতা অতিথিকে পূজা করতে ইচ্ছা করে সকলের কাছ থেকে প্রতিগ্রহ করবে, নিজে তা ভোগ করবে না।

২৫২। গুরুষু ত্বভ্যতীতেষু বিনা বা তৈর্গৃহে বসন্।

আত্মনো বৃত্তিমন্বিচ্ছন্‌ গৃহ্ণীয়াং সাধুতঃ সদা ॥

(মাতা পিতাদি) গুরু মৃত হলে বা (তাঁদের জীবিতাবস্থায়) তাঁদের ছাড়া (অন্য) গৃহে বাস করলে নিজের জীবিকাকামী ব্যক্তি সর্বদা সজ্জন থেকে প্রতিগ্রহ করবে।

২৫৩। আর্ধিকঃ কুলমিত্রঞ্চ গোপালো দাসনাপিতৌ।

এতে শূদ্রেষু ভোজ্যান্না যশ্চাত্মানং নিবেদয়েৎ ॥

আর্থিক২৭, বংশের বন্ধু, গোপালক, দাস, নাপিত— শূদ্রদের মধ্যে এদের এবং যে সেবার জন্য আত্মনিবেদন করে তার অন্ন ভোজ্য।

২৫৪। যাদৃশোহস্য ভবেদাত্মা যাদৃশঞ্চ চিকীর্ষিতম্‌।

যথা চোপচরেদেনং তথাত্মানং নিবেদয়েৎ ॥

শূদ্র নিজে যেমন বংশে জন্মেছে, তার যেমন কর্ম, যেভাবে সে সেবা করে তার তদনুরূপ আত্মনিবেদন হয়।

২৫৫। যোহন্যথা সন্তমাত্মানমন্যথা সংসু ভাষতে।

স পাপকৃত্তমো লোকে স্তেন আত্মাপহারকঃ ॥

যে নিজে একরূপ হয়ে সজ্জনদের কাছে অন্যরূপ বলে, সে পৃথিবীতে পাপিষ্ঠ, চোর ও আত্মাপহারক।

২৫৬। বাচ্যর্থা নিয়তাঃ সর্বে বাঙ্‌মূলা বাগ্‌বিনিঃসৃতাঃ।

তাংস্তু যঃ স্তেনয়েদ্ধাচং স সর্বস্তেয়কৃন্নরঃ ॥

সকল বিষয় বাক্যে (বা শব্দে) প্রতিষ্ঠিত, বাক্য মূল এবং বাক্য থেকে নিঃসৃত ; সেই বাক্য যে চুরি করে, সে সবাপহারক।

২৫৭। মহর্ষিপিতৃদেবানাং গত্বানৃণ্যং যথাবিধি।

পুত্রে সর্বংসমাসজ্য বসেম্মাধ্যস্থমাশ্রিতঃ ॥

ঋষি ঋণ, পিতৃঋণ ও দেবঋণ যথাবিধি শোধ করে পুত্রের উপরে সব ন্যস্ত করে

উদাসীনভাবে গৃহে বসে করবে।

২৫৮। একাকী চিন্তয়েন্নিত্যং বিবিক্তে হিতমাত্মনঃ।

একাকী চিন্তয়ানো হি পরং শ্রেয়োহধিগচ্ছতি ॥

নির্জনে একাকী সর্বদা নিজের হিত চিন্তা করবে ; কারণ একাকী চিন্তা করলে পরম মঙ্গল লাভ করা যায়।

২৫৯। এষোদিতা গৃহস্হস্য বৃত্তির্বিপ্রস্য শাশ্বতী।

স্নাতকব্রতকল্পশ্চ সত্ত্ববৃদ্ধিকরঃ শুভঃ॥

ব্রাহ্মণ গৃহস্থের এই চিরন্তন বৃত্তি উক্ত হয়েছে। সত্ত্বগুণবৃদ্ধিকর শুভ স্নাতকব্রতও (উক্ত হল)।

২৬০। অনেন বিপ্রো বৃত্তেন বর্তয়ন্‌ বেদশাস্ত্রবিৎ।

ব্যপেতকল্মষো নিত্যং ব্রহ্মলোকে মহীয়তে ॥

বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ এই বৃত্তিদ্বারা জীবনযাপন করলে পাপমুক্ত হয়ে সর্বদা ব্রহ্মলোকে মহিমান্বিত হয়।

মানবধর্মশাস্ত্রে ভৃগুপ্ৰোক্ত সংহিতায় চতুর্থ অধ্যায় সমাপ্ত।

পাদটীকা

 ১মানুষের আয়ু সেকালে একশত বৎসর ধরা হত।

 ২পারিভাষিক শব্দগুলির অর্থ পরের দুই শ্লোকে দ্রষ্টব্য।

 ৩ধান্যাদির এক এক কণা সংগ্রহের নাম উঞ্ছ ; ধান্যের মঞ্জরী সংগ্রহের নাম শিল।

 ৪বাণিজ্যে সত্য মিথ্যা বলা হয়।

 ৫ঋত, অযাচিত, ভিক্ষা, কৃষি, বাণিজ্য ও সুদে টাকা ধার দেওয়া।

 ৬যাজন, অধ্যাপনা, প্রতিগ্রহ।

 ৭যাজন, অধ্যাপনা।

 ৮অধ্যাপনা।

 ৯সৎ প্রিয় কথা, বিচিত্র পরিহাস কথাদি।

১০চার চার মাসে এক এক ঋতু।

১১বৌদ্ধ ভিক্ষু ক্ষপণকাদি, যারা বেদবাহ্য ব্রত বা চিহ্নধারণ করে।

১২, ১৩ কপটধার্মিক।

১৪এই শব্দের বিবিধ অর্থ হয় ; যথা— পিশাচ, বিপরীত, অতীতকাল, দেবতাবিশেষ, চেতনযুক্ত, প্রাপ্তি, উপনা, জন্ম ইত্যাদি— মেধাতিধিভাষ্য দ্রষ্টব্য।

১৫অগ্নির জন্য রক্ষিত ইষ্টকসমূহ।

১৬পুক্কস—নিবাদের ঔরসে, শূদ্রের গর্ভে জাত।

১৭অন্ত্য—অন্ত্যজ রজকাদি ; অন্ত্যাবসায়ী—চণ্ডালের ঔরসে, নিষাদ স্ত্রীর গর্ভে জাত।

১৮দুই দিনের মধ্যবর্তী এক রাত্রি অর্থাৎ উৎসর্গ দিন রাত্রি ও তৎপরদিন।

১৯স্বাভাবিক অবস্থার ব্যতিক্রম।

২০অগ্রহায়ণী পূর্ণিমার পর তিন কৃষ্ণাষ্টমী।

২১যোগের অঙ্গ। অহিংসা, সত্যবচন, ব্রহ্মচর্য, নিষ্পাপ অন্তকরণ, অচৌর্য—এই পাঁচটির নাম যম।

২২যোগের অন্যতম অঙ্গ। অক্রোধ, শুরুসেবা, শুচিতা, লঘু আহার, অপ্রমাদ—এই পাঁচটি নিয়ম।

২৩শব্দকোষ দ্র।

২৪পংক্তিভোজনে অন্যদের উপেক্ষা করে কেউ আচমন করলে তখনকার অন্ন।

২৫শব্দকোষ দ্রষ্টব্য।

২৬ঐ।

২৭ঐ।

২৮যে যার কৃষিকর্ম করে সে তার আর্ধিক।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *