ভুতুড়ে দুর্গ

তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৬/২ – ভুতুড়ে দুর্গ – শামসুদ্দীন নওয়াব – সেবা প্রকাশনী – প্রথম প্রকাশ : ২০১০

এক

গুড়ুম! অন্ধকার, ঝোড়ো রাত ভেদ করে গুম-গুম করে উঠল বাজের শব্দ।

‘খাইছে! কীসের শব্দ ওটা?’ ভ্যানের পিছনে বসা মুসা প্রশ্ন করল।

‘বাজ, মুসা। ভয়ের কিছু নেই,’ সামনের আসন থেকে বলল রবিন।

‘ভয়ের কিছু নেই? শুনলি, রাফি? আকাশ যে কোন মুহূর্তে আমাদের মাথায় ভেঙে পড়বে অথচ ভয়ের নাকি কিছু নেই।’ বলল মুসা।

‘ঘাবড়িয়ো না, মুসা,’ চালকের আসন থেকে বলল কিশোর। ‘আমরা সময় মতই সিনেমা হলে পৌঁছে যাব। একটু ঝড় উঠেছে শুধু।’

‘তোমার কথা ঠিক হলেই ভাল, কারণ আমার খিদে পেয়েছে। তোর কী খবর, রাফি?’

রাফি লেজ দুলিয়ে সম্মতি জানাল।

আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে সাবধানে এগিয়ে চলেছে ভ্যান। মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে, তবে মুভি থিয়েটার আর মাত্র ক’মাইল দূরে।

কিশোর,’ বলল জিনা। ‘এই শর্টকাটটা সুবিধের ঠেকছে না।’

‘হ্যাঁ, ভীষণ অন্ধকার,’ যোগ করল রবিন। ‘তুমি ঠিকমত রাস্তা দেখতে পাচ্ছ তো, কিশোর?’

‘একদম পরিষ্কার,’ জবাবে বলল কিশোর।

দুম!

প্রচণ্ড ঝাঁকি খেয়ে ভ্যানটা হড়কে গেল রাস্তা থেকে।

‘আকাশ ভেঙে পড়েছে!’ চেঁচিয়ে উঠল মুসা।

ওর কোলে লাফিয়ে উঠে পড়ল রাফিয়ান।

ভ্যানটা থেমে দাঁড়িয়েছে।

চা সবাই ঠিক আছ তো?’ কিশোরের প্রশ্ন।

‘আমি ঠিক আছি,’ বলল রবিন। ‘জিনা?’

‘হ্যাঁ, ধন্যবাদ। ভাগ্যিস সিট বেল্ট লাগিয়েছিলাম,’ বলল জিনা কিশোর পিছন দিকে ঘুরে চাইল।

‘তোমাদের কী খবর?’

মুসা আর রাফিয়ানকে কোথাও দেখা গেল না।

‘মুসা? রাফি?’ ডাকল জিনা।

‘আমরা ভাল আছি,’ পিছনের সিটের তলা থেকে শোনা গেল মুসার গলা। ‘আমরা, মানে, দেখছিলাম আরকী মেঝেটা ঠিক আছে কিনা।’

‘হুম…’ বলল রবিন। ‘ব্যাপারটা কী ঘটল বুঝতে পারছি না।’

‘শব্দ শুনে তো মনে হলো টায়ার ফেটেছে,’ বলল জিনা।

‘দেখি,’ বলল কিশোর। গ্লোভ কম্পার্টমেন্ট থেকে একটা ফ্ল্যাশলাইট বের করে নিয়ে টায়ারগুলো দেখতে গেল।

‘তোমরা এখন বেরিয়ে আসতে পারো,’ মুসার উদ্দেশে বলল,

জিনা। ‘মেঝে নিশ্চয়ই ঠিকই আছে।’

‘কে জানে, অতটা শিয়োর হতে পারছি না,’ বলল মুসা।

রাফিয়ান ঘেউ করে উঠল। মনে হয় সায় জানাল।

কিশোর ভ্যানে ফিরে এল।

টায়ার ফেটেছে। মনে হয় কোন পাথর-টাথরে লেগে ফেঁসে গেছে। সবাই বসে থাকো। আমরা সময় মতই হলে পৌঁছে যাব। মুসা, স্পেয়ারটা নিয়ে আমার সাথে এসো।’

‘সম্ভব নয়,’ বলল মুসা।

‘কেন?’ প্রশ্ন করল কিশোর। ‘এখনও ভয় কাটেনি?’

‘আমি ভয় পাইনি,’ জবাবে বলল মুসা।

গুড়ুম!

‘খাইছে! আকাশ ভেঙে পড়েছে!’ চেঁচিয়ে উঠল মুসা। ওর কাণ্ড দেখে হেসে ফেলল কিশোর, রবিন আর জিনা।

‘হেসো না,’ বলল মুসা। ‘এসব ঝোড়ো রাতে ভূত বেরোয়!’

‘অনেক হয়েছে,’ বলল কিশোর। ‘এবার এসো তো চাকাটা বদলে ফেলি।’

‘আগেই তো বলেছি, কিশোর, সম্ভব নয়। কোন বাড়তি চাকা নেই,’ বলল মুসা।

‘তারমানে?’ কিশোর, রবিন আর জিনা পরস্পর মুখ তাকাতাকি করে নিল। এবার মুসার দিকে চাইল। ‘কেন নেই?’ কিশোরের প্রশ্ন।

‘আমার আর রাফির ইমার্জেন্সি সারভাইভাল কিটের জন্যে জায়গা দরকার ছিল। ইমার্জেন্সিতে টিকে থাকার মত জিনিস আছে ওখানে। তাই না রে, রাফি?’ জিজ্ঞেস করল মুসা।

রাফি ঘেউ করে উঠল।

‘সারভাইভাল কিটে না জানি কী আছে,’ বলল রবিন।

‘আমি ধারণা করতে পারছি,’ বলল জিনা।

মুসা স্পেয়ার টায়ার কম্পার্টমেন্ট খুলল। ভিতরে কুকি, চিপস, কেক, সোডা পপ, আর সাবমেরিন স্যাণ্ডউইচ।

‘ঝড়ের মধ্যে আটকা পড়েছি আমরা, সঙ্গে বাড়তি টায়ার নেই, ‘ বলল কিশোর।

‘শুনে ইমার্জেন্সি সিচুয়েশন মনে হচ্ছে,’ বলল মুসা।

হাত বাড়িয়ে স্ন্যাক্স তুলে নিল ও। রাফিকেও দিল।

‘অ্যাই, ওটা কী?’ বলল রবিন। উইণ্ডশিল্ড ভেদ করে তর্জনী তাক করল। আকাশ আবারও চিরে দিল বিজলীর রেখা। আলোকিত হলো বিশাল এক দুর্গ। রাস্তার ঠিক ও মাথায়। ‘দেখে মনে হচ্ছে কারও বাড়ি।’

‘অট্টালিকা বলাই ভাল,’ যোগ করল কিশোর।

‘দুর্গের মত,’ জিনা বলল।

‘ভুতুড়ে দুর্গ,’ বলল মুসা।

‘চলো সাহায্যের জন্যে যাই ওখানে,’ বলল কিশোর।

‘আমরা ওদের ফোন ব্যবহার করতে পারি,’ বলল জিনা। ‘হয়তো ছবিটা মিস করতে হবে না আমাদের।’

মুসা এক চুল নড়ল না।

‘যাবে না?’ রবিন জানতে চাইল।

‘না,’ মাথা নেড়ে বলল মুসা। ‘ঝড়ের রাতে কোন ভুতুড়ে দুর্গে ঢোকার ইচ্ছে আমার নেই।’

লেজ নেড়ে যেন সায় জানাল রাফিয়ান।

‘বোকার মত কথা বোলো না। এটা মোটেও ভুতুড়ে দুর্গ নয়,’ বলল জিনা।

মুসা স্যাণ্ডউইচে কামড় বসাল। ‘আমরা এখানেই ভাল আছি।’

‘থাকো তা হলে,’ বলল কিশোর।

বন্ধুদেরকে ভ্যান থেকে নামতে দেখল মুসা। জিনা সবার সামনে, ফ্ল্যাশলাইট জ্বেলে পথ দেখাচ্ছে। মুহূর্ত দুয়েক পরে দৃষ্টিসীমার আড়ালে চলে গেল ওরা।

‘ওরা বৃষ্টিতে ভিজছে, আর আমরা রয়েছি শুকনো ভ্যানের ভিতরে-সাথে ইমার্জেন্সি সারভাইভাল কিট। এখন বল তো, রাফি কারা বোকা?’

কড় কড়! গুড়ুম!

ভ্যানের পাশের এক গাছে বাজ পড়ল। মাটিতে উপড়ে পড়ল গাছটা। গোটা ভ্যান কেঁপে উঠল থরথর করে। মুখ পাংশু হয়ে গেল মুসার।

দাঁড়াও! আমরা আসছি!’ চিৎকার ছাড়ল ও।

তারপর ভ্যান থেকে লাফিয়ে নেমে দুর্গটার দিকে ছুটল। ওকে অনুসরণ করল রাফিয়ান।

দুই

রাফিকে পিছনে নিয়ে মন্টগোমারি দুর্গের আঁকাবাঁকা ড্রাইভওয়ে ধরে ছুটে চলল মুসা। রাস্তা খাড়া হয়ে উঠে গেছে, বৃষ্টির কারণে চড়াই বাওয়া কষ্ট সাধ্য হলো আরও। শেষমেশ মুসা আর রাফি চূড়ায় উঠতে পারল। সদর দরজার কাছে যখন পৌছল, দস্তুরমত হাঁফাচ্ছে।

‘ওরা সব কোথায়,’ বলে চারধারে নজর বুলাল মুসা।

‘বু!’

আর্তচিৎকার ছাড়ল মুসা।

কিশোর। রবিন আর জিনার সঙ্গে দাঁড়িয়ে।

‘সাবাস! দারুণ দৌড় দিয়েছ,’ বলল কিশোর। হেসে উঠল।

‘তো, মুসা, তুমি ভ্যান ছেড়ে এখানে কেন?’ রবিনের প্রশ্ন।

‘ভ্যানটাকে আর নিরাপদ মনে হলো না,’ বলল মুসা।

‘ঘেউ,’ ডাক ছেড়ে সায় জানাল যেন রাফি।

‘অনেক ফাজলামো হয়েছে। আমরা এখানে ফোন ইউয করতে এসেছি,’ বলল কিশোর। ডোর লকারের দিকে হাত বাড়াল ও। ‘লোক থাকলেই হয়,’ যোগ করল।

‘উপরে আলো জ্বলছে, লোক থাকার সম্ভাবনাই বেশি,’ বলল জিনা। তিন তলায় বড় বড় জানালাগুলো আঙুল ইশারায় দেখাল।

দরজাটা ককিয়ে উঠে খুলে গেল। ছেলে-মেয়েরা ভিতরে উঁকি দিয়ে কিছুই দেখতে পেল না। এবার আঁধার ফুঁড়ে একটা মুখ উদয় হলো। বয়স্ক এক লোকের মুখ। হাতে ধরা মোমবাতির আ মুখের চেহারায় ভুতুড়ে ছায়া পড়েছে।

‘একটা কথা ভুলে গেছিলাম,’ বলল মুসা। ‘এখন মনে পড়েছে।’

‘কী?’ জিজ্ঞেস করল রবিন।

‘ভ্যানে থাকলেই ভাল হত!’ জবাবে বলল মুসা।

‘প্লিজ,’ বলল বৃদ্ধ। কুঁচকোনো একটা হাত রাখল মুসার কাঁধে। ‘প্লিজ, ভেতরে এসো।’

ঢোক গিলল মুসা।

‘রাফি, তুই আগে যা,’ বলে ঠেলা দিল রাফিকে।

দলটা রাফিকে অনুসরণ করে দরজা দিয়ে ঢুকে পড়ল অন্ধকারাচ্ছন্ন ফ্রন্ট হল-এ। দরজাটা ওদের পিছনে লেগে গেল দড়াম করে।

‘আমার নাম ক্লাইভ,’ বৃদ্ধ জানাল।

গ্রিক ‘মাফ করবেন,’ বলল কিশোর, ‘আমাদের ভ্যানের চাকা ফেটে গেছে আপনাদের বাসার সামনে আর-’

‘কার সাথে কথা বলছ, ক্লাইভ?’ অচেনা এক কণ্ঠস্বর বলল। আরেকজন লোক উদয় হলো। এর হাতেও মোমবাতি। ‘আমি ক্লিফটন মন্টগোমারি। এ আমার খানসামা ক্লাইভ। বাজে একটা রাত, তাই না?’

‘হ্যাঁ, মিস্টার মন্টগোমারি,’ জবাব দিল কিশোর।

‘আমাকে ক্লিফট বলে ডেকো। এসো, গা শুকিয়ে নাও,’ বলে চললেন ক্লিফট। ‘আলোর জন্যে দুঃখিত। মেরামতের কাজ চলছে তো তাই আমাদেরকে মোমবাতি ব্যবহার করতে হচ্ছে।’

‘মাফ করবেন, মিস্টার মন্টগোমারি, কিন্তু-’ বলতে শুরু করেছিল কিশোর।

‘আহ-আহ-আহ-আমাকে ক্লিফট বলে ডাকো।’

‘ঠিক আছে, ক্লিফট। আমরা কি আপনার ফোনটা ইউয করতে পারি? আমাদের ভ্যানের চাকা ফেটে গেছে। সাথে এক্সট্রা টায়ারও নেই।’ জ্বলন্ত চোখে মুসার দিকে চাইল কিশোর।

‘সরি, ফোন লাইন নষ্ট। ঝড় থেমে গেলে ক্লাইভ মেরামতের চেষ্টা করবে। এখন এসো। আমাদের সাথে ডিনার করবে।’

‘ধন্যবাদ, ক্লিফট, কিন্তু-’ শুরু করেছিল জিনা।

ওর কথা কেড়ে নিলেন ক্লিফট।

‘আমি না শুনব না।’

রাফির দিকে চাইল মুসা।

‘মানুষটার কথা তো শুনলি। উনি না শুনবেন না। এ জায়গাটা হয়তো ততটা খারাপ নয়, বলল ও।

ক্লাইভ ওদেরকে পিছনে নিয়ে, ফ্রন্ট হল পেরিয়ে বিশাল, বাঁকা এক সিঁড়ি ধরে ওপরে উঠতে লাগল। ওপরে উঠছে সবাই, এসময় মুসা বাতাসে নাক টানল। সুস্বাদু, তাজা রোস্ট বীফের সুঘ্রাণ।

‘বলেছিলাম না, রাফি, এখানে ভয়ের কিছু নেই,’ খোশমেজাজে বলল মুসা।

তিন

সিঁড়ির মাথায় পৌছে নিজেদেরকে গ্রেট হল-এ দেখতে পেল ছেলে- মেয়েরা। এত বড় কামরা ওরা এর আগে দেখেনি। ঘরটার সব কিছুই প্রকাণ্ড। দেয়ালগুলো দেখে মনে হলো পঞ্চাশ ফুট উঁচু আর পাথরের চাঁই দিয়ে তৈরি। এক দেয়াল জুড়ে প্রাচীন ঢাল, তরোয়াল আর অন্যান্য মধ্যযুগীয় অস্ত্রপাতি। আরেক দেয়ালে দেখা গেল দশটি বর্মের এক সারি, প্রতিটা সাত ফুট লম্বা। তিনটে অতিকায় ঝাড়বাতিদান শত-শত মোমবাতির আলোয় উদ্ভাসিত।

‘কে ওটা?’ জিনা জবাব চাইল। এক লোকের পেল্লায় এক তৈলচিত্রের দিকে ইঙ্গিত করল। লোকটির মুখের চেহারায় কঠোরতার ছাপ।

‘উনি ওয়ার্ড মন্টগোমারি, আমার পরদাদা,’ বললেন ক্লিফট। ‘অদ্ভুত সুন্দর,’ বলল রবিন

‘বাহ্,’ বলল কিশোর।

‘আমরা কখন খেতে বসব?’ মুসার প্রশ্ন।

ক্লাইভ হেঁটে এসে মুসার পিছনে দাঁড়াল।

‘এদিকে এসো,’ পিছন থেকে বলল ও।

আঁতকে উঠল মুসা।

‘আমাদেরকে এভাবে চমকে দিয়েন না, বলল ও। ‘বেচারী রাফির আরেকটু হলে হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেত। তুই ঠিক আছিস তো, রাফি? রাফি?’ মুসা চারধারে নজর বুলিয়ে রাফিকে কোথাও দেখতে পেল না। রাফি ইতোমধ্যেই গরুর মাংসের রোস্টের সুগন্ধ অনুসরণ করছে।

‘তোমার কুকুর দুর্দান্ত ব্লাডহাউণ্ড হতে পারবে,’ বললেন ক্লিফট। ‘ও এরমধ্যেই ডাইনিং রুমের হদিস বের করে ফেলেছে। এসো।’ রাফিকে অনুসরণ করার জন্য হাতছানি দিয়ে সবাইকে ডাকলেন তিনি।

বৈদ্যুতিক ঝাড়বাতি আলোকিত করে রেখেছে ডাইনিং রুমটাকে। বেশ ক’জন মানুষ ইতোমধ্যেই লম্বা টেবিলটিতে বসে আছে, কিন্তু মুসা তাদেরকে খেয়াল করল না। শুধুমাত্র খাবারের দিকে নজর ওর।

‘একেই বলে ডিনার টেবিল,’ সমীহের সুরে বলল মুসা। লম্বা টেবিলটির মাঝখানে এক সারি রুপোলী থালা। প্রতিটি থালায় উঁচু হয়ে আছে খাবার।

‘রাফি, দেখতে পাচ্ছিস?’ প্রশ্ন করল মুসা।

ঘেউ করে উঠল রাফি।

ওরা দু’জন টেবিলের কাছে হেঁটে গেল। এত খাবার দেখে ওদের চোখ ছানাবড়া। রোস্ট বীফ, চিকেন, মাছ, নানা ধরনের সব্জী, লম্বা রুটি, পাতলা রুটি, গোল পাঁউরুটি আর স্তূপাকারে স্প্যাঘেটি-কী নেই।

‘প্লিজ, বসে পড়ো,’ বললেন ক্লিফট। হাত নেড়ে কটা খালি চেয়ার দেখিয়ে দিলেন। টেবিল ঘিরে বসল ছেলে-মেয়েরা।

‘দারুণ একটা খবর আছে, তোমাদের সবার সাথে শেয়ার করতে চাই,’ টেবিলের মাথা থেকে বললেন ক্লিফট। ‘তবে শুরু করার আগে পরিচয়-পর্বটা সেরে নেয়া যাক। অচেনা লোকের চাইতে বন্ধু- বান্ধবদের সঙ্গে খেতে বসা অনেক স্বস্তিকর ব্যাপার।’

‘ক্লিফট, এটা কি তোমার আরেকটা সিলি গেম?’ তাঁর পাশে বসা মহিলা প্রশ্ন করলেন।

কিশোর শ্রাগ করে মুখ খুলল।

‘আমি শুরু করি। আমি কিশোর, আর এরা হচ্ছে রবিন, জিনা, মুসা আর রাফি। দুর্গের ঠিক বাইরেই ভ্যানের চাকা ফেটে গেছে আমাদের। আমরা ফোনটা ব্যবহার করতে এসেছিলাম শুধু।’

‘আর আমি ওদেরকে জোর করে ডিনারে বসিয়েছি। আমি সব সময় বলি, মানুষ যত বেশি আনন্দও তত বেশি। বারবারা, তোমার পালা।’

‘আমি বারবারা রেডিং,’ ক্লিফটের পাশে বসা মহিলা বললেন। ‘তোমরা হয়তো জানো আমি এ শহরের মেয়র। আমি ক্লিফটকে বহুদিন ধরে বোঝানোর চেষ্টা করছি ও যাতে এই দুর্গটা জাদুঘরের জন্যে দান করে।’

জিনার পাশে বসা বৃদ্ধ লোকটি সামনে ঝুঁকে বসে কাশি দিলেন। ‘সানি ডিপেস্টো। রিয়েল এস্টেট, শপিং মল, পার্কিং গ্যারেজ। আমি অনেক বছর ধরে এই জায়গাটা চাইছি। মধ্যযুগীয় ভাবধারার এক বিনোদন পার্ক বানাব। আমি এর নাম দিতে চাই নাইটল্যাণ্ড।’

তাঁর উল্টোদিকে বসা লালচুলো মহিলা মাথা নাড়লেন অননুমোদনের ভঙ্গিতে।

‘আমি স্যালি ম্যাকিনটায়ার, স্কটল্যাণ্ডের রয়্যাল মিউজিয়াম থেকে এসেছি। আমরা চাই এখানে স্কটল্যাণ্ডের ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে একটা জাদুঘর হোক। এটার মালিক একসময় একজন স্কটিশ ছিলেন।’

ক্লিফট চেয়ারের পাশে দাঁড়ালেন।

‘আপনারা অনেকেই হয়তো মন্টগোমারি পরিবারের ঐতিহ্য সম্পর্কে জানেন না। আমার পরদাদা এই দুর্গটা কিনেছিলেন এক স্কটিশ জমিদারের কাছ থেকে। মন্টগোমারি পরিবার এখানে বহু বছর ধরে বাস করছে। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, আমার নিজের কোন পরিবার নেই। কাজেই আজ মাঝরাতে আমি এই দুর্গটা শহরের মানুষকে দান করে দেব। জাদুঘর এবং পার্ক হিসেবে ব্যবহার করার জন্যে।’

মেয়র রেডিং চেয়ার ছেড়ে লাফিয়ে উঠলেন।

‘অসাধারণ!’ চেঁচিয়ে উঠলেন।

সানি ডিপেস্টো পানির গ্লাসের দিকে হাত বাড়ালেন।

‘এই শহরে জাদুঘর কদ্দিন টেকে দেখব,’ শ্বাসের নীচে আওড়ালেন তিনি।

‘স্কটল্যাণ্ডের মানুষ বঞ্চিত হলো,’ স্যালি বললেন রবিনকে I

‘ক্লিফটন মন্টগোমারির উদ্দেশে টোস্ট হয়ে যাক,’ বললেন মেয়র রেডিং। সবাই যার যার গ্লাস তুলল।

‘আমার ভাল লাগে মাখন আর জ্যাম দিয়ে দারুণ দারুণ টোস্ট,’ বলল মুসা। ‘উলস্!’ জিভে পানি টানল।

ওর কথা শুনে লেজ নাড়ল রাফি।

‘হিপ, হিপ, হুররে!’ সবাই হর্ষধ্বনি করে উঠল। ‘হিপ, হিপ, হুররে!’

চাচা এবং পরমুহূর্তে, আচমকা সব কটা আলো নিভে গেল।

চার

‘খাইছে, সবাই কোথায়?’ জানতে চাইল মুসা।

‘সবাই শান্ত থাকুন,’ গলা চড়িয়ে বললেন ক্লিফট। ‘খানিকক্ষণের জন্যে কারেন্ট গেছে। ক্লাইভ এখুনি মোমবাতি নিয়ে আসবে। ক্লাইভ!’

কেউ একজন দিয়াশলাই জ্বালল। আঁধারে জ্বালা হলো একটা মোমবাতি। ধীরে ধীরে আলোকিত হলো একটি মুখ।

‘আরি, একদম ওয়ার্ড মন্টগোমারির মত দেখতে!’ চেঁচিয়ে উঠল জিনা।

ভূতটার মুখের চেহারা ফ্যাকাসে। গায়ের চামড়া কুঁচকানো, রুক্ষ। কোন ভুল নেই। এটাই ওয়ার্ড মন্টগোমারি!

‘খাইছে! আগেই বলেছিলাম জায়গাটা ভুতুড়ে!’ ককিয়ে উঠল মুসা।

ভূতটা খসখসে গলায় কথা বলতে শুরু করল।

‘মণ্টগোমারি দুর্গ আমাদের পরিবারেই থাকতে হবে। এই দুর্গের প্রতিটা পাথরকে অভিশাপ দিচ্ছি আমি। আরও অভিশাপ দিচ্ছি এখানে যারা মাঝরাতের পরে থাকবে তাদেরকে। এখুনি সবাই এখান থেকে চলে যাও। আর এসো না। আমার প্রপৌত্রের ভাগ্যে যা ঘটার ঘটবে। আমি তোমাদেরকে সতর্ক করে দিলাম।’

মোমবাতিটা ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে দিল ভূতটা।

আচমকা আর্তনাদ ছাড়লেন ক্লিফট। এবার দড়াম করে একটা দরজা বন্ধ হলো।

‘কী হচ্ছে এসব?’ চেঁচিয়ে উঠলেন মেয়র রেডিং।

এক মুহূর্ত পরে, আলো ফিরে এল। ক্লিফট নেই। সবাই তাঁর নাম ধরে ডাকল। কিন্তু জবাব পেল না। মুসা চারদিকে চোখ বুলিয়ে রাফিকে খুঁজল। রাফিও নেই।

‘খাইছে! ভূতটা রাফিকেও ধরেছে। রাফি? রাফি, কোথায় তুই?’ চিৎকার করে ডাকল ও।

‘ঘেউ,’ রাফির গলা শোনা গেল টেবিলের তলা থেকে।

টেবিলক্লথ ওঠাল মুসা। রাফি টেবিলের নীচে। সামনে থালায় বিশাল এক স্প্যাঘেটি।

‘ঠিক কাজ করেছিস, রাফি। খালি পেটে ভূতের ভয় পাওয়ার কোন মানে হয় না,’ বলে রাফির সঙ্গে টেবিলের নীচে যোগ দিল মুসা।

‘সানি,’ মেয়র রেডিং বললেন, ‘আপনি ওখানে কী করছেন?’

অতিকায় গ্র্যাণ্ডফাদার ক্লকের সামনে দাঁড়িয়ে সানি, হাতে মোমবাতি।

‘ভূতটা মোমবাতি নিভিয়ে দেয়ার পর এখান থেকে কীসের যেন শব্দ পেয়েছি,’ ব্যাখ্যা করলেন সানি। ‘চট করে এখানে চলে আসি আমি, কিন্তু পাই শুধু এই মোমবাতিটা।’

‘আমাদের সাহায্য দরকার,’ সিদ্ধান্ত নিলেন মেয়র। ‘ফোন লাইন যেহেতু নষ্ট, শহরে গাড়ি নিয়ে ফিরতে হবে।’ মেয়র রেডিং, সানি ডিপেস্টো আর স্যালি ম্যাকিনটায়ার ডাইনিং রূম ত্যাগ করলেন। কিশোর, জিনা আর রবিন তাঁদেরকে অনুসরণ করে গ্রেট হল-এ চলে এল।

সবাই গ্রেট হল পার হচ্ছে, এসময় প্রকাণ্ড এক ট্রাঙ্কের ভিতর থেকে টোকার শব্দ কানে এল। সবাই জমে গেল।

‘বাঁচাও!’ ভিতর থেকে একটি কণ্ঠস্বর বলল।

কিশোর, রবিন আর জিনা পরস্পর মুখ চাওয়াচাওয়ি করল। ওটা ক্লিফটের গলা নয়। ট্রাঙ্কটার কাছে দৌড়ে গিয়ে ডালা খুলল কিশোর।

‘ক্লাইভ?’ সানি ডিপেস্টো বললেন।

‘ফোনগুলো পরীক্ষা করার জন্যে যাচ্ছি এসময় আলো নিভে গেল,’ ব্যাখ্যা দিতে শুরু করল ক্লাইভ। বেরিয়ে এল ট্রাঙ্ক থেকে। ‘কোথায় যাচ্ছি দেখতে পাইনি। হোঁচট খেয়ে ট্রাঙ্কের ভেতরে পড়ে যাই। ডালাটা পড়ে গেলে আটকা পড়ি।’

মেয়র রেডিং বললেন, ‘ভাগ্য ভাল ভূতটা আপনাকেও ধরেনি।’ কিশোর, রবিন আর জিনার দিকে ঘুরে দাঁড়ালেন। ‘আমার গাড়িতে মনে হয় সবার জায়গা হয়ে যাবে। তোমরা শহরে যেতে চাও?’

‘না, ধন্যবাদ,’ জবাবে বলল কিশোর। ‘আমাদেরকে, আ-’

‘বন্ধুদের খুঁজে বের করতে হবে,’ জুগিয়ে দিল রবিন।

‘আমি এখানে থাকব না,’ সতর্ক করলেন স্যালি ম্যাকিনটায়ার। ‘স্কটল্যাণ্ডে ভূতকে আমরা খুব সিরিয়াসলি নিই। তোমাদেরকেও সাবধান করছি।’

‘আমাদের জন্যে ভাববেন না,’ বলল জিনা।

‘আমি তা হলে একটা টো ট্রাক পাঠিয়ে দেব,’ মেয়র রেডিং বললেন। ‘গুড নাইট।’ তিনি, সানি আর স্যালি বিশাল সিঁড়ি ভেঙে নামতে লাগলেন।

ক্লাইভ কিশোর, রবিন আর জিনার দিকে ঘুরে দাঁড়াল।

‘তোমাদের মিসেস ম্যাকিনটায়ারের কথা শোনা উচিত। এখান থেকে চলে যাও,’ সাবধান করল ও। আমি এখানে বহু বছর ধরে আছি। ভূতটা বাজে কথা বলেনি। আমার মনিবের ভাগ্যে যা ঘটেছে আমি চাই না তা আমার ভাগ্যেও ঘটুক।’

ক্লাইভ ঘুরে দাঁড়িয়ে দুদ্দাড় করে সিঁড়ি ভেঙে নামতে লাগল। দু’মুহূর্ত পরে, সদর দরজা সশব্দে লেগে গেল।

রাফিকে নিয়ে এবার বন্ধুদের সঙ্গে গ্রেট হল-এ যোগ দিল মুসা। এখনও গলায় ন্যাপকিন বাঁধা ওর।

‘খাইছে, আর সবাই কোথায়?’ প্রশ্ন করল মুসা।

‘সাহায্য আনতে গেছে,’ জানাল রবিন।

‘ভাল করেছে,’ বলল মুসা।

‘আমার মাথায় একটা আইডিয়া এসেছে,’ বলল গোয়েন্দাপ্রধান।

নীচের ঠোঁটে চিমটি কাটল।

জিনা মাথা ঝাঁকিয়ে সায় জানাল।

‘আমাদের এর তল দেখা উচিত,’ বলল।

‘খাইছে, ভয় পাচ্ছিলাম তোমরা এমন কিছুই বলবে,’ গুঙিয়ে উঠল মুসা।

পাঁচ

‘এসো, আমরা ভাগ হয়ে যাই,’ বলল কিশোর। ‘জিনা, তুমি, মুসা আর রাফি এই গ্রেট হলে খোঁজো। আমি আর রবিন ডাইনিং রুমে দেখছি।’

‘আমি আর রাফি না হয় ডাইনিং রুমে খুঁজে দেখি, তোমরা তিনজন এখানে দেখো,’ প্রস্তাব করল মুসা।

রাফি লেজ নেড়ে সায় জানাল।

‘সময় নষ্ট না করে,’ বলল জিনা, ‘কাজে লেগে পড়ো। আগে কাজ শুরু করলে আগে শেষ হবে।’

কিশোর আর রবিন ডাইনিং রুমে ফিরে গেল। জিনা বর্মগুলো আঙুল-ইশারায় দেখিয়ে দিল।

‘তোমরা ওদিকে দেখো। আমি এদিকটা দেখছি।’

মুসা আর রাফি একটা বর্মের দিকে এগিয়ে গেল।

‘লোকে এটার ভিতর থেকে বেরোয় কীভাবে রে?’ প্রশ্ন করল মুসা।

রাফি নিঃশব্দে লেজ নাড়ল।

ঘরের ওপ্রান্তে, জিনা দেয়ালে ঝোলানো অস্ত্রগুলো পরখ করছে। হাত বাড়িয়ে বিরাট এক ঢাল স্পর্শ করল ও। ঢালটার মাঝখানে এক সিংহ। বড় বড় পান্নার চোখ নিয়ে তৈরি খাঁটি সোনার সিংহটা। দাঁতগুলো রুপোর, আর সামনের থাবাটা আক্রমণের ভঙ্গিতে উদ্যত।

‘নিশ্চয়ই মন্টগোমারি পরিবারের ক্রেস্ট, আপন মনে বলল জিনা। হাত বুলিয়ে সিংহটার নকশা অনুভব করল ও। এবার কিছু একটা দৃষ্টি কেড়ে নিল ওর। সিংহটার নখরগুলো রুপোর তৈরি এবং ঢালটা থেকে বেরিয়ে রয়েছে। নখরগুলো স্পর্শ করল জিনা। হঠাৎই, পাথুরে দেয়ালের মাঝখানে এক দরজা খুলে গেল।

‘আরি, গোপন প্যাসেজ, বিড়বিড় করে বলল ও। পকেট থেকে ফ্ল্যাশলাইট বের করল। ওটা জ্বেলে প্যাসেজে ঢুকে পড়ল। গোপন দরজাটা পিছনে লেগে গেল ওর।

ওদিকে, মুসা ধাতব এক শিরস্ত্রাণ মাথায় চড়াচ্ছে। একটা তরোয়াল তুলে নিয়ে নাইটের পোজ দিল।

‘আমি সার লইন অভ বীফ! বুঝতে পেরেছিস? সার লইন? সার লইন?’ হেসে উঠল। ‘তুই হতে পারিস সার রাফিয়ানালট।’

রাফি লেজ নেড়ে সায় জানাল।

‘আমরা শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে হলেও শেষ রোস্ট বীফের টুকরোটার দখল চাই। এজন্যে ডুয়েল লড়ব আমরা,’ বলল মুসা। তরোয়াল বাগিয়ে ধরে তেড়ে গেল রাফির দিকে। রাফি মাথা নুইয়ে কোনমতে এড়াল।

‘আমি আপনাকে ছাড়ব না, সার রাফিয়ানালট!’ চেঁচিয়ে উঠে বর্মগুলোর চারপাশে রাফিকে তাড়া করে বেড়াতে লাগল মুসা। রাফিকে শেষমেশ কোণঠাসা করার পর বলল, ‘শেষ প্রার্থনা করে নিন!’

রাফি মুখ তুলতেই মুসার পিছনে ওয়ার্ড মন্টগোমারির ভূতকে দেখতে পেল।

তারস্বরে ঘেউ-ঘেউ শুরু করল ও।

‘বুঝেছি, সার রাফিয়ানালট, আপনি হার মেনে নিচ্ছেন। স্বীকার করছেন রোস্টের শেষ টুকরোটা আমার, তাই না?’

রাফির গর্জন থামল না।

ব্যাপার কী দেখার জন্য ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াল মুসা। ‘খাইছে!’

চেঁচিয়ে উঠল ভূতটাকে দেখে। ‘ভূত! ভূত!’

ভূতটার দু’পায়ের ফাঁক গলে বেরিয়ে দৌড় দিল মুসা আর রাফি।

‘এদিকে, রাফি!’ চিৎকার ছাড়ল মুসা। বর্মগুলো ঘিরে পাক খেয়ে চলল। ওকে অনুসরণ করল রাফি। একই কাজ করল ভূতটাও। ‘জোরে, রাফি!’ মুসা আর রাফি শেষ বর্মটার পিছনে গা ঢাকা দিল।

ওয়ার্ড মন্টগোমারির ভূত হল-এর মাঝখানে দাঁড়িয়ে রইল। মুসা আর রাফিকে দেখতে পাচ্ছে না।

‘বুঝলি, রাফি, এই ভূতটা আমাদের চাইতেও ক্লান্ত হয়ে পড়েছে!’ ফিসফিস করে বলল মুসা।

ভূতটাকে ভাল মত দেখার চেষ্টা করল রাফি। উঁকি দিতেই দুর্ঘটনাক্রমে মাথা ঠুকে গেল বর্মটার সঙ্গে। ক্যাঁচকোঁচ শব্দ তুলে ওটা আস্তে করে ঢলে পড়ে গেল পাশের বর্মটার উপরে।

এভাবে একটার পর একটা বর্ম পড়ে যেতে লাগল মেঝেতে। ভূতটা বোঁ করে ঘুরতেই রাফি আর মুসাকে দেখে ফেলল।

‘জলদি, রাফি-এখানে!’ মুসা ওদের পিছনের ট্রাঙ্কটার ভিতরে লাফিয়ে পড়ল। রাফি ওকে অনুসরণ করল। মুসা দড়াম করে লাগিয়ে দিল ডালাটা।

ভূতটা ট্রাঙ্কের কাছে দৌড়ে এসে ছিটকিনি মেরে দিল।

‘শব্দটা আমার ভাল লাগল না,’ বলল মুসা। ‘বাঁচাও!’

ট্রাঙ্কে থাবড়া মারতে শুরু করল।

‘বাঁচাও! কিশোর! রবিন! জিনা! কে আছ!’

ছয়

মুসা আর রাফি তখনও ট্রাঙ্কে বন্দি।

‘খাইছে, আমরা শেষ,’ বলল মুসা। ‘ভূতটা মনে হয় কিশোর, রবিন আর জিনাকে ধরেছে। আমি আগেই বলেছিলাম এ জায়গাটা ভাল না।’

হঠাৎই পায়ের শব্দ শুনতে পেল ওরা।

‘খাইছে, মনে হচ্ছে ভূতটা!’ চেঁচিয়ে উঠল মুসা। ‘বিদায়, রাফি!’

রাফি ঘেউ করে উঠল

টিক করে একটা শব্দ হলো। চোখ বুজে ফেলল মুসা। রাফি গর্জে উঠল। ঢাকনাটা উঠে যেতেই, মুসা ডান চোখটা সামান্য খুলল।

‘কিশোর! রবিন! তোমাদেরকে দেখে কী যে খুশি লাগছে!’

ট্রাঙ্ক থেকে লাফিয়ে বেরিয়ে এল ওরা। মুসা কিশোরকে জড়িয়ে ধরল। রাফি রবিনের পা চেটে দিল। মুসা এবার রবিনকে জড়িয়ে ধরল। রাফি কিশোরের পা চেটে দিল। এবার রাফিকে জড়িয়ে ধরল মুসা।

‘জিনাকে দেখেছ?’ প্রশ্ন করল কিশোর।

‘আমরা তো ভেবেছি ও তোমাদের সাথে আছে,’ জবাব দিল মুসা।

‘আর আমরা ভেবেছি তোমাদের সাথে,’ বলল রবিন।

‘খাইছে, ব্যাপারটা কেমন যেন ভুতুড়ে হয়ে যাচ্ছে,’ বলল মুসা। ‘প্রথমে ক্লিফট। এখন জিনা। আগেই তো বলেছিলাম এ দুর্গটা ভাল নয়।’

ঘেউ করে উঠে সমর্থন জানাল রাফি।

‘অ্যাই! তোমরা সব কোথায়?’ জিনার কণ্ঠ। ডাইনিং রুম থেকে আসছে।

ওরা সবাই ডাইনিং রুমে দৌড়ে গেল। টেবিলের মাথায়, ক্লিফটের চেয়ারে বসে জিনা।

‘এই যে,’ বলল জিনা। ‘কী খবর তোমাদের?’

‘তুমি ঠিক আছ তো?’ রবিনের প্রশ্ন।

‘অবশ্যই। আমি ইতিমধ্যে কিছু ব্যাপার জেনেছি যা দিয়ে এই রহস্যটার সমাধান করা যাবে।’

‘খাইছে, যেমন?’ মুসার প্রশ্ন।

‘সবার আগে আমি কোথায় ছিলাম জানতে চাও না?’ বলল জিনা।

‘আমরা সেটাই জানার চেষ্টা করছিলাম,’ বলল কিশোর।

‘মুসা যখন রাফির সাথে নাইট-নাইট খেলছে, বলল জিনা, ‘আমি তখন গ্রেট হলের অন্য পাশে। মন্টগোমারিদের ঢালটা দেয়ালে দেখতে পাই। একটা সুইচ আবিষ্কার করি, যেটা দিয়ে গোপন এক দরজা খোলে।’

গোপন দরজা!’ প্রায় চেঁচিয়ে উঠল কিশোর।

‘একটা নয়,’ বলল জিনা। ‘এক গাদা গোপন পথ। দুর্গের সবখানে গেছে এগুলো।’

‘যে সব গোপন পথ দিয়ে ভূতটা দুর্গের সবখানে দ্রুত ঘুরে বেড়ায়,’ যোগ করল রবিন।

‘ভূতটা যদি পথ চিনে থাকে আরকী,’ বলল জিনা।

‘ভূতটা সম্পর্কে তোমাদেরকে একটা কথা বলি,’ বলল মুসা। ‘চট করে হয়তো ঘুরে চলে আসে, কিন্তু স্বাস্থ্য খুব একটা ভাল নয় ওর।’

‘তার মানে?’ রবিনের প্রশ্ন।

‘দম পায় না, জবাবে বলল মুসা।

কিশোর আর জিনা পরস্পর দৃষ্টি বিনিময় করে মাথা ঝাঁকাল।

‘কে আমাদের ভূত মনে হয় বুঝতে পারছি,’ বলল জিনা।

‘আমি যা ভাবছি তুমিও যদি তা-ই ভাবো তা হলে আমাদের একটা ফাঁদ পাততে হবে,’ বলল গোয়েন্দাপ্রধান। চিমটি কাটল নীচের ঠোঁটে।

সাত

ডিনার টেবিলের মাথায় জড় হলো ছেলে-মেয়েরা।

‘আচ্ছা, সবাই শোনো। প্ল্যানটা হচ্ছে এরকম,’ শুরু করল কিশোর। ‘আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি একটা ভূত সবাইকে এই দুর্গ থেকে তাড়াতে চায়। কিন্তু কেন?’

‘যাতে একাই সব খাবার খেতে পারে?’ বাতলে দিল মুসা। ডিনারের জন্য সাজানো টেবিলটার দিকে চাইল ও।

‘তুমি কাছাকাছি গেছ,’ জবাবে বলল জিনা। ‘এই দুর্গে এমন কিছু আছে যেটা ভূতটার দরকার।’

‘ঠিক,’ বলল কিশোর। ‘কাজেই আমরা কোথাও যাচ্ছি না এমন ভান করে ভূতটাকে পাকড়াও করতে হবে। কিন্তু এটাই যথেষ্ট নয়। ওকে আমাদের ভয় দেখাতে হবে। তো, একটা ভূতকে কীভাবে ভয় দেখানো যায়?’

পা টিপে টিপে ওর পিছনে গিয়ে ‘ভউ!’ করে উঠতে হবে, বলল রবিন।

‘ঠিক’ জবাব দিল জিনা।

‘খাইছে, কিন্তু আমরা আরেকটা ভূত পাব কোথায়?’ মুসার প্রশ্ন।

সবাই রাফির দিকে ঘুরে চাইল।

‘খাইছে!’ বলে উঠল মুসা।

‘ভয়ের কিছু নেই,’ বলল কিশোর। ‘আমরা রাফিকে সাজিয়ে দেব। ভূতটা এলে শুধু রাফিকে ‘ভউ!’ করে উঠতে হবে।’

জিনা রাফিকে ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিল।

রাফি লেজ নেড়ে সায় জানাল।

জিনা পকেট থেকে তিনটে স্ন্যাক বের করল। একটা একটা করে ছুঁড়ে দিল রাফির দিকে।

খুশিতে আত্মহারা রাফি লেজ নাড়তে লাগল। ঝাঁপিয়ে পড়ল খাবারের উপর।

‘রবিন, তুমি আর জিনা টেবিলে বসে ডিনার করার ভান করো, বলল কিশোর।

‘খাইছে, আমি টেবিলে বসে খাওয়ার ভান করলে হয় না?’ প্রশ্ন করল মুসা। ‘আমি ভূত ধরার চাইতে খেতে অনেক বেশি ওস্তাদ।’

‘মুসা, তুমি রাফিকে কস্টিউম পরতে সাহায্য করো। তারপর ওখানে গিয়ে গ্র্যাণ্ডফাদার ক্লকটার পিছনে দাঁড়াও। রাফি পর্দার আড়ালে দাঁড়াবে আর আমি থাকব ওর পাশে। রাফি ভূতটাকে ভয় দেখানোর পর টেবিলক্লথটা তুলে নেবে। ভূতটাকে ধরতে আমি তোমাকে হেল্প করব,’ একনাগাড়ে বলে গেল গোয়েন্দাপ্রধান।

‘ঠিক আছে, কী আর করা,’ বলল মুসা। রাফিকে বর্ম পরতে সাহায্য করল। রবিন আর জিনা ডিনার টেবিলে যার যার জায়গা নিল। দেয়াল থেকে ঝোলা এক পর্দার পিছনে লুকিয়ে পড়ল রাফি। কিশোর দাঁড়াল পর্দাটার সামনে। অপরদিকের দেয়ালের গ্র্যাণ্ডফাদার ক্লকটার পাশে দাঁড়াল মুসা।

‘ভাগ্যিস আমরা সারা রাত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম,’ বলল রবিন।

‘হ্যাঁ, কোন ভূতকে আমি ভয় পাই না,’ বলল জিনা।

‘বিশেষ করে ওয়ার্ড মন্টগোমারির মত নিরীহ ভূতকে,’ গলা চড়িয়ে বলল রবিন।

খাবার মুখে দিতে শুরু করল ওরা। হঠাৎই, আলোগুলো সব নিভে গেল। আলো ফিরে এলে, ওয়ার্ড মন্টগোমারির ভূতকে ওখানে দেখা গেল।

‘আমি তোমাদেরকে মাঝরাতের আগে চলে যেতে বলেছিলাম। কিন্তু তোমরা শোননি। এখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। এই দুর্গ আর এখানে যারা রয়েছে তারা চিরদিনের জন্যে অভিশপ্ত হয়ে পড়েছে।’

কিশোর রাফির দিকে চকিতে চেয়ে মাথা নাড়ল।

রাফি ঢোক গিলে গলা খাঁকরে নিল। এবার পর্দার আড়াল থেকে লাফিয়ে বেরিয়ে এল।

‘ভউ! ভউ!’ চেঁচিয়ে উঠল।

চরকির মতন ঘুরে দাঁড়াল ভূতটা। বর্ম পরা উদ্ভটদর্শন রাফিকে দেখে লাফিয়ে উঠল।

‘মুসা, এখনই!’ কিশোর চেঁচাল 1

গোপন জায়গাটা থেকে লাফিয়ে বেরিয়ে এল মুসা। বিশাল টেবিলটার টেবিলক্লথটা আঁকড়ে ধরে টান দিল। হুশ!

প্লেটগুলোর নীচ থেকে উড়ে এল পেল্লায় কাপড়টা। ও আর কিশোর ওটা ছুঁড়ে দিল ভূতটার উপরে। রবিন আর জিনা ভূতটাকে চেপে ধরে বসিয়ে দিল চেয়ারে।

‘তোমাদের সবার উপর অভিশাপ পড়বে!’ টেবিলক্লথের নীচ থেকে চেঁচাল ভূতটা।

পরমুহূর্তে দেয়ালের ওপাশ থেকে ধুপ! ধুপ! শব্দ কানে এল ওদের।

‘খাইছে! আসল ভূতটা!’ চেঁচিয়ে উঠল মুসা।

রাফি ঘেউ-ঘেউ শুরু করল। ঘাবড়ে গেছে।

টেবিলের নীচে ঝাঁপিয়ে পড়ল মুসা।

আট

‘কী পাগলামি করছ!’ বলল জিনা। ‘এখানে কোন ভূত-টুত নেই!’ গ্র্যাণ্ডফাদার ক্লকটার কাছে হেঁটে গেল ও। ঘড়িটার উপরে হাত বুলিয়ে কিছু একটা খুঁজে পেল। এবার একটা বোতাম টিপে দিতেই একটা দরজা খুলে গেল। বেরিয়ে এলেন ক্লিফট মন্টগোমারি। হাতজোড়া বাঁধা। মুখে টেপ সাঁটা। কপাল ফুলে রয়েছে। তবে এ ছাড়া তাঁকে দেখে মনে হলো বহাল তবিয়তেই আছেন।

‘ক্লিফট!’ বলে উঠল রবিন। ‘আপনি ঠিক আছেন তো?’ ভদ্রলোকের মুখ থেকে টেপটা ধীরে সুস্থে সরিয়ে নিল।

‘একটু ভড়কে গেছি শুধু, এ ছাড়া আর কোন সমস্যা নেই, ধন্যবাদ,’ বললেন তিনি

কিশোর একটা চোখ রাখল ভূতটার উপরে। ওদিকে, জিনা আর রবিন ক্লিফটের বাঁধন খুলে দিল। ভদ্রলোক বসে পড়ে কপালে হাত বুলালেন।

‘কী ফোলাটাই না ফুলেছে,’ বলল জিনা।

‘হ্যাঁ,’ বলে এক গ্লাস পানির দিকে হাত বাড়ালেন ক্লিফট

‘কী হয়েছিল মনে আছে?’ জিনার প্রশ্ন।

‘মনে আছে আমি সবাইকে দুর্গের খবরটা দিচ্ছিলাম। তখনই বাতি চলে গেল আর আমার পরদাদার ভূত এসে হাজির হলো। এরপর যা মনে পড়ে তা হলো আমাকে ছোট কোন এক ক্লজিটে ভরে রাখা হয়।’

টেবিলের নীচে ইঙ্গিত করল রবিন।

‘মুসা, তুমি বেরিয়ে এসো। এটা ভূত না, ক্লিফট।’

মুসা উঁকি দিল। ওর সঙ্গে রাফিও।

‘আমি আগেই জানতাম। আমি শুধু একটু—’

‘দেখছিলে মেঝেটা ঠিক আছে কিনা,’ জুগিয়ে দিল কিশোর।

হঠাৎ এসময় অদ্ভুত এক টোকার শব্দ উঠল। সবাই কাঠ-পুতুল হয়ে গেল।

‘আবার আরেকটা ভূত নাকি?’ ককিয়ে উঠল মুসা।

‘না, সামনের দরজা,’ বললেন ক্লিফট।

দরজা খোলার এবং হলওয়েতে লোকজনের কথা-বার্তার শব্দ শোনা গেল।

‘হ্যালো? কেউ আছে এখানে?’

‘এই যে, এখানে,’ চেঁচিয়ে বললেন ক্লিফট।

মেয়র রেডিং ক’জন পুলিস নিয়ে কামরায় প্রবেশ করলেন।

‘ক্লিফট! তুমি সুস্থ আছ! খুব খুশি হলাম। সরি, আসতে দেরি হয়ে গেল। রাস্তায় ঝড়ের কারণে সমস্যা হয়ে গেছিল।’

‘এখন দেখলে কেমন হয় ভূতটা কে,’ বলল কিশোর।

‘নিশ্চয়ই,’ বললেন ক্লিফট।

কিশোর ভূতের মাথা থেকে টেবিলক্লথটা তুলে নিল।

‘আপনি খুলবেন, ক্লিফট?’ বলল।

‘খুশি মনে। বলে ভূতের মুখোশ খুললেন ক্লিফট। পর মুহূর্তে, ঢোক গিললেন। ‘ক্লাইভ, তুমি! কিন্তু কেন?’

ক্লাইভ ব্যথিত চোখে ক্লিফটের দিকে চাইল।

‘কারণ, স্যর, আমি এখানে থাকি। সবাইকে ভয় দেখাতে চেয়েছিলাম যাতে আমাকে এখান থেকে চলে যেতে না হয়। জীবনের বেশিরভাগ সময় এই দুর্গে কেটেছে আমার। আপনার মত, স্যর, আমার তো আর সামার হোম বা থাকার অন্য কোন জায়গা নেই। মণ্টগোমারি দুর্গ ছাড়তে হলে আমি গৃহহীন হয়ে পড়ব, স্যর।’ চোখে অশ্রু বিন্দু দেখা গেল ওর।

‘ওহ, ক্লিফট,’ মেয়র রেডিং বললেন, ‘তুমি বেচারী ক্লাইভকে দোষ দিতে পারো না। ওর বিরুদ্ধে তুমি কোন অভিযোগ দায়ের কোরো না, প্লিজ।’

জিনা এগিয়ে এল এসময়।

‘মাফ করবেন, মিস্টার মন্টগোমারি,’ বলল, ‘কিন্তু কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আপনার উচিত ক্লাইভকে গুপ্তধনের কথা জিজ্ঞেস করা।’

‘খাইছে, গুপ্তধন?’ বলে উঠল মুসা।

‘হ্যাঁ, মন্টগোমারিদের পারিবারিক গুপ্তধন,’ বললেন ক্লিফট। ‘কিন্তু তুমি সেটা জানলে কীভাবে?’

‘আমি গোপন পথগুলোয় খানিক ঘুরেফিরে বেড়িয়েছি,’ জানাল জিনা।

‘বাহ, চমৎকার, জিনা,’ বলে উঠলেন ক্লিফট। ‘তুমি তার মানে পারিবারিক গুপ্তধনের সিন্দুকটা খুঁজে পেয়েছ?’

‘হ্যাঁ,’ সগর্বে জবাব দিল জিনা।

ক্লাইভ, তুমি কী বলতে চাও? ক্লিফট প্রশ্ন করলেন।

ক্লাইভ পুলিসদের দিকে তারপর ক্লিফটের দিকে চাইল।

‘এটা সত্যি। আমি মন্টগোমারিদের গুপ্তধন চেয়েছিলাম। সেজন্যেই ওয়ার্ড মন্টগোমারির মুখোশ অর্ডার দিয়ে বানাই। এত বছর এ পরিবারকে সেবা দেয়ার পরে এটুকু আমার প্রাপ্য হয়। এই ঠাণ্ডা, জঘন্য জেলখানার মত বাসার জন্যে আমি থোড়াই পরোয়া করি। আমি গুপ্তধনের সিন্দুকটা নিয়ে সটকে পড়ার জন্যে যথেষ্ট সময় চেয়েছিলাম। ওটা হাত করতে পারলেই এ দেশ ছেড়ে চলে যেতাম।’

ক্লিফট কিশোর, রবিন আর জিনার দিকে ঘুরে দাঁড়ালেন।

‘ক্লাইভকে তোমরা সন্দেহ করলে কেন?’ জিজ্ঞেস করলেন।

সবার আগে মুখ খুলল কিশোর।

‘প্রথমটায় আমরা মিস্টার ডিপেস্টোকে সন্দেহ করি। আলো ফিরে এলে দেখা যায় ভূতের মোমবাতিটা তাঁর হাতে।’

‘কিন্তু কাজটা তাঁর পক্ষে করা সম্ভব নয়,’ যোগ করল রবিন। ‘কেননা উনি আমার পাশে সারাটা সময় বসে ছিলেন।’

‘আমরা ক্লাইভকে ট্রাঙ্কের ভিতরে পাওয়ার পর যোগসূত্র পেতে শুরু করি,’ বলল জিনা। ও আমাদেরকে বলে আঁধারে হোঁচট খেয়ে ট্রাঙ্কে আটকা পড়ে। নিখুঁত এক অ্যালিবাই।’

‘কিন্তু ট্রাঙ্কটা গ্রেট হল-এ,’ বলে চলল কিশোর। ‘এবং কামরাটায় আলো দিচ্ছে মোমবাতি, বিদ্যুৎ নয়। ডাইনিং রুমের আলো নিভে যাওয়ার পরও গ্রেট হলে মোমবাতি জ্বলছিল। ভূতটা যখন দেখা দেয় তখন একমাত্র ক্লাইভই আমাদের সাথে ছিল না।

‘ও এখানে বহু বছর ধরে আছে,’ যোগ করল রবিন। ‘এবং সেজন্যেই সম্ভবত গোপন প্যাসেজগুলো সম্পর্কে জানে।’

‘কিন্তু মুসা ব্যাপারটা কনফার্ম করে,’ বলল জিনা। ‘ভূতটা ওদেরকে গ্রেট হলে তাড়া করে বেড়ানোর পর মুসা বলে ভূতটার দম ফুরিয়ে গিয়েছিল!’

‘সত্যিকারের ভূতের দম ফুরানোর কথা নয়,’ ব্যাখ্যা করল কিশোর। ‘কিন্তু বুড়ো মানুষদের ফুরোতে পারে।’

ক্লাইভ ওদের দিকে মুখ তুলে চাইল।

‘এই বিচ্ছুগুলো আর শয়তান কুকুরটার জন্যে ধরা পড়তে হলো, নইলে ঠিকই পার পেয়ে যেতাম।’

‘এই লোকটাকে নিয়ে যান, অফিসার্স,’ বললেন মেয়র রেডিং। ‘টো ট্রাক শীঘ্রি এসে পড়বে, ছেলে-মেয়েদের উদ্দেশে বললেন। ‘আবহাওয়ার জন্যে একটু দেরি হচ্ছে। রহস্যটার সমাধান আর ক্লিফটকে সাহায্য করার জন্যে তোমাদেরকে ধন্যবাদ। গুডবাই, ক্লিফট, তোমার মহত্ত্বের জন্যে আবারও ধন্যবাদ। কাল সকালে আমার অফিস থেকে তোমাকে ফোন করা হবে।’

‘ইউ আর ওয়েলকাম, মেয়র। ইট’স মাই প্লেজার।’

মেয়র পুলিস অফিসারদের আর ক্লাইভকে নিয়ে চলে গেলেন। ছেলে-মেয়েদের দিকে ঘুরে দাঁড়ালেন ক্লিফট।

‘আমি তোমাদের প্রত্যেকের কাছে কৃতজ্ঞ। তোমাদের ভ্যান ঠিক হতে তো দেরি আছে, আমরা ততক্ষণে সাপারটা সেরে নিই, কেমন?’

‘সে আর বলতে, খোশমেজাজে বলল মুসা।

‘আর তোর জন্যে,’ রাফির উদ্দেশে বললেন ক্লিফট, ‘বিশেষ এক খাবারের ব্যবস্থা আছে।’ টেবিলের কাছে হেঁটে গেলেন তিনি। মাথায় ছোট্ট এক হাতল নিয়ে তৈরি রুপোলী এক গম্বুজের দিকে হাত বাড়ালেন। একটানে গম্বুজটা খুলে দিলেন তিনি। ‘রোস্ট বীফের শেষ টুকরোটা!’ চেঁচিয়ে উঠলেন।

‘স্যর রাফিয়ানালট জিন্দাবাদ!’ চিৎকার ছাড়ল মুসা। সবাই হেসে উঠল। তারপর খেতে বসল।

***

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *