১৫. একটা কিছু ঘটে যখন

একটা কিছু ঘটে যখন

টেলিভিশনে একটা দারুণ ছবি চলছিল তখন। ক্যাকটাস ঝোপের পাশ দিয়ে কয়েকটা বুনো ঘোড়া টগবগিয়ে চলেছে। পাহাড়ের আড়ালে কয়েকজন মানুষ। তারা লাফ দিয়ে একটা ল্যান্ড রোভার গাড়িতে উঠল। ওরানা বুনো ঘোড়া শিকারি। বিকট শব্দ করে পাহাড়ি পথ ধরে ল্যান্ড রোভারটা ছুটল । তারপর শুরু হলো গতির তীব্রতা। ঘাসের বনে একবার হারিয়ে গিয়ে আবার ঝলমলিয়ে উঠল ঘোড়াগুলো। ল্যাসো হাতে ছুটছে শিকারিরা। শিকারিদের চোখেমুখে ঘামের বিন্দু চিকচিক করছে। টেলিভিশন জুড়ে প্রচণ্ড উত্তেজনা তখন। ওই বুঝি ঘোড়াটার গলায় ফাঁস লাগল । শিকারিটা কেমন ঝুঁকে আছে দেখো। তার হাত দুটো বুঝি নিশপিশ করছে।

টুপুন বিস্ফোরিত হয়ে দৃশ্যটা দেখছে। তার একটা হাত হাঁটুতে চাপড় দিচ্ছে। টুপুনের মেজকাকু সোফার কোণায় বসে গম্ভীর মুখে একটা মেডিকেল জার্নালের পাতা ওল্টাচ্ছিলেন। টুপুনের উত্তেজনা দেখে কয়েকবার বিরক্ত হলেন। কী যে করছে ছেলেটা। যেন সেও ছুটে চলেছে ওই শিকারিদের সাথে। তার হাতের মুঠোতেও নিপুণভাবে ধরা আছে ল্যাসো। এক্ষুণি যেন একটা বুনো ঘোড়াকে ফাঁস লাগিয়ে সে ধরবে।

ওই যে… একটা ঘোড়া আটকে গেছে। ঘোড়াটাকে টেনে-হিচড়ে নিয়ে যাচ্ছে ল্যান্ড রোভারটা। ক্যাকটাসের বড় বড় ফুলগুলো থেতলে যাচ্ছে। ওই তো, আরেকটা ঘোড়া নিপুণভাবে ছুঁড়ে দেয়া ল্যাসোতে আটকে যাচ্ছে। ধকধক করছে টুপুনের বুক। তার নাকের দু’পাশ ফুলে উঠিছে। আর সে চুপ করে থাকতে পারল না। চিৎকার করে উঠল টুপুন।

মেজকাকু চমকে তাকালেন। ছবি দেখতে-দেখতে টুপুন এমনভাবে চিৎকার করে উঠবে, এমনটা তিনি ভাবতে পারেননি। তিনি মেডিক্যাল জার্নালটা সশব্দে বন্ধ করে উঠে গেলেন। যাবার আগে অবশ্য টুপুনের দিকে একবার লাল চোখে তাকিয়ে গেলেন। কিন্তু টুপুন তখন কোথায়? আরিজোনার ক্যাকটাসভরা মরুভূমির বুকে বুনো ঘোড়াদের সাথে ছুটে বেড়াচ্ছে সে দুরন্তভাবে।

চোখের সামনে পাকানো দড়ির ঝিলিক। যাকে বলে ল্যাসো। আফ্রিকার কঙ্গো দেশেই মাসাই জাতির লোকেরা যেমন বল্লম দিয়ে বিধে ফেলে দুরন্ত সিংহকে। তেমনি যেন এই ল্যাসো। সাঁৎ করে একটা শব্দ হয়। তারপরেই ঘোড়ার গলায় ফাঁস। আফ্রিকার অনেক তৃণভূমিতে ল্যাসো ছুঁড়ে জিরাফ পর্যন্ত ধরা হয়। টুপুন হাতারি নামের একটা রঙিন ছবি দেখেছিল। তাতে এসব দৃশ্য ছিল। এই হাতারি ছবিটার কথা টুপুন অনেকদিন ভুলতে পারেনি। ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখেছে। সবুজ ঘাসের বনে ঝাঁপ দিল বুনো মহিষের ওপর। বিশাল এক পাইথন পেঁচিয়ে ধরেছে হলুদ বাঘকে। এসব টুকরো টুকরো দৃশ্য। খুব উত্তেজনায় ভরা।

টেলিভিশনের সেই ছবিটা দেখতে দেখতে দুরন্ত হয়ে উঠল টুপুনের মন। জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল। বাটালী পাহাড়ের বুকে আলো জ্বলছে বিন্দু বিন্দু। অনেক দূরে পার্বত্য চট্টগ্রামের জঙ্গল যেন রহস্যময় হাতছানি দিচ্ছে।

কতদিন টুপুনের ইচ্ছে হয়েছে কাসালং কিংবা খাগড়াছড়ির গহীন অরণ্যে হারিয়ে যেতে। সাজেক ভ্যালি কিংবা পাবলাখালির বুনো পথে হেঁটে যেতে। ভাল্লাগে না এই শহরের পানসে দিনগুলো। স্কুল- শিক্ষকদের গম্ভীর মুখ। ফ্রিজে থরেথরে সাজিয়ে রাখা কলা, নাশপাতি, আপেল। সেজো আপার বানানো কাজু বাদামের আইসক্রিম। দোকান থেকে কিনে আনা কমিক্স বইগুলোর চকচকে মলাট। আজকাল এসব খুবই বিচ্ছিরি ধরনের লাগছে টুপুনের কাছে। একটা কিছু ঘটে না এই শহরে। সব কেমন ছিমছাম থাকে। একটা দারুণ কিছু ঘটে না বলে টুপুনের সব সময় আক্ষেপ। বুড়ো বাবুর্চি একবার বলেছিল লাল ঈগলের ডিম এনে দেবে। বেদেরা নাকি বিক্রি করে। টুপুনের কাছ থেকে সে জন্যে বিশ টাকাও নিয়েছিল। কিন্তু ঈগলের ডিম এনে দেয়নি। টুপুন তাগাদা দিলেই ঘোলাটে চোখ মেলে বলে একি সোজা কাজ নাকি? ঈগলের ডিম আনতে গিয়ে কতজন কামড় খেয়ে পালিয়েছে। সবাই পারে না। কেউ কেউ পারে। আমি তো বাপু সেই রকম সাহসী কোনো বেদেকেই খুঁজছি। পেলেই এনে দেব।

রাতে ঘুমুতে গিয়ে সেই বুনো ঘোড়াদের দাপাদাপি ছবির মতো ফুটে উঠল। একটা গাড়ি পেলে পাহাড়ি এলাকায় দিব্যি চলে যাওয়া যেত। কযেকজন বন্ধু মিলে হই-হই করতে করতে ছুটে চলা। শহরের পানসে দিন নয়। পাহাড়ি এলাকার ঝকঝকে দিন। নানা ধরনের অ্যাডভেঞ্চার ঘটে যেতে পারে সেখানে। গাছ-গাছালির মাঝে কত কি যে লুকিয়ে থাকতে পারে। রহস্যের একটা অদৃশ্য জাল যেন মিশে আছে সেখানে। টুপুনের মাঝে-মাঝে মনে হয় কোনো গাছের কোটরে একটা কালোচিতা লুকিয়ে রয়েছে। অন্ধকারে চিতার চোখ দুটো জ্বলছে ধকধকিয়ে। কোনো টলটলে চোখের মায়াবী হরিণ হয়তো কচিকচি পাতা খাবার লোভে এগিয়ে আসছে। চিতাটা লাভ দেবার ভঙ্গি করছে। এইসব দৃশ্যের কথা ভেবে অস্থির হয়ে যায়। টুপুন। হঠাৎ তার মনে হয় গ্যারেজে একটা জীপ রয়েছে তাদের। নতুন গাড়ি কেনার পর থেকে সেটা আর কেউ চালায় না । ছোটবেলায় জীপে করে আব্বার সাথে হিমছড়ি গিয়েছিল। অজস্র ঝাউগাছ সেখানে। সারা দিনরাত ঝাউবনে বাতাসের মাতামাতি । জীপে করে আচ্ছামতো ঘোরা হয়েছিল সেবার।

অনেক দিন ধরে জীপটা ব্যবহার করা হয় না। নষ্ট হয়ে যায় নি তো আবার? কাল সকালেই মিস্তিরি ডাকিয়ে খোঁজ নিতে হবে।

ঘুমোতে যাবার আগে টুপুনের মনে হলো একটা জীপ শাঁইশাঁই করে চলেছে পাহাড়ি পথ দিয়ে। শাব্বির চালাচ্ছে। টুপুন দূরবিন দিয়ে দু পাশের গাছপালা দেখছে। কত পশুপাখি।

সকাল হতেই টুপুন গিয়ে হাজির শাব্বিরদের বাসায়। চকবাজার থেকে একটা মিস্তিরি ডেকে আনল। কিছু টুকটাক কাজ করে সেরে মিস্তিরি জানাল, জীপটা চমৎকার রয়েছে। এরপর বেরিয়ে যাওয়ার প্ল্যান।

পরপর কয়েকদিন শাব্বিদের চিলেকোঠার ঘরে বসে ফন্দি ফিকির আঁটা হলো। ওরা চারজন জীপ নিয়ে পাহাড়ি পথে অভিযানে যাবে । টুপুন, শাব্বির, পিন্টু আর প্রবাল। ঠিক হলো বাড়ির কাউকেই এসব বলা হবে না।

প্রবালের এক আত্মীয় থাকে কাকঝোরা। প্রবাল শুধু এতদিন তার গল্পই শুনে এসেছে। ওখানে নাকি পাহাড়ি নদীতে মাঝে মাঝে সোনার তাল পাওয়া যায়। এই লোভে অনেকেই গিয়েছিল। কুমরির পেটে গেছে তাদের কেউ-কেউ। সাপের ছোবলে মরেছে অনেকে। কাকঝোরায় খুব কম লোক থাকে। জায়গাটার কথা মনে হলেই ভাবতে ইচ্ছে করে রহস্যের একটা মিহি কুয়াশার চাদর যেন সেখানে মিশে আছে। কাকঝোরা! ওরা ঠিক করল সেখানটিতেই যাবে প্রথম।

কাকঝোরা যাবার ম্যাপ তৈরি করতে সাহায্য করল শাব্বিরদের বাড়ির মালী। চমৎকার রান্না করতে পারে সে। তাকেও তারা দলে নিয়ে নিল। অনেক কিছুই হয়ে গেল চুপিচুপি। পিন্টু একটা এয়ারগান ম্যানেজ করল। টুপুনের ছিল দূরবিন। মালীকে টাকা দিয়ে কয়েক দিনের খাবার কিনে নিল। প্রবাল বলল, কুঁছ পরোয়া নেহি। খাবার শেষ হলে বনের ফলমূল খাব। আমরা যাচ্ছি অ্যাডভেঞ্চারের জন্যে ।

ওদের অভিযানের প্রস্তুতি চুপিচুপি হতে লাগল। কয়েকটা দিন কেটে গেল দারুণ রকমের উত্তেজনায়। ওদের বাড়ির লোকেরা জানল না। টুপুনদের গ্যারেজের কোণায় ফেলে রাখা জীপটা এখন রীতিমতো এক অভিযানে যাবার জন্যে তৈরি হয়ে আছে।

এক ভোরবেলায় আবছা অন্ধকার থাকতেই জীপটা বেরিয়ে গেল পাহাড়ি এলাকার দিকে। এই পানসে শহর ছেড়ে চলে যেতে হবে।

এখানকার দিনগুলোতে শুধু ক্লান্তি। এই ইটের দালানগুলো হারিয়ে যাক। তার বদলে দেখা দিক সারিসারি গাছপালা। কালো পিচের রাস্তার বদলে আসুক বুনোপথ। দিগন্তে দেখা যাক পাহাড়ের আবছা সারি। কাকঝোরার পথে ওদের যাত্রা শুরু হলো। হুররে, চাপা আনন্দে চিৎকার করে উঠল প্রবাল।

চমৎকার চালাতে পারে শাব্বির। তাদের তখন গতির নেশায় পেয়েছে। কয়েকটা ছোট-ছোট শহর আর বাজার ছাড়িয়ে বিকেলের দিকেই ছমছমে পাহাড়ি এলাকা দিয়ে যেতে লাগল তাদের জীপ। একটা হাট থেকে কয়েকটা মুরগি কিনে নিল সস্তায়। মালী চমৎকার বেঁধে দেবে বলে জানাল।

এক সময় চোখে পড়ল পানের বরোজের সারি। বিকেলের রোদ ফুরিয়ে যাচ্ছে। কি নিঝুম চারদিক। লোকজন একেবারে নেই। টুপুন দূরবীন দিয়ে পাখি দেখছে। শাব্বির শিস দিচ্ছে। কী ঝরঝরে লাগছে। অন্যরকম পরিবেশ চারদিকে। পানের বরোজ নাকি খুব ঠাণ্ডা হয়।

হঠাৎ শাব্বির ব্রেক কষল। ক্যাঁচ।

রাস্তার মাঝখানে একটা ল্যান্ড রোভার। কয়েকবার হর্ন দিতেই একটা লোক বেরিয়ে এল। কোনো রেড ইন্ডিয়ান সর্দার বলে মনে হয়। লোকটা তাদের দিকে এগিয়ে এল। শরীরে কালি লেগে আছে। গাড়িটা মেরামত করছিল।

: কোথায় যাচ্ছেন আপনারা? লোকটির মুখে হাসি।

: কাকঝোরা। প্রবাল বলল।

: চমৎকার। আমিও সেখানে থাকি। কাকঝোরাতে আমার খামার আছে। আনারসের বাগান আছে। এদিকে এসেছিলাম পাখির স্যুটিং করতে। নতুন ধরনের বেশ কয়েকটি পাখি দেখলাম আজ।

ওরা দেখল ল্যান্ড রোভারে একটা মুভি ক্যামেরা।

: আমার হবি হচ্ছে পাখির ছবি তোলা। তাদের ডাক রেকর্ড করা।

টুপুন ভাবল, বাঃ লোকটা তো বেশ ঝরঝর করে নিজের পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। যেন তাদের সাথে অনেক দিনের চেনা ।

: রাস্তায় আমার গাড়ি গেল খারাপ হয়ে। আমাকে আপনাদের সাথে নিলে খুশি হব । দেখুন তো, ভর সন্ধেবেলায় কী ঝামেলা!

: চলুন, চলুন, কোনো অসুবিধে নেই। আপনাকে পেয়ে বরং ভালোই হলো।

লোকটা একটা জ্যাকেট গায়ে দিয়ে মুভি ক্যামেরা আর একটা টেপ রেকর্ডার নিয়ে ওদের জীপে উঠে এল। প্রবাল তাকাল লোকটার দিকে ভালো করে। কত বয়স হবে? পঞ্চাশের মতো।

: নাম কি তোমাদের? এমন দলবেঁধে চলেছ কি জন্যে? এদিকে তো লোকজন খুব একটা আসে না।

ওরা চারজনের নাম বলল।

: এই দেখ, আমার নামটাই তোমাদের বলা হয়নি। আমাকে সবাই ডাকে ক্যান কং সাহেব বলে। এই নামে থাইল্যান্ডে আর তাইওয়ানে এক রকম শাক হয়। অনেকটা আমাদের কলমি শাকের মতো। খুব পুষ্টিকর। আমি আমার খামারে প্রথম এর চাষ করি। আশপাশের লোকদের ক্যান কংয়ের চাষ করতে বলি। অনেকেই করে। খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে যায় এই শাক। লাগাতেও তেমন কোনো ঝামেলা নেই। ডগা ভেঙে মাটিতে পুঁতে দিলেই হলো। বুঝলে, সেই থেকে আমার আসল নামটি হারিয়ে গেছে। সবাই ডাকে ওই ক্যান কং বলে। তা আমার কাছে তেমন খারাপ লাগে না।

জীপ চলছে ছুটে। ওদের কাছে ভালো লাগছে লোকটার গল্প ।

: এই তো সামনেই কাকঝোরা। তোমরা কিন্তু আজ রাতে আমার খামার বাড়িতে থাকবে। আজ তোমরা আমার গেস্ট।

ওরা সবাই লোকটার প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেল। নইলে এত রাতে কী বিপদই না হতো, কাকঝোরা জায়গাটা যে এতটা জংলী ধরনের হবে সেটা আগে ওরা বুঝতে পারেনি।

: এবার বাঁ দিকে নেমে চালাও।

মাটির রাস্তায় নেমে এলো জীপ। কাকের ডানার মতো অন্ধকার নামছে।

: এখান থেকে নেমে এল জীপ। কাকের ডানার মতো অন্ধকার নামছে।

: এখান থেকে শুরু হয়েছে আমার আনারসের বাগান। পুকুরগুলোত নাইলোটিকার চাষ করছি। অস্ট্রেলিয়া থেকে হাঁস মুরগি আনিয়েছি। কক্সবাজারের হোটেল আর মোটেলগুলোতে আমার খামার থেকে ডিম মাখন আর ফলের সাপ্লাই যায়।

জীপের হেড লাইটের আলোতে টিলা জায়গার আনারস বাগান ঝলসে উঠছে। বন থেকে বেরুল টিয়ে। সোনার টোপর মাথায় দিয়ে। ছেলেবেলায় বইতে পড়েছিল।

: এক সাথে এত আনারস!

: আমি আনারস ক্যানিং-এর একটা ফ্যাকটরি করব ভাবছি। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে চমৎকার চালান দেয়া যেতে পারে। আমার ইচ্ছে আছে আগামী বছরের মাঝেই একটা কোল্ড ড্রিংক্স বাজারে ছাড়ব। বিদেশি একটা কোম্পানির সাথে এ নিয়ে কথাবার্তা হয়েছে। আমার আরেকটা ইচ্ছে হলো এদিকে ডুরিয়ানের চাষ করা। সিংগাপুর আর মালয়েশিয়াতে এই ফলটা খুব হয়। খেতে চমত্তার কিন্তু গন্ধটা খুব উগ্র । ডুরিয়ানের জন্যে এখানকার মাটি ভালো।

টুপুন অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল লোকটার দিকে। নতুন ফল চাষের স্বপ্ন দেখছে। খামার-বাড়িটা বাড়াবার স্বপ্ন দেখছে। শহর ছাড়িয়ে বনভূমিতে বসে পাখির ছবি তুলছে। টেপ রেকর্ডার নিয়ে বনে-বাদাড়ে ছুটছে পাখির শিস বা ডাক রেকর্ড করতে। বিদেশে নাকি পাকির ডাকের রেকর্ড কিনতে পাওয়া যায়।

লোকটা যেন টুপুনের মনের কথা টের পেয়ে গেছে। টেপ রেকর্ডার চালাতে চালাতে চল, আজ এতে ফেজান্ট পাখির ডাক রেকর্ড করেছি। এই পাখিগুলো খুব তাড়াতাড়ি হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশ থেকে। লোকেরা এদের ডিম সংগ্রহ করছে ঝোপঝাড় খুঁজে। মানুষের হাত খুব লোভী। কোনো নিভৃতে একটি পাখি হয়তো বাসা বানিয়ে চুপচাপ আছে। সেখানেও যায় মানুষের লোভী হাত। পাখিদের নিরিবিলি বাসাগুলো তছনছ করে ভেঙে দেয়। ডিম তুলে নিয়ে আসে। কুষি কুষি বাচ্চা মেরে ফেলে।

জীপের আলোতে একটা কাঠের বাড়ি দেখা যায়।

: এসে গেছি। উঃ, তোমাদের না পেলে আজ খুব অসুবিধে হতো।

কয়েকজন লোক ওদের দিকে তাকিয়ে রইল। খামারবাড়ির কর্মচারী হবে। পুকুর থেকে হাঁসের ঝাঁক কলকল করে ফিরছে। একপাশে সারিবেধে মুরগির বাসা। এক জায়গায় আনারসের ভূপ।

: এস, ইয়াংম্যানদের দল। তোমাদের নিশ্চয় খুব খিদে পেয়ে গেছে। হাতমুখ ধুয়ে একটু বিশ্রাম নাও। আমি খাবারের বন্দোবস্ত করছি।

চমৎকার বসার ঘর ক্যান কং সাহেবের। দেয়াল জুড়ে শুধু ফলমূল আর শাক-সবজির রঙিন ছবি। কি সতেজ লাগছে তরকারিগুলো। এত চমৎকার ছাপা। যেন টসটস করছে। টমেটোর ছবিগুলো কি ঘন লাল। শাব্বির মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইল সেদিকে। গাজরের কি পুষ্ট ছবি ঝুলছে। একটা বেঁটে ধরনের লোক এসে ওদের ঠাণ্ডা আনারসের জুস দিয়ে গেল। সাথে কিছু পনির। কাজু বাদাম।

টুপুন ভাবছে খামারবাড়ির কথা। ছোটবেলায় লরা ওয়াইল্ডারের অনেকগুলো বই পড়েছিল। প্রেইরির ঘাসের বনে ছোট্ট কাঠের একটা খামারবাড়ি ছিল লরাদের। বিভিন্ন ঋতুর কি মন উতল করা বর্ণনা। পড়তে পড়তে মনটা সেই ঘাসের বনে হারিয়ে যেত। ম্যাপল পাতার রস জ্বাল দিয়ে চিনি তৈরি করত লরার বাবা। টার্কি মোরগের ঝলসানো রোস্ট খেত সবাই আয়েশ করে বড়দিনের উৎসবে। টুংটাং গীটার বাজাতো লরার বাবা।

কাকঝোরার এই নিঝুম খামারবাড়িতে আনারসের জুস খেতে খেতে হঠাৎ এসব এলোমেলো ভাবনা হলো টুপুনের। দীঘল ঘাসের বনে পাইন কাঠের ছোট্ট একটা বাড়ি।

ক্যান কং সাহেব একটা সবুজ সিল্কের শার্ট চাপিয়ে ঢুকলেন।

: রান্না হতে হতে আমি তোমাদের কিছু আমার ভালো পাখির ফিল্ম দেখাই। সময়টা ভালো কাটবে।

ক্যান কং সাহেব ঘর অন্ধকার করে প্রজেক্টার চালিয়ে দিলেন। পর্দায় ফুটে উঠল বনভূমি। ঝোপঝাড়। রঙিন ছবি।

: এটা হচ্ছে মউচুষি বা সান বাউস। ছোট্ট বাটির মতো বাসা বানায় এরা। আর এটা হলো পিপিট পাখি। শীতের সময় পাখিরা কিভাবে বাসা তৈরি করে তার উপর স্টাডি করে আমি ছবি তুলেছি। এসব ব্যাপারে উৎসাহ পেয়েছি ওয়াল্ট ডিজনির ছবি দেখে। আঃ কী চমৎকার ছবি বানাতেন তিনি। তার কোনো তুলনাই হয় না। একটা বিশাল স্বপ্নের জগতকে তিনি অনায়াসে বানিয়ে ফেলতে পারতেন।

বাবুর্চির মুখ দেখা গেল দরজার ওপাশে। রান্না তৈরি। ক্যান তৈরি। ক্যান কং সাহেব গল্প করতে করতে ওদের নিয়ে খাবার ঘরে গেলেন।

: আমি এখানে ব্রকলীর চাষ করছি। ব্রকলী হলো ছোট ধরনের সবু ফুলকপি। তার ভেতরে মাংশের কিমার পুর দিয়ে খেতে খুব টেস্ট। আজ তোমাদের খাওয়াব।

টেবিলে অনেক নতুন ধরনের শাক-সবজির তরকারি দেখল ওরা। খাবার সময় অনেক গল্প। ক্যান কং সাহেবের আগামী পরিকল্পনার কথা।

রাত অনেক হয়ে আসছে। এবার ঘুমোতে যাবার পালা। খামারবাড়িটা চুপ হয়ে আছে। বুনো ফুলের গন্ধ ছড়াচ্ছে বাতাস। কী একটা প্রাণী যেন ডেকে উঠল!

ওদের চারজনের কাছে সবটা মিলিয়ে এক চমৎকার অভিজ্ঞতা। একটা কিছু ঘটছে সেই থেকে আনন্দে ওদের মুখগুলো জ্বলজ্বলে হয়ে আছে। অন্তত ছাই রঙের বাড়িঠাসা শহর থেকে বেরিয়ে আসা গেছে। যেখানে নোংরা গলির সারি। ড্রেনের পানিতে মরা বেড়াল। ইলেকট্রিকের তারে কাক মরে ঝুলে থাকে। পাথরঘাটার গির্জার ঘড়িটা ঠিক সময় জানিয়ে যায়। একজন কবি লিখেছিলেন, পাথরঘাটার গির্জা যেন লাল পাথরের ঢেউ।

এখানে, এই কাকঝোরাতে কত পাহাড়ের ঢেউ। আনারসের সমুদ্র যেন চারপাশে।

সারাদিনের ধকলে শাব্বির, পিন্টু, প্রবাল আর মালী ঘুমিয়ে গেছে। টুপুনের ঘুম আসছে না। কোনো নতুন জায়গায় গেলে চট করে টুপুনের ঘুম আসে না। ছটফট করতে থাকে।

একটা ঘর থেকে কেমন গড়গড় শব্দ হচ্ছে। টুপুন কৌতূহলী হয়ে উঠল। আস্তে করে দরজা খুলে বাইরে এল। কোণার ঘরটায় মৃদু নীল আলো । সেখান থেকেই শব্দটা আসছে। পা টিপে টিপে সেদিকে এগিয়ে গেল টুপুন। পর্দার ফাঁক দিয়ে দেখল ক্যান কং সাহেব প্রজেক্টার চালিয়ে ছবি দেখছেন। পর্দার দিকে তাকাল টুপুন । কোনো পাখির ছবি নয়। এক ধরনের কালো কালো পোকার ছবি। পোকাগুলো ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাচ্ছে। আর কোনো বাগানে নেমে সব কিছু খেয়ে সাবাড় করে দিচ্ছে। একটা দৃশ্যে দেখা গেল একটা আনারস। বাগানকে কুরে কুরে খেয়ে ফেলল ওই পোকার ঝাঁক। আবছা অন্ধকারেও লক্ষ্য করল টুপুন আবার নিঃশব্দে তাদের ঘরে ফিরে গেল। পুরো ব্যাপারটা কেমন যেন লাগল তার কাছে।

ভোর হতেই ক্যান কং সাহেব তাদের খামারের এলাকাটা ঘুরে ঘুরে দেখালেন। চমৎকারভাবে তৈরি করা হয়েছে সবজি বাগানগুলো। অনেক নতুন ধরনের শাক-সবজির সাথে পরিচিত হল ওরা।

: এ হলো কাউলুন। মঙ্গোলিয়া থেকে এর জীন আনিয়েছি। কাউলুনের সালাদ চমকার হয়। বিরাট এলাকা জুড়ে খামার। দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। হাঁস-মুরগিগুলো কি পুষ্ট। একপাশে সালগমের চাষ করা হয়েছে। সয়াবিনের চাষও চলছে। অন্যদিকে কাজু বাদাম গাছের সারি।

দুপুরবেলায় বিদায় নিল ওরা। ক্যান কং সাহেব ওদের বেশ কিছু ডিম আর মাখন উপহার দিলেন। বেতের একটা ঝুড়ি ভর্তি করে দিলেন।

: ইয়াংম্যান। তোমরা অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছ। খুব ভালো লাগল তোমাদের। যাবার সময় আবার এসো।

আবার বুনোপথ। আবার গাছ-গাছালির ছায়ায় হারিয়ে যাওয়া রাস্তা। আবার চকিতে কোনো কাঠ ময়ূরকে ঝোপের আড়ালে দেখতে পেয়ে উল্লসিত হয়ে ওঠা। জীপ চলছে সাঁই সাঁই করে।

বিকেলের দিকে ছোট্ট একটা লোকালয়ে এল ওরা। জায়গাটার নাম ঝনিয়ামুখী।

ঝনিয়ামুখীতে ছোট একটা বাজার রয়েছে। আশপাশের জমিতে পাহাড়ি চাষীরা আনারস ফলায়। এখানে এনে বিক্রি করে । পাইকাররা কিনে নিয়ে যায়। আনারস বিক্রি করেই এখানকার পাহাড়ি লোকদের দিন চলে।

ওদের এখন আনারস তোলার সময়। সারা বছর পরিশ্রম করে বছরের এ সময়টার দিকে তাকিয়ে থাকে তারা। পোকার আক্রমণের খবরে তাই খুব চিন্তিত পাহাড়ি চাষিরা।

কয়েকজন দৌড়ে এসে খবর দিল উত্তরের আনারসের বাগান পোকায় সাফ করে দিয়েছে। ঝনিয়ামুখীর সরল উপজাতি চাষিরা আতঙ্কিত হয়ে উঠল।

ওরা থাকতে থাকতে পোকার আক্রমণের আরো খবর এল। একজন বৃদ্ধ চাষি বাজারের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ডুকরে কেঁদে উঠল । এবার আমরা শেষ হয়ে যাব। অভিশাপ লেগেছে আমাদের এলাকায়। অভিশাপ লেগেছে ঝনিয়ামুখীতে। পাকা ফল আর তোলা হবে না।

টুপুনের গত রাতের একটা দৃশ্য ঝট করে মনে হলো। ক্যান কং সাহেব একলা পোকার ছবি দেখছেন। কিন্তু… কিন্তু পোকারা যখন ফলের বাগান তছনছ করে দিচ্ছে তখন ক্যান কং সাহেবের মুখের কোণায় চাপা হাসি কেন? নিশ্চয়ই এর মাঝে কোনো রহস্য আছে।

সে রাতে ওরা ঝনিয়ামুখীতেই থাকবে ঠিক করেছিল। টুপুন গম্ভীর গলায় বলল, আজ রাতে আমাদের কাকঝোরাতে ফিরতে হবে।

: কাকঝোরা কেন? সবাই অবাক।

: কিসের অভিযান? হাওরে টুপুন, কি সব বলছিস?

প্রবাল তাকে ধরে ঝাকুনি দিল একটা।

: ঝনিয়ামুখীর আনারস ক্ষেতে পোকা আক্রমণের রহস্যের শুরুটা ওই খামারবাড়িতেই আছে।

: কি যে তুই আবোল-তাবোল বলিস মাঝে মাঝে।

শাব্বির যেন একটু বিরক্ত। এত রাতে পাহাড়ি পথে জীপ চালাবার ঝককি সে বোঝে।

: আমরা যখন শহর ছেড়ে আসি তখন প্ল্যান করেছিলাম একটা কিছু ঘটে না বলে শহরে আমাদের বিরক্তি । কাউকে না বলে আমরা এই গহীন জঙ্গলে চলে এসেছি কেন? একটা কিছু ঘটবে এই আশায়। আর যখন এখানে সেই একটা কিছু ঘটতে যাচ্ছে তখন কি আমরা চুপচাপ থাকব?

একসাথে অনেকগুলো কথা বলে টুপুন তাকিয়ে আছে সবার দিকে।

: ঝনিয়ামুখীর বুকে পোকার আক্রমণ। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে পাহাড়ের গায়ে জুম চাষ করে এখানকার লোক। কত কষ্ট করে আনারস ফলিয়েছে। সব শেষ হয়ে যাচ্ছে এক ধরনের ভয়ঙ্কর কালো পোকার আক্রমণে।

: তা আমরা এর কি করতে পারি? পিন্টু অসহায়ের মতো জিজ্ঞেস করে।

: আমার মন বলছে আমি এর রহস্য বের করতে পারব। তোরা সবাই আমার সাথে চল।

কি ঘন অন্ধকার! জোনাক জ্বলছে মিটমিট করে । এক সময় হলুদ চাদ উঠে এল গাছগাছালির ফাঁকে। ফ্যাকাশে আলো। জীপটা আবার চলা শুরু করল কাকঝোর দিকে। জীপের মাঝে বসে থাকতে থাকতে ওদের বুক ধুকধুক করছিল। কে জানে কোনো গাছের ডালে কালো চিতা ওত পেতে বসে আছে কি না। হেড লাইটের আলোতে কি একটা বড়সড় প্রাণীকে রাস্তার এপাশ থেকে ওপাশে ছুটে যেতে দেখা গেল।

: ওই যে ক্যান কং সাহেবের খামারবাড়ি। জীপ থামাও এখানে। আমরা হেঁটে যাব । মালী তুমি জীপে বসে থাক। আমরা আসছি।

টুপুনের নেতৃত্বে ওরা চলা শুরু করল। রাতচরা কয়েকটা পাখি ডাকছে। আনারস বাগনের ভেতর দিয়ে পথ। পাশের পুকুরে একটা বড় মাছ বুঝি ঘাই মারল। সিরসির করে বাতাস বইছে। খামারবাড়িটা নিঝুম। সবাই ঘুমিয়ে আছে বোধ হয়। কোণায় একটা ঘরে মৃদু আলো জ্বলছে। ওরা চারজন চুপিসারে তার কাছে গেল। মাটিতে দাঁড়িয়ে জানালার একটা কপাট আস্তে করে ঠেলে দিল। চারজনের কৌতূহলী দৃষ্টি ঘরের ভেতর।

র্যাকের উপর থরে থরে জার সাজানো। সব কালো পোকাতে ভর্তি। উজ্জ্বল আলো জ্বলছে ঘরে। ক্যান কং সাহেব টেবিলে ঝুঁকে কি যেন পরীক্ষা করছেন। খুট করে একটা শব্দ হল। ওরা চারজন সাঁৎ করে মাথা নামিয়ে নিল।

: আজকের চালানটা খুব ভালো হয়েছে। ঝনিয়ামুখীর বাগান খতম।

ঘরের ভেতর একটা বাঝখাই ধরনের গলা মশোনা গেল।

ওরা চারজন সাবধানে মুখ তুলল। ক্যান কং সাহেবের হিসহিসে গলা।

: আমার বাগান ছাড়া সব বাগানের ফলমূল আমি ধ্বংস করে দেব এই পোকাদের দিয়ে। শুধু আমার খামার থেকেই ট্রাক ভর্তি চালান যাবে। আশপাশের কোনো বাগান আমি আস্ত রাখব না। ঝনিয়ামুখী শেষ হয়েছে। এরপর চিতিডোংরা, হালুনীপাড়া, কাকরমুখী। সব একটা একটা করে ধ্বংস করব।

টুপুন ফিসফিস করে বলল, সরে আয়। সব বুঝেছি। ওই পুকুর পাড়ে চল।

চারজন চুপিসারে হেঁটে গেল। মেঘের আড়ালে চলে গেছে চাঁদ। কি ঘন অন্ধকার। এদিকটায় কলাবাগন। বাতাসে কলার পাতা সরসর করে দুলছে।

: ঘরেই রয়েছে সব পোকা। আজ রাতেই ওদের শেষ করতে হবে। আমি আলমারিতে এসিডের জার দেখেছি।

: ওরা চলে গেলেই আমি যাব। তোরা আমার জন্যে এখানে অপেক্ষা কর।

টুপুন কথাগুলো খুব শান্তভাবে বলল, বিপদের মুখোমুখি হলে মাথা ঠিক রাখতে হয়। অনেক গোয়েন্দা বইতে টুপুন এ ধরনের বর্ণনা পড়েছে।

: তোকে আমরা একলা যেতে দিতে পারি না। আমরাও যাব।

: বেশি লোক গেলেই গোলমাল হতে পারে। প্রবাল আয়, তোরা থাক।

ক্যান কং সাহেবের ওই ঘরটার আলো নিভে গেল। অন্ধকারের ভেতর মিশে গেল টুপুন আর প্রবাল।

পুকুরে মাছের শব্দ। ক্যান কং সাহেব নাকি নাইলোটিকার আবাদ করবেন।

খাবার সময় বলেছিলেন সোনালি পাকা ফলে আর রুপোলি মাছে ভরে থাকবে আমার খামারবাড়ি।

: উফ, লোকটা কি ডেঞ্জারাস! ভয়ঙ্কর কালো পোকা পুষছে।

পিন্টু আর শাব্বির কলাবাগানে বসে অপেক্ষা করছে। সময়গুলো মনে হচ্ছে পাথর চাপা । কেমন লাগে প্রতীক্ষা করতে।

এক সময় টুপুন আর প্রবালকে দেখা গেল এগিয়ে আসছে। ওদের মুখে চাপা উত্তেজনা।

: কী খবর?

: কালো পোকারা এখন এসিডের ভেতরে মরণ সাঁতার কাটছে।

: কেউ টের পায়নি। চল যাই।

বুনোপথ ধরে আবার জীপ চলছে। ওদের উত্তেজনা তখনো কমেনি।

: চিতিডোংরা, হালুনীপাড়া আর কাঁকরমুখীর ফলের বাগানগুলো ক্যান কং সাহেবের কালো পোকার আক্রমণ থেকে বেঁচে গেল।

: কিন্তু … কিন্তু লোকটার শাস্তি হওয়া উচিত ছিল।

: একটা শিশির মুখ হঠাৎ করে খুলে যাওয়াতে পোকার ঝাঁক তার বাগানের দিকেই গেছে।

অন্ধকারে পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে জীপটা এগিয়ে যাবে। সবাই তাকিয়ে আছে সামনের দিকে। একটা কিছু তাহলে শেষপর্যন্ত সত্যি সত্যিই ঘটল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *