০৮. অতীশের চোখ

অতীশের চোখ

আকাশের রঙ কচি লেবুপাতার মতো। মহুয়া বনের ভেতর থেকে একঝাঁক পাখি উড়ে যায়। আকাশ থেকে নেমে আসছে নরম আলো। ভোরের আলোয় চিকচিক করছে করতোয়া নদী। সূর্যের আলো সোনার টোপর হয়ে যেন ঢেউয়ের মাথায় ঝিকিমিকি জ্বলছে। একটি মকরমুখী নৌকা পাল তুলে ভেসে আসছে। মাঝিদের দাঁড় টানার শব্দ হচ্ছে ছপছপ । বাতাসে ফুলে উঠছে পাল । দূর থেকে দেখলে মনে হবে বিশাল একটি রাজহাঁস যেন পানি কেটে তরতর করে এগিয়ে আসছে।

নৌকোটি এসেছে পুণ্ড্রবর্ধনের রাজধানী পুন্দনগর থেকে । শরতকালের মৃদু বাতাস বয়ে যাচ্ছে নদীর ওপর দিয়ে। দুলছে তীরের দুধশাদা কাশবন । জেলেরা মাছ ধরছে। একটি ডিঙি কালো পাটাতনে চকচকে ইলিশগুলোকে মনে হচ্ছে যেন গলানো রুপো । মকরমুখী নৌকো করে এসেছেন পুন্দনগরের ক্ষেত্র বণিক। বাবরি চুল তার । চুলগুলো থোকা থোকা হয়ে কাঁধের ওপর ঝুলে আছে। বণিকের চোখ দুটো বনবিড়ালের চোখের মতো জ্বলজ্বল করে। মাঝিরা নৌকো বাঁধে খুঁটির সাথে । আত্রাই, পুনর্ভবা নদী পেরিয়ে এসেছে ওরা। বণিক তাকিয়ে আছেন বাইরের দিকে। কয়েকটি শামুকখোল পাখি দূরের গ্রামের দিকে পতপত করে ডানা মেলে উড়ে গেল। বণিকের ইশারায় একজন তীর ছুঁড়ে মারে। একটি পাখি ঝুপ করে নদীতে পড়ে। একজন মাঝি সাঁতরে গিয়ে মৃত পাখিটাকে নিয়ে আসে। বণিকের চোখে চাপা উল্লাস। শামুকখোল পাখির তেলতেলে মাংস তার কাছে খুব প্রিয়।

নদীর দুপাশে আখের ক্ষেত। যবের ক্ষেত। যবের শিষগুলো নীল পদ্মের মতো স্নিগ্ধ সবুজ। গ্রামের আখ মাড়াই কল থেকে একটানা ঘরঘর করে শব্দ হচ্ছে। এ সব বাড়ির গুড়জালা ভর্তি হয়ে চালান যায় বিভিন্ন বন্দরে। তালের রস দিয়ে হয় পাটালি। বরেন্দ্র এলাকার লোকজন এখানকার গুড় খুব পছন্দ করে।

বণিকের লোকেরা গ্রামে নেমে গেলো। এই গ্রামটিতে কয়েক ঘর কুমোর থাকে। তারা মাটি দিয়ে চমৎকার জিনিস বানাতে পারে। ডোবা আর পুকুর থেকে এঁটেল মাটি তুলে নিয়ে সুন্দর খেলনা তৈরি করে। নানারকম পশুপাখি। কি নিখুঁত সে সবের গড়ন। এমন করে রঙ লাগায় যে চোখ ফেরানো যায় না। পেখমমেলা ময়ূর দেখলে অবাক হতে হয়। মাটির পাখি বুঝি উড়াল দিলো। পুন্দনগরের ছেলেমেয়েরা সেসব খেলনা ভালোবাসে। সামনেই নগরীতে বিরাট উৎসব। মেলা বসবে। দেশ বিদেশ থেকে আসবে বহু লোক। আসবে সমতট, হরিকেল থেকে। পুন্দনগর তখন গমগম করবে। এ গ্রামের বুড়ো উদয় কুমোর অপূর্ব মূর্তি তৈরি করে। কী নিখুঁত তার ভঙ্গি। পোড়ামাটির ইটের উপর দেবদেবীর মূর্তি গড়ে তুলতে উদয় কুমোরের কোনো জুড়ি নেই।

পুন্দনগরে বিরাট মন্দির তৈরি হচ্ছে। তার দেয়ালের জন্যে চাই অসংখ্য ছবি আঁকা ইট। সে সব সংগ্রহ করতেই আসা। ক্ষেত্র বণিক শুনেছেন উদয় কুমোরের ছোট নাতির হাতে নাকি জাদু আছে। তার মতো সুন্দর মূর্তি বানাতে এ তল্লাটে আর কেউ পারে না। উদয় কুমোরের নাতির তৈরি মূর্তির সুনাম ছড়িয়ে গেছে দূর দূর এলাকা পর্যন্ত ।

মকরমুখী নৌকাটিতে দেখে গ্রামে সাড়া পড়ে গেলো। যেন শান্ত দিঘিতে ঢিল ছুঁড়েছে কেউ। শবরপাড়া থেকে ছুটে এলো কয়েকজন। তাদের কালো পেশিবহুল শরীরে ঘাম। কানে দুলছে মাকড়ি। গলায় লাল বিচির মালা। কালো চুলে ময়ূরের পালক গোঁজা। এদের কাজ পশুপাখি শিকার করা। ঝোপ জঙ্গল থেকে ফাঁদ পেতে পাখি ধরা। তিতির, ডাহুক, ঘুঘু, নীলকণ্ঠ, জলকবুতর, হরিয়াল পাতকোয়া । শহরের বাবুরা এসব পাখির মাংস খেতে পছন্দ করেন। ওদের ঝোলার মধ্যে থাকে বালাবাচি। ঘোড়ার লেজের চুল কেটে নিয়ে পাকিয়ে বানানো ফাঁদ।

নৌকোর কাছে এসে শবর আর পুলিন্দরা ভিড় করছে। তাদের হাতে খাঁচা ভর্তি পাখি। ক্ষেত্র বণিক লোভী চোখে তাকিয়ে আছেন পাখিগুলোর দিকে। তার বনবিড়ালের মতো দুটো চোখ যেন দেখতে পাচ্ছে পালক ছড়ানো পাখিদের শরীরের নরম, লাল মাংস। সুগন্ধি মশলা মাখিয়ে আগুনের ভেতরে ঝলসানো হচ্ছে। চন্দ্রদ্বীপের এক বণিকের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিলেন। দূর যব দ্বীপের মশলা মাখানো ঝলসাননা তিতির খেলে মুখে স্বাদ লেগে থাকে অনেকদিন। এবার তিনি এ গ্রাম থেকে প্রচুর পাখি কিনে নিয়ে যাবেন। নগরীতে গিয়ে এক ভোজসভার আয়োজন করে সেখানে পরিবেশন করবেন এ সব পাখির মাংস। রাজপুরুষেরা খুশি হয়ে তাকে আরো বাণিজ্য করার সুযোগ দেবে তাহলে।

বণিক নৌকোর কিনারে এলেন।

শুধু পাখি আনলেই চলবে? আর কি শিকার করেছিস?’

পেছন থেকে একজন শবর চেঁচিয়ে বললো,

পরশু একটা হরিণ ধরেছি। ভালো দাম পেলে দেব।

বণিক তার পেটিকা থেকে কয়েকটি মুদ্রা ছুঁড়ে দিলেন মাটিতে।

যা, জলদি হরিণটি নিয়ে আয়। আজ এখানে হরিণের মাংস দিয়ে ভোজ হবে। গাঁয়ের সবারই নিমন্ত্রণ।

নদী তীরের লোকেরা ভোজের কথা শুনে সোল্লাসে চিৎকার করে উঠল । আজ মৌরলা মাছের পরিবর্তে হরিণের নরম মাংস। বণিকের কাছে আছে এলাচের দানা। দারুচিনি। জাফরান। গন্ধে মৌ মৌ করবে রান্না।

ক্ষেত্র বণিক আসলে ভোজের আয়োজন করে গ্রামের লোকদের হাত করতে চাইছেন। নদীর তীর জুড়ে কলাপাতা কেটে সাজিয়ে দেয়া হবে। সেখানে উঁই ফুলের মতো ঝিরঝির সাদা ভাত। রাই শর্ষের তরকারি। হরিণের মাংস। টক দই। ঘন ক্ষীর। পেটপুরে খাবে সবাই। বণিক ভোজের লোভ দেখিয়ে কুমোরদের দলে টানতে চান। লোকমুখে শুনেছেন রাজা ধর্মপাল সোমপুর গ্রামে একটি বিশাল বিহার নির্মাণ করছেন। সেখানে যদি সমস্ত আঁকা ইট চলে যায় তাহলে পুন্দনগরের মন্দিরের কাজ ব্যাহত হবে। যে করেই হোক কুমোরদের হাত করতে হবে। সাথে তার প্রচুর মুদ্রা রয়েছে।

খানিক বাদেই পুলিন্দরা সেই হরিণটিকে দড়ি বেঁধে টেনে নিয়ে এলো। একটি পলাশ গাছের নিচে টলটলে চোখে তাকিয়েছিলো একটি কিশোর। নাম কঙ্ক। সে উদয় কুমোরের ছোট নাতি। মাটি দিয়ে হরিণটির একটি মূর্তি বানিয়েছে সে। কঙ্ক দেব-দেবীর মূর্তি বানায় না। পশুপাখির মূর্তি বানায়। সাধারণ লোকের মূর্তি বানায়। যারা হাটে মাঠে কাজ করে তাদের মূর্তি। মাটির ইটের ওপর নিপুণ ভাবে ফুটিয়ে তোলে রোজকার দেখা ছবি।

কেমন ভাবে হিচড়ে নিয়ে যাচ্ছে হরিণটিকে। মাথার ওপর বিশাল নীল আকাশ। পেঁজা তুলোর মতো মেঘ ভেসে যাচ্ছে। কঙ্ক ভাবে, মানুষের মনে কি মায়া বলে কিছু নেই? হরিণটি ছটফট করছে। টকটকে চোখের একজন লোক হরিণটিকে মাটিতে ফেলে দুটো পা দিয়ে প্রাণীটাকে চেপে ধরে। তারপর মস্ত বড় ছুরি দিয়ে হরিণটির গলা কাটে। ফিনকি দিয়ে ছোটে রক্ত। সবুজ ঘাস লাল হয়ে যায়। ভয়ে চোখ বন্ধ করে কঙ্ক। তার বুকের ভেতরে কেউ যেনো জ্বলন্ত শলাকা গেঁথে দিচ্ছে। ক্ষেত্র বণিকের চোখে তখন চাপা উল্লাস।

কঙ্ক ভাবে, এই নিহত হরিণটির একটি মূর্তি এখুনি বানাবে সে। বুকের ভেতরে এই ইচ্ছেটা স্রোতের মতো ফুটে উঠছে। শণঘাসের বনের ভেতর দিয়ে ছুটতে থাকে কঙ্ক। কয়েকটি খরগোশ আর সজারু পালিয়ে যায়। কঙ্ক ছুটতে ছুটতে চলে আসে গাঁয়ের শেষ মাথার বট গাছের কাছে। ঝিরঝির করে বটপাতা দুলছে। লাল ফল মাটিতে। পাশে একটি দিঘি। কিনারে নলখাগড়ার ঝোপ। সেখানে বাসা বেঁধেছে কয়েকটি বুননাহাঁস, নাকতা হাঁস, শরালি।

কঙ্ক পুকুর পাড় থেকে কিছু এঁটেল মাটি তুলে আনে। কয়েকটি ঘাসফড়িং ঝিনঝিন করে উড়ছে। কঙ্ক অনেক যত্ন আর মমতার সাথে মাটি দিয়ে সেই হরিণটির মূর্তি গড়তে থাকে। হরিণটিকে হত্যা করতে উদ্যত সেই নিষ্ঠুর লোকটার মূর্তি বানাতেও সে ভোলে না। চারপাশে নিঝুম পরিবেশ। সোনালি রোদ আলতো করে নেমে এসেছে এখানে। কঙ্ক মনোযোগের সাথে গড়ছে মূর্তি। তার নিপুণ হাত কাজ করে চলেছে। নলখাগড়ার ঝোপ থেকে উঁকি মারছে বুনোহাঁসের দল।

ওদিকে করতোয়ার তীরের বাতাস হরিণের মাংশের রান্নায় মৌ মৌ করছে। ক্ষেত্র বণিক বহু ধরনের মশলা দিয়েছেন। এগুলো এনেছেন মালাক্কার দ্বীপ থেকে। ক্ষেত্র বণিক বাণিজ্যের জন্যে তাম্রলিপি বন্দরে গিয়েছেন। সুবর্ণ দ্বীপে গিয়েছেন। পান, সুপারি, নারকেল নিয়েছেন নৌকো বোঝাই করে। মৌসুমী বাতাসে নৌকোর পাল উঠেছে ফুলে।

দক্ষিণ ভারতের সমুদ্রের উপকূল ধরে গেছেন ক্ষেত্র বণিক। ভাসতে ভাসতে গুর্জর দেশ। বন্দর থেকে বন্দরে। এক বন্দরের নাম শূর্পারক।

কখনো সামুদ্রিক লবণের বিনিময়ে এনেছেন পাথুরের লবণ। সুপারির বদলে মাণিক্য, পানের বদলে মরকত আর নারকোলের বদলে শঙ্খ। তেজপাতা আর পিপুলও এনেছেন। আধসের পিপুলের দাম পনেরো সোনার মুদ্রা। হীরাধন বণিকের সপ্তডিঙা মধুকরের সাথে একবার গিয়েছিলেন সিংহলে। সেই উত্তাল সমুদ্রে ভেসে যাওয়ার স্মৃতি তাকে আলোড়িত করে।

বণিক মাংশ রান্নার তদারকি করছেন । হরিণের বুটিদার ছালটিকে একটি গাছের ডালে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তার ওপর কয়েকটি নীল ডুমো মাছি ভনভন করে উড়ছে। জাফরান মেশানোর ফলে রান্নার সুগন্ধ বেড়েছে। পাহাড়ি শিশির ভেজা উপত্যকায় এর চাষ হয়।

বণিকের লোকেরা সবুজ কলাপাতায় গরম ধোঁয়াওঠা ভাত ঢেলে দিচ্ছে। নানা ধরনের সবজি দিয়ে তৈরি হয়েছে লাবড়া। তাতে মেশানো হয়েছে কুরনো নারকোল। আছে কপূর দেওয়া পানি। ঘন দুধের পায়েস। সবাই তৃপ্তির সাথে খাচ্ছে। বুড়োরা খেতে খেতে চিৎকার করছে।

ওহে, এদিকে একটু হরিণের মাংস দাও তো।

ক্ষেত্র বণিক লোকটা বেশ ভালো। দেখলে না, আসামাত্রই কেমন ভোজ দিলো ।

মনে নেই, গেলবার শম্বরের মাংস কেমন খাইয়েছিল।

বণিক যদি প্রতি মাসে একবার করে আসত।

গ্রামের উলিডুলি পোশাকপরা মানুষগুলোর কাছে এ রকম খাবার স্বপ্নের মতো।

উদয় কুমোরের কাছে এলেন ক্ষেত্র বণিক। বুড়ো সবুজ কলাপাতা থেকে ক্ষীর তুলে খাচ্ছে। কাশফুলের মতো ধপধপে চুল।

কই হে, তোমার ছোট নাতি কই? খুব যে তার নাম ডাক শুনি।

উদয় কুমোর ফ্যালফ্যাল করে তাকায়।

নাতি আসে নাই। তারে তো সকাল থিকা দেখতাছি না।

কথাটা শুনে একটু থমকে গেলেন ক্ষেত্র বণিক। তিনি অনেক আশা করেছিলেন যে কুমোরের নাতিকে দেখবেন। বণিক মনে মনে একটু অস্থির হয়ে উঠলেন। ছেলেটিকে তার চাই। কয়েকজন লোক পাঠালেন ছেলেটিকে খুঁজে আনতে।

কঙ্কের মূর্তি তৈরি ততক্ষণে শেষ হয়েছে। বটগাছের পাতা ঝিরঝির করে দুলছে। এমন সময় দেখা গেলো মাঠের ওপর দিয়ে হনহন করে আসছে ক্ষেত্র বণিকের একজন লোক।

এই, তুমি উদয় কুমোরের ছোট নাতি কঙ্ক।

হ্যাঁ।

নিমন্ত্রণে যাওনি কেন? জাননা, বণিক নিজে তোমার খোঁজ করছে।

ক্ষেত্র বণিক নিষ্ঠুর। ওর নিমন্ত্রণে যেতে আমার ঘৃণা হয় ।

এ কথা শুনে লোকটা ছুটে এসে শক্ত হাতে ধরলো কঙ্ককে। যেন কবুতরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল বাজপাখি।

এত বড় সাহস তোমার! দেখাচ্ছি মজা। যেতে তোমাকে হবেই।

কঙ্ককে টেনে হিচড়ে নিয়ে যাচ্ছে লোকটা। কাঁটা ঝোপের সাথে ঘষটে কঙ্কের শরীর রক্তাক্ত হয়। তবু সে হরিণের মূর্তিটিকে বুকের কাছে আগলে রেখেছে। ক্ষেত্র বণিকের লোকটা রাগে বুনো মোষের মতো গরগর করে। সামনের বাঁকটা ফিরতেই দেখা গেলো নদী। ইলিশ মাছের পেটের মতো চিকচিক করছে। মকরমুখী অল্প অল্প দুলছে। গ্রামের প্রায় সব লোক খেয়ে চলে গেছে। ক্ষেত্র বণিজের সামনে এনে ফেলা হলো কঙ্ককে।

হুজুর, এই সেই ছেলে।

কিরে, আমার নিমন্ত্রণে এলি না যে? তোর জন্যে হরিণের বুকের মাংস রেখেছিলাম।

কঙ্ক মুখ তো। দুপুরের লাল রোদে ওর ফর্শা মুখটা তেতে আছে। চোখের নিচে রক্তের দাগ। শরীরের কাটা জায়গায়গুলো জ্বলছে। বণিকের একজন লোক এসে কঙ্কের চুল মুঠো করে ধরে।

যে লোক হরিণ খুন করে আমি তার কাছে যাই না।

ও, মরা জানোয়ারটার জন্যে দরদ দেখি উথলে উঠছে। শোন।

তোর কাজের খুব প্রশংসা শুনেছি। চমৎকার মূর্তি বানাতে পারিস। রাজধানীতে বিরাট মন্দির তৈরি হচ্ছে। তার দেয়ালের জন্যে অনেক ছবি আঁকা ইট দরকার। তোকে এসব বানাতে হবে।

আমি দেব দেবীর মূর্তি বানাই না।

কি বললি? এতো সাহস তোর? এই, কে আছিস, ছোঁড়াটাকে শায়েস্তা কর তো।

ঝাঁকড়া চুলের এক লোক এগিয়ে আসে। তার গলায় গমফুলের মালা। কোমরে জড়ানো ময়ূরের পাখা। কানে কুণ্ডল। মহুয়ার রস খেয়ে লোকটা খানিক টলছে। মকরমুখীর পাহারাদার লোকটি। সে এসে কঙ্ককে নিষ্ঠুরভাবে প্রহার করতে থাকে। কিছুক্ষণের মাঝেই কঙ্ক চিকর করে মূৰ্ছিত হয়ে যায়।

হুঁ, বড্ড ত্যাঁদড় এই ছোড়াটা। একে নিয়ে যেতে হবে পুন্দনগরে। একে তুলে নৌকোতে আটকে রাখ। আমি গ্রামে গেলাম।

পাহারাদার লোকটি কঙ্ককে পাঁজাকোলো করে তুলে নৌকোর একটি ঘরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরোজা বন্ধ করে দেয়। সারা দিনের ক্লান্তিতে, প্রহারে কঙ্ক আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে থাকে। করতোয়া ছলছল করে বয়ে যায়। সামনের পাকুড় গাছের ডালে বসে একটা গাঙচিল করুণ সুরে ডাকতে থাকে।

সন্ধেয় জ্ঞান ফিরে আসে কঙ্কের। ওপরের ছোট জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে তারাভরা আকাশ। যেনো নীল হরিণের মস্ত পিঠ। করতোয়ার ছলছল শব্দ শোনা যায়। নদী কার সাথে কথা বলে? বাঁ পায়ে যন্ত্রণা হচ্ছে। একটি চিনচিনে ব্যথার স্রোত তার শরীরে বয়ে যায়।

এই নিষ্ঠুর বণিক তাকে জোর করে রাজধানীতে নিয়ে যাবে। সে মনের আনন্দে বানায় পশুপাখির মূর্তি। হয়তো উড়ে যাওয়া কোনো পাখি। নয়তো ছুটে যাওয়া কোনো প্রাণীর ছানা। সাধারণত মানুষের জীবনের ছবি ফুটিয়ে তোলে ইটের ওপর। রোজকার দেখা ছবি। কাজ করছে মানুষ। খেটে খাওয়া কাদামাটির লোকজন। কিন্তু বণিক তাকে বাধ্য করবে দেব দেবীর মূর্তি বানাতে। কঙ্ক ভাবে, তাকে এখান থেকে পালাতে হবে। যে করেই হোক।

খটখট করে একটা শব্দ হচ্ছে। অন্ধকার চিরে আলো কাঁপা রেখা দেখ যায়। কালো বেড়ালের মতো অন্ধকারটা একটু নড়ে ওঠে। বাতি হাতে কেউ বুঝি আসছে। কঙ্ক চট করে মূৰ্ছা ভান করে পড়ে থাকে। দরজা খুলে একটা লোক ঢোকে। এই তো সুযোগ। লোকটা কিছু বোঝার আগেই কঙ্ক লাফিয়ে ওঠে হরিণ ছানার মতো। দেয়ালে বিরাট ছায়া। কঙ্ক ধাক্কা দিয়ে বাতিটা ফেলে দেয়। ঘরটা আবার অন্ধকার হয়ে যায়। লোকটা চিৎকার করে ওঠে। কঙ্ক তাকে ঠেলে এক কোণায় নিয়ে যায়। লোকটার মুখে গুঁজে দেয় কাপড়। তারপর সে দৌড়ে বাইরে আসে। তারার নীল আলো নদীতে ঝিকমিক করে। ছলছল করে নদী । কঙ্ক নৌকো থেকে নদীতে ঝাপ দেয়। ঝুপ করে একটা শব্দ হয়। মাছের মতো নিপুণ ভাবে সাঁতার কাটতে থাকে কঙ্ক। তরতর করে যায় এগিয়ে। নৌকোতে কিছু হইচই শোনা যায় । আলো হাতে কয়েকজন লোক ছুটোছুটি করে। কঙ্ক জানে তার আগে গাঁয়ে ফেরা হবে না। সেখান থেকে ক্ষেত্র বণিক আবার তাকে জোর করে ধরে নিয়ে আসবে শিকল দিয়ে বেঁধে। এনে অত্যাচার করবে।

একটা ঝোপের পাশে উঠে আসে সে। রাতচরা পাখি ডাকে। তারার আলোতে পথ চিনতে পেরেছে। ভাঁটফুলের গন্ধ পায়। পায়ের কাছ দিয়ে একটা ইদুর সরসর করে পালায়। সামনের গাছের ডালে কিছু নিশাচর পাখি ঝটপট করে ওঠে। কে যেন দূরে হরিণ বাঁশি বাজাচ্ছে। সেই শব্দ রাতের অন্ধকারে হরিণের বাচ্চার কান্নার মতো গুমড়ে উঠছে। টিউ টিউ করে ডাকছে যেন। কেমন কোমল হয়ে যায় মন। এতক্ষণের উত্তেজনা আর ধকল কেটে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায় কঙ্ক। এই পথ দিয়ে হেঁটে গেলে সোমপুর গ্রামে যাওয়া যাবে। রাতের বাতাসে গাছের পাতা ছমছম করে। কঙ্ক সোমপুরের দিকে যাত্রা করে।

ঐ পথ দিয়ে রাতে আরেকজন চলেছে সোমপুরের দিকে। তিনি পণ্ডিত চন্দ্রগর্ভ। রাজবংশে জন্ম তার। এসেছেন বিক্রমপুরের বজ্রযোগিনী গ্রাম থেকে।

রাজধর্ম ভালো লাগেনি। কেন মানুষ দুর্বলের ওপর অত্যাচার করে? জোর করে অন্যের ক্ষেত্রের ফসল নেয় কেড়ে? তরবারির কোপে সবজির মতো করে মানুষকে কেটে টুকরো করে। খাজনা আদায় না হলে চাষির কুঁড়েঘরে জ্বলে আগুন। নিরীহ প্রজাদের বেঁধে আনা হয়। রাজপ্রাসাদে চোখ ঝলসানো মণি মাণিক্যের স্তুপ। অন্যদিকে সাধারণ লোক থাকে অভুক্ত। কখনো খায়, খুদ জাউ, কেন, কেন? এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্যে দিনরাত ছটফট করেছেন চন্দ্রগর্ভ। প্রাসাদে দেখেছেন ষড়যন্ত্র। কুটিলতা। সিংহাসনের লোভে ছোট ভাই বড় ভাইকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলে। দেখেছেন বিষ খেয়ে নীল হয়ে যাওয়া মানুষের মুখ । ভুলতে পারেন না শংকর মাছের কাঁটার চাবুকে ক্ষতবিক্ষত লোকের পিঠ। বহু রাতে ঘুম আসেনি তার। বিছানায় ছটফট করেছেন। বুকের ভেতরে উদাসী হাওয়ার ঝাপটা। সংসার ভালো লাগেনি।

এই সংসারের মাঝ থেকে চলে গিয়েছিলেন কপিলাবস্তুর শাক্যবংশের রাজপুত্র সিদ্ধার্থ । অনেক সাধনা করে হয়েছিলেন বুদ্ধ।

চন্দ্রগর্ভ বৌদ্ধ ভিক্ষু হয়ে জ্ঞান সাধনায় বেরিয়ে এসেছেন। সবাই তাকে বলে দীপংকর। অসাধারণ তার পাণ্ডিত্য। অনেক বৌদ্ধ বিহারে শিক্ষাদান করেছেন। দেশে বিদেশে ছড়িয়ে গেছে তার সুনাম। তিনি নালন্দা আর কালাপাহাড় বিদ্যাপীঠে শিক্ষাগ্রহণ করেছেন। বজ্রাসনে আচার্য শীলরক্ষিতের কাছে দীক্ষা নিয়ে দীপংকর শ্রীজ্ঞান নাম নিয়েছেন। পথ চলায় তাঁর কোনো ক্লান্তি নেই। এক বিহার থেকে অন্য বিহারে ছুটে যান। এবারে চলেছেন সোমপুর বিহারের দিকে। বরেন্দ্র অঞ্চলের সবচাইতে বড় বিহার। রাজা ধর্মপাল এই বিহার নির্মাণ করেছেন। বিহারের কাজ এখনো চলছে। দীপংকর এর আগে বরেন্দ্র এলাকার অগ্ৰপুরে এবং গোটপুরের বিহার ঘুরে এসেছেন।

রাতের বেলা পথ চলতে দীপংকরের খুব ভালো লাগে। চারপাশ তখন। নিঝুম। জোনাক জ্বলে ঝোপে। এমন পরিবেশে আকাশের দিকে তাকিয়ে সৃষ্টি রহস্যের কথা ভাবতে ভালো লাগে। পায়ের কাছে ছোট ছোট প্রাণীরা সরসর করে চলে যায়। হঠাৎ দীপংকর দেখেন সামনে একটি বালকের ছায়ামূর্তি। দীপংকর দ্রুত হেঁটে তার কাছাকাছি গেলেন। রাতের ছমছমের বাতাসে বাঁশঝাড়ের পাতার শব্দ হচ্ছে। দীপংকর বালকের পিঠে হাত রাখেন। কঙ্ক চমকে ওঠে।

তুমি কে? এতো রাতে কোথায় চলেছ?

কি শান্ত কণ্ঠস্বর । কঙ্কের মনের সারাদিনের দুঃখ-যন্ত্রণা যেন মুছে গেল ।

আমি কঙ্ক। বিরহী গ্রামের কুমোপাড়ার ছেলে। ক্ষেত্র বণিক আমাকে বন্দি করে রাজধানীতে নিয়ে যেতে চায়। আমি তাই ওর বজরা থেকে পালিয়েছি।

দীপংকর মমতাভরা চোখে তাকিয়ে রইলেন কংকের দিকে। ছেলেটির দুটো ডাগর চোখ।

এখন যাচ্ছ কোথায়?

সোমপরী বিহারে চলেছি। তাই নাকি। আমিও তো সেখানে যাচ্ছি। তোমার হাতে ওটা কি?

হরিণের মূর্তি। আমি বানিয়েছি। দেখুন না, আমাকে ওরা জোর করে দেব দেবীর মূর্তি বানাতে বলে। কিন্তু আমি যে হরিণ, পাখি, মাছের আকার তুলতে ভালোবাসি।

চমৎকার!

দীপংকর মুগ্ধভাবে তাকিয়ে রয়েছেন মূর্তিটির দিকে। হরিণটিকে এমন ভাবে গড়েছে যে দেখলেই মায়া লেগে যায়। খুব পাকা হাত। দীপংকর যেন দেখতে পেলেন এই হাত আগামীতে অনেক কিছু সৃষ্টি করবে।

আমি তোমাকে সোমপুর বিহারের কাজে লাগিয়ে দেব। শুনেছি ওখানে দেয়ালের কাজ চলছে।

সত্যি? আমাকে ওরা কাজে নেবে?

নেবে।

উৎসাহে জ্বলজ্বল করে ওঠে কঙ্কের চোখ দুটো। নক্ষত্রের আলোর নিচে হাঁটতে থাকে দুজন। পায়ের নিচে শুকনো ঝরা পাতা মচমচ করে।

আমি তোমাকে অনেক গল্প শোনবো। তুমি সে সব গল্পে পাবে নানা পশুপাখির কথা। ত্রিপিটকে আছে জাতকের কাহিনী। সে সব গল্প তোমাকে আলোড়িত করবে।

কি আছে জাতকে?

বুদ্ধের পূর্বজন্মের কাহিনী।

সেই অন্ধকারে দীপংকরের চোখের সামনে যেন আলোর একটি পদ্মফুল ফুটে উঠলো। দীপংকর মনের আবেগ মিশিয়ে জাতকের গল্প বলতে থাকেন। মুক্তোমালা আর হাঁসের গল্প। কঙ্কের কাছে ভালোলাগছে। এখন হাঁটতে তার আর কোনো ক্লান্তি নেই।

জান কঙ্ক, গৌতম বুদ্ধের প্রথম শিষ্য হলেন দুই বণিক। নাম তাদের ত্রিপুষ আর ভল্লিক।

বণিক! কঙ্কের চোখের সামনে তখন ক্ষেত্র বণিকের নিষ্ঠুর মুখটা ভেসে ওঠে। বনবিড়ালের মতো চোখ যার ধকধক করে। এতক্ষণে বজরার ভেতরে কি কাণ্ডই না জানি করছে। রেগে গেলে ক্ষেত্র বণিক শুধু লাফাতে থাকে।

গাছের পাতা উলুকুলু দোলে। পথের পাশে আঁশ শ্যাওড়ার ঝোপ। কষাড়ের ঘন বন।

দীপংকর শান্ত গলায় বলে চলেছেন। অনেক দিন তপস্যা করে সিদ্ধার্থ হলেন বুদ্ধ। পরম জ্ঞান লাভ করলেন তিনি। তার দেহ থেকে উজ্জ্বল এক ধরনের আলো ছড়িয়ে গেল। বুদ্ধ চোখ বন্ধ করে আছেন। তার চারপাশে আলো জ্যোতি।

তখন সেই পথ দিয়ে যাচ্ছিল ত্রিপুষ আর ভল্লিক সারা দিনের কাজের শেষে। হঠাৎ তারা দেখে আলোর ফুল। অবাক হয় তারা। কোথেকে এই অন্ধকার বনপথে আসছে আলোর এমন ধারা। ওরা সেই আলোর উৎস খুঁজতে থাকে। তারা গাছের পাতা সরিয়ে যায়। এক সময় গিয়ে পৌছায় বুদ্ধের সামনে। একি দেখছে তারা! গাছের নিচে বুদ্ধ বসে। তার দেহ থেকে আসছে আলো। তাই দেখে কেমন করে হয়ে গেলো বণিক দুজন। লুটিয়ে পড়লো বুদ্ধের চরণে।

কথাটি শুনে কঙ্কের বুকের ভেতরটা রিণরিণ করে ওঠে। যেন শরতকালের ধুলোহীন বাতাস হয়ে যাচ্ছে সোনালি শস্যক্ষেতের ওপর দিয়ে। নদী যেন তরতরিয়ে বয়ে চলেছে সমুদ্রের দিকে। গাছের বাকলের নিচ দিয়ে সবুজ রস কলকল করে বয়ে যাচ্ছে পাতার দিকে। কুঁড়ি হচ্ছে ফুল। এমন কেন মনে হয়?

দীপংকরের কথা তাকে এমন আলোড়িত করছে। একবার প্রচণ্ড বৃষ্টির মাঝে সে পুকুরে নেমেছিল। ঝাঝিদামের কাছ দিয়ে গিয়েছিল ভেসে। পুকুরের মাঝখানে সাদা পদ্মের বন। সেই পদ্মবনে কঙ্ক মুগ্ধভাবে সাঁতার কাটছিল। তার কাছে তখন মনে হয়েছিল বেঁচে থাকার চাইতে আনন্দ আর কোনো কিছুতেই নেই।

কঙ্ক তাকায় দীপংকরের দিকে।

সেই বণিক দুজন বুদ্ধকে বলল, আপনি আদেশ করুন। কি করতে পারি আমরা?

বুদ্ধ বললেন, মানুষ দুঃখ-শোকে-রোগে সব সময় যন্ত্রণা পাচ্ছে। সেই যন্ত্রণা থেকে তাদের তোমরা মুক্তি দেবার চেষ্টা কর। তাদের জানাও শান্তি পাবে। মনুষ্যত্ব পাবে।

বুদ্ধের সেই বাণী গ্রহণ করে তারা সামনে চলল। ত্রিপুষ আর ভল্লিক হলেন গৌতম বুদ্ধের প্রথম শিষ্য ।

কঙ্ক মুগ্ধভাবে শুনছে সেই কাহিনী। হঠাৎ সামনের গাছের ডালটা দুলে ওঠে। অন্ধকার কুঁড়ে চারটি ছায়ামূর্তি সামনে এসে দাঁড়ায়। তাদের হাতের অস্ত্র চকচক করে। দীপংকরের গলার কাছে ছুরি ধরে একজন।

কি আছে তোমাদের কাছে?

মমতা। ভালোবাসা। আর তো কিছু নেই।

শান্ত গলায় বলেন দীপংকর।

মিথ্যে কথা। তোমাদের কাছে মণি-মাণিক্য আছে, মুক্তোমালার কথা আছে। সে কথা তোমরা বলাবলি করছিলেন।

আমার সাথে ভণ্ডামি।

লোকটি ছুরি তোলে দীপংকরকে আঘাত করার জন্যে।

তখন একটি আশ্চর্য ঘটনা ঘটে। লোকটি হঠাৎ আর্তচিৎকার করে ওঠে। তার হাত থরথর করে কাঁপতে থাকে। সবাই দেখে একটি সাপ সামনের ঝোপে চলে যাচ্ছে। লোকটি মাটিতে শুয়ে গোঙ্গাতে থাকে। বাকি তিনজন হতবুদ্ধি হয়ে যায়। দীপংকর কঙ্ককে লতা ছিড়ে আনতে বলেন। চিকিৎসাশাস্ত্রে দীপংকরের দক্ষতা রয়েছে। কঙ্ক লতা নিয়ে এলে সাপে কাটা লোকটির পা তিনি নিপুণভাবে বেঁধে দেন। জীবকের গ্রন্থ তাঁর পড়া। চিকিৎসা পদ্ধতির ব্যাপারে জীবককে অনুকরণ করেন তিনি। দীপংকর প্রথমে লোকটার ক্ষতস্থান পরিষ্কার করেন। তারপর ঝুঁকে আহত ব্যক্তির চিকিৎসা করতে থাকেন।

রাত ধীরে ধীরে পুইয়ে আসছে। আকাশের রঙ ফিকে হয়ে যাচ্ছে। সোনালি খড়ের বাসায় তুলতুলে ছানাগুলো লাল মুখে হাঁ করে থাকে। পাখিরা চিককিচ করে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। ছানার পানির মতো বরণ নিচ্ছে প্রকৃতি। চারপাশের ঘুমন্ত পৃথিবী গেছে উঠছে। কচুপাতায় টলমল করছে শিশির।

সাপে কাটা লোকটি ধীরে ধীরে চোখ মেলছে।

দেখো কঙ্ক। চোখ মেলে দেখো। জীবজগতের সাড়া পড়েছে। মাটির নিচ থেকে পোকামাকড় বেরিয়ে আসছে। ওরা ঘাসের ভেতর থেকে খাবার খুঁজে নেবে। পাখিরাও দূর-দূরান্ত যাবে খাবারের খোঁজে। মাছের ঝাকরাও যাবে ভেসে।

সাপে কাটা লোকটি দীপঙ্করের পা দুটো জড়িয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে থাকে।

তার চোখে ভয়ের ছাপ। লোকটি ডুকরে বলে ওঠে,

আমি আপনাকে হত্যা করতে চেয়েছিলাম। আর আপনি কিনা আমাকে বাঁচিয়ে তুললেন।

লোকটিকে তুলে ধরেন অতীশ।

তার মায়াভরা দুটো চোখ থেকে এখন ঝরে পড়ছে স্নেহের ধারা ।

তোমার পরিবর্তন হোক। কাউকে আক্রমণ কর না। গ্রামে গিয়ে কৃষি কাজ কর। ফসল ফলাও। ফলপাকুড়ের বাগান কর। তাহলে মনে অনেক শান্তি পাবে।

কঙ্ক সেই ধলপহরের নরম আলোতে মুগ্ধ চোখে দেখে অতীশকে।

অতীশের দুটো চোখ খুঁজে পায় জীবনের বড় হবার ইচ্ছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *