০১. তেঁতুলঝোরার ঝাউবাংলো

০১. তেঁতুলঝোরার ঝাউবাংলো

বৈশাখের এই লাল রোদের দুপুরগুলো কেমন তেতে থাকে। বাতাস যেন আগুনের হল্কা ছড়ায়। গাছের পাতা থির হয়ে আছে। চারদিক ঝলসাচ্ছে। কেমন ফোসকা পড়া গরম। সাঁ সাঁ করে লোক বোঝাই বাস ছুটে যাচ্ছে । পিকু হাঁটতে হাঁটতে ভাবে, আহ্, এখন যদি ঝমঝম করে বৃষ্টি নামত তবে কী চমৎকারই না হতো। আকাশে জমত ঘন কালো মেঘ । ভিজে মেঘের দুপুর হতো। কথাটা ভাবতেই পিকুর মনে হলো অনেকদিন বৃষ্টি হয় না এ শহরে। শরীর যেন বৃষ্টির ফোঁটা মেখে নেবার জন্যে অস্থির হয়ে আছে।

একবার খরার সময় উত্তরবঙ্গে গিয়েছিল ছোটকাকুর সঙ্গে। আদিবাসীদের গ্রামের লোকসংগীত সংগ্রহ করার জন্যে ছোটকাকু এখানে এসেছেন। হাওয়াই দ্বীপের ইস্ট ওয়েস্ট কেন্দ্রে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার লোকসংগীতের ওপর গবেষণা করছেন তিনি। সাঁওতালদের গ্রামে গিয়ে দেখে ওরা বৃষ্টির জন্যে প্রার্থনা করে গান গাইছে। মাঠে জড়ো হয়ে কালো কবুতর বলি দিচ্ছে। পায়রার রক্ত ছিটিয়ে দিচ্ছে মাটিতে। আর অদ্ভুত সুরে গান গাইছে।

পিকু শহরের তাতাতো দুপুরে হেঁটে যেতে যেতে কালো পায়রা বলি দেবার উৎসবের কথা ভাবছে। কেমন হয় যদি শহরের মোড়ে মোড়ে বৃষ্টির জন্যে পায়রাদের বলি দেয়া হয়। অনেক আদিম উৎসব তো আবার নতুন করে সভ্য সমাজে চালু হচ্ছে।

রাস্তার পাশে শরবত আর কাটা ফলের দোকান। টকটকে লাল তরমুজের ফালি। কালো বিচির সারি। মাছি উড়ছে।

পিকু দেখে মঙ্গোলিয়ান চেহারার একটা লোক তরমুজঅলাকে হাত নেড়ে কী যেন বোঝাতে চাইছে। লোকটি বেদেশি। মাথায় কালো টুপি। চোস্ত পাজামা। পিকু বুঝতে পারে লোকটি নেপালি। পাহাড়ি দেশের লোক।

লোকটির কথা বুঝতে পারছে না তরমুজঅলা। পিকু নেপালি ভাষা জানে না। অল্প অল্প হিন্দি জানে। নেপালিরা হিন্দি বোঝে। পিকু নেপালিটির সঙ্গে কথা বলে তরমুজ কিনতে সাহায্য করে। লোকটি আয়েস করে তরমুজ খায়।

আজকাল ঢাকায় মাঝে মাঝে নেপালিদের চোখে পড়ে। সার্ক সম্মেলনের পর ওদের আগমন বেড়েছে। কেমন ছোট ছোট চোখ মেলে তাকায়। ভাবলেশহীন মুখ। মঙ্গোলিয়ান ধাঁচের চেহারার ওই এক অসুবিধে। মুখের আদল দেখে বোঝার উপায় নেই মনের ভেতরে কী ফন্দি আঁটছে।

লোকটি রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে তরমুজ খাচ্ছে। হঠাৎ একটা মোটরসাইকেল এসে থামে ওদের পাশে। কিছু বোঝার আগেই একটা ঝাঁকড়া চুলের লোক লাফ দিয়ে নেমে নেপালিটিকে জাপটে ধরে। আর্তচিৎকার করে ওঠে নেপালিটি। ঝাঁকড়া চুলের লোকটি নেপালির কাঁধ থেকে ঝোলাটা একটানে ছিনিয়ে নিয়ে মোটরসাইকেলে উঠে চোখের নিমিষে পালিয়ে যায়। ঘটনাগুলো যেন কোনো ছায়াছবির দৃশ্যের মতো ঘটে গেল । নেপালিটি পেট চেপে বসে পড়েছে। মুখে যন্ত্রণার ছাপ। পিকু দেখে লোকটির পেটের কাছটা রক্তে সপসপ করছে। মোটরসাইকেল আরোহী সেই ঝাঁকড়া চুলের লোক তাহলে জাপটে ধরে তাকে ছুরি মেরেছে। তরমুজঅলা ভয়ে বিস্ফারিত হয়ে আছে। ভরদুপুরে এ কী ভয়ানক কাণ্ড! আশপাশে লোকজনের ভিড় বাড়ছে। পিকু তাড়াতাড়ি স্কুটার ডেকে নেপালিটিকে নিয়ে হাসপাতালে ছোটে। নেপালিটি অসহায়ের মতো তাকে আঁকড়ে ধরেছে।

ইমার্জেন্সি বিভাগে ওদের পাড়ার টুলু ভাইয়ের সঙ্গে দেখা। মেডিকেল থেকে সদ্য পাস করেছে। টুলু ভাই নিজেই পিকুর কাছ থেকে সব শুনে নেপালিটির চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। তীক্ষ ভোজালির আঘাত। অনেকটা কেটেছে। গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। নেপালিটি বেশ ভয় পেয়ে গেছে বলে মনে হয়। বারবার ইতিউতি তাকাচ্ছে। যেন ভাবছে হত্যাকারী কোথাও ওঁৎ পেতে রয়েছে।

পিকুর দুটো হাত ধরে অনুনয় করে। হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়া হয় নেপালিটিকে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে। নেপালিটি ফিসফিস করে বলে,

আমাকে ওরা নির্ঘাত মেরে ফেলবে। বাজপাখির চোখ পড়েছে। ছিড়ে ফেলবে এবার।

নেপালির হাত দুটো থরথর করে কাঁপে। তখন শেষ বিকেলের ম্লান আলো চারদিকে। ঘুলঘুলি থেকে কয়েকটা চড়ই উড়াল দেয়।

পিকু একটু ঝুঁকে জিজ্ঞেস করে, কারা মারবে?

ত্যাগ বাহাদুরের লোক। তরাই এলাকার আতঙ্ক ত্যাগ বাহাদুর । কেন মারবে?

কারণ আমার কাছে একটা খুব দামি জিনিশ আছে। সেটাই ওরা চায়। হন্যে হয়ে খুঁজছে। ত্যাগ বাহাদুর একটা আস্ত রক্তপিশাচ।

জিনিশটা কী?

কাউকে বলবে না। কাছে এসো। আরো কাছে।

পিকু একটু ঝুঁকতেই তার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে, ইয়েতির একগোছা লোম।

শুনে চমকে যায় পিকু। ইয়েতি! হিমালয়ের রহস্য তুষারমানব। যার অনুসন্ধানে এখনও হিমালয়ে অভিযান চলে। দেশ-বিদেশ থেকে আসে অভিযাত্রীরা।

বহুকাল আগে থেকেই ইয়েতি এক রহস্যমাখা শব্দ। কিন্তু এই নেপালির সঙ্গে ইয়েতির কী সম্পর্ক?

নেপালিটি বিছানায় ফ্যাকাশে মুখে শুয়ে আছে।

ওরা যখন আমাকে একবার খুঁজে পেয়েছে তখন শেষ না করে ছাড়বে না। ত্যাগ বাহাদুরের হাত থেকে নিস্তার নেই। আমি বহুদিন ইয়েতির লোম নিয়ে পালিয়ে ছিলাম। ও সেটা চায়। অনেক দামে ওটা বিক্রি করবে।

কিন্তু… কিন্তু ইয়েতির লোম তুমি পেলে কী করে? শুনেছি ওই প্রাণীটিকে চোখে দেখা যায় না।

আমি হলাম শেরপা। আমার কাজ ছিল যারা হিমালয়ে অভিযানে যায় তাদের মোট বওয়া। একবার জাপানি এক দলের সঙ্গে হিমালয়ে গিয়েছিলাম। কপাল আমাদের দারুণ। হঠাৎ করে একদিন একটা ইয়েতিকে দেখতে পাই। তাকে ধরতে চাই। ইয়েতি যায় পালিয়ে । একগোছা লোম আমি খুবলে রাখতে পেরেছিলাম। ওগুলো নেবার জন্যে বহু লোক আমার পেছনে লাগে। খবরটা ছড়িয়ে যায়। আমি তখন বাধ্য হয়ে গাঁ থেকে পালাই। সেই থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। সবসময় মনে হয় ছায়ার মতো কারা যেন আমাকে অনুসরণ করছে। অনেক দাম সেই লোমের। আমি কিছু বিক্রি করেছিলাম বিদেশিদের কাছে। ত্যাগ বাহাদুর ওগুলো নেবার জন্যে পিছু লেগেছে।

একসঙ্গে এতগুলো কথা বলে হাঁপাচ্ছে লোকটি। হঠাৎ যেন চমকে যায় নেপালিটি, ওই যে, ওই যে আসছে।

কে?

ত্যাগ বাহাদুরের লোক।

কোথায়? আমি যেন দেখলাম। সাঁৎ করে মুখটা সরে গেল।

পিকু এদিক ওদিক তাকায়। কাউকে দেখা যাচ্ছে না। লোকটি ভীষণ ভয় পেয়েছে বলে মনে হয়। ছোট চোখ দুটোতে ভয়ের ছাপ।

সেই দলে একজন জাপানি ছিল। নাম নাকামুরা । তার ক্যামেরায় ইয়েতির অনেকগুলো ছবি তোলা আছে। সেই জাপানিটি এসেছিল তোমাদের দেশে। তেঁতুলঝোরা পর্যন্ত আমি এসেছিলাম। ত্যাগ বাহাদুর তাকেও খুঁজছিল। তারপর আমি পালাই। নাকামুরার আর খোঁজ পাইনি।

পিকু ধীরে ধীরে জড়িয়ে যাচ্ছে এক রহস্যময় ঘটনার সঙ্গে। কেমন করে পরপর ঘটে যাচ্ছে ঘটনাগুলো ।

ইয়েতি! রহস্যময় তুষারমানব। কত জল্পনা এদের নিয়ে। একসময় পিকু এ ব্যাপারে আগ্রহী ছিল। এরিক শিপটনের তোলা ইয়েতির পায়ের ছাপের ছবি দেখে বিদেশি পত্রিকায়। টেলিভিশনে ইয়েতির সন্ধানে নামে একটি জার্মান ছবি দেখে আলোড়িত হয়েছিল। দুর্গম পাহাড়ি পথে ইয়েতির খোঁজে কষ্ট করে যাচ্ছে অভিযাত্রীরা। পাহাড়ি খাদে বাতাস শিসের মতো শব্দ তুলে বয়ে যাচ্ছে। ইয়েতি সম্পর্কে পাহাড়ি আদিবাসীদের ধারণা আর কাহিনি ছবিতে দেখানো হয়েছিল।

কিন্তু পিকু কি কখনও ভাবতে পেরেছিল তার জীবনে এমনি করে ইয়েতি নিয়ে এমন রহস্যময় ঘটনা ঘটবে।

নেপালিটি তার হাত দুটো ধরে আকুল ভাবে বলে, অনেক কথা বলে ফেললাম। আপনি আমাকে এখানে না আনলে হয়তো রাস্তায় ছুরিবিদ্ধ হয়ে মরে থাকতাম। ওরা আমার ঝোলা ছিনিয়ে নিয়েছে। ভেবেছে ওর ভেতরে বুঝি ইয়েতির লোম রয়েছে। আসলে ওগুলো আছে আমার চামড়ার বেল্টের ভেতরের একটি লুকানো খোপে।

লোকটির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে জাপানি দূতাবাসে গেল পিকু। কয়েকটি খবর জানার জন্যে। দূতাবাসে তার এক বন্ধু জামিলের মা কাজ করেন। পাড়াতে ভদ্রমহিলা ইকেবানা শেখানোর স্কুল খুলেছেন। পিকুর কাছে চমৎকার লাগে জাপানি ফুল সাজানোর পদ্ধতি ইকেবানা । অল্প কয়েকটি ফুল, পাতা আর ডাল দিয়ে কি অপূর্বভাবে সাজায়।

জামিলের মাকে খুঁজে বের করল । দেয়ালে চেরি ফুলের চকচকে ছবি। কয়েকটি জাপানি পুতুল। ভদ্রমহিলা পিকুকে ফাইল ঘেঁটে জাপানি দল সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য দিলেন।

ড, টি গাওয়ার নেতৃত্বে একটি অভিযাত্রী দল হিমালয়ে যায় ইয়েতির খোঁজে। পূর্ব নেপাল অঞ্চলে ব্যাপক অভিযান চালায়। মানাসুলু শৃঙ্গে আরোহণ করে। মানাসুলু পর্বতমালার পূর্ব দিকে বরফের ওপর কতগুলো পায়ের চিহ্ন লক্ষ করে তারা অভিযান চালায়। তাদের এই সফরের আয়োজন করেছিল জাপানের মাইনিচি সংবাদপত্র আর নিপ্পন এডুকেশনাল টেলিভিশন। প্রধানত তাদের উদ্যোগেই এই জাপানি দলটি ইয়েতির সন্ধানে হিমালয়ে প্রেরিত হয় ।

দুঃখজনক খবর হচ্ছে জাপানি দলের একজন সদস্য ফেরার পথে বাংলাদেশে আসে। তার নাম নাকামুরা। সে ইয়েতির ছবি তুলতে সক্ষম হয়েছিল। স্থলপথে তেঁতুলিয়া দিয়ে প্রবেশ করে। তেঁতুলঝোরার ডাকবাংলোতে ছিল। সেখান থেকেই রহস্যজনকভাবে হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যায়। অনেক অনুসন্ধান করা হয়। কিন্তু তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না।

পিকু রাতে টুবলুভাই-এর ফোন পায় হাসপাতাল থেকে। নেপালিটি কিছুক্ষণ আগে মারা গেছে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জন্যে। মৃত্যুর আগে পিকুর জন্যে কয়েকটি জিনিশ দিয়ে গেছে।

হাসপাতালে পৌছে দেখে টুবলুভাই ওর জন্যে অপেক্ষা করছে।

নেপালিটি মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগে আমাকে বলে, তোমাকে যেন একটি কথা জানাই।

কী?

তেঁতুলঝোরার ডাকবাংলোর কাঠবাদাম গাছের নিচে একটা বাক্স আছে। আর এই চামড়ার বেল্টটা দিয়ে গেছে।

পিকুর চোখের সামনে তখন রহস্যময় কুয়াশা। তার ভেতরে একটি বাংলোবাড়ি। কাঠবাদাম গাছের পাতা ঝিরঝির করছে।

নেপালিটির পকেটে যে পাসপোর্ট পাওয়া গেছে তাতে নাম লেখা রানাপিঙ দেরজু।

টুবলু ভাই, এই নেপালির লাশের কী হবে? আমরা নেপাল দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে দিয়ে আসব।

পিকুর চোখ দুটো ছলছল করে ওঠে। নেপালের কোনো পাহাড়ি গ্রামের এক শেরপা বস্তির অধিবাসী এই রানাপিঙ দেরজু। হঠাৎ করেই দেখা। আকস্মিক মৃত্যু। লোকটি তাকে দিয়ে গেছে ইয়েতির লোম! মহামূল্যবান জিনিশ।

বাড়িতে গিয়ে সাবধানে চামড়ার বেল্টটির গোপন খোপ ছুরি দিয়ে কেটে ফেলে। একটি সেলোফেনের প্যাকেটে রাখা কিছু ধূসর লোম ।

পরদিন পিকু লোমগুলো নিয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের এক প্রবীণ অধ্যাপকের কাছে। তিনি বিলুপ্ত প্রাণীদের ওপর নিয়মিত লেখেন। টিভিতে অনুষ্ঠান করেন। পিকুদের পাখি দেখার ক্লাব-এর উপদেষ্টা। ব্রিটিশ গায়ানার জঙ্গলে এক অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন। পিকু তার কাছে নানা তথ্য জানতে চায়। প্রবীণ অধ্যাপক ইয়েতির লোমগুলো পেয়ে বিস্মিত।

সত্যি পিকু, তুমি যে কখন কী পেয়ে যাও। এ খবর প্রকাশিত হলে রীতিমতো সাড়া পড়ে যাবে। প্রাণিবিজ্ঞানীদের মাঝে সৃষ্টি হবে উত্তেজনা। তুমি দেখছি রহস্যভেদী হয়ে ছাড়বে।

আঙ্কেল, এ লোমগুলো আপনার কাছে রইল। আপনি গবেষণা করুন।

দেখো, ইয়েতি নিয়ে আমি কিছুটা পড়াশোনা করার চেষ্টা করেছি। অনেকেই কিন্তু ইয়েতি ধরনের কোনো প্রাণী আছে তা বিশ্বাস করতে চায় না। আজগুবি গালগল্প বলে। ফ্লাইং সসার যেমন মানুষের উদ্ভট কল্পনা তেমনি ইয়েতিরও। কিন্তু অনেক ঘটনা প্রমাণ করে যে ইয়েতির অস্তিত্ব সম্ভব।

পিকুর চোখের সামনে তখন দুধশাদা হিমালয় অঞ্চল। সোঁ সাঁ করে বাতাস বইছে। থিয়াং বুচির মঠে বসে বৌদ্ধ লামারা মন্ত্র পাঠ করছে। পৃথিবীর সবচাইতে উঁচুতে অবস্থিত মানুষের বসতি ওই থিয়াং বুচির মঠ। হিমালয়ের বুকে কত যে রহস্য।

কৃত্রিম উপগ্রহ ইনস্যাট-১ সম্প্রতি বেশ কিছু আশ্চর্য ছবি পাঠিয়েছে। এই উপগ্রহের এন্টিনার কাজ হলো পৃথিবীর ছবি তুলে পৃথিবীর মানুষের কাছে পাঠিয়ে দেয়া। ইনস্যাট-১ যে আশ্চর্য ছবি পাঠায় তা হলো হিমালয়ের তুষারমানবের ছবি । লোকের ধারণা ছিল তুষারমানব কোনো কাল্পনিক প্রাণী। এখন বিজ্ঞানীরা এ ব্যাপারে যথেষ্ট কৌতূহলী হয়ে উঠছেন।

প্রবীণ বিজ্ঞানী উঠে গিয়ে ঘরের পর্দাগুলো টেনে দেন। আবছা অন্ধকারে স্নাইড প্রজেক্টার চালিয়ে দিলেন। দেয়ালে হিমালয়ের ছবি পরপর ফুটে ওঠে।

দেখছ পিকু, স্নাইডগুলো আনিয়েছি বিদেশ থেকে। হিমালয় যে স্থানে দাঁড়িয়ে আছে সেখানে সৃষ্টির আদিকালে ছিল এক সমুদ্র। নাম টেথিস। তুষারমানব কোনো কাল্পনিক প্রাণী নয়। ঘন ঘন হিমবাহের জন্যে তুষারমানবরা আজ অবলুপ্তির পথে।

হিমালয়ের দুর্গম এলাকায় দেখা যায় কস্তুরি ও চমরি গাই। আছে দুষ্প্রাপ্য পারিজাত ফুল। হিমালয়ের শিবালিক গিরিমালার পাথরের স্তরে প্রাগৈতিহাসিক বহু শ্রেণীর ফসিল পাওয়া গেছে।

পুমোরি নামক স্থানের ছবি পাঠিয়েছে ইনস্যাট-১। স্থানটি আঠারো হাজার ফুট ওপরে। সেখানেই দেখা গেছে তুষারমানবদের।

সাইড প্রজেক্টার বন্ধ করলেন প্রাণিবিজ্ঞানী। পিকু যেন এখন আর ঢাকা শহরে নেই। যদি যাওয়া যেত পুমোরিতে। সূর্যের আলো সোনালি স্রোতের মতো নেমে আসছে বরফের ওপর। বাতাসে দুলছে অপরাজিতা ফুলের গুচ্ছ।

পিকু ছোটবেলা থেকেই রহস্যের হাতছানির জন্যে আকুল। ওর কেবলি মনে হয়, একটা দারুণ কিছু ঘটে যায় না কেন এই একঘেঁয়ে, পানসে পৃথিবীতে। মন খোঁজে উত্তেজনা। জুল ভের্ন-এর দুঃসাহসিক অভিযানের কাহিনি পড়ে একসময় যেন দূর পৃথিবীর ডাক শুনতে পেত। কোথায় মেরু অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে বরফের মাঝে দেখা যায় ঝলমলে ফুল। স্কুয়া পাখি ডেকে যায় তীক্ষ স্বরে। পেঙ্গুইনেরা চলে হেলেদুলে ঝাঁক বেঁধে। চির তুষারের রাজ্যে আলোছায়ার এক মায়াবী খেলা। যদি সেখানে যাওয়া যেত। এখন বাঙালিরাও যাচ্ছে মেরু অভিযানে। ছোট হয়ে আসছে পৃথিবী। দূর গ্রহ-নক্ষত্রের রহস্য সন্ধানে ছুটে যাচ্ছে মহাকাশযান। পিকু জানতে চায় রহস্যময় পৃথিবীর সন্ধান। মহাকাশ এখন আর দূরের কিছু নয়।

পিকুর মেজকাকু বিদেশ থেকে একটি বিজ্ঞানের নানা তথ্যের চমৎকার বই পাঠিয়েছিল। সেখানে পড়েছে মহাকাশে দুটি গ্রহাণুর সংঘর্ষের ফলে পৃথিবীতে ছিটকে আসা পাথরের কথা। খুব মূল্যবান সে পাথর।

পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার সাভানার দীঘল ঘাসবনে একবার কজন শিকারি বুননা পশুর পেছনে ছুটছিল। তারা ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ একটি পাথর আবিষ্কার করে । ফিকে বাদামি রঙের পাথরটা ছিল এক আশ্চর্য আবিষ্কার। যার মধ্যে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য ছোট-বড় হীরের টুকরো । ওই পাথরটার পরিচয় হলো কোনো একসময়ে দুটি গ্রহাণুর মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। তারা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে পড়ে। পাথরটি ছিল সেই টুকরোরই একটি।

এই ঘটনাটি পড়তে পড়তে উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিল পিকু। মানুষ কখন কোথায় কেমন করে যে রহস্যময় কোনো ঘটনার সম্মুখীন হবে কেউ তা বলতে পারে না।

এই যেমন নেপালি রানাপিঙ দেরজু তাকে সন্ধান দিয়ে গেল ইয়েতির একগোছা লোমের। চির তুষারের রাজ্য হিমালয়ের রহস্যময় প্রাণী ইয়েতি। এখন তাকে টানছে তেঁতুলঝোরার ঝাউবাংলো। যার সঙ্গে মিশে আছে জাপানি পর্বত-অভিযাত্রী নাকামুরার অন্তর্ধান রহস্য। বাংলোর প্রাঙ্গণের কাঠবাদাম গাছের নিচে কী রয়েছে? কিসের ইঙ্গিত দিয়ে গেছে রানাপিঙ।

রাতের কোচে দিনাজপুরের দিকে রওনা হলো পিকু।

সাঁ সাঁ করে ছুটে যাচ্ছে গাড়ি। রাতের আকাশে জ্বলজ্বল করছে তারা। যেন সোনালি খই ফুটে আছে।

পিকু তেঁতুলিয়াতে এর আগেও বার কয়েক এসেছিল। নদীর পাশে একবার একঝাক দুষ্প্রাপ্য গোলাপি ডানার হাঁস দেখতে পেয়েছিল। তেঁতুলিয়া থেকে তেঁতুলঝোরা। সেখানে যাবার পথটি ভারি সুন্দর। ঘন আমবনের ভেতর দিয়ে পথ । আমগাছের গুঁড়িতে কোথাও লতিয়ে আছে সোনালুর ঝাড়। উজ্জ্বল বুনোফুল ফুটে রয়েছে দুপাশে।

সীমান্তের কাছাকাছি বুননা জায়গা তেঁতুলঝোরা। জনবসতি কম। ছাড়া ছাড়া কিছু ঘরবাড়ি। সাঁওতালদের গ্রাম। এক ব্রিটিশ সাহেব জরিপের কাজে থাকতে এসে এ বাংলোটি বানিয়েছিল। ভেতরে ছিল ঝাড়বাতি।

তেঁতুলঝোরা নিরিবিলি জায়গা। পাখির মিষ্টি শিসের শব্দ শোনা যায় এখানে। পরিষ্কার আবহাওয়া থাকলে দূরে দেখা যায় হিমালয়।

একসময় তেঁতুলঝোরার অড়হর ক্ষেতে দেখা যেত নীলগাইয়ের আঁককে নেমে আসতে। বৃদ্ধ লোকেরা এখনও নীলগাইয়ের গল্প বলতে গিয়ে উদাস হয়ে যায়।

পিকু একটা রিকশা নিয়ে তেঁতুলঝোরার দিকে যাত্রা করল। মাথার ওপর দিয়ে কয়েকটা নীলটুনি ফরফর করে উড়ে যায়। কী চমৎকার করে যে বাসা বুনতে পারে এই পাখিরা।

রাস্তার পাশের এক দোকান থেকে গরম চা খেয়ে নেয়। রাত জাগার ক্লান্তি দূর করার জন্যে। শরীরটা ঝরঝরে লাগছে। দেহাতি লোকজন যাচ্ছে কাজে। এক সাঁওতাল যুবক কয়েকটা বগড়ি পাখি ঝুলিয়ে যাচ্ছে। এই পাখির মাংশ বেশ স্বাদের।

রিকশাঅলাকে ডাকবাংলোর কথা বলতেই যেন চমকে উঠল ।

সাহেব, ওখানে যাবেন নাকি? কেউ তো যেতে চায় না।

কেন?

ওই বাংলোর বদনাম আছে। কেউ থাকে না।

থাকে না কেন?

লোকে বলে ওখানে নাকি সাহেব ভূত থাকে। জাপানি সাহেবের ভূত। মাঝে মাঝে রাতের বেলায় বাংলোতে খুব ভাংচুরের শব্দ শোনা যায়।

পিকুর মনে পড়ে জাপানি অভিযাত্রী নাকামুরার রহস্যময় অন্তর্ধানের কথা। নেপালি রানাপিঙ দেরজু হাসপাতালে মৃত্যুর আগে টুলু ভাইয়ের কাছে বলে গেছে বাংলোর প্রাঙ্গণের কাঠবাদাম গাছের নিচে রয়েছে এক রহস্য। কী সেই রহস্য?

রিকশাঅলা বাংলোবাড়ি পর্যন্ত কিছুতেই যাবে না । তেঁতুলঝোরার লোকজনের কাছে এ হলো অভিশপ্ত স্থান। এখানে থাকে প্রেতাত্মা, রক্তপিশাচ।

একটা শিমুল গাছের নিচে থেমে গেল রিকশা। ডাল জুড়ে টুকটুকে লাল ফুল। ভাড়া চুকিয়ে দিয়ে পিকু হাঁটতে থাকে। চারদিক খুব নিরিবিলি। পাতার ঠাসবুনোট। রাস্না আর কুরচি ফুল সবুজ পাতার ভেতরে ঝিলিক দেয়। একসময় চোখে পড়ে বাংলোটা। আগাছায় ঢেকে আছে। ছায়া ছায়া অন্ধকার । সাবধানে গাছের ডাল সরিয়ে ঢোকে পিকু।

কাঠের দরজায় জং ধরে গেছে। খুলতেই ক্যাঁচক্যাচ করে শব্দ হয়। একটা গিরগিটি ঝোপের ভেতরে পালিয়ে যায়।

পিকুকে তীব্রভাবে টানছে বাংলোটা। অযত্নে প্রাঙ্গণের ঘাস বড় হয়ে আছে। এখানে দাঁড়িয়ে পিকুর মনে হচ্ছে সে যেন এক নিঝুম দ্বীপে চলে গেছে। চারদিক সুনসান। হঠাৎ তক্ষকের ডাক।

পিকু উঠে যায় বাংলোর কাঠের সিঁড়ি দিয়ে। মড়মড় শব্দ হয়। মাকড়সার ঝুল জমে আছে। এখানে এসেছিল নাকামুরা। রানাপিঙ দেরজু। নাকামুরা আর ফিরে যায়নি। জাপানি দূতাবাসও এ ব্যাপারে রহস্যময় নীরবতা পালন করছে। রানাপিঙ দেরজু একবার ইঙ্গিত দিয়েছিল নাকামুরা তার ক্যামেরায় হিমালয়ের ইয়েতির ছবি তুলতে পেরেছিল। ইয়েতির ছবি পাওয়া এক অসাধারণ ঘটনা। পৃথিবীর যে কোনো প্রাণিবিজ্ঞানী এই দুর্লভ জিনিশের জন্যে উন্মুখ হয়ে থাকবে। এই ছবির জন্যে লাখ লাখ ডলার দিতে প্রস্তুত পশ্চিমা জগতের কোনো কোনো মিডিয়া।

পিকু বাংলো থেকে নেমে আসে। কাঠবাদাম গাছের পাতা ঝিরঝির করে। শুকনো পাতা ছড়িয়ে আছে চারদিকে। পিকু ওর ব্যাগ থেকে একটি ছোট শাবল বের করে গাছের নিচটা খুঁড়তে থাকে। হঠাৎ দেখা যায় একটা কালো কাঠের বাক্স। ওটা খুলতেই দেখা যায় একটি চামড়ার বাঁধানো ডাইরি। ইংরেজিতে লেখা। নাকামুরার ডাইরি। রানাপিঙ দেরজু তাকে বলেছিল কাঠবাদাম গাছের নিচে সে একটি জিনিশ লুকিয়ে রেখেছে। শরীরটা কেমন শিরশির করে ওঠে। ওর মনে হয় কার যেন উষ্ণ নিশ্বাস ফোঁস করে পড়ল ঘাড়ের কাছে। পাতা উল্টে যায়। হিমালয়ে আকুল হয়ে ছুটে এসেছিল নাকামুরা ইয়েতির সন্ধানে। পিকু আগ্রহ নিয়ে পড়তে থাকে

…নেপালের যোগবানি অঞ্চলে নামচে বাজার। এখানে আমরা মূল শিবির করেছি। স্থানীয় লোকদের কাছে ইয়েতির দেহাবশেষ বলে নানা জিনিশ দেখলাম। চামড়া, হাড়, জিভ, গলা। আমাদের দলের ডা. ওগাওয়ার মতে এগুলোর অধিকাংশ তিব্বতি বাদামি ভালুকের দেহাবশেষ। আসল ইয়েতিকে দেখেনি এরা। আমি ডা, ওগাওয়াকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ইয়েতির খাদ্য কী? তার মতে শীতে খাবারের অভাব হলে ইয়েতি চমরি গাই, ভেড়া ও ছাগল প্রভৃতি গৃহপালিত পশুর ওপর আক্রমণ চালায়। বুনো গেছোবিড়াল ইয়েতির পক্ষে ভালো শিকার। আমাদের যেতে হবে নেপালের পূর্বাঞ্চলের থুম্বু এলাকায়।

…নামচে বাজার থেকে নদীর ধার দিয়ে সমস্ত উপত্যকা হেঁটে পার হলাম। বোটে করে কুশি, দুধকুশি, ইমেজখোলা। সব সুদ্ধ প্রায় তিনশো মাইল। কয়েক জনের কাছে ইয়েতির পায়ের ছাপ দেখার খবর পাওয়া গেল। তাঁবুর একজন শেরপা রানাপিঙ দেরজু। সে বলল তার গ্রামে এক লোক তুষারমানব দেখেছিল। দেখতে প্রায় সাত ফুট লম্বা। কাঁধ মানুষের চাইতে প্রশস্ত। চোখ গভীর কোটরে। ফোলা নাক। থেবড়ানো চোয়াল, কান বড়। গোলগাল চোখ। মানুষের চোখের চাইতে বড়। ঠোট মুখ থেকে বেরিয়ে আছে। লম্বা হাত হাঁটুর নিচ পর্যন্ত পৌছুচ্ছে। মাঝে মাঝে নামে মারাত্মক ধস। বরফের বিশাল চাঙর আসে নেমে। গত রাতে আমি তাঁবুর বাইরে গর্জন শুনতে পেয়েছি। ওটা নিশ্চয়ই ইয়েতির গর্জন ছিল।

…আজ আমি সার্থক। কতদিনের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিল। আজ একলা অনেকটা দূর পর্যন্ত গিয়েছিলাম। হঠাৎ দেখি বরফের এক দেয়ালের আড়ালে খাদের কাছে দাঁড়িয়ে আছে তিনটি তুষারমানব। এমনভাবে ইয়েতিদের দেখতে পেয়ে আমার সমস্ত শরীর উত্তেজনায় থরথর করে উঠল। পৃথিবীর প্রাণিবিজ্ঞানীদের কাছে অসীম কৌতুহল আর বিস্ময়ের উদাহরণ ইয়েতি এখন আমার সামনে।

উচ্চতায় প্রায় দশ ফুটের মতো। সারা শরীর ঘন লোমে ঢাকা। দূরবিন দিয়ে দেখি চোখগুলো সব লাল লাল। ওরা নিজদের মধ্যে কী যেন বলাবলি করছে। উত্তেজনায় আমি অস্থির হয়ে উঠলাম। তাড়াতাড়ি ক্যামেরার টেলিলেন্সে ওদের ছবি তুলতে লাগলাম। আমি জানি আমার আগে ইয়েতির ছবি তোলার সৌভাগ্য আর কারো হয়নি। এরপর সাবধানে এগুতে লাগলাম। একটা ছোট ইয়েতি ছিল বেশ পেছনে। বরফ খুঁড়ে কী যেন বের করার চেষ্টা করছিল। আমি অনেকটা হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে গিয়ে ওটাকে ধরে ফেল্লাম। চিৎকার করে উঠল বাচ্চা ইয়েতিটা। তারপর আমাকে ধাক্কা দিয়ে ছুটে পালাল। কয়েক গোছা লোম রয়ে গেল আমার হাতে। বাকি ইয়েতিরা চোখের নিমিষে অদৃশ্য হয়ে গেল। যেন মিলিয়ে গেল বাতাসে।

…তাঁবুতে ফিরতেই সবাই আমার এই অভিযানের কাহিনি শুনে বিস্মিত। ডা, ওগাওয়া উচ্ছ্বসিত হয়ে বললেন, সাংঘাতিক এক কাজ করেছ তুমি। ইয়েতিদের ছবি তুলতে পেরেছ। তোমার কাছে রয়েছে। দুপ্রাপ্য জিনিশ।

এই ইয়েতি দেখার খবর শোনার পর থেকে শেরপা রানাপিং দেরজু আমার পিছু লেগেছে।

…কদিন থেকেও ইয়েতিদের আর কোনো সন্ধান পাওয়া গেল । আমাদের ফিরে আসতে হলো। রানাপিঙ দেরজু জানাল ওর এক শেরপা বন্ধুর কাছে ইয়েতির চামড়া আছে। সে থাকে তেঁতুলঝোরাতে। আমি যদি ওখানে যাই তবে সে আমাকে চামড়াটি দেবে। আমি যেতে রাজি হয়েছি। ইয়েতির ব্যাপারটা আমার কাছে এখন কেমন নেশার মতো হয়ে গেছে।

…তেঁতুলঝোরার ঝাউবাংলোতে এখন আছি। দলের অন্যরা এখন কাঠমান্ডুতে। রানাপিঙের বন্ধুর নাম সিরিং। লোকটি দেখতে ভয়ঙ্কর । সে আমার কাছে ইয়েতির ছবিসুদ্ধ ক্যামেরাটি, চাইছে চামড়া দেবার বিনিময়ে। আমি বুঝতে পারছি একটা ভয়ঙ্কর বিপদে জড়িয়ে যাচ্ছি। সিরিং-এর বাড়িতে আজ রাতে আমার নিমন্ত্রণ।

এরপর ডাইরিতে আর কিছু লেখা নেই।

পিকু ঝাউবাংলো থেকে বের হয়ে আসে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে আসছে। তেঁতুলঝোরার বাজারে গিয়ে এক দোকানে কিছু খেয়ে নেয়। এখানে কজন নেপালি থাকে। ব্যবসা করে । হিমালয়ের কাছে সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন স্থানে নেপালিরা কাজ করে।

একজন নেপালির কাছে খোজ নেয় সিরিং-এর কথা। জানতে পারে সিরিং এখান থেকে হঠাৎ করে চলে গেছে বছর কয়েক আগে। তার বাড়িটি এখন খালি পড়ে আছে।

পিকু সেই বাড়িটির অবস্থান জেনে নেয়। নিরিবিলি জায়গা তেঁতুলঝোরা। অজস্র পাখি। শেষ বিকেলে সিরিং শেরপার বাড়ি খুঁজে পায়। আগাছা গজিয়েছে সেখানে। পিকু বাড়িটির ভেতরে ঢুকে যায়। দেয়াল ঝুরঝুরে হয়ে আছে। কাঠের পাটাতনের ওপর দিয়ে হাঁটতে গেলে মচমচ শব্দ হয়। হঠাৎ একটা জায়গা ভেঙে যায়। পিকু ঝুঁকে দেখে একটা মানুষের কঙ্কাল দেখা যাচ্ছে। এটাই তাহলে নাকামুরার কঙ্কাল। সিরিং তাকে বাড়িতে নিমন্ত্রণ করে এনে হত্যা করে ইয়েতির ছবিসুদ্ধ ক্যামেরাটি নিয়ে পালিয়েছে রানাপিঙ দেরজুর সঙ্গে। কিন্তু কাঠবাদামের গাছের নিচে নাকামুরার ডাইরিটি অমন করে কালো কাঠের বাসে কে রাখল? রানাপিঙ দেরজু কি? কিন্তু কেন? অন্যায় করেছিল রানাপিঙ। তাকে ত্যাগ বাহাদুরের লোকের কিরিচের আঘাতে মরতে হলো।

পিকু ভাবছে নাকামুরার তোলা হিমালয়ের রহস্যময় তুষারমানব ইয়েতির ছবিগুলো এখন কোথায়।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *