১৪. মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের ইতিহাস

মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের ইতিহাস

যে নবীন ভারতে আমাদের বাস, তাহার চিন্তার ও ভাবের মধ্যে আমাদের চিত্তের চিরবসতি, তাহার জন্ম আজ দেড়শ পৌনে দু’শ বৎসর মাত্র হইয়াছে ৷ সত্য বটে প্রকৃতির নিয়ম এই যে, যুগ যুগ ধরিয়া জাতি-বিশেষের মধ্য দিয়া, দেশ-বিদেশের মধ্য দিয়া, বংশ বিশেষের মধ্য দিয়া, কোন একটা জীবনী শক্তি নানা আকারে প্রকাশ পায়; পিতা হইতে পুত্রের জন্ম; পুরাতনের নিকট ঋণ লইয়া নূতন আসিয়াছে। কিন্তু ব্রিটিশ যুগে ভারত এত পরিবর্তিত হইয়াছে, এমন নূতন পথ ও নূতন প্রণালী ধরিয়া চলিতেছে, যে ইহাকে যুগবিপ্লব বা প্রলয় (revolution) না বলিয়া থাকা যায় না। আজ আমরা পুরাতনের পুঁথি বন্ধ করিয়া দিয়া, নূতন এক ভাষার নূতন এক ভাবের বেদ খুলিয়া বসিয়াছি; আজ জাতীয় জীবন নূতন এক রক্তের তেজে চলিতেছে।

অথচ, এই অতি অল্পদিন আগে আমাদের যে পুরাতন ছিল তাহাকে একেবারে ত্যাগ করা কি মানুষের পক্ষে সম্ভব? সন্তান কি বংশের দেহের মুখের মনের ভঙ্গি একবারে বদলাইয়া ফেলিতে পারে? জাতীয় চরিত্রে কি যুগ বিপ্লব সম্ভব? আমাদের মজ্জার ভিতর আমাদের পূর্ব্বপুরুষদের দানগুলি এখনও কাজ করিতেছে, ইহাই নৃতত্ত্ব-বিদ্যার শিক্ষা। কর্কটশাবকের মত আমরা মাতার রক্তমাংস শুষিয়া খাইয়া বড় হইয়াছি, তাঁহার মৃতদেহের খোলখানি মাত্র পথের ধারে পড়িয়া আছে।

নবীন ভারতের অভ্যুদয়ের পূর্ব্বে এই দেশময় ছিল মুঘলদের রাজত্ব, এবং মুঘলদের রাজসভায় পালিত সভ্যতা। যে সভ্যতা দিল্লীর বাদশার রাজ্যসীমা অতিক্রম করিয়া সমস্ত করদ ও স্বাধীন দেশীয় রাজ্যে নিজ প্রভাব বিস্তার করিয়াছিল। তাহারই ফলে, আমাদের এই মহাদেশটা জুড়িয়া আচার ব্যবহার, উচ্চশ্রেণী লোকের বেশভূষা, চিন্তা, সাহিত্য-রচনা, শাসন ও পত্রব্যবহারের প্রণালী, অস্ত্রশস্ত্র, যুদ্ধবিদ্যা, কলা ও শিল্প, প্রায় একই আকার ধারণ করে। অবশ্য, আজকার পাশ্চাত্য সভ্যতার অজেয় প্রভাবে এগুলি যেমন এক ছাঁচে ঢালা, কলে তৈয়ারী সমান মাপের জিনিষ হইয়া দাঁড়াইয়াছে ততটা নহে, কিন্তু সেই পথে বটে। এই ব্রিটিশ পূৰ্ব্ববর্ত্তী মুঘল সাম্রাজ্য ভারতবর্ষের অর্দ্ধেকেরও বেশী ভাগের উপর একছত্র রাজত্ব, একই ধরনের শাসনপদ্ধতি, একই প্রকারের ভদ্রসমাজের আমোদ-প্রমোদ, বেশ ও ভব্যতা, শিক্ষা ও সাহিত্যের ধারা প্রচলিত করিয়া দেয়। দেশের অনেকটা জুড়িয়া এবং অনেক বৎসর পর্যন্ত এই প্রবল প্রতাপান্বিত রাজশক্তি শান্তি স্থাপন করে; পথঘাট রক্ষা করে, একমাত্র সরকারী ভাষা ও মুদ্রা প্রচলন করে; এবং তাহার অনিবার্য্য ফলে ধন-উৎপত্তি ও বাণিজ্য-বৃদ্ধি, প্রদেশে প্রদেশে কর্ম্মচারীলোকের ভাবের, পণ্যদ্রব্যের ও কলার বিনিময় হইতে আরম্ভ হয়। এক সমবেত ভারতীয় জাতি যে একদিন গঠিত হইবে ইহা যদি কল্পনাতীত স্বপ্নের দেশ হইতে সম্ভাবনীয় আশার রাজ্যে আসে, তবে তাহা মুঘল সাম্রাজ্যের আরম্ভ করা কাজেরই পূর্ণ পরিণাম একথা বলিতে হইবে।

এই দিল্লী সাম্রাজ্যের গৌরব ও কীৰ্ত্তি দেড়শত বৎসর (১৫৫৬-১৭০৭) ধরিয়া বাড়িয়া চলে। আকবর ও জাহাঙ্গীর, শাজাহান ও আওরংজীবের ইতিহাস ইহারই আলোকে উদ্ভাসিত। কিন্তু আওরংজীবের মৃত্যুর পর ৪০ বৎসর ধরিয়া দ্রুত অবনতি (মুহম্মদ শা বাদশার মৃত্যু ১৭৪৮ পর্যন্ত)। অবশেষে, এই সাম্রাজ্য ও সভ্যতার পতন এবং দেশে বিদেশী-প্রাধান্য স্থাপন (১৮০৩ খ্রিস্টাব্দে) হইয়া এই বিয়োগান্ত নাটকের যবনিকা পতন। এ-পর্যন্ত কেহই মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের ইতিহাস মৌলিক ও বিস্তৃতভাবে রচনা করেন নাই। তাহার কারণ বোধ হয় এই যে, জীবদেহের ক্ষয় এবং সাম্রাজ্যের পতন দুইটিই সমান দুঃখকর দৃশ্য। কিন্তু প্রাচীন গ্রীস দেশের অলঙ্কারশাস্ত্রের সৃষ্টিকর্তারা সত্যই বলিয়া গিয়াছেন যে, বিয়োগান্ত নাটক (ট্রাজেডি) করুণা ও ভয় জন্মাইয়া দর্শকের হৃদয় পরিষ্কৃত পবিত্র করিয়া দেয়। আমরা এইরূপ নাটকে হাতে হাতে ঈশ্বরের ন্যায়বিচার এবং পাপের অনিবার্য্য দণ্ড যেন চোখের সামনে দেখিতে পাই। এই সত্য মনে রাখিলে মুঘল সাম্রাজ্যের পতনকেও একটি মহান শিক্ষাপ্রদ ট্রাজেডি নাটক বলিয়া স্বীকার করিতে হইবে। আর এই নাটকের চরিত্রগুলি আমাদের জাতির ও দেশের অতি-নিকটস্থ পূর্ব্বপুরুষ, আমাদের সঙ্গে ইহাদের বড় ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ। এমন নাটক আমরা অবহেলা করিতে পারি না।

তাহার উপর, যদি ইতিহাসকে জাতীয় জীবনের গীতা বলিয়া, জীবন্ত দর্শন গ্রন্থ বলিয়া, অন্ধ বর্তমানের পথপ্রদর্শক দীপ্ত দীপ বলিয়া মানি, তবে এই মুঘল সাম্রাজ্যের পতন-কাহিনী আমাদের আর সব বিষয় অপেক্ষা অধিক মূল্যবান রাজনৈতিক শিক্ষা দিবে। নবীন ভারতের ভাগ্যকর্তারা যদি এই ইতিহাস না জানেন, যদি ইহা পড়িয়া সাবধান না হন, তবে পদে পদে বিপদ আনিবেন, বিফল প্রযত্নে জীবন কাটাইবেন। অতএব, এই যুগের সত্য ইতিহাস আজকার পক্ষে অত্যাবশ্যক।

ভারতের হিন্দু যুগের, বৌদ্ধ যুগের এমন কি আদি মুসলমান যুগের ইতিহাসে অনেক স্থল অন্ধকার। তাহার কোন সমসাময়িক, এমন কি বিস্তৃত পরবর্ত্তী কাহিনী নাই। সুতরাং, সামান্য দুই একটি প্রস্তরফলক বা অৰ্দ্ধলুপ্ত প্রাচীন মুদ্ৰা লইয়া কল্পনার সাহায্যে ঐ সব সময়ের একটি “বোধ হয় এইরূপ ছিল” ছবি আঁকা ভিন্ন উপায় নাই। কিন্তু অপর দিকে মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের অসংখ্য সাক্ষী বিদ্যমান; তাহারা নানা জাতির নানা ধর্ম্মের লোক, নানা ভাষায় নিজ নিজ দৃষ্ট ঘটনা লিখিয়া গিয়াছে এবং এই শ্রেণীর ঐতিহাসিক উপাদান অগণ্য। সুতরাং, এই যুগের ভারত-ইতিহাস যিনি চর্চা করিবেন তাঁহার সুবর্ণ সুযোগ।

সত্য বটে, সেই পতনের যুগে দিল্লীর রাজশক্তি দুর্ব্বল সঙ্কীর্ণ, রাজপরিবার দরিদ্র, সদা উৎপীড়িত, দিল্লী-মধ্যে বন্দী ছিল। সুতরাং আকবর ও শাজাহানের মত সরকারী পরিপূর্ণ সুদীর্ঘ ইতিহাস (আকবর-নামা-, বাদশা-নামা প্রভৃতি) রচনা করাইবার শক্তি ও প্রবৃত্তি এইসব দিল্লীশ্বরের ছিল না। কিন্তু অনেক কৰ্ম্মী পুরুষ ফার্সী ভাষায় নিজ নিজ জীবনের ঘটনা লিখিয়া গিয়াছেন; অসংখ্য চিঠি এবং রাজসভা বা শিবির হইতে প্রেরিত হাতে-লেখা সংবাদপত্র (‘আখবারাৎ’) রহিয়া গিয়াছে। ইংরাজ ও ফরাসী সৈনিক ও রাজপুরুষদের আত্মকাহিনী, ভ্রমণ-বৃত্তান্ত, সংগৃহীত ইতিহাস এবং রিপোর্ট (despatches) আছে, এবং তাহার প্রায় সবগুলি মুদ্রিত আকারে পাওয়া যায়। সকলের চেয়ে বেশী সুখের বিষয় এই যে, সে-যুগের ভারত-ইতিহাসের যাহা অর্দ্ধেক উপাদান, অর্থাৎ মারাঠাদের লিখিত চিঠি, বিবরণ ও রিপোর্ট– তাহার প্রায় সবটা গত কয়েক বৎসরের মধ্যে ছাপা হইয়া গিয়াছে। সমস্ত অষ্টাদশ শতাব্দী ব্যাপিয়া মারাঠা-শক্তি শুধু দাক্ষিণাত্যে নহে, উত্তর-ভারতেও– সিন্ধুতীরে আটক্ হইতে ভাগীরথী-তীরে মুর্শীদাবাদ পর্যন্ত–ছড়াইয়া পড়িয়াছিল। সেই রাজসরকারের প্রায় সমস্ত কাগজপত্র এতদিন অপ্রকাশিত, একরূপ অজ্ঞাতভাবে, পুনায় “লাখরাজ জসীর অফিসে” বন্ধ হইয়া ছিল। গত তিন বৎসর ধরিয়া বম্বে গভর্ণমেণ্টের, এবং শেষ বা চতুর্থ বৎসর (১৯৩২) মারাঠা রাজাদের চাঁদায়, এই দেড় কোটি কাগজের বোঝাগুলি শ্রীযুক্ত গোবিন্দ সখারাম সরদেশাই এক দল কেরানী লইয়া ঘাঁটিয়া তাহার মধ্য হইতে ঐতিহাসিক কাগজগুলি বাছিয়া লইয়া, তারিখ ও টীকা যোগ করিয়া, ২৭ খণ্ড ইতিমধ্যে ছাপিয়াছেন; অবশিষ্ট ১৮ খণ্ডও প্রায় পস্তুত হইয়া আছে। এক বৎসরের কমেই ছাপা শেষ হইবে আশা করা যায়। এই মহাকীর্ত্তির মূল্য যে কত তাহা অষ্টাদশ শতাব্দীর ভারত-ইতিহাসের প্রত্যেক লেখকই বুঝিতে পারিবেন।

ইতিপূর্ব্বে অনেক মারাঠা ঐতিহাসিক পত্র রাজবাড়ে সানে ও পারসনি (১৮৯৮ হইতে) এবং খারে (১ম খণ্ড ১৮৯৭) ছাপিয়েছেন। পারসনিসের প্রকাশিত পত্রগুলি সবচেয়ে মূল্যবান, তাহার অধিকাংশই পেশোয়া-রাজের সরকারী দপ্তরের বিক্ষিপ্ত এক শাখা হইতে লওয়া। খারের পত্রগুলি শুধু দক্ষিণ মারাঠার পটবর্দ্ধন রাজবংশ (বর্তমান মিরজ জুনিয়ার ঘর)-এর সংগ্রহ হইতে লওয়া এবং প্রায়শই শোনা কথা, দৃষ্ট ঘটনার বিবরণ নহে। রাজবাড়ে ও সানের সংগ্রহে কিছু সার উপাদান ও প্রচুর অকেজো কাগজ আছে। কিন্তু সরদেশাই সম্পাদিত খণ্ডগুলিতে প্রথম শ্রেণীর প্রামাণিক ঐতিহাসিক উপকরণ আছে। সুতরাং, এখন এমন সময় আসিয়াছে যে ঘরে বসিয়া প্রায় সমস্ত ঐতিহাসিক মালমসলা সংগ্রহ করা যায় এবং তাহার সাহায্যে এই যুগের ইতিহাস রচনা করা সম্ভব। সরদেশাই ও কুলকর্ণী সম্পাদিত ঐতিহাসিক পত্রব্যবহার (দ্বিতীয় সংস্করণ), যদিও পেশোয়া-দপ্তর হইতে লওয়া নহে, ইহাতে ঐ দপ্তরের কাগজপত্রের মতো অনেক মূল্যবান ঐতিহাসিক চিঠি নানাস্থান হইতে সংগৃহীত হইয়াছে। ইহার ভিত্তি সানে সম্পাদিত পত্রসংগ্রহ, কিন্তু এই দ্বিতীয় সংস্করণে আকার দ্বিগুণের অধিক বাড়িয়াছে, এবং অনেক ভ্রম সংশোধন করা হইয়াছে। সরদেশাই এবং অপর দুইজন সহকারী সম্পাদিত পত্রে ইয়াদি বগৈরে (২য় সংস্করণ) দ্রষ্টব্য বটে, কিন্তু “ঐতিহাসিক পত্রব্যবহার”-এর মত মূল্যবান নহে।

ঐ যুগে ফরাসী ভাষায় Law of Lauriston, Gentil ও De Boigne-এর কাহিনী এবং বর্তমান M. Alfred Martineau রচিত Dupleix এবং Perron-এর জীবনী এবং Emile Barbe রচিত Rene Madec-এর পত্র ও ইতিহাস অত্যন্ত কাজের জিনিষ। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষার্ধের প্রথমে Xavier Wendel নামক একজন জেসুইট্ পদরী ভরতপুরের জাঠ-রাজাদের আশ্রয়ে ছিলেন, তিনি ইংরাজদের চরের কাজও করিতেন। তাঁহার লেখা জাঠ-ইতিহাস (ফরাসীতে) হস্তলিপির আকারে ইন্ডিয়া অফিসে আছে (দুই প্রতি)। আর টাইরোল-দেশীয় জেসুইট্‌ Tieffenthaler যদিও ১৫/১৬ বৎসর ধরিয়া নারওয়ার নগরে (মালবের উত্তর অংশে) বাস করেন, তাঁহার পুস্তক (ফরাসী অনুবাদ বার্নুলী কর্তৃক রচিত) ভূগোলের বই মাত্র, ঐতিহাসিক সংবাদ কম দেয়। চন্দননগর ও পণ্ডিচেরীর সমস্ত সরকারী চিঠিপত্র যাহা লোপ পায় নাই, মার্টিনো সাহেবের যত্নে ছাপা হইয়াছে। কিন্তু তাহাতে উত্তর-ভারত সম্বন্ধে বড় কম কথা আছে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে ইংরাজ ও ফরাসীদের রচিত ভারত-সম্বন্ধীয় বইগুলি এখন অত্যন্ত দুষ্প্রাপ্য ও বহুমূল্য হইয়াছে। আমাদের হতভাগ্য রাজধানীগুলির পুস্তকাগারে তাহার কোন সম্পূর্ণ বা অর্দ্ধ-সম্পূর্ণ সংগ্রহও নাই। ইহা দরিদ্র ঐতিহাসিকের পক্ষে কম কষ্টের কারণ নহে।

পারসিক হস্তলিপির মধ্যে সর্ব্বাপেক্ষা বিরল গ্রন্থগুলি বিলাতের ব্রিটিশ মিউজিয়মে ও ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরীতে আছে, এদেশে পাওয়া যায় না। তাহার ফটো আনান ব্যয়সাধ্য, কিন্তু এই বইগুলির মধ্যে অনেক এত আবশ্যক যে তাহাদের ফটো আনান ভিন্ন উপায় নাই, ইতিহাস অসম্পূর্ণ থাকিয়া যায় ৷ ওয়ারেন হেষ্টিংস-এর সময় হইতে ভারতে ইংরাজ কর্মচারীগণ পারসিক ভাষায় লেখা ইতিহাসের হস্ত-লিপির খুব খোঁজ করেন, তাঁহাদের অনুগ্রহপ্রার্থী লোকেরা তাঁহাদের জন্য ঐ ভাষায় নিজদর্শিত ঘটনার বিবরণ লিখিয়া তাঁহাদের উপহার দেয়। আর ওয়োলেসলীর ফোর্ট উইলিয়ম কলেজ স্থাপিত হইবার পর ফার্সী হস্তলিপি সংগ্রহ এবং ইতিহাস-রচনার খুব উৎসাহ পড়িয়া যায়। এমন কি তাঁহার এদেশে আসিবার পূর্ব্বেই গভর্ণমেন্টের পার্শিয়ান ট্রানসলেটর্ অথবা ফরেন সেক্রেটারীর মন যোগাইবার জন্য অনেকে ফার্সী ইতিহাস রচনা করিয়া দেয়। সৰ্ব্বশেষে ডালহাউসীর ফরেন সেক্রেটারী বিখ্যাত সর্ হেনরী এলিট হিন্দুস্থানের সব নবাব জমিদারের ঘর ঝাঁটিয়া পুরাতন ফার্সী ইতিহাস সংগ্রহ করেন, তাহা এখন ব্রিটিশ মিউজিয়মে, এবং তাহার অনেকগুলি জগতে একক।

ইংরাজ কর্ম্মচারীদের জন্য রচিত ফার্সী ইতিহাসের দৃষ্টান্ত দিতেছি, ইহার প্রায় সবগুলিই খুব কাজের বই এবং মূল্যবান সংবাদ দেয়:-

রিয়াজ উস্ সালাতীন (বাঙ্গলার ইতিহাস)

তারিখে বাঙ্গলা (১৭০৪-১৭৬৩ বঙ্গ-ইতিহাস)

তারিখে শাহদৎ-ই-ফরুসিয়র্) বাদশা মুহম্মদ শার ধাত্রীপুত্র “দুধ-ভাই” মুহম্মদ বখ্‌শ আশোব্ রচিত)

ইব্রত্নামা (ফকীর খয়েরউদ্দীন রচিত)

ইমাদ্-উস্-সাদৎ (ঘুলাম আলী রচিত), ইত্যাদি।

বিলাতে কিরূপ মূল্যবান ফার্সী ঐতিহাসিক হস্তলিপি আছে, যাহার নকল এদেশে একেবারে পাওয়া যায় না, তাহার কয়েকটি দৃষ্টান্ত দিতেছি–

(১) পূর্ব্বোক্ত আশোবের গ্রন্থ

(২) কাশীরাও রচিত পাণিপথের যুদ্ধের ইতিহাস

(৩) নজীব খাঁর জীবনী

(৪) বাদশাহ আহম্মদ শাহ (রাজ্যকাল ১৭৪৮-১৭৫৪)-এর বিস্তৃত ইতিহাস

(৫) বাদশাহ দ্বিতীয় আলমগীর (রাজ্যকাল ১৭৫৪-১৭৫৯)-এর বিস্তৃত ইতিহাস

(৬) পাণিপথ যুদ্ধের বর্ণনা, মুনাজিল্-উল্-ফতুহ্

(৭) মিস্কিন নামধারী একজন তুর্কী-বালক ক্রীতদাসরূপে ১৭৪৮ সালে ৮ বৎসর বয়সে পাঞ্জাবে আসে। পরে তহমাস খাঁ নামে দিল্লীর ওমরা হয়। ইহা তাহার আত্মকাহিনী। ইহার এক অংশ মাত্র এদেশে আছে।

(৮) দিল্লীর দরবারে সংবাদপত্র, সহস্র পৃষ্ঠারও অধিক।

[বঙ্গস্ত্রী, ১ম বর্ষ, ১ম সংখ্যা, মাঘ, ১৩৩৯।]

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *