২১. কৃষি ও শ্রমশিল্প

একবিংশ অধ্যায় – কৃষি ও শ্রমশিল্প

১. কৃষি

বঙ্গদেশ কৃষিপ্রধান এবং ইহার জনসংখ্যার শতকরা আশি জনের জীবিকা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির উপর নির্ভর করে। সুতরাং, ইহার উন্নতি বা অবনতির দ্বারা বাঙ্গালীর সুখদুঃখ অনেক পরিমাণে নির্ণীত হয়। বঙ্গদেশের কৃষিজ দ্রব্যের গড় উৎপাদন অন্যান্য উন্নত দেশসমূহের তুলনায় অনেক কম। ধানের উৎপাদন প্রতি বিঘায় জাপান ও ইতালির এক-চতুর্থাংশ মাত্র।

আলোচ্য যুগের প্রারম্ভে খাদ্যশস্যের উৎপাদন কিছু বাড়িলেও লোকসংখ্যার অনুপাতে এই বৃদ্ধির পরিমাণ ছিল শতকরা পঞ্চাশ ভাগ। ১৯২১ সনের পর খাদ্যশস্য উৎপাদনের হার প্রায় শতকরা ৩০ ভাগ হ্রাস পায়। ইহার ফলে কৃষকের দুরবস্থা এবং মাঝে মাঝে দুর্ভিক্ষের প্রকোপ হয়। ১৯০৭-০৮, ১৯১৮-১৯ ও ১৯২০-২১ সনে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়াছিল; কিন্তু ১৯৪৩ সনে যে দুর্ভিক্ষ হয় তাহাই সর্বাপেক্ষা গুরুতর। ইহাতে প্রায় ১৫ লক্ষ লোকের মৃত্যু হয়। তবে উৎপাদনের পরিমাণ হ্রাস ছাড়াও এই দুর্ভিক্ষের অন্যবিধ কারণ ছিল, তাহা পূর্বেই আলোচিত হইয়াছে। সংক্ষেপে বলা যাইতে পারে যে, জাপানীদের আক্রমণ আশঙ্কায় আমাদের গভর্নমেন্ট কর্তৃক জলপথে শত্রুদের চলাচল বন্ধ করার জন্য নৌকার অপসারণ ও সৈন্যদের রসদের জন্য প্রভূত পরিমাণে চাউলের ভাণ্ডার গঠন, কালোবাজারীর ষড়যন্ত্র প্রভৃতি কারণে এই দুর্ভিক্ষ এরূপ ভয়াবহ আকার ধারণ করিয়াছিল।

আলোচ্য যুগে কৃষিজাত দ্রব্যের উৎপাদন অনেক হ্রাস পাইয়াছিল। জঙ্গল পরিষ্কার করা এবং রেললাইনের বিস্তারের ফলে জলস্রোতের স্বাভাবিক গতিরোধ প্রভৃতি ইহার জন্য দায়ী। ইহা ছাড়াও কৃষকদের দুর্দশার অন্যবিধ কারণও ছিল। পরিবার বৃদ্ধির ফলে প্রত্যেকের মাথাপিছু আবাদী জমির পরিমাণ হ্রাস, শস্যবিক্রয়ের সুব্যবস্থা না-থাকায় অপেক্ষাকৃত অল্পমূল্যে স্থানীয় ক্রেতাদের নিকট শস্য বিক্রয় এবং ইহার ফলে জোতদার, মহাজন প্রভৃতির নিকট হইতে মোটা সুদে টাকা ধার এবং এই কর্জের পরিমাণ ক্রমশঃই বৃদ্ধি–ইহাই ছিল কৃষকদের দুর্দশার প্রধান কারণ। ওদিকে কৃষিজাত দ্রব্যের মূল্য যে-পরিমাণে বাড়িত, বস্ত্রাদি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসমূহের মূল্য তাহার অপেক্ষা অনেক বেশী পরিমাণে বৃদ্ধি পাইত। সুতরাং অধিকাংশ কৃষকের দুর্দশা চরমে পৌঁছিয়াছিল। আইন দ্বারা মহাজনদের সুদের পরিমাণ সীমিত করা হইল, কিন্তু কার্যত তাহাতে বিশেষ কোন ফল হয় নাই। ঐ একই উদ্দেশ্যে কো-অপারেটিভ সোসাইটি গঠিত হইয়াছিল; কিন্তু তাহাতেও খুব বেশীসংখ্যক কৃষক উপকৃত হয় নাই।

লোকসংখ্যা-বৃদ্ধি এবং অন্য কারণে জমিহীন কৃষকের সংখ্যা ক্রমশঃই বাড়িতেছিল। গভর্নমেন্ট উন্নতশ্রেণীর বীজ, সার প্রভৃতির সরবরাহ দ্বারা কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধির চেষ্টা করিতেছিল। কিন্তু ১৯৩৭-৩৮ সনে ধান-জমির মাত্র শতকরা ছয় ভাগ ইহার ফলভোগী হয়। কারণ, দরিদ্র কৃষকদের ঐগুলি কিনিবার সামর্থ্য ছিল না। উল্লিখিত উপায়ে কৃদ্রিব্যের উৎপাদন যেটুকু বাড়িয়াছিল, লোকবৃদ্ধির অনুপাতে তাহা খুবই অত্যল্প হওয়ায় খাদ্যদ্রব্যের অভাব বাড়িয়াই চলিয়াছিল।

২. শ্ৰমশিল্পে বাঙ্গালীর ঔদাসীন্য

উনিশ শতকের শেষভাগে বঙ্গদেশের সাময়িকপত্র যে শিল্পের উন্নতি সম্বন্ধে বাংলার শিক্ষিত জনসাধারণের দৃষ্টি পুনঃ পুনঃ আকর্ষণ করিয়াছে এবং ইহার জন্য নিবারক বিধিস্বরূপ বিদেশ হইতে আমদানি দ্রব্যের উপর কর বসানোর পরামর্শও দিয়াছে, এই গ্রন্থের তৃতীয় খণ্ডে তাহার উল্লেখ করা হইয়াছে। যদিও উনিশ শতকের শেষভাগে বোম্বাই ও ভারতের অন্য অঞ্চলে শ্রম ও শিল্প-বাণিজ্যের উন্নতি পরিলক্ষিত হয়, তবু বাঙ্গালীর এ-বিষয়ে উদ্যম ও উৎসাহের অভাব সম্বন্ধে মন্তব্য করা হইয়াছে।

আলোচ্য যুগে কয়েকজন বাঙ্গালীর দৃষ্টি এ বিষয়ে আকৃষ্ট হইয়াছিল। ইহার ফলে যে-কয়টি শ্রমশিল্প প্রতিষ্ঠান বিশেষ প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছিল সংক্ষেপে তাহার উল্লেখ করিতেছি।

১। ১৮৯১ সনে প্রতিষ্ঠিত আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের Bengal Chemical and Pharmaceutical Works Ltd. এখানে দেশীয় গাছগাছড়া হইতে ঔষধ, সুগন্ধি তৈল ও গন্ধদ্রব্য, ফলের রস হইতে সুস্বাদু পানীয় এবং কলেজের ল্যাবরেটরির যন্ত্রপাতি প্রস্তুত হইত। ১৯০৮ সনে ইহার মূলধন বাড়াইয়া তিন লক্ষ টাকা করা হয় ও শতকরা ছয় টাকা ডিভিডেণ্ড দেওয়া হয়। ১৯১১ সনে এখানকার শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ১৯০।

২। বটকৃষ্ণ পাল Edwards Tonic প্রভৃতি ঔষধ প্রস্তুতের বড় কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন।

৩। চন্দ্রকিশোর সেন কর্তৃক গন্ধতৈল, দেশলাই প্রভৃতির কারখানা।

৪। পি.এম. বাগচি প্রতিষ্ঠিত দর্জিপাড়া কেমিক্যাল ওয়ার্কস।

বাংলার বড় বড় শিল্পসংস্থা প্রায় সকলগুলিই বিদেশীর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল, সুতরাং কয়েকজন বাঙ্গালীর এই বিষয়ে উদ্যম প্রশংসনীয়। নীলরতন সরকার National Tannery এবং মহারাজ মণীন্দ্রচন্দ্র নদী ও বৈকুণ্ঠনাথ সেন Calcutta Pottery Works প্রতিষ্ঠা করেন। ভাগ্যকুলের ধনী ব্যবসায়ীগণ-রাজা শ্রীনাথ রায়, রাজা জানকীনাথ রায় প্রভৃতি কলিকাতা ও পূর্ববঙ্গের মধ্যে মালবাহী জাহাজ চালাইবার ব্যবসা করিতেন। স্যার রাজেন্দ্রনাথ মুখার্জী প্রসিদ্ধ ইঞ্জিনীয়ারিং শিল্পসংস্থা Martin & Co. প্রতিষ্ঠা করেন।

এই প্রসঙ্গে Dawn Soceity-র (১৯০২-০৭) কর্মতৎপরতা উল্লেখযোগ্য। ইহা যুবকগণকে ব্যবসায় ও শ্রমশিল্প প্রতিষ্ঠার প্রেরণা দিত এবং এদেশে প্রস্তুত দ্রব্য বিক্রয়ের জন্য স্বদেশী ভাণ্ডার খুলিয়াছিল। স্বদেশীয় আন্দোলনের ফলে দেশীয় শিল্পসংস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য খুব উৎসাহ ও উদ্যমের সৃষ্টি হইয়াছিল। বঙ্গভঙ্গের পরেই একলক্ষ টাকা চাঁদা তুলিয়া কলিকাতায় ও কিশোরগঞ্জে বস্ত্রবয়ন বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হইল। বড় বড় শিল্পসংস্থা স্থাপনের দিকেও মনোযোগ আকৃষ্ট হয়। ১৯০৬ সনে বঙ্গলক্ষ্মী কটন মিল প্রতিষ্ঠিত হইল। ইহার মূলধন ছিল ১২ লক্ষ টাকা এবং শ্রমিকের সংখ্য এক হাজারের বেশী। কিন্তু দশ বছরের মধ্যে চারিবার ইহার স্বত্বাধিকারীর বদল হয়। অবসরপ্রাপ্ত ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট মোহিনীমোহন চক্রবর্তী ১৯০৮ সনে কুষ্টিয়াতে মোহিনী মিল স্থাপন করেন। কিন্তু, এই দুইটি সংস্থার সফলতা সত্ত্বেও আর কোন কাপড়ের কল প্রতিষ্ঠিত হয় নাই। চিনি বা লোহালক্কড় প্রভৃতি অন্য কোন প্রয়োজনীয় দ্রব্যের কোন বড় কলও স্থাপিত হয় নাই। কিন্তু বাঙ্গালী কয়েকটি বড় বড় ব্যাঙ্ক স্থাপন করে। ১৯০৮ সনে ৫০ লক্ষ টাকা মূলধন লইয়া Bengal National Bank প্রতিষ্ঠিত হয়। দুই ক্রোড় টাকা মূলধন লইয়া Co-operative Hindusthan Bank প্রতিষ্ঠিত হইল। কিন্তু ইহার কোনটিই দীর্ঘকাল স্থায়ী হয় নাই। জমিদার ও ব্যবসায়ীরাই ছিলেন উভয় ব্যাঙ্কের প্রতিষ্ঠাতা, এবং হঁহারা অতঃপর মালজাহাজ চালাইবার জন্য Co-operative Navigation Ltd, প্রতিষ্ঠা করিলেন। পনেরো লক্ষ টাকা মূলধন লইয়া ভাগ্যকুলের রায়দের উদ্যোগে তাঁহাদের পুরানো Bikrampur Flotilla Service, Mahajan Flotilla Company এই নূতন নামে প্রতিষ্ঠিত হইল।

বাঙ্গালীরা Life Insurance Company প্রতিষ্ঠার দিকেও মনোযোগ দিল। দশ লক্ষ টাকা মূলধন লইয়া Indian Equitable Insurance Company Ltd. এবং এক কোটি টাকা মূলধন লইয়া Hindusthan Co-operative Insurance Company প্রতিষ্ঠিত হইল। অন্যান্য ব্যবসার দিকেও বাঙ্গালীর দৃষ্টি আকৃষ্ট হইল। পাঁচলক্ষ টাকা মূলধন লইয়া ১৯০৮ সনে চামড়ার জুতা, ব্যাগ, সুটকেশ প্রভৃতি প্রস্তুত করার জন্য Boot and Equipment Factory Co. Ltd. প্রতিষ্ঠিত হইল। ১৯০৯ সনে Calcutta Pottery Works প্রতিষ্ঠার কথা পূর্বে উল্লেখ করা হইয়াছে। এখানে চীনামাটির পেয়ালা-পিরিচ, কালির দোয়াত, দেবদেবীর মূর্তি প্রভৃতি নির্মিত হইত। ক্রমে ক্রমে ইহার প্রসার হয় এবং ইহা মাল রপ্তানিও করে। FESTICIT costs Gol Globe Cigarette Company, Calcutta Cigarette Company 47 East India Cigarette Manufacturing Company gitaro হয়। এইসব কোম্পানী অতি আধুনিক যন্ত্র আমদানি করিয়া এক পয়সায় দশটি সিগারেট বিক্রয় করিত।

১৯১০ সনে কলিকাতার বৃহত্তম সিগারেটের কারখানা Globe প্রতিষ্ঠিত হয়। ইহার শ্রমিকসংখ্যা ছিল ৪৮৭। ১৯০৫ সনে প্রতিষ্ঠিত Calcutta Flour Mills Association কলিকাতার বিভিন্ন অঞ্চলে ময়দা, আটা, সুজি প্রভৃতি তৈরীর কল স্থাপন করিয়াছিল।

স্বদেশী আন্দোলনের ফলে ধ্বংসোখ তাঁতীসম্প্রদায় পুনরায় সমৃদ্ধ হইল। তুলা ও রেশমের কাপড় আবার তাঁতে তৈরী আরম্ভ হইল। শান্তিপুর, ফরাসডাঙ্গার মলমল, মুগা ও সূক্ষ্ম ধুতি-শাড়ী, চাদর, গামছার চাহিদা খুব বাড়িল। উন্নত নূতন ধরনের হাতে-বোনার তাঁত (Serampur Handloom) তৈরী করিবার কারখানা প্রতিষ্ঠিত হইল। বাঙ্গালী কারিগরেরা ছাতা, টিনের বাক্স, স্টীলের ট্রাঙ্ক, নিব, পেন্সিল, কাগজ, কালি, ছুরি, চামচ, চিরুনী, দেশলাই, চুলের কাঁটা প্রভৃতি তৈরী আরম্ভ করিল। এইসব দ্রব্য বিক্রয়ের জন্য দেশের সর্বত্র স্বদেশী দোকান প্রতিষ্ঠিত হইল।

এই সংক্ষিপ্ত বিবরণ হইতেই বোঝা যাইবে যে, স্বদেশী আন্দোলনের ফলে বাংলার শ্রমশিল্পের ইতিহাসে এক নূতন যুগের সম্ভাবনা দেখা দিল।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলে শ্রমশিল্প বৃদ্ধি পাইল। কিন্তু আধুনিক প্রণালীর বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়িয়া তোলা সম্ভবপর হইল না।

৩. শ্রমশিল্প

(ক) পাট

বঙ্গদেশের রপ্তানি দ্রব্যের মধ্যে প্রধান ছিল পাট ও চা। কাঁচাপাট হইতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে যন্ত্রের সাহায্যে সুতায় পরিণত করিয়া চটের কাপড় ও থলে প্রভৃতি নানা দ্রব্যে পরিণত করা হয়। সমগ্র পৃথিবীতে পণ্যসম্ভার পরিবহণের প্রয়োজনীয় আধার ও আচ্ছাদনের জন্য পাটজাত বস্তু এখনও সর্বাপেক্ষা সুলভ ও সহজলভ্য। কার্পেট তৈয়ারীর জন্য বনিয়াদ হিসাবেও চটের কাপড়ের প্রয়োজনীয়তা ও চাহিদা বাড়িয়া গিয়াছে। ঘরের দেওয়ালের আচ্ছাদন এবং গৃহসজ্জার অন্যান্য উপাদানে পাটের কাপড়ের ব্যবহার অনেক বাড়িয়াছে।

বাংলা দেশের পাটশিল্প সম্পূর্ণভাবে ইংরেজ ও স্কচ্ কোম্পানীর হাতে ছিল, কারণ কাঁচামাল ও প্রস্তুতদ্রব্য প্রধানতঃ রপ্তানি হইত। দেশে তাহার চাহিদা খুব বেশী ছিল না। কৃষকেরা পাট উৎপাদন করিত, কিন্তু তাহার পর ইহার ক্রয় বিক্রয়, গুদামজাতকরণ, পাটের কলে পাঠানো, প্রস্তুতদ্রব্য বিক্রয় এবং বিদেশে রপ্তানি করা–এ সকলই বিদেশী কোম্পানীগুলি ব্যবস্থা করিত। ইহার জন্য বহু কোম্পানী প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল-Calcutta Jute Dealers’ Association, Calcutta Jute Fabrics Brokers’ Association, Calcutta Jute Fabrics Shippers’ Association, Calcutta Baled Jute Shippers’ Association, Indian Jute Mills Association. ইহা ছাড়া পাট বিক্রয়ের প্রধান কেন্দ্র ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ প্রভৃতি স্থানে অনেক সাহেব কোম্পানী ছিল। ইহাদের অন্যতম বিশিষ্ট প্রতিষ্ঠান ছিল Naraingunge Chamber of Commerce. ক্রমে ক্রমে, বিশেষতঃ প্রথম যুদ্ধের পরে মারওয়াড়ি সম্প্রদায় এইসব অঞ্চলে প্রতিষ্ঠা লাভ করে এবং সাহেব কোম্পানীগুলির গুদাম, যন্ত্রপাতি প্রভৃতি ক্রয় করে। দরিদ্র পাটচাষীরা সঙ্ঘবদ্ধ ছিল না, সুতরাং কাঁচাপাটের দাম নির্ণয়ে তাহাদের কোন হাত ছিল না। তাহারা পাট মজুত রাখিয়া ন্যায্য দাম না-পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করিতে পারিত না। কারণ, চড়া সুদে মহাজনদের নিকট হইতে টাকা ধার করিয়া সংসার চালাইত বলিয়া পাট কাটা হইলেই সেই টাকা সুদে-আসলে শোধ করিতে বাধ্য হইত। ইংরেজ কোম্পানীদেরও ইহাতে স্বার্থ ছিল, কারণ ইহার ফলে তাহারা সস্তা দামে পাট কিনিতে পারিত। ১৯১৪ সনে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলে পাটের দাম হঠাৎ কমিয়া যায়, যখন ঢাকার কলেক্টর প্রস্তাব করিলেন যে, কৃষকদের রক্ষা করিবার জন্য তাহাদিগকে আড়াই লক্ষ টাকা ঋণ দেওয়া হউক। কিন্তু, পূর্বোক্ত Indian Jute Mills Association এই কারণে আপত্তি করিল যে, তাহা হইলে চাষীরা পাট ধরিয়া রাখিতে পারিবে এবং কম দামে বিক্রয় করিতে বাধ্য হইবে না। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের মুখপাত্র Bengal Chamber of Commerce ইহা সমর্থন করায় গভর্নমেন্ট ঐ ঋণের পরিমাণ অর্ধেক কমাইয়া দিলেন। রাজশক্তির সহায়তায় ব্রিটিশ বণিকেরা নিজেদের স্বার্থে দরিদ্র ভারতীয় কৃষকদের ধ্বংসের পথ প্রশস্ত করিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করিত না। জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত হইলেও ইহা একটি দৃষ্টান্ত মাত্র। এরূপ আরও অনেক আছে। আলোচ্য যুগের প্রারম্ভে বিদেশী পাট কোম্পানীসমূহ শতকরা বারো টাকা আট আনা হইতে পঁচিশ টাকা পর্যন্ত ডিভিডেন্ড (Dividend) দিত (সে সময় গভর্নমেন্ট কাগজের সুদ ছিল মাত্র তিন টাকা), কিন্তু যাহারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা জলে দাঁড়াইয়া সারাদিন পাট কাটিত তাহাদের বারো মাস দুই বেলা অন্ন জুটিত না। অথচ এই সময়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলে পাট কোম্পানীর লাভ অসম্ভব রকমে বৃদ্ধি পায়। আদায়ী মূলধনের উপর লাভের পরিমাণ ছিল ১৯১৪ সনে শতকরা ১০ টাকা, ১৯১৫ সনে ৫৮ টাকা, ১৯১৬ সনে ৭৫ টাকা এবং ১৯১৭ সনে ৪৯ টাকা। ইহার ফলে যুদ্ধের সুযোগে দেশীয় লোকেরাও দলবদ্ধভাবে পাটের ব্যবসা আরম্ভ করিল এবং পূর্বোক্ত ইউরোপীয়ান ব্যবসায়ীদের ন্যায় Bengal Jute Dealers’ Association, East India Jute Association, TOC3117 বাণিজ্য সভা, Indian Jute Baler’s Association প্রভৃতি স্থাপিত হইল। এই সময়েই সর্বপ্রথম ভারতীয় পরিচালিত দুইটি পাটকল প্রতিষ্ঠিত হয়-Birla Jute Manufacturing Co. 47. Hukumchand Jute Mills Ltd.

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে পাটের বাজার কিছু মন্দা হইয়াছিল। কারণ পাটের চাহিদা কমিয়াছিল এবং ১৯২১ হইতে ১৯২৯ সন পর্যন্ত প্রায় প্রতি বৎসরই পাটকলে শ্রমিকদের ধর্মঘট হইত। এই কয়েক বৎসরে পাটকলে ধর্মঘটের সংখ্যা ছিল ২০১; ধর্মঘটকারী শ্রমিকের সংখ্যা ৭,১৩,২৭৯; নষ্ট কর্মদিবসের সংখ্যা ২৮,৯৬,০০০।

কিন্তু সংঘবদ্ধ থাকায় উৎপাদনের পরিমাণ কমাইয়া এবং অন্যান্য উপায়ে পাটের ব্যবসায়ীরা সকল বিপদ, বিশেষতঃ ১৯২৯ ও ১৯৩৮ সনের গুরুতর সঙ্কট কাটাইয়া উঠিতে সমর্থ হইয়াছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলে আবার পাটের ব্যবসায়ে দ্রুত উন্নতি আরম্ভ হইল। যুদ্ধের আরম্ভ (১৯৩৯, সেপ্টেম্বর) মাসিক উৎপাদন ছিল ৯০,৭০০ টন; ১৯৪০ সনের মার্চ মাসে ইহা বাড়িয়া হয় ১২৫,৭০০ টন। সুতরাং সপ্তাহে পূর্ববৎ ৬০ ঘণ্টা কাজের ব্যবস্থা হইল।

(খ) কয়লা

উনিশ শতকের প্রথমভাগে বঙ্গদেশের পশ্চিশভাগে ভূগর্ভে বিরাট কয়লান্তরের সন্ধান পাওয়ায় কয়লা-শিল্প বাংলার অর্থনীতিক ব্যবস্থায় একটি বিশিষ্ট সম্পদ বলিয়া পরিগণিত হয়। ১৮২০ সনে সর্বপ্রথম রাণীগঞ্জে খনি হইতে কয়লা উত্তোলনের কার্য আরম্ভ হয়। তাহার পর দেড়শত বৎসরে কয়লা-শিল্প বঙ্গদেশে, তথা ভারতে বিশেষ প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছে।

রেলপথ খোলার পর হইতে দুই কারণে এই শিল্পের বৃদ্ধি হয়। প্রথমতঃ, রেল এঞ্জিন চালাইবার জন্য কয়লার প্রয়োজনীয়তা; দ্বিতীয়তঃ রেলপথ বিস্তারে দূরদূরান্তরে কয়লা পাঠাইবার সুবিধা এবং তজ্জন্য কয়লার বাজারের বিস্তৃতি। ১৮৬০ সনে ২৮৫,০০০ টন কয়লা উৎপন্ন হইয়াছিল এবং ১৫৪,০০ টন আমদানি করা হইয়াছিল। ১৮৯০ সনে ইহার পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ২০ লক্ষ এবং ৭০ লক্ষ টন। আলোচ্য যুগের প্রারম্ভে, অর্থাৎ বিংশ শতকের প্রথমে ভারতীয় কয়লা বিদেশে রপ্তানি হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় কয়লার আমদানি সম্পূর্ণ বন্ধ হয়, এবং উৎপাদনও দ্রুতবেগে বাড়িতে থাকে। ১৯১৪ সনে ১ কোটি ৬৫ লক্ষ, ১৯১৯ সনে ২ কোটি ২৩ লক্ষ এবং ১৯৩৯ সনে ২ কোটি ৪৪ লক্ষ মেট্রিক টন কয়লা উৎপন্ন হয়। ১৯৫২ সনে ইহা বাড়িয়া মোট পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ কোটি ৭৯ লক্ষ মেট্রিক টন। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভারতের কয়লার রপ্তানি হ্রাস পায়, কিন্তু দেশে ইহার চাহিদা খুব বাড়িবার ফলে তাহাতে কোন বিপদের সম্ভাবনা হয় নাই ও হইবে না। তবে প্রকৃত বিপদ এই যে, প্রথমশ্রেণীর উৎকৃষ্ট কয়লা পর্যাপ্ত পরিমাণ উৎপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা নাই।

(গ) চা

বঙ্গদেশে আসামের তুলনায় চায়ের উৎপাদন কম হইলেও এখানকার চা-ও একটি মূল্যবান সম্পদ। আলোচ্য যুগের প্রথমদিকে চায়ের রপ্তানি খুব বৃদ্ধি পাইয়াছিল। কারণ চীনদেশের চা ইংলণ্ডে ভারতের সহিত প্রতিযোগিতায় সফল হয় নাই এবং রাশিয়াতে ভারতীয় চায়ের চাহিদা খুব বাড়িয়াছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহার দাম বৃদ্ধি হওয়ায় চা-বাগানের সংখ্যা অনেক বাড়িয়া যায়। কিন্তু ১৯২৮-২৯ সনে চায়ের চাহিদা অনেক কমিয়া যাওয়ায় চায়ের দামও অনেক কমিয়া গেল এবং অনেক চা-বাগানের মালিকদের লোকসান হইল। পরবর্তী কয়েক বৎসর ইহার কখনও মূল্যবৃদ্ধি, কখনও মূলহাস হওয়ায় এক অনিশ্চিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ১৯৩০ সনে একটি আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা অনুসারে চায়ের উৎপাদন হ্রাস করা হইল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আবার চায়ের দাম বাড়িল। সমগ্র ভারতে যে চা হইত তাহার বেশীরভাগই রপ্তানি হইত এবং ১৯৩৯-৪০ সনে এই রপ্তানি চায়ের শতকরা আশি ভাগ ব্রিটেনে বিক্রয় হইত। আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রে ও কানাডা রাজ্যে ভারতীয় চা রপ্তানি হইত।

৪. শ্রমশিল্পের অবান্তর ফল

বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমশিল্প-প্রসঙ্গে আরও কয়েকটি বিষয়ের উল্লেখ করা প্রয়োজন।

পাটকলের শ্রমিকেরা প্রথমে প্রায় সবাই ছিল বাঙ্গালী। কিন্তু ক্রমে ক্রমে অবাঙ্গালীরাই এক্ষেত্রে প্রাধান্য লাভ করিল। নিম্নলিখিত পরিসংখ্যান হইতে ইহা বোঝা যাইবে :

পাটশিল্পে নিযুক্ত১৯০২ সন১৯১৬ সন
মোট শ্রমিক সংখ্যা১৭,১১০৩১,৮৪১
শতকরা বাঙ্গালী২৮১০
শতকরা স্থানীয় বাঙ্গালী২২

১৯২১ সনে মোট দক্ষ (skilled) শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ১২৪,২২১ এবং সাধারণ মজুরের সংখ্যা ১৫৫,৬৩৩। ইহাদের মধ্যে বাঙ্গালী ছিল যথাক্রমে ৩৮,৮৯০ এবং ২৬,৫৫৮।

পাটশিল্পের কর্তৃত্ব সম্বন্ধে যাহা বলা হইয়াছে, কয়লা ও চায়ের সম্বন্ধেও মোটামুটিভাবে তাহাই প্রযোজ্য। অর্থাৎ, এই তিনটিতেই বিদেশী, প্রধানতঃ ব্রিটিশ এজেন্সি কোম্পানীদিগের প্রধান ও প্রত্যক্ষ কর্তৃত্ব ছিল। এই সমুদয় Managing Agency House-এর মধ্যে নিম্নলিখিত সাতটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য :

Andrew Yule & Company; Bird & Company; Begg, Dunlop & Company; Shaw Wallace & Company; Williamson, Magor & Company; Duncan Brothers; Octavius Steal & Company.

পাট কোম্পানীর শতকরা ৫৫টি, চা-কোম্পানীর শতকরা ৬১টি এবং কয়লা কোম্পানীর শতকরা ৪৬টি উপরোক্ত সাতটি কোম্পানীর কর্তৃত্বাধীনে ছিল ২

বঙ্গদেশে কলের শ্রমিকদের ন্যায় বলের এইশ্রেণীর কর্তৃপক্ষদের মধ্যেও বাঙ্গালীর সংখ্যা খুব কম ছিল এবং বাঙ্গালী কোন কোম্পানী ছিল না বলিলেই হয়। একমাত্র পূর্বোক্ত মার্টিন কোম্পানী ইহার কতকটা অনুরূপ ছিল। পরে ইহা Burn & Company-র সহিত মিলিয়া একটি যুক্ত কোম্পানী গঠন করিয়াছিল। কিন্তু কয়েকটি অবাঙ্গালী ভারতীয় কোম্পানীকে এই শ্রেণীভুক্ত করা যাইতে পারে। ইহাদের মধ্যে রাজা বলদেবদাস বিড়লা, কেশোরাম পোদ্দার প্রভৃতির নাম করা যাইতে পারে। ইহারা ১৯১৯-২১ সনের মধ্যে কলিকাতার সন্নিকটে Birla Cotton Mills, Birla Jute Manufacturing Company, Kesoram Cotton Mills প্রতিষ্ঠিত করেন। কোেেরামের খ্যাতি বেশীদিন ছিল না; কিন্তু Birla House এখনও (১৯৭৫ সনে) কলিকাতার তথা পশ্চিমবঙ্গের সর্বাপেক্ষা প্রসিদ্ধ ব্যবসায়ী কোম্পানী। ইহার প্রতিষ্ঠাতা রাজা বলদেবদাস বিড়লা বম্বে শহরে ব্যবসা আরম্ভ করেন এবং ১৯০১ সনে কলিকাতায় আসেন। তাঁহার পুত্র ঘনশ্যামদাস বিড়লা বর্তমান যুগে বঙ্গদেশের বৃহত্তম ব্যবসায়ী বলিয়া পরিগণিত এবং সৌভাগ্যের বিষয় আজও (১৯৭৫, ৮ জুলাই) জীবিত আছেন।

বড় বড় কলকারখানা প্রতিষ্ঠার ফলে শ্রমিক ও মালিকের মধ্যে সম্বন্ধের গুরুতর পরিবর্তন হয়, পাটকলের শ্রমিকদের সম্বন্ধে পূর্বে যাহা বলা হইয়াছে, অন্যান্য-কয়লা, কাপড়, চা প্রভৃতি কারখানার সম্বন্ধেও তাহা প্রযোজ্য, অর্থাৎ কোম্পানীগুলি মোটা লাভ করিত, অথচ শ্রমিক ও কৃষকদের দুরবস্থা ঘুচিত না। শ্রমিকেরা ক্রমশঃই ইহা হৃদয়ঙ্গম করিল যে, পুঁজিবাদীর (Capitalist) দল তাহাদেরই শ্রমলব্ধ বিপুল অর্থসম্পদ ভোগ করিতেছে। অথচ, তাহাদের দারিদ্র্য পূর্ববৎ আছে। ইহার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ আরম্ভ হইল দলবদ্ধভাবে শ্রমিক-আন্দোলন। ইহা প্রথমে বম্বে প্রদেশে আরম্ভ হয়। বঙ্গদেশে ইহার প্রথম দৃষ্টান্ত ১৯০৫ সনে প্রতিষ্ঠিত Printers’ Union প্রথম প্রথম ইহার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল প্রতিকারের নিমিত্ত শ্রমিকদের অভাব ও অভিযোগ কর্তৃপক্ষের গোচরে আনয়ন। ১৯০৫ সনে এইজন্য কলিকাতায় Working Men’s institution প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল। কিন্তু প্রকৃত শ্রমিক-আন্দোলন আরম্ভ হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অব্যবহিত পরেই। একদিকে ভারতের মুক্তিসংগ্রাম, অপরদিকে রুশ দেশে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব (Communist Revolution)–এই দুইয়ের প্রভাবেই শ্রমিকদের মনে শ্রেণীচেতনার (class consciousness) উদয় হয়। ১৯১৮ সনে ভারতে প্রথম ট্রেড ইউনিয়ন স্থাপিত হয়। ইহার সভাপতি ছিলেন প্রসিদ্ধ রাজনীতিক নেতা লালা লাজপৎ রায়। ইহার ata All India Trade Union Congress ( 1787**C01 A.I.T.U.C)

১৯২৬ সনে শ্রমিকদের দলবদ্ধ হওয়ার ও ধর্মঘট করার অধিকার আইনতঃ স্বীকৃত হয়। এই সময়ে এই আন্দোলনে কমিউনিষ্টদের প্রভাব বাড়িতে থাকে। ১৯২৮ সনে কমিউনিষ্ট দলের নেতৃত্বে বাংলার চটকলে ধর্মঘট হয়। ঐ বৎসরই কলিকাতায় জাতীয় কংগ্রেসের বাৎসরিক অধিবেশনের সময় শ্রমিকেরা কমিউনিষ্টদের নেতৃত্বে দল বাঁধিয়া কংগ্রেসের সভামণ্ডপ (Pandal) বলপূর্বক অধিকার করে। এই সময় হইতে আলোচ্য যুগের শেষ পর্যন্ত বঙ্গদেশে-তথা ভারতে শ্রমিক-আন্দোলন অব্যাহত থাকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে শ্রমিক অশান্তি ও শ্রমিক-আন্দোলন অনেক বাড়িয়া যায়। ফলে ট্রেড ইউনিয়নগুলির সংখ্যা এবং সঙ্গে সঙ্গে ধর্মঘটের সংখ্যা দ্রুতবেগে বাড়িতে থাকে। নিম্নলিখিত পরিসংখ্যান হইতে ইহা বোঝা যাইবে।

১। ১৯২১ হইতে ১৯২৯ সনের মধ্যে বঙ্গদেশে পাটকলে[৩]

(ক) মোট ধর্মঘটের সংখ্যা–২০১

(খ) ধর্মঘটকারী শ্রমিকদের সংখ্যা–৯,৮৫,২৭৯

(গ) নষ্ট কর্মদিবসের সংখ্যা–৮৫,৪৪,১৯৯

২। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভারতে ধর্মঘটের সংখ্যা[৪]

বৎসর
১৯৪৫৮২০৭,৪৭,৫৩০৪০,৫৪,৪৯৯
১৯৪৬১৬২৯১৯,৬১,৯৪৮১,২৭,১৭,৭৬২
১৯৪৭১৮১১১৮,৪০,৭৮৪১,৬৫,৬২,৬৬৬

তথ্যনির্দেশ

১. Amiya Kumar Bagchi, Private Investment in India, 1900-1939, P. 262 aud F. Note 25

২. Amiya Kumar Bagchi, Private Investment in India, 1900-1939, P. 176

৩. Amiya Kumar Bagchi, Private Investment in India, 1900-1939, P. 142

৪. ভারতকোষ, তৃতীয় খণ্ড, পৃ. ৬৩১

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *