2 of 2

ডা: যদুনাথ মুখার্জি, কলিকাতা

ডা: যদুনাথ মুখার্জি, কলিকাতা

ডাঃ যদুনাথ মুখার্জি ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইসেন্‌সিয়েট অব মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারী। বাঙলা ভাষায় চিকিৎসা শাস্ত্রের ওপর বেশ কয়েকখানি বই লিখে তিনি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। ১৮৩৯-এর সেপ্টেম্বরে নদীয়া জেলার শান্তিপুরে মাতুলালয়ে তাঁর জন্ম। অবশ্য, এখানে তাঁর পূর্বপুরুষদেরও বাস ছিল। শান্তিপুর থেকে রানাঘাট ও বনগাঁর মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত গরীবপুরে বাসস্থান স্থানান্তরিত করেন তাঁর সাধুপ্রকৃতির প্রপিতামহ।

যদুনাথের বাল্যশিক্ষা শুরু হয় গ্রাম্য পাঠশালায়। ছেলেবেলা থেকেই তিনি পরিচ্ছন্নতাবোধ ও অধ্যয়নপ্রিয়তার জন্য সকলের নজর কেড়েছেন। তাঁর ন’ বছর বয়সে তাঁকে মূলনাথের ইংরেজি বিদ্যালয়ে পাঠানো হয়। বিদ্যালয়টি পরিচালিত হত মিশনারী আদর্শে। মিঃ জেমস ফরলঙ নামক এক নীলকর এর সম্পূর্ণ ব্যয় বহন করতেন; নীলকরদের ব্যতিক্রম এই জেমকস ফরলঙ ছিলেন সুশিক্ষিত ও মানব দরদী। ১৮৫২তে তাঁকে ভর্তি করা হয় কৃষ্ণনগর কলেজে। এখানে তৃতীয় বর্ষ পর্যন্ত পড়ে তিনি কলেজ ছাড়েন এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই শিক্ষকতার একটি চাকরি পেয়ে যান ৷ সারাটা কলেজ জীবন তিনি কঠিন ডিপেপসিয়া রোগে ভুগেছেন। এর থেকেই তাঁর ভবিষ্যৎ কর্মজীবন নির্ধারিত হয়। তিনি স্থির করেন স্বয়ং ডাক্তার হয়ে তিনি নিজের চিকিৎসা করবেন। বাল্যকাল থেকেই অত্যন্ত জেদী যদুনাথ ১৮৬০-এর জুন মাসে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন এবং স্নাতক হন ১৮৬৫তে। তাঁর ডাক্তারি শিক্ষার চতুর্থ বর্ষে, ধাত্রীর অকর্মণ্যতা ও অজ্ঞতার জন্য তাঁর প্রথম সন্তানের মৃত্যু হয়। এতে তিনি মনে অত্যন্ত আঘাত পান এবং স্থির করেন দেশবাসিগণ এমন দুর্ভাগ্য যাতে এড়াতে পারেন তার জন্য ধাত্রীদের শিক্ষার উপযোগী একখানি বই লিখবেন। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি ‘ধাত্রীশিক্ষা’ নামক একখানি বই লেখেন। বইটি এতই জনপ্রিয়তা লাভ করে যে, বাঙলার প্রায় প্রতিটি শিক্ষিত পরিবারেই এটি স্থানলাভ করে। এরপর তিনি আরও কয়েকখানি বই লেখেন; তাদের প্রতিটি প্রথমখানির মতো প্রয়োজনীয় ও জনপ্রিয়। চিকিৎসা ব্যবসায়েও তিনি সাফল্য লাভ করেছেন; কিন্তু চিকিৎসা-বিজ্ঞানের ওপর বই লিখে দেশবাসীর বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার উন্নয়ন ও মঙ্গলসাধন করার জন্য তিনি অধিক সময় ব্যয় করেন। তাঁর লিখিত প্রধান প্রধান পুস্তকের তালিকা :

১. ধাত্রীশিক্ষা

২. শরীর পালন

৩. উদ্ভিদ বিচার (উদ্ভিদবিজ্ঞান বিষয়ক সচিত্র পুস্তক)

৪. চিকিৎসা-বিজ্ঞান (চিকিৎসকদের জন্য বাংলায় লিখিত পুস্তক)

৫. রোগ বিচার (রোগের নিদান ও চিকিৎসা সম্পর্কিত)

৬. এশিয়াটিক কলেরার চিকিৎসা সম্পর্কিত একখানি পুস্তক

৭. ম্যালেরিয়া জ্বরে কুইনিনের প্রয়োগ সম্পর্কিত একখানি পুস্তক

৮. শিশু চিকিৎসার উপর একখানি পুস্তক

৯. চিকিৎসা কল্পদ্রুম, ১ম খণ্ড (চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিশ্বকোষ)

১০. সরল জ্বর চিকিৎসা, ১ম খণ্ড (ম্যালেরিয়া ও অন্যান্য জ্বরের চিকিৎসা বিষয়ক)

১১. শরীর পালন পুস্তকখানির ইংরেজি অনুবাদ।

নিজের পেশাগত ব্যবসায়ের দিক উপেক্ষা করে তিনি এদেশীয় অল্পশিক্ষিত চিকিৎসকদের পেশাগতভাবে তাঁর জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার অংশভাগ করেছেন। এছাড়া ইংরেজি পড়তে অক্ষম চিকিৎসকদের জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানের ওপর লেখা ইংরেজি পুস্তক থেকে আহরিত জ্ঞানও তিনি বিতরণ করেছেন। দেশবাসীর মঙ্গলকামী এমন মানুষ আমাদের পরম শ্রদ্ধার পাত্ৰ ৷

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *