2 of 2

মহারাজা রমানাথ ঠাকুর সি এস আই

মহারাজা রমানাথ ঠাকুর সি এস আই

রামমণির কনিষ্ঠ পুত্র রমানাথের জন্ম ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে। মিঃ শেরবোর্নের গ্রামার স্কুলে তাঁর ইংরেজি শিক্ষার সূত্রপাত হয়; এই বিদ্যালয়ে তিনি কয়েক বছর অধ্যয়ন করেন। তাছাড়া, বাংলা, সংস্কৃত এবং ফার্সীও তিনি বাড়িতে শেখেন। তিনি বাণিজ্যিক ও ব্যাঙ্ক সংক্রান্ত কাজ শেখেন মেসার্স আলেকজাণ্ডার অ্যাণ্ড কোম্পানির ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে। কর্মজীবন শুরু করেন ইউনিয়ন ব্যাঙ্কের দেওয়ান রূপে; উল্লেখ্য, তাঁর ভাই দ্বারকানাথ ছিলেন এই ব্যাঙ্কের অন্যতম ডিরেক্টর। জ্ঞাতি ভ্রাতা প্রসন্নকুমারের সঙ্গে তিনি ‘ইণ্ডিয়ান রিফর্মার’ পত্রিকা পরিচালনা করতে থাকেন। ‘হিন্দু’ ছদ্মনামে তিনি প্রায়ই ‘হরকরা’ ও ‘ইংলিশম্যান’ পত্রিকায় লিখতেন। ব্রিটিশ ইণ্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠায় তিনিই ছিলেন প্রধান উদ্যোক্তা। আমৃত্যু, প্রায় দশ বছর, তিনি এই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন। ১৮৬৬ সালে তিনি বেঙ্গল কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হন। এখানে তিনি জনগণের স্বার্থে পরম নিষ্ঠা সহকারে বলতেন; ফলে, সহকর্মিগণ তাঁকে রায়তদের বন্ধু নামে ডাকতেন। কয়েক বছর যাবৎ তাঁকে জনগণের প্রতিনিধি হিসাবে গণ্য করা হত। রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিটি প্রশ্নে তিনি যা বলতেন, সকলেই তার ওপর গুরুত্ব দিতেন। এমন কোন জনসভা হত না, যেখানে রমানাথের সক্রিয় ভূমিকা না থাকত। খুব একটা বাগ্মীতা না থাকলেও, তাঁর বক্তৃতা হত আন্তরিকতাপূর্ণ, সময়োপযোগী ও যৌক্তিকতাসমৃদ্ধ। ১৮৭৩-এ তাঁকে গভর্নর জেনারেলের কাউন্সিলের সদস্য মনোনীত করা হয়; ঐ সময়ই তাঁকে রাজা খেতাবে ভূষিত করা হয়। তাঁর সহকর্মিগণ কাউন্সিলে তাঁর মূল্যবান কাজের প্রশংসা করেন। ভাইসরয় (লর্ড নর্থব্রুক) ও একখানি স্বাক্ষরিত পত্রদ্বারা তাঁর গুরুত্বপূর্ণ কাজের প্রশংসা করেন। ১৮৭৫-এ মহামান্য মহারাণী তাঁকে দি মোস্ট এগজলটেড অর্ডার অব দি স্টার অব ইণ্ডিয়া খেতাবে ভূষিত করেন। মাননীয় প্রিন্স অব ওয়েলসকে বেলগাছিয়া ভিলাতে অভ্যর্থনা জানাতে যে জাতীয় অভ্যর্থনা সমিতি গটিত হয়, তাঁকে তার সভাপতি নির্বাচিত করা হয়; সমিতির সুশৃঙ্খল ও মর্যাদাপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি জানিয়ে প্রিন্স অব ওয়েলস তাঁকে একটি অঙ্গুরীয় উপহার দেন। মহামান্যা মহারাণী ‘ভারত সম্রাজ্ঞী’ পদবী গ্রহণ উপলক্ষে ভাইসরয় ও গভর্নর জেনারেল লর্ড লিটন ১৮৭৭ এর ১ জানুয়ারী রমানাথকে মহারাজা খেতাবে ভূষিত করেন। উদার শিক্ষানীতির প্রবক্তা রমানাথকে যুক্তিযুক্তভাবেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো মনোনীত করা হয়। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের তিনি অছি এবং বা কার্যনির্বাহক সমিতির সদস্য ছিলেন। কি দানে আর কি ধর্মমতে, তাঁর মধ্যে কোন সাম্প্রায়িদক বা সংকীর্ণতা ছিল না।

বহুমূত্র রোগে দীর্ঘকালে ভোগবার পর ১৮৭৭-এর ১০ জুন তিনি ঐ রোগেই মৃত্যুমুখে পতিত হন। এই দুঃখজনক ঘটনা প্রসঙ্গে লর্ড অনারেবল রায় কৃষ্ণদাস পাল বাহাদুর, সি আই ই-কে লেখেন :

প্ৰিয় মহাশয়,

কর্নেল বার্নকে লিখিত আপনার পত্রে আমাদের বন্ধু মহারাজা রমানাথ ঠাকুর বাহাদুরের মৃত্যু সংবাদ পাইয়া মর্মাহত হইলাম। ইহা কেবলমাত্র আমার ব্যক্তিগত দুঃখ নহে, আপনার ও তাঁহার অসংখ্য গুণমুগ্ধেরও শোক তাঁহাদিগের এই শোকে আমার আন্তরিক সমবেদনা জানাইতেছি। তাঁহার মৃত্যুতে সরকার ও বাংলার জনগণ জ্ঞানী, সৎ ও বিশ্বস্ত পরামর্শদাতা হারাইল। তাঁহার পরিচিত আর কেহ (বোধ হয়) তাঁহার মৃত্যুতে আমার মতো দুঃখ পায় নাই।

ইতি

ভবদীয় চির বিশ্বস্ত

(স্বা) লিটন

পুঃ : মহারাজা এমন একজন সুযোগ্য ভ্রাতুষ্পুত্র রাখিয়া গিয়াছেন, যিনি এখন ভাইসরয়ের কাউন্সিলের সদস্য জানিয়া আনন্দিত বোধ করিতেছি। অনুগ্রহপূর্বক তাঁহাকে আমার কথা বলিবেন।

মহারাজার স্মৃতিরক্ষার পদ্ধতি নির্ধারণকল্পে টাউন হল-এ একটি শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর স্যার অ্যাশলি ইডেন, কে সি এস আই। কলকাতার সম্ভ্রান্ত ইউরোপীয় ও দেশীয় ব্যক্তিবর্গ সভায় উপস্থিত ছিলেন।

মহারাজার জীবৎকালেই তাঁর পুত্রের মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে মহারাজা তিনটি পৌত্র রেখে যান। জ্যেষ্ঠ পৌত্রের মৃত্যু হয় ১৮৭৮-এর সেপ্টেম্বর।

নিচের তালিকায় ঠাকুর পরিবারের যে সকল ব্যক্তি গ্রন্থ রচনা করেছেন, তাঁদের নাম এবং তাঁদের রচিত গ্রন্থের নাম দেওয়া হল :

ভট্টনারায়ণ

১. কাশীমরণ মুক্তি বিচার

২. প্রয়োগরত্ন (কয়েকটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান বিষয়ক

৩. বেণীসংহার নাটক

৪. গোভিলসূত্র রহস্য

ধরণীধর

৫. মনুস্মৃতির ভাষ্য

বনমালী

৬. দ্রব্যশুদ্ধিপ্রকরণ রহস্য (ধর্মগ্রন্থ)

৭. ভক্তিরত্নাকর

ধনঞ্জয়

৮. নিঘণ্টু (বৈদিক শব্দের নির্ঘণ্ট)

হলায়ুধ

৯. ব্রাহ্মণ সর্বস্ব

১০. ন্যায় সর্বস্ব

১১. পণ্ডিত সর্বস্ব

১২. শিব সর্বস্ব

১৩. মৎস্য সুক্ততন্ত্র

১৪. অভিধান রত্নমালা (সংস্কৃত অভিধান)

১৫. কবি রহস্য

রাজারাম

১৬. স্রোত সিদ্ধান্ত (ধর্মীয় অনুষ্ঠান বিষয়ক)

১৭. রসগঙ্গাধর (অলঙ্কার শাস্ত্র)

জগন্নাথ

১৮. ভামিনী বিলাস (বিভিন্ন বিষয়ে কবিতাসমূহ)

১৯. রেখা গণিত (জ্যামিতি )

২০. প্রয়োগ রত্নামালা (ব্যাকরণ)

২১. মুক্তিচিন্তামণি (বেদ বিষয়ক)

২২. বিষ্ণুভক্তি কল্পলতা

পুরুষোত্তম

২৩. ভাষাবৃত্তি (পাণিনি ব্যাকরণের টাকা)

২৪. ত্রিকাণ্ডকোষ (সংস্কৃত অভিধান)

২৫. একাক্ষর কোষ (বর্ণ বিষয়ক অভিধান)

২৬. হরলতা

২৭. হরবোলী (সংস্কৃত অভিধান)

২৮. গোত্রপ্রবর দর্পণ

বলরাম

২৯. প্রবোধ প্রকাশ (ব্যাকরণ)

হরকুমার

৩০. দক্ষিণার্চ পারিজাত (তন্ত্র বিষয়ক)

৩১. হরতত্ত্ব-দিধিতি (তন্ত্র বিষয়ক)

৩২. পুরশ্চরণ-পদ্ধতি (তন্ত্র বিষয়ক)

প্রসন্নকুমার

৩৩. Table of Succession Accroding to the Hindu law of Bengal.

৩8. Heritable Right of Bundhus According to the Western School.

৩৫. বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লিখিত প্রবন্ধাদি

৩৬. বিবিধ চিন্তামণি (বৃহস্পতি বাচস্পতির মূল সংস্কৃতে রচিত মিথিলায় প্রচলিত হিন্দু আইনের সংক্ষিপ্ত টাকা)

যতীন্দ্রমোহন

৩৭. Prose and verse (English)

৩৮. বিদ্যাসুন্দর নাটক ও কয়েকখানি বাংলা প্রহসন

শৌরীন্দ্রমোহন

৩৯. ৩২ খানি গ্রন্থের রচয়িতা (শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুরের জীবনী দ্রষ্টব্য)

দেবেন্দ্রনাথ

৭১. ব্রাহ্মধর্ম (২ খণ্ডে)

৭২. সংস্কৃত ব্রাহ্মধর্ম

৭৩. বাংলা ব্রাহ্মধর্ম

৭৪. Brahma Dharma: Its Views and Principles

৭৫. The principles of Brahma Dharma Explained

৭৬. অনুষ্ঠান পদ্ধতি

৭৭. ব্রহ্মোপাসনা (এ ছাড়া কয়েকটি প্রবন্ধ)

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *