1 of 2

মহারাজা কমলকৃষ্ণ দেব, বাহাদুর

মহারাজা কমলকৃষ্ণ দেব, বাহাদুর

মহারাজা কমলকৃষ্ণ দেব, বাহাদুর শোভাবাজার রাজপরিবারের রাজা রাজকৃষ্ণ দেব, বাহাদুরের ষষ্ঠ পুত্র এবং তাঁর জীবিত পুত্রদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ। তিনিই বর্তমানে শোভাবাজার রাজপরিবারের ছোট তরফটির কর্তা। ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে তিনি জন্মগ্রহণ করেন এবং শিক্ষালাভ করেন ভূতপূর্ব হিন্দু কলেজে। কলেজে অধ্যয়ন সমাপ্ত হবার পর তিনি সাহিত্যচর্চায় আত্মনিয়োগ করেন। তাঁর প্রিয় বিষয় ছিল হিন্দুশাস্ত্র। ‘গুণাকর’ ও ‘ভাস্কর’ নামক বাংলা পত্রিকা দু’খানি তিনিই প্রকাশ করতেন। এ দু’খানি পত্রিকার প্রধান লেখকও ছিলেন তিনি। ফলে তিনি বাংলা ভাষায় বিশিষ্ট লেখক হয়ে ওঠেন। কোথায় কখন কী করতে হবে এ সম্বন্ধে তাঁর বিচারবুদ্ধি ছিল তীক্ষ্ণ, আচরণ ছিল আভিজাত্যপূর্ণ আর দানশীলতা ছিল তাঁর স্বাভাবিক। জেলা দাতব্য সমিতিতে তিনি স্থায়ী নিধি সৃষ্টি করে ১২ জন বিধবার স্থায়ী ভরণপোষণের ব্যবস্থা করেন। ত্রিপুরা জেলায় রাস্তা নির্মাণের জন্য জমি, খড়দা পৌর দাতব্য ডিসপেন্সারির জন্য বাড়ি, মেয়োহাসপাতালের বাড়ি নির্মাণে ২০০০ টাকা দান ছাড়াও বার্ষিক চাঁদা-দানের ব্যবস্থা করেন। তিনি ইন্ডিয়ান সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশনকে এককালীন ২০০ টাকা দান ছাড়াও মাসিক ২৫ টাকা চাঁদা দেবার ব্যবস্থা করেন। ওরিয়েন্টাল সেমিনারির ছাত্রদের তিনি বার্ষিক বৃত্তি দেন এবং এর গৃহ নির্মাণকল্পে ২০০০ টাকা চাঁদা দিতে চেয়েছেন। ১৮৬৬ ও ১৮৭৪ এর দুর্ভিক্ষের সময় তাঁর শোভাবাজার বাটিতে বিরাট আকারে অন্নসত্র খোলেন; তাছাড়া এই উপলক্ষে তিনি বাসন, বস্ত্র, কম্বল দান ছাড়াও চাঁদা দিতেন। পরবর্তী দুর্ভিক্ষের সময় তিনি তাঁর খড়দা বাগানবাড়িতে একটি ত্রাণ-শিবির খোলা ছাড়াও, কেন্দ্রীয় ত্রাণ ফান্ডে এককালীন ১০,০০০ টাকা দান করেন। ইন্ডিয়ান ফেমিন ফান্ডে তিনি ২,২০০ টাকা দান করেছেন।

শোভাবাজার রাজপরিবার ব্রিটিশ অধিকার কায়েম হবার সময় থেকে রাজভক্তির যে ঐতিহ্য সৃষ্টি করেছিলেন তাঁর মধ্যে সেই রাজভক্তির পরিচয় পেয়ে এবং জমিদার হিসাবে তাঁর দানশীলতার স্বীকৃতিস্বরূপে লর্ড লিটন দিল্লীতে ১৮৭৭-এর ১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ইম্পিরিয়্যাল অ্যাসেমরেজে ব্যক্তিগত সম্মান হিসাবে তাঁকে ‘রাজা’ খেতাব দ্বারা ভূষিত করেন।

১৮৭৭-এর ১৪ অগাস্ট বেলভেডিয়ার অনুষ্ঠিত দরবারে বাংলার মাননীয় লেফটেন্যান্ট গভর্নর তাঁকে নিম্নলিখিত সনদ প্রদান করেন :

‘রাজা, শিষ্টাচারবশত এবং সাধারণভাবে জনগণের মধ্যে আপনি এতদিন রাজা খেতাবেই সম্বোধিত হয়ে আসছেন; আপনার স্বদেশবাসার মঙ্গলের জন্য এখন আপনাকে সরকারীভাবে ‘রাজা’ খেতাব দ্বারা সম্মানিত করা হল। কলকাতার দাতব্য প্রতিষ্ঠানসমূহে আপনার উদার দানের পরিমাণ বহুল, আপনার সম্পদের বিরাট অংশ আপনি ডিসপেন্সারি, বিদ্যালয়, রাস্তা ও জনগণের মঙ্গলজনক অন্যান্য কাজের জন্য দান করেছেন। দৃষ্টান্তরূপে এইটুকু বললেই যথেষ্ট হবে যে বিগত দুর্ভিক্ষ ত্রাণের জন্য আপনি ১০,০০০ টাকা, আপনার দেশবাসীর মঙ্গলের জন্য সংগঠিত মেয়ো হাসপাতালের গৃহ নির্মাণের জন্য ২,০০০ টাকা এবং বর্ধমান রিলিফ ফান্ডে ১,০০০ টাকা দান করেছেন। কলকাতার এমন কোন চাঁদা তোলা হয় নি, যেখানে আপনার কাছ থেকে চাঁদা পাওয়া যায় নি–এইভাবে কলকাতার একটি পুরাতন পরিবারের দানের ঐতিহ্য আপনি বজায় রেখেছেন।‘

১৮৮০-র ২৩ ফেব্রুয়ারি তদানীন্তন রাজপ্রতিনিধি ও বড়লাট বেলভেডিয়ারে অনুষ্ঠিত দরবারে তাঁকে ‘মহারাজা’ খেতাবেও ভূষিত করেন। এই উপলক্ষে তাঁকে সনদ এবং খেলাৎ হিসাবে বড় একটি হীরের আংটি এবং প্রথানুযায়ী অন্যান্য উপহার দেওয়া হয়।

১৮৫৭-র সিপাহী বিদ্রোহের সময় মহারাজা ত্রিপুরার গঙ্গামঙ্গল জেলার জমিদাররূপে সরকারকে প্রভূতভাবে সাহায্য করেন। তাঁর দুই পুত্র : ১. কুমার নীলকৃষ্ণ এবং ২. কুমার বিনয়কৃষ্ণ। এঁদের বিবাহের সময় মহামান্য প্রধান সেনাপতি, মাননীয় ছোটলাট বাহাদুর, প্রধান বিচারপতি প্রভৃতি বহু গণ্যমান্য ইউরোপীয় ও দেশীয় ভ্রদলোক উপস্থিত ছিলেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *