1 of 2

জোড়াবাগানের দেওয়ান রাধামাধব বন্দ্যোপাধ্যায়ের বংশ

জোড়াবাগানের দেওয়ান রাধামাধব বন্দ্যোপাধ্যায়ের বংশ

২৪ পরগণা জেলার কেতিয়াটি গ্রামের রাজা রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রপৌত্র এবং রামসুন্দর বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যম পুত্র দেওয়ান রাধামাধব বন্দ্যোপাধ্যায় গ্রাম থেকে কলকাতায় বসবাসের জন্য চলে আসেন। পাটনায় সরকারী আফিম কুঠির দেওয়ান হিসাবেই তিনি নিজ ভাগ্য ফিরিয়ে নেন। ইংরেজি ও ফার্সী ভাষায় তাঁর ভাল দখল থাকায়, কলকাতার ইউরোপীয় ও ভারতীয় সমাজ তাঁকে বিশেষ শ্রদ্ধা করতেন। নিষ্ঠাবান হিন্দু, কয়েকটি দাতব্য ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। নিমতলায় তিনি একটি স্নানের ঘাট নির্মাণ করে তদানীন্তন বড়লাট লর্ড ইউলিয়াম বেন্টিঙ্কের নামে উৎসর্গ করেন এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত দেবী আনন্দময়ীর মন্দিরটি বর্তমানে কলকাতার প্রাচীনতম মন্দিরগুলির অন্যতমরূপে পরিগণিত।

মৃত্যুকালে রাধামাধব তাঁর পাঁচ পুত্র নবকৃষ্ট, গোপালকৃষ্ট, শিবকৃষ্ট এবং তারাকৃষ্টর জন্য কলকাতা ও তার আশেপাশে ভূসম্পত্তি, উড়িষ্যার কয়েকটি জেলায় জমিদারী এবং প্রভূত অর্থ রেখে যান। তাঁর প্রথম, চতুর্থ ও পঞ্চম পুত্র নিঃসন্তান ছিলেন, দ্বিতীয় ও তৃতীয়ের দুটি করে কন্যাসন্তান ছিল।

দেওয়ান রাধামাধবের চতুর্থ পুত্র শিবকৃষ্ট তাঁর অন্য ভাইদের পরেও বেঁচে ছিলেন; তিনি বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের বর্তমান কর্তা বাবু ননীমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়কে দত্তক নেন। শিবকৃষ্টবাবু কলকাতার প্রভাবশালী জমিদার হিসাবে খ্যাত ছিলেন। ইংরেজি শিক্ষা তিনি ভালই পেয়েছিলেন আর তার সঙ্গে পেয়েছিলেন ইংরেজদের মতো কর্মোদ্যম ও তেজ। কলকাতায় তিনি ঘোড়া-ও-গাড়ি-প্রিয় মানুষ হিসাবে পরিচিত ছিলেন। ঘোড়া ও গাড়িও তাঁর ছিল বহু প্রকারের। এক সময় তিনি ছিলেন কলকাতার সর্বশ্রেষ্ঠ ঘোড়সওয়ার। আর একথাও সকলেই জানেন, তিনি ফিটন হাঁকিয়ে যাবার সময় যে-কেউই তাঁর সামনে পড়ুক, তারই উপর তিনি চাবুক চালাতেন। এজন্য বহু লোকই তাঁকে অপছন্দ করতেন, অনেকে তাঁর ভীষণ শত্রুও হয়ে পড়েন। অবশ্য, উচ্চ, মুক্ত, সম্মানপূর্ণ এই জীবন থেকে শীঘ্রই তাঁর পতন হয়। নিজেরই পৈতৃক সম্পত্তির বিষয়ে জালিয়াতির অভিযোগে জড়িয়ে পড়ায় ১৪ বছরের জন্য তাঁর দ্বীপান্তর দন্ড হয়। শাস্তির পুর্ণ সময় আন্দামন কাটাবার পর, পোর্ট ব্লেয়ার থেকে ফেরার পথে দূর্ভাগ্যবশত জাহাজে তাঁর মৃত্যু হয়। শ্যামবাজারের দেওয়ান কৃষ্টরাম বসুর মতো তিনি নির্বাসনের পূর্বে হুগলী জেলার মাহেশের রথযাত্রার ব্যয় নির্বাহের যথোপযুক্ত ব্যবস্থা করে গিয়েছিলেন; তাঁর দত্তক পুত্র ননীমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় সৎ চরিত্রের মানুষ; যুবক হলেও ইতিমধ্যে তিনি বাংলা, সংস্কৃত, ইংরেজি ও ফার্সী ভাষায় ব্যুৎপত্তি লাভ করেছেন। তিনি হিন্দু ধর্ম শাস্ত্রের বিধি মনে চলেন। তিনি দুই পুত্রের পিতা –দুজনই এখনও শিশু।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *