1 of 2

পারশ্যের কলিকাতাস্থ কনসাল, মানকজী রুস্তমজী মহাশয়

পারশ্যের কলিকাতাস্থ কনসাল, মানকজী রুস্তমজী মহাশয়

যে-সকল বিদেশী ভারতবর্ষকে আপন দেশ করে নিয়ে এখানেই স্থায়ীভাবে বাস করছে, তাদের মধ্যে পার্শী সম্প্রদায় বুদ্ধি, ব্যবসায়িক উদ্যোগ এবং জনসেবায় অগ্রগণ্য স্থান করে নিয়েছে। বোম্বাই-কেন্দ্রিক এই সম্প্রদায়টির উন্নতি ও অগ্রগতির ইতিহাসের সঙ্গে বোম্বাই প্রদেশের ইতিহাসও মোটামুটিভাবে জড়িত। কলকাতাকেও, অবশ্য, এই সম্প্রদায় উপেক্ষা করেনি। আজ (১৮৮১) থেকে প্রায় অর্ধশতাব্দী পূর্বে ভারতের এই (পূর্ব) অঞ্চলের পার্শী সম্প্রদায়ের সর্বজনস্বীকৃত নেতা রুস্তমজী কাওয়াসজীর নাম এই প্রাসাদ নগরীতে সর্ব-সম্প্রদায়ের মানুষের কাছেই বিশেষ পরিচিত ছিল। এমন কোন আন্দোলন সে যুগে হয়নি যাতে রুস্তমজী নেতারূপে অংশ না নিতেন। তাঁর বিপুল বিত্ত সবসময় সাধারণভাবে দেশবাসী ও কোন ব্যক্তি বিশেষে দুঃখদুর্দশা দূর করবার জন্য উন্মুক্ত থাকত। তিনি ছিলেন অতিথিপরায়ণ। আজ ভারতের ছোটবড় শহরে ভারতীয় ও ইউরোপীয়গণের মধ্যে মেলামেশার যে পরিবেশ গড়ে উঠেছে, এতেও তাঁর সেবা- পরায়ণতার দান বড় কম নয়। ভারত-চীন বাণিজ্যের ক্ষেত্রে তাঁর নেতৃত্বাধীন রুস্তমজী কাওয়াসজী অ্যান্ড কোং এই শহরের অগ্রগণ্য ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ছিল। কিন্তু এই শতাব্দীর চারের দশকে যে অর্থনৈতিক সঙ্কট বহু ব্যবসায়ীকে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে, তার প্রভাব থেকে এই প্রতিষ্ঠানটিও অব্যাহতি পায়নি। বর্তমান প্রবন্ধের আলোচ্য ব্যক্তি মানকজী রুস্তমজী তখন এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক।

পিতার জীবিতকালেই মানকজী চীনের সঙ্গে বাণিজ্যসূত্রে কয়েক বছর চীনে অবস্থান করেন এবং চীন কলকাতা ও বোম্বাইয়ের মধ্যে সে যুগে পরিচালিত ব্যবসা বাণিজ্যে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে থাকেন। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে, তাঁর পিতার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানটি চীনের সঙ্গে ব্যবসায়ের জন্য অনেকগুলি জাহাজের মালিক ছিল। পিতার ব্যবসায়ের অংশীদাররূপে ১৮৩৭-এ মানকজী কলকাতা আসেন; তখন থেকেই তিনি এখানকার অধিবাসী। তাঁর চরিত্রগুণ, তাঁর সন্দেহাতীত রাজভক্তি এবং সমাজসেবা তাঁকে পার্শী সম্প্রদায়ের নেতারূপে সহজেই প্রতিষ্ঠিত করেছে– সমাজসেবামূলক কোন কাজে অগ্রণী হতে তিনি পশ্চাৎপদও নন। তাঁর অনুসন্ধিৎসা, নিরপেক্ষতা এবং নির্ভুল বিচারবুদ্ধির জন্য তিনি সর্বশ্রেণীর জনগণের শ্রদ্ধা অর্জন করেছেন; এই কারণেই বিপদে আপদে তাঁর পরামর্শ এদেশীয় বন্ধুবান্ধবদের নিকট অপরিহার্য; তাঁদের বিবাদ-বিরোধের নিষ্পত্তি করবার জন্য তাঁকে মধ্যস্থতাও করতে হয়। বর্তমানে ব্যবসায় বাণিজ্যে তাঁর আর বিশেষ আগ্রহ না থাকলেও, তিনি এখনও বহু জয়েন্ট-স্টক কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত, তার বেশ কয়েকটির তিনি ডিরেক্টরও।

মানকজী রুস্তমজী কলকাতা ও তার উপকণ্ঠসমূহের অন্যতম জাস্টিস অফ দি পীস, অনারারী ম্যাজিস্ট্রেট এবং মিউনিসিপ্যাল কমিশনার। তিনি পারশ্যের কলকাতাস্থ দূতও। তিনি প্রথম ভারতীয় যাঁকে কলকাতার শেরিফ পদে নিযুক্ত করে সম্মানিত করা হয়। ১৮৪৭-এ তিনি এই পদে অধিষ্ঠিত হন।

মানকজী রুস্তমজীর দুই পুত্র : হীরাজীভাই মানকজী এবং কাওয়াসঙ্গী মানকজী রুস্তমজী– দুজনেই বিশেষ বুদ্ধিমান। জ্যেষ্ঠ হীরাজীভাই কলকাতার জাস্টিস অফ দি পীস এবং অনারারী ম্যাজিস্ট্রেট। কলকাতার উচ্চ সমাজের উল্লেখযোগ্য ও প্রতিনিধিস্থানীয় এই পরিবারটির অতি সংক্ষিপ্ত এই বিবরণ শেষ করবার আগে দি ইন্ডিয়ান শ্যারিভারি পত্রিকায় মিঃ বাকের মন্তব্য উদ্ধৃত না করে পারছি না। তিনি বলেছেন :

‘যেমন চীনা যুদ্ধের সময় এবং ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি তাঁর সমস্ত সম্পদ সরকারের হাতে তুলে দিয়েছিলেন, তেমনি আজও তাঁর মহাসমৃদ্ধির দিনের মতই, দুঃস্থের দুঃখ দূর করতে তাঁর ভান্ডার সদা উন্মুক্ত; আজও তিনি বন্ধুদের বিবাদ-বিরোধের নিষ্পত্তি করে থাকেন এবং আজও তিনি তাঁর পরিচিত জনের শ্রদ্ধা ভক্তি পেয়ে থাকেন।…

কলকাতা যা ছিল এবং আজ যা হয়েছে, তার যোগসূত্ররূপে এখনও যে সামান্য কয়েকজন বর্তমান, তিনি তাঁদের অন্যতম। আশা করব, দীর্ঘকাল জীবিত থেকে তিনি তাঁর মূল্যবান অভিজ্ঞতা দিয়ে আমাদের উপকৃত করবেন।’
Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *