1 of 2

রেভারেন্ড কৃষ্টমোহন ব্যানার্জী, এল এল ডি

রেভারেন্ড কৃষ্টমোহন ব্যানার্জী, এল এল ডি

বাবু জীবনকৃষ্ট ব্যানার্জীর পুত্র রেভারন্ড কৃষ্টমোহন ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন ।

তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা হয় পাঠশালায়; তারপর হেয়ার স্কুলে ভর্তি হন । এখানে তিনি কয়েক বছর অধ্যয়ন করেন। ১৮২৪-এ তিনি হিন্দু কলেজে ভর্তি হন; এখানে ডিরোজিওর কাছে পড়ে অল্পকালের মধ্যে তিনি ইংরেজি সাহিত্যে বিশেষ ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। ডিরোজিও তখন ঐ প্রতিষ্ঠানের চতুর্থ শিক্ষক। হিন্দুদের বহু কুসংস্কার, হিন্দুসমাজের অসংখ্য বাধানিষেধ এবং খাদ্যে বাছবিচার দূর করতে অন্যান্য কয়েকজন সহপাঠীর সঙ্গে কৃষ্টমোহনও ডিরোজিওকে সাহায্যে করতে এগিয়ে আসেন । ডিরোজিও এই সব দুস্কর্মের মূল বিবেচনা করে, কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁকে বরখাস্ত করেন । এতে কিন্তু তাঁর ‘দুষ্কার্যের অবসান হল না; তিনি একটি একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন, সেখানে এবং তাঁর নিজের বাড়িতেও তাঁর ছাত্র ও শিষ্যরা মিলিত হয়ে ‘হিন্দুধর্ম বিরোধী’ তাঁর মতবাদ আত্মস্থ করতেন । জাতীয় বিশ্বাসের উপর প্রচন্ড আঘাত হানার ব্যাপারে, শোনা যায়, কৃষ্টমোহন সক্রিয় অংশ নিতেন ।

১৮২৯-এ কৃষ্টমোহন হেয়ার সাহেবের স্কুলে শিক্ষকরূপে নিযুক্ত হন, এর তিন বছর পর তিনি যীশু খ্রিস্টের ধর্ম গ্রহণ করেন । ১৮৩৭-এ তাঁকে খ্রিস্টধর্মের প্রচারক নিযুক্ত করা হয় । সাফল্যের সঙ্গে তিনি ১৫ বছর এই কাজ করার পর, বিশপস্ কলেজে শিক্ষকরূপে যোগদান করেন। এখানে তিনি ১৬ বছর শিক্ষকতা করেন; তাঁর কাজে কর্তৃপক্ষ এবং ছাত্রবর্গ সন্তুষ্ট থাকতেন– ছাত্রগণ তো তাঁর প্রতি একান্তভাবে অনুরক্ত হয়ে ওঠে । মানব-প্রেমী, হিন্দুদের একান্ত সুহৃদ ডেভিড হেয়ারের মৃত্যুর পর তাঁর স্মরণ-সভায় কৃষ্টমোহন সক্রিয় অংশ নেন ।

১৮৫৮তে তাঁকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম ফেলো নিয়োগ করা হয় এবং তিন বছর তিনি ছিলেন ফ্যাকালটি অব আর্টসের সভপতি । তিনি কিছুকাল ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের সভ্য এবং বেথুন সোসাইটির সভাপতি ছিলেন । বর্তমানে তিনি কলকাতা পৌরসভা এ অন্যান্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সভ্য। তাঁর গভীর সাহিত্যজ্ঞান ও ইংরেজি ও সংস্কৃতে উচ্চশ্রেণির কয়েকখানি পুস্তক রচনার জন্য ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে এল এল ডি উপাধিদ্বারা ভূষিত করেন । ১৮৪১- ৪২ এ তিনি স্ত্রীশিক্ষার উপর একখানি বই লেখেন; ১৮৬১-৬২তে প্রকাশ করেন তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যকীর্তি ‘বড়দর্শন সংগ্রহ’। রঘুবংশ, কুমারসম্ভব, ভট্টিকাব্য, ঋগ্বেদ প্রভৃতি গ্রন্থগুলি তিনি স্বীয় টীকাসহ প্রকাশ করেন । এছাড়া, কতগুলি বাংলা পুস্তকও তিনি রচনা করেছেন। বর্তমান বাংলায় ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পন্ডিতরূপে তিনি গণ্য

এযুগের প্রায় সকল উল্লেখযোগ্য সভাসতিমির সঙ্গে তিনি যুক্ত; এদের প্রতিটির কাজকর্মেই তিনি সক্রিয় অংশ নেন । বর্তমানে তাঁর বয়স ৬৮ বছর, কিন্তু এ বয়সেও তিনি দেশের মঙ্গলের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন। সমাজ-সেবার প্রবৃত্তি ও শান্ত প্রকৃতির জন্য তিনি সর্বজনশ্রদ্ধেয় ।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *