চ. উৎস ও কৃতজ্ঞতা

চ. উৎস ও কৃতজ্ঞতা

উৎস

অধ্যায় ১: ধূমকেতুর রাখাল ছেলে।

ক্যাপ্টেন চ্যান্ডলারের শিকারভূমির ব্যাপারটা আমি আবিষ্কার করেছি ১৯৯২ সালে। দেখুন, জেন এক্স লু ও ডেভিড সি জেউইট লিখিত ‘দ্য কুইপার বেল্ট (সায়েন্টিফিক আমেরিকান, মে, ১৯৯৬)।

অধ্যায় ৪ : দৃষ্টি যায় দূরে

জিও স্টেশনারি অর্বিট (জি ই ও) তে পৃথিবীর চারধারে একটা আঙটি তৈরি করা যেতে পারে বিষুবিয় অঞ্চলে গড়ে তোলা কয়েকটা আকাশভেদী টাওয়ারের মাধ্যমে। প্রাথমিকভাবে ধারণাটা একেবারে অযৌক্তিক মনে হলেও বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা আছে। এটাই সেন্ট পিটার্সবার্গ ইঞ্জিনিয়ার ইউরি আর্টমুটানভ প্রস্তাবিত ‘স্পেস এলিভেটরের প্রবর্ধিত ধারণা। এ বিজ্ঞানীর সাথে আমার দেখা করার সৌভাগ্য হয়েছিল ১৯৮২ সালে, তখন তার সিটির নাম ছিল স্নি।

ইউরি নির্দেশ করেন, তাত্ত্বিকভাবে পৃথিবী ও বিষুবের উপর ভাসতে থাকা একটা স্যাটেলাইটের মধ্যে তারের সংযোগ দেয়া সম্ভব- যদি কৃত্রিম ভূ-স্থির উপগ্রহটা জি ই ও তে থাকে, বর্তমানের বেশিরভাগ কমনিকেশন স্যাটেলাইট যে উচ্চতায় আছে। শুরুতে একটা স্পেস এলিভেটর (ইউরির কথা অনুযায়ী কসমিক ফানিকুলার) বানানো সম্ভব যেটা জি ই ও পর্যন্ত ইলেক্ট্রিক্যাল এনার্জির সাহায্যে বস্তু নিয়ে যেতে পারবে। যাত্রার বাকি অংশটুকুর জন্যই শুধু রকেট প্রোপালশন প্রয়োজন।

পৃথিবীর বুক থেকে রকেট ছাড়তে যে ঝুঁকি, পরিবেশ দূষণ আর শব্দ-কম্পনের ভীতি আছে তার হাত থেকে বাঁচার জন্যও এটা করা যায়। করা যায় অনেক খরচ বাঁচানোর জন্য। বিদ্যুৎ সস্তা। একজন মানুষকে অর্বিটে পৌঁছে দিতে খরচ পড়বে সাকুল্যে মাত্র একশ ডলার। রাউন্ড ট্রিপের জন্য খরচ? মাত্র দশ ডলার। আবার নিচের দিকে যাত্রা হলে বেশিরভাগ খরচই উঠে আসবে, কারণ এ্যানার্জি গেইন করা যাবে। (আর টিকিটের সমস্ত রাহা-খরচ চলে আসবে খাবার দাবার, ইনফ্লাইট মুভি থেকেই। ভাবা যায়, মাত্র হাজারখানেক ডলার দিয়ে জি ই ও তে গিয়ে আবার ফিরে আসা সম্ভব!)

তত্ত্বে কোনো ত্রুটি নেই, কিন্তু এমন পদার্থ পাব কী করে যেটা পৃথিবীর বুক থেকে ছত্রিশ হাজার কিলোমিটার দূর পর্যন্ত যেতে পারবে বাড়তি অ নিয়েও? ইউরি তার পেপার লেখার সময় এই শক্তি দিতে পারত মাত্র একটা বস্তু। ক্রিস্টালাইন কার্বন, আমরা যাকে হিরা নামে চিনি। দূর্ভাগ্যবশত খোলাবাজারে এত মেগাটন হিরা পাওয়া কল্পনামাত্র। ২০৬১: ওডিসি ঐ তে আমি দেখাই যে এ হিরা আসবে বৃহস্পতির কেন্দ্রবিন্দু থেকে। আর দ্য ফাউন্টেইনস অব প্যারাডাইস এ আরো সহজ উৎস নির্দেশ করি- অর্বিটিং ফ্যাক্টরি, যেগুলোকে জিরো গ্র্যাভিটিতে হিরা ফলানো সম্ভব।

১৯৯২’র অগাস্টে স্পেস এলিভেটরের পথে প্রথম পদক্ষেপ নেয়া হয়। শাটল আটলান্টিসে একুশ কিলোমিটার উপর পর্যন্ত পেলোড তোলার চেষ্টা করলেও মাত্র কয়েকশ মিটার গিয়েই পেয়িং আউট মেকানিজম জ্যাম হয়ে পড়ে।

আমি খুব খুশি হয়েছিলাম আটলান্টিসের কুরা অবিটাল প্রেস কনফারেন্সে দ্য ফাউন্টেন অব প্যারাডাইস তৈরি করায়। মিশন স্পেশালিস্ট জেফ্রি হফম্যান অটোগ্রাফ করা কপি দিয়েছিলেন আমাকে পৃথিবীতে ফিরে আসার পর।

১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি। দ্বিতীয় পদক্ষেপ। আরো একটু বেশি সফল। পেলোড শেষ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। ইনস্যুলেশনের ভুলের কারণে মালামাল শেষ পর্যও তোলা যায়নি। (আশা করি এটা সৌভাগ্যজনক দূর্ঘটনা, কারণ বস্ত্রপাতের সময় ঘুড়ি ওড়ানোর চেষ্টার মতো কোনোকিছু ঘটেনি।)।

অন্যদিকে কার্বনের তৃতীয় রূপ বাকমিন্সটারফুলারেন (সি সিক্সটি) স্পেস এলিভেটরের সম্ভাবনাকে আরো জোরদার করে। ১৯৯০ সালে রাইস ইউনিভার্সিটি ও হিউস্টনের একদল কেমিস্ট কার্বন সিক্সটির নলাকার ফর্ম আবিষ্কার করেন হিরার চেয়েও অনেক শক্ত বও। দলনেতা ডক্টর স্মলি দাবি করেন বিব্রহ্মান্ডে এর চেয়ে শক্ত আর কোনো বস্তুর অস্তিত্ব থাকা সম্ভব নয়। আরো বলেন, স্পেস এলিভেটর তৈরি হবে এটা দিয়েই। (আমি জেনে খুব খুশি যে ডক্টর স্মলি ১৯৯৬ সালের নোবেলপ্রাইজ ছিনিয়ে এনেছেন এ কাজের জন্য, কেমিস্ট্রিতে।)

বাকমিনিস্টার ফুলার ১৯৮৩ সালে মারা যান। বাকিবল আর বাকিটিউব দেখেননি কখনো, যা তাকে মৃত্যুর পর আরো অনেক খ্যাতি এনে দেন। পৃথিবী ঘোরার পথে তিনি সস্ত্রীক শ্রীলঙ্কায় এসেছিলেন, আমি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দ্য ফাউন্টেইনস অব প্যারাডাইসের জায়গাগুলো দেখিয়েছি। পরে আমি একটা বারো ইঞ্চি এলপি রেকর্ড করেছিলাম সেটার, তিনি ভিনোট লেখেন। সেখানে আরো কয়েকটা কথা ছিল যা আমাকে নক্ষত্ৰনগরীর পথে উৎসাহ যোগায় :

১৯৫১ সালে আমি পৃথিবীর চারপাশে, বিষুবিয় অঞ্চলের উপর একটা মুক্ত ভাসমান রিঙের কথা লিখেছিলাম। এ হলোব্রিজের ভিতরে পৃথিবী ঘুরতে থাকবে।

আমার কোনো সন্দেহ ছিল না মানবজাতি যদি এমন কোনো বিনিয়োগের কথা মাথায় রাখে, তাহলে স্টারসিটি বানানো সম্ভব। তাহলে মানুষের পরবর্তী কলোনিগুলো, যেমন মঙ্গল ও চাঁদ, যেখানে গ্র্যাভিটি কম, সেখান থেকে পৃথিবীতে আসার পথে কম গ্র্যাভিটির স্থান নক্ষত্ৰনগরীতে প্রতি নেয়া যাবে। আবার বহির্জাগতিক সমস্ত রকেট্রির কাজে লাগবে জায়গাটা পৃথিবীকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করবে, একই সাথে যাতায়াতের খরচ কমে যাবে। (আশা করি সেসব দিনে মাঝে মাঝে কেপ কেনেডিতে মানুষকে দেখানোর জন্য বিশেষ বিশেষ সময়ে উড্ডয়নের আয়োজন করা হবে। মানুষ তখন মহাকাশ যুগের প্রথম দিকগুলোর কথা ভেবে উদ্বেলিত হবে।)

অবশ্যই, বেশিরভাগ জায়গা থাকবে খালি, সামান্য কোথাও কোথাও থাকবে প্রযুক্তিগত ঘাঁটি। কারণ প্রতিটা টাওয়ার হবে এক কোটি স্কাইস্ক্র্যাপার ফ্লোরের সমতুল্য। যদি পুরো জায়গাটা ভরে যায়, তাহলে পৃথিবীর বিশাল, অকল্পনীয় জনসংখ্যা নিয়েও ভাবতে হবে না। মাতা বসুমতাঁকে রাখা যাবে আর সব জীবের ন্য।

অধ্যায় ৫: শিক্ষা

১৯ জুলাই ১৯৯৬’র স্থানীয় পত্রিকা দেখে অবাক হয়েছিলাম। ব্রিটিশ টেলিকমের আর্টিফিশিয়াল লাইফ টিমের প্রধান ডক্টর ক্রিস উইন্টার বলেন, আমি এ অধ্যায়ে যে ক্ষমতাসম্পন্ন মেমোরি ডিভাইসের কথা বলেছি সেটা চলে আসবে ত্রিশ বছরের মধ্যে! (১৯৫৬ সালের উপন্যাস দ্য সিটি এ্যান্ড দ্য স্টার্স এ আমি এ সংখ্যাটা বিলিয়ন বছর পরে দিয়েছিলাম… কল্পনার কী ব্যর্থতা!) ডক্টর উইন্টার বলেন এর ফলে আমরা, একজন মানুষকে শারীরিকভাবে, মানসিকভাবে, আবেগিকভাবে আবার তৈরি করতে পারব। ধারণা করেন এতে মেমোরি লাগবে মোটামুটি দশ টেরাবাইট (টেন টু দ্য পাওয়ার পার্টিন বাইট), পেটাবাইটের (টেন টু দ্য পাওয়ার ফিফটিন বাইট) কথা বলেছিলাম আমি, তার চেয়ে দু ধাপ নিচেই।

ভেবেছিলাম ডক্টর উইন্টারের নামে ডিভাইসটার নাম দেব, এতে আরো বিতর্ক বাড়তে পারে। দেখুন নবম অধ্যায়ের নোট।

আমার বিশ্বাস আমি তৃতীয় অধ্যায়ে বর্ণিত পাম-টু-পাম ট্রান্সফার ইনফরমেশন ধারণাটা দিয়েছি। দেখা গেল নিকোলাস নিগ্রোপটে আর তার এম আই টি মিডিয়া ল্যাব এ নিয়ে অনেক বছর ধরেই গবেষণা করছে…

অধ্যায় ৭: ডিব্রিফিঙ

জিরো পন্টিং ফিল্ড (কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন্স বা ভ্যাকুয়াম এ্যানার্জি নামেও পরিচিত) এর শক্তি যদি একবার আবিষ্কার করা যায় তাহলে আমাদের সভ্যতার খোল নলচে পাল্টে যাবে। শক্তির বর্তমানে ব্যবহৃত সব উৎস- তেল, কয়লা, নিউক্লিয়ার, হাইড্রো, সোলার একেবারে অকিঞ্চিৎকর হয়ে পড়বে। একই সাথে পরিবেশ নিয়ে আমাদের চিন্তারও অবসান ঘটবে। শুধু একটা চিন্তা আসবে মাথায় তাপ দূষণ। সব এ্যানার্জি সবশেষে তাপে পরিণত হয়। সবার হাতে যদি কয়েক মিলিয়ন কিলোওয়াট নিয়ে ছেলেখেলা করার সুযোগ চলে আসে তাহলে পৃথিবীটা দ্রুত শুক্রের পথ ধরবে- কয়েকশত ভিগ্রি বেড়ে যাবে তাপমাত্রা।

যাক, চিত্রের ভাল একটা দিকও আছে, পরবর্তী বরফযুগের চিন্তা থাকবে না, যা ঠেকানোর কোনো উপায় নেই। (সভ্যতা আসলে বরফযুগগুলোর মাঝের বিরতি উইল ডুরান্ট, দ্য স্টোরি অব সিভিলাইজেশন।)

এমনকি এখন যে আমি লিখছি, তখনো অনেক প্রতিযোগী ইঞ্জিনিয়াররা পৃথিবীজুড়ে এ শক্তিকে দখল করার আশা করছেন, দাবি করছেন। ফিজিসিস্ট রিচার্ড ফিম্যান বলেছিলেন একটা কফির মগে যেটুকু এ্যানার্জি থাকবে তা পৃথিবীর সব সাগরের পানিকে উবিয়ে দিতে পারবে।

এ চিন্তা একটা সিদ্ধান্তে নিয়ে আসে। নিউক্লিয়ার এ্যানার্জি ড্যাম্প হওয়া ম্যাচক্সের সমতুল্য।

আর কতগুলো সুপারনোভা, অবাক হয়ে ভাবি মাঝে মাঝে, আসলে ইন্ডাস্ট্রিয়াল এ্যাভিডেন্ট

অধ্যায় ৯ : স্কাইল্যান্ড

স্টারসিটির যোগাযোগের সবচে বড় সমস্যা হল দূরত্ব। পরের টাওয়ারে থাকা কোনো বন্ধুর সাথে আপনি যদি দেখা করতে চান (ভার্চুয়াল রিয়েলিটি যতই সর হোক না কেন কখনোই ক্যুনিকেশন সরাসরি স্পর্শের জায়গা নিতে পারবে না…) তাহলে যাত্রাটা পৃথিবী-চাঁদের যাত্রার মতো হবে। দ্রুততম এলিভেটরে যেতেও কয়েকদিন লেগে যাবে, ঘন্টা কয়েক নয়। এসব দ্রুতি লো গ্র্যাভিটির মানুষদের জন্য সমস্যাসঙ্কুল।

‘ইনার্শিয়ালেস ড্রাইভের’ ধারণাটা এমন এক প্রোপালশন সিস্টেমকে নির্দেশ করে যা মানুষের দেহের প্রতিটা অণুর উপর কাজ করবে। এ ধারার জনক সম্ভবত স্পেস অপেরার মাস্টার ই ই স্মিথের কাছ থেকে এসেছে ১৯৩০ সালে।

আপনি যদি পৃথিবীর কাছাকাছি মুক্তভাবে পড়তে থাকেন (বাতাসের প্রভাবকে পাশ কাটিয়ে) তাহলে আপনার গতি বাড়বে সেকেন্ডে দশ মিটারের একটু নিচে, প্রতি সেকেন্ডে। কিন্তু তখন ওজনহীনতার অনুভুতি হবে যদিও দেড় মিনিটের মধ্যে গতি বেড়ে যাচ্ছে এক কিলোমিটার।

এ কথাও সত্যি, বৃহস্পতির বুকে মুক্তভাবে পড়তে থাকলে (পৃথিবীর টানের চেয়ে মাত্র আড়াইগুণ বেশি) বা সাদা বামন অথবা নিউট্রন স্টারের কাছে পড়তে থাকলেও (শত কোটি গুণ বেশি) আপনি কিছুই অনুভব করবেন না। কিন্তু সে সময় একটা সমস্যা হবে, শরীরের প্রতিটা বিন্দুতে একই ধরনের কাজ করবে না আকর্ষণ ক্ষমতা, ফলে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে দেহ। আরো বিস্তারিত দেখুন আমার ছোটগল্প নিউট্রন টাইড’ (স্য উইন্ড ফ্রম দ্য সানএ)।

একটা ইনার্শিয়ালেস ড্রাইভ,’ যেটা নিয়ন্ত্রণযোগ্য গাড়িটি ফিল্ড হিসাবে কাজ করবে, তার ব্যাপারে সায়েন্স ফিকশনের পাতার বাইরে এ পর্যন্ত কখনো সিরিয়াসলি আলোচনা হয়নি। কিন্ত ১৯৯৪ তিন আমেরিকান ফিজিসিস্ট ঠিক এ কাজটাই করেন, মহান রাশিয়ান পদার্থবিদ আন্দ্রে শাখার ধারণার উপর ভর করে।

বি হাইশ্চ, এ রুয়েডা এবং এইচ ই পুটহফ লিখিত ইনার্শিয়া এজ এ জিরোপয়েন্ট ফিল্ড লরেও ফোর্স একদিন মাইলফলক পেপার হিসাবে বিবেচিত হবে। কল্পকথায় আমি সেটাই ব্যবহার করেছি। এটা এমন এক গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার কথা তুলছে যেটা সম্পর্কে বিজ্ঞানীরাও কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলবেন, ‘এভাবেইতো সৃষ্টিজগৎ তৈরি।

এইচ, আর ও পি যে প্রশ্নটা তুলেছেন তা হল, কোন ব্যাপারটা একটা বস্তুকে র (বা ইনার্শিয়া) দেয় যার কারণে এটাকে চলা শুরু করতে চেষ্টা করতে হয় এবং আসল অবস্থায় ফিরে আসতে আবার ঠিক ততটুকু কষ্ট করতে হয়?

তাদের কাঙ্ক্ষিত উত্তর নিন্দ্র করে বিচিত্র এবং পদার্থবিদদের আওতার বাইরে খুব কম জানা একটা ব্যাপারের উপর। তথাকথিত শূন্য এলাকা আসলে টগবগিয়ে ফুটতে থাকা শক্তির প্রবাহ জিরো পয়েন্ট ফিল্ড (আগে উল্লিখিত)। এইচ আর ও পি প্রস্তাব করেন, ইনার্শিয়া ও গ্র্যাভিটি দুইটাই ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক অবস্থা, এ ক্ষেত্রগুলোর সাথে পারস্পরিক প্রতিক্রিয়ার ফলে সৃষ্টি হয়।

অসংখ্য চেষ্টা করা হয়েছে, একেবারে ফ্যারাডের আমলে ফিরে যেতে হয়েছে মহাকর্ষ আর চৌম্বকত্বকে মিলাতে গিয়ে। অনেক পরীক্ষার পরই সাফল্যের দাবি এসেছিল, কোনোটাই আবার যাচাই করে প্রমাণিত হয়নি। যদি এইচ আর ও পির তত্ত্ব প্রমাণিত হয় তাহলে এন্টি গ্র্যাভিটি স্পেস ড্রাইভ বানানো সম্ভব হবে; এমনকি ইনার্শিয়ার মতো বিশাল ব্যাপারকে নিয়ন্ত্রণও সম্ভব। দারুণ কিছু ব্যাপার ঘটতে পারে ফলশ্রুতিতে- ধরা যাক আপনি কাউকে একটু স্পর্শ করলেন, সাথে সাথে সে ঘন্টায় কয়েক হাজার কিলোমিটার গতিতে সরে যাবে, দেয়ালের সাথে ধাক্কা খেয়ে আবার ফিরে আসবে মাত্র কয়েক মিলিসেকেন্ডের ব্যবধানে। সুসংবাদ হচ্ছে, তখন যানবাহনের দূর্ঘটনা অসম্ভব হয়ে পড়বে অটোমোবাইল এবং যাত্রিরা যে কোনো গতিতে পরস্পরের সাথে ধাক্কা খেলেও বিন্দুমাত্র ক্ষতি হবে না।

ওজনহীনতার ব্যাপারটা আজকে শুধু স্পেস মিশনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও পরবর্তী শতাব্দিতে লাখ লাখ ট্যুরিস্ট ব্যাপারটা উপভোগ করবে। আমাদের গ্র্যান্ডপ্যারেন্টদের কাছে কিন্তু অকল্পনীয় স্বপ্ন ছিল এসব। কিন্তু জড়তার আংশিক বা পুরোপুরি বিলোপ ভিন্ন ব্যাপার, হয়ত একেবারেই অসম্ভব। (১৯৯৬ সালের সেপ্টেম্বরে ফিনল্যান্ডের কিছু বিজ্ঞানী দাবি করেন, একটা দুরন্ত সুপারকভাক্টিং ডিস্কের উপর সামান্য [১% এরও কম গ্র্যাভিটি কমার ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছেন। মিউনিখের ম্যাক্স প্যাক ইন্সটিটিউট এমনি ফলাফলের ইঙ্গিত দিয়েছিল। যদি একথা সত্যি হয়ে থাকে তাহলে অনেক প্রতিক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে।)

চিন্তাটা ভাল। টেলিপোর্টেশনের সমান ব্যাপার হবে সেটা। আপনি পৃথিবীর বুকে যে কোনো জায়গায় চলে যেতে পারবেন এক সেকেন্ডের ব্যবধানে। সত্যি বলতে কী, স্টারসিটি এছাড়া কী করে কাজ করবে তা জানি না… ।

এখানে, বিশেষত এ উপন্যাসে আমি একটা কথাকে সত্যি ধরে নিয়েছি আইনস্টাইনের কথা মতো, কোনো কিছুই আলোর চেয়ে বেশি গতিতে যেতে পারবে না। সাম্প্রতিককালে প্রকাশিত বেশ কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ ও যুগান্তকারী গাণিতিক পেপারে এ সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। অন্যদিকে সায়েন্স ফিকশন লেখকরা এখনো আশা করছেন, গ্যালাক্টিক হিচহিকারদের এ বিরক্তিকর সমস্যার মুখে পড়তে হবে না।

সব মিলিয়ে, আমি আশা করি তাদের কথাই ঠিক। কিন্তু এখানে মৌলিক কিছু সমস্যা দেখা দেয়। যদি এফ টি এল সব হয়, এত সব হিচহিকাররা কোথায়? অs ত ট্যুরিস্টদের দেখা পাওয়া যেত।

একটা জবাব হল, কোনো অনুভূতি সম্পন্ন ই টি বা ভিনগ্রহী ইন্টারস্টেলার ভেহিক্যল বানাবে না, যে কারণে আমরা কয়লা চালিত উড়োজাহাজ বানাই না- সে কারণেই কাজটা করার মতো আরো ভাল উপায় আছে।

.

একজন মানুষকে প্রকাশ করার জন্য যে সামান্য বিট প্রয়োজন, অন্য কথায় তার সারা জীবনের সমস্ত স্মৃতি ও অভিজ্ঞতা ধরে রাখতে যা প্রয়োজন সেটা নিয়েই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায় রয়্যাল এ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির ত্রৈমাসিক জার্নালের ৩৫ তম বছরের দ্বিতীয় সংখ্যায় [জুন ১৯৯৪] প্রকাশিত লুইস কে শেফারের ‘মেশিন ইন্টেলিজেন্স, দ্য কস্ট অব ইন্টারস্টেলার ট্র্যাভেল এ্যান্ড ফার্মিস প্যারাডক্স’ শীর্ষক জার্নাল থেকে। এ পেপার নিঃসন্দেহে প্রতিষ্ঠানটার মন অস্থির করা লেখাগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ। এখানে দেখানো হয় পুরোপুরি সুস্থ, স্মৃতিসম্পন্ন একশ বছর বয়সী মানুষের স্মৃতি ধরে রাখা যাবে এক পেটাবিটে। এমনকি আজকের দিনের অপটিক্যাল ফাইবারগুলোও এক মিনিটের মধ্যে এ তথ্য আদানপ্রদান কতে পারবে।

স্টারট্রেকের ট্রান্সপোর্টার ৩০০১ সালেও আবিকৃত হবে না, এটাই মনে করি আমি। মহাজাগতিক কোনো ট্যুরিস্ট এখনো এখানে আসেনি এভাবে, তার একটাই কারণ, পৃথিবীর বুকে এখনো ট্রান্সপোর্টারের রিসিভার বসানো হয়নি।

অধ্যায় ১৫: শুক্রের পথে

এ অধ্যায়ের কৃতীত্ব এ্যাপোলো ১৫’র কুদের দিতে পেরে আমার ভাল লাগছে। চাঁদ থেকে ফিরে এসে তারা আমাকে লুনার মডিউল ফ্যালকনের ল্যান্ডিং সাইটের রিলিফ ম্যাপ দিয়েছিল, আমার অফিসে এখনো দেখানোর মতো জিনিস হিসাবে টানানো আছে সেটা। এখানে তিনবারের অভিযানে লুনার রোভারের পথনির্দেশ করা ছিল। একবার সে যানটায় করে তারা গিয়েছিল পৃথিবী-জোছনার জ্বালামুখে। ম্যাপটায় লেখা আছে, এ্যাপোলো ১৫র অভিযাত্রীদের পক্ষ থেকে আধার কার্কের প্রতি, আপনার মহাকাশ ভিশনারি আমাদের সহায়তা করেছে। ডেভ স্কট, আল ওয়ার্ডেন, জিম অরউইন।

আমিও তাদের উৎসর্গ করেছিলাম কিছু লিখে।

সি বি এস স্টুডিওতে ওয়াল্টার ক্রনকাইট আর ওয়ালি শিরার সাথে এ্যাপোলো ১৫ ল্যন্ডিং কভার করার পর মিশন কন্ট্রোলে উড়ে গিয়েছিলাম রেন্ট্রি আর স্প্যাশউড দেখার জন্য। আল ওয়ার্ডেনের ছোট মেয়েটা প্রথম লক্ষ্য করে তিন প্যারাস্যুটের একটী ডিপ্রয় করতে পারেনি। ব্যাপারটা ভাবিত করে আমাদের, কিন্তু বাকি দুজনেই কাজ করার জন্য যথেষ্ট।

অধ্যায় ১৬ : কাপ্তানের টেবিল

প্রোবের ইম্প্যাক্ট জানার জন্য ২০০১: আ স্পেস ওডিসি’র ১৮ অধ্যায় দেখুন।

সেখানে বলেছিলাম, ৭৭৯৪ গ্রহাণু আবিস্কৃত হয়েছে চান্দ্র অবজার্ভেটরিতে, ১৯৯৭ সালে! যাক, ঘটনাটাকে ২০১৭ সাল, আমার শততম জন্মদিনে নিয়ে যাচ্ছি।

জেনে আনন্দিত হয়েছি যে গ্রহাণু ৪৯২৩ এর নামকরণ হয়েছে ক্লার্ক, প্রজেক্ট স্পেসগার্ডের স্মরণে (রঁদেভু উইথ রামা, দ্য হ্যাঁমার অব গড)।

জেনে মন খারাপ হয়েছে যে এ আইনস্টাইনের স্মরণে গ্রহাণু ২০০১ এর নাম দেয়া হয়েছিল; সেটা হারিয়ে গেছে। দুঃখজনক, দুঃখজনক…।

এ জেনে খুব ভাল লেগেছে যে এ্যস্টেরয়েড ৫০২০ আবিস্কৃত হয় ৪৯২৩ এর সাথে, একই দিনে, সেটার নাম দেয়া হয় আজিমভ- কিন্তু কষ্টের ব্যাপার এই যে, আমার এ পুরনো বন্ধু সে খবর জেনে যেতে পারলেন না।

বিদায়বাণী আর ২০১০: ওডিসি টু এবং ২০৬১; ওডিসি থ্রি’র অথর নোটে ব্যাখ্যা করেছি যে উচ্চাকাক্ষার গ্যালিলিও মিশনে বৃহস্পতি আর বৃহস্পতিয় উপগ্রহ চষে ফেলা যাবে, আমরা অনেক বেশি জ্ঞান অর্জন করতে পারব; মাথা ঝিম ধরানো সব ছবি দেখতে পাব এসব অজানা রহস্যপুরীর।

যাক, অনেক দেরি করে হলেও গ্যালিলিও অবশেষে প্রথম লক্ষ্যের দিকে চলে গেছে- স্বয়ং গ্রহরাজ বৃহস্পতিতে- কাজও করছে ভালভাবে। কিন্তু, হায়, এখানে একটু সমস্যাও আছে- কোনো এক কারণে মূল এ্যান্টেনা আর ভোলা যায়নি। তাই ইমেজগুলো পাঠানো হবে লো-গেইন এ্যান্টেনা দিয়ে, খুব যন্ত্রণাদায়ক ধীরগতিতে। কম্পিউটারের প্রোগ্রামিংয়ে পরিবর্তন এনে জাদু ফলানোর চেষ্টা আংশিক সফল হলেও এক মিনিটে যেটুকু ডাটা পাঠানো যেত সেজন্য লাগবে কয়েক ঘন্টা।

আমাদের ধৈর্য ধরতেই হবে। আমি কল্পনাচোখে গ্যানিমিডকে দেখা শুরু করি সেটাকে সত্যি সত্যি দেখে ফেলেছে গ্যালিলিও ২৭ জুন, ১৯৯৬ সালে।

জুলাই, ১১, ১৯৯৬। বইটা শেষ করতে আর দুদিন বাকি। আমি জে পি এল থেকে প্রথম ইমেজটা ডাউনলোড করি। কপাল ভাল- এখন পর্যন্ত আমার বর্ণনা থেকে খুব বেশি দূরে নয় আসল চিত্র। কিন্তু যদি সেখানে বরফমোড়া এলাকা বাদ দিয়ে কোথাও না কোথাও পাম গাছের সারি দেখা যায়, সেই সাথে লেখা থাকে- ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে যাও। তাহলে আমি সত্যি বেকায়দায় পড়ব, মনশ্চক্ষে দেখতে পাচ্ছি…

আমি বিশেষ করে গ্যানিমিড সিটির ক্লোজ-আপের অপেক্ষায় আছি (অধ্যায় ১৭ দেখুন)। অবাক ব্যাপার- এখানেও আমার ধারণা পুরোপুরি মিলে গেছে। আর এর রাস্তাঘাট যদি দশ কিলোমিটার চওড়া হয়ে থাকে তো ভাবনা কী? মিডরা হয়ত আসলেই বিশালবপু…

সিটিটা পাওয়া যাবে নাসা ভয়েজার ইমেজ ২০৬৩৭.০২ ও ২০৬৩৭.২৯ এ।

অধ্যায় ১৯ : মানবজাতির পাগলামি

মানবজাতিকে খান যে আংশিক উন্মাদ বলেছিল সেটা ভালভাবে দেখার জন্য মিটিং মেরির ২২ পর্ব দেখুন, আমার টেলিভিশন সিরিজ আর্থার সি ক্লার্কস মিস্টিরিয়াস ইউনিভার্সেস এ। এও মনে রাখবেন, খ্রিস্টধর্ম আমাদের প্রজাতির খুব সামান্য অংশেরই প্রতিনিধিত্ব করে। এ ধর্মের মানুষেরা মাতা মেরিকে যতটা অন্ধ হয়ে পূজা করেছে তার চেয়ে কোনো অংশে কম পূজিত হননি রাম, কালি, শিব, থর, উটান, জুপিটার, অসিরিস, ইত্যাদি, ইত্যাদি….

সবচে অবাক করা ব্যাপার, সবচে বেশি মেধাবীরাও যে ধর্মের পথে গোড়ামি করতে পারেন তার উদাহরণ আর্থার কোনান ডয়েল। শার্লক হোমসের স্রষ্টা এ পৃথিবী কাঁপানো লেখক ও গোয়েন্দা-দিকনির্দেশকের লেখায় তেমন সুর পাওয়া যায়।

কার্ল সাগানের অসাধারণ লেখা ডেমন হান্টেড ওয়ার্ল্ড এ দেখা যাবে এসব নিদর্শন, দেখা যাবে মার্টিনের বইগুলোতেও। আমার মতে এমন সব বই প্রত্যেক হাই স্কুল ও কলেজে অবশ্যপাঠ্য করা উচিৎ।

অন্তত আমেরিকার ইমিগ্রেশন বিভাগ এক ধর্ম প্রভাবিত বর্বরতার বিপক্ষে কাজ করা শুরু করেছে। টাইম ম্যাগাজিন প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, যেসব মেয়ে তার জন্মভূমিতে লৈঙ্গিক মিউটিলেশনের সম্মুখিন হতে পারে তাদের জন্য আশ্রম তৈরি করা এখন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

আমি এ অধ্যায়টা লেখার পর ফিট অব ক্লে: দ্য পাওয়ার এ্যান্ড ক্যারিশমা অব গুরুজ এ এ্যান্থনি স্টোর এর লেখায় দেখতে পাই, এক গুরুর তিরানব্বইটা রোলস রয়েস ছিল যার তিরাশি ভাগ শিষ্যই অন্তত কলেজগামী! এজন্যই বলা হয়, কেউ কেউ তার বুদ্ধিমত্তা ছাড়িয়ে পড়াশোনা করে।

অধ্যায় ২৬: জিয়াংভিল

১৯৮২ সালে ২০১০; ওডিসি টু’র প্রাক-কথনে ইউরোপায় অবতরণ করা চৈনিক স্পেসশিপটার নাম ডক্টর জিয়াং সু-সেন এর নামে রাখার কারণ ব্যাখ্যা করেছি। তিনি যুক্তরাষ্ট্র আর চিনা রকেট প্রোগ্রামের জনক।

জন্ম ১৯১১ সালে। ১৯৩৫ সালে একটা স্কলারশিপ পেয়ে চিন থেকে আমেরিকায় চলে আসে জিয়াং। সেখানে বিখ্যাত হাঙ্গেরিয় এ্যারোডাইনামিসিস্ট থিওডোর ভ্যান কারম্যানের ছাত্র ছিলেন; পরে সহকর্মী হন। ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির প্রথম গদার প্রফেসর হিসাবে তিনি গাগেনহেইম এ্যারোনটিক্যাল ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা করেন। প্যাসাডেনার বিখ্যাত জেট প্রোপালশন ল্যাবরেটরি তৈরি হয় সরাসরি এ প্রতিষ্ঠানের উপর ভিত্তি করে।

১৯৫০ সালের দিকে খুব গোপনে তিনি আমেরিকান রকেট রিসার্চে যোগদান করেন। এ প্রজেক্টে তার অবদান ছিল অনেক। কিন্তু নিজের দেশে একবার ঘুরে আসার দায়ে তাকে বন্দি হতে হয়। লম্বা বন্দিদশা আর বিচার আচারের পর নিজ দেশে ফিরে যেতে দেয়া হয় তার সাথে করে যায় অতুল রকেটবিদ্যার জ্ঞান। তার সঙ্গীদের মতে, আমেরিকার করা সবচে বোকামিপূর্ণ কাজের মধ্যে তাকে হয়রানি করা একটা।

পরে দেখা যায়, তিনি শূন্য থেকে চৈনিক রকেটবিদ্যাকে অনেক বছর এগিয়ে নিয়ে যান, তাকে ছাড়া চাইনিজ টেকনোলজি বিশ বছর পিছিয়ে থাকত। তারই হাত থেকে বেরোয় সিল্কওয়ার্ম এ্যান্টিশিপ মিসাইল ও লংমার্চ স্যাটেলাইট লঞ্চার।

এ উপন্যাস শেষ করার পর পরই ইন্টারন্যাশনাল এ্যাকাডেমি অব এ্যাস্ট্রোনটিক্স আমাকে ফন কারম্যান এ্যাওয়ার্ড দেয়- সেটা দেয়া হবে বেইজিংয়ে। উপহারটা পাশ কাটানোর কোনো উপায় ছিল না, কারণ ডক্টর জিয়াং এখন সে নগরীর অধিবাসী। দূর্ভাগ্য, যখন গেলাম, জানা গেল তিনি হাসপাতালে, ডাক্তাররা কোনো দর্শনার্থীকে ঢুকতে দিচ্ছে না।

আমি তার পার্সোনাল এ্যাসিস্ট্যান্ট মেজর জেনারেল ওয়াং শেউনের প্রতি কৃতজ্ঞ, তিনি ২০১০ ও ২০৬১’র কপি দিয়েছিলেন তাকে। বিনিময়ে মেজর জেনারেল আমাকে সুবিশাল কালেক্টেড ওয়ার্কস অব এইচ এস জিয়াং: ১৯৩৮ ১৯৫৬ দেন। দারুণ সংগ্রহ। গুরু ও সহকর্মীদের সাথে রকেট নিয়ে আলোচনা ও পরে প্রকাশিত পেপারগুলো স্থান পেয়েছে।

বেইজিং ছাড়ার আগ মুহূর্তে জানতে পারি, ৮৫ বছর বয়সেও কাজ করছেন। আশা করি ফাইনাল ওডিসির কপিও পাঠাব।

অধ্যায় ৩৬ : আতঙ্কের কুঠরি

১৯৯৯ সালে কম্পিউটার সিকিউরিটির উপর সিনেটের লম্বা আলোচনা শেষে প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন ১৩০১০ তম এক্সকুসিভ অর্ডারে স্বাক্ষর করেছেন। এর ফলে সাইবার টেররিজমের উপর একটা টাস্ক ফোর্স তৈরি করা হবে। সি আই এ, এন এস এ, প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলোর প্রতিনিধি থাকবে এখানে।

পিকো, আসছি আমরা…

উপরের প্যারা লেখার সময়টায় আমি জানতে পারি ইন্ডিপেন্ডেন্স ডে’র চুড়ান্ত অংশে কম্পিউটার ভাইরাস ট্রোজান হর্সের কথা আছে।

.

এ সিরিজের আগের বইগুলো থেকে বড় ধরনের পরিবর্তন সহ নিচের অংশগুলো নেয়া হয়েছে।

২০০১: আ স্পেস ওডিসি থেকে: অধ্যায় ১৮; অধ্যায় ৩৭।

২০১০: ওডিসি টু থেকে: অধ্যায় ১১; অধ্যায় ৩৬; অধ্যায় ৩৮।

.

কৃতজ্ঞতা

আই বি এম কে ধন্যবাদ। তারা আমাকে দারুণ এক থিকপ্যাড দিয়েছে ৭৫৫সিডি। এটাতেই এ বই কম্পোজ হয়। আমি একটা গুজব দেশে বছরের পর বর প্রতে হয়েছি- এইচ এ এল-হাল নামটা আই বি এম এর এক অক্ষর পিছনে পিছনে আসে। ২০১০ এ ডক্টর চন্দ্রর মাধ্যমে ব্যাপারটাকে পরিষ্কার করার চেষ্টা করি। পরে জানতে পারলাম, এতে বিব্রত নয়, বিগ আনন্দিত। আরবানার ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা ১২ মার্চ ১৯৯৭হালের জন্মদিন পালন করছে তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

আমার ডেল রে বুক এডিটরদের অসংখ্য ধন্যবাদ। মূল জিনিসে অনেক উন্নয়ন করেছেন তারা।

সবশেষে, পুরনো বন্ধু সিরিল গার্ডিনারের প্রতি অনেক শুভাশীষ। গ্যাল ফেস হোটেলের চেয়ারম্যান আমাকে এ বইটা লেখার সময় অসাধারণ সইটে অনন্যসাধারণ আতিথেয়তা দিয়েছে। এত আরামদায়ক অবস্থায় কখনো কাজ করিনি। নিশ্চয়তা দিতে পারি, গ্যানিমিডের ঐ হোটেলটা এত মজার নয়।

আরো অনেকের কাছে কৃতজ্ঞ। কৃতজ্ঞ এ্যাপোলো ১২’র অভিযাত্রীদের কাছে। ইউরি গ্যাগারিন, গ্রেগরি পেক, এ্যালিস গিনেজ, নোয়েল কাওয়ার্ড, স্টার ওয়র্সের গ্যারি ফিশার… ভিভিয়েন লেই ও লরেন্স ওলিভিয়ার- দুজনেই ২০৬১: ওডিসি গ্রিতে (অধ্যায় ৩৭) এসেছিল।

বিখ্যাত শহরের বিখ্যাত হোটেল নিউ ইয়র্কের চেলসিয়া থেকে এ কাহিনীর শুরু, শেষ পৃথিবীর অন্য প্রান্তে। কানের পাশে মৌসুমী ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ ভারত মহাসাগরের গর্জন শুনতে শুনতে ২৩ নং স্ট্রিটে ব্যসমস্ত ট্রাফিকের আওয়াজ যেন মিলিয়ে যায়।

স্মৃতির উদ্দেশে: ১৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৬

কৃতজ্ঞতা লিখতে লিখতে কয়েক ঘন্টা আগে সেরিল গার্ডিনারের মৃত্যু সংবাদ শুনে কষ্ট পেলাম।

জেনে একটু স্বস্তি হয় উপরের কথাটুকু জেনেছিলেন মারা যাবার আগে।

বিদায়বাণী

‘কখনো ব্যাখ্যা নয়, কখনো ক্ষমা নয়’ কথাটা রাজনীতিক, হলিউডের হর্তাকর্তা আর বিজনেস টাইকুনদের ক্ষেত্রে খুব বেশি প্রযোজ্য হলেও একজন লেখককে অবশ্যই পাঠকের জন্য আরো বেশি বিবেচনা রাখা উচিৎ।

এসবের শুরু আসলে ১৯৪৮ সালের ক্রিসমাসে- হ্যাঁ, ১৯৪৮- একটা চার হাজার শব্দের হোটগল্প থেকে। গল্পটা লিখি বি বি সি’র প্রতিযোগিতার জন্য। দ্য সেন্টিনেল এ চাঁদের বুকে একটা ছোট পিরামিড আবিষ্কারের কথা এসেছিল, পিরামিডটা সেখানে অপেক্ষা করে মানুষের জন্য। মানুষ আসবে, গ্রহান্তরী হয়ে আসবে চাঁদের বুকে, সেজন্য অপেক্ষায় থাকে সেটা। চাঁদে যাবার আগ পর্যন্ত আমরা এতই সামান্য এক জাতি যে সেসব ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না। *

[* সৌরজগতে মহাকাশের আগন্তুকদের তৈরি আর্টিক্যায়ের খোঁজ করাটাকে বিজ্ঞানের একটা সমৃদ্ধ শাখায় পরিণত করা প্রয়োজন (এক্সো-আর্কিওলজি)। দুঃখজনকভাবে এ শাখার উত্তবের আগেই এমন প্রমাণের কথা বির শোনা যায় বারবার নাসা এসবকে বাতিল করে দেয়। এসব কথা কেউ বিশ্বাস করবে তা বিশ্বাস করাও কষ্টকর। বাজেট সমস্যা সমাধানের জন্য নানা কাজ করতে হয়। (আপনার হাতে, নাসা এ্যাডমিনিস্ট্রেটর…)]

বি বি সি আমার এ চেষ্টাটাকে বাতিল করে দেয়। তিন বছর অপ্রকাশিত ছিল লেখাটা। তারপর টেন স্টোরি ফ্যান্টাসির একমাত্র ইস্যুতে প্রকাশ পায়। অমূল্য এনসাইক্লোপিডিয়া অব সায়েন্স ফিকশন পড়ে এ নিয়ে কথা বলেছে।

‘দ্য সেন্টিনেল গুম হয়ে পড়ে রইল এক দশকেরও বেশি সময় ধরে। তারপর ১৯৬৪ সালে স্ট্যানলি কুবরিক যোগাযোগ করে আমার সাথে। তিনি সত্যিকারের ‘ভাল সায়েন্স ফিকশন মুতি তৈরি করতে চান। দ্য লস্ট ওয়ার্ল্ড অব ২০০১ এ লেখা আছে, আমরা মাথায় ঝড় তোলা কতগুলো সেশন চালিয়েছিলাম। সিদ্ধান্তে আসি, চাঁদের বুকে নিরব ভ্রা আমাদের কাহিনীর গোড়াপত্তনের জন্য ভাল হবে। আস্তে আস্তে আমি আরো অনেক কিছু করে ফেললাম। যেমন প্রথমে থাকা পিরামিডের জায়গায় বসে গেল এখনকার বিখ্যাত কালো এক শিলাস্তম্ভ।

আমরা যখন কীভাবে সৌরজগত বিজিত হল নিয়ে মেতে আছি, তখন মহাকাশ যুগের বয়স মাত্র সাত বছর। কোনো মানুষ একশ কিলোমিটারের বেশি উপরে যায়নি। প্রেসিডেন্ট কেনেডি ঘোষণা করে বসে আছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশবিদরা চাঁদে যাবেন এ দশকেই’- কিন্তু বেশিরভাগ মানুষের কাছেই সে স্বপ্ন সুদূর পরাহত। হাড় কাঁপানো শীতে ২৯ ডিসেম্বর ১৯৬৫ এ দক্ষিণ লন্ডনে* চলচ্চিত্রায়ন। শুরু হলে আমরা জানতামও না চাঁদের উপরিভাগ কাছ থেকে দেখতে কেমন? অনেকেই বলে চলেছে, চাঁদের বুকে প্রথম এ্যাস্ট্রোনটের প্রথম শব্দটা হবে, বাঁচাও!, কারণ সে ট্যালকম পাউডারের মতো গুড়া ধুলার বুকে পা ফেলে ভড়কে যাবে। সব মিলিয়ে আমাদের ধারণা মন্দ ছিল না। শুধু একটা ব্যাপার। আমাদের চান্দ্র অবয়ব বাস্তবের চেয়ে একটু বেশি বন্ধুর।

[*শেপারটনে, যেটা ওয়েলসের মাস্টারপিস দ্য ওয়্যার অব দ্য ওয়ার্ল্ডস এর মঙ্গলবাসিয়া ধূলার সাথে মিলিয়ে দেয়।]

আজকের দিনে এটাই অন্যরকম লাগে, আমরা দানবীয় স্পেস স্টেশন, প্রদক্ষিণরত হিলটন হোটেল, বৃহস্পতি অভিযানের কথা কল্পনা করতে পেরেছিলাম ২০০১ সালের মধ্যে। একটা ব্যাপার ভাবা উচিং, ১৯৬০ সালের দিকে মানুষের জল্পনা কল্পনা ছিল ১৯৯০ এর মধ্যে চাঁদে ঘাটি ও মঙ্গলে অবতরণ সম্ভব হবে। আসলে, এ্যাপোলো ১১ ছেড়ে যাবার পর পর সি বি এস স্টুডিওতে থাকতেই আমি মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টকে বলতে শুনেছিলাম, এবার আমাদের অবশ্যই মঙ্গলের দিকে হাত বাড়াতে হবে।

আমরা যে জেলে পচিনি এটাই সৌভাগ্য। সেই দূর্নাম, একই সাথে ভিয়েতনাম ও ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি সব স্বপ্নকে ধুলার সাথে মিশিয়ে দেয়।

১৯৬৮ সালে চলচ্চিত্র আর বই দুইটাই আলোর মুখ দেখলেও ধারাবাহিক আরেকটা তৈরির সম্ভাবনা মনে উঁকি দেয়নি। তারপর, ১৯৭৯ সালে সত্যি সত্যি বৃহস্পতির দিকে একটা মিশন শুরু হয়। আমরা প্রথমবারের মতো দানবীয় গ্রহ আর তার প্রজাদের ক্লোজআপ দেখতে পাই।

ভয়েজার স্পেস প্রোবগুলোয়** কোনো মানুষ ছিল না, অবশ্যই। কি তাদের পাঠানো ইমেজগুলো বাস্তব। একই সাথে একেবারে অকল্পনীয়। ভুবনগুলো অবাক করা। আইওর সার্বক্ষণিক ফুটতে থাকা জ্বালামুখ, ক্যাসিস্টোর বিচিত্র মুখাবয়ব, গ্যানিমিতের চষে ফেলা বুক- আমরা যেন একেবারে আনকোরা এক সৌজগত আবিষ্কার করে ফেলেছি। এসবই আমাকে ২০১০ লিখতে উদ্বুদ্ধ করে। ডেভ বোম্যানের বাকিটুকু ব্যাখ্যা করার সুযোগও আসে সেই সাথে।

[** এটা বৃহস্পতির কাছে সিং-ট বা গ্র্যাভিটি এ্যাসিস্ট ম্যানুভার নিতে পেরেছিল- যা ডিসকৰি করে ২০০১ এর তালে।]

১৯৮১ সালে নতুন বইটা লেখা শুরু করি। স্নায়ুযুদ্ধ চলছে তখনো। মনে হল আমেরিকা-রাশিয়ার যৌথ মহাকাশ অভিযানের নকশা প্রকাশ করে আমি যেন তোপের মুখে পড়ব। আন্দ্রে শাখারভ আর এলেক্সি লিওনকে উৎসর্গ করে আগুনে যেন আরো ঘৃতাহুতি দিলাম। লিওনকে আমি জানিয়েছিলাম, শিপটার নাম হচ্ছে আপনার নামে, তিনি বলেছিলেন, ‘তাহলে সেটা খুব ভাল শিপ হবে।’

এখনো আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয়- ১৯৮৩ সালে পিটার হাইমস ছবিটা বানানোর সময় সত্যি সত্যি তিনি বৃহস্পতিয় চাঁদগুলোর ক্লোজআপ নিতে পেরেছেন তয়েজার মিশন থেকে (কোনো কোনোটা জেট পোপালশন ল্যাবরেটরি থেকে কম্পিউটার প্রসেসিংয়ের মাধ্যমে আসে)।

গ্যালিলিও মিশন বৃহস্পতিয় এলাকায় থাকবে মাসের পর মাস। ছবি পাঠাবে অজস্র। এ সময়টায় আমাদের জ্ঞান বেড়ে যাবে বিস্ময়করভাবে। এখন ওডিসি থ্রি না লেখার কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া যায় না।

কিন্তু ১৯৮৬ সালে কিছু সমস্যা হয়ে যায়। আমরা আরো এক দশকের আগে গ্যানিমিড ক্যালিস্টে আইও ইউরোপার কোনো পরিষ্কার চিত্র পাব না।

আমি আর দেরি করার পক্ষপাতী নই। ১৯৮৫ সালে হ্যালির ধূমকেতু সৌরজগতের ভিতরের দিকে আসবে। পরেরবার আসছে ২০৬১ সালে। ওডিসি খ্রির জন্য সময়টা উপযুক্ত। সামান্য এ্যাডভান্সের বিনিময়ে প্রকাশককে যে সময়ে দেয়ার কথা তখন এটা দিতে পারব কিনা সে সম্পর্কেও আমার বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। তাই আমি ডেল রের প্রকাশককে উৎসর্গ করেছিলাম বইটা।

একটা সায়েন্স ফিকশন সিরিজ লেখা হয় চার খন্ডে, ত্রিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে, প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষের সময় (বিশেষত মহাকাশবিদ্যায়)। ২০১০ এর ভূমিকাতেই উল্লেখ করে দিয়েছি, এ বইগুলো একই সিরিয়ালের হলেও একই কাহিনী নয়, একই থিমের উপর ভিন্ন ভিন্ন প্রসারিত ধারণা।

তাই, এ ফাইনাল ওডিসিতে আগের বইগুলোর অনেক ধারণা বাতিল করা হয়েছে। অন্য গৌণ ধারণাকে করেছি মুখ্য। কেউ যদি এ প্রবাহ দেখে দুঃখিত হন, তাহলে এক আমেরিকান প্রেসিডেন্টের মতো রাগি বার্তা পাঠাব, এটা গল্প, বোকা।

এবং এসবই আমার নিজের গল্প, আপনি হয়ত টের পাননি। আমি জেন্ট্রি লি’র সাথে কাজ করে মজা পেয়েছি। মজা পেয়েছি আর সবার সাথেও। পরবর্তী বড় প্রজেক্টগুলোর যেগুলো আমি নিজে চালাতে কষ্ট পাব সেসবের জন্য এমন দামি মানুষ টেনে আনতে পিছপা হব না।

তাহলে, প্রতিটা শব্দই আমার: হ্যাঁ, প্রায় প্রতিটা শব্দ। আমাকে স্বীকার করতেই হবে যে অধ্যায় ৩৫ এর প্রফেসর থিরুগনানাসাম্পাহামূর্তিকে পেয়েছি কলম্বো টেলিফোন ডিরেক্টরি থেকে। আশা করি নামের বর্তমান মালিক অভিযোগ করবেন না ধার নেয়াতে। বিশাল অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি থেকে আরো কিছু ঋণ আছে। আর দেখে অবাক হই যে এখানে আমার লেখা থেকে বিভিটা কোটেশন নেয়া হয়েছে বাক্য আর শব্দ বোঝানোর জন্য।

প্রিয় ও ই ডি, যদি এখানেও ব্যবহার করার মতো কোনো উদাহরণ পাও, প্লিজ, আমার আতিথেয়তা নিতে ভুল করোনা।

আমি এ কথাটুকু লেখার সময় যে কাশিগুলো দিয়েছি (অন্তত দশটা) তার জন্য আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী।

সবশেষে, আমি আমার অসংখ্য বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, হিন্দু, মুসলমান বন্ধুকে আন্ত রিকভাবে জানাতে চাই যে আপনাদের ধর্ম শাস্তি যে বাণী বহন করে তা মানসিক উৎকর্ষে অত্যন্ত কাজে লাগবে, এটাই আমার বিশ্বাস। পশ্চিমা গবেষণায় দেখা যায় শারীরিক উন্নয়নেও ধর্মের প্রভাব রয়েছে।

সম্ভবত সজ্ঞান ও অসুখি হওয়াটা অজ্ঞান ও সুখি হওয়ার চেয়ে ভাল।

আশা রাখি আমাদের অনাগত বংশধররা দ্বিতীয় পথেই থাকবে।

আর্থার সি ক্লার্ক
কলম্বো, শ্রীলঙ্কা
সেপ্টেম্বর ১৯, ১৯৯৬    

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *