২৪. চতুর্বিংশ উপাখ্যান

বেতাল কহিল, মহারাজ!

কলিঙ্গদেশে যজ্ঞশৰ্মা নামে ব্ৰাহ্মণ ছিলেন। তিনি, অনেক কাল, অনেক দেবতার আরাধনা করিয়া, একমাত্র পুত্র প্রাপ্ত হয়েন। ঐ পুত্ৰ, অল্পকালমধ্যে, সর্ব শাস্ত্রে সবিশেষ পারদর্শী হইল; এবং, অনন্যকর্ম ও অনন্যধর্ম হইয়া, নিরন্তর পিতামাতার সেবা করিতে লাগিল। পিতামাতার ভাগাদোষে, ঐ পুত্র অষ্টাদশ বয়ঃক্রমকালে, কালগ্ৰাসে পতিত হইল। তাহার পিতামাতা, প্রথমতঃ, যৎপরোনাস্তি বিলাপ ও পরিতাপ করিলেন; পরিশেষে, পুত্রের মৃতদেহ, অগ্নিসংস্কারার্থে, গ্রামের উপান্তবর্তী শ্মশানে লইয়া গিয়া, চিতারচনা করিতে লাগিলেন।

এক বৃদ্ধ যোগী, বহুকাল অবধি, ঐ শ্মশানে যোগাভ্যাস করিতেছিলেন। তিনি, অষ্টাদশবর্ষীয় ব্ৰাহ্মণকুমারের মৃত কলেবর পতিত দেখিয়া, মনে মনে বিবেচনা করিলেন, আমার এই প্রাচীন দেহ, জরায় জীর্ণ ও শীর্ণ হইয়া, কার্যক্ষম হইয়াছে; অতএব, এই যুবদেহে প্রবেশ করি; তাহা হইলে, বহুকাল যোগাভ্যাস করিতে পারিব। এই বলিয়া, জগদীশ্বরের নামস্মরণপূর্বক, যোগী সেই যুবকলেবরে প্রবেশ করিলেন।

ব্ৰাহ্মণকুমার তৎক্ষণাৎ জীবিত হইয়া উঠিল। যজ্ঞশৰ্মা, পুত্রকে প্রত্যাগত জীবিত দেখিয়া, প্রথমতঃ, প্ৰফুল্ল বদনে, হাস্য করিলেন; কিন্তু, এক নিমেষ পরেই, বিষন্ন বদনে রোদনে প্ৰবৃত্ত হইলেন।

ইহা কহিয়া, বেতাল জিজ্ঞাসিল, মহারাজ! ব্ৰাহ্মণ, পুত্রকে পুনর্জীবিত দেখিয়া, হৃষ্ট মনে হাস্য করিয়া, কি কারণে, পর ক্ষণে, রোদন করিলেন, বল। রাজা কহিলেন, ব্ৰাহ্মণ প্রথমতঃ, পুত্রকে পুনর্জীবিত বোধ করিয়া, আহ্লাদে হাস্য করিয়াছিলেন; কিন্তু তিনি পরকলেবর প্রবেশনী বিদ্যা জানিতেন; ঐ বিদ্যার প্রভাবে, পর ক্ষণেই জানিতে পারিলেন, পুত্র পুনর্জীবিত হয় নাই; যোগীর প্রবেশ দ্বারা এরূপ ঘটিয়াছে; এজন্য, রোদন করিলেন।

 

ইহা শুনিয়া বেতাল ইত্যাদি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *